নতুন বিশ্ব কাকে বলে, নতুন বিশ্ব বলতে কী বোঝো

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

নতুন বিশ্ব কাকে বলে

পঞ্চাদশ শতক হল ইউরোপ ও আশিয়ার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ যুগ। এই যুগে বিশ্ব ইতিহাসে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে, যা একটি নতুন বিশ্ব এর উদ্ভব নেয়।

পঞ্চাদশ শতকে নতুন বিশ্ব হিসাবে বোঝার মধ্যে ব্যাপক উন্নয়ন, প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং কল্পধারা পরিবর্তন রয়েছে। ইউরোপে উন্নয়নের সাথে সাথে নতুন বিজ্ঞান, চিত্রকলা, সাহিত্য এবং ধর্মীয় পরিবর্তন সম্পন্ন হয়। এছাড়াও কলঙ্ক যুদ্ধ, ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গঠন এবং প্রথম আন্তর্জাতিক যুদ্ধ সহ এক তীব্র সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে।

সমস্ত এই ঘটনাগুলি মিলে একটি নতুন বিশ্ব উদ্ভব করেছে, যা ইংরেজ ভাষার উন্নয়ন, কলঙ্ক যুদ্ধ এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এর গঠন সম্পর্কে একটি নতুন পরিবর্তন।

নতুন বিশ্ব বলতে কী বোঝো

নয়াবিশ্ব (নিউ ওয়ার্ল্ড) দ্বারা দক্ষিণ গোলার্ধের বৃহৎ অংশ বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকাকে বোঝানো হয়।

ইতালীয় অন্বেষক আমেরিগো ভেসপুচি আমেরিকা একটি নতুন মহাদেশ আবিষ্কার করেছিল এবং এরপরে মুন্ডাস নোভাস নামে একটি পত্রিকায় তার গবেষণাগুলো প্রকাশিত হওয়ার পরে ১৬তম শতাব্দীর শুরুর দিকে আবিষ্কারের যুগে এই শব্দটি প্রসিদ্ধি লাভ করে।

এই উপলব্ধি ইউরোপীয় ভৌগোলিকদের ভৌগোলিক দিগন্তকে প্রসারিত করেছিল। তারা ভেবেছিল যে বিশ্বটি আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়া নিয়ে গঠিত। এই তিনটি মহাদেশ সম্মিলিতভাবে এখন প্রাচীন বিশ্ব (ওল্ড ওয়ার্ল্ড) বা আফ্রো-ইউরেশিয়া হিসাবে পরিচিত। আমেরিকা বিশ্বের চতুর্থ অংশ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

নতুন বিশ্ব দুই প্রকার :-

১) জোট নিরপেক্ষ দেশ সমূহ অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট বা পশ্চিমা জোট এবং তৎকালীন (১৯৪৫-১৯৯১) সোভিয়েত নিয়ন্ত্রতিতো সাম্যবাদী জোট ব্যাতিত যেসব দেশ কোনো জোটের অংশ নয় তাদের জোট নিরপেক্ষ দেশ বলা হয় আর এই জোট নিরপেক্ষ দেশ গুলোকেই একত্রে নতুন বিশ্ব বলা হয় ।

২) দ্বিতীয়ত ভবিষ্যততে নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার এর অধীনস্থ পরিকল্পিত এক সাম্রাজ্য কেও নতুন বিশ্ব বলা হয় তবে এটা এখনও প্রতিষ্ঠত হয়নি।

নতুন বিশ্ব শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন, নতুন বিশ্ব কথাটি প্রথম কে ব্যবহার করেন

‘নতুন বিশ্ব’ বা ‘New World’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ইতালীয় নাবিক ও স্পেনীয় অভিযাত্রী আমেরিগো ভেসপুচি । তিনি ১৪৯৯ খ্রিস্টাব্দে নৌ – অভিযান করে ব্রাজিলে পৌঁছোন । তিনি কলম্বাসের আবিষ্কারের সংশয় কাটিয়ে ঘোষণা করেন যে, আটলান্টিক পারের এই ভূখণ্ডটি ‘A New World’ একটি নতুন মহাদেশের অস্তিত্ব তাঁর আবিষ্কারের মাধ্যমে জানা যায় জার্মান অধ্যাপক মার্টিন ওয়ার্ল্ড সিমুলার, ভেসপুচির নামানুসারে ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে এর নামকরণ করেন আমেরিকা ।

আরো পড়ুন: ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

নতুন বিশ্বে বিভিন্ন উপনিবেশ

ভৌগোলিক আবিষ্কারের পরবর্তীকালে আমেরিকায় সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক শোষণের যুগ শুরু হয় । নতুন বিশ্বের অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ প্রচুর পরিমাণে সোনা – রুপোর সঞ্চিত সম্ভাবনা, জীবন – জীবিকার সুবিধা প্রভৃতির আকর্ষণে ইউরোপীয়রা থাকার জমিজায়গা, বিপুল দলে দলে নতুন বিশ্বে এসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে । তারা নতুন বিশ্বে উপনিবেশ গড়ে বসবাস করতে তৎপর হয় ।

নতুন বিশ্বে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ওলন্দাজ, ফরাসি ও ইংরেজরা অন্যান্য ইউরােপীয় দেশগুলির তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে ছিল। এই উপনিবেশ প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে ইউরােপীয় শক্তিগুলির মধ্যে সংঘাতের সূচনা হয়।

স্পেনের উপনিবেশ

স্পেন সবার আগে আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপনে অগ্রসর হয় । ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকের মধ্যেই স্পেন নতুন বিশ্বের’ বিস্তীর্ণ এলাকায় নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল । এদের মধ্যে অন্যতম ছিল ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, মেক্সিকো, ভেনেজুয়েলা, পেরু, বলিভিয়া, চিলি, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, প্যরাগুয়ে ইত্যাদি ।

স্পেন ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, ফ্লোরিডা, মেক্সিকো, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। প্রথমদিকে স্পেনীয়রা দক্ষিণ আমেরিকার পাহাড় থেকে সােনা পাওয়ার আসায় প্রচুর স্থানীয় রেড ইন্ডিয়ান শ্রমিককে নিয়ােগ করেন। স্পেনীয়রা নতুন বিশ্বে তাদের উপনিবেশগুলিকে দূর থেকে শাসন করার চেষ্টা করে। এই সুবিশাল উপনিবেশগুলি স্পেনীয় রাজবংশের সঙ্গে রাজপ্রতিনিধি দ্বারা যুক্ত ছিল। তাই এইগুলির নাম ছিল ভগিনী রাজ্য বা Sister Kingdoms।

স্পেনীয় উপনিবেশগুলি শাসনের জন্য গড়ে উঠেছিল ক্যাশ দ্যা কনট্রাটেশিয়ন (Casa de Con tratacion) এবং কাউন্সিল অব ইন্ডিজ (Council of Indies)I প্রথমটি বাণিজ্য ও জাহাজগুলির দেখাশােনা ও লাইসেন্স দেওয়ার কাজ করত আর দ্বিতীয়টি ছিল উপনিবেশ বিষয়ক পরামর্শদাতা ও প্রশাসক মণ্ডলী। নতুন বিশ্বের পােটোসি অঞ্চল-সহ সােনা, রুপাের খনিগুলিকে কেন্দ্র করে স্পেনীয়রা বসতি গড়ে তুলেছিল। পরবর্তীকালে ফরাসি সম্রাট নেপােলিয়ন স্পেন দখল করে নিজের ভাই জোশেপকে স্পেনের সিংহাসনে বসালে স্পেনের সঙ্গে আমেরিকার স্পেনীয় উপনিবেশগুলির সম্পর্ক ছিন্ন হয়।

ব্রিটেনের উপনিবেশ

ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম হেনরির পৃষ্ঠপােষকতায় জন ক্যাবট ১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দে ম্যাথু নামক জাহাজে আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করে নিউফাউন্ডল্যান্ডে পৌঁছেন। ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি আমেরিকার নােভাস্কোসিয়া ও নিউ ইংল্যান্ডে পৌঁছে যান। ব্রিটিশ নাবিক মার্টিন ফ্রোবিশার ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে লাব্রাডার উপকূলে অভিযান চালান এবং সেই সূত্রে জন ডেভিস, হেনরি হাডসন, উইলিয়াম বাফিন প্রমুখ অভিযাত্রী কানাডার নিকটবর্তী জনহীন কয়েকটি দ্বীপে পৌঁছে যান। হামফ্রে গিলবার্ট আমেরিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের পথিকৃৎ ছিলেন। তিনি সরকারি সনদের মাধ্যমে আমেরিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার অধিকার পান।

আঠারাে শতকের মধ্যে ব্রিটিশরা বেশ কয়েকটি যুদ্ধে আমেরিকাস্থিত ওলন্দাজ ও ফরাসি শক্তিকে পরাজিত করে বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলবর্তী অঞ্চলে তেরােটি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করেন। এই উপনিবেশগুলি একত্রে ‘ত্রয়ােদশ উপনিবেশ (Thirteen Colonies) নামে পরিচিত। ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে কানাডা থেকে ফরাসিরা সরে গেলে গােটা উত্তর আমেরিকা ইংরেজদের দখলে চলে আসে। ভার্জিনিয়াতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসনের স্থায়ি কেন্দ্র গড়ে ওঠে। স্থাপিত হয় অ্যাংলিকান চার্চ। আইনগতভাবে উপনিবেশগলি ইংল্যান্ডের অধীনে এলেও এগুলি স্বায়ত্তশাসন ভােগ করত। ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার ব্রিটিশ উপনিবেশগুলি ইংল্যান্ডর অধীনতা ছিন্ন করে স্বাধীনতা ঘােষণা করলে ব্রিটিশ উপনিবেশের অবসান ঘটে।

সামুদ্রিক অভিযান ও উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে প্রথম দিকে স্পেন ও পোর্তুগালের তুলনায় ব্রিটেন পিছিয়ে থাকলেও পরবর্তীকালে তারা উপনিবেশ প্রতিষ্ঠায় সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠে । বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলবর্তী অঞ্চলে ১৩ টি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে । এই উপনিবেশগুলি একত্রে ত্রয়োদশ উপনিবেশ নামে পরিচিত । এই ১৩ টি উপনিবেশ হল –

( ১ ) নিউ হ্যাম্পশায়ার

 ( ২ ) ম্যাসাচুসেটস

 ( ৩ ) কানেকটিকাট

 ( ৪ ) রোড দ্বীপ

 ( ৫ ) নিউইয়র্ক

 ( ৬ ) নিউ জার্সি

 ( ৭ ) পেনসিলভেনিয়া

 ( ৮ ) ডেলাওয়ারস

 ( ৯ ) মেরিল্যান্ড

 ( ১০ ) ভার্জিনিয়া

 ( ১১ ) উত্তর ক্যারোলিনা

 ( ১২ ) দক্ষিণ ক্যারোলিনা এবং

 ( ১৩ ) জর্জিয়া ।

এ ছাড়া ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিবেশী কানাডা থেকে ফরাসিরা বিতাড়িত হলে সমগ্র উত্তর আমেরিকা কার্যত ব্রিটেনের দখলে চলে আসে ।

পাের্তুগালের উপনিবেশ

পোর্তুগিজ নাবিক পেড্রো কেৱাল ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে পদার্পণ করেন । তাঁর সুপারিশে পোর্তুগিজ সরকার ব্রাজিলে উপনিবেশ স্থাপন করে ।

পাের্তুগিজ নাবিক পেড্রো কেব্রাল ব্রাজিলে এক উপনিবেশ গড়ে তােলার জন্য পাের্তুগিজ সরকারের কাছে। সুপারিশ জানান। মূলত তার উদ্যোগেই ব্রাজিলে পাের্তুগিজ উপনিবেশ গড়ে ওঠে। এই পাের্তুগিজ উপনিবেশটিতে চিনি, কফি, তামাক, তুলাে, কোকো প্রভৃতি অর্থকরী পণ্য উৎপাদিত হত। এ ছাড়াও এখানকার মূল্যবান ধাতু ইউরােপের নানা দেশে রপ্তানি করা হত। শেষপর্যন্ত। পাের্তুগালের রাজা ষষ্ঠ জোয়াও-এর পুত্র ডােম পেড্রোর নেতৃত্বে পাের্তুগালের অধীনতা মুক্ত হয়ে ব্রাজিল স্বাধীন হয়।

ফরাসি উপনিবেশ

ফ্রান্স ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পরে ঔপনিবেশিক আধিপত্য প্রসারের কাজে যোগ দেয় । এক্ষেত্রে জ্যাক কার্টিয়ার – এর প্রচেষ্টায় ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে কুইবেক – এ একটি ফরাসি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে । ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি ইস্ট – ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠিত হওয়ার পর ফরাসি বণিক স্যামুয়েল দ্য সাম্পলেন্ত – এর উদ্যোগে এবং ফরাসি রাজা চতুর্থ হেনরির সহযোগিতায় ফরাসিরা কানাডায় উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে ।

ষােড়শ শতকের তৃতীয় দশকে ফ্রান্স উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। প্রথম জ্যাক কার্টিয়ার সেন্ট লরেন্স বড়াে বড়াে অভিযান চালিয়ে কুইবেক অঞ্চলে একটি ফরাসি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেন। পরে ফ্রান্সের বুরবাে বংশীয় রাজা চতুর্থ হেনরির আমলে ফরাসিরা উত্তর আমেরিকার কানাডাতে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ শুরু করে। ফরাসি বণিক স্যামুয়েল দ্য সাম্পলেনত আকাডিয়ার (নােভাস্কোসিয়) পাের্ট রয়্যাল-এ একটি উপনিবেশ স্থাপন করেন। সপ্তবর্ষের যুদ্ধে (১৭৫৬-৬৩ খ্রি.) পরাজয়ের ফলে ফরাসিদের অধীনস্থ কানাডা ব্রিটিশদের দখলে চলে যায়। ফলে আমেরিকা মহাদেশে ফরাসিদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ শেষ হয়ে যায়।

ওলন্দাজ, ডাচ উপনিবেশ

সপ্তদশ শতকে স্পেনের অধীনতা ছিন্ন করার পর হল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডের ওলন্দাজ বা ডাচরা অতিদ্রুত সামুদ্রিক অভিযানে সাফল্য দেখায় । সপ্তদশ শতকে নতুন বিশ্বে স্পেনীয়দের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয় ওলন্দাজরা এবং ক্রমে নতুন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তারা উপনিবেশ স্থাপন করে ।

১৫শতকে ইউরোপীয়দের মনে ভারত, চিন আফ্রিকা প্রভৃতি দেশ সম্পর্কে মোটমুটি ভালো জ্ঞান থাকলেও তারা কিন্তু এ সময় আমেরিকার অস্তিত্ব সম্পর্কে একেবারেই অবহিত ছিল না । অথচ, ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আমেরিকার বেশিরভাগ অঞ্চলই ইউরোপীয়দের নিয়ন্ত্রণে এসেছিল, যা সত্যিই এক অবাক করার মতো ঘটনা ।

সপ্তদশ শতকে ডাচরা ওয়েস্ট ইন্ডিজে স্পেনীয়দের বাণিজ্যের ওপর হামলা চালিয়ে আমেরিকায় অনুপ্রবেশ শুরু করে। তারা ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ অভিযাত্রী হাডসনকে আমেরিকা মহাদেশে ডাচ উপনিবেশ স্থাপনের উদ্দেশ্যে নিয়ােগ করে। ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গড়ে ওঠে। হাডসন আমেরিকা মহাদেশের হাডসন নদী (হাডসনের নামানুসারে এই নদীর নামকরণ হয়) বরাবর অভিযান পাঠানাের পরিকল্পনা করেন।

সেই অনুসারে নিউ আমস্টারডামকে কেন্দ্র করে সেখানে ডাচদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর নাম হয় নিউ নেদারল্যান্ড আলবানি। ডেলওয়ার ও কানেকটিকাট নদী বরাবর ডাচদের কয়েকটি কেন্দ্র গড়ে ওঠে। ডাচ ও ইংরেজরা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে স্পেনীয় শাসনের অবসান ঘটিয়ে নিজেদের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। ইংরেজরা ডাচদের কাছ থেকে নিউ আমস্টারডাম (ইংরেজরা এর নতুন নামকরণ করে নিউ ইয়র্ক) ছিনিয়ে নিলে ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে উত্তর আমেরিকায় ডাচ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য স্থাপনের স্বপ্ন ভেঙে যায়।

প্রথম বিশ্ব, দ্বিতীয় বিশ্ব ও তৃতীয় বিশ্বের দেশ

বিশ্বকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করার জন্য প্রথম বিশ্বদ্বিতীয় বিশ্ব  তৃতীয় বিশ্ব এই টার্মগুলি ব্যবহৃত হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ‘শীতল যুদ্ধ’ চলাকালীন সময়ে বিশ্বের দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষমতার প্রতিযোগিতার ফসল হিসেবে এইসব নামের আবির্ভাব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে বিশ্বে শুরু হয় স্নায়ুযুদ্ধ। এই যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো বাহিনী ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ওয়ারশ জোট গঠিত হয়।

ন্যাটোর সহযোগী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, পশ্চিম জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন তথা পশ্চিম ইউরোপ; এদের বলা হয় প্রথম বিশ্ব

আর সোভিয়েতের পক্ষে থাকা চীন, কিউবা ও তাদের সহযোগীরা হলো দ্বিতীয় বিশ্ব

কোনো পক্ষে অংশ না নেওয়া আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া, ওশেনিয়ার দেশগুলি হলো তৃতীয় বিশ্ব

এই সময় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো গড়ে তোলে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন। যার নেতৃত্বে ছিলেন জওহরলাল নেহেরু, সুহার্তো ও টিটো। তৃতীয় বিশ্বের এই দেশগুলোর মধ্যে কিছু দেশ শিল্প উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে; এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভারত ও ব্রাজিল।

১৯৯২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে এ স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। ব্রিটিশ লেখক, কূটনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক স্যার উইনস্টন চার্চিল’র বিখ্যাত লৌহ পর্দা বা আয়রন কার্টন বক্তৃতা থেকে শীতল যুদ্ধের সূচনা বিবেচিত হয়।

তার বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, পশ্চিম ও পূর্বের বিভক্তি একটি দৃঢ বাস্তবতা যা তিনি ‘আয়রন কার্টন বা লৌহ পর্দা’ বলে অভিহিত করেছেন। ১৯৫২ সালে ফ্রেঞ্চ জনসংখ্যাতাত্ত্বিকবিদ আলফ্রেড সোভে বিপ্লব-পূর্ব ফ্রান্সের তিনটি রাজ্যের অবস্থার প্রেক্ষিতে তৃতীয় বিশ্ব নামটি উল্লেখ করেছিলেন। প্রথম দুই এস্টেট হচ্ছে অভিজাত ও যাজকগোষ্ঠীর এবং বাকি সব হচ্ছে তৃতীয় এস্টেটের অন্তর্ভুক্ত।

তিনি পুঁজিবাদী বিশ্বকে (প্রথম বিশ্ব) অভিজাত ও সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকে (দ্বিতীয় বিশ্ব) তুলনা করেছেন যাজক সম্প্রদায়দের সাথে; আর বাকিদের তৃতীয় বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

সোভে তৃতীয় বিশ্বকে দেখিয়েছেন যে সব দেশ শীতল যুদ্ধে জড়ায় নি বা পূর্ব-পশ্চিম দ্বন্দ্বে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে নি। ১৯৭৪ সালে ন্যাশনাল ইন্ডিয়ান ব্রাদারহুডের প্রধান জর্জ ম্যানুয়েল তার বই ‘দ্য ফোর্থ ওয়ার্ল্ড: এন ইন্ডিয়ান রিয়েলিটি’ তে তিনি চতুর্থ বিশ্বের ধারণা দিয়েছেন।

সেখানে তিনি চতুর্থ বিশ্ব বলতে সেই আদিবাসী জনগণের জাতিগুলোকে সাংস্কৃতিক বা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী বুঝিয়েছেন। যাদের সাধারণ বাস্তবতায় কোনো রাষ্ট্র নেই। বরং তারা একটি দেশের ভিতরে বা বহুদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করে। উদাহরণস্বরূপ, রেড ইন্ডিয়ান বা আদিবাসী আমেরিকানরা উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে বাস করে।

রাষ্ট্রহীন, দরিদ্র এবং প্রান্তিক জাতিগুলো প্রতিনিয়ত বৈষম্য, বঞ্চনা ও নিপীড়নের শিকার হয়। এরা হয়ে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠী। বর্তমানে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর যে অবস্থা, তাতে তাদেরকে চতুর্থ বিশ্বের অন্তর্গত হিসেবে ধরা যেতে পারে।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | নতুন বিশ্ব

Q1. নতুন বিশ্ব কি

Ans – ভেসপুচি কেবলমাত্র দক্ষিণ আমেরিকার মহাদেশীয় ভূমিকে “নতুন বিশ্ব” বলেছিল। উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান সমস্ত দেশ নতুন বিশ্ব তৈরি করে।

Q2. নতুন বিশ্ব এর নামকরণ করেন, নতুন বিশ্ব নামকরণ করেন কে

Ans – নতুন বিশ্ব নামকরণ করেন আমেরিগো ভেসপুচ।

Q3. নতুন বিশ্ব কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন

Ans – নতুন বিশ্ব শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন আমেরিগো ভেসপুচি।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।