ব্যাকরণ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
ব্যাকরণে ভাষার স্বরূপ ও প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। ধ্বনি, শব্দ, বাক্য ইত্যাদি বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভাষার মধ্যকার সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করা ব্যাকরণের কাজ। ব্যাকরণগ্রন্থে এসব বৈশিষ্ট্যকে সূত্রের আকারে সাজানো হয়ে থাকে।
ব্যাকরণ কাকে বলে
“ব্যাকরণ” একটি সংস্কৃত শব্দ যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করা। কোন ভাষাকে বিশ্লেষণ করলে সেই ভাষার উপকরণ এবং উপাদানগুলোকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করে ভাষার অভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা সম্পর্কে জানা যায়। ব্যাকরণ ভাষার শৃঙ্খলা রক্ষা করে নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করে এবং তা প্রয়োগের রীতি সুত্রবদ্ধ করে। সুতরাং, ব্যাকরণকে ভাষার আইন বলা যায়।
সাধারনভাবে বলা যায় ,যে শাস্ত্রের সাহায্যে ভাষার স্বরূপ ও গঠণপ্রকৃতি নির্ণয় করে সুবিন্যস্ত করা যায় এবং ভাষা শুদ্ধরূপে বলতে, পড়তে এবং লিখতে পারা যায়, তাকে ব্যাকরণ বলে।
ব্যাকরণের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ : ‘ ব্যাকরণ ’ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ এবং এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে — বিশ্লেষণ । শব্দটির ব্যুৎপত্তি এরকম – বি+আ+√কৃ+অন = ব্যাকরণ
ব্যাকরণ যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশেষভাব বিশ্লেষণ। ব্যাকরনকে বলা হয় ভাষার সংবিধান। ব্যাকরণ না জানলেও ভাষা ব্যবহার করা সম্ভব তবে শুদ্ধভাবে মনের ভাব বা ভাষা প্রকাশ করতে চাইলে আপনাকে ব্যাকরণের নিয়ম-কানুন জানা আবশ্যক। ইংরেজিতে আমরা ব্যাকরণকে বলে থাকি Grammar যার অর্থ ‘শব্দশাস্ত্র’।
যে শাস্ত্রে কোনা ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপর বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলে
বাংলা ব্যাকরণের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা সম্পর্কে ভাষা বিজ্ঞানীগণ এখনাে পর্যন্ত একমত হতে পারেননি । তাঁরা এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত দিয়েছেনঃ
ড . মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেছেন
“ যে শাস্ত্র জানিলে বাঙ্গালাভাষা শুদ্ধরুপে লিখিতে , পড়িতে ও বলিতে পারা যায় , তাহার নাম বাঙ্গালা ব্যাকরণ ।
ড . সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে
যে শাস্ত্র কোনও ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া তাহার স্বরূপ , প্রকৃতি ও প্রয়ােগরীতি বুঝাইয়া দেওয়া হয় , সেই শাস্ত্রকে বলে সেই ভাষার ব্যাকরণ । যে শাস্ত্র বাংলাভাষার স্বরূপ ও প্রকৃতি সবদিক দিয়া আলােচনা করিয়া বুঝাইয়া দেওয়া হয় , তাহাকে বলে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বা বাংলা ব্যাকরণ । ”
ড . এনামুল হকের মতে
যে শাস্ত্রের দ্বারা ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া ইহার বিবিধ অংশের পারস্পরিক সম্বন্ধ নির্ণয় করা যায় এবং ভাষা রচনা কালে আবশ্যকমত সেই নির্ণীত তত্ত্ব ও তথ্য প্রয়ােগ সম্ভবপর হইয়া উঠে , তাহার নাম ব্যাকরণ।
ড . মুনীর চৌধুরীর মতে
যে শাস্ত্রে কোন ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়ােগবিধি বিশদভাবে আলােচিত হয় , তাকে ব্যাকরণ বলে ।
ড. হুমায়ুন আজাদের মতে
“ এখন ব্যাকরণ বা গ্রামার বলতে বোঝায় এক শ্রেণির ভাষা বিশ্লেষণাত্মক পুস্তক যাতে সন্নিবিষ্ট হয় বিশেষ বিশেষ ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগের সূত্রাবলি।”
” ব্যাকরণের সংজ্ঞা সম্পর্কে পণ্ডিতগণের বিভিন্ন মতামত আমরা লক্ষ্য করলাম । ওপরের সংজ্ঞাগুলাে থেকে ব্যাকরণ সম্পর্কে এ কথা বলা যায়,
ব্যাকরণ এমন একটি বিষয় যার মাধ্যমে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপ বিশ্লেষণ ও সমন্বয় সাধন করে ভাষার গঠন ও লিখনে শৃঙ্খলা বিধান করা যায় ।
মােটকথা ভাষার বিশ্লেষণ , গঠন ও লিখনে ব্যাকরণের কোনাে বিকল্প নেই । কেননা বাংলাভাষার ইতিহাস লক্ষ্য করলেই আমরা বুঝতে পারবাে , শুরু থেকেই ব্যাকরণবিদগণ এই শাস্ত্রের মাধ্যমেই ভাষার গঠন – প্রকৃতি , ভাষার উপাদান , উপকরণ সম্যকভাবে বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করেছেন এবং করছেন।
ব্যাকরণ কত প্রকার
ড. সুকুমার সেন ব্যাকরণকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন:
- বর্ণনামূলক ব্যাকরণ
- ঐতিহাসিক ব্যাকরণ
- তুলনামূলক ব্যাকরণ
ড. সুনীতিকুমার চট্রোপাধ্যায় ব্যাকরণকে চার ভাগে ভাগ করেছেনঃ
- বর্ণনামূলক ব্যাকরণ
- ঐতিহাসিক ব্যাকরণ
- তুলনামূলক ব্যাকরণ
- দার্শনিক বিচারমূলক ব্যাকরণ
বর্ণনামূলক ব্যাকরণ
এ ব্যাকরণ বিশেষ কোনো কালের কোনো একটি ভাষার রীতি ও প্রয়োগ বর্ণনা করা এর বিষয় এবং সে বিশেষ কালের ভাষা যথাযথ ব্যবহার করতে সাহায্য করা এর উদ্দেশ্য। বক্তারা কীভাবে কোনও ভাষা ব্যবহার করেন তা বিশ্লেষণ করে এবং তারা যে নিয়মগুলি অনুসরণ করছেন সেগুলি ছাড়িয়ে একটি বর্ণনামূলক ব্যাকরণ তৈরি করা হয়। অর্থৎ এটি কোনও ভাষা কীভাবে লিখিতভাবে এবং বক্তৃতায় ব্যবহৃত হচ্ছে তার একটি পরীক্ষা।
ঐতিহাসিক ব্যাকরণ
আধুনিক বা কোনো নির্দিষ্ট যুগের ভাষাগত প্রয়োগরীতি আলোচনা করে আলোচ্য ভাষার রূপটির বিকাশের ইতিহাস পর্যালোচনা করা এর লক্ষ্য। সময়ের সাথে সাথে একটি ভাষার ব্যাকরণগত বিকাশের অধ্যয়ন।
তুলনামূলক ব্যাকরণ
তুলনামূলক দুটি জিনিসকে তুলনা করতে ব্যবহৃত বিশেষণ বা ক্রিয়াপদের রূপ। অর্থাৎ যে শ্রেণীর ব্যাকরণ কোনো বিশেষ কালের বিভিন্ন ভাষার গঠন, প্রয়োগরীতি ইত্যাদির তুলনামূলক আলোচনা করে থাকে, তাহলে তাকে তুলনামূলক ব্যাকরণ।
দার্শনিক বিচারমূলক ব্যাকরণ
ভাষায় অন্তর্নিহিত চিন্তা প্রণালিটি আবিষ্কার ও অবলম্বন করে সাধারণভাবে কিংবা বিশেষভাবে ভাষার রূপের উৎপত্তি ও বিবর্তন কীভাবে ঘটে থাকে, তার বিচার করা এর পর্যায়ভুক্ত।
ব্যাকরণের এসব আলোচ্য বিষয় বিভক্ত হয় অন্তত চারটি ভাগে, যথা –
- ধ্বনিতত্ত্ব,
- রূপতত্ত্ব,
- বাক্যতত্ত্ব ও
- অর্থতত্ত্ব।
ধ্বনিতত্ত্ব
ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় ধ্বনি। লিখিত ভাষায় ধ্বনিকে যেহেতু বর্ণ দিয়ে প্রকাশ করা হয়, তাই বর্ণমালা সংক্রান্ত আলোচনা এর অন্তর্ভুক্ত। ধ্বনিতত্ত্বের মূল আলোচ্য বাগযন্ত্র, বাগযন্ত্রের উচ্চারণ প্রক্রিয়া ধ্বনির বিন্যাস, স্বর ও ব্যঞ্জনধ্বনির বৈশিষ্ট্য, ধ্বনিদল প্রভৃতি।
রূপতত্ত্ব
রূপতত্ত্বে শব্দ ও তার উপাদান নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই আলোচনায় বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়া, ক্রিয়াবিশেষণ ইত্যাদি স্থান পায়। বিশেষ গুরুত্ব পায় শব্দগঠন প্রক্রিয়া।
বাক্যতত্ত্ব
বাক্যতত্ত্বে বাক্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। বাক্যের নির্মাণ এবং এর গঠন বাক্যতত্ত্বের মূল আলোচ্য। বাক্যের মধ্যে পদ ও বৰ্গ কীভাবে বিন্যস্ত থাকে, বাক্যতত্ত্বে তা বর্ণনা করা হয়। এছাড়া এক ধরনের বাক্যকে অন্য ধরনের বাক্যে রূপান্তর, বাক্যের বাচ্য, উক্তি ইত্যাদি বাক্যতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়। কারক বিশ্লেষণ, বাক্যের যোগ্যতা, বাক্যের উপাদান লোপ, যতিচিহ্ন প্রভৃতিও বাক্যতত্বে আলোচিত হয়ে থাকে।
অর্থতত্ত্ব
ব্যাকরণের যে অংশে শব্দ, বর্গ ও বাক্যের অর্থ নিয়ে আলোচনা করা হয়, সেই অংশের নাম অর্থতত্ত্ব। একে বাগর্থতত্ত্বও বলা হয়। বিপরীত শব্দ, প্রতিশব্দ, শব্দজোড়, বাগ্ধারা প্রভৃতি বিষয় অর্থতত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া শব্দ, বর্গ ও বাক্যের ব্যঞ্জনা নিয়েও ব্যাকরণের এই অংশে আলোচনা থাকে।
ব্যাকরণের প্রধান কাজ কি
ব্যাকরণের কয়েকটি কাজ নিচে তুলে ধরা হলো–
- কোনাে ভাষার নিয়ম-নীতি লিপিবদ্ধ করাই ব্যাকরণের প্রধান কাজ।
- ভাষার বিশ্লেষণ করা ব্যাকরণের কাজ।
- ভাষার সৌন্দর্য সৃষ্টি করতে ব্যাকরণ সাহায্য করে।
- ব্যাকরণ ভাষা প্রয়ােগের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- ব্যাকরণের মাধ্যমে সুষ্ঠু জ্ঞানলাভ করা যায়।
- ব্যাকরণ ভাষা ও সাহিত্যের রস গ্রহণেও সহায়তা করে থাকে।
- ভাষার শিল্প সৌন্দর্য উপলদ্ধির জন্য ব্যাকরণ সাহায্য করে।
ব্যাকরণের ইতিহাস
পুর্তুগিজ পাদ্রি মনোএল দ্য আসসুম্পসাঁও প্রথমবারের মতো বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন ১৭৩৪ সালে ঢাকার ভাওয়ালে। প্রথম রচিত এ বাংলা ব্যাকরণের নাম ছিল, পুর্তুগিজ ভাষায়ঃ ‘ভোকাবুলারিও এম ইদিওনা বেনগলিয়া, ই পর্তুগিজ: দিভিদিদো এমদুয়াস পার্তেস’। পরবর্তীতে ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড ইংরেজিতে বাংলা ব্যাকরন রচনা করেন ১৭৭৮ সালে। এই ব্যাকরণের নাম ছিলঃ ‘A Grammar of the Bengali Language’. এই গ্রন্থটিকে পরবর্তীতে আবার সমৃদ্ব করে রচনা করেন উইলিয়াম কেরি ১৮১৮ সালে।
রাজা রামমোহন রায় প্রথমবারের মতো বাঙালি হিসেবে পূর্নঙ্গ ব্যাকরন রচনা করেন এবং তার রচিত গ্রন্থটির নাম ‘ গৌড়ীয় ব্যাকরণ’। বর্তমানে আমরা ব্যাপক অনুশীল করে থাকি ড. সুনীতিকুমার চট্রোপাধ্যায়ের রচিত ব্যাকরণ গ্রন্থ ‘ভাষাপ্রকাশ বাঙ্গলা ব্যাকরণ’(১৯৩৯) এবং ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রচিত ‘ব্যাকরণ পরিচয়’ (১৯৫৩)।
বাংলা ব্যাকরণ প্রথম রচনা করেন কে
১৮২৬ সালে রাজা রামমোহন রায় ইংরেজিতে বাংলা ব্যাকরণ লেখেন। এরপর তিনি স্কুল বুক সোসাইটির জন্য ঐ গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করে নাম দেন ‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ ‘ যা প্রকাশ হয় ১৮৩৩ সালে। আর এ গ্রন্থটি বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম বাংলা ব্যাকরণ গ্রন্থ।
ব্যাকরণ পাঠের প্রয়ােজনীয়তা
ব্যাকরণ পাঠের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ড . মুহম্মদ এনামুল হক বলেছেন , ‘ আলাে , জল , বিদ্যুৎ , বাতাস প্রভৃতি সম্বন্ধীয় বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য না জানিয়াও মানুষ বাঁচিয়াছে , বাচিতেছে ও বাঁচিবে । কিন্তু , তাই বলিয়া ! ঐ সমস্ত বস্তুর বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্যকে মানুষ অস্বীকার করিয়া বর্তমান সভ্যতার গগনবিচুম্বী সৌধ নির্মাণ করিতে পারে নাই ।
ব্যাকরণ না জানিয়াও ভাষা চলিতে পারে ; কিন্তু ভাষাগত সভ্যতা না হউক , অন্তত সভ্যতার পত্তন বা সমৃদ্ধি হইতে পারে না ।. . . এই জন্যই শিক্ষিত ব্যক্তির পক্ষে ব্যাকরণ – সম্বন্ধীয় সাধারণ জ্ঞানের সঙ্গে বিশেষ জ্ঞানও আবশ্যক ।
ভাষার প্রকৃতি ও স্বরূপ জানার জন্য: মনের ভাব অনেকভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে, যেমন: ইশারা, ইঙ্গিতে, কথা বা ছবির মাধ্যমে। তবে ভাষার মাধ্যমে মনের ভাব সঠিকভাবে প্রকাশ করতে ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজন আছে। কেননা ব্যাকরণ ভাষার প্রকৃতি বা স্বরূপ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভূলত্রুটি নির্ণয় করে শুদ্ধতার নিশ্চয়তা দেয়।
শুদ্ধ উচ্চারণ ও বানান শেখার জন্য: ভাষা লিখতে প্রয়োজন বর্ণের এবং উচ্চারণের জন্য প্রয়োজন ধ্বনির। আর এই বর্ণ এবং ধ্বনিগুলোর শুদ্ধ উচ্চারণ ও বানান ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়। বাংলা ভাষায় উ, ঊ এবং যুক্ত বর্ণের প্রচলন আছে। এছাড়াও আছে ণ,ন,শ,ষ,স এর ব্যবহার। ব্যাকরণ পাঠের মাধ্যমে এগুলোর উচ্চারণ পার্থক্য, বানান বিধি জানা যায়।
শব্দের অর্থ, গঠণ ও ব্যবহার জানার জন্য: শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে শব্দের সঠিক অর্থ নির্ণয়ের জন্য এবং নতুন শব্দ গঠণের জন্য রূপতত্ত্ব সম্বন্ধে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। শব্দ গঠণ এবং সংক্ষিপ্ত করার উপায় হচ্ছে সন্ধি, সমাস, প্রত্যয়, উপসর্গ প্রভৃতি। যেমন: তিন ফলের সমাহার না বলে আমরা বলি ‘ত্রিফলা ‘। ব্যাকরণ না জানলে এসব শব্দের ব্যবহার অসম্ভব।
বাক্য তৈরী ও তার অর্থ প্রকাশের জন্য: বাক্য গঠণ এবং এর সঠিক অর্থ প্রকাশের জন্য এর সাধারণ অর্থ, ভাবার্থ ও ব্যঞ্জনাময় অর্থ জানতে হবে। এছাড়া সরল বাক্য ও জটিল বাক্য গঠণ প্রক্রিয়া জানতে হবে যা বাক্যতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়। আবার একই শব্দ বাক্য গঠণের ভিন্নতার কারণে কখনও বিশেষ্য, কখনও বিশেষণ হয়। বাগধারার ব্যবহার, উক্তির পরিবর্তন প্রভৃতিতেও বাক্যতত্ত্ব সাহায্য করে।
কবিতা ও গানের ছন্দ এবং অলঙ্করণের জন্য: ছন্দের শুদ্ধতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়। তাছাড়া ভাষার অলঙ্কার প্রয়োগ এবং এর পদ্ধতিও ব্যাকরণ নির্ণয় করে।
সাহিত্যের গুণ বিবেচনার জন্য: সাহিত্যের গুণ, রীতি, দোষ, অলঙ্কার প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হলে ব্যাকরণ পাঠের বিকল্প নেই।
একটি ভাষা সম্বন্ধে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করতে হলে সেই ভাষার ব্যাকরণ পাঠের প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম , কারণ-
১ । ব্যাকরণ কোনও ভাষাকে বিশ্লেষণ করে তার স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করে । যে কোনাে ভাষার বিধি – বিধানের নিয়ামক হল ব্যাকরণ । তাই ব্যাকরণকে ‘ ভাষার সংবিধান ‘ বলা হয় ।
২ । ব্যাকরণ পাঠ করে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন – প্রকৃতি ও সে – সবের সুষ্ঠু ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায় এবং লেখায় ও কথায় ভাষা প্রয়ােগের সময় শুদ্ধি – অশুদ্ধি নির্ধারণ সহজ হয় ।
৩ । ভাষার সৌন্দর্য সম্ভােগের জন্যেও সেই ভাষার ব্যাকরণ পাঠ অবশ্য কর্তব্য ।
৪ । সাহিত্যরসিকদের মতে সাহিত্যের রস আস্বাদন করতে হলে পুরােপুরি সে রস গ্রহণ করতে হয় ; ব্যাকরণ সে রস গ্রহণের সহায়ক ।
৫ । ব্যাকরণের তত্ত্ব ও তথ্য সম্পর্কে উপযুক্ত জ্ঞান না থাকলে ভাষাগত আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে । তখন । উন্নত ভাবের বাহনরূপে ভাষাকে ব্যবহার করে উৎকৃষ্ট সাহিত্য সৃষ্টি করা যায় না ।
৬ । ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য স্বেচ্ছাচারিতা রােধ হয় , ফলে ভাষার বিশুদ্ধতাও রক্ষা পায় ।
৭ । মােটের ওপর ভাষার সামগ্রিক রূপটিকে বােধের উপযােগী করে তােলা ব্যাকরণ শিক্ষার লক্ষ্য । বাংলা ব্যাকরণের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযােজ্য ।
অতএব ভাষাপ্রয়ােগের জন্য এবং ভাষার সৌন্দর্য সম্পাদনের রীতি – নীতি ( যেমন — ধ্বনি , শ , ছন্দ , বাক্য । অলঙ্কার , বাগধারা প্রভৃতি ) জানা ও প্রয়ােগের জন্য ব্যাকরণ – জন অপরিহার্য । তবে একটি কথা মরণ রাখতে হবে – ভাষা আগে , পরে ব্যাকরণ ।
বাংলা ব্যাকরণের জনক কে
পর্তুগিজ ধর্মযাজক মানোএল দ্য আসসুম্পসাঁউ (Manoel da Assumpcam) বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ রচনা করেন। বাংলা ভাষার দ্বিতীয় ব্যাকরণটি রচনা করেন ইংরেজ প্রাচ্যবিদ ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড (Nathaniel Brassey Halhed)।
এছাড়া বাংলা ব্যাকরণের সরাসরি কোন জনকের নাম পাওয়া যায়নি।
ব্যাকরণ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কি
‘ব্যাকরণ’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশেষভাবে বিশ্লেষণ।
সংস্কৃত ব্যাকরণ = বি + আ + ✓কৃ + অন শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। ভাষা ব্যবহারের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম হচ্ছে ব্যাকরণ। এককথায় ব্যাকরণ হচ্ছে ভাষার সংবিধান।
আরো পড়তে: ভাষা কাকে বলে
ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি কাকে বলে
ব্যাকরণগত অবস্থানের ভিত্তিতে বাংলা ভাষার শব্দসমূহ যে কয় ভাগে বিভাজিত হয়েছে তাদের ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি বলে। প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণে শব্দশ্রেণিকে আট ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ব্যাকরণগতভাবে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে বিভাজন করার প্রক্রিয়া বা তার ব্যবহারকে ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি বলে।
ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি কয় প্রকার ও কী কী
প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণে শব্দশ্রেণিকে আট ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা :
১. বিশেষ্য;
২. সর্বনাম;
৩. বিশেষণ;
8. কিয়া;
৫. ক্রিয়াবিশেষণ;
৬. অনুসর্গ;
৭. যােজক এবং
৮. আবেগ শব্দ।
বিশেষ্য কাকে বলে
কোনাে কিছুর নাম বিশেষক পদকে বিশেষ্য পদ বলে। অর্থাৎ বাক্যের অন্তর্গত যে পদ দ্বারা ব্যক্তি, বস্তু, জাতি, গুণ, ভাব, কর্ম, সমষ্টি, স্থান, কাল ইত্যাদির নাম বোঝায়, তাকে বিশেষ্য পদ বলে।
যেমন- রানা বই পড়ে। উপরের বাক্যটিতে ‘রানা’ এবং ‘বই’ বিশেষ্য পদ।
বিশেষ্য পদ বাক্যে কর্তা, কর্ম বা কর্তার পরিপূরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
যেমন– শুচি (কর্তা) নাচে।
আমি মিতাকে (কর্ম) ভালােবাসি।
সর্বনাম কাকে বলে
বিশেষ্যের তথা নামের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে। সকল প্রকার নামের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় বলে এর নাম সর্বনাম।
যেমন- আমি, তুমি, সে, তিনি ইত্যাদি। সর্বনাম পদের ব্যবহারের দ্বারা একই পদের পুনরাবৃত্তি রোধ করা হয়, ফলে ভাষা সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়ে ওঠে।
যেমন-মিতা খুব ভালাে মেয়ে। মিতা প্রতিদিন কলেজে যায়। মিতাকে সবাই ভালােবাসে। উপর্যুক্ত বাক্যগুলােতে ‘মিতা’ নামটি বারবার ব্যবহৃত হওয়ায় ভাষা শ্রুতিকটু ও পুনরুক্তি দোষে দুষ্ট হয়েছে। ভাষার পুনরুক্তি দোষরােধে সর্বনাম পদ ব্যবহার করা হয়।
যেমন- মিতা খুব ভালাে মেয়ে। সে প্রতিদিন কলেজে যায়। তাকে সবাই ভালােবাসে।
বিশেষণ কাকে বলে
বিশেষণ শব্দের অর্থ গুণ নির্দেশ। যে শব্দশ্রেণি বিশেষ্য, সর্বনাম , ক্রিয়া, অব্যয় ও বিশেষণ পদের গুণ নির্দেশ করে অর্থাৎ দোষ গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ বলে। বিশেষণ অন্য শব্দশ্রেণিকে বিশেষিত করে, অর্থাৎ অন্য শব্দের অর্থকে সম্প্রসারিত (বিস্তৃত) বা সংকুচিত (সীমিত) করে।
যেমন- লাল জামা। দুষ্ট ছেলে। বেলে মাটি ইত্যাদি।
ক্রিয়া কাকে বলে
যে পদে কোনাে কার্য সম্পাদন বোঝায়, অর্থাৎ যে পদে বাক্যের মধ্যে কোনাে কালের বা কোনাে রকম কাজের অবস্থা, করা, যাওয়া, খাওয়া, চলা ইত্যাদি বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে। যেমন- অর্ণব বই পড়ে। বাক্যটিতে পড়ে ক্রিয়াপদ। বাক্যে মনের ভাব প্রকাশিত হয়। মনের ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারটিই প্রধান। সাধারণত ক্রিয়াপদ ব্যতীত বাক্য হয় না। তাই বাক্যে ক্রিয়াপদই মুখ্য। ক্রিয়াপদই বাক্যের প্রাণ।
ক্রিয়া-বিশেষণ কাকে বলে
যে বিশেষণ পদ বাক্যের ক্রিয়াকে বিশেষিত করে তাকে ক্রিয়াবিশেষণ বলে। মূলত, ক্রিয়াবিশেষণ ক্রিয়ার বিশেষ অবস্থা অর্থাৎ ক্রিয়া কীরূপে সম্পন্ন হয়েছে তা জানিয়ে দেয়। এটি ক্রিয়ার গুণ, প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও অর্থ প্রকাশক শব্দ হিসেবে কাজ করে এবং ক্রিয়ার সময়, স্থান, প্রকার, উৎস, তীব্রতা, উপকরণ ইত্যাদির অর্থগত ধারণা দেয়। ক্রিয়াবিশেষণ সাধারণত কর্ম ও ক্রিয়ার পূর্বে বসে।
যেমন- ট্রেন ধীরে চলছে।
অনুসর্গ শব্দ কাকে বলে
বাংলা ভাষায় এমন কিছু সহায়ক শব্দ আছে যা স্বাধীনরূপে বা শব্দ বিভক্তির ন্যায় বাক্যে অন্য কোনাে পদের পরে বসে সম্পর্কিত করে অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে। এগুলােকে অনুসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় বলে। অনুসর্গ পরে ব্যবহৃত হয়। পদের পরে ব্যবহৃত হয় বলে এদেরকে পরসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয়ও বলে।
অনুসর্গে কখনাে কখনাে বিভক্তির ন্যায় ব্যবহৃত হলেও এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বিভক্তি পূর্ণ শব্দ নয় অর্থাৎ শব্দ নিরপেক্ষ এদের কোনাে অর্থ নেই কিন্তু অনুসর্গ পূর্ণ শব্দ, তাই এদের স্বাধীন ও শব্দ নিরপেক্ষ অর্থ রয়েছে।
যেমন- রান্নার জন্য ঘর। এখানে রান্নার ‘র’ হচ্ছে বিভক্তি এবং ‘জন্য’ হচ্ছে অনুসর্গ। অনুসর্গগুলাে অব্যয়ের মতাে। এরা বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হলেও আকারের কোনাে পার্থক্য ঘটে না।
যেমন— জল বিনা স্নান সম্ভব নয়। বিনা কারণে সে জেল খেটেছে। বিনি সুতার মালা। আমাকে বিনা তার চলে না। বাংলা ভাষায় প্রচুর অনুসর্গ রয়েছে- প্রতি, বিনা, বিনে, বিহনে, ব্যতীত, বলে, বাবদ, বশত, সহ, সহকারে, সাথে, সঙ্গে, সহিত, মনে, অপেক্ষা, অধিক, অবধি, হেতু, হতে হইতে., পরে, পর, পর্যন্ত, পক্ষে , পাশে, পাছে, পানে, মাঝেমধ্যে, মতাে, নামে, নিচে, তলে, ভিতরে, ভিতর, নিমিত্ত, জন্যে, ছাড়া, ভিন্ন, উপর, চেয়ে , থেকে, কর্তৃক, দ্বারা, দিয়া/দিয়ে ,
যেমন-যেন, যথা অভিমুখে, কারণে, দরুন, দিকে, নাগাদ, বনাম, বদলে, বরাবর, বাইরে, সম্মুখে ইত্যাদি। এদের মধ্যে দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, জন্য, হইতে, থেকে, চেয়ে, অপেক্ষা, মধ্যে প্রভৃতি অনুসর্গ বিভক্তিরূপে ব্যবহৃত হয়।
যোজক শব্দ কাকে বলে
যে পদ শব্দশ্রেণি. একটি বাক্যাংশের/বাক্যের সাথে অন্য একটি বাক্যাংশের/বাক্যের অথবা বাক্যের অন্তর্গত একটি পদের সংযােজন, বিয়ােজন পৃথককরণ. বা সংকোচন ঘটায়, তাকে যােজক বলে। যােজকের মাধ্যমে একাধিক শব্দ, পদবন্ধ, বাক্যকল্প বা বাক্য সংযােজিত ও সম্পর্কিত হয়।
যেমন- কিন্তু, ও, আর, এবং, বা, অতএব, নইলে, তবু, অথচ, কারণ, যেহেতু, নতুবা, তাই, যদি-তবে, যত-তত ইত্যাদি যােজক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
যেমন- সে স্কুলে গিয়েছে এবং ইংরেজি পড়েছে। উচ্চপদ ও সামাজিক মর্যাদা সবাই চায়।
আবেগ শব্দ কাকে বলে
যে শব্দ বাক্যের অন্যান্য শব্দের সাথে সম্পর্কিত না থেকে স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয়ে মনের নানা ভাব ও আবেগকে প্রকাশ করে, তাকে আবেগ শব্দ বলে। সাধারণত আঃ, উঃ , উঁহু, অ্যাাঁ, আরে, আহা, ওরে, কী বিপদ, ছি ছি, কী জ্বালা, ই, বাঃ বেশ, মা গাে মা, শাবাশ, যাক গে যাক, দুর পাগল ইত্যাদি আবেগ শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন— ছি ছি। তুমি এত খারাপ। বাঃ! খুব সুন্দর কথা বলেছ।
সঞ্জননী ব্যাকরণ কাকে বলে
সমস্ত বাক্য কীভাবে সাত হয়, তার সংবাদ যে ব্যাকরণ দেয়, তাকে বলা হয় ‘সঞ্জননী ব্যাকরণ’। সমস্ত বাক্য কীভাবে সঞ্জাত হয়, তার সংবাদ যে ব্যাকরণ দেয়, তাকে বলা হয় ‘সঞ্জননী ব্যাকরণ।
ব্যাকরণ শিক্ষাদানের পদ্ধতি
ব্যাকরণ শিক্ষাদানের পদ্ধতিগুলি সূত্র পদ্ধতি, ভাষা পদ্ধতি, পাঠ্যপুস্তক পদ্ধতি, প্রাসঙ্গিক পদ্ধতি, বিশ্লেষন পদ্ধতি, আরোহী পদ্ধতি, অবরোহী পদ্ধতি।
সূত্রপদ্ধতি | Formula method
ছাত্রদের বারবার আবৃত্তি করে ব্যাকরণের সূত্রগুলি মুখস্থ করাতে হবে। এই পদ্ধতিতে ব্যাকরণ শিক্ষা নিলে ছাত্ররা কোনরূপ আকর্ষণ বোধ করে না, তার কাছে বিষয়টি নীরস মনে হয়। এই পদ্ধতিতে ছাত্ররা অনেক সূত্রই না বুঝেই মুখস্থ করে। এই পদ্ধতির দ্বারা লব্ধ জ্ঞান ছাত্রছাত্রীরা বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারে না। এটি বিজ্ঞানসম্মতও নয় আবার মনস্তত্ত্ব সম্মতও নয়।
ব্যাকরণ পাঠ্যপুস্তক পদ্ধতি | Textbook method
এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা অতিমাত্রার পুস্তক কেন্দ্রিক ও মুখস্থ নির্ভর হয়ে পড়ে।
ভাষা পদ্ধতি | Language use method
সাহিত্য পড়ানোর সময় ভাষার মধ্যে ব্যাকরণের নানা প্রয়োগ দেখানো হয়। তবে এতে অনেক সময় লাগে এবং ব্যাকরণ শিক্ষা আংশিক হয়।
প্রাসঙ্গিক পদ্ধতি | Contactual method
ভাষা শেখানো সময় প্রসঙ্গক্রমে ব্যাকরণের যে বিষয়গুলি আসে সেগুলি শেখানো হয়। এতে ধারাবাহিক ভাবে সবকিছু শেখানো যায় না এবং এই পদ্ধতিতে ব্যাকরণেরও সবকিছু শেখানো যায় না ৷
বিশ্লেষণ পদ্ধতি | Analytic method
এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সূত্রগুলিকে উদাহরণের সাহায্যে বারবার বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীদের কাছে বারবার উপস্থাপন করা হয়।
অবরোহী পদ্ধতি | Deductive method
ছাত্রদের ব্যাকরণ শিক্ষা দেওয়ার জন্য এই পদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এই পদ্ধতি অনুসারে জানা থেকে অজানা, পরিচিত থেকে অপরিচিতে যাওয়ার সুযোগ থাকে না।
আরোহী পদ্ধতি | Inductive method
বর্তমানে এই পদ্ধতিটিই শ্রেষ্ঠ । এটি অবরোহী পদ্ধতির এই পদ্ধতিতে উদাহরণ গুলিকে বিশ্লেষণ করে সূত্রমূলক সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | ব্যাকরণ, বাংলা ব্যাকরণ
Q1. কারক ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়
Ans – বাংলা ব্যাকরণের রূপতত্ত্ব অংশে কারক আলোচিত হয়।
Q2. উইলিয়াম কেরি কত সালে বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন
Ans – ইংল্যান্ড থেকে জাহাজযোগে কলকাতায় আসতে তখন সমুদ্র পথে প্রায় ছয় মাস সময় লাগত। এই সময় জাহাজের বাঙালি খালাসিদের কাছ থেকে তিনি বাংলা শেখেন। উইলিয়াম কেরি কথোপকথন (১৮০১) ও ইতিহাসমালা (১৮১২)। এই গ্রন্থ দুটোতে সূচনাকালীন বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন।
কথোপকথন (১৮০১) মানুষের মুখের সাধারণ কথা বা কথোপকথন বা ডায়লগ এ গ্রন্থের উপজীব্য। বাংলা লিখিত গদ্যের সূচনাকালীন নমুনা এখানে উল্লেখকৃত। স্ল্যাং বা গালিগালাজও বাদ দেয়া হয় নি। এ গ্রন্থের ঐতিহাসিক মূল্য প্রচুর।
ইতিহাসমালা’ (১৮১২) উইলিয়াম কেরি সঙ্কলিত বিভিন্ন বিষয়ের ১৫০টি গল্পের সংগ্রহ। আধুনিক ভারতীয় সাহিত্যের এটি প্রথম গল্পসংগ্রহ। গল্পগুলি বাংলাদেশের নানা অঞ্চলে প্রচলিত ছিল।
Q3. সর্বপ্রথম বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনা করেন কে
Ans – প্রথম বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশিত হয় ১৭৪৩ সালে পর্তুগিজ ভাষায়। এর লেখক ছিলেন মানোএল দা আসসুম্পসাঁউ। তাঁর বাংলা-পর্তুগিজ অভিধানের ভূমিকা অংশ হিসেবে তিনি এটি রচনা করেন।
এরপর ১৭৭৮ সালে প্রকাশিত হয় নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড প্রণীত ইংরেজি ভাষায় রচিত পূর্ণাঙ্গ একটি বাংলা ব্যাকরণ। বইটির নাম ‘এ আমার অব দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’। ১৮০১ সালে উইলিয়াম কেরি এবং ১৮২৬ সালে রামমোহন রায় ইংরেজি ভাষায় আরো দুটি উল্লেখযোগ্য বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন।
১৮৩৩ সালে প্রকাশিত রামমোহন রায়ের ‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ’ বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম বাংলা ব্যাকরণ।
Q4. সন্ধি ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়
Ans – ”সন্ধি” ব্যাকরণের ধ্বনিতত্ত্ব অংশের আলোচ্য বিষয়।
সব ভাষার ব্যাকরণের প্রধানত চারটি বিষয়ের আলোচনা হয় ধ্বনিতত্ত্ব, শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব এবং অর্থতত্ত্ব। সন্ধি ব্যাকরণের ধ্বনিতত্ত্ব অংশে আলোচিত হয়। ধ্বনির উচ্চারণ প্রণালী, উচ্চারণের স্থান, বর্ণ বিন্যাস, ধ্বনি সংযোগ বা সন্ধি, ধ্বনির পরিবর্তন ও লোপ, ণত্ব ও ষত্ব বিধান ইত্যাদি ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।
Q5. পর্তুগিজ ভাষায় বাংলা ব্যাকরণ প্রথম রচনা করেন কে
Ans – পর্তুগিজ ভাষায় বাংলা ব্যাকরণ প্রথম রচনা করেন ম্যানুয়েল দ্য আসুম্পসাও।
Q6. বাংলা ব্যাকরণ প্রথম কোন ভাষায় লেখা হয়
Ans – প্রথম বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশিত হয় ১৭৪৩ সালে পর্তুগিজ ভাষায়। এর লেখক ছিলেন মানোএল দা আসসুম্পাসাঁউ।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।