সমাজ কাকে বলে, সমাজ বিজ্ঞানের জনক কে, রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য কি, সমাজ কাঠামো কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

সমাজ কাকে বলে

সমাজ বলতে একদল লোককে বোঝায় যারা একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে বসবাস করেন এবং তারা একই সংস্কৃতি মেনে চলেন।সমাজ বলতে মূলত এমন এক ব্যবস্থা বোঝায়, যেখানে একদল লোক কিছু নিয়ম-কানুন প্রতিষ্ঠা করে একত্রে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলে।

মানুষের ক্ষেত্রে একাধিক ব্যক্তি একত্র হয়ে লিখিত কিংবা অলিখিত নিয়ম-কানুন তৈরি করে; এরকম একত্র বসবাসের অবস্থাকে সমাজ বলে। মানুষ ছাড়াও ইতর প্রাণীর ক্ষেত্রে সমাজের অস্তিত্ব দেখা যায়, তবে সেখানে মানুষের মতো কাঠামোবদ্ধ সমাজের দৃষ্টান্ত নজরে আসে না।

সমাজ মূলত এমন এক ব্যবস্থা বোঝায়, যেখানে একাধিক চরিত্র একত্রে কিছু নিয়ম-কানুন প্রতিষ্ঠা করে একত্রে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলে। মানুষের ক্ষেত্রে একাধিক ব্যক্তি একত্র হয়ে লিখিত কিংবা অলিখিত নিয়ম-কানুন তৈরি করে; এরকম একত্র বসবাসের অবস্থাকে সমাজ বলে। মানুষ ছাড়াও ইতর প্রাণীর ক্ষেত্রে সমাজের অস্তিত্ব দেখা যায়, তবে সেখানে মানুষের মতো কাঠামোবদ্ধ সমাজের দৃষ্টান্ত নজরে আসে না।

যে প্রক্রিয়া বা ব্যবস্থার মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে কয়েকটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে মানুষ সংঘবদ্ধ বসবাস করে এক বা অধিক গোত্র বা সম্প্রদায় সৃষ্টি করে, সেই ব্যবস্থা বা প্রক্রিয়াকে সমাজ বলে। সমাজবিজ্ঞানের একটি অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ধারণা হচ্ছে সমাজ।

মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করে, সমাজ সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল, নিরাপত্তা ও জীবন ধারণের সহজিকরণ করা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ সংঘবদ্ধ বা সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করে যার ফলে সমাজের সূচনা ঘটে।

সমাজের সংজ্ঞা দাও

একদল মানুষ যখন কোনাে সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একত্রিত ও সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে তখন তাকে সমাজ বলে । অন্যভাবে বলা যায় , পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে গড়ে ওঠা জনসমষ্টিকে সমাজ ( Society ) বলে ।

সমাজ একটা অমূর্ত ধারণা । সমাজের কোন নির্দিষ্ট সীমানা নেই । সমাজ ছােট হতে পারে আবার বড়ও হতে পারে । এমনকি বিশ্বব্যাপীও হতে পারে । যেমন , রেডক্রস সমাজ ।

প্রামান্য সংজ্ঞা

●সমাজবিজ্ঞানী গিডিংস ( Giddings ) বলেন , ‘ সমাজ বলতে আমরা সেই জনসাধারণকে বুঝি যারা সংঘবদ্ধভাবে কোনাে সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মিলিত হয়েছে । ( Society is a number of like – minded individuals who know and enjoy their like – mindedness and are therefore able to work together for common ends . )

মনের ভাব প্রকাশের জন্য এবং আদান – প্রদানের সহজাত প্রবৃত্তির বশে মানুষ একত্রে বসবাস করতে শিখেছে ।

●অধ্যাপক আর , এম , ম্যাকাইভার তার সমাজ নামক গ্রন্থে সমাজের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে  ( Maciver ) বলেন , ‘ আমাদের সামাজিক সম্পর্কে জটিল জালই সমাজ । ( Society is the system of social relationships in and through which we live ) .

সমাজবিজ্ঞানী কিম্বল ইয়ং ( Kimbal Young ) এর মতে , ‘ সমাজ হলাে সামাজিক সম্পর্কের নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিবর্গের সাধারণ পরিচিত । ( Society is the general term for persons living in social relations . )

●অধ্যাপক লিকক বলেন , “ সমাজের সঙ্গে ভূখণ্ডের সম্পর্ক নেই ” । সমাজ রাজনৈতিক সংগঠন না হলেও সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠে এবং সমাজ তাকে লালন করে ।

●ম্যাকাইভার বলেন , “ সমাজ মানুষের বহুবিধ সম্পর্কের এক বিচিত্র রূপ । “

অতএব , যখন কতিপয় লােক তাদের আশা – আকাঙ্ক্ষা , ধ্যান – ধারণা বাস্তবায়ন ও নিজের প্রয়ােজন মেটানাের তাগিদে একত্রিত হয় ও একটি সংঘবদ্ধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুস্পষ্ট আবাসস্থল গড়ে তােলে তখন তাকে সমাজ বলে ।

সমাজের বৈশিষ্ট্য কয়টি

সমাজের সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করলে সমাজের নিম্নলিখিত সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলাে লক্ষ্য করা যায় –

ঐক্য

ঐক্য সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য । অভ্যাস , মনােভাব , চাওয়া – পাওয়া ও আদর্শগত ঐক্যের ভিত্তিতে সমাজ গড়ে ওঠে ।

স্থায়িত্ব

সমাজ একটি স্থায়ী বর্গ । তার অর্থ এই নয় যে , সমাজের পরিবর্তন হবে না । সমাজের চিন্ত – ভাবনা , অগ্রগতি , শিক্ষাদীক্ষা ও বিজ্ঞানের অবদানের কারণে সমাজের পরিবর্তন ঘটে । সমাজের পরিবর্তন ঘটলেও সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয় না।

সাধারণ উদ্দেশ্য

 অন্ন , বস্ত্র , শিক্ষা , চিকিৎসা , নিরাপত্তা , বাসস্থানের নিশ্চয়তা প্রভৃতি সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মানুষ সমাজবদ্ধ হয় ।

ভৌগােলিক সীমারেখা

সমাজের সাথে ভূখণ্ডের সম্পর্ক না থাকলেও একটি সমাজকে আর একটি সমাজ থেকে ভৌগােলিক সীমারেখার দ্বারাই পৃথক করা যায় । তবে কোন কোন সমাজ সারা পৃথিবী জুড়ে বিরাজমান ।

গ্রুপের সমষ্টি

 সমাজ কতকগুলাে দল বা গ্রুপের সমষ্টি এবং এই গ্রুপগুলাে জনসাধারণের মৌলিক সামাজিক চাহিদা পূরণ করে । যেমন — কৃষক , শ্রমিক , ব্যবসায়ী প্রভৃতি।

বৈচিত্র্য সমাজ

বিচিত্র রূপের একটি মানবিক সংগঠন । সমাজে হাসি – কান্না , ঐক্য – অনৈক্য , বিরােধিতা সহযােগিতা , অবহেলা – সহমর্মিতা সবকিছুই বিদ্যমান । ব্যাপক মানবিক সম্পর্কের বৈচিত্র্যময় রূপ হলাে সমাজ ।

নৈতিক মূল্যবােধ

সমাজের ভিত্তি হচ্ছে নৈতিক মূল্যবােধ । সমাজ কতকগুলাে নীতিমালা মেনে চলে এবং নীতিগুলাে সমাজকে ধরে রাখে । যেমন – নিষ্ঠা , সততা , সহমর্মিতা , সহযােগিতা প্রভৃতি ।

মানুষ চেতনাবােধ থেকে ঐক্যবদ্ধ জীবন যাপনের ক্ষেত্রে পরিবার , সংঘ , সম্প্রদায় প্রভৃতি গঠন করেছে । এরূপ নানাবিধ প্রতিষ্ঠান নিয়ে গড়ে উঠেছে সমাজ ।

সমাজ কত প্রকার ও কি কি

সমাজবিজ্ঞানীগণ মানব সমাজকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন, যেমন:

শিকার ও সমাবেশকেন্দ্রিক সমাজ (Hunting and Gathering Society)

এটি হচ্ছে মানব সমাজের আদি রুপ, এই সমাজের মানুষের জীবিকা নির্বাহের উপকরণ ছিলো বন্য প্রাণী শিকার ও বন্য ফলমুল সংগ্রহ করা।

এই সমাজে প্রযুক্তির বিকাশ তেমন হয়নি, এই সমাজের মানুষ হাত অথবা গাছ পালার ডালকে শিকারের জন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো ।

এই সমাজে ব্যক্তিগত সম্পদ বলে কিছু ছিলো না যার ফলে সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসও ছিল না, সে কারণে সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্ক্স এই সমাজকে বলেছেন Primitive communism বা আদি সাম্যবাদী সমাজ ।

উদ্যান কেন্দ্রিক সমাজ (Horticultural society)

এই  সমাজ  ব্যবস্থায়  মানুষ  প্রযূক্তিগত  দিক  থেকে  Hunting  and  gathering  society  থেকে  এগিয়ে  যায়,  এবং  খাদ্য  সংগ্রহের  পরিবর্তে  উৎপাদনের  দিকে  দৃষ্টি  নিবদ্ধ  করে।  কৃষি  ভিত্তিক  সমাজের  ধারণাই  শুরু  হয়  Horticultural  society  থেকে।  এখানে  মানুষ  বীজ  থেকে  নয়  গাছের  ডালপালা  থেকে  নতুন  গাছ  উৎপাদন  করতো। 

পশু প্রতিপালন কেন্দ্রিক সমাজ (Harding Society)

এই সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ পশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করতো।

পশু স্বীকারের এক পর্যায়ে মানুষ লক্ষ্য করলো, পশু স্বীকার বেশ কষ্টসাধ্য আবার সব সময় স্বীকার পাওয়াও যায় না।

এই সমস্যার সমাধান কল্পে মানুষ জ্যান্ত পশু স্বীকার শুরু করলো, এবং এক পর্যায়ে লক্ষ্য করলো এই পশুগুলো পোষ মানছে। আর এভাবেই মানুষ পশু শিকার থেকে পশু পালনের দিকে ধাবিত হয়। 

কৃষিভিত্তিক সমাজ (Agrarian society)

কৃষি ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা চালু হয় লাঙ্গল আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে।

লাঙ্গল আবিষ্কারের পর কৃষির বিকাশ লাভ করতে থাকে, এবং এর ফলে প্রথম বারের মত মানুষ স্থায়ী আবাসন গড়ে তোলে, ইতিপূর্বে মানুষ nomadic বা যাযাবর জীবন যাপন করতো।

কৃষি ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেরানোর অবসান ঘটে এবং মানুষ fixed settlement বা স্থায়ী আবাসনের দিকে ধাবিত হয়।

শিল্পনির্ভর সমাজ (Industrial society)

বৈজ্ঞানিক  বিপ্লবের  ফলে  মানব  সভ্যতা  প্রযূক্তিগত  ভাবে  অনেক  বেশি  অগ্রসরমান  হয়ে  যায়।প্রযূক্তিগত  উন্নয়নের  প্রভাবেই  ১৭৬০  খ্রিষ্টাব্দে  ইউরোপে(ইংল্যান্ডে)  শিল্প  বিপ্লবের  সূচনা  ঘটে।

শিল্প  বিপ্লবের  ফলে  গোটা  ইউরোপ  জুড়ে  ধীরে  ধীরে  ফিউডালিজম  বা  সামন্তবাদের  সমাপ্তি  ঘটে  এবং  কৃষি  ভিত্তিক  সমাজ  কাঠামোর  পরিবর্তে  শিল্পোন্নত  সমাজ  কাঠামো  প্রতিষ্ঠা  লাভ  করে।  শিল্পোন্নত  সমাজ  বা  Industrial  society  তে  ব্যাক্তিস্বাতন্ত্রতা,  গণতন্ত্র,  ধর্মনিরপেক্ষতা  প্রভৃতি  মতবাদ  জনপ্রিয়তা  লাভ  করে  যার  ফলে  সমাজে  ধর্মের  প্রভাব  খর্ব  হয়,  পূর্বের  সামন্ততান্ত্রিক  সমাজের  সকল  রীতিনীতি  ভেঙে  পরে  এবং  নতুন  সমাজ  ব্যবস্থা  প্রচলিত  হয়।

শিল্পোন্নত  সমাজে  প্রযুক্তি  চরম  উৎকর্ষতায়  পৌঁছে  যায়,  মানুষের  গড়  আয়ু  বৃদ্ধি  সহ  জনসংখ্যার  ব্যাপক  বিস্ফোরণ  ঘটে।  এর  ফলে  সামাজিক  কাঠামো  এবং  মানুষের  জীবনধারা  পূর্বের  চেয়ে  উন্নত  এবং  জটিল  আকার  ধারণ  করে।

সমাজ বিজ্ঞান কাকে বলে

সমাজবিজ্ঞান এমন একটি পূর্ণাঙ্গ বিষয় যা মানুষ এবং মানুষের সমন্বয়ে সৃষ্ট সমাজের সকলদিক কে অন্তর্ভুক্ত করে।

সমাজবিজ্ঞান  শব্দটি  একটি  যৌগিক  শব্দ  যা  সমাজ  ও  বিজ্ঞান  দুটি  শব্দের  সমন্বয়ে  গঠিত।  সমাজ  একটি  ব্যাপক  অর্থবোধক  শব্দ,  সমাজের  সাথে  মানব  জীবনের  সকল  দিক  সম্পর্কিত,  যেমন,  পরিবার,  ধর্ম,  সাংস্কৃতি,  অর্থনীতি,  রাজনীতি  এবং  মানুষের  পারস্পরিক  সম্পর্ক।  অন্যদিকে  বিজ্ঞান  হচ্ছে  যুক্তি  ও  বাস্তবিকতার  নিরিখে  সব  কিছু  পর্যালোচনা  করা।  সুতরাং  সমাজবিজ্ঞান  শব্দের  শাব্দিক  অর্থ  দ্বারায়,  যুক্তি  ও  বাস্তবিকতার  নিরিখে  মানুষ  এবং  সমাজের  পর্যালোচনা।

১৮৩৯ সালে ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী অগাস্ট কোঁৎ (August Comte) সর্বপ্রথম “Sociology” শব্দটি প্রবর্তন করেন। Sociology শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ “Socious” এবং গ্রিক শব্দ “Logos”- এর সমন্বয়ে। “Socious” অর্থ সমাজ এবং “Logos” অর্থ অধ্যয়ন বা বিজ্ঞান। অর্থাৎ সমাজ সম্পর্কে যে শাত্ৰ আলােচনা করে থাকে তাই সমাজবিজ্ঞান।

যে শাস্ত্র সমাজের উৎপত্তি, বিকাশ, প্রত্যয় ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সকল দিক থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে অধ্যয়ন করে, সেই বিজ্ঞানময় শাস্ত্রকে সমাজবিজ্ঞান বলে।

সমাজবিজ্ঞানীগণ সমাজবিজ্ঞানকে নানা ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন,

যেমন ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী ডুর্খেইম বলেছেন,”সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজিক প্রতিষ্ঠান সমূহের বিজ্ঞান”।

এল.এফ.ওয়ার্ড এবং গ্রাহাম সামনার-এর মতে, “সমাজবিজ্ঞান হল সামাজিক ঘটনাবলির বিজ্ঞান”। ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী ডুর্খেইম বলেন যে, “সমাজবিজ্ঞান হল সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান”।

ম্যাকাইভার ও পেজ-এর মতে, “সমাজবিজ্ঞানই একমাত্র বিজ্ঞান যা সমাজ ও মানুষের সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে আলােচনা করে।”

উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলাের আলােকে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সমাজের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ। মূলত গােটা সমাজের নিখুঁত বিশ্লেষণই সমাজবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য। এ প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গােটা সমাজই সমাজবিজ্ঞানের পরিধিভুক্ত।

সমাজবিজ্ঞান সমাজের আদি হতে অন্ত সকল দিক পর্যালোচনা করার মাধ্যমে মানব সমাজ এবং মানুষের ব্যাপারে সম্যক ধারণা প্রদান করে।

সমাজ বিজ্ঞানের জনক কে

বিজ্ঞানী অগাস্ট কোৎকে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

অগাস্ট কোৎ(Auguste comte) ১৮৩৯ সালে সর্বপ্রথম sociology বা সমাজবিজ্ঞান শব্দটি উদ্ভাবন করেন। এর পূর্বে অগাস্ট কোৎ( Auguste comte) সমাজবিজ্ঞানকে বৈজ্ঞানিক মর্যাদা দেবার জন্য social physics বা সামাজিক পদার্থবিদ্যা নামকরণ করেন। পরে অবশ্য তিনিই এই বিষয়টিকে sociology বলে আখ্যায়িত করেন।

অগাস্ট কোৎই সর্বপ্রথম সমাজ সম্পর্কিত বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। অগাস্ট কোৎ-এর মতে, সমাজবিজ্ঞান হলো এমন একটি ধারণা যেখানে সামাজিক সমস্যা, ঘটনাবলি ও পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা হয়।

১৮৩০ হতে ১৮৩৯ সালের মধ্যে অগাস্ট কোৎ তার ছয় খন্ডে রচিত positive philosophy গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থে তিনি মানবচিন্তা ও সমাজ বিকাশের তিনটি পর্যায়ের সূত্রের কথা উল্লেখ করেন যেখানে মানবজ্ঞানের তথা সামাজিক বিবর্তন ঘটে।

মানবজ্ঞানের তথা সামাজিক বিকাশের তিনটি পর্যায়ের সাথে তিনি তিন ধরণের সমাজ-ব্যবস্হার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করেন। নিম্নে মানবচিন্তা বিকাশের তিনটি পর্যায় উল্লেখ করা হলোঃ

  • ধর্মতাত্ত্বিক স্তর
  • অধিবিদ্যার স্তর
  • দৃষ্টবাদী স্তর

অগাস্ট কোৎ-এর মতে, সমাজবিজ্ঞানের ধারণা এমন একটি অন্যতম ধারণা যেখানে ধর্মতাত্ত্বিক স্তর হয়ে অধিবিদ্যার স্তর পার হয়ে দৃষ্টবাদী স্তরে উপনীত হয়। ধর্মতাত্ত্বিক স্তরের সাথে প্রাচীন( primitive) বা আদিম সমাজ, অধিবিদ্যার স্তরের সাথে মধ্যযুগীয় সমাজ অর্থাৎ সামন্তবাদ এবং দৃষ্টবাদী স্তরের সাথে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্হার কথা বলা হয়েছে।

কোৎ-এর মানবচিন্তার বিকাশের তিনটি পর্যায় পার হয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তার জগতে প্রবেশ এক অপরিহার্য পরিণতি। তাই অগাস্ট কোৎ-এর সামাজিক ধারণার মূলে প্রথমত ধর্ম, দ্বিতীয়ত দর্শন এবং সবশেষে বিজ্ঞানের অবদান বলে তিনি মনে করেন। আর এভাবেই তিনি সমাজবিজ্ঞানের ভিত্তি রচনা করেন।

সমাজ সেবা কাকে বলে

সমাজসেবা হল সামাজিক উন্নয়ন এবং নীতির সাথে সম্পৃক্ত একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রত্যয়। বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি কল্যাণ রাষ্ট্রই সমাজসেবার প্রতি সর্বোত্তম গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। কেননা সমাজসেবা ছাড়া কোন সমাজের সার্বিক কল্যাণ কখনও নিশ্চিত করা যায় না। শিল্পবিপ্লবোত্তর যুগে সমাজের কল্যাণসাধনের জন্য সমাজসেবাকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হতো। তখনকার সমাজে আর্তমানবতার সেবায় পরিচালিত যে কোন প্রকারের কর্মকাণ্ডকে সমাজসেবা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বর্তমান যুগেও সাধারণ জনগণ সমাজসেবা বলতে বুঝে থাকে দুস্থ ও অসহায় মানুষের সেবায় গৃহীত কর্মকাণ্ডকে। আর এজন্যই আধুনিক সমাজকল্যাণে সমাজসেবাকে এত বেশি গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়।

সমাজসেবা কি

সরকারি ও বেসরকারিভাবে সুসংগঠিত উপায়ে সমাজের সকল মানুষের সার্বিক কল্যাণে পরিচালিত যাবতীয় উন্নয়ন বা কল্যাণমূলক প্রচেষ্টার সমষ্টিকে সমাজসেবা বলা হয়।

বিভিন্ন মনীষীগণ সমাজসেবার সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন। নিম্নে তাঁদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হল।

সোশ্যাল ওয়ার্ক ডিকশনারী প্রদত্ত সংজ্ঞানুযায়ী, “সমাজসেবা হল সমাজকর্মী এবং অন্যান্য পেশাদার ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত সুসংগঠিত কার্যক্রম, যা মানুষের কল্যাণে ও স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে নিয়োজিত। এসব কার্যক্রম মানুষকে অধিক স্বনির্ভর হতে সাহায্য করে; পরনির্ভরশীলতা প্রতিরোধ করে পারিবারিক সম্পর্ক শক্তিশালী এবং ব্যক্তি, পরিবার, দল বা সমষ্টির সদস্যদের সফল সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।”

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কমিশন প্রদত্ত সংজ্ঞানুযায়ী, “Social services is an organized activity that aims at helping towards a mutual adjustment of individuals and their environment.” অর্থাৎ ব্যক্তি ও তার পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য বিধানে সহায়তা করার লক্ষ্যে সংগঠিত কার্যক্রমের সমষ্টি হল সমাজসেবা।

ম্যারি এম. ক্যাশডি এর মতে, “Social services are those organized activities that are primarily and directly concerned with the conservation, the protection and the improvement of human resources.”, অর্থাৎ, সমাজসেবা বলতে সেসব সংগঠিত কার্যাবলির সমষ্টিকে বুঝায়, যেগুলো প্রাথমিক ও প্রত্যক্ষভাবে মানবসম্পদ উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও প্রতিরোধের সাথে সংশ্লিষ্ট।

সুতরাং উল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজসেবা হল সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সুসংগঠিতভাবে পরিচালিত সেসব কার্যাবলির সমষ্টি যা মানুষের কল্যাণ, উন্নতি ও প্রগতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট। সমাজসেবামূলক কার্যাবলির মধ্যে সামাজিক সাহায্য, সামাজিক বীমা, শিশুকল্যাণ, সংশোধনমূলক কার্যক্রম, মানসিক স্বাস্থ্য, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিত্তবিনোদন, শ্রমকল্যাণ, গৃহসংস্থান ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।

সমাজ সংস্কার কি, সমাজ সংস্কার বলতে কি বুঝায়, সমাজ সংস্কার বলতে কি বুঝ

সমাজের উন্নতি অগ্রগতি ও প্রগতির অন্তরায় হিসেবে অনেক ধরণের কুসংস্কার, কুপ্রথা, রীতিনীতি, বিশ্বাস, গোঁড়ামী থাকে, সমাজকাঠামো থেকে এ ধরণের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলনের ফলশ্রুতিকে সমাজসংস্কার বলা হয়।

সমাজ কর্ম কাকে বলে, সমাজ কর্ম কি

সমাজকর্ম শব্দ বা এর এর জনক কে তা জানা যায়নি। কিন্তু W.F.Friedlander সমাজকর্মের সর্বপ্রথম এর ধারনা বা সংজ্ঞা দিয়েছেন বলে ধারনা করা হয় তিনি বলেনঃ- “Social Work is a professional service based upon scientific knowledge and skills in human relations which assists individuals , alone or in groups , to obtain social and personal satisfaction and independence”

সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারি পেশা যা সমাজের দুঃস্থ, অসহায়, গরিব লোকদের সাহায্যকারি পেশা হিসেবে পরিচিত। সমাজকর্ম শুধু সমাজের অসহায় লোকদের সাহায্য করে না অধিকন্তু তারা যাতে সাবলম্ভি হতে পারে সেই দিক লক্ষ্য রেখে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

সমাজকর্মের বৈশিষ্ট্য

নিম্নে সমাজকর্মের বৈশিষ্ট্য গুলো তুলে ধরা হলো –

  • ১।জনগণের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করা।
  • ২। দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবসম্পদ উন্নয়ন।
  • ৩। এতিম, অসহায় ও দরিদ্র শিশুদের কল্যাণ সাধন করা।
  • ৪। অপরাধ সংশোধন।
  • ৫। গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন সাধন।
  • ৬। মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধন করা।
  • ৭। অসহায় জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন সাধনে সম্পদশালী জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করা।
  • ৮। প্রতিবন্ধীদের কল্যাণ সাধন করা।
  • ৯। রোগীদের কল্যাণ করা।
  • ১০। পতিতাবৃত্তি প্রতিরোধ করা।
  • ১১। দক্ষ সমাজকর্মী তৈরি করা।
  • ১২। সচেতন করে তোলা
  • ১৩। সামাজিক সমস্যাগুলোর প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা।
  • ১৪। সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন করা।
  • ১৫। পরিবর্তিত আর্থসামাজিক অবস্থার সাথে মানুষকে যথাযথভাবে খাপখাওয়াতে সাহায্য করা।
  • ১৬। পরিকল্পিত সামাজিক পরিবর্তন আনয়ন।
  • ১৭। জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।
  • ১৮। জনগণকে সংগঠিত করা।

সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

সমাজকর্মের বিভিন্ন সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে যে সকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে তা নিয়ে আলোচনা করা হলো:

১. সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণ : সকল সমাজেই কুসংস্কার সমাজ উন্নয়নের পথে বাধাস্বরুপ । ব্যাপক জনমত তৈরি, সামাজিক আন্দোলন সৃ্কি, আইন প্রণয়ন প্রভৃতির মাধ্যমে সমাজসংস্কার করা হয়। সমাজকর্ম এ লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। এটি এর গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যের মধ্যে একটি।

২. প্রয়োজনীয় সম্পদের ব্যবস্থা : সম্পদ বলতে বস্তুগত ও অবস্তুগত দু’ধরনের সম্পদকেই বুঝায় । সমাজকর্ম বিশ্বাস করে যে, সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য সম্পদ. অপরিহার্য । তাই সামাজিক সমস্যা সমাধানে সম্পদ সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য ।

৩. জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা : যে কোন সমস্যার সমাধানের জন্য সমস্যাগরস্ত জনগণের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।কারণ সংগঠিত জনগণই শত্তি। জনগণের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে সামাজিক সমস্যার সমাধান অসম্ভব । আধুনিক সমাজকর্ম তাই সমস্টিগত অংশগ্রহণকে গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। এটি তার গুরুতুপূর্ণ লক্ষ্য ।

৪. মানবসম্পদের উন্নয়ন : মানবসম্পদের উন্নয়ন মানে সমাজের উন্নয়ন। মানুষকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করার নীতিতে সমাজকর্ম বিশ্বাস করে। দল, মত, নির্বিশেষে সমাজের সকল মানুষের উন্নয়নের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা আধুনিক সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য।

৫. সমন্বয় সাধন : সকল সরকারি ও বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে সমাজের সর্বাধিক কল্যাণ করা সম্ভব। কারণ সমন্বয়হীন কাজের মাধ্যমে সুফল আশা করা যায় না। সমাজের মঙ্গলে নিয়োজিত সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য

৬. জাতীয় উন্নয়ন: জাতীয় উন্নয়ন বলতে সম দেশের উন্নয়নকে বুঝানো হয়েছে। এখানে বিশেষ ব্যক্তি বা কোন অঞ্চলের উন্নয়নকে আনা যাবে না। সমাজের সকল শ্রেণীর উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নকে তরান্বিত করা আধুনিক সমাজকর্মের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।

৭. পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন : মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটলে অনেক সমস্যারই সমাধান সম্ভব হয়। সমাজকর্ম চায় সমাজে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশ বজায় থাকুক। তাই কিভাবে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের বিস্তৃতি ঘটানো যায় সেই লক্ষ্যে সমাজকর্ম কাজ করে থাকে।

৮. সমস্যার বৈজ্ঞানিক সমাধান : সমাজের প্রকৃত কল্যাণের জন্য সমস্যার স্থায়ী সমাধান অত্যাবশ্যক। স্থায়ী সমাধান তখনি সম্ভব যখন সমস্যাকে বৈজ্ঞানিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত তথা স্থায়ী সমাধানের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন সাধন সমাজকর্মের লক্ষ্য।

৯. ব্যক্তিত্বের বিকাশ : সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশের মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিত্ব প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিত্ব বিকশিত হলে ব্যক্তি নিজেই তার নিজের সমস্যা মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। মানুষের প্রতিভার বিকাশের মাধ্যমে ব্যন্তি প্রতিষ্ঠিত করা সমাজকর্মের একটি লক্ষ্য ।

১০. ব্যক্তিস্বাধীনতা অর্জন: সমাজকর্ম ব্যত্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী । মানুষের উপর কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার নীতিতে বিশ্বাস করে না। মানুষকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করে সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা কায়েম করা সমাজকর্মের আরেকটি লক্ষ্য ।

১১. ন্যায়বিচার কায়েম করা : সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।মানবাধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা ও শোষণ নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে সামাজিক ন্যায়বিচার কায়েমের লক্ষ্যে সমাজকর্ম কাজ করে থাকে।

১২. অধিকার ও দায়িতু সম্পর্কে সজাগ করা : অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে জাগ্রত না থাকলে আমরা তাকে বলি, অসচেতন মানুষ। যারা সচেতন নয় তাদের পক্ষে সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সমাজকর্মের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে তার কর্তব্য ও অধিকার সম্বন্ধে জাগ্রত করে তোলা ।

১৩. দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সাধন : সমাজকর্ম চায় মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি হোক আধুনিক। সনাতন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আধুনিক সমাজকর্মের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনে মানুষের মানসিকতা বিজ্ঞানভিত্তিক এ লক্ষ্যে সমাজকর্মের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

সুশীল সমাজ কাকে বলে, সুশীল সমাজ কি

ইংরেজী civil soceity শব্দের পরিভাষা হলো সুশীল সমাজ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা একে লোক সমাজ, গণ সমাজসহ আরো নানা শব্দে সুশীল সমাজকে সংঙায়িত করেছেন।

সাধারণভাবে বলা যায়, সুশীল সমাজ হল একটি সংগঠিত গোষ্ঠী, যার সদস্যরা সরকারের কাছ থেকে নাগরিক অধিকার অর্জনের জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে একত্রিত হয়। সুশীল সমাজ ব্যক্তি ও সরকারের মধ্যে একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। সুশীল সমাজ কখনও কখনও সরকার ও জনগণের মধ্যকার দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দেশ ও অঞ্চলভেদে সুশীল সমাজ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পরিচালিত হয়।

এরা সাধারণত বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। সুশীল সমাজের রয়েছে চারটি মৌলিক উপাদান-

  • ১. বহুত্ববাদ বা বহুদলীয় গণতন্ত্র বা উদার গণতন্ত্র
  • ২. জনমত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা
  • ৩. গোপনীয়তা ও
  • ৪. বৈধতা।

জনগণের নাগরিক অধিকার রক্ষায় এরা কখনো কখনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, কখনো কখনো সুশীল সমাজকে গণস্বার্থের বিপরীতে কোন গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারে নেতিবাচক ভূমিকা পালনে তৎপর দেখা যায়।

সুশীল সমাজকে (Civil society) সমাজের “তৃতীয় বিভাগ” হিসেবে বোঝা হয়, যা সরকার এবং বাণিজ্য থেকে আলাদা।অন্যান্য লেখকদের মতে, “সুশীল সমাজ শব্দটিকে

  • (১) বেসরকারী সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের সমষ্টি হিসেবে বোঝানো হয় যা নাগরিকদের স্বার্থের ব্যাপারে আগ্রহী হয়, অথবা
  • (২) সমাজের কোন ব্যক্তি বা সংগঠন যা সরকার-নিরপেক্ষ হয়ে থাকে।

কখনও কখনও সুশীল সমাজ শব্দটি “বাকস্বাধীনতা, স্বাধীন বিচারবিভাগ ইত্যাদির মত উপাদান অর্থে ব্যবহৃত হয় যেগুলো একটি গণতান্ত্রিক সমাজ তৈরি করে (কলিন্স ইংলিশ ডিকশনারি )। বিশেষ করে প্রাচ্যের ও মধ্য ইউরোপের চিন্তাবিদদের আলোচনায় সুশীল সমাজকে নাগরিক মূল্যবোধের আদর্শ ধারণা হিসেবেও দেখা হয়।

সুশীল সমাজের বৈশিষ্ট্য

এটি একটি সুশীল সমাজ হিসাবে বিবেচিত হওয়ার জন্য, নিম্নলিখিতগুলি অবশ্যই পূরণ করতে হবে:

  • এই অংশীদারিতে কমপক্ষে দু’জন অংশীদার রয়েছেন।
  • একটি সংবিধান চুক্তি রয়েছে, এটি হ’ল যারা দলটি গঠন করেন তাদের দ্বারা স্বাক্ষরিত একটি দলিল।
  • যে সমস্ত অংশীদার স্ব-কর্মসংস্থান হিসাবে নিবন্ধিত হয়।
  • তাদের একটি ব্যক্তিগত এবং সীমাহীন দায়িত্ব রয়েছে, এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে যদি কোনও সমস্যা দেখা দেয় তবে তাদের অবশ্যই প্রতিটি অংশীদারের পক্ষ থেকে উপস্থিত এবং ভবিষ্যতের সমস্ত সম্পদের সাথে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।
  • যে তারা তাদের উপর প্রভাবিত করগুলি মেনে চলে, যেমন কর্পোরেশন কর।
  • তারা নাগরিক কোড এবং বাণিজ্যিক কোড উভয় দ্বারা পরিচালিত হয়।

সুশীল সমাজের প্রধান গঠনগত উপাদান আছে:

1) স্ব-গঠিত আত্মশাসন উপর ভিত্তি করে, সম্প্রদায়। এই পরিবার খামার কর্পোরেশন, সমিতি ও সমাজের অন্যান্য দলের অন্তর্ভুক্ত;

2) সংগ্রহ কমিউনিটি জনসংযোগ কার্যক্রম অন্তর্গত নয়;

3) ব্যক্তিগত ও কাজ মানুষের, তাদের রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য গঠিত জীবনে;

4) স্ব-শাসন সংগঠন মুক্ত মানুষ রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে অননুমোদিত হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করা পরিধি।

বিজ্ঞান এই উপাদান সামাজিক-রাজনৈতিক বিভাগ, অথবা স্বাধীন রাষ্ট্র ও আইনি প্রতিষ্ঠান, যা সুশীল সমাজের লক্ষণ গঠন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হয়।

ভারতের গ্রামীণ সমাজের বৈশিষ্ট্য

গ্রামীণ সমাজের প্রকৃতি আলোচনা করলে এর বৈশিষ্ট্যগুলির পরিচয় পাওয়া যায়। গ্রামীণ সমাজের বহু এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বর্তমান। বৈশিষ্ট্যগুলি হল – 

১. কৃষি বৃত্তি :- মূলত কৃষিকে কেন্দ্র করেই গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয়ে থাকে। গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সদস্যরা হলেন প্রধানত কৃষিজীবী। গ্রামবাসীদের পেশা ও জীবিকার উৎস হলো কৃষি। গ্রামবাসীদের অন্যান্য আনুষঙ্গিক রুজি রোজগারের উপায় – উৎস থাকলেও সেগুলো মূলত কৃষির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদন্ডই হল কৃষি। 

২. জনসম্প্রদায়গত চেতনা :- গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে এক সমষ্টিগত চেতনার অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে গভীর ঐক্যবোধের বর্তমান থাকে।  স্বভাবতই গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে এক গভীর জনসচেতনার সৃষ্টি হয়। 

৩. যৌথ পরিবার ব্যবস্থা :- গ্রামীণ সমাজের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো যৌথ পরিবার ব্যবস্থা। একান্নবর্তী যৌথ পরিবার ব্যবস্থার অস্তিত্ব গ্রামাঞ্চলে এখনো কমবেশি বর্তমান। এর একটি বড় কারণ হল গ্রামাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির কারণে গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মধ্যে যৌথ পরিবার ব্যবস্থার প্রচলন পরিলক্ষিত হয়। 

৪. সরল গ্রামীণ জীবন :- সরলতা গ্রামীণ সমাজ ও সম্প্রদায়ের সদস্যদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রকৃতিগতভাবে গ্রাম অঞ্চলের অধিবাসীরা সহজ ও সরল। তাদের জীবনধারা সহজ স্বচ্ছন্দ ও শান্তিপূর্ণ। গ্রামবাসীদের আচরণের মধ্যে সঠতা থাকে না। তাদের আচার-ব্যবহার হলো কৃত্রিমতা বর্জিত এবং স্বতঃস্ফূর্ত। 

৫. প্রতিবেশীসুলভ আচরণ :- গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক ও ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়। গ্রামীণ জনসম্প্রদায় সাধারণত স্বল্প আয়তন বিশিষ্ট হয় ও সীমাবদ্ধ পরিসরের মধ্যে এই ধরনের জনসম্প্রদায় গড়ে ওঠে। এই সমস্ত কিছুর জন্য গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে প্রতিবেশী সুলভ আচরণ তৈরি হয়। 

৬. বিচ্ছিন্নতা :- গ্রামীণ পরিবারগুলির মধ্যে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা বর্তমান থাকে। এই বিচ্ছিন্নতা গ্রাম অঞ্চলের অধিবাসীদের ব্যক্তিগত বিচ্ছিন্নতা নয় ; এ হল গ্রামীণ পরিবারগুলো মধ্যে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা। যেহেতু গ্রামবাসীদের অধিকাংশ আর্থসামাজিক প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা যে যার পরিবারের মধ্যেই করে থাকে – সেহেতু গ্রামীণ জীবন স্বল্প পরিমাণে হলেও বিচ্ছিন্ন হয়। 

৭. দারিদ্রতা :-  ভারতীয় গ্রামীণ সমাজের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দারিদ্রতা। গ্রাম অঞ্চলের অধিবাসীদের মুখ্য জীবিকা হল কৃষি। কিন্তু কৃষির উপর জনসংখ্যার চাপ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।  তাদের রুজি রোজগার অত্যন্ত কম আর এসব কিছুর ফলশ্রুতি হিসেবে দারিদ্রতা গ্রামের মানুষের  জীবনসঙ্গী। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে পরিপূরক উপার্জনের সংস্থানও অত্যন্ত কম। 

৮. অশিক্ষা ও নিরক্ষরতা :- ভারতের গ্রামীণ সমাজ অনেকাংশে অশিক্ষার অন্ধকারে আচ্ছন্ন। এখানে নিরক্ষরতার হার অত্যন্ত বেশি এবং শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা এখানে নিতান্তই কম। গ্রামাঞ্চলে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ সুবিধা অত্যন্ত সীমাবদ্ধ। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটলেও উচ্চশিক্ষার দরজা গ্রাম গুলির জন্য যেন বন্ধই থাকে। বিদ্যালয়গুলির জরাজীর্ণ অবস্থা , শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অনীহা , অর্থের অভাব – এসকল হলো গ্রাম অঞ্চলে অশিক্ষা ও নিরক্ষরতার প্রধান কারণ। 

৯. স্বয়ংসম্পূর্ণতা :- স্বয়ংসম্পূর্ণতা ভারতের গ্রামীণ সমাজের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হয়।  ভারতের গ্রামগুলি মোটামুটি স্বনির্ভর। অন্তত উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ভারতীয় সমাজের স্বয়ংসম্পূর্ণতা পরিলক্ষিত হয়। তবে ইংরেজ শাসন এবং স্বাধীনতার পর অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং বিশ্বায়নের পরবর্তী সময়ে এই স্বয়ংসম্পূর্ণতা বহুলাংশে বিলুপ্ত হয়েছে। 

১০. রক্ষণশীলতা :- ভারতের গ্রামাঞ্চলের সমাজ ও জনসম্প্রদায় মধ্যে রক্ষণশীলতা বিশেষভাবে বর্তমান। গ্রামাঞ্চলের অধিবাসী সনাতন প্রথা ও ঐতিহ্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকেন। গ্রামবাসীরা প্রচলিত জীবনধারার আঁকড়ে ধরে থাকতে আগ্রহী। এর ফলে একদিকে যেমন ঐতিহ্য ও রক্ষণশীলতা রক্ষিত হয় অন্যদিকে সামাজিক সচলতা ও আধুনিকতার পথ বন্ধ হয়। 

১১. স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা :- স্বাধীন ভারতে গ্রামাঞ্চল গুলিতে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা হিসাবে পঞ্চায়েতিরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মূলত তিনটি স্তরের পঞ্চায়েতিরাজ স্বায়ত্তশাসনের পরিচালনা করে থাকেন।  গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ এই স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে থাকেন। 

১২. গ্রামীণ সমাজে ধর্মীয় প্রভাব :- গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীদের জীবনযাত্রায় ধর্মের প্রভাব অত্যন্ত বেশি থাকে। ধর্মের সাথে কুসংস্কারচ্ছন্নতাও গ্রামীণ জীবনে উল্লেখযোগ্য ভাবে দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এর প্রভাব অতিমাত্রায় বেশি থাকে। এখানে অধিবাসীদের জীবনধারা ধর্মীয় বিষয় দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। 

১৩. জাতি ব্যবস্থার প্রাধান্য :- ভারতীয় গ্রামীণ সমাজে জাতি ব্যবস্থার প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। বর্ণ ও জাতিভেদের ভিত্তিতে ভারতের গ্রামীণ জীবন ক্রম স্তরবিন্যাস্ত। গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীরা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত থাকেন ও তাদের ভূমিকা ও মর্যাদা , সুযোগ-সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা প্রভৃতি গ্রামবাসীদের জীবনধারার বিভিন্ন বিষয় নির্ধারিত নিয়ন্ত্রিত হয় জাতিব্যবস্থার দ্বারা। 

সাম্প্রতিক কালে ভারতের গ্রামগুলিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। ভারত সরকার এবং রাজ্য সরকার গ্রামীণ পুনর্গঠনের ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে উদ্যোগী হয়েছে এবং বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সরকারি উদ্যোগে রাস্তাঘাট ও যোগাযোগব্যবস্থা, প্রাথমিক শিক্ষা , উচ্চশিক্ষা – ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তাছাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতাল গড়ে তোলার ব্যাপারে গ্রামগুলিতে বহু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আধুনিক জীবন ধারার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী ও পরিষেবা আজ গ্রামগুলোতে উপস্থিত। ভারতের গ্রামাঞ্চলের সঙ্গে শহরাঞ্চলের এখন গভীর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীদের চিন্তা-চেতনায় , আচার-ব্যবহারে এখন আধুনিকতার সুস্পষ্ট প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়।

আরো পড়তে: রাষ্ট্র কাকে বলে, রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি, রাষ্ট্র বিজ্ঞানের জনক কে, রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য কি

রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য কি, রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য

মানুষ দলবদ্ধ হয়ে বাস করতে গিয়ে সমাজ সৃষ্টি করেছে। মানুষ নিজের প্রয়োজনেই সমাজের সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-

রাষ্ট্রসমাজ
আইনগত বিচারে রাষ্ট্র হলো একমাত্র সংগঠিত প্রতিষ্ঠান। দেশের শাসনব্যবস্থাকে কার্যকর করার বৈধ ও পরিপূর্ণ দায়িত্ব এ রাষ্ট্রের উপরই ন্যস্ত আছে। তাই জাতির সকলেই এর সদস্য একই ব্যক্তি একই সাথে একাধিক রাষ্ট্রের সদস্য হতে পারে না। তাই রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য বিভক্ত হয় না।সমাজ হলো বহু সংগঠনের সমষ্টি। কোনো ব্যক্তি বিভিন্ন সামাজিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একই সাথে একাধিক সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণ করে। এভাবে সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের আনুগত্য একাধিক সমিতির প্রতি প্রসারিত হয় বা বিভক্ত হয়।
আইনগত উদ্দেশ্য সাধনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র হলো একমাত্র প্রতিষ্ঠান। একমাত্র রাষ্ট্রই আইন প্রণয়ন ও বলবৎকরণের কাজ সম্পাদন করে থাকে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য মূলত আইন বিষয়ক। বার্কারের মতানুসারে, “রাষ্ট্রের মুখ্য লক্ষ্য হলো বৈধ উদ্দেশ্য সাধন।” সমাজের উদ্দেশ্য হলো বহু ও বিভিন্ন। সমাজের আর্থিক, নৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রভৃতি বহু উদ্দেশ্য বর্তমান। বিভিন্ন সমিতি বা সংগঠনের মাধ্যমে সমাজে এসব দায়িত্ব সম্পাদিত হয়।
রাষ্ট্র একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সুসংগঠিত সরকারকে প্রয়োজনবোধে পরিবর্তন করা যায়, কিন্তু সার্বভৌম রাষ্ট্রের পরিবর্তন করা যায় না। সমাজ সর্বদা পরিবর্তনশীল। সমাজ জীবনের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য পূরণ এবং ব্যক্তির পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিকাশের জন্য প্রয়োজনবোধে সমাজকে পরিবর্তন করা যায়।
রাষ্ট্র সর্বাত্মক বা চরম সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। রাষ্ট্র ব্যক্তির স্বাধীনতা ও অধিকার সংরক্ষণ, ব্যক্তির প্রকৃত সত্তার বিকাশ, সামাজিক জীবন ও মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ধরনের আইন প্রণয়ন করে। এ আইনগুলো বাধ্যতামূলকভাবে নাগরিকদের উপর প্রযোজ্য। রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি আনুগত্য জ্ঞাপনই ব্যক্তির প্রধান কর্তব্য। রাষ্ট্রীয় আদেশের বিরোধিতা করা অন্যায় এবং গর্হিত কাজ।সামাজিক প্রথা ও রীতিনীতির ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
রাষ্ট্রে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পরিচালনার জন্য একটি সুনিয়ন্ত্রিত সরকার থাকে।সমাজ পরিচালনার জন্য কোনো সরকার থাকে না।
রাষ্ট্র কেবল মানুষের রাষ্ট্রনৈতিক জীবনকেই নিয়ন্ত্রণ করে।সমাজের পরিধি রাষ্ট্রের পরিধি অপেক্ষা অনেক ব্যাপক। সমাজ মানুষের সার্বিক দিক পরিচালনা করে। অর্থাৎ, মানবজীবনের সকল দিকই সমাজের পরিধিভুক্ত। মানুষের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি সাধনই হলো সমাজের উদ্দেশ্য।
রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য

সমাজ কাঠামো কাকে বলে, সমাজ কাঠামো কি, সুশীল সমাজ বলতে কি বুঝ

সমাজ কাঠামো কী এটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি ব্যাপক অধ্যায় যা এ ক্ষুদ্র পরিসরে আলোচনা সম্ভব নয়। তবুও স্বল্প পরিসরে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি।

সমাজকাঠামো একটি বিমূর্ত অথচ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মৌলিক প্রত্যয়। অধিকাংশ সমাজবিজ্ঞানীর মতে, সমাজবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয় হল সমাজকাঠামো। সমাজকে জানতে হলে ও বিশ্লেষণ করতে হলে সমাজের বাস্তবতায় প্রথম মনোনিবেশ করতে হয়।

সমাজকাঠামোর সংজ্ঞা

সমাজবিজ্ঞানী হার্বার্ট স্পেন্সার জীবতত্ত্বের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সর্বপ্রথম ‘কাঠামো’ শব্দটি ব্যবহার করেন। সমাজকাঠামোর সংজ্ঞা ব্যাখ্যা নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতানৈক্যের শেষ নেই। কার্ল ম্যানহেইম সমাজকাঠামোকে ‘কার্মিক গঠন’ বলে অভিহিত করেন। তার মতে, ‘কার্মিক সংযোগের কারণে সামাজিক গোষ্ঠিগুলো তাদের কর্মসূচি সম্পাদনে পরস্পরের সাথে জড়িত। র‍্যাডক্লিফ ব্রাউন বলেন, ‘ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সব ধরনের সামাজিক সম্পর্ক হচ্ছে সমাজ কাঠামো।’

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ সমাজবিজ্ঞানী নিডিল সমাজকাঠামোর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, ‘সমাজকাঠামো হলো একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সদস্যের পারস্পরিক সম্পর্কের একটি রূপ, যা তাদের ভূমিকার মধ্যে দিয়ে প্রতিভাত হয়।’

সমাজবিজ্ঞানী জিনবার্গ বলেন, “সামাজিক কাঠামো হচ্ছে কতকগুলো প্রধান দল বা প্রতিষ্ঠানের জটিল সম্পর্ক যার দ্বারা সমাজ গঠিত হয়।”

ম্যাকাইভার ও পেজ বলেন, “In the analysis of social structure the role of the diverse attitudes and interests of social beings is revealed.”

সমাজকাঠামো একটি সামগ্রিক রূপ। সমাজকাঠামো বলতে আমরা বুঝি কতকগুলো সংগঠনের পারস্পরিক সূত্রের সমন্বয় যোগসূত্রগুলো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্ম ও পরিবার দ্বারা প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে।

সমাজবিজ্ঞানী টি বি বটোমোর-এর মতে, “সমাজ কাঠামো হলো প্রধান প্রধান প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠীগুলোর একটি জটিল ব্যবস্থা।”

মার্কস ও এঙ্গেলস-এর মতে, সমাজকাঠামো সর্বদাই সমাজস্থ মানুষের জীবন প্রক্রিয়া থেকে উৎসারিত হচ্ছে।

নৃ-বিজ্ঞানী E.R. Leach তার Political System of Highland Burma বইতে বলেছেন, সমাজ হচ্ছে একটি সামগ্রিক সত্তা, আর কাঠামো হচ্ছে সাংগঠনিক রূপ। কাজেই সমাজস্থ মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া দ্বারা সুসংগঠিত জটিল ও নিবিড় সম্পর্কের যে জাল সৃষ্টি হয়, তাকে সমাজবিজ্ঞানীগণ সামাজিক কাঠামো হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

কতগুলো সমাজ নিয়ে রাস্ট্র তৈরী হয়। রাস্ট্র পরিচালনা করার জন্য সকলে মিলে একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করে। সরকার রাষ্ট্রের পরিচালনার একটি ক্ষুদ্র অংশ। রাষ্ট্র একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান।

পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক শিল্প বিপ্লবের ফলে গ্রামীণ সমাজকাঠামো এবং শহুরে সমাজকাঠামোর মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা গেলেও মূলত এ দেশের শহুরে জীবন বেশি দিনের নয়। পূর্বে শহুরে সমাজের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু বর্তমান গ্রামীণ মানুষের সমন্বয়েই শহর গড়ে উঠেছে। তাই গ্রামীণ সমাজও শহুরে সমাজের মধ্যে বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

সমাজ নিয়ে কিছু বাস্তব কথা, সমাজের কিছু বাস্তব কথা

  • একটি সমাজে বাস করতে হলে সকলের সাথে মিলে মিশে থাকতে হয়, সমাজের মধ্যে থেকে কেউ একাকী বা আলাদা থাকতে পারে না।
  • সমাজে বসবাসকারী জনগণের “নীতিবোধ” কিংবা আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে চারিত্রিক মূল্যবোধই হল সমাজ সংগঠনের প্রধান শক্তি। 
  • সমাজের সাধু ও অসাধু ব্যক্তিদের মধ্যে প্রভেদ এটাই যে যারা সাধু তারা কপট আর সকল অসাধুরা অকপট হয়। 
  • যে সব ব্যক্তিগণ কোনো সমাজের অন্তর্ভুক্ত নয়, তারা হয় দেবতা, না হয় পশু হবে।
  • সমাজে শান্তিপূর্ণ ভাবে বাস করতে হলে সমাজের যাবতীয় নিয়ম নীতি মেনে চলা খুব জরুরী।
  • তথাকথিত সমাজতন্ত্রবাদ ব্যাপারটা নিম্নপদস্থদের পুঁজিবাদ ছাড়া আর কিছুই না।  
  • বর্তমানে আমদের মধ্যে প্রায় সকলেই সামাজিক, কিন্তু তাও যেন আমাদের আশেপাশে সামাজিকতার বড় অভাব। 
  • সমাজকল্যাণ হল এমন এক ক্ষেত্র, যেখানে রাষ্ট্রসমাজ এবং ব্যক্তি প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট ভূমিকা ও দায়িত্ব রয়েছে।
আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | সমাজ

Q1. সমাজ কি

Ans – আমাদের চারপাশে যা কিছু রয়েছে তাদের একত্রে সমাজ বলে।

Q2. সমাজ কর্মের জনক কে

Ans – জন অ্যাডামস কে সমাজকর্মের জনক এবং Anna L. Dawes (এনা এল. ডয়েস) কে সমাজকর্ম শিক্ষার জনক বলা হয়।

Q3. সমাজ ইংরেজি কি

Ans – সমাজবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘ Sociology ‘ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ ‘ Socius ‘ এবং গ্রিক শব্দ ‘ Logos ‘ এর সমন্বয়ে । Socius শব্দের অর্থ সমাজ আর Logos শব্দের অর্থ অধ্যয়ন বা বিজ্ঞান । সুতরাং বুৎপত্তিগত অর্থে সমাজ বিজ্ঞান হলো Science of Society বা সমাজের বিজ্ঞান । সমাজের মানুষের উৎপত্তি , ক্রমবিকাশ , আচার – আচরণ , রীতিনীতি ধ্যান ধারণা প্রভৃতি সম্পর্কে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তাকেই সমাজবিজ্ঞান বলে ।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।