জীবাশ্ম জ্বালানি কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

জীবাশ্ম কাকে বলে উদাহরণ দাও

ফসিল বলতে মৃত প্রাণী বা উদ্ভিদের অংশবিশেষ পাথরে পরিণত হয়ে যাওয়া এমন ধরনের বস্তুকে বোঝায়। লাতিন শব্দ ‘ফসাস’ থেকে ‘ফসিল’ শব্দটি এসেছে। ফসাস-এর অর্থ উত্তোলন করা। ফসিলকে বাংলায় বলে জীবাশ্ম।

ফসিল কে বাংলায় বলে জীবাশ্ম = জীব+অশ্ম। জীব হচ্ছে তারা, যাদের জীবন আছে। আর ‘অশ্ম’ অর্থ ‘পাথর’। জীবের যে অংশ নষ্ট না হয়ে শক্ত ও প্রস্তরীভূত হয়ে হাজার হাজার, এমনকি লাখ বা কোটি বছর পর্যন্ত টিকে থাকে, সেই অংশটাই হলো ফসিল।

সংজ্ঞা: পাললিক শিলার বিভিন্ন স্তরে আবদ্ধ হয়ে থাকা উদ্ভিত ও প্রাণীর দেহাবশেষ বা প্রস্তরীভূত রূপকে জীবাশ্ম বলে(Fossil Fuel)।

জীবাশ্ম উদাহরণ

হিমালয় পর্বতের শিলা গুলো যে একসময় সমুদ্রের মধ্যে অবস্থান করতো এখানকার জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবাশ্ম থেকে তা প্রমাণ পাওয়া যায়।

জীবাশ্ম জ্বালানি কাকে বলে

জীবাশ্ম জ্বালানী হল জৈব পদার্থ যা পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্যে পাওয়া যায়। তারা মৃত গাছপালা এবং প্রাণীদের দেহাবশেষ থেকে গঠিত হয় যা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সমাহিত করা হয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানিগুলিকে বলা হয় কারণ তারা এই প্রাচীন জীবের জীবাশ্ম থেকে গঠিত।

জীবাশ্ম জ্বালানির তিনটি প্রধান প্রকার হল কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস। কয়লা একটি কালো, কঠিন পদার্থ যা প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। তেল একটি তরল পদার্থ যা পরিবহন এবং উত্তাপ সহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক গ্যাস একটি বায়বীয় পদার্থ যা গরম এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

জীবাশ্ম জ্বালানী উদাহরণ

জীবাশ্ম জ্বালানির উদাহরণ:

  • কয়লা
  • প্রাকৃতিক গ্যাস
  • খনিজ তেল

জীবাশ্ম জ্বালানি হল অ-নবায়নযোগ্য শক্তির উত্স যেমন কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, অপরিশোধিত তেল।

এই জ্বালানীগুলি পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্যে পাওয়া যায় এবং এতে কার্বন এবং হাইড্রোজেন থাকে, যা শক্তির জন্য পোড়ানো যেতে পারে।

এই জ্বালানীগুলি উদ্ভিদ এবং প্রাণী থেকে উদ্ভূত হয় যা ভূতাত্ত্বিক লক্ষ লক্ষ বছর আগে বিদ্যমান ছিল।

জীবাশ্ম জ্বালানি কিভাবে গঠিত হয়

জীবাশ্ম জ্বালানী জীবাশ্মকরণ নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়। এই প্রক্রিয়া লক্ষ লক্ষ বছর সময় নেয় এবং নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি জড়িত:

  1. জৈব পদার্থ: গাছপালা এবং প্রাণী মারা যায় এবং তাদের অবশিষ্টাংশ পলিতে সমাহিত হয়।
  2. চাপ এবং তাপ: সময়ের সাথে সাথে, পলল তৈরি হয় এবং জৈব পদার্থের উপর চাপ দেয়। এই চাপ, পৃথিবীর মূল থেকে তাপের সাথে মিলিত, জৈব পদার্থের একটি রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়, জীবাশ্ম জ্বালানী তৈরি করে।
  3. নিষ্কাশন: একবার জীবাশ্ম জ্বালানী তৈরি হয়ে গেলে, তুরপুন এবং খনির কৌশল ব্যবহার করে পৃথিবীর ভূত্বক থেকে বের করা যেতে পারে।

জীবাশ্ম জ্বালানির প্রকারভেদ

জীবাশ্ম জ্বালানিকে সাধারণত ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –

  • প্রস্তরীভূত কয়লা
  • খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম
  • প্রাকৃতিক গ্যাস

জীবাশ্ম জ্বালানির সুবিধা

জীবাশ্ম জ্বালানির অনেক সুবিধা রয়েছে। প্রধান সুবিধাগুলির মধ্যে একটি হল তারা শক্তির একটি নির্ভরযোগ্য উৎস। এগুলি তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং নিষ্কাশন করা সহজ, এগুলি বিশ্বের অনেক লোকের কাছে অ্যাক্সেসযোগ্য করে তোলে৷

জীবাশ্ম জ্বালানীও বহুমুখী। এগুলি পরিবহন, গরম করা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন সহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলি অত্যন্ত দক্ষ, যার অর্থ তারা তুলনামূলকভাবে অল্প পরিমাণে জ্বালানীর জন্য প্রচুর পরিমাণে শক্তি উত্পাদন করতে পারে।

  • অতি অল্প সময়ে বিপল পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম।
  • খুব সহজলভ্য।
  • এগুলো অনেকটা সাশ্রয়ী হয়।
  • অনেক কম সময়ে সহজে পাইপ ও সিলিন্ডারের মাধ্যমে যথাক্রমে তেল ও গ্যাস পরিবহন সহজে করা যায়।
  • এগুলো সীমিত হওয়া সত্ত্বেও প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়।
  • এদের ব্যবহার অনেকাংশে নিরাপদজনক।

জীবাশ্ম জ্বালানির অসুবিধা

তাদের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, জীবাশ্ম জ্বালানীরও অনেক অসুবিধা রয়েছে। একটি প্রধান অসুবিধা হল যে তারা অ-নবায়নযোগ্য। এর মানে হল যে একবার ব্যবহার হয়ে গেলে, সেগুলি প্রতিস্থাপন করা যাবে না। এটি তাদের দামের ওঠানামা এবং সরবরাহের ব্যাঘাতের জন্যও সংবেদনশীল করে তোলে।

জীবাশ্ম জ্বালানিও অত্যন্ত দূষণকারী। তারা কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে, যা জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান রাখে। তারা সালফার ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইডের মতো দূষক উত্পাদন করে, যা শ্বাসকষ্ট এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

  • জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারকারী যানবাহন থেকে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইড যা একটি প্রধান গ্রীনহাউস গ্যাস এবং বায়ু দূষণের প্রাথমিক উৎস। এটি গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য দায়ী।
  • এগুলি অনবীকরনযোগ্য সীমিত সংস্থান, একবার ব্যবহার করলে এদের পরিমাণ ফুরিয়ে যাবে।
  • এই সকল জ্বালানির দহন পরিবেশকে অম্লীয় ও ভারসাম্যহীন দূষকের পরিমান বাড়িয়ে অপ্রত্যাশিত বিষাক্ত করে তোলে।
  • হৃৎপিন্ড, ফুসফুস এবং কিডনির যাবতীয় মারাত্মক রোগ এই সকল জ্বালানির ব্যবহারের ফলে হয়।

পরিবেশের উপর প্রভাব

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পরিবেশের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। জীবাশ্ম জ্বালানী নিষ্কাশন, প্রক্রিয়াকরণ এবং পোড়ানোর ফলে বায়ু এবং জল দূষণ, বন উজাড় এবং বাসস্থান ধ্বংস হতে পারে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনেও অবদান রাখে, যা পরিবেশ এবং মানব সমাজের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।

এই প্রভাবগুলি প্রশমিত করার জন্য, অনেক দেশ জীবাশ্ম জ্বালানির উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উত্সগুলিতে রূপান্তর করার জন্য নীতিগুলি বাস্তবায়ন করেছে। এই নীতিগুলির মধ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং স্থাপনার জন্য প্রণোদনা, সেইসাথে গ্রিনহাউস গ্যাস এবং অন্যান্য দূষণকারীর নির্গমনকে সীমিত করে এমন প্রবিধান অন্তর্ভুক্ত।

জীবাশ্ম জ্বালানির ক্ষতিকর প্রভাব

বর্তমান যান্ত্রিক বিশ্বে প্রযুক্তিগত যত উন্নয়ন ও অগ্রগতি, তাতে ফুয়েল বা জ্বালানির ভূমিকা অপরিহার্য। আজকের এই আধুনিক জীবন যেমন যন্ত্র ছাড়া অবান্তর, তেমনি জ্বালানি ছাড়া যান্ত্রিক সভ্যতা অসম্ভব। গোটা বিশ্বের মোট জ্বালানি চাহিদার প্রায় আশি ভাগেরও বেশি যোগান দেয় ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম-জ্বালানি; বিশেষ করে পেট্রোলিয়াম তেল, কয়লা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ভিত্তিক জ্বালানি। বলা যায় জীবাশ্ম-জ্বালানির উপর আমরা আজ অনেকাংশে নির্ভরশীল।

অন্যদিকে এই চরম নির্ভরশীলতাই আমাদের ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। গোটা বিশ্ব আজ জীবাশ্ম-জ্বালানি নির্ভরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন, যার পেছনে রয়েছে মুলত তিনটি কারণ; অনিশ্চিত জ্বালানি নিরাপত্তা, পরিবেশ দূষণ এবং তেল ভিত্তিক ভূ-রাজনীতি।

  • সারা বিশ্বে প্রতিদিন বাড়ছে জনসংখ্যা, বাড়ছে যানবাহন আর শিল্প-কারখানা। আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জ্বালানি চাহিদা। ২০০৭ সালের এক হিসেব অনুযায়ী বিশ্বে মোট যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৮০৬ মিলিয়ন, যা ২০৩০ সালের দিকে ১.৩ বিলিয়ন এবং ২০৫০ সালের দিকে ২ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ২০০৮ সালে পেট্রোলিয়াম এবং অন্যান্য তরল জ্বালানির ব্যাবহার ছিল প্রতিদিন ৮৫.৭ মিলিয়ন ব্যারেল, যা ২০৩৫ সালের দিকে ১১২.২ মিলিয়ন ব্যারেলে পৌঁছাবে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত সারা বিশ্বে সব ধরনের জীবাশ্ম-জ্বালানির ব্যাবহার ছিল শূন্যের কোটায়, যা ক্রমবর্ধমান ভাবে বেড়ে গত শতকের শেষ দিকে এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭,৫০০ মিলিয়ন টন প্রাকৃতিক গ্যাস, ৬,০০০ মিলিয়ন টন পেট্রোলিয়াম তেল এবং ২,০০০ মিলিয়ন টন কয়লা। অন্যদিকে জীবাশ্ম-জ্বালানির সঞ্চিত ভান্ডার সীমিত ও অ-নবায়নযোগ্য, এবং ধারনা করা হচ্ছে আগামী ৪০-৫০ বছরের মধ্যে এই মজুদ নিঃশেষ হয়ে যাবে।
  • জীবাশ্ম-জ্বালানি ব্যবহারের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হল এই জ্বালানি পোড়ানোর ফলে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমণ এবং পরিবেশে অস্বাভাবিক ভাবে এসব গ্যাসের জমা হওয়া, যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রধান কারন হিসেবে ইতোমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। এই উষ্ণতা বৃদ্ধির অনেকগুলো ক্ষতিকর প্রভাবের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, এবং জীব বৈচিত্র্য হ্রাস অন্যতম। গ্রিন হাউজ গ্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কার্বন-ডাই-অক্সাইড যার পরিমাণ জীবাশ্ম-জ্বালানি ব্যবহারের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে। এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত পরিবেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান ছিল শুন্যের কাছাকাছি, অর্থাৎ মোট নিঃসৃত এবং ব্যবহৃত গ্যাসের মধ্যে একটি সমতা ছিল, ছিল ভারসাম্য। অথচ ক্রমবর্ধমান জীবাশ্ম-জ্বালানি ব্যবহারের ফলে ২০১২ সালে পরিবেশে এই গ্যাসের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায়  ১০,০০০ মিলিয়ন টন।
  • তেল উৎপাদন ও বিপণনে বৈশ্বিক রাজনীতিও বর্তমানে একটি উদ্বেগের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সত্তুরের দশকে আরব দেশগুলোর তেল অবরোধের কারনে পুরা বিশ্বে জ্বালানি বাজার অস্থিতিশীল হয়েছিল এবং তেলের সরবরাহ মারাত্নক ভাবে বিঘ্নিত হয়েছিল। অন্যদিকে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে হঠাত করে তেলের দাম কমে যাওয়ায় বর্তমানে অনেক তেল উৎপাদনকারী দেশ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করছে।

জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষনের উপায়

সভ্যতার অগ্রগতি ও জনসংখ্যার বৃদ্ধির সাথে সাথে এই জ্বালানি চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু এদের পরিমান সীমিত থাকার কারনে এদের যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষনের দরকার। সংরক্ষনের উপায়গুলি হল-

১.মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

২. রান্নার পর কয়লার উনুন বা গ্যাস স্টোভের উনুন বন্ধ রাখতে হবে।

৩. যানবাহন থেমে থাকলে তার ইঞ্জিন বন্ধ রাখতে হবে।

৪. কয়লা, খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসকে বানিজ্যিক সম্পদ না ভেবে সমষ্টিগত সম্পদ ভাবতে হবে।

৫. লাইট, ফ্যান, টেলিভিশন এবং কম্পিউটার যখন ব্যবহার করছেন না তখন সুইচ বন্ধ করে রাখতে হবে।

৬. লাইট, এয়ার কন্ডিশনার, হিটার, রেফ্রিজারেটর এবং ওয়াশিং মেশিন সহ কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এমন সরঞ্জাম কেনা।

৭. ব্যাক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা কমিয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা।

৮.প্লাস্টিক জাতীয় যাবতীয় দ্রব্যের ব্যবহার কমিয়ে এবং সেগুলিকে পুর্নব্যবহার করে।

৯. খাবার সংরক্ষনের জন্য প্লাস্টিকের জারের পরিবর্তে কাচের তৈরি জার ব্যবহার করা।

১০. জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীল না হয়ে প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করা।

জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

বর্তমানে যান্ত্রিক যুগে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও অগ্রগতির মূলে রয়েছে ফুয়েল বা জ্বালানি। আজকের দিনে মানুষের অত্যাধুনিক জীবন যেমন বস্ত্র ছাড়া অবান্ত ও অচল, তেমনি জ্বালানি ছাড়া যান্ত্রিক সভ্যতা বিকল এবং অসম্ভব।

জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে মানুষের চাহিদা। বাড়ছে যানবাহন,শিল্প -কলকারখানা এবং নগর। জ্বালানির চাহিদা ও বিপুল হারে বেড়ে চলেছে।

নিত্য নতুন শিল্পায়ন ও উন্নততর জীবনযাত্রার তাগিতে শক্তির ব্যবহার ও চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলেছে, যার প্রধান উৎস হল কয়ল্‌ পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস,-অর্থাৎ জীবাশ্ম জ্বালানি।এই জীবাশ্ম জ্বালানির সংরক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কারণ-

১. যথেষ্ট ব্যবহারের ফলে যে ভাষা জ্বালানির ভান্ডার ক্রমে পুড়িয়ে আসছে এবং অতুল ভবিষ্যতে এই ভান্ডার নিঃশেষিত হয়ে যাবে।

২. জীবাশ্ম জ্বালানি তৈরি হতে কোটি কোটি বছর সময় লেগেছে অর্থাৎ প্রকৃতির এই সম্পদ পুনর্নবীকরণযোগ্য নয়।

৩. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমালে এদের দহনে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইড ( CO2 ) এবং অন্যান্য গ্রীন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বায়ুমন্ডলে হ্রাস পাবে ফলে বিশ্ব উষ্ণায়নের মাত্রা কমবে।

৪. আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে কিছু পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানির অবশ্যই সঞ্চয় করা দরকার হলে তারা উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির নতুন উৎস সন্ধানের সময় পাবে।

জীবাশ্ম জ্বালানির দহনে কোন গ্যাস উৎপন্ন হয়

জীবাশ্ম জ্বালানির দহনে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়

জৈব জ্বালানি কার্বনঘটিত যৌগ। এগুলো বায়ুমণ্ডলে দহনের ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়ে বায়ুতে মিশে যায়। জীবশ্ম জ্বালানি দহনের ফলে তৈরি গ্রিন হাউস গ্যাসে কার্বন – ডাই অক্সাইড ৪৯% ক্লোরোফ্লোরো কার্বন বা সিএফসি ১৪% ,মিথেন ১৮% , নাইট্রাস অক্সাইড ৬% ও অন্যান্য গ্যাস ১৩% থাকে। এদের মধ্যে কলকারখানা ও যানবাহনে জীবাশ্ম জ্বালানি দহনের ফলে কার্বন – ডাই – অক্সাইডের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জীবাশ্ম ও জীবন্ত জীবাশ্ম পার্থক্য

জীবাশ্মজীবন্ত জীবাশ্ম
উদ্ভিদ বা প্রাণীর ছাপ যুক্ত প্রস্তরকে জীবাশ্ম বলেযে সমস্ত জীব সুদূর অতীতে উত্পত্তি লাভ করেও কোনোরকম পরিবর্তন ছাড়াই এখনও পৃথিবীতে টিকে আছে, অথচ তাদের সমসাময়িক জীবদের অবলুপ্তি ঘটেছে, সেই সকল জীবদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলে ।
পাললিক শিলার মধ্যে জীবাশ্ম দেখা যায়পাললিক শিলার মধ্যে জীবন্ত জীবাশ্ম দেখা যায় না।
প্রাণী বা উদ্ভিদ পাথরে পরিণত হয়।প্রাণী বা উদ্ভিদ পাথরে পরিণত হয় না।
জীবাশ্মের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে খোসা, হাড়, প্রাণী বা জীবাণুর পাথরের ছাপ, এক্সোককেলেটন, অ্যাম্বারে সংরক্ষিত বস্তু, পেট্রিফাইড কাঠ, কয়লা, চুল, তেল এবং ডিএনএ অবশিষ্টাংশ।জীবন্ত জীবাশ্মের উদাহরণ
উদ্ভিদ: ইকুইজিটাম, নিটাম ও গিঙ্কো বাইলোবা
প্রাণী : পেরিপেটাস , লিমুলাস , সিলাকান্থ , স্ফেনোডন , হংসচঞ্চু 
জীবাশ্ম ও জীবন্ত জীবাশ্ম পার্থক্য

জীবন্ত জীবাশ্ম কি, জীবন্ত জীবাশ্ম বলতে কি বুঝায়

ফসিল বলতে আমরা বুঝি বহুদিন আগের মৃত প্রাণী কিংবা উদ্ভিদ । কিন্তু এরাই আবার জীবন্ত কি করে হয় ভেবে সত্যিই অবাক হতে হয়। একই সাথে জীবন্ত অথচ মৃত কোন জিনিস হওয়া কি সম্ভব? জীবন্ত ফসিল হল এমন কতগুলো জীব, অতীতে জন্ম হলেও যাদের বংশধরেরা আজও পৃথিবীতে বেঁচে সুদূর আছে। অথচ এদের সমসাময়িক ও সমগোত্রীয় সকল প্রাণীই বহুপূর্বে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। বিবর্তনের ইতিহাসে এদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

যেমন— মাছের মধ্যে সিলাকান্থ, স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে প্লাটিপাস, সরীসৃপের মধ্যে স্ফেনোডন, উদ্ভিদ শ্রেণীর মধ্যে ডিঙ্গোবাইলোবা ইত্যাদি । অনেক সময় পাথরের মধ্যেও এদের ফসিল পাওয়া যায়।

যেসব উদ্ভিদ বা প্রাণী ডাইনোসরের যুগ থেকে এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে তাদেরকে জীবন্ত জীবাশ্ম বলে। যেমন – বাংলাদেশের রাঁজকাকড়া, সাইকাস উদ্ভিদ

যে সমস্ত জীব (উদ্ভিদ ও প্রাণী) সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করেও কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়াই যাদের বংশধরেরা আজও পৃথিবীতে টিকে আছে। অথচ এদের সমসাময়িক ও সমগোত্রীয় সকল জীবেরা বহুপূর্বে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। সেই সমস্ত জীবদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলে। জীবন্ত জীবাশ্ম মানে কোনো প্রস্তরীভূত জীবাশ্ম নয়।এরা হল জীবন্ত জীব।

জীবন্ত জীবাশ্ম উদাহরণ

জীবন্ত জীবাশ্মের উদ্ভিদ উদাহরন

ইকুইজিটাম, নিটাম ও গিঙ্কো বাইলোবা নামের উদ্ভিদগুলো জীবন্ত জীবাশ্মের উদাহরণ।

জীবন্ত জীবাশ্মের প্রাণী উদাহরন

  • সন্ধিপদ প্রাণী: লিমুলাস বা রাজকাঁকড়া
  • সরীসৃপ প্রাণী: স্ফেনোডন নামক
  • স্তন্যপায়ী প্রাণী: প্লাটিপাস নামক

প্লাটিপাস জীবন্ত জীবাশ্ম বলা হয়

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | জীবাশ্ম

Q1. জীবাশ্ম কি

Ans – মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণী ২০০ মিলিয়ন বা তার চেয়ে বেশি বছর মাটির নিচে থেকে উচ্চ তাপ ও চাপে কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস বা খনিজ তেলে পরিণত হয় বলে এগুলোকে জীবাশ্ম বা জীবাশ্ম জ্বালানি বলে।

Q2. জীবাশ্ম জ্বালানি কি

Ans – বহু প্রাচীনকালের উদ্ভিদ এবং প্রাণীর মৃতদেহের যে ধ্বংসাবশেষ মাটির নিচে পাওয়া যায় তাকে জীবাশ্ম বলে। বায়ুর অনুপস্থিতিতে তাপ, চাপ আর রাসায়নিক পরিবর্তনের কারণে বড় বড় উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রতম উদ্ভিদ ও প্রাণী পর্যন্ত সকল ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির সৃষ্টি হয়েছে। কয়লা, পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাসকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলা হয়।

Q3. সাইকাস কে জীবন্ত জীবাশ্ম বলা হয় কেন

Ans – বর্তমানে জীবন্ত কোনাে উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রাগৈতিহাসিক যুগে বিদ্যমান উদ্ভিদ তথা বর্তমানে জীবাশ্মে পরিণত হয়েছে এমন উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হলে বর্তমানে জীবন্ত উদ্ভিদটিই হলাে জীবন্ত জীবাশ্ম।

Cycas উদ্ভিদটি যে Cycadales বর্গের অন্তর্গত তাদের অধিকাংশ উদ্ভিদই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এদেরকে এখন শুধুমাত্র জীবাশ্ম হিসেবে পাওয়া যায়। এ বর্গের Cycas উদ্ভিদটি এখনও বেঁচে আছে।এজন্যই Cycas কে জীবন্ত জীবাশ্ম বলা হয়।

Q4. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো দরকার কেন

Ans – আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো দরকার কারণ, শক্তি ছাড়াও, তারা কার্বন ডাই অক্সাইডও তৈরি করে যা বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী।

Q5. পাললিক শিলায় জীবাশ্ম দেখা যায় কেন

Ans – দীর্ঘদিন পলি সঞ্চিত হয়ে যে শিলা গঠন হয়েছে, তাই পাললিক শিলা। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত ও বিচূর্ণিভূত হয়ে রূপান্তরিত হয়। কাকরুন, কাদা, বালি, ধুলোয় পরিণত হয়। পলিমাটি দীর্ঘদিন নদী বয়ে আনা পলি থেকে গঠিত হয়। আবার পাললিক শিলা যৌগিক, জৈবনিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায়ও গঠিত হতে পারে। বেলেপাথর, কয়লা, শেল, চুনাপাথর, পাললিক শিলার উদাহরণ। জীবদেহ থেকে উৎপন্ন হয় বলে, কয়লা ও খনিজ তেলকে জৈব শিলাও বলে। এরকম মিশ্রিত অনেক পাললিক শিলার মধ্যেও তাই জীবাশ্ম দেখা যায়।

Q6. আগ্নেয় শিলায় জীবাশ্ম দেখা যায় না কেন

Ans – উদ্ভিদ ও প্রাণীর ছাপযুক্ত সেই প্রস্তরকে বলে জীবাশ্ম । উত্তপ্ত শিলাস্রোত বা ম্যাগমা শীতল ও কঠিন হয়ে যখন আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি হয় , তখন তার মধ্যে কোনাে উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহ চাপা পড়লেও তা নষ্ট হয়ে যায় , প্রস্তরে তার কোনাে ছাপ থাকে না । এজন্যই আগ্নেয় শিলায় জীবাশ্ম দেখা যায় না ।

Q7. জীবাশ্ম সংক্রান্ত বিদ্যাকে কি বলে

Ans – জীব বিদ্যার যে শাখায় জীবাশ্ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে বলে- প্যালিয়েন্টোলজি

Q8. জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প একটি জ্বালানির উল্লেখ করো

Ans – জীবাশ্ম জ্বালানিবিহীন পৃথিবীর কথা কল্পনা করা হলে প্রথমেই বিকল্প জ্বালানি হিসেবে মনে হয় বিদ্যুৎ শক্তির কথা। বাস্তবিকই এটি হতে পারে জীবাশ্ম জ্বালানির একমাত্র বিকল্প। 

জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প শক্তি হিসেবে পুনর্নবীকরনযোগ্য শক্তি উৎস অর্থাৎ বায়ুশক্তি, সৌরশক্তি, ভূতাপশক্তি এবং জোয়ার-ভাটাশক্তি ইত্যাদি বিকল্প শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।

Q9. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার

Ans – জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিম্নরূপঃ
– বিদ্যুৎ উৎপাদনে
– রাসায়নিক সার
– পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে এবং
– জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।