তৃতীয় বিশ্ব কি, তৃতীয় বিশ্ব বলতে কী বোঝায়

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

তৃতীয় বিশ্ব কি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রকোপ বেড়ে চলেছিল, সেই প্রেক্ষিতেই তৃতীয় বিশ্বের (Third World) অভ্যুদয় ঘটে ছিল। Third World শব্দবন্ধ প্রথম ব্যবহার করেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রাক্তন মহাসচিব ড্যাগ হ্যামার্সজোল্ড (Dag Hammerskjold)। তিনি এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার দরিদ্র ও অনুন্নত রাষ্ট্রগুলিকে বোঝাতেই তৃতীয় বিশ্ব শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। পিটার ক্যালভোকোরেসি অবশ্য তৃতীয় বিশ্ব বলতে মার্কিন এবং সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত দ্বিখন্ডিত বিশ্বের ধারণাকে যে সমস্ত দেশ নস্যাৎ করে দিয়েছিল তাদেরকেই বুঝিয়েছেন। সুতরাং তৃতীয় বিশ্বের সংজ্ঞা নির্ধারণ অত্যন্ত জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তৃতীয় বিশ্ব বলতে যে সমস্ত দেশগুলিকে বোঝায় সেগুলির বেশিরভাগই সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত। ডি-কলোনাইজেশন এর ফলস্বরূপ যে সমস্ত দেশ সাম্রাজ্যবাদী পরাধীনতা থেকে মুক্ত হয়েছিল তাদের একাধিক আর্থ-রাজনৈতিক-সমাজিক সমস্যা ছিল, যেমন দারিদ্র, অপুষ্টি, অশিক্ষা, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক পশ্চাদগামিতা, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, নয়া-উপনিবেশবাদের প্রভাব, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব, বর্ণবৈষম্য প্রভৃতি। তবে এমনও অনেক দেশ ছিল যারা কখনোই ঔপনিবেশিক পরাধীনতার বন্ধনে আবদ্ধ থাকে নি অথচ উপরিউক্ত সমস্যাগুলোতে জর্জরিত ছিল।

আবার মহাচীনের মত দেশ সদ্য স্বাধীন হওয়ার পর দ্রুতগতিতে তার অগ্রগতি ঘটিয়েছিল। কয়েকটা ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল যে এরা অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলির সমাধানকল্পে মার্কিন পুঁজিবাদী গোষ্ঠী এবং সোভিয়েত সাম্যবাদী গোষ্ঠীর কোনটারই অন্তর্ভুক্ত না হয়ে উভয় জোট থেকে সমদূরত্ব বজায় রেখে স্বাধীনভাবে এগিয়ে চলার নীতি গ্রহণ করেছিল। তবে জোট নিরপেক্ষ রাষ্ট্র মানেই সে তৃতীয় বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত এমনটাও নয়। কারণ সোভিয়েত সাম্যবাদী গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এমনও অনেক রাষ্ট্র ছিল যারা উপরিউক্ত আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত ছিল।

সুতরাং রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে তৃতীয় বিশ্বের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা যাবেনা। যদি অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তৃতীয় বিশ্বকে ব্যাখ্যা করা হয় তাহলে এক কথায় বলা যায় বিশ্বের বিশেষত এশিয়া আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলিই তৃতীয় বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত। ইহাই সম্ভবত বেশি গ্রহণযোগ্য।

তৃতীয় বিশ্ব বলতে বুঝায় বিশ্বের প্রধান দুটি সামরিক জোট ন্যাটো এবং ওয়ারশ ভূক্ত নয় এমন রাষ্ট্রগুলোকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে বিশ্বে শুরু হয় ঠান্ডা লড়াই। এই লড়াই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে নেটো বাহিনী ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ওয়ারশ জোট গঠিত হয়। নেটোর সহযোগী দেশ যুক্তরাষ্ট্র,ব্রিটেন, পশ্চিম জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন তথা পশ্চিম ইউরোপ; এদের বলা হথ প্রথম বিশ্ব। আর সোভিয়েতের পক্ষে থাকা চিন, কিউবা ও তাদের সহযোগীরা হলো দ্বিতীয় বিশ্ব। কোনো পক্ষে অংশ না নেওয়া আফ্রিকা, লেতিন আমেরিকা, এশিয়া, ওশেনিয়ার দেশগুলি হল তৃতীয় বিশ্ব।

এই সময় তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলি গড়ে তোলে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন; যার নেতৃত্বে ছিলেন জহরলাল নেহেরু, সুহার্তো ও টিটো। তৃতীয় বিশ্বের এই দেশগুলির মধ্যে কিছু দেশ শিল্প উন্নয়ের পথে এগিয়ে চলেছে; এর মধ্য উল্লেখযোগ্য হল ভারত ও ব্রাজিল। ১৯৯২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন অবলুপ্তির মধ্য দিয়ে ঠান্ডা লড়াই শেষ হয়।

তৃতীয় বিশ্ব বলতে কী বোঝায়

মূলত আমরা সবাই তৃতীয় বিশ্ব বলতে অনুন্নত দেশসমূহকেই বুঝিয়ে থাকি, তবে শুনে অবাক হবেন যে এই শব্দটির যখন উদ্ভব হয় তখন কিন্তু তা সম্পুর্ণ ভিন্ন অর্থে ব্যাবহার করা হতো। এই পরিভাষাটির সূচনা ঘটেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে, যখন বিশ্ব প্রধানত পুঁজিবাদ ও সাম্যবাদ এই দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই দুই ভাগের বাইরেও অবস্থান ছিল অনেক দেশের। সেগুলোকে সংজ্ঞায়িত করতেই প্রথম প্রয়োগ ঘটেছিল তৃতীয় বিশ্ব পরিভাষাটির।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তির সাথে সাথে অবশ্য এই পরিভাষাটিরও ব্যবহার কমে গেছে, এবং প্রচলিত অর্থেও বেশ ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে।তাহলে কেন এমন নামের প্রচলন ঘটে তা জানার জন্য জানতে হবে যে আসলে প্রথম বিশ্ব আর দ্বিতীয় বিশ্ব বলতে কাদের বোজানো হতো। প্রথম বিশ্ব বলতে বোঝানো হতো যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী (তথাকথিত গণতান্ত্রিক) রাষ্ট্রসমূহকে। এই রাষ্ট্রসমূহ আবার ন্যাটোর (উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট) সদস্যও ছিল, পাশাপাশি ছিল শিল্পোন্নতও। প্রথম বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ দেশ এবং জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো।

দ্বিতীয় বিশ্ব দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হতো সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী-সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোকে। এরা ওয়ারশ চুক্তি করেছিল, এবং প্রথম বিশ্বের মতো এই দেশগুলোও ছিল শিল্পক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব ইউরোপ, চীন, কিউবার মতো দেশগুলো।

তাহলে বুঝতেই পারছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল না যে দেশগুলো, তারাই ছিল তৃতীয় বিশ্বের সদস্য। এই দেশগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সরাসরি পুঁজিবাদ বা সাম্যবাদ কোনোটিকেই গ্রহণ করতে চায়নি, ফলে প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বেও প্রবেশ করতে পারেনি তারা। আফ্রিকা, এশিয়া, ওশেনিয়া এবং লাতিন আমেরিকার অধিকাংশ স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশই ছিল এমন। এই দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ন্যাম (জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন) গড়ে তোলে, যেখানে অগ্রগণ্য ছিলেন ভারতের জওহরলাল নেহেরু, ইন্দোনেশিয়ার সুহার্তো এবং যুগোস্লাভিয়ার জোসিপ ব্রজ টিটোর মতো নেতারা।

কেন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অধিকাংশই স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল

তৃতীয় বিশ্ব পরিভাষাটির উৎপত্তি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ভিত্তিতে। এখানে অর্থনীতির সরাসরি কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তারপরও কেন তৃতীয় বিশ্ব আর স্বল্পোন্নত-উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছে? এর উত্তর পেতে আমাদের আরেকটু গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।

তৃতীয় বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই আগে ছিল অন্য কোনো বড় ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মাত্রই তারা স্বাধীনতা লাভ করেছিল। ফলে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত দিক দিয়ে তারা স্বভাবতই অনেক পিছিয়ে ছিল। এবং এই দেশগুলোই দীর্ঘদিন অন্যের অধীনে থাকার কারণে, পুনরায় যুক্তরাষ্ট্র বা সোভিয়েত ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার চেয়ে জোট নিরপেক্ষ থাকাকে শ্রেয় বলে মনে করেছিল।

এবার দুটি ভিন্ন বিষয়কে এক সূত্রে গাঁথলেই বোঝা যাবে, কেন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো অধিকাংশই উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত। তবে এমনটি মনে করার কারণ নেই যে পুঁজিবাদী বা সাম্যবাদী ব্লকে গেলেই তাদের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠত। যেহেতু এরা প্রায় সকলেই দীর্ঘদিন ধরে পরাধীন উপনিবেশ ছিল এবং নিজেদের কোনো রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল না, তাই প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বের অংশ হলেও তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার খুব একটা হেরফের হতো না।

আরো পড়তে: নতুন বিশ্ব কাকে বলে, নতুন বিশ্ব বলতে কী বোঝো

তৃতীয় বিশ্বের মূল বৈশিষ্ট্য, তৃতীয় বিশ্বের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ

1. বিশ্বের জনসংখ্যা ও সম্পদের বন্টনে তৃতীয় বিশ্ব ছিল অসম্ভব পিছিয়ে পড়া। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ ছিল তৃতীয় বিশ্বের অন্তর্গত। কিন্তু GNP (Gross National Product) অনুসারে এইগুলি বিশ্বের মাত্র ২০ শতাংশ পণ্য ও পরিষেবা উৎপাদনে সক্ষম। তাই দারিদ্র ও অনটন একবিংশ শতাব্দীতেও তৃতীয় বিশ্বের নিত্যসঙ্গী। সম্ভবত এজন্যই তৃতীয় বিশ্বের মানুষজন প্রায়ই প্রোটিন ও ভিটামিনের ঘাটতির শিকার হয়।

2. তৃতীয় বিশ্ব নিজের অস্তিত্ব ও বিকাশের স্বার্থে আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী ও সাম্যবাদী লড়াইয়ে আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত পৃথিবীর ধারণাকে বর্জন করেছিল। এর কারণ সম্ভবত দুই পরমাণু শক্তিধর সুপার পাওয়ারের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল ছিল এবং উভয়ের মধ্যে কোনো বিধ্বংসী যুদ্ধ হলে তা থেকে তারা দূরে থাকতেই চাইত। পাল্টা মঞ্চ হিসাবে তৃতীয় বিশ্ব জোট নিরপেক্ষতা অবলম্বন করেছিল, যার প্রাণপুরুষ ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু। এভাবেই দেখা যায় যে তৃতীয় বিশ্বভুক্ত দেশগুলিতে কমিউনিস্ট মতাদর্শ বা পুঁজিবাদী চরম দক্ষিণপন্থা কোনোটাকেই আদর্শস্থানীয় বলে মনে করা হয়নি।

3. দু-একটা ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশই দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ The Brandt Report নামে পরিচিত একটি বিশেষ প্রতিবেদনে তৃতীয় বিশ্বের অবস্থা ও সমস্যা গুলি আলোচনা প্রসঙ্গে সর্বপ্রথম জানান যে পৃথিিবী আসলে দুটি অংশে বিভক্ত– উত্তর ও দক্ষিণ। ঘটনাচক্রে অধিকাংশ ধনী ও উন্নত দেশগুলি উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত এবং তৃতীয় বিশ্বের বেশিরভাগ দুর্বল ও দরিদ্র দেশ সমূহের অবস্থান দক্ষিণ গোলার্ধ।

তৃতীয় বিশ্ব কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন, তৃতীয় বিশ্ব কথাটি প্রথম কে ব্যবহার করেন

তৃতীয় বিশ্ব পরিভাষাটির প্রথম প্রয়োগ এবং সংজ্ঞায়নের পেছনে ভূমিকা ছিল ফরাসি জনতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদ আলফ্রেড সউভির। ১৯৫২ সালের ১৪ আগস্ট ফরাসি ম্যাগাজিন L’Observateur-এ তিনি এই পরিভাষাটি ব্যবহার করেন। এর মাধ্যমে তিনি নির্দেশ করেছিলেন সেই দেশগুলোকে, যারা স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সাম্যবাদী সোভিয়েত ব্লক কিংবা পুঁজিবাদী ন্যাটো ব্লক কারো সাথেই যোগ দেয়নি।

এখানে ‘তৃতীয়’ দ্বারা সউভি ইঙ্গিত করেছিলেন ফরাসি বিপ্লব পূর্ববর্তী ও চলাকালীন সময়ে ফ্রান্সের সাধারণ মানুষকে, যারা পাদ্রীবর্গ কিংবা অভিজাত শ্রেণী কোনোটিরই অংশ ছিল না। তখনকার দিনে ফ্রান্সে পাদ্রীবর্গকে প্রথম এস্টেট, আর অভিজাত শ্রেণীকে দ্বিতীয় এস্টেটের অংশ মনে করা হতো। এদের বাইরে সাধারণ মানুষ যারা ছিল, তাদেরকে বিবেচনা করা হতো তৃতীয় এস্টেটের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে।

সউভি লিখেছিলেন,

“এই তৃতীয় বিশ্ব অনেকটাই ফ্রান্সের তৃতীয় এস্টেটের মতো অবহেলিত, নিগৃহীত, নিষ্পেষিত, যারা নিজেরা কিছু করতে চায়, কিছু হতে চায়।”

তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, এখন অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তৃতীয় বিশ্বকে বোঝানো হলেও, আদতে এর উদ্ভব ঘটেছিল রাজনৈতিক শ্রেণীবিন্যাস থেকে।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো কি কি

জোট নিরপেক্ষতা দ্বারা এখন আর তৃতীয় বিশ্ব নির্ধারণ করা যায় না। বেশিরভাগ মানুষ অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হয় সেগুলো হলো স্থূল জাতীয় আয় এবং দারিদ্র্যের হার। এছাড়া চাইলে আরো কিছু সূচক দ্বারা তৃতীয় বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোকে চিহ্নিত করা যেতে পারে। তাদের মধ্যে রয়েছে

  • মানব উন্নয়নের হার
  • রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা
  • গণমাধ্যমের স্বাধীনতা।

বলাই বাহুল্য, এসব সূচক অনুযায়ীও তৃতীয় বিশ্বের দেশ হওয়ার দৌড়ে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোই ‘এগিয়ে’ রয়েছে। সেজন্যও প্রধানত রাজনীতিকেই দায়ী করতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণেই এই দেশগুলো আজও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা লাভ করতে পারেনি। একই সমান্তরালে তারা পিছিয়ে রয়েছে মানব উন্নয়ন, নাগরিক স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দিক থেকেও।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর তালিকা, তৃতীয় বিশ্বের দেশের নাম

তৃতীয় বিশ্বের দেশমানব উন্নয়ন সূচক’2021মানব উন্নয়ন সূচক’ 2020জনসংখ্যা’ 2023
দক্ষিণ সুদান0.3850.38611088796
চাদ0.3940.39718278568
নাইজার0.40.40127202843
মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র0.4040.4075742315
মালি0.4280.42723293698
মোজাম্বিক0.4460.45333897354
ইয়েমেন0.4550.4634449825
গিনি0.4650.46614190612
সিয়েরা লিওন0.4770.4758791092
আফগানিস্তান0.4780.48342239854
লাইবেরিয়া0.4810.485418377
গিনি-বিসাউ0.483 2150842
ইরিত্রিয়া0.4920.4943748901
গাম্বিয়া0.50.5012773168
সুদান0.5080.5148109006
জিবুতি0.5090.511136455
সেনেগাল0.5110.51317763163
মালাউই0.5120.51620931751
লেসোথো0.5140.5212330318
উগান্ডা0.5250.52448582334
বেনিন0.5250.52413712828
রুয়ান্ডা0.5340.53214094683
হাইতি0.5350.5411724763
যাও0.5390.5359053799
পাকিস্তান0.5440.5432.40E+08
তানজানিয়া0.5490.54867438106
আইভরি কোস্ট0.550.55128873034
পাপুয়া নিউ গিনি0.5580.5610329931
কোমোরোস0.5580.562852075
সলোমান দ্বীপপুঞ্জ0.5640.565740424
জাম্বিয়া0.5650.5720569737
কঙ্গো প্রজাতন্ত্র0.5710.5746106869
কেনিয়া0.5750.57855100586
ক্যামেরুন0.5760.57828647293
মায়ানমার0.5850.654577997
অ্যাঙ্গোলা0.5860.5936684202
কম্বোডিয়া0.5930.59616944826
জিম্বাবুয়ে0.5930.616665409
নিরক্ষীয় গিনি0.5960.5991714671
স্বাতিনী0.5970.611210822
নেপাল0.6020.60430896590
লাওস0.6070.6087633779
তিমুর-লেস্তে0.607 1360596
ভানুয়াতু0.6070.608334506
নামিবিয়া0.6150.6332604172
সাও টোমে এবং প্রিনসিপে0.6180.619231856
কিরিবাতি0.6240.623133515
গুয়াতেমালা0.6270.63518092026
মাইক্রোনেশিয়া0.6280.629115224
ভারত0.6330.6421430000000
টুভালু0.6410.63911396
বাংলাদেশ0.6610.655173000000
ভুটান0.6660.668787424
নিকারাগুয়া0.6670.6547046310
ত্রাণকর্তা0.6750.6726364943
মরক্কো0.6830.67937840044
বেলিজ0.6830.69410825
তাজিকিস্তান0.6850.66410143543
ইরাক0.6860.67945504560
ভেনেজুয়েলা0.6910.69528838499
বলিভিয়া0.6920.69412388571
কিরগিজস্তান0.6920.6896735347
বতসোয়ানা0.6930.7132675352
ফিলিপাইন0.6990.71117000000
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর তালিকা
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | তৃতীয় বিশ্ব

Q1. তৃতীয় বিশ্ব কী

Ans – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবী পরস্পর দুটি বিরুদ্ধ শিবিরে ভাগ হয়ে যায়। একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ‘প্রথম বিশ্ব’ ও অন্যটি সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ‘দ্বিতীয় বিশ্ব’ নামে পরিচিতি পায়। এই দুই শিবিরে যোগ না দিয়ে সদ্য স্বাধীন দেশগুলি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে এবং বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদ ও বর্ণবৈষম্য বিরোধী একটি শিবিরের জন্ম দেয়। এই শিবির ‘তৃতীয় বিশ্ব’ নামে পরিচিত।

Q2. তৃতীয় বিশ্বের সমস্যা

Ans – স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সামনে চারটি মূল চ্যালেঞ্জ
– ক্রমবর্ধমান ঋণ
– রপ্তানি প্রান্তিককরণ
– দারিদ্র্য
– জলবায়ু দুর্বলতা

Q3. তৃতীয় বিশ্ব শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন

Ans – তৃতীয় বিশ্ব শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ফ্রানজ ফ্যানন ।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।