অর্থনীতি কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

অর্থনীতি কাকে বলে, অর্থনীতি কি

উত্তরঃ অর্থনীতি এমন একটি পরিবর্তনশীল সমাজ বিজ্ঞান যা মানুষের অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যবহার যোগ্য সীমিত সম্পদের মাঝে সমন্বয় সাধন করে।

আবার আমরা এভাবে ও বলতে পারি Economics বা অর্থনীতি হলো একটি বিজ্ঞান যা কিভাবে সীমিত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে তা ব্যবহারের জন্য বন্টন করা হয়, সেটা আলোচনা করে।

বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ অর্থনীতির সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে দিয়েছেন । এই সংজ্ঞাগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায় বলে পণ্ডিতগণ মত দিয়েছেন।

অর্থনীতির সংজ্ঞার এই তিনটি ভাগ হলো- 

  • ১. সম্পদের বিজ্ঞান (Science of Wealth)
  • ২. কল্যাণের বিজ্ঞান (Science of Welfare)
  • ৩. অপ্রাচুর্যের বিজ্ঞান (Science of Scarcity)

এখানে সম্পদের বিজ্ঞান (Science of Wealth) হিসেবে যারা অর্থনীতিকে অভিহিত করেছেন তাঁরা হলেন অ্যাডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো, জন স্টুয়ার্ট মিল প্রমুখ। এই ক্ল্যাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণ ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকের।

অর্থনীতিকে কল্যানের বিজ্ঞান বলে যারা মত দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে প্রধান প্রধান হলেন আলফ্রেড মার্শাল। আলফ্রেড মার্শালকে আধুনিক অর্থনীতির জনক বলা হয়। এছাড়াও ফিশার, পিগু, ডেভেনপোর্ট, ক্যানন, অ্যারো প্রমুখ অর্থনীতিবিদরা অর্থনীতিকে কল্যাণের বিজ্ঞান (Science of Welfare) বলে অভিহিত করেছেন। এই শ্রেণির অর্থনীতিবিদগণকে বলা হয় নিউ ক্ল্যাসিক্যাল অর্থনীতিবিদ।

লিয়োনেল রবিন্স হলেন তৃতীয় প্রকারের সংজ্ঞার প্রধান প্রবক্তা। লিয়োনেল রবিন্স প্রদত্ত সংজ্ঞাটি সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত মনে করেন অনেকে। এটি ত্রুটিমুক্ত না হলেও, এর গ্রহণযোগ্যতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রফেসর লিয়োনেল রবিন্স, ক্রেয়ারন্ক্রস প্রমুখ অর্থনীতিবিদগণ অর্থনীতিকে ‘অপ্রাচুর্যের বিজ্ঞান’ (Science of Scarcity) বলে অভিহিত করেছেন।

অর্থনীতির মৌলিক সমস্যা কি কি

উত্তরঃ যে কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে তিনটি মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হয়। এই সমস্যাগুলাে হচ্ছে:

  1. কি উৎপাদিত হবে?
  2. কিভাবে উৎপাদিত হবে?
  3. এবং কার জন্য উৎপাদিত হবে?

এই সমস্যাগুলাে সমাধানের প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেয় এজন্য যে সমাজে প্রয়ােজনের তুলনায় সম্পদের পরিমাণ সীমিত। সুতরাং সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের বস্তুগত অভাবের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি সাধনের জন্য এই সমস্যাগুলাে সমাধান করা দরকার।

কি উৎপাদিত হবে?

উত্তরঃ অর্থনীতিতে সম্পদের পরিমাণ সীমিত বলে সকল দ্রব্য প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করা সম্ভব হয় । তাই সিদ্ধান্ত নিতে হয় অর্থনীতিতে কোন কোন দ্রব্য উৎপাদিত হবে এবং কোন কোন দ্রব্য উৎপাদিত হবে না। কোন কোন দ্রব্য উৎপাদিত হবে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

এই দ্রব্যগুলাের কোনটি কি পরিমাণে উৎপাদিত হবে। অর্থনীতিতে সিদ্ধান্তগুলাে সাধারণতঃ “সবখানি অথবা একটিও নয়”- এই প্রকৃতির হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন দ্রব্য একটু বেশি উৎপাদন করলে অপর একটি দ্রব্য একটু কম পরিমাণে উৎপাদন করতে হয়।

যে কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে অর্থনীতির সকল ব্যক্তির অভাব সর্বোত্তমভাবে পূরণের জন্য কি কি দ্রব্য ও কি পরিমাণে উৎপাদিত হবে তা স্থির করা। এই প্রসঙ্গে আরাে একটি সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা হচ্ছে সময় অনুযায়ী উৎপাদন সমাহার নির্ধারণ। যেমন, বর্তমানকালে চাল ও দুধ উৎপাদন করা যেতে পারে অথবা বর্তমানকালে চাল ও আখ এবং ভবিষ্যৎ কালে চাল ও চিনি উৎপাদন করা যেতে পারে ।

কিভাবে উৎপাদিত হবে?

উত্তরঃ অর্থনীতিতে মােট যে পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদিত হবে তা বিভিন্নভাবে উৎপাদন করা যায়। অর্থনীতিতে প্রাপ্তব্য সম্পদ ব্যবহার করে পূর্ণ উৎপাদনের উদ্দেশ্যে তাই সিদ্ধান্ত নিতে হয় কি ভাবে দ্রব্য ও সেবাকার্য উৎপাদিত হবে। অর্থাৎ কার দ্বারা, কোন সম্পদ ব্যবহার করে এবং কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে উৎপাদিত হবে?

  • অর্থনীতিতে কে চালের যােগান দেবে এবং কে বিমান চালক হবে?
  • বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে কোন সম্পদ ব্যবহার করে- তেল এবং কয়লা অথবা পানি এবং পরমানু অথবা সূর্যকিরণ নাকি বায়ু ব্যবহার করে?
  • চাল উৎপাদন করা হবে স্বল্প মূলধন ও প্রচুর শ্রম অর্থাৎ শ্রম নিবিড় প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাকি প্রচুর মূলধন ও স্বল্প সংখ্যক শ্রম অর্থাৎ মূলধন নিবিড় প্রযুক্তি ব্যবহার করে?

অর্থনীতিতে মােট উৎপাদনের পরিমাণ শুধু প্রপ্তব্য সম্পদের উপর নির্ভর করে না, সম্পদ কিভাবে মিশ্রিত করা হয় তার উপরও নির্ভর করে।

কার জন্য উৎপাদিত হবে?

উত্তরঃ এটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার তৃতীয় মৌলিক সমস্যা। অর্থনীতির মােট উৎপাদন অর্থনীতির সকল সদস্যের মধ্যে বন্টিত হয়। অর্থনৈতিক কার্যকলাপের চূড়ান্ত ফল জনগণের কোন অংশ ভােগ করবে তা নির্ধারণ করতে হবে।

  • জাতীয় উৎপাদন বিভিন্ন জনগােষ্ঠীর মধ্যে কিভাবে বণ্টন করা হবে?
  • সমাজের অধিকাংশ জনগণ ধনী না গরিব?
  • ধনী জনগােষ্ঠীর কাছে সম্পদের বেশিরভাগ কি চলে যায়?
  • সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে কি ধরনের নিয়ম অনুসরণ করা হবে?

সমাজকেই এ সকল সিদ্ধান্ত পরিচালনা করতে হয়। সুষম বণ্টন নির্ভর করে সম্পদের দক্ষ ব্যবহারের উপর। সম্পদের দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে সমাজের সর্বোচ্চ কল্যাণ করা সম্ভব।

অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ধারণাসমূহ

উত্তরঃ অর্থনীতিতে কয়টি নীতি রয়েছে এই সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তাই এই পর্যায়ে আমরা জেনে নিবো যে অর্থনীতির দশটি নীতি গুলো আসলে কি কি? তাই চলুন তাহলে দেরি না করে নিম্নে দেখে নেওয়া যাক অর্থনীতির সকল নীতি গুলো সম্পর্কেঃ

  1. মানুষ আদান প্রদান করে।
  2. একটি সুযোগ গ্রহন করলে অপর একটি সুযোগ মানুষকে ছেড়ে দিতে হয়।
  3. যুক্তিবাদী মানুষ প্রান্তিক পর্যায়ে চিন্তা করে।
  4. মানুষ প্রণোদনায় সাড়া দেয়।
  5. বাণিজ্যে সবাই উপকৃত হয়।
  6. অর্থনৈতিক কার্যাবলি সংগঠিত করার জন্য বাজার ব্যবস্থা একটি উত্তম উপায়।
  7. সরকার কখনো কখনো বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারে।
  8. একটি দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান নির্ভর করে সে  দেশের দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনের সামর্থ্যের উপর।
  9. সরকার যখন অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপায় তখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।
  10. সমাজে সল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্বের মধ্যে বিনিময় সম্পর্ক বিদ্যমান।

অর্থনীতি পাঠের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর

উত্তরঃ সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে অর্থনীতির গুরুত্ব ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে বহুবিধ জটিল অর্থনৈতিক তথা বাস্তব সমস্যার মোকাবিলার জন্য অর্থনীতি পাঠ করা অপরিহার্য।

  • ১. মানুষের দৈনন্দিন জীবনে : সমাজের সব মানুষ কোন না কোনভাবে অর্থনৈতিক কার্যাবলির সাথে জড়িত। মানুষ দৈনন্দিন জীবনে অর্থনৈতিক কার্যাবলির এক সুতায় গাঁথা। অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে প্রতিনিয়ত প্রভাবিত করে। মানুষ অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহ সমাধানে তৎপর হয়। মূলত অর্থনৈতিক জ্ঞান থেকেই মানুষ তাদের দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে সক্ষম হয়।
  • ২. সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের ক্ষেত্রে : সম্পদ সীমিত কিন্তু অভাব অসীম। কিভাবে সীমিত সম্পদ দ্বারা অসংখ্য অভাব পূরণ করে সর্বাধিক তৃপ্তি বা কল্যাণ লাভ করা যায় তা অর্থনীতি পাঠের মাধ্যমে জানা যায়। আর অর্থনৈতিক কল্যাণ অর্জনই মানবজীবনের অর্থনৈতিক কার্যাবলির মূল উদ্দেশ্য।
  • ৩. উৎপাদনের ক্ষেত্রে : উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেসব বহুমুখী জটিল সমস্যার উদ্ভব হয় সেগুলো অর্থনীতির বিভিন্ন তত্ত্বের ভিত্তিতে সমাধান করা হয়। কোন ধরনের উৎপাদন ব্যবস্থা লাভজনক হবে, কোন উপাদান কতটুকু বাড়াতে বা কমাতে হবে তা অর্থনীতি পাঠের মাধ্যমে জানা যায়।
  • ৪. ব্যবসায় বাণিজ্যে : বর্তমানে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। এ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই ব্যবসায়ীকে তার ব্যবসায় পরিচালনা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে যেসব প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয় তার মোকাবিলার জন্য অর্থনীতির জ্ঞান অপরিহার্য। কেননা, অর্থনীতিতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
  • ৫. সরকারি প্রশাসনে : বর্তমান কল্যাণমূলক সমাজব্যবস্থায় সরকারকে বহুবিধ কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়। উপযুক্ত অর্থনৈতিক জ্ঞান ছাড়া রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু সমাধান নেওয়া সম্ভব নয়। ঋণ গ্রহণ, ঋণ প্রদান, বাজেট প্রণয়ন, রাজস্ব আদায়, দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন, কটন, ভোগ, ক্রয়, বিক্রয় বিবিধ ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিল সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য সরকারি প্রশাসনে নিযুক্ত ব্যক্তিবর্গের অর্থনীতি পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
  • ৬. সমাজকর্মীদের কাজে: সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধান সমস্যা হল অর্থনৈতিক সমস্যা। সমাজকর্মীরা যেহেতু সমাজের সার্বিক কল্যাণ সাধনের প্রয়াসে কাজ করে, তাই তাদের অর্থনীতি পাঠ অনস্বীকার্য। কারণ, বেকারত্ব, পরিদ্রতা, ভিক্ষাবৃত্তি, খাদ্যাভাব, পতিতাবৃত্তি ইত্যাদি জটিল আর্থসামাজিক সমস্যা। এসব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান অর্থনীতি পাঠের মাধ্যমে জানা যায়।
  • ৭. পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে: কোন দেশের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য সে দেশে বিদ্যমান প্রাকৃতিক সম্পদ, বস্তুগত ও অবস্তুগত সম্পদ, জনসংখ্যা সর্বোপরি সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। একমাত্র অর্থনীতি পাঠের মাধ্যমেই এসব বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা লাভ করা যায়। তাই পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থনীতি পাঠ একান্ত অপরিহার্য।
  • ৮. শ্রমিক নেতাদের ক্ষেত্রে : উৎপাদন ক্ষেত্রে শ্রমিকের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। শ্রমিক সংঘের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে উৎপাদকের সাথে আলাপ-আলোচনা বা সংগ্রামে লিপ্ত হতে হলে শ্রমিক নেতাদের অর্থনীতির জ্ঞান থাকা অপরিহার্য।
  • ৯. রাজনীতিবিদগণের কাছে : রাজনীতিবিদগণই দেশের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারক। নীতিনির্ধারক হিসেবে তাদের দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। এ ধারণা অর্জনের জন্য অর্থনীতি পাঠ অপরিহার্য।
  • ১০. জ্ঞানের পরিধি বিকাশের ক্ষেত্র হিসেবে : অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহ মানবজীবনে অক্টোপাসের ন্যায় জড়িয়ে আছে। এসব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান অর্থনীতি পাঠের মাধ্যমে জানা যায়। অর্থশাস্ত্র পাঠ অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান করে জ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন করে। ফলে ব্যক্তি অধিকতর বাস্তববাদী ও দক্ষ হয়।
  • ১১. অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে সমন্বয় সাধন : অর্থনীতি পাঠের মাধ্যমে অতীত অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ করে তার ভিত্তিতে বর্তমান সমাজের প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এমনিভাবে অতীত ও বর্তমান অবস্থার পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতের সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভবপর হয়।
  • ১২. অনুন্নত দেশের অর্থনীতিতে: অনুন্নত দেশগুলোতে বহুবিধ অর্থনৈতিক সমস্যার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এসব দেশে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, খাদ্যাভাব, মুদ্রাস্ফীতি, নিম্ন উৎপাদনশীলতা ও দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ হাজারো সমস্যা বিদ্যমান। এসব সমস্যার বিশ্লেষণ ও সমাধানের জন্য অর্থনীতির বিভিন্ন শাখার জ্ঞান অপরিহার্য।

ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতি কাকে বলে

উত্তরঃ অর্থনীতির আওতা এবং এর পরিধি বিস্তৃত। এই বিস্তৃত আওতাকে আলোচনার সুবিধার্থে ওসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং অর্থনীতিতে প্রথম নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘র‌্যাগনার ফ্রিশ’ ১৯৩৩ সালে অর্থনীতিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেন। যথা : 

  • ক) ব্যষ্টিক অর্থনীতি  
  • খ) সামষ্টিক অর্থনীতি।

ব্যষ্টিক অর্থনীতি কাকে বলে, ব্যাষ্টিক অর্থনীতি কি

উত্তরঃ ‘ব্যষ্টিক’ শব্দটি ইংরেজি প্রতিশব্দ Micro, যা গ্রিক শব্দ ‘Mikros’ শব্দ হতে এসেছে এবং যার অর্থ ‘ক্ষুদ্র’। অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় যখন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিংবা এককভাবে বিশ্নেষণ করা হয়, তখন তাকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলা হয়। যেমন- একটি দ্রব্যের দাম, একজন ব্যক্তির আয়, একজন ভোক্তার ভোগ ইত্যাদি।

সামষ্টিক অর্থনীতি কাকে বলে, সামষ্টিক অর্থনীতি কি

উত্তরঃ ‘সামষ্টিক’ শব্দটি ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Macro, যা গ্রিক শব্দ ‘Makros’ শব্দ হতে এসেছে এবং যার অর্থ ‘বৃহৎ’। অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়গুলো যখন একত্রে কিংবা সামগ্রিকভাবে বিশ্নেষণ করা হয়, তখন তাকে সামষ্টিক অর্থনীতি বলা হয়। যেমন- দামস্তর, জাতীয় আয়, সামগ্রিক ভোগ ইত্যাদি।

ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য, ব্যষ্টিক অর্থনীতি ও সামষ্টিক অর্থনীতির পার্থক্য

ব্যষ্টিকসামষ্টিক
ব্যষ্টিক এর ইংরেজী শব্দ Micro যার অর্থ ক্ষুদ্র । ব্যষ্টিক অর্থনীতি অর্থনীতির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করে ।অপর দিকে সামষ্টিক এর ইংরেজী শব্দ Macro যার অর্থ বৃহৎ । সামষ্টিক অর্থনীতি অর্থনীতির বৃহৎ তথা সামগ্রিক বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করে ।
ব্যষ্টিক অর্থনীতি অর্থব্যবস্থার বিভিন্ন একক তথা ব্যক্তিগত চাহিদা,ভোগ,বিনিয়োগ,সঞ্চয় ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে ।অপর দিকে সামষ্টিক অর্থনীতি অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়াবলীকে পৃথক পৃথক ভাবে আলোচনা না করে সামগ্রিক ভাবে আলোচনা করে । যেমন জাতীয় আয় ,মোট নিয়োগ ,মোট চাহিদা ,মোট বিনিয়োগ,মোট সঞ্চয় ইত্যাদি ।
ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে আংশিক ভারসাম্য বিশ্লেষন অধিক ব্যবহৃত হয় ।অপর দিকে সামষ্টিক অর্থনীতিতে সামগ্রিক ভারসাম্য বিশ্লেষন অধিক ব্যবহৃত হয় ।
ব্যষ্টিক অর্থনীতি ক্ষুদ্র ও চলক সমূহের মধ্যে কোন যোগসূত্র না থাকায় ভূল কম হয় । অপর দিকে সামষ্টিক অর্থনীতি বৃহৎ ও চলক সমূহের মধ্যে পা্রস্পরিক যোগসূত্র থাকায় তুলনা মূলক ভূল বেশি  হয় ।
ব্যষ্টিক অর্থনীতি প্রথমে তত্ত্ব থেকে কাজ করার প্রবণতা পোষণ করে – যদিও এটি সর্বদা হয় না।সামষ্টিক অর্থনীতি অভিজ্ঞতা এবং এটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করার উপর বেশি জোর দেয়।
ব্যষ্টিক অর্থনীতি নীতির উপর কাজ করে যে, বাজার গুলি শীঘ্রই ভারসাম্য তৈরি করে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে, অর্থনীতি দীর্ঘ সময়ের জন্য বৈষম্যমূলক অবস্থার (বুম বা মন্দা) অবস্থায় থাকতে পারে।
ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য

মিশ্র অর্থনীতি কি

উত্তরঃ পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে মিশ্র অর্থব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছে। যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিমালিকানা ও বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশিসরকারি উদ্যোগ ও নিয়ন্ত্রণ বিরাজ করে তাকে মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে। মিশ্র অর্থব্যবস্থায় পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের সংমিশ্রণ ঘটে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে সহাবস্থানই হল মিশ্র অর্থ ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য। এ ব্যবস্থায় বেসরকারি খাতের উপর কতকগুলো কাজ ছেড়ে দেওয়া হয় এবং কতকগুলো কাজ সরকারি খাতের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। 

অর্থনীতিবিদ স্যামুয়েলসন বলেছেন, “মিশ্র অর্থনীতি বলতে এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বুঝায় যেখানে উৎপাদন ও ভোগ কার্য সংগঠিত করার ক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থার সাথে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সংমিশ্রণ ঘটেছে।” বিশ্বের স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধনতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র কোনটাই কার্যকর হয় না। ফলে সেসব দেশে ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ এবং সাথে সাথে সীমিত পর্যায়ে কিছু সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে মিশ্র অর্থব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, নরওয়ে, সুইডেন প্রভৃতি দেশে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান।

বাজার অর্থনীতি কি

উত্তরঃ পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও অবাধ বিনিময় সম্পর্কের উপর যে অর্থনীতিপ্রতিষ্ঠিত তাকে বাজার অর্থনীতি বলে। বাজার অর্থনীতি এমন এক ব্যবস্থা যেখানে সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া বিবেচনাধীন পণ্য অথবা উপকরণের চাহিদা ও যোগান দ্বারা এদের মূল্য নির্ধারিত হয় এবং এর ভিত্তিতে পণ্য উপকরণের ক্রয়বিক্রয় সম্পন্ন হয়।

দাম ব্যবস্থা দ্বারা বিনিময় সম্পর্ক প্রভাবিত হয়। বিনিময় সম্পর্ক বলতে কোনরূপ বিধিনিষেধ ব্যতিরেকে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে আদানপ্রদানকে বুঝায়। কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় এমন মূল্য বা দাম ব্যবস্থা বাজার অর্থনীতির ভিত্তি। বিশুদ্ধ বাজার অর্থনীতি মূলত ব্যক্তিত্ববাদের ভিত্তিতে গড়ে উঠে। সেখানে বলা হয় ব্যক্তির অর্থনৈতিক কাজকর্মে সরকার কোনরকম হস্তক্ষেপ করবে না।

সেখানে অবাধ বাজার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোগ ও উৎপাদন কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় ঘটবে। বাস্তবে বিশুদ্ধ অর্থে বাজার বা মুক্ত অর্থনীতি নেই। কারণ, বর্তমানে সব ধরনের পণ্যের উৎপাদন, বণ্টন এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকার কোন না কোনভাবে হস্তক্ষেপ করে।

এজন্য বাজার অর্থনীতির ধারণা আপেক্ষিক অর্থে ব্যবহার করা উচিত। বাজার অর্থনীতির প্রাথমিক ধারণা আমরা Adam Smith এর ‘Wealth of Nations’ গ্রন্থে Invisible hand বক্তব্যের মাধ্যমে পাই। পরবর্তীকালে অধ্যাপক মার্শাল তাঁর ‘Principles of Economics’ গ্রন্থে পূর্ণ প্রতিযোগিতা ধারণার সাহায্যে পরোক্ষভাবে হলেও বাজার অর্থনীতির ধারণা ব্যাখ্যা করেছেন।

বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য

উত্তরঃ বিশুদ্ধ বাজার অর্থনীতির সুস্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করা কঠিন। এজন্য কতিপয় বৈশিষ্ট্যের আলোকে এরূপ অর্থনীতি সম্পর্কে ধারণা লাভের চেষ্টা করা হয়। সাধারণভাবে বাজার অর্থনীতির যেসব বৈশিষ্ট্য আমাদের চোখে ধরা পড়ে সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল।

১. ব্যক্তিগত সম্পত্তি

বাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক অপ্রতুল সম্পদ ব্যক্তিবর্গের মালিকানায় থাকে। সব ব্যক্তি বাজারের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যক্তির স্বাধীনতা থাকার কারণে ব্যক্তিবর্গ বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের ইচ্ছামতো সম্পদ অর্জন, নিয়ন্ত্রণ, ব্যবহার ও বণ্টন করতে পারে।

তবে এ মালিকানা অবাধ নয়। কতিপয় নিয়মনীতির অধীনে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজার অর্থনীতিতে স্বীকৃত। এক্ষেত্রে দেশীয় আইনে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

২. ভোক্তার সার্বভৌমত্ব এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা

বলা হয়, “ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ভোক্তা সম্রাট”- এ উক্তির মাধ্যমে ভোক্তার সার্বভৌমত্বের প্রতিফলন ঘটে। ভোক্তা তার নিজস্ব পছন্দ অনুসারে ভোগ করে। এক্ষেত্রে সে ন্যূনতম ব্যয়ে সর্বাধিক তৃপ্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। ভোক্তার পছন্দ ও রুচি অনুযায়ী কি দ্রব্য, কখন এবং কি পরিমাণ উৎপাদন হবে তা নির্ধারণ করা হয়। উৎপাদন শুরুর আগে উৎপাদক চিন্তা করে ভোক্তা কোন দ্রব্যটি বেশি পছন্দ করে।

ভোক্তার পছন্দই যেহেতু সর্বাগ্রে বিবেচ্য তাই ভোক্তাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সার্বভৌম বলা যায়। পছন্দের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা বলতে বুঝায় ব্যক্তি/ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তাদের সম্পদ, মূলধন এবং অর্থ নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে।

যেমনঃ শ্রমিকরা তাদের পছন্দ অনুসারে নিয়োগ খুঁজতে পারে। এভাবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছামতো সম্পদ বিনিয়োগ করতে পারে। সুতরাং, বাজার অর্থনীতিতে ভোক্তার সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত।

৩. স্বীয় স্বার্থের ভূমিকা

বাজার অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ। কোন ব্যক্তির কর্মকাণ্ড তার নিজস্ব স্বার্থকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয়। প্রতিটি অর্থনৈতিক এককই সে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যাহোক না কেন নিজের স্বার্থার্জনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে। এর ফলশ্রুতিতে দেখা যায়, উৎপাদক প্রতিষ্ঠান মুনাফা সর্বোচ্চকরণ এবং খরচ সর্বনিম্নকরণের চেষ্টা করে।

আবার কোন ভোক্তা পণ্য ও সেবার ভোগ থেকে উপযোগ সর্বোচ্চকরণের চেষ্টা করে। এভাবে অর্থনীতির প্রতিটি এজেন্ট স্ব-স্ব স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কর্মে লিপ্ত হয়।

৪. প্রতিযোগিতা

ব্যক্তিস্বার্থ এবং পছন্দের স্বাধীনতা অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাবের কারণে প্রতিযোগিতার উদ্ভব হয়। বাজার অর্থনীতিতে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা ও বিক্রেতা থাকার কারণে কোন দ্রব্যের মোট চাহিদা বা যোগান কোন একজন ক্রেতা বা বিক্রেতার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।

আবার দ্রব্য বা সম্পদ বাজারে অবাধ প্রবেশ ও নির্গমনের ব্যাপারে কোন প্রাতিষ্ঠানিক বিধিনিষেধ নেই। অর্থাৎ, পণ্যদ্রব্য উৎপাদনে অস্বাভাবিক মুনাফা থাকলে যে কেউ পণ্যদ্রব্য উৎপাদন করতে পারে। এর ফলে বাজার অর্থনীতি নমনীয় থাকে। ফলে বাজার অর্থনীতিতে উৎপাদন ও বণ্টনে দক্ষতা বিদ্যমান থাকে।

৫. বাজারের অদৃশ্য হাত

বাজার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় বাজারের অদৃশ্য হাত দ্বারা। অদৃশ্য হাত ধারণাটি ব্যবহার করেন এ্যাডাম স্মিথ। এক্ষেত্রে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে ন্যস্ত নয়। নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি একটি অদৃশ্য হাতে ন্যস্ত। মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অর্থনৈতিক কাজকর্ম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমাধা হয়। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থের সাথে সামাজিক স্বার্থও রক্ষিত হয়।

সে স্বয়ংক্রিয় উপায়ের মাঝে অদৃশ্য হাতের ছোঁয়া উপলব্ধি করা যায়। ব্যক্তিস্বার্থের পরিণাম হল পারস্পরিক প্রতিযোগিতা। সে প্রতিযোগিতার পরিণাম হল সাধ্যায়ত্ব দাম। সে দামের দ্বারাই সবরকমের ভোগ্য দ্রব্যের উৎপাদন, যোগান এবং চাহিদা পরিচালিত হয়। সুতরাং, মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতিতে ব্যক্তিস্বার্থের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্ম পরিচালনার পশ্চাতে যা কার্যকর তা হল অদৃশ্য হাত।

৬. মূল্য প্রক্রিয়া

বাজার পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রব্য ও সম্পদের ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব। ক্রেতার সিদ্ধান্ত চাহিদা এবং বিক্রেতার সিদ্ধান্ত যোগান দ্বারা প্রতিফলিত হয়। পণ্য এবং উপকরণের চাহিদা ও যোগানের ঘাতপ্রতিঘাতেই এদের বাজার দাম নির্ধারিত হয়। যে দ্রব্য/সম্পদের চাহিদা বেশি তার বাজার দাম বেশি হয় এবং যে দ্রব্য/সম্পদের চাহিদা কম তার বাজার দাম কম হয়। সুতরাং, মূল্য হচ্ছে দ্রব্য ও সম্পদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারের মূল চালিকাশক্তি।

৭. সরকারের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস

বিশুদ্ধ বাজার অর্থনীতিতে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। বাস্তবে বর্তমান সময়ে এরূপ বাজারব্যবস্থা নেই। বর্তমানে বাজার অর্থনীতি বলতে এমন অর্থনীতিকে বুঝায়, যেখানে ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কার্যক্রমে ন্যূনতম হলেও সরকারি হস্তক্ষেপ থাকে।

সবুজ অর্থনীতি কি

উত্তরঃ সবুজ অর্থনীতি এটি একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে (দেশ, শহর, ব্যবসা, সম্প্রদায়, ইত্যাদি) ব্যবহৃত উৎপাদন পদ্ধতির (ব্যবসা, বাণিজ্য, কৃষি এবং পরিষেবা) একটি সংগ্রহ যা সামাজিক এবং পরিবেশগতভাবে টেকসই উন্নয়ন ঘটাতে পারে। আমরা বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপন্ন না করে পরিবেশ রক্ষা করার চেষ্টা করার সাথে সাথে সমাজের কাছে এর তাৎপর্য  বাড়ছে।

সবুজ অর্থনীতির প্রধান উদ্দেশ্য হল:

  • সামাজিক কল্যাণ উন্নত করুন
  • প্রাকৃতিক সম্পদের দক্ষ ব্যবহার
  • প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও ব্যবহার কমাতে হবে।
  • কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস করুন
  • জীববৈচিত্র্য রক্ষা করুন
  • শক্তি দক্ষতা প্রচার
  • প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করে দারিদ্র্য হ্রাস করুন।

সবুজ উন্নয়ন’  ছয়টি কৌশলগত স্তর চিহ্নিত করেছে:

  • জলবায়ু পরিবর্তন, 
  • সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা,
  • বৃত্তাকার অর্থনীতি, পরিবেশ সুরক্ষা, 
  • বাস্তুতন্ত্র সুরক্ষা এবং পুনরুদ্ধার,
  • পানি সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ।

অর্থনীতির জনক কে, অর্থনীতির জনক কে উত্তর, অর্থনীতি জনক কে

উত্তরঃ অ্যাডাম স্মিথকে অর্থনীতির জনক বলা হয়। তিনি স্কটল্যান্ডের একজন বিখ্যাত দার্শনিক, নৈতিকতাবাদী এবং অর্থনীতিবিদ ছিলেন।

অ্যাডাম স্মিথকে অর্থনীতির জনক বলা হয় কারণ তিনি অর্থনীতির নির্মাণ এবং লাভজনক প্রবণতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তার মতামত দিয়েছেন।

এই কারণেই আধুনিক অর্থনীতির নির্মাতাদের মধ্যে অ্যাডাম স্মিথের নাম প্রথমে আসে এবং তাকে ‘অর্থনীতির জনক’ও বলা হয়।

অ্যাডাম স্মিথ (অর্থনীতির জনক)

অর্থনীতির জনকঅ্যাডাম স্মিথ (ইংরেজি: Adam Smith )
জন্মজুন 16, 1723, কির্ককালডি, স্কটল্যান্ড
মৃত্যু17 জুলাই 1790, এডিনবার্গ, স্কটল্যান্ড
জাতীয়তাস্কটিশ
শিক্ষাগ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যালিওল কলেজ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
পিতামাতামার্গারেট ডগলাস, অ্যাডাম স্মিথ
শিশুরাডেভিড অ্যান, সিসিলিয়া মার্গারেট
বইজাতির সম্পদ
উল্লেখযোগ্য কাজনৈতিক অনুভূতির নীতি, জাতির সম্পত্তি
উল্লেখযোগ্য অন্তর্দৃষ্টিমুক্তবাজার
ধ্রুপদী অর্থনীতি
অর্থনৈতিক উদারনীতিবাদের অদৃশ্য হাতের
শ্রম বিভাগ
খ্যাতিঅর্থনীতির জনক নাকি পুঁজিবাদের জনক
অ্যাডাম স্মিথ

আধুনিক অর্থনীতির জনক কে

উত্তরঃ পল স্যামুয়েলসনকে আধুনিক অর্থনীতির জনক বলা হয়, স্যামুয়েলসন প্রথম আমেরিকান যিনি অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন (1970) শৃঙ্খলার মৌলিক প্রকৃতির রূপান্তর করার জন্য তার কাজের জন্য। তিনি জোর দিয়েছিলেন যে গণিত অপরিহার্য, এবং তার অসংখ্য এবং যুগান্তকারী অবদান এমন ভিত্তি প্রদান করেছে যার উপর আধুনিক অর্থনীতি নির্মিত হয়েছে। স্যামুয়েলসনের পাঠ্যপুস্তক, অর্থনীতি: একটি পরিচিতি বিশ্লেষণ, আমেরিকান শিক্ষার ইতিহাসে সর্বাধিক ব্যবহৃত একটি।

পল স্যামুয়েলসন ছিলেন একজন বিখ্যাত একাডেমিক অর্থনীতিবিদ যিনি মাঠে একটি স্থায়ী ছাপ রেখে গেছেন। 1970 সালে, স্যামুয়েলসন প্রথম আমেরিকান যিনি তার অসামান্য অবদানের জন্য অর্থনীতিতে নোবেল মেমোরিয়াল পুরস্কারে ভূষিত হন। পুরস্কার প্রাপ্তির পর, স্যামুয়েলসন “অর্থনৈতিক তত্ত্বে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের স্তর” উন্নীত করার জন্য প্রশংসিত হন।

ব্যষ্টিক অর্থনীতির জনক কে

উত্তরঃ ক্ল্যাসিক্যাল অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ। অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথকেই ব্যাষ্টিক অর্থনীতির জনক বলা হয়। 

রাজনৈতিক অর্থনীতির জনক কে

উত্তরঃ এ্যাডাম স্মিথ-কে ‘অর্থনীতির জনক’ বলা হয়। কারণ তিনি রাষ্টনীতি হতে অর্থনীতিকে পৃথক করে স্বতন্ত্র বিষয়ের মর্যাদা দিয়েছেন।
এ্যাডাম স্মিথ এর পূর্বে অর্থনীতিকে “রাজনৈতিক অর্থনীতি” বলা হত।

উৎপাদন ও বণ্টন আলোচনার দীর্ঘ ইতিহাস থাকলেও অর্থনীতির জনক হিসেবে স্বীকৃত অ্যাডাম স্মীথ কর্তৃক ১৭৭৬ খ্রীস্টাব্দে রচিত গ্রন্থ ‘An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations’ নামীয় গ্রন্থে অর্থনীতিকে সম্পদের বিজ্ঞান আখ্যায়িত করে বলেন, ‘Economics is prince of wealth’। তাঁর সংজ্ঞার মূল বিষয়বস্তু হলো সম্পদ উৎপাদন ও ভোগ।

কল্যাণ অর্থনীতির জনক কে

উত্তরঃ এডাম স্মিথ কল্যাণ অথ নীতির জনক।

ইসলামী অর্থনীতির জনক কে

উত্তরঃ ইসলামী অর্থনীতির জনক ইবনে খালদুন।

ইসলামি কৃষ্টি ও তামাদ্দুন সমৃদ্ধ যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তাই ইসলামি অর্থনীতি। প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী ইবনে খালদুন বলেন- ইসলামি অর্থনীতি হলো জনসাধারণের সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞান। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নীতি-পদ্ধতি অনুসরণে সৃষ্টির লালন-পালনের যাবতীয় জাগতিক সম্পদের সামগ্রিক কল্যাণধর্মী ব্যবস্থাপনাই ইসলামি অর্থনীতি।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | অর্থনীতি, অর্থনীতি প্রশ্ন ও উত্তর

Q1. অর্থনীতি শব্দের অর্থ কি

উত্তর : অর্থনীতি শব্দটি ইংরেজি ‘Economics’ শব্দের প্রতিশব্দ। Economics শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘Oikonomia’ থেকে উদ্ভূত যার অর্থ গৃহস্থালী পরিচালনা

Q2. এডাম স্মিথের অর্থনীতির সংজ্ঞা

উত্তর : ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথকে আধুনিক অর্থশাস্ত্রের জনক বলা হয়। তিনি ১৭৭৬ সালে ‘An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations’ নামক গ্রন্থ লিখে অর্থনীতির মূল বিষয়গুলি সম্পর্কে ধারণা দেন৷ অ্যাডাম স্মিথ বলেন, ‘অর্থনীতি হচ্ছে এমন এক বিজ্ঞান যা জাতিসমূহের  সম্পদের প্রকৃতি এবং তার কারণ অনুসন্ধান করে’।
সম্পদ কীভাবে উৎপাদিত হয় এবং তা কীভাবে মানুষের উপকারে লাগে তাই ছিল তার আলোচ্য বিষয়। অ্যাডাম স্মিথ সম্পদের ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।

Q3. এল রবিন্স এর অর্থনীতির সংজ্ঞা

উত্তর : বিশ্বের অন্যতম সেরা সামাজিক বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় London School of Economics and Political Science (LSE) এর এক সময়ের প্রফেসর লিয়োনেল চার্লস রবিন্স (Lionel Charles Robbins, Baron Robbins) তাঁর ‘Nature and Significance of Economic Science’ নামক গ্রন্থে বলেছেন, “অর্থনীতি মানুষের অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সসীম সম্পদের সম্পর্ক বিষয়ক মানব আচরণ সম্বন্ধে আলোচনা করে।”

Q4. অর্থনীতি ইংরেজি কি

উত্তর : অর্থনীতি ইংরেজি ‘Economics’ ।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।