প্রকল্প কি, প্রকল্প কাকে বলে, প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, প্রকল্প পদ্ধতির জনক কে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রকল্প কি, প্রকল্প কী

প্রকল্প (Project) শব্দটি ল্যাটিন ‘Projicere’ থেকে উদ্ভূত, যার ইংরেজী অর্থ ‘To throw forth’ (অগ্রে নিক্ষেপ করা)। বর্তমান সময়ে প্রকল্প বলতে মূলত বিনিয়োগ কর্মকান্ডের ক্ষুদ্রতম একককে বুঝায়, তবে বাস্তব প্রয়োজনে এই শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কখনো কখনো প্রকল্পকে শুধু ধারণা, স্কিম বা পরিকল্পিত এন্টারপ্রাইজ হিসাবে মনে করা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে প্রকল্পের সকল অর্থই সঠিক হলেও প্রকল্পকে সাধারণভাবে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলা যায়- একটি নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সীমাবদ্ধ সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে কতগুলো অর্থপূর্ণ কার্যাবলির সমষ্টি হচ্ছে প্রকল্প।

ব্যাপক অর্থে প্রকল্প হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করার প্রয়াস যার সময়কাল সংক্ষিপ্ত বা দীর্ঘ হতে পারে, আকারও ছোট বা বৃহৎ হতে পারে, যার পরিমাপযোগ্যতা আছে এবং যা কোন বিচ্ছিন্ন কাজ না হয়ে ইউনিট কাজ হবে।

The Encyclopedia of Management অনুযায়ী, প্রকল্প হল একটি সংগঠিত ইউনিট যা পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচীর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নির্দিষ্ট বাজেট ও সঠিক সময়ের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জনের নিমিত্তে উন্নয়ন কর্মসূচী সম্পাদনে মনোনিবেশ করে।

প্রকল্প কাকে বলে | Prokolpo Kake Bole

কোনো একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এবং সুপরিকল্পিত পরীক্ষার বা মূল্যায়ন এর মাধ্যমে যে কার্য সম্পাদন করা হয় তাকে প্রকল্প বলা হয়ে থাকে।

এই বিষয় টিকে কেন্দ্র করে অনেক মহান ব্যাক্তিরা তাদের নিজেদের মতামত আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। যেমন –

  1. ‘Stevenson’ বলেছেন যে – ‘a project is a problematic act carried to completion in its natural settings’। এর অর্থ হচ্ছে – যেসকল সমস্যাজনিত কাজ গুলি সেখানকার স্বাভাবিক পরিবেশ এই সম্পন্ন করা হয়, তাকে প্রকল্প বলে। 
  2. ‘H.W kilpatrick’ বলেছেন – ‘a whole hearted purposeful activity proceeding in a social environment’ এর অর্থ হচ্ছে প্রকল্প হলো এক ধরনের উদ্দেশ্যমূলক কার্যকলাপ যা কোনো একটি সমাজের অনুকূল পরিবেশের দিকে লক্ষ্য রেখে সম্পন্ন করা হয়। 

প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

প্রকল্পের বিভিন্ন ধরনের অর্থ রয়েছে এটি ল্যাটিন শব্দ প্রিকিেক্টাস থেকে এসেছে , যা প্রোসিয়ার ক্রিয়া থেকে উদ্ভূত , প্রো- দ্বারা গঠিত, যার অর্থ “ফরোয়ার্ড” এবং আইসার  যা “লঞ্চ করতে” বোঝায়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য SMART হতে হবে। অর্থাৎ

  • সুনির্দিষ্ট (Specific),
  • পরিমাপযোগ্য (Measurable),
  • অর্জনযোগ্য (Achievable),
  • প্রাসঙ্গিক (Relevant),
  • সময়াবদ্ধ (Time-bound) হতে হবে।

উদ্দেশ্য, কাজের ধরন, সমাজ সেবা ইত্যাদি দিক থেকে প্রকল্পের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য আমরা দেখতে পাই। সেই সকল বৈশিষ্ট্য গুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো – 

  1. একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য – এক কিংবা একাধিক কয়েকটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য কে অর্জন করার জন্যে কিছু সময় ধরে যে কার্যক্রম সম্পাদন করা হয় তাকেই প্রকল্প বলে। লক্ষ্য গুলির উদ্দেশ্য পরিপূর্ন হয়ে গেলে প্রকল্পের সমাপ্তি ঘটে। আগেকার কোনো ঘটনার কার্য পরিচালনার জন্যে প্রকল্প তৈরি করা হয় না। 
  2. সময় বদ্ধ – প্রত্যেকটি প্রকল্পের একটি সুনির্দিষ্ট সময় সীমা থেকে থাকে। প্রকল্প গুলি একটি নির্দিষ্ট সময় শুরু হয় এবং একটি সময় এর মধ্যে শেষ হয়ে যায়। 
  3. বাজেট বরাদ্দ – প্রত্যেকটি প্রকল্পের বাজেট কতটা হবে সেটা নির্ভর করে প্রকল্প টি বাস্তবায়নের জন্যে কতটা সময় নিচ্ছে তার উপর। 
  4. নির্ভরশীলতা – অনেকসময় একটি নির্দিষ্ট প্রকল্প অন্য আরেকটি প্রকল্পের উপর নির্ভরশীল হতে পারে।  কিন্তু প্রত্যেকটি প্রকল্পের একটি নির্দিষ্ট বিভাগ এবং মূল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রকল্প গুলি বহিরাগত এবং অভ্যন্তরীণ দুই ভাবেই নির্ভরশীল।

 একটি প্রকল্প তৈরি করার সময় বিভিন্ন ধরনের সমাজ ব্যাবস্থা  এবং বিভিন্ন পেশা থেকে আসা মানুষ জনের সাথে পরিচিত হওয়া যায়। এই ভিন্ন পেশা দ্বারা যুক্ত মানুষ জন এবং ভিন্ন পরিবেশে প্রভাব গুলি তাদের প্রকল্পটি তৈরি করার স্বার্থে একত্রিত এবং নির্ভরশীল হয়ে কাজ করতে সাহায্য করে। 

  1. অভিনবত্ব – প্রকল্প তৈরি করার ক্ষেত্রে ছাত্র ছাত্রী দের মধ্যে একে ওপরের প্রতি অভিনবত্ব লক্ষ্য করা যায়। 
  2. অনুসন্ধান মূলক কাজ – প্রকল্প তৈরি করতে গিয়ে ছাত্র ছাত্রীরা নানান নতুন জিনিসের অনুসন্ধান করে থাকে। 
  3. বাস্তব কেন্দ্রিক – সকল প্রকার প্রকল্প গুলি বাস্তব কেন্দ্রিক হয়ে থাকে।

প্রকল্পের গুরুত্ব, প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা কী

বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক আধুনিক বিশ্বের প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের আগ্রগতির জন্য প্রকল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। প্রতিটি দেশ এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে উন্নয়ন পরিকল্পনার সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়ে থাকে এবং সেই প্রকল্পসমূহে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পদ বিনিয়োগ করা হয় যাতে জাতীয় উন্নয়ন অব্যাহত থাকে।

নিম্নে প্রকল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

১) কর্মসংস্থান : সাধারণত প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের চেষ্টা চালানো হয়। অর্থাৎ প্রকল্পের মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হয়। মূলত প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকবলের দরকার পড়ে। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

২) সম্পদের সদ্ব্যবহার : প্রকল্পসমূহ দেশের সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে সহযোগিতা করে থাকে। কোনো দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করে সম্পদের সদ্ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমনি- ব্রান ওয়েল তৈরির জন্য ধানের তুষ ব্যবহার করা হয়। আবার আমাদের দেশের গ্যাস ব্যবহার করে পেট্রল, ডিজেল ও কেরোসিনের উপর চাপ কমানো যায় এবং আমদানি হ্রাস করা যায়।

৩) জাতীয় আয় বৃদ্ধি : কোনো দেশের রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিগত ও Corporate পর্যায়ে বিভিন্ন উৎপাদনমুখী প্রকল্প গ্রহণ করলে আমদানি হ্রাস ও রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। ফলে বিদ্যমান দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়।

৪) জাতীয় গর্ব : কোনো কোনো প্রকল্প দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনে এবং দেশের ঐহিত্যকে সংরক্ষণ ও উপস্থাপন করে। যেমন- প্রশ্নতাত্ত্বিক প্রকল্পসমূহ।

৫) জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন : জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও প্রকল্পের গুরুত্ব অনেক। কোনো কোনো দেশে নতুন নতুন ব্যবসায়িক ও সেবামূলক প্রকল্প গ্রহণ করা হলে উক্ত দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটে। অর্থাৎ তারা উন্নতমানের নতুন নতুন পণ্য ও সেবা ভোগ করতে পারে।

৬) আত্ম নির্ভরশীলতা : কোনো দেশে বিশেষ কোনো খাতকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারিভাবে এবং বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে উক্ত দেশে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন হয়। যেমন- বিদ্যুৎ উৎপাদনে কুইক রেন্টাল প্রকল্প, বিদ্যুতের সমস্যা মেটাতে অনেকটা সাহায্য করেছে, ঔষধ শিল্প, ক্লিনিক ইত্যাদি।

৭) অবকাঠামোগত উন্নয়ন : অনেক সময় কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়ে থাকে সামাজিক লাভকে লক্ষ্য রেখে। আর এজন্য বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয় যা পরোক্ষভাবে ব্যবসা বাণিজ্যকে সহায়তা করে। যেমন- পদ্মা সেতু, ফ্লাই ওভার, মেট্রোরেল ইত্যাদি।

৮) সামাজিক সেবা : প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্ব হলো সামাজিক সেবা প্রদান। কোনো দেশের জনগণের মধ্যে সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়ে থাকে। যেমন- হাসপাতাল, স্কুল স্থাপন, তথ্যকেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি।

৯) সচেতনতা বৃদ্ধি : বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো হয়। যেমন- যৌতুক নিরসন, এ্যাসিড নিক্ষেপ ইত্যাদি।

১০) সমাজকল্যাণ : সমাজে বসবাসকৃত লোকজনের কল্যাণের জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এবং এনজিও গুলো বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে থাকে। যেমন- মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্র, বয়স্ক ভাতা, বয়স্ক শিক্ষা ইত্যাদি।

১১) শিশু উন্নয়ন : শিশুরাই বর্তমান প্রজন্মের উত্তরসূরি। তাদের উন্নয়নের উপরই দেশ ও সমাজের উন্নয়ন অনেকাংশে নির্ভর করে। তাই বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে শিশুদের উন্নয়ন সাধনের চেষ্টা করা হয়ে থাকে। যেমন- টিকাদান কর্মসূচি, শিক্ষার জন্য প্রকল্প ইত্যাদি।

১২) নারী উন্নয়ন : বাংলাদেশের প্রায় ৫০% নারী। তাই নারীদের উন্নয়ন ছাড়া দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই নারীদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়ে থাকে। যেমন- বিধবা ভাতা প্রকল্প, মেয়েদের উপবৃত্তি প্রকল্প, বয়সক ভাতা প্রকল্প ইত্যাদি।

প্রকল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তা করে বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ও সমাজে প্রকল্পের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, সামাজিক কল্যাণের জন্যও প্রকল্প গ্রহণ করা হয়ে থাকে যাতে সমাজে আর্থসামাজিক উন্নয়ন স্থিতিশীল ও ত্বরান্বিত হয়।

প্রকল্প পদ্ধতি কাকে বলে

বছরের পর বছর ধরে, শিক্ষাদানের অনেক পদ্ধতি রয়েছে যা বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে বিভিন্ন মাত্রায় কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এরকম একটি পদ্ধতি হল শিক্ষাদানের প্রকল্প পদ্ধতি। এই ব্লগে, আমরা শেখানোর প্রকল্প পদ্ধতি কী, প্রক্রিয়াটির সাথে জড়িত পদক্ষেপগুলি, প্রকল্পের পদ্ধতির ধরন এবং এর সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি সম্পর্কে কথা বলব।

প্রকল্প পদ্ধতি হল একটি বিকল্প শ্রেণীকক্ষ মডেল যা পাঠের শিক্ষণীয় দিকটির পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের শেখার দিকের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। এটি শিক্ষার্থীদের উপর আস্থা রাখার এবং তাদের উপর শেখার শৈলী চাপিয়ে না দেওয়ার উপর জোর দেয়। কাজের দায়িত্ব সরাসরি ছাত্রদের উপর পড়ে যেহেতু এমনকি পাঠ্যক্রমের বিষয়বস্তু এবং কৌশল ছাত্রদের POV থেকে বিবেচনা করা হয়। তাই এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ ছাত্রকেন্দ্রিক।

প্রকল্প পদ্ধতি – 5 ধাপ

নীচে দেওয়া হল 5টি প্রধান ধাপ যা শিক্ষাদানের প্রকল্প পদ্ধতি গঠন করে:

প্রকল্প নির্বাচন

প্রকল্প পদ্ধতির প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হল প্রকল্পের কাজের নির্বাচন। শিক্ষার্থীদের কিছু সমস্যা দেওয়া হয় যেখান থেকে তাদের এমন বিষয় বা প্রকল্প নির্বাচন করা উচিত যার সর্বাধিক উপযোগিতা রয়েছে এবং একটি নির্দিষ্ট ব্যবহারিক প্রয়োজন পূরণ করা উচিত। এই প্রক্রিয়ায়, শিক্ষকরা পথপ্রদর্শক হিসাবে কাজ করে এবং শিক্ষার্থীদের ট্র্যাক রাখতে এবং তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে বিজ্ঞতার সাথে বেছে নিতে অনুপ্রাণিত করে।

পরিকল্পনা

পরিকল্পনা শিক্ষার প্রকল্প পদ্ধতির পরবর্তী ধাপ। এই পর্যায়ে, শিক্ষার্থীদের প্রকল্পের কাজের পরিকল্পনা করা উচিত এবং শিক্ষক তাদের গাইড করবেন এবং প্রক্রিয়াটিতে তাদের সহায়তা করবেন। শিক্ষার্থীদের তাদের মতামত প্রকাশ করতে এবং আলোচনার আকারে পরামর্শ দেওয়ার জন্য একত্রিত করা যেতে পারে, যেখানে শিক্ষক তাদের নেওয়া প্রকল্পের সাথে সম্পর্কিত আপত্তি এবং সমস্যার বিষয়গুলি উত্থাপন করতে পারেন।

কার্য সম্পাদন

পরিকল্পনার পর্যায়টি সম্পাদন করা হয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের পূর্ববর্তী ধাপে তৈরি করা পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ সম্পাদন করে। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ শিক্ষার্থীদের আগ্রহের ভিত্তিতে এবং তাদের নিজ নিজ সামর্থ্যের ভিত্তিতে নিজেদের মধ্যে দায়িত্ব অর্পণ করে। প্রতিটি শিক্ষার্থী তাই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করার জন্য তাদের নিজস্ব উপায়ে অবদান রাখবে – তথ্য সংগ্রহ করা, স্থান পরিদর্শন করা, তথ্য সংগ্রহ করা, ইতিহাস পড়া ইত্যাদি। শিক্ষক আবার একজন গাইড হিসেবে আসেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করেন, তাদের সঠিক পথে চলতে সাহায্য করেন।

মূল্যায়ন

প্রকল্প পদ্ধতির পঞ্চম এবং চূড়ান্ত পর্যায় হল মূল্যায়ন। পুরো কাজটি শিক্ষক দ্বারা পর্যালোচনা করা হয় এবং ছাত্রদের তাদের কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে বিচার বা মূল্যায়ন করা হয়। তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পটি সম্পাদন করে, যার পরে তারা প্রক্রিয়াটিতে যে ভুলগুলি করেছে তা উল্লেখ করা হয়।

প্রকল্প পদ্ধতি প্রকারভেদ

প্রকল্প পদ্ধতির প্রবক্তা, কিলপ্যাট্রিক, এটিকে বিস্তৃতভাবে চার প্রকারে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন যা নীচে ব্যাখ্যা করা হয়েছে:

গঠনমূলক পদ্ধতি

গঠনমূলক প্রকল্প পদ্ধতিতে, শিক্ষার্থীদের সামাজিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত কিছু যেমন মডেল, মানচিত্র, চার্ট, পার্সেল ইত্যাদি তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

শৈল্পিক পদ্ধতি

এই ধরনের শিক্ষা সাধারণত নান্দনিকতা এবং শিল্পকলা যেমন সঙ্গীত, চারুকলা, সংস্কৃতি, সাহিত্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিযুক্ত করা হয়।

সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি

সমস্যা-সমাধান পদ্ধতিটি যেকোন বিষয়ে বাস্তব জীবনের পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলি সমাধান করতে ব্যবহৃত হয় যেমন একটি ইমেল কীভাবে পাঠাতে হয়, কীভাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি পরিচালনা করতে হয়, কীভাবে একটি নির্দিষ্ট পণ্য ব্যবহার করতে হয় ইত্যাদি। এসব সমস্যার সমাধান আদর্শভাবে শিক্ষার্থীদের সামাজিক জীবনে দক্ষ করে তুলবে।

গ্রুপ কাজের পদ্ধতি

এই পদ্ধতিটি একটি গ্রুপ আকারে সম্পূর্ণ করার জন্য একটি টাস্ক সহ সমস্ত শিক্ষার্থীকে নিয়োগ করে। দলটি তখন একজন গাইড হিসেবে শিক্ষকের সাথে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তুত হয়। এটি একটি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পের মতো জটিল হতে পারে যার জন্য স্কুলে একটি বাগান স্থাপনের মতো সহজ কিছুতে সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতার প্রয়োজন হয়।

আরো পড়তে: সবুজ বিপ্লব কাকে বলে, সবুজ বিপ্লবের জনক কে, সবুজ বিপ্লব বলতে কী বোঝো

প্রকল্প কয় প্রকার ও কি কি

প্রকল্প সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা- (১) একক প্রকল্প, (২) দলগত প্রকল্প।

বিনিয়োগ প্রকল্প: যেসব প্রকল্প বাস্তবে দৃশ্যমান যেমন শিল্পপার্ক, বিদ্যুত কেন্দ্র, রাস্তা,মহাসড়ক, ব্রিজ,কালভার্ট  ইত্যাদি নির্মাণ এই প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত।

  • সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন
  • উন্নয়ন সহযোগীর অর্থায়ন
  • সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীর যৌথ অর্থায়নে সরকারি প্রকল্প
  • সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন

কারিগরি সহায়তা প্রকল্প: প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা, প্রযুক্তির হস্তান্তর, মানবসম্পদের উন্নয়নকল্পে গৃহীত প্রকল্প। কনসালটেন্সি, স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, বিশেষজ্ঞদের দ্বারা গৃহীত সেবা এই প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত।

  • উন্নয়ন সহযোগী/সরকার/উভয়ের যৌথ অর্থায়নে সরকারি প্রকল্প
  • উন্নয়ন সহযোগীর অর্থায়নে আঞ্চলিক প্রকল্প
  • উন্নয়ন সহযোগীর অর্থায়নে প্রাইভেট সেক্টরে

প্রকল্পের স্তর কয়টি, প্রকল্প পদ্ধতির চারটি স্তর

প্রকল্পের স্তর চারটি। প্রকল্পে চারটি স্তর হল ঘটনার নিরীক্ষন, আনুমানিক ধারণা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমর্থন।

1. ঘটনার নিরীক্ষণ

2. আনুমানিক ধারণা

3. সিদ্ধান্ত গ্রহণ

4. পরীক্ষামূলক সমর্থন ৷

প্রকল্প পদ্ধতির জনক কে

প্রকল্প পদ্ধতির প্রবর্তক কিল প্যাট্রিক।

শিক্ষাদানের প্রকল্প পদ্ধতিকে সাধারণত শিক্ষাবিদ উইলিয়াম এইচ কিলপ্যাট্রিক দ্বারা প্রণয়ন, বিকাশ, সম্পাদন এবং নিখুঁত বলে মনে করা হয়। যদিও এটিকে 1908 সালে কৃষি শিক্ষার পদ্ধতির উন্নতির মাধ্যম হিসাবে একটি ধারণা হিসাবে প্রস্তাব করা হয়েছে বলে মনে করা হয়, কিলপ্যাট্রিককে তার বিখ্যাত প্রবন্ধ “দ্য প্রজেক্ট মেথড”-এ ধারণাটি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা এবং বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করার কৃতিত্ব দেওয়া হয়। 1918 সালে প্রকাশিত।

প্রকল্প প্রতিবেদনের কাঠামো কেমন হবে

প্রকল্প প্রতিবেদনের কাঠামোটি হবে নিম্নরূপ—

অধ্যায়

আলোচ্য বিষয়

প্রথম অধ্যায়

১.১. ভূমিকা

১.২. প্রকল্পের বিষয়

১.৩. প্রকল্পের উদ্দেশ্য

১.৪. প্রকল্প রুপায়নের পরিকল্পনা

দ্বিতীয় অধ্যায়

২.১. তথ্য সংগ্রহ

২.২. তথ্য বিশ্লেষণ

২.৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণ

তৃতীয় অধ্যায়

৩.১. সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি

৩.২. সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী

একক প্রকল্প কাকে বলে

একক প্রকল্প মানে এমন একটি ক্রিয়াকলাপ যার জন্য প্রয়োজনের একটি শংসাপত্র প্রয়োজন বা, মূলধন ব্যয়ের ক্ষেত্রে, একটি কার্যকলাপ বা কার্যকলাপের একটি গ্রুপ যা একটি স্বতন্ত্র শারীরিক এলাকা বা স্বাস্থ্য সুবিধার এলাকা বা একই পরিষেবা বা অনুরূপ পরিষেবা জড়িত।

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | প্রকল্প

Q1. প্রকল্পের প্রথম স্তর কোনটি?

Ans – প্রকল্পের প্রথম স্তর হল ঘটনার নিরীক্ষন।

Q2. প্রকল্পের উপকারিতা

Ans – একটি প্রকল্প তৈরী করার মধ্যে দিয়ে ছাত্র ছাত্রী দের বিচারবুদ্ধির ক্ষমতা এবং পর্যবেক্ষণ এর ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সকল বিদ্যার্থী দের মধ্যে একসাথে কাজ করার মানসিকতা তৈরি হয়। প্রকল্পের বিষয় গুলি সব সময় বই কেন্দ্রিক না হওয়ায় ছাত্র ছাত্রীরা বই এর বাইরের জ্ঞান গুলিও অর্জন করতে পারে।

Q3. প্রকল্প লেখার নিয়ম গুলি কি কি

Ans – 1) প্রথমত একটি A4 size এর পেপার নিতে হবে এবং নিজের হাতে প্রকল্প টি লিখতে হবে। 2) প্রত্যেকটি পাতার উপরের বামদিকে 30 – 32 এবং নিচের ডানদিকে 18 – 20 লিখে মার্জিন টানতে হবে।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।