দ্রবন কাকে বলে
দ্রব আর দ্রাবক সহযোগে উৎপন্ন পদার্থটি ই হল দ্রবণ ।
দুই বা ততোধিক বস্তুর এমন একটি সমসত্ব মিশ্রণ যাতে বস্তুসমূহের আপেক্ষিক পরিমাণ ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে থাকে, তাকে দ্রবণ(Solution)বলে
দুই বা ততোধিক পদার্থের (কঠিন, তরল বা গ্যাসীয়) সমসত্ত্ব মিশ্রণের উপাদানগুলোর আপেক্ষিক পরিমাণ যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত পরিবর্তিত করা যায়, তাহলে মিশ্রণকে দ্রবণ বলে। দ্রবণের প্রতি অংশের সংযুক্তি, ভৌত এবং রাসায়নিক ধর্ম অভিন্ন হয়। দ্রবণ হলো দ্রব এবং দ্রাবকের সমসত্ত্ব মিশ্রণ।
দ্রব + দ্রাবক = দ্রবণ। দ্রব যেকোন কঠিন বস্তু হতে পারে। দ্রাবক হল পানি। দ্রব ও দ্রাবক কে একত্রে মেশালে দ্রবণ তৈরি হয়।
দ্রবণ হল একটি সমজাতীয় মিশ্রণ যা এতে এক বা একাধিক দ্রবণ থাকে।
- দ্রবণ + দ্রাবক = দ্রবণ
- দ্রবণ = সমাধান – দ্রাবক
- দ্রাবক = সমাধান – দ্রবণ
দ্রবন কয় প্রকার ও কী কী
(i) তরল-কঠিন দ্রবণ : এক্ষেত্রে দ্রাবক তরল এবং দ্রব হচ্ছে একটি কঠিন পদার্থ। উদাহরণস্বরূপ, পানিতে চিনি অথবা NaCl মেশালে এ ধরনের দ্রবণ তৈরি হয়।
(ii) তরল-তরল দ্রবণ : এ ধরনের দ্রবণের ক্ষেত্রে কোন তরল দ্রাবকে অপর একটি তরল দ্রব দ্রবীভূত থাকে। পানিতে অ্যালকোহল বা বেনজিনে হেক্সেন মেশালে এ প্রকৃতির দ্রবণ তৈরি হয়।
(iii) তরল-গ্যাস দ্রবণ : এ প্রকৃতির দ্রবণে তরল দ্রাবকে একটি গ্যাসীয় দ্রব দ্রবীভূত থাকে। যেমন, অ্যামোনিয়া, CO2, বা O2 প্রভৃতি গ্যাস পানিতে দ্রবীভূত হয়ে এ ধরনের দ্রবণ তৈরি করে।
(iv) গ্যাস-গ্যাস দ্রবণ : একটি গ্যাসের মধ্যে অন্য একটি গ্যাস (পরস্পরের মধ্যে কোন বিক্রিয়া না ঘটলে) মিশ্রিত হলে এ ধরনের দ্রবণ প্রস্তুত হয়। যেমন, বায়ু হলো নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনের একটি সমসত্ত্ব মিশ্রণ।
(v) কঠিন-কঠিন দ্রবণ : দুটি কঠিন অবস্থার ধাতু সমসত্ত্বভাবে মিশে যে মিশ্র ধাতু উৎপন্ন করে, তাকে কঠিন দ্রবণ বলে। যেমন, কপার ও জিংক সমসত্ত্বভাবে মিশে পিতল উৎপন্ন করে।
(vi) কঠিন গ্যাস দ্রবণ : কোন কঠিন পদার্থে গ্যাস দ্রবীভূত হয়ে এ ধরনের দ্রবণ উৎপন্ন করে। যেমন, H2 গ্যাস কঠিন প্যালাডিয়াম ধাতুতে (Pd) দ্রবীভূত হয়ে কঠিন গ্যাস প্রকৃতির দ্রবণ তৈরি করে।
আরো পড়তে: দ্রাব্যতা কি, দ্রাব্যতা কাকে বলে, দ্রাব্যতা গুণফল কাকে বলে, দ্রাব্যতা নির্ণয়ের সূত্র
জলীয় দ্রবণ কাকে বলে
দ্রব ও দ্রাবক মিশ্রিত করে দ্রবণ প্রস্তুত করা হয়। দ্রবণ প্রস্তুতের সময় বিভিন্ন তরল পদার্থ যেমন – পানি, অ্যালকোহল, এসিড ব্যবহার করা হয়। তবে শুধুমাত্র দ্রাবক হিসেবে পানির তৈরি দ্রবণকে জলীয় দ্রবণ বলে।
সর্বজনীন দ্রাবক কাকে বলে
সার্বজনীন দ্রাবক বা Universal Solvent বোঝার আগে আপনাকে দ্রাবক সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
দ্রাবক : যে সকল পদার্থ অন্যান্য পদার্থকে দ্রবীভূত করতে পারে তাকে দ্রাবক বলে। অর্থাৎ দ্রব যাতে দ্রবীভূত হয় তাই দ্রাবক। কোনো দ্রবণে দ্রাবক এর পরিমাণ ই বেশি থাকে।
আর কোনো পদার্থ যদি অজৈব ও জৈব সকল প্রকৃতির পদার্থকে দ্রবীভূত করে, তাকে সার্বজনীন দ্রাবক বলা হয়।
যেমন: পানি (H2O) একটি সার্বজনীন দ্রাবক ।
কারণ, পানি একটি পোলার সমযোজী যৌগ। পানিতে ধনাত্মক- ঋণাত্নক প্রান্ত অর্থাৎ পোলারিটি বিদ্যমান।
পোলারিটি থাকার কারণে এটি অন্য পোলার যৌগ সমূহকে দ্রবীভূত করতে পারে। ফলে বেশিরভাগ অজৈব যৌগ পানিতে দ্রবীভূত হয়। তাছাড়া যেসব জৈব যৌগে পোলারিটি রয়েছে এরাও সহজে পানিতে দ্রবীভূত হয়। পানি জৈব ও অজৈব উভয় ধরনের যৌগকে দ্রবীভূত করে বলে একে সার্বজনীন দ্রাবক (Universal Solven) বা সর্বশ্রেষ্ঠ দ্রাবক বলা হয়।
দ্রব কাকে বলে
দ্রবণ তৈরি করার সময় যে পদার্থটি দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় তাকে দ্রব বলে।
দ্রবণে যে পদার্থ অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে থাকে তাকে দ্রব বলে।
দ্রবন=দ্রব + দ্রাবক →দ্রাবকঃ- দ্রবনে যে উপাদানের ভৌত অবস্থা দ্রবনের ভৌত অবস্থা নির্ধারক। অন্যভাবে বললে যে বিস্তৃত মাধ্যমে দ্রব দ্রবীভুত হয়।
আরো পড়তে: দ্রব্য কি, অর্থনৈতিক দ্রব্য কাকে বলে, গিফেন দ্রব্য কি, নিকৃষ্ট দ্রব্য কি, ভেবলেন দ্রব্য কি
দ্রব ও দ্রাবকের পার্থক্য
দ্রাবক এবং দ্রাবকের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য নীচে সারণী করা হয়েছে।
তুলনার ভিত্তি | দ্রবণ | দ্রাবক |
---|---|---|
সংজ্ঞা | একটি দ্রাবক একটি পদার্থ যা একটি দ্রাবক দ্বারা একটি দ্রবণে দ্রবীভূত করা যেতে পারে। একটি দ্রবণ অনেক রূপ নিতে পারে। এটি একটি গ্যাস, একটি তরল, বা একটি কঠিন আকারে হতে পারে। | দ্রবণের যে অংশটি সর্বাধিক পরিমাণে উপস্থিত থাকে তাকে দ্রাবক বলে। এটি সেই তরল যেটিতে দ্রবণটি দ্রবীভূত হয়৷ একটি দ্রাবক সাধারণত একটি তরল হয়৷ |
পর্যায় | দ্রবণের বিচ্ছুরিত ধাপকে দ্রবণ বলা হয়। | দ্রাবক হল দ্রবণের মাঝারি ধাপ, যা দ্রবণীয় কণাগুলোকে ছড়িয়ে দেয়। |
পরিমাণ | একটি দ্রবণে, দ্রাবকের পরিমাণ দ্রাবকের পরিমাণের চেয়ে কম। | একটি দ্রবণে, দ্রাবকের পরিমাণ দ্রাবকের পরিমাণের চেয়ে বেশি। |
অবস্থা | দ্রবণের অবস্থা কঠিন, তরল বা বায়বীয় হতে পারে। | বেশিরভাগ দ্রাবক তরল, তবে কিছু দ্রাবক বায়বীয় অবস্থায় থাকতে পারে। |
সমাধানের অবস্থা | সমাধান দ্রবণীয় অবস্থায় থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। | সমাধান প্রায় নিশ্চিতভাবে দ্রাবক অবস্থায় আছে। |
স্ফুটনাঙ্ক | দ্রবণের স্ফুটনাঙ্ক দ্রবণের চেয়ে বেশি। | দ্রাবকের স্ফুটনাঙ্ক দ্রাবকের তুলনায় কম। |
নির্ভরযোগ্যতা | দ্রবণীয়তা দ্রবণের বৈশিষ্ট্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। | দ্রাব্যতা দ্রাবকের বৈশিষ্ট্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। |
দ্রাব্যতা | দ্রবণের দ্রবণীয়তা তার বৈশিষ্ট্য দ্বারা নির্ধারিত হয়, যেমন পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল এবং অণুর আকার। | দ্রাব্যতা দ্রাবকের বৈশিষ্ট্য দ্বারা নির্ধারিত হয়, যেমন পোলারিটি। |
তাপ স্থানান্তর | দ্রবণে তাপ স্থানান্তরিত হয়। | তাপ তরল থেকে দ্রবণে সরানো হয়। |
উদাহরণ | দ্রবণের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে চিনি, দ্রবীভূত কার্বন ডাই অক্সাইড, অক্সিজেন, জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড, আর্গন | দ্রাবকের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে জল, ইথানল, মিথানল, অ্যাসিটোন, টেট্রাক্লোরোইথিলিন, টলুইন, মিথাইল অ্যাসিটেট এবং ইথাইল অ্যাসিটেট। |
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | দ্রবন
Q1. দ্রবন থেকে কঠিন পদার্থের কেলাস তৈরীর পদ্ধতি কে কি বলে
Ans – দ্রবণগুলি মিশ্রিত হলে একটি অদ্রবণীয় কঠিন গঠনের প্রক্রিয়া হল বৃষ্টিপাত। এইভাবে গঠিত কঠিনকে বলা হয় অবক্ষেপণ।
Q2. নেসলার দ্রবন কি, নেসলার দ্রবন কাকে বলে
Ans – বর্ণহীন মারকিউরিক ক্লোরাইড দ্রবণের মধ্যে ধীরে ধীরে KI দ্রবণ যোগ করলে প্রথমে লাল বর্ণের মারকিউরিক আয়োডাইডের অধঃক্ষেপ পড়ে। আরও অধিক পরিমাণ KI দ্রবণ যোগ করলে বর্ণহীন জটিল যৌগ পটাশিয়াম মারকিউরিক আয়োডাইড উৎপন্ন হয়।
অতঃপর এই দ্রবণে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড যোগ করলে যে ক্ষারীয় দ্রবণ উৎপন্ন হয় তাকেই নেসলার দ্রবণ বলে।
– > HgCl₂ + 2KI ——> HgI₂ + 2KCl
– > HgI₂ + 2KI ——> K₂[HgI₄]
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।