অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা কাকে বলে, অ্যাভোগাড্রো সংখ্যার মান কত, অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা কে আবিষ্কার করেন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা কাকে বলে

অ্যাভোগাড্রোর সূত্র অনুযায়ী স্থির তাপমাত্রা ও চাপে সম আয়তনের সকল গ্যাসে সমান সংখ্যক অণু থাকে। আবার স্থির তাপমাত্রা ও চাপে সকল গ্যাসেরই মোলার আয়তন সমান। এ দুটি সূত্র ও সিদ্ধান্তকে সংযুক্ত করে বলা যায়, স্থির তাপমাত্রা ও চাপে যেকোন গ্যাসের ১ মোলে সমান সংখ্যক অণু থাকে। যেহেতু তাপমাত্রা ও চাপের হ্রাস-বৃদ্ধিতে অণুর সংখ্যা বাড়ে না বা কমে না, সেহেতু সকল গ্যাসের ১ মোল পরিমাণে অণুর সংখ্যা সমান।

এ সকল গ্যাসকে শীতল করলে তারা প্রথমে তরল এবং পরে কঠিন পদার্থে পরিণত হবে; কিন্তু অণুর সংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি হবে না। সুতরাং সকল পদার্থের (কঠিন, তরল বা গ্যাসীয়) এক মোল পরিমাণে নির্দিষ্ট সংখ্যক অণু থাকে, এ সংখ্যাকে অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা বলা হয়। এ সংখ্যাকে ‘NA’ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

এটি একটি ধ্রুব সংখ্যা, তাই NA কে অ্যাভোগাড্রো ধ্রুবক-ও বলা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা দ্বারা এর মান ৬.০২৩ × ১০২৩ নির্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ, NA = ৬.০২৩ × ১০২৩অণু mol-1 (অণু প্রতি মোল)

কোনো পদার্থের ১ মোলে যে পরিমাণ অনু, পরমাণ, বা আয়ণ থাকে সেই সংখ্যাকে অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা বলে। অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা এর মান 6.02 * 10^23।

“অ‍্যাভোগাড্রো সংখ্যা” বা “অ‍্যাভোগাড্রো সংখ্যাবিদ্যা” একটি গাণিতিক বিভাগ যা স্পষ্টভাবে কোনও পূর্ণসংখ্যা নয় কিন্তু ভগ্নাংশ হলেও বিশিষ্ট ধরনের সংখ্যাগুলি অনুসরণ করে। অ‍্যাভোগাড্রো সংখ্যাগুলি বিস্তৃতভাবে হাতে বা স্থানাংকিতে উপস্থাপন করা হয় এবং এগুলির অনেক প্রয়োজন রয়েছে বিজ্ঞান, প্রকৃতির বিষয়বস্তুবিদ্যা, অথবা অন্যান্য ডোমেইনে।

অ‍্যাভোগাড্রো সংখ্যা সাধারিতভাবে অর্থবা বোঝার জন্য অনিশ্চিতকর হতে পারে, কারণ এগুলি পূর্ণসংখ্যা নয়। অনেক সময় এই সংখ্যাগুলি বাস্তব জীবনের সমস্যা বা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মডেল করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

একটি উদাহরণ দেওয়া যায়: যদি আপনি একটি দ্রুতগতি বা চলন্ত অবস্থানবিশেষ বৃদ্ধি করতে চান এবং তার জন্য প্রতিস্থানভিত্তিক ক্ষমতা বা একটি অসীম সংখ্যার প্রয়োজন হলে, তবে অ‍্যাভোগাড্রো সংখ্যা ব্যবহার করা হতে পারে।

অ্যাভোগাড্রো সংখ্যার মান কত

এক গ্রাম-অণু পরিমাণ যে-কোনো পদার্থে সমান সংখ্যক অণু থাকে । এই সংখ্যাকে অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা বলে । অ্যাভোগাড্রো সংখ্যার মান : 6.023 x 1023  ।

অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা NA দ্বারা বোঝানো হয়। এটি পরম মান। এটি যে কোনও পদার্থের এক মোলে এককের সংখ্যা উপস্থাপন করে।

এই সংখ্যাটি 6.022140857×1023এর সমতূল্য।

“স্থির তাপমাত্রা ও চাপে সম আয়তনের সকল গ্যাসে অনুর সংখ্যা সমান থাকে”। 

স্থির তাপমাত্রা (T) ও চাপে (P) কোন গ্যাসের ‘V’ আয়তনে অনুর সংখ্যা ‘n’ হলে গাণিতিকভাবে অ্যাভোগাড্রোর প্রকল্পটি লিখা যায়-

V α n  [তাপমাত্রা (T) ও চাপ (P) স্থির] 

V = K n  (K ধ্রুবক) 

এক মোল সকল গ্যাসে 6.02×10²³ টি অনু বিদ্যমান থাকে। 

6.02×10²³ এই সংখ্যাটি অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা নামে পরিচিত।

অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা কে আবিষ্কার করেন

অ্যাভোগাড্রো সংখ্যার নামকরণ করা হয়েছে ১৯ শতকের ইতালীয় রসায়নবিদ আমাদিও আভোগাদ্রোর নামানুসারে। ১৮১১ সালে তিনি প্রথম প্রস্তাব করেন যে কোন গ্যাসের আয়তন স্থির তাপমাত্রা ও চাপে তাতে বিদ্যমান অণু বা পরমাণু সংখ্যার সমান। ১৯০৯ সালে ফরাসী বিজ্ঞানী জিন বাপটিস্ট পেরিন ধ্রুবসংখ্যাটিকে অ্যাভোগাড্রোর সম্মানে নামকরণের প্রস্তাব করেন। পেরিন বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অ্যাভোগাড্রো সংখ্যার মান নির্ণয়ের চেষ্টা করেন এবং এ কারণে ১৯২৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

১৮৬৫ সালে সর্বপ্রথম জোহান জোসেফ লসমিডট্‌ ধ্রুবসংখ্যাটির মান নির্দেশ করেন। তিনি একটি নির্দিষ্ট আয়তনে অণুর সংখ্যা গণনা করার মত একই ধরনের একটি প্রক্রিয়ায় বাতাসের অণুগুলোর গড় ব্যাস নির্ণয় করতে সমর্থ হন। তার সম্মানে একক আয়তনে গ্যাসের অণুর সংখ্যাকে লসমিডট্‌ ধ্রুবক নামকরণ করা হয়েছে যা কিনা অ্যাভোগাড্রো সংখ্যার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।

অ্যাভোগাড্রো সংখ্যার নির্ভুল মান নির্ণয় করা সম্ভব হয় যখন ১৯১০ সালে আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী রবার্ট মিলিকান একটা ইলেকট্রনের চার্জ পরিমাপ করেন। ১৮৩৪ সালে মাইকেল ফ্যারাডের তড়িৎ বিশ্লেষণ এর গবেষণা গুলো থেকে জানা যায় এক মোল ইলেকট্রনের চার্জ সর্বদা স্থির বা ধ্রুব, যাকে বলা হয় ১ ফ্যারাডে। এক মোল ইলেকট্রনের চার্জকে একটা ইলেকট্রনের চার্জ দিয়ে ভাগ করে অ্যাভোগাড্রো সংখ্যার মান নির্ণয় করা যায়।

অ্যাভোগেড্রোর সংখ্যা কিভাবে আবিষ্কৃত হয়

অ্যাভোগেড্রো কিন্তু অ্যাভোগেড্রো সংখ্যা আবিষ্কার করেন নি।তিনি একজন আইনজীবী ছিলেন যিনি গণিত এবং পদার্থ বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হন। তিনি ১৮১১ সালে সর্বপ্রথম অনুমান করেন যে একই তাপমাত্রা এবং চাপে সমআয়তন বিশিষ্ট বিভিন্ন গ্যাসের সমান পরিমাণে অণু থাকে।

অ্যাভোগেড্রো সংখ্যা” শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেছিলেন ফরাসি পদার্থবিদ জিন ব্যাপ্টিস্ট পেরিন। ১৯০৯ সালে পেরিন ব্রাউনীয় গতির উপর তার কাজের ভিত্তিতে অ্যাভোগেড্রো সংখ্যার একটি অনুমান করেছিলেন এবং বিভিন্ন পদ্ধতিতে এর মান নির্ণয় করার চেষ্টা করেন। এরপর থেকে এই মৌলিক ধ্রুবক কে নির্ণয় করার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে।

অ্যাভোগেড্রো সংখ্যা নির্ভুল মান নির্ণয় করা সম্ভব হয় যখন ১৯১০ সালে আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী রবার্ট মিলিকান একটা ইলেকট্রনের চার্জ পরিমাপ করেন। একটি ইলেকট্রনের চার্জ ১.৬০২১৭৬৫৩ × ১০^-১৯ কুলম্ব। ১৮৩৪ সালে মাইকেল ফ্যারাডের তড়িৎ বিশ্লেষণ এর গবেষণা গুলো থেকে জানা যায় ১ মোল ইলেকট্রনের চার্জ সর্বদা ধ্রুব যাকে বলা হয় ১ ফ্যারাডে এবং এর পরিমান ৯৬৪৮৫.৩৩৮৩ কুলম্ব (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি (NIST) অনুসারে)।

এই ফ্যারাডে ধ্রুবক তথা এক মোর আধান কে একটি ইলেকট্রনের আধান দিয়ে ভাগ করলে অ্যাভোগেড্রো সংখ্যা পাওয়া যায় এবং এর পরিমান প্রতি মোলে ৬.০২২১৪১৫৩৬×১০^২৩ অনু বা পরমাণু।

অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা নির্ণয় করার আরও একটি পদ্ধতি হলো পরমাণু সংখ্যা গুনে। এজন্য প্রথমে একেবারে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র স্কেলে এক্সরে ডিফ্রাকশন পদ্ধতিতে একটি নির্ভেজাল কোন পদার্থের ক্রিস্টাল নমুনার ঘনত্ব নির্ণয় করে নেয়া হয়।তারপর ক্রিস্টালটির প্রতিটি ক্ষুদ্র একক এর দূরত্ব নির্ণয় করে তার মধ্যে থাকা পরমাণু সংখ্যা গুনে বের করা হয়।

কিভাবে প্রমাণ করা হয় যে ১ মোল পরমাণুতে এই সংখ্যক পরমাণু থাকে

রাসায়নিক পদার্থের পরমাণুর বেলায় পারমাণবিক ভর অথবা অনুর বেলায় আণবিক ভর কে গ্রাম এককে প্রকাশ করলে যে পরিমান পাওয়া যায় তাকে ওই পদার্থের ১ মোল বলা হয় এবং এই ১ মোলে ইলেকট্রনের চার্জের পরিমাণ ১ ফ্যারাডে। তাই আণবিক বা পারমাণবিক ভর যাই হোক না কেন ১ মোলে একই সংখ্যক পরমাণু বা অণু থাকে। অর্থাৎ ৬.০২২১৪১৫৩৬×১০^২৩ টি অক্সিজেন পরমাণুর ভর ১৬ গ্রাম বা ৬.০২২১৪১৫৩৬×১০^২৩ টি অক্সিজেন অনুর ভর ৩২ গ্রাম তেমনি ভাবে ৬.০২২১৪১৫৩৬×১০^২৩ টি পানির অণুর ভর ১৮ গ্রাম।

অ্যাভোগাড্রো সূত্রটি বিবৃত করো

অ্যাভোগাড্রোর প্রকল্পটি এরূপ – স্থির তাপমাত্রা ও চাপে সম আয়তনের মৌলিক ও যৌগিক সকল গ্যাসে সমান সংখ্যক অণু থাকে। বিপরীতভাবে বলা যায় যে, স্থির তাপমাত্রা ও চাপে যে কোন গ্যাসের সমান সংখ্যক অণু সম আয়তন দখল করে।

অ্যাভোগাড্রো প্রকল্প হতে প্রাপ্ত গাণিতিক ধারণাটি এরূপ, যদি কোন গ্যাসের আয়তন {V}এবং মোল সংখ্যা {n} হয় তবে, {V} is proportional to {n} ;(যখন তাপমাত্রা ও চাপ স্থির)

অ্যাভোগাড্রো সূত্রটি বিবৃত

উদাহরণস্বরূপ, যদি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে চারটি একই আয়তনের বেলুনে যথাক্রমে হাইড্রোজেন (H2), অক্সিজেন (O2), নাইট্রোজেন (N2) ও কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) গ্যাস ভরা থাকে এবং কোনভাবে প্রথম বেলুনে n সংখ্যক হাইড্রোজেন অণুর অস্তিত্ত্ব পাওয়া যায় তবে অ্যাভোগাড্রোর সূত্র অনুসারে অন্যান্য বেলুনগুলোতেও যথাক্রমে n সংখ্যক অক্সিজেন অণু, n সংখ্যক নাইট্রোজেন অণু এবং n সংখ্যক কার্বন ডাইঅক্সাইড অণু বিদ্যমান থাকবে; যদিও গ্যাসসমূহের রাসায়নিক ভর, গঠন ও প্রকৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটিই অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পের মূল ধারণা।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা

Q1. অ্যাভোগাড্রো সংখ্যার মান কে নির্ণয় করেন

Ans – ১৮৬৫ সালে সর্বপ্রথম জোহান জোসেফ লসমিডট্‌ ধ্রুবসংখ্যাটির মান নির্দেশ করেন।

Q2. অ্যাভোগাড্রো ধ্রুবক কাকে বলে

Ans – কোনো পদার্থের এক মোলে উপস্থিত একক সংখ্যাকে অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা বা অ্যাভোগাড্রো ধ্রুবক বলা হয়।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।