সন্ধি কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
- সন্ধি – সন্নিহিত দুটি ধ্বনির মিলনের নাম সন্ধি। যেমন- জল+আধার= জলাধার।
- সন্ধির উদ্দেশ্য স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা, ধ্বনিগত মাধুর্য সম্পাদন, ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করা।
সন্ধি কাকে বলে
পরস্পর পাশাপাশি উপস্থিত দুটি ধ্বনির একত্রিত হওয়ার ফলে যদি একটি নতুন ধ্বনি তৈরি হয়, তখন তাকে সন্ধি বলে।
- পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে।
- পরস্পর সন্নিহিত দুটি ধ্বনির মিলনের নাম সন্ধি।
সন্ধির উদাহরণ
একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝা যাক – ‘নবান্ন’ শব্দটি যদি মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করা যায় তাহলে দেখা যাবে যে পরস্পর অবস্থিত ‘নব’ এবং ‘অন্ন’ এ দুটি শব্দ তারাতারি উচ্চারণের ফলে ‘নবান্ন’ শব্দটি তৈরি হয়েছে। এখানে ‘নব’ শব্দের শেষে ‘অ’ ধ্বনি এবং ‘অন্ন’ শব্দের প্রথমে অবস্থিত ‘অ’ ধ্বনি উভয়ে একত্রিত মিলে ‘আ’ ধ্বনি হয়েছে।
যেমন : নব + অন্ন = নবান্ন।
এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে আমরা যখন কথা বলি, তখন অনেক ক্ষেত্রে তারাতারি উচ্চারণের ফলে পাশাপাশি অবস্থিত দুটি শব্দের ধ্বনি মিলে এক হয়ে যায় কিংবা একটি ধ্বনির প্রভাবে অন্য ধ্বনি বদলে যায় বা বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরস্পর উপস্থিত ধ্বনি তারাতারি উচ্চারণের ফলে যে মিলন বা পরিবর্তন বা বিলুপ্ত হয় তাই সন্ধি নামে খ্যাত।
সন্ধি শব্দের অর্থ কি
মানুষ কথা বলার সময় কথার গতি বৃদ্ধি পায়। দ্রুত কথা বলার সময় কখনো কখনো দুটো শব্দের কাছাকাছি থাকা দুটো ধ্বনির উচ্চারণ একত্রিত হয়ে যায়। ব্যাকরণে একে সন্ধি বলা হয়।
যেমন: ‘আমি বিদ্যা আলয়ে যাব।’ বাক্যটি বলার সময় ‘আমি বিদ্যালয়ে যাব’ হয়ে যায়। এখানে ‘বিদ্যা’-এর ‘আ’-ধ্বনি এবং আলয়’-এর ‘আ’-ধ্বনি মিলে গিয়ে সন্ধি উৎপন্ন হচ্ছে।
সন্ধি শব্দের অর্থ মিলন। দুটো ধ্বনির সন্ধিতে প্রথম শব্দের শেষ ধ্বনি এবং পরের শব্দের প্রথম ধ্বনির মিলন ঘটে। সন্ধির ফলে নতুন নতুন শব্দের সৃষ্টি হয়। কথোপকথনের সময় শব্দের উচ্চারণ সরল হয়। ভাষা সংকীর্ণ হয় এবং তা শুনতেও আমাদের ভালো লাগে।
সন্ধি বা ধ্বনির মিলন নানা প্রকার হতে পারে। যেমন :
১. দুটি ধ্বনির আংশিক বা পূর্ণমিলন। যেমন: শত + অধিক = শতাধিক [অ + অ = আ]
২. পূর্বধ্বনি বা পরধ্বনি লোপ। যেমন নিঃ + চয় = নিশ্চয়
আরও পড়ুন :- ধ্বনি কাকে বলে
সন্ধি কত প্রকার ও কি কি, সন্ধি কত প্রকার
সন্ধিকে নানা দিক থেকে নানান ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন –
বাংলা সন্ধি দুই রকমের। যথা –
- স্বরসন্ধি ও
- ব্যঞ্জনসন্ধি।
বাংলা ভাষায় অনেক সংস্কৃত শব্দ কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়া ব্যবহৃত হয়। এগুলোকে তৎসম শব্দ বলে। এসব তৎসম শব্দের সন্ধি সংস্কৃতের নিয়মেই হয়। তাই সংস্কৃতের নিয়ম মেনে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম শব্দের সন্ধি তিন প্রকার। যথা-
- স্বরসন্ধি
- ব্যঞ্জনসন্ধি
- বিসর্গসন্ধি
শব্দের উৎস দিক থেকে বিচার করলে সন্ধিকে দুটি শ্রেনীতে ভাগ করা যায়। যথা-
- তৎসম বা সংস্কৃতাগত সন্ধি:
- খাঁটি বাংলা সন্ধি
বিভিন্ন প্রকার সন্ধির সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ
স্বরসন্ধি কাকে বলে, উদাহরণ দাও :-
স্বরবর্ণের বা ধ্বনির সঙ্গে স্বরবর্ণের বা ধ্বনির মিলনের নাম স্বরসন্ধি। অর্থাৎ, সন্নিহিত দুটি স্বরবর্ণ মিলে যখন একটি স্বরবর্ণে পরিবর্তিত হয়, তখনই আমরা তাকে স্বরসন্ধি বলতে পারি।
উদাহরণ :-
সোনা + আলি = সোনালি
মিথ্যা + উক = মিথ্যুক
রূপা + আলি = রূপালি
মা + এর = মায়ের
ব্যঞ্জন সন্ধি কাকে বলে উদাহরণ দাও
স্বরধ্বনির বা বর্ণের সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনির বা বর্ণের, ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনির মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে।
স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি উদাহরণ :-
আ + ছন্ন = আচ্ছন্ন।
প্রতি + ছবি = প্রতিচ্ছবি।
কথা + ছলে = কথাচ্ছলে।
পরি + ছল = পরিচ্ছদ।
ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি উদাহরণ
দিক্ + অন্ত = দিগন্ত।
তৎ + অন্ত = তদন্ত।
তৎ + অবধি = তদবধি।
সুপ্ + অন্ত = সুবন্ত।
ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি উদাহরণ
চলৎ + চিত্র = চলচ্চিত্র।
উদ্ + ছেদ = উচ্ছেদ।
উৎ + জ্বল = উজ্জ্বল।
বিসর্গ সন্ধি কাকে বলে
বিসর্গের (:) সঙ্গে স্বরধ্বনি অথবা বিসর্গের (:) সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনি মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে।
নিঃ + চল = নিশ্চল
নিঃ + চয় = নিশ্চয়
নিঃ + চিহ্ন = নিশ্চিহ
শিরঃ + ছেদ = শিরশ্ছেদ
নিঃ + চিন্ত = নিশ্চিন্ত
দুঃ + চিন্তা = দুশ্চিন্তা
বিসর্গ সন্ধিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে:
১. র্ – জাত বিসর্গ ও
২. স্ – জাত বিসর্গ।
১. র্ -জাত বিসর্গ সন্ধি কি :-
কোনো শব্দের শেষে র্ এর পরিবর্তে যদি : হয় তখন তাকে র্ -জাত বিসর্গ বলে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় : পুনর-পুনঃ, অন্তর-অন্তঃ, প্রাতর-প্রাতঃ ইত্যাদি।
২. স্-জাত বিসর্গ সন্ধি কি :-
স্ এর জায়গায় যে : হয় তাকে স্-জাত বিসর্গ বলে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় : নমস্-নমঃ, শিরস্-শিরঃ, পুরস্-পুরঃ, ইত্যাদি।
তৎসম বা সংস্কৃতাগত সন্ধি কাকে বলে :-
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম শব্দের দ্বারা কোনো সন্ধি হলে তাকে তৎসম বা সংস্কৃতাগত সন্ধি বলে। তৎসম সন্ধি স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি ভেদে দুই প্রকার :
১. তৎসম বা সংস্কৃতাগত স্বরসন্ধি
২. তৎসম বা সংস্কৃতাগত ব্যঞ্জনসন্ধি।
খাঁটি বাংলা সন্ধি :-
খাঁটি বাংলা সন্ধি বলতে বোঝায় যখন দুটি খাঁটি বাংলা শব্দ পরস্পর উচ্চারণের হয় তখন তাকে খাঁটি বাংলা সন্ধি বলে।
আরও পড়ুন :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস
তবে খাঁটি বাংলা সন্ধির নিয়ম সংস্কৃত সন্ধির সঙ্গে মেলে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তৎসম সন্ধির নিয়ম প্রয়োগ করে ভিন্ন নিয়মে এ সন্ধি করা হয়। যেমন: পাঁচ + সের = পাঁশসের কাঁচা কলা = কাঁচকলা।
খাঁটি বাংলা সন্ধি দুই প্রকার। যথা :
১. খাঁটি বাংলা স্বরসন্ধি;
২. খাটি বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি।
সন্ধির প্রয়োজনীয়তা
পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনি দ্রুত উচ্চারণের সময় সন্ধির ফলে উচ্চারণে স্বাচ্ছন্দ্য আসে এবং উচ্চারণ সহজতর হয়। সন্ধি ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করে। যেমন ‘নব’ ‘অন্ন’ উচ্চারণে যে সময় প্রয়োজন লাগে, ‘নবান্ন’ উচ্চারণে তার চেয়ে কম সময় লাগে।
এ ছাড়া ‘নব’ ‘অন্ন’ বলতে যে ধরনের উচ্চারণের শ্রম প্রয়োজন হয়, ‘নবান্ন’ তার চেয়ে খুব কম পরিশ্রমে সহজেই উচ্চারিত হয়।
কেবল তা-ই নয়— আলাদাভাবে ‘নব’ ‘অন্ন’ উচ্চারণের চেয়ে একসঙ্গে ‘নবান্ন’ উচ্চারণ অনেক বেশি শ্রুতিমধুর। অর্থাৎ সন্ধি ভাষার ধ্বনিগত মাধুর্যও সম্পাদন করে।
সন্ধির ফলে নতুন নতুন শব্দও তৈরি হয়। শুদ্ধ বানান লিখতেও সন্ধি সহায়তা করে। সুতরাং উল্লিখিত দিকগুলো বিবেচনায় বাংলা ভাষায় সন্ধির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
সন্ধির উদ্দেশ্য কি, সন্ধির প্রধান সুবিধা কি
১ – সন্ধির প্রধান উদ্দেশ্য উচ্চারণকে সহজ-সরল করা।
২ – ধ্বনিগত মে মাধুর্য তা সম্পাদন করা।
যেমন- ‘আশা’ ও ‘অতীত’ উচ্চারণে যে পরিশ্রম প্রয়োজন, ‘আশাতীত’ তার চেয়ে অল্প পরিশ্রমে উচ্চারিত হয়। সেরূপ ‘হিম আলয়’ বলতে যেরূপ শোনা যায়, ‘হিমালয়’ তার চেয়ে সহজে উচ্চারিত হয় এবং শ্রুতিমধুরও শোনায়।
আরও পড়ুন :- সমাস কাকে বলে
এজন্য এমন কিছু ক্ষেত্রে উচ্চারণের পরিশ্রম কম হয় কিন্তু ধ্বনি-মাধুর্য লঙ্ঘিত হয়, সেই সব ক্ষেত্রে সন্ধি করার কোনো নিয়ম নেই অর্থাৎ সন্ধি করা নিয়ম লঙ্ঘিত হয় ।
যেমন :- কচু + আদা + আলু = কচ্চাদালু হয় না। অথবা কচু + আলু + আদা = কচ্চাল্বাদা হয় না।
সন্ধি বিচ্ছেদ নিয়ম
স্বরসন্ধির সূত্র :
- অ + অ = আ
- নব + অন্ন = নবান্ন
- সূর্য + অস্ত = সূর্যাস্ত
- স্ব + অক্ষর = স্বাক্ষর
সূত্র ২ : ই/ঈ + ই/ঈ = ঈ
‘ই’ বা ‘ঈ’-এর সঙ্গে ‘ই’ বা ‘ঈ’ যুক্ত হ’লে দুয়ে মিলে ঈ হয়।
ই+ই=ঈ
রবি + ইন্দ্র= রবীন্দ্র
মণি + ইন্দ্র = মণীন্দ্র
গিরি + ইন্দ্র =গিরীন্দ্র
অতি + ইত = অতীত
সূত্র ৩ : উ/ঊ + উ/ঊ = ঊ
‘উ’ বা ‘ঊ’-এর সঙ্গে ‘উ’ বা ‘ঊ’ যুক্ত হ’লে দুয়ে মিলে ঊ হয়।
উ + উ = ঊ
মরু + উদ্যান = মরূদ্যান
কটু + উক্তি = কটূক্তি
সু + উক্ত = সূক্ত
সু + উক্তি = সূক্তি
সন্ধি বিচ্ছেদ
- পরীক্ষা সন্ধি বিচ্ছেদ = পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা
- বনস্পতি এর সন্ধি বিচ্ছেদ = বনঃ + পতি = বনস্পতি।
- হিতৈষী এর সন্ধি বিচ্ছেদ = হিত + এষী
- দ্বৈপায়ন এর সন্ধি বিচ্ছেদ = দ্বীপ + আয়ন
- অহরহ সন্ধি বিচ্ছেদ = অহঃ + অহ = অহরহ
- নাবিক এর সন্ধি বিচ্ছেদ = নৌ + ইক।
- অতীত এর সন্ধি বিচ্ছেদ = অতি + ইত = অতীত।
- অত্যন্ত সন্ধি বিচ্ছেদ = অতি + অন্ত।
- অধমর্ণ এর সন্ধি বিচ্ছেদ = অধম + ঋণ।
- অন্তরীক্ষ সন্ধি বিচ্ছেদ = অন্তঃ+ঈক্ষ।
- অপরাহ্ন সন্ধি বিচ্ছেদ = অপর + অহ্ন।
- অপেক্ষা সন্ধি বিচ্ছেদ = অপ + ঈক্ষা।
- অহর্নিশ এর সন্ধি বিচ্ছেদ = অহঃ + নিশা।
- আচ্ছাদন এর সন্ধি বিচ্ছেদ কি = আ + ছাদন = আচ্ছাদন
- আবিষ্কার সন্ধি বিচ্ছেদ = আবিঃ+কার।
- আরেক সন্ধি বিচ্ছেদ = আর + এক
- আশীর্বাদ সন্ধি বিচ্ছেদ = আশীঃ+বাদ
- আশ্চর্য সন্ধি বিচ্ছেদ = আ + চর্য = আশ্চর্য
- উচ্চারণ এর সন্ধি বিচ্ছেদ কি = উৎ + চারণ।
- উচ্ছাস সন্ধি বিচ্ছেদ = উৎ + শ্বাস
- উচ্ছ্বাস সন্ধি বিচ্ছেদ = উৎ + শ্বাস
- উদ্ধত এর সন্ধি বিচ্ছেদ কি = উৎ + হত।
- উদ্ধার সন্ধি বিচ্ছেদ = উদ্ + হার।
- উন্নতি সন্ধি বিচ্ছেদ = উৎ+নতি।
- কিন্তু সন্ধি বিচ্ছেদ = কিম্ + তু।
- কুজ্ঝটিকা সন্ধি বিচ্ছেদ = কুৎ + ঝটিকা।
- কৃষ্টি এর সন্ধি বিচ্ছেদ = কৃষ্ + তি।
- ক্ষুধার্ত সন্ধি বিচ্ছেদ = ক্ষুধা + ঋত।
- গবাক্ষ এর সন্ধি বিচ্ছেদ = গো + অক্ষ।
- গবাক্ষ সন্ধি বিচ্ছেদ = গো + অক্ষ।
- গবেষণা সন্ধি বিচ্ছেদ = গো + এষণা = গবেষণা
- গায়ক এর সন্ধি বিচ্ছেদ = গৈ + অক।
গুরুত্বপূর্ণ সন্ধি বিচ্ছেদ
- অক্ষৌহিণী = অক্ষ + ঊহিনী
- দ্যুলোক এর সন্ধি বিচ্ছেদ = দিব্ + লোক
- ষষ্ঠ এর সন্ধি বিচ্ছেদ = ষষ + থ
- প্রাতরাশ এর সন্ধি বিচ্ছেদ = প্রাতঃ+আশ
- স্বেচ্ছা এর সন্ধি বিচ্ছেদ = স্ব + ইচ্ছা
- নবোঢ়া এর সন্ধি বিচ্ছেদ = নব+উঢ়া
- ভাবুক এর সন্ধি বিচ্ছেদ = ভাবুক = ভৌ + উক
- অনুচ্ছেদ = অনু + ছেদ
- আশাতীত = আশা + অতীত
- আশ্চর্য = আ + চর্য
- ইত্যাদি = ইতি + আদি
- ইত্যাকার = ইতি+আকার
- উড্ডীয়মান = উৎ + ডীয়মান
- উদ্ধার = উৎ + হার
- উদ্যম = উৎ + দম
- উন্নয়ন = উৎ+নয়ন
- গবেষণা = গো + এষণা
- উল্লেখ্য = উৎ + লেখ্য
- চতুষ্পদ = চতুঃ + পদ
- জনৈক = জন + এক
- ততোধিক = ততঃ + অধিক
- তন্ময় = তৎ + ময়
- তৃষ্ণার্ত = তৃষ্ণা + ত
- দুশ্চরিত্র = দুঃ + চরিত্র
- নিষ্ঠুর = নিঃ + ঠুর
- পদ্ধতি = পদ্ + হতি
- প্রত্যেক = প্রতি + এক
সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য
সমাস ও সন্ধি বাংলা ভাষায় শ্রুতিমধুরতা ও সংক্ষিপ্ততা আনয়ন করে। এ দুটির মধ্যে পার্থক্য নিচে দেওয়া হলো।
সমাস
বাংলা শব্দ গঠনে সমাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বক্তব্যকে সংক্ষেপ করার মাধ্যমে ভাষায় সৌন্দর্য ও মাধুর্য বৃদ্ধি করে সমাস। বাক্যের মধ্যে অনাবশ্যক পদের ব্যবহার না করে সমাসবদ্ধ পদের ব্যবহারের মাধ্যমে বক্তব্য বিষয়টিকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করা হয়। ফলে ভাষা হয় সংক্ষিপ্ত, শ্রুতিমধুর ও প্রাঞ্জল।
সমাস একটি সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ একাধিক পদের এক পদে মিলন, সংকোচন বা সংক্ষেপণ। পরস্পর অর্থসংগতিপূর্ণ দুই বা ততোধিক পদ মিলে এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে। যেমন—সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন।
সন্ধি
সন্ধি শব্দের অর্থ মিলন। আমরা যখন কথা বলি তখন অনেক সময় পাশাপাশি শব্দের দুটি ধ্বনি মিলিত হয়ে যায় বা আংশিকভাবে মিলিত হয় । এই মিলনের নামই সন্ধি । যেমন- বিদ্যা +আলয় = বিদ্যালয় বা হিম+আলয় = হিমালয়। প্রথম শব্দটিতে বিদ্যা শব্দের আ ও আলয় শব্দের আ পরস্পর যুক্ত হয়ে একঠি আ এ পরিণত হয়েছে ও বিদ্যালয় শব্দটি গঠন হয়েছে। পরের শব্দটিতে হিম এর অ ও আলয় এর আ যুক্ত হয়ে আর ধ্বনি সৃষ্টি করেছে ও হিমালয় শব্দটি গঠন করেছে। এখন আমরা বলতে পারি পাশাপাশি দুটি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে ।
সন্ধি | সমাস |
---|---|
পাশাপশি দুটি ধ্বনি বা বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। যেমন—বিদ্যা+আলয়=বিদ্যালয়। | পরস্পর অর্থসংগতিপূর্ণ দুই বা ততোধিক পদ মিলে এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে। যেমন—সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন। |
সন্ধিতে প্রতিটি শব্দের অর্থ বজায় থাকে। | ক্ষান্তরে সমাসে কখনো পূর্বপদ, কখনো পরপদ, কখনো উভয় পদ ও কখনো অন্য পদের অর্থ প্রাধান্য পায়। যেমন—চাঁদের ন্যায় মুখ = চাঁদমুখ। |
সন্ধির মিলন মূলত উচ্চারণগত বা ধ্বনির মিলন। | পক্ষান্তরে সমাসে বাক্যের অন্তর্গত পদগুলোর মধ্যে মিলন ঘটে। |
সন্ধিতে পদের বিভক্তি লোপ পায় না, বরং সংকুচিত হয়। | সমাসে সাধারণত পূর্বপদের বিভক্তি চিহ্ন লোপ পায়। যেমন—দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত। |
সন্ধিতে শব্দগুলো ক্রমপরিবর্তিত না হয়ে যুক্ত হয়। | সমাসে পদক্রম বিভিন্ন সময় নানা রূপ ধারণ করে। |
ন্ধিতে দুই বর্ণের মধ্যে যোগ চিহ্ন (+) ব্যবহার করতে হয়। | সমাসে দুই পদের মধ্যে অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়। |
সন্ধি প্রধানত তিন প্রকার। যথা : স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি। | সমাস প্রধানত ছয় প্রকার। যথা : দ্বন্দ্ব, দ্বিগু, কর্মাধারয়, তত্পুরুষ, বহুব্রীহি ও অব্যয়ীভাব। |
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | সন্ধি
Q1. কোন বাংলা পদের সাথে সন্ধি হয় না
Ans – অব্যয় পদের সন্ধি হয় না।কারণ অব্যয় পদের সাথে কোনো বিভক্তি যোগ হয় না।তবে এর ব্যতিক্রম আছে।যেমন-কিম্+তু=কিন্তু,ইতি+আদি=ইত্যাদি।এছাড়া ক্রিয়া পদের সাথেও সন্ধি হয় না।ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সাথে পুরুষ অনুযায়ী ক্রিয়া বিভক্তি যোগ করে ক্রিয়া পদ গঠন করা হয়।যেমন-‘পড়ছে’।পড়(ধাতু)+ছে(বিভক্তি)।
Q2. বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি কোনটি
Ans – কিছু কিছু সন্ধি কিছু বিশেষ নিয়মে হয়। এগুলোকে বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি বলে। উৎ + স্থান = উত্থান। এখানে স্ ব্যঞ্জনটি লোপ পেয়েছে। উৎ + স্থাপন = উত্থাপন। এখানেও উপরের নিয়ম কাজ করেছে।
Q3. নিপাতনে সিদ্ধ ব্যঞ্জন সন্ধি কোনটি
Ans – যেসব সন্ধিসমূহ স্বরসন্ধি বা ব্যঞ্জনসন্ধি বা বিসর্গসন্ধির নিয়মগুলো মেনে চলে না, তাদেরকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। তৎসম শব্দের সন্ধিতেই শুধু নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি হয়। যেমন, নিপাতনে সিদ্ধ তৎসম “স্বরসন্ধি”
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।