অলংকার কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

অলংকার কাকে বলে উদাহরণ দাও

অলংকার কথাটির অর্থ হল ‘ভূষণ’ বা ‘গয়না’।নারীরা যেমন তাদের দৈহিক সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করার জন্য যে এক ধরণের ভূষণ ব্যবহার করে থাকেন,  তাকে বলে দেহের অলংকার।কবিরা তেমনি কাব্য দেহের সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করার জন্য যে বিশেষ ভূষণ ব্যবহার করে থাকেন,  তাকে বলে কাব্যের অলংকার।

সংজ্ঞা : সাহিত্য স্রষ্টার যে রচনা কৌশল কাব্যের শব্দধ্বনিকে শ্রুতিমধুর এবং অর্থধ্বনিকে রসাপ্লুত ও হৃদয়গ্রাহী করে তোলে তাকে বলে অলংকার।

অলংকার শ্রেণিবিভাগ

বাণী বহিরঙ্গে শব্দময়ী , অন্তরঙ্গে অর্থময়ী। তাই অলংকার দুই প্রকার– শব্দালংকার ও অর্থালংকার।

শব্দালঙ্কার কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে অলংকার আশ্রয়ে সৃষ্ট ও শব্দের উপর নির্ভরশীল ,তাকে শব্দালংকার বলে।উদা:- অনুপ্রাস, যমক প্রভৃতি

শব্দের বহিরঙ্গ ধ্বনির আশ্রয়ে যে কাব্য সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয় তাকে বলে শব্দালংকার।

অর্থালঙ্কার কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে অলংকার অর্থের আশ্রয়ে সৃষ্ট ও অর্থের উপর নির্ভরশীল ,তাকে অর্থালংকার বলে।উদা:- দীপক,রূপক,উপমা প্রভৃতি।

শব্দের অন্তরঙ্গ অর্থের আশ্রয়ে যে কাব্য সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয় তাকে অর্থালংকার বলে।

শব্দালংকার ও অর্থালংকারের মধ্যে পার্থক্য

শব্দালংকারঅর্থালংকার
শব্দালংকার শব্দের আশ্রয়ে সৃষ্ট।অর্থালংকার অর্থের আশ্রয়ে সৃষ্ট।
শব্দালংকার শব্দের উপর নির্ভর করে।অর্থালংকার অর্থের উপর নির্ভর করে।
শব্দালংকার শব্দের পরিবৃত্তিসহ।অর্থালংকার অর্থের পরিবৃত্তিসহ।
শব্দালংকারে শব্দের প্রাধান‍্য থাকে।iv. অর্থালংকারে অর্থের প্রাধান‍্য থাকে।
শব্দালংকারের উদাহরণ হল-
যেমন- অনুপ্রাস,যমক প্রভৃতি।
অর্থালংকারের উদাহরণ হল-
যেমন- উপমা, রূপক, দীপক প্রভৃতি।
শব্দালংকারের আবেদন আমাদের কানের কাছে। অর্থালংকারের আবেদন আমাদের বুদ্ধির কাছে।
শব্দালংকারে বাক্যের সংগীত ধর্মের প্রকাশ। অর্থালংকারে তার চিত্রধর্মের প্রকাশ।
শব্দালংকার শব্দের পরিবর্তন সহ্য করতে পারে না ।অর্থালংকারে শব্দ পরিবর্তনে কোনো ক্ষতি হয় না।

শব্দালংকার

শব্দের ধ্বনিরূপকে আশ্রয় করে যে অলঙ্কারের সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় শব্দালংকার অর্থাৎ শব্দকে ঘিরে এ অলংকারের সৃষ্টি। এর মূল সৌন্দর্য টুকু ফুটে উঠে শব্দের ধ্বনিরূপে। মনে রাখতে হবে শব্দালংকারের অলংকার নির্ভর করে শব্দের ওপর। তাই ইচ্ছে মতো তাকে বদলে দেয়া যায় না।

শব্দালংকারের শ্রেণিবিভাগ :

শব্দালংকার পাঁচ প্রকার। যথা –
ক)  অনুপ্রাস খ) যমক   গ) শ্লেষ    ঘ) বক্রোক্তি  ঙ) পুনরুক্তবদাভাস

যমক অলংকার কাকে বলে :-

একই ধ্বনিগুচ্ছ নির্দিষ্ট ক্রম অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে অথবা সার্থক-নিরর্থকভাবে একাধিকবার উচ্চারিত হলে যে শ্রুতিমাধুর্যের সৃষ্টি হয়, তার নাম যমক অলংকার।

যমক অলংকারের বৈশিষ্ট্য :-

  • ধ্বনিগুচ্ছে স্বরধ্বনি থাকবে, ব্যঞ্জনধ্বনিও থাকবে।
  • বাংলায় সমধ্বনির (ই-ঈ, উ-ঊ, জ-য, শ-ষ-স) উচ্চারণে পার্থক্য নেই। অতএব যমকে সমধ্বনির প্রয়োগ হতে পারে। যেমন—রবি-রবী, বঁধু-বধূ, ঋণী-রিণী, জেতে-যেতে, আশা-আসা।
  • ধ্বনির পরিবর্তন হলে যমক থাকবে না, অনুপ্রাস হয়ে যেতে পারে। যেমন— ‘ধানের শীর্ষে আগুনের শীর্ষ’ যমক (শীষ-শীষ), কিন্তু ‘ধানের শিষের উপরে শিশির’ অনুপ্রাস (শিষের-শিশির-স্বরধ্বনির পরিবর্তন), ‘পূরবীর রবি’ যমক (রবী-রবি), কিন্তু ‘পূরবীর ছবি’ অনুপ্রাস (রবী-ছবি—ব্যঞ্জনের পরিবর্তন)।
  • ধ্বনিগুচ্ছের একাধিক উচ্চারণ হবে নির্দিষ্ট ক্রম অনুসারে। বিন্যাস-ক্রমের পরিবর্তন হলে যমক না হয়ে অনুপ্রাস হবে। যেমন ‘যৌবন বন’ যমক, কিন্তু ‘যৌবন নব’ অনুপ্রাস।
  • ধ্বনিগুচ্ছের ভিন্ন ভিন্ন অর্থে একাধিক উচ্চারণ হবে। অর্থাৎ প্রতিটি উচ্চারণেই ধ্বনিগুচ্ছ অর্থযুক্ত বা সার্থক। অর্থযুক্ত ধ্বনিগুচ্ছের নাম শব্দ। অতএব এটি হবে একই শব্দের একাধিক উচ্চারণ, কিন্তু একই অর্থে নয়। এর নাম সার্থক। সমক।
  • ধ্বনিগুচ্ছের সার্থক-নিরর্থকভাবে একাধিক উচ্চারণ হতে পারে। এর অর্থ, ধ্বনিগুচ্ছের একবার সার্থক । অর্থযুক্ত উচ্চারণ, অন্যবার নিরর্থক বা অর্থহীন উচ্চারণ। অর্থাৎ, একবার শব্দের উচ্চারণ, অন্যবার শব্দাংশের উচ্চারণ। এর নাম নিরর্থক যমক।
  • ৫ম-৬ষ্ঠ বৈশিষ্ট্য থেকে বোঝা গেল, ধ্বনিগুচ্ছের একটি প্রয়োগ অর্থযুক্ত হবেই, অন্যপ্রয়োগ অর্থযুক্ত অর্থহীন হতে পারে। কিন্তু প্রতিটি প্রয়োগেই ধ্বনিগুচ্ছ অর্থহীন হতে পারে না, হলে তা যমক না হয়ে অনুপ্রাস হবে।

যেমন, ‘সৌরভ-রভসে। এখানে ‘রভ’ ধ্বনিগুচ্ছ দুবারই উচ্চারিত হয়েছে নিরর্থক শব্দাংশ হিসেবে অতএব, এটি যমক নয়, অনুপ্রাস।

যমকের শ্রেনীবিভাগ :-

প্রয়োগ-বৈচিত্র্যের দিক থেকে যমক দু-রকমের। যথা-

  1. সার্থক যমক:
  2. নিরর্থক যমক।

প্রয়োগ স্থানের দিক থেকে যমক চার রকমের। যথা-

  1. আদ্যযমক:
  2. মধ্যযমক;
  3. অন্ত্যযমক;
  4. সর্বযমক।

বিভিন্ন প্রকার যমক অলংকারের সংজ্ঞা :-

সার্থক যমক :-

যে যমক অলংকারের একই বা সমধ্বনিযুক্ত শব্দের একাধিক উচ্চারণ হয় ভিন্ন ভিন্ন অর্থে, তার নাম সার্থক যমক।

নিরর্থক যমক :-

যে যমক অলংকারে একই ধ্বনিগুচ্ছের একবার শব্দরূপে সার্থক উচ্চারণ এবং অন্যবার শব্দাংশরূপে নিরর্থক উচ্চারণ হয়, তার নাম নিরর্থক যমক।

আদ্যমক :-

পদ্যে চরণের আদিতে যমক থাকলে তার নাম আদ্যষমক।

উদাহরণ :

ভারত ভারতখ্যাত আপনার গুণে। -ভারতচন্দ্র রায়

ব্যাখ্যা : ‘ভারত’ শব্দটির প্রথম প্রয়োগ ‘কবি ভারতচন্দ্র রায়’ অর্থে, দ্বিতীয় প্রয়োগ ‘ভারতবর্ষ’ অর্থে।

অতএব এটি সার্থক যমক। যমকটি হয়েছে উদ্ধৃত চরণের আদিতে। অতএব, এটি আদ্যযমক।

মধ্যযমক :-

পদ্যে চরণের মাঝখানে যমক থাকলে তার নাম মধ্যযমক।

উদাহরণ :

পাইয়া চরণতরি তরি ভবে আশা। -ভারতচন্দ্র রায়।

ব্যাখ্যা : প্রথম ‘তরি’ অর্থ নৌকা, দ্বিতীয় ‘তরি’ অর্থ পার হই। এটি সার্থক যমক। যমকটি চরণের মাঝখানে রয়েছে। অতএব, এটি মধ্যযমকের উদাহরণ।

অন্ত্যযমক :-

পদ্যে একটি বা পরপর দুটি চরণের শেষে অথবা দুটি পদের শেষে, যমক থাকলে তার নাম অন্ত্যযমক।

উদাহরণ :

মনে করি করী করি কিন্তু হয় হয়। – জ্ঞানদাস

ব্যাখ্যা : একই শব্দ ‘হয়’ চরণের শেষে দুবার উচ্চারিত দুটি ভিন্ন অর্থে- প্রথম অর্থ ঘোড়া, দ্বিতীয় অর্থ ‘হয়ে যায়। অতএব এটি সার্থক যমক, এবং চরণের শেষে রয়েছে বলে অন্ত্যযমক।

সর্বষমক :-

একটি চরণের অন্তর্গত প্রতিটি শব্দ ভিন্ন ভিন্ন অর্থে পরের চরণে আর একবার করে উচ্চারিত হলে অর্থাৎ একটি সম্পূর্ণ চরণ ভিন্ন ভিন্ন অর্থে দুবার উচ্চারিত হলে যে বাক্যগত শ্রুতিমাধুর্যের সৃষ্টি হয়, তার নাম সর্বষমক।

উদাহরণ :

কান্তার আমোদপূর্ণ কান্ত সহকারে।

কান্তার আমোদ পূর্ণ কান্তসহকারে।

ব্যাখ্যা :

প্রথম চরণে ‘কান্তার’ অর্থ বনভূমি, ‘আমোদ’ অর্থ সৌরভ, ‘কান্ত’ অর্থ বসন্তকাল আর ‘সহকারে’ অর্থ সমাগমে।

দ্বিতীয় চরণে ‘কান্তার’ অর্থ প্রিয়তমার, ‘আমোদ’ অর্থ আনন্দ, ‘কান্ত’ অর্থ প্রিয়তম, ‘সহকারে অর্থ সঙ্গে।

অতএব, ভিন্ন ভিন্ন অর্থে দুবার উচ্চারণে প্রতিটি শব্দেই একটি করে সার্থক যমক হয়েছে। আবার সামগ্রিকভাবে প্রথম চরণের অর্থ-বনভূমি বসন্তসমাগমে সৌরভপূর্ণ, দ্বিতীয় চরণের অর্থ- প্রিয়তমের সঙ্গলাভে প্রিয়তমার আনন্দ সম্পূর্ণ। অতএব, এটি বাক্যগত সার্থক যমক এবং সর্বযমক।

উপমা অলংকার কাকে বলে

একই বাক্যে দুটি বিজাতীয় বস্তুর মধ্যে তুলনা করে যে চমৎকারিত্ব সৃষ্টি করা হয় তাকে উপমা অলংকার বলে। যেমন– “ননীর মতো কোমল শয্যা পাতা ” —– এখানে শয্যা উপমেয়, ননী উপমান , কোমল উপমান , মতো সাদৃশ্যবাচক শব্দ। তাই এখানে উপমা অলংকার হয়েছে।

উপমা অলংকারের শ্রেণিবিভাগ :

উপমা অলংকার ছয় প্রকার।যথা-

ক)পূর্ণোপমা

খ) লুপ্তোপমা 

গ) মালোপমা

ঘ) স্মরণোপমা

ঙ)বস্তু-প্রতিবস্তুভাবের উপমা

চ) বিম্ব প্রতিবিম্বভাবের উপমা

পূর্ণোপমা

যে উপমায় উপমেয়, উপমান, সাধারণধর্ম এবং সাদৃশ্যবাচক শব্দ এই চারটি অঙ্গই উল্লিখিত থাকে তাকে পূর্ণোপমা বলে। 

উদাহরণ—

১। “জ্যোৎস্না নামে মৃদুপদে ঝাঁপি লয়ে লক্ষ্মীর মতন” । 

ব্যাখ্যা : এখানে জ্যোৎস্না উপমেয়, লক্ষ্মী উপমান , নামে সাধারণ ধর্ম , মতন সাদৃশ্যবাচক শব্দ। উপমার চারটি অঙ্গই এখানে উল্লিখিত থাকায় এটি পূর্ণোপমা অলংকার।

২। ননীর মতো শয্যা  কোমল পাতা।

লুপ্তোপমা

যেখানে উপমেয় , উপমান , সাধারণধর্ম ও তুলনাবাচক শব্দ এই চারটি অঙ্গের যেকোনো একটি বা একাধিক অঙ্গ যদি অনুল্লিখিত থাকে তবে সেখানে লুপ্তোপমা হয়। 

উদাহরণ:

১। পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

এখানে ‘চোখ’ উপমেয়, ‘পাখির নীড়’ উপমান ,  সাদৃশ্যবাচক শব্দ ‘মতো’ , সাধারণধর্ম এখানে লুপ্ত।

২। বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।

মালোপমা

উপমেয় যেখানে মাত্র একটি এবং তার উপমা অনেক সেইখানে হয় মালোপমা। 

উদাহরণ: 

মেহগনির মঞ্চ জুড়ি, পঞ্চ হাজার গ্রন্থ;
সোনার জলে দাগ পড়ে না,
খোলে না কেউ পাতা
আস্বাদিত মধু যেমন
যুথী অনাঘ্রাতা।

এখানে গ্রন্থ উপমেয়, উপমান মধু আর যুথী।

স্মরণোপমা

কোনো পদার্থের অনুভব থেকে যদি তৎ সদৃশ অপর বস্তুর স্মৃতি মনে জেগে ওঠে তবেই স্মরণোপমা অলংকার হয়। 

উদাহরণ :
শুধু যখন আশ্বিনেতে
ভোরে শিউলিবনে
শিশিরভেজা হাওয়া বেয়ে
ফুলের গন্ধ আসে
তখন কেন মায়ের কথা
আমার মনে ভাসে?

বস্তু-প্রতিবস্তুভাবের উপমা

একই সাধারণ ধর্ম যদি উপমেয় আর উপমানে বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত হয়, তাহলে সাধারণ ধর্মের এই ভিন্ন ভাষারূপ দুটিকে বলাহয় বস্তু প্রতিবস্তু। এই ভাবের উপমার তুলনা বাচক শব্দ ভাষায় প্রকাশ করতেই হবে। 

উদাহরণ :
১। নিশাকালে যথা

মুদ্রিত কমলদলে থাকে গুপ্তভাবে
সৌরভ, এ প্রেম, বঁধু, আছিল হৃদয়ে
অন্তরিত।

ব্যাখ্যা : এখানে উপমেয় প্রেম, উপমান সৌরভ, সাধারণধর্ম অন্তরিত গুপ্তভাবে বস্তুপ্রতিবস্তু। অন্তরিত, গুপ্তভাবে ভাষায় বিভিন্ন কিন্তু অর্থে এক— গোপনে। তুলনাবাচক শব্দ ,যথা।

২। একটি চুম্বন ললাটে রাখিয়া যাও 

   একান্ত নির্জনে সন্ধ্যা তারার মতো।

বিম্ব প্রতিবিম্বভাবের উপমা

 উপমেয়ের ধর্ম এবং উপমানের ধর্ম যদি সম্পূর্ণ বিভিন্ন হয় অথচ তাদের মধ্যে যদি একটা সূক্ষ্ম সাদৃশ্য বোঝা যায়, তাহলে ওই ধর্মদুটিকে বলা হয় বিম্বপ্রতিবিম্বভাবাপন্ন সাধারণ ধর্ম। বিম্বপ্রতিবিম্বভাবের উপমায় তুলনাবাচক শব্দ থাকতেই হবে। 

উদাহরণ–
কানুর পিরীতি বলিতে বলিতে
পাঁজর ফাটিয়া উঠে।
শঙ্খবণিকের করাত যেমতি
আসিতে যাইতে কাটে।।

ব্যাখ্যা : এই উদাহরণটিতে উপমেয় কানুর পিরীতি , উপমান শঙ্খবণিকের করাত, উপমেয়র ধর্ম বলিতে বলিতে পাঁজর ফাটিয়া উঠে এবং উপমানের ধর্ম আসিতে যাইতে কাটে। সব অবস্থাতেই দুঃখময় এই তাৎপর্যে ধর্মদুটির সাদৃশ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে এরা প্রতিবিম্ব ভাবের সাধারণ ধর্ম।

দিনের শেষে শেষ আলোটি পড়েছে ঐ পাড়ে

            জলের কিনারায় 

পথ চলতে বধূ যেমন নয়ন রাঙা করে 

            বাপের ঘরে চায়।

রূপক অলংকার কাকে বলে

যে সব শব্দ বাক্যকে নতূন রূপদেয় আর্থাত , শব্দকে অলংকারিত করে , সেই অলংকারকে বলা হয় রূক অলংকার , নারি যেমন অলংকার পরিধানের মাধ্যমে নিজের উতর্কষতা বৃদ্ধিকরে , শব্দ তেমন রূপক ব্যবহ্যারের মাধ্যমে স্ব উতর্কষতা বৃদ্ধিকরে। উদাহরন; এমন মানব জমিন র ইলো পতিত , আবাদ করিলে ফলিত সোনা ।

রূপক আলংকারের শ্রেণিবিভাগ :

নিরঙ্গরূপক, সাঙ্গরূপক,পরম্পরিতরূপক, অধিকাররূঢ় বৈশিষ্ট্য রূপক।

নিরঙ্গরূপক

যেখানে একটি উপমেয়ের উপর আর একটি উপমানের অভেদ কল্পনা করা হয় তাকে নিরঙ্গ রূপক বলে।

উদাহরণ:

যৌবনের বনে মন হারাইয়া গেলো ,
যৌবন হলো উপমান, এবং বনে । যৌবনের উপর বনের অভেদ কল্পনা করা হয়েছে। এখানে উপমেয় যেমন একটি উপমান ও একটি।

শ্রেণিবিভাগ:

নিরঙ্গ রূপক  অলংকার দু’প্রকার।যথা- কেবল নিরঙ্গ ও মালা নিরঙ্গ। 

কেবল নিরঙ্গ রূপক :

একটি মাত্র অঙ্গহীন উপমেয়র উপর একটি মাত্র অঙ্গহীন উপমানের অভেদ আরোপ করলে তাকে কেবল নিরঙ্গ রূপক  অলংকার বলে। 

উদাহরণ- 

১। এমন মানব জমিন রইল পতিত 

আবাদ করলে ফলতো সোনা ।

ব্যাখ্যা : আলোচ্য উদাহরণটি কেবল নিরঙ্গ  রূপক অলংকারের এখানে একমাত্র উপমেয় হল মানবজীবন অন্যদিকে একটিমাত্র অঙ্গহীন উপমান হলো জমিন ।এদের মধ্যে অভেদ্য কল্পনা  করা হয়েছে বলে এটি কেবল নিরঙ্গ রূপক অলংকার।

২।দেখিবারে আঁখি পাখি ধায় ।

৩।চোরাবালি আমি দূর দিগন্তে ডাকি

 কোথায় ঘোর শহর।

৪। লোকটি দুঃখের আগুনে পুড়িয়া মরিল।

মালা নিরঙ্গ রূপক :

 যে রূপক অলংকারে একটিমাত্র অঙ্গহীন উপমেয়র উপর একাধিক অঙ্গহীন উপমানের অভেদ কল্পনা করা হয় তাকে মালা নিরঙ্গ রূপক অলংকার বলে ।

উদাহরণ:

১। শীতের ওঢ়নি পিয়া গিরীষের বা 

বরিষার ছত্র পিয়া দরিয়ার না।

২।শেফালি সৌরভ আমি , রাত্রির  নিশ্বাস 

 ভোরের  ভৈরবী ।

সাঙ্গরূপক

যে রূপক অলংকারে ,বিভিন্ন অঙ্গ সমেত উপমেয়ের সঙ্গে বিভিন্ন অঙ্গসমেত উপমানের অভেদ কল্পনা করা হয় তাকে সাঙ্গরূপক বলে।

উদাহরণ : 

অশান্ত আকাঙ্ক্ষা পাখি মরিতেছে মাথা খুঁড়ে পাঞ্জার পিঞ্জরে ।

পরম্পরিতরূপক

যে রূপক আলংকারের একটি উপমানের অভেদ কল্পনা , অন্য একটি উপমানের সঙ্গে অভেদ কল্পনার কারণ হয়ে দাঁড়ায় , তাকে পরম্পরিতরূপক বলে।

উদাহরণ :-

১।জীবন উদ্যানে তোর 

    যৌবন কুসুম ভাতি

        কতদিন রবে।

২। মরনের ফুল বড়ো হয়ে ওঠে 

     জীবনের উদ্যানে।

অধিকাররূঢ় বৈশিষ্ট্য  রূপক:

যে রূপক অলংকারে , উপমানের উপর বাস্তব , অবাস্তব , বা কল্পিত অধিকার এর অভেদ কল্পনা করা হয় তাকে অধিকার রূড় রুপক বলে ।

উদাহরণ : তুমি অচপল দামিনি।

ব্যতিরেক অলংকার

যে সাদৃশ্যমূলক অলংকারে উপমেয়কে উপমানের চেয়ে উৎকৃষ্ট বা নিকৃষ্ট করে দেখানো হয় তাকে ব্যতিরেক অলংকার বলে ।

শ্রেণিবিভাগ :

ব্যতিরেক অলংকার দুই প্রকার উৎকর্ষাত্মক ব্যতিরেক ও অপকর্ষাত্মক ব্যতিরেক।

উৎকর্ষাত্মক ব্যতিরেক :

 যে ব্যতিরেক অলংকারে উপমেয়কে উপমানের চেয়ে উৎকৃষ্ট হিসেবে দেখানো হয় তাকে উৎকর্ষাত্মক ব্যতিরেকঅলংকার বলে ।

উদাহরণ :

১।যে জন না দেখিয়াছে বিদ্যার চলন 

সেই বলে ভালো চলে মরাল বারণ ।

২। নবীন নবনী নিন্দিত করে দোহন করিছ দুগ্ধ।

অপকর্ষাত্মক ব্যতিরেক :

যে ব্যতিরেক অলংকারে উপমেয়কে উপমানের চেয়ে নিকৃষ্ট করে দেখানো হয় তাকে অপকর্ষাত্মক ব্যতিরেক অলংকার বলা হয় ।

উদাহরণ :

১। এ পুরির পথমাঝে যত আছে শিলা 

    কঠিন শ্যামার মতো কেহ নহে আর ।

২। কণ্ঠস্বরে বজ্র লজ্জাহত।

৩। কিসের এত গরব প্রিয়া 

   কথায় কথায় মান অভিমান 

এবার এসো ত্যাগ করিয়া

ভাটায় ক্ষীণা তরঙ্গিনী 

ফের জোয়ারে দুকূল ভাঙে 

জোয়ার গেলে আর কি ফেরে

নারী তোমার জীবন গাঙে।

সমাসোক্তি অলংকার

প্রস্তুতের উপর বা উপমেয়ের উপর অপ্রস্তুতের বা উপমানের ধর্ম আরোপিত হলে তাকে সমাসোক্তি অলংকার বলে ।

(বস্তুর উপর চেতন পদার্থের ধর্ম আরোপিত হলে সমাসোক্তি অলংকার হয় )

উদাহরণ :

 ১। তটিনী চলেছে অভিসারে 

২। কেরোসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে 

    ভাই বলে ডাকো যদি গলা দিব টিপে ।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | বাংলা ছন্দ ও অলংকার

Q1. সাহিত্যদর্পণ কার লেখা?

Ans – – সাহিত‍্যদর্পন আচার্য বিশ্বনাথ কবিরাজের রচনা।

Q2. সাহিত‍্যদর্পন গ্রন্থের আনুমানিক রচনাকাল কত?

Ans – খ্রীস্টিয় চতুর্দশ শতক।

Q3. কাব‍্যের অলঙ্কার মনুষ‍্য শরীরের কীসের সঙ্গে তুলনীয়?

Ans – কাব‍্যের অলঙ্কার মনুষ‍্য শরীরের গহনার সঙ্গে তুলনীয়।

Q4. কোন্ অলঙ্কারে একটি পা একাধিক অর্থে ব‍্যবহৃত হয়?

Ans – শ্লেষ অলঙ্কারে।

Q5. বিম্বপ্রতিবিম্বভাব কোন্ অলঙ্কারে থাকে?

Ans – নিদর্শনা অলঙ্কারে।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।