সমুদ্র স্রোত কাকে বলে, সমুদ্র স্রোত সৃষ্টির কারণ, সমুদ্র স্রোতের প্রধান কারণ কি, পরিচলন স্রোত কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

সমুদ্র স্রোত কাকে বলে

সৃষ্টির প্রথম অবস্থায় পৃথিবী ছিল এক উত্তপ্ত জ্বলন্ত মন্ডল । ধীরে ধীরে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে তরল অবস্থায় আসে এবং অবিরাম তাপ বিকিরণ করে পৃথিবী ক্রমশ শীতল ও সংকুচিত হয় । আর সংকোচনের ফলে ভূপৃষ্ঠের গায়ে উঁচুনীচু আবরণের সৃষ্টি হয় । এই সময় পৃথিবীতে গ্যাস ও বাষ্প শীতল হয়ে অঝোরে বৃষ্টি শুরু হয় । সেই বৃষ্টির জল ভূপৃষ্ঠের নীচু অংশে জমে সাগর, মহাসাগর প্রভৃতির সৃষ্টি হয়েছে । নদ-নদী, হ্রদ, সাগর, মহাসাগর প্রভৃতি নিয়ে এই যে বিশাল জলভাগ তার নাম বারিমণ্ডল [Hydrosphere] । 

ভু-পৃষ্ঠের সমগ্র আয়তনের শতকরা 70 ভাগ জল ও মাত্র ৩০ ভাগ স্থালভাগ ।

ভু-পৃষ্ঠে প্রধান পাঁচটি জলভাগ আছে । এগুলি মহাসাগর নামে পরিচিত । (i) প্রশান্ত মহাসাগর,  (ii) আটলান্টিক মহাসাগর,  (iii) ভারত মহাসাগর,  (iv) সুমেরু বা উত্তর মহাসাগর এবং (v) কুমেরু বা দক্ষিণ মহাসাগর ।     

সমুদ্র স্রোত সংজ্ঞা

পৃথিবীর আবর্তন, নিয়ত বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্র জলের লবণত্ব, ঘনত্ব ও উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য সমুদ্রের জল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়মিতভাবে সারাবছর নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয় । সমুদ্র জলের এই গতির নাম সমুদ্রস্রোত [Ocean current] ।

সমুদ্র স্রোত সৃষ্টির কারণ, সমুদ্র স্রোতের প্রধান কারণ কি

নিয়ত বায়ূপ্রবাহ

নিয়ত বায়ুপ্রবাহ হল সমুদ্র স্রোতের প্রধান কারণ । নিয়ত বায়ুপ্রবাহ নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হওয়ার সময় সমুদ্র স্রোতকেও নিজের গতিপথের দিকে টেনে নিয়ে যায়, যেমন: (i) যেসব স্থানে আয়নবায়ু প্রবাহিত হয় সেইসব স্থানে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে নিরক্ষরেখার দিকে সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হয়,  (ii) যেসব স্থানে পশ্চিমাবায়ু প্রবাহিত হয় সেইসব স্থানে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হয়, আবার (iii) মেরুবায়ুর প্রভাবে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিমে সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হয় ।

পৃথিবীর আবর্তন গতি

নিজের আবর্তন গতিতে পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে অবিরাম ঘুরে চলেছে । পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য ফেরেলের সূত্র অনুসারে বায়ুপ্রবাহের মতো সমুদ্রস্রোতেরও গতিবিক্ষেপ ঘটে এবং সমুদ্র স্রোত সরাসরি উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত হতে পারে না । পৃথিবীর আবর্তনের জন্য সমুদ্র স্রোতের গতি উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাঁ দিকে বেঁকে যায় ।

সমুদ্রের জলের ঊষ্ণতার তারতম্য

সূর্যরশ্মি ভূপৃষ্ঠের কোথাও লম্বভাবে, আবার কোথাও তির্যকভাবে পড়ে । সূর্যরশ্মির পতন কোণের এই পার্থক্যের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সমুদ্রের জলের উষ্ণতার মধ্যেও যথেষ্ঠ পার্থক্য লক্ষ করা যায় । উষ্ণতার সমতা বজায় রাখার জন্য তুলনামূলক ভাবে উষ্ণ অঞ্চলের জলরাশি শীতল অঞ্চলের দিকে এবং শীতল অঞ্চলের জলরাশি উষ্ণ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় ।

নিরক্ষীয় অঞ্চলের সমুদ্রজল সূর্য কিরণে উত্তপ্ত এবং আয়তনে বর্ধিত ও হালকা হয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠে উঁচু হয়ে ভেসে ওঠে এবং বহিঃস্রোত [Hot Surface Current] বা উষ্ণ-পৃষ্ঠ স্রোত হিসেবে শীতল মেরু প্রদেশের দিকে প্রবাহিত হয় এবং এই শূন্যস্থান পূরণের জন্য মেরু অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত শীতল এবং ভারী জল সমুদ্রের নীচ দিয়ে শীতল অন্তঃস্রোত [Cold Under Current] হিসেবে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় । এই ভাবে উষ্ণ ও শীতল অঞ্চলের মধ্যে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয় ।

বাষ্পীভবন

উষ্ণতার জন্য সমুদ্রের কোনো অংশে বাষ্পীভবন বেশি হলে সেখানে জলের অভাব পূরণ করার জন্য চারদিক থেকে শীতল স্রোত ছুটে আসে, ফলে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয় ।

সমুদ্রজলের লবণত্ব ও ঘনত্বের তারতম্য

সমুদ্রের জলে লবণের পরিমাণ সর্বত্র সমান নয় । সমুদ্র জলের লবণত্ব ও ঘনত্বের তারতম্যের জন্যেও সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি হয় । লবণাক্ততার সমতা আনার জন্য সমুদ্রের কম লবণাক্ত হালকা জল সমুদ্রের ওপরের অংশ দিয়ে বেশি লবণাক্ত ভারী জলের দিকে বহিঃস্রোত হিসেবে প্রবাহিত হয় । আবার সমুদ্রের বেশি লবণাক্ত ভারী জল কম লবণাক্ত হালকা জলের দিকে অন্তঃস্রোত হিসাবে প্রবাহিত হয় ।

এইভাবে মেরু অঞ্চলের বেশি লবণাক্ত জল নিরক্ষীয় অঞ্চলের কম লবণাক্ত জলের দিকে এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলের জল মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্র স্রোতের সৃষ্টি করে । আবার শীতল ও বেশি লবণাক্ত জল উষ্ণ ও কম লবণাক্ত জলের চেয়ে ভারী হওয়ায় বেশি লবণাক্ত ভারী জল নীচে নামে এবং কম লবণাক্ত হালকা জল ওপরে ওঠে । এইভাবে ওপর থেকে নীচে এবং নীচ থেকে ওপরে স্রোতের সৃষ্টি হয় ।

সমুদ্রোপকূলের ভূমিভাগের আকৃতি

বিভিন্ন মহাদেশ বা স্থলভাগের আকৃতি বিভিন্ন ধরনের । এর ফলে বিভিন্ন মহাদেশের উপকূলভাগ বা দ্বীপপুঞ্জে প্রতিহত হয়ে সমুদ্র স্রোতের গতি পরিবর্তিত হয় ।

বিভিন্ন সমুদ্র স্রোতের মিলনস্থলে নতুন সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি

বিভিন্ন সমুদ্র স্রোতের মিলনস্থলে জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয়ে নতুন সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয় । তবে এই ধরনের সমুদ্র স্রোতের ব্যাপকতা থাকে না এবং সাধারণত এগুলো সাময়িক স্রোত হিসেবেও পরিগণিত হয় ।

সমুদ্রস্রোতের গতি ও দিক কয়েকটি বিষয়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যথা :-

  • (১) সমুদ্রস্রোত নিয়ত বায়ুপ্রবাহের দিকে বয়ে চলে ।
  • (২) ফেরেলের সুত্র অনুযায়ী পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য বায়ুপ্রবাহের মত সমুদ্রস্রোতও উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় ।
  • (৩) সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হওয়ার সময়ে মহাদেশের কোনো অংশে অথবা কোনও দ্বীপ বা দ্বীপপুঞ্জে বাধাপ্রাপ্ত হলে সমুদ্রস্রোতের গতি পরিবর্তিত হয় ।
  • (৪) সমুদ্রের বিভিন্ন অংশে জলের আপেক্ষিক গুরুত্বের পার্থক্যের ফলেও সমুদ্রস্রোত দিক পরিবর্তন করে । 
  • (৫) উষ্ণস্রোত সমুদ্রের ওপর দিয়ে পৃষ্ঠস্রোত রূপে এবং শীতল স্রোত সমুদ্রের জলরাশির কিছু নীচে দিয়ে আন্তঃপ্রবাহ রূপে প্রবাহিত হয় ।

সমুদ্র স্রোত কত প্রকার

নিচে বিভিন্ন প্রকার সমুদ্র স্রোত সম্বদ্ধে আলোচনা করা হলো : –

প্রশান্ত মহাসাগরের স্রোত

প্রশান্ত মহাসাগর হল পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগর । এর মোট আয়তন পৃথিবীর সমস্ত স্থলভাগের মিলিত আয়তনের চেয়েও বেশি । প্রশন্ত মহাসাগরকে দেখতে অনেকটা ত্রিভূজের মতো । প্রশান্ত মহাসাগরের স্রোতগুলির বৈশিষ্ট্য লক্ষ করলে দেখা যায়:-

  • (i) এই মহাসাগরের উত্তরভাগের স্রোতসমূহ ঘড়ির কাঁটার দিকে আবর্তিত হয় । 
  • (ii) কিন্তু দক্ষিণভাগের স্রোতসমূহ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে আবর্তিত হয় ।  

প্রশান্ত মহাসাগরের প্রধান প্রধান সমুদ্রস্রোতের নাম হল

(১) কুমেরু স্রোত,  (২) পেরু স্রোত বা হামবোল্ড স্রোত, (৩) দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত, (৪) নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত, (৫) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত, (৬) জাপান স্রোত বা কুরোশিও স্রোত, (৭) উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত, (৮) ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত, (৯) আলাস্কা বা অ্যালুশিয়ান স্রোত, (১০) বেরিং স্রোত, (১১) নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত ।

  • (১) কুমেরু স্রোত (শীতল) : কুমেরু মহাসাগরের একটি শীতল স্রোত পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে শীতল কুমেরু স্রোত রূপে পশ্চিমদিক থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয় ।
  • (২) পেরু স্রোত বা হ্যামবোল্ড স্রোত (শীতল) : পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে পূর্ব অষ্ট্রেলীয় স্রোত বা নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে পৌঁছায় এবং দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ প্রান্তে বাধা পেয়ে চিলির উপকূল ধরে উত্তরদিকে পেরু উপকূলে এসে পেরু স্রোত বা শীতল হ্যামবোল্ড-স্রোত নামে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।
  • (৩) দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ): পেরু স্রোত বা শীতল হ্যামবোল্ড স্রোত ক্রমশ উত্তরদিকে এগিয়ে নিরক্ষরেখার কাছাকাছি পৌঁছুলে দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত নামে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল থেকে পশ্চিমদিকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের দিকে প্রবাহিত হয় ।
  • (৪) নিঊ সাউথ ওয়েলস স্রোত বা পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত (ঊষ্ণ) : উষ্ণ দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত পশ্চিমদিকে গিয়ে ওশিয়ানিয়ার কাছে পৌঁছোলে এই স্রোত দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে এর একটি শাখা দক্ষিণদিকে ঘুরে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল ও নিঊজিল্যান্ডের মধ্যে দিয়ে নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত বা পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় । এর অপর শাখাটি উত্তর-পশ্চিমদিকে গিয়ে এশিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে এবং পূর্ব-ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে বাধা পায় এবং উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।
  • (৫) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ):  উত্তর-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের উৎপত্তি হয়েছে । এই স্রোতটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল থেকে এশিয়া মহাদেশের দিকে প্রবাহিত হয় ।
  • (৬) জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো (উষ্ণ): উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ইন্দোনেশিয়ার কাছে এসে উত্তরমুখী হয়ে এশিয়া মহাদেশের জাপান ও তাইওয়ানের পূর্ব উপকূল ধরে উষ্ণ জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোত নামে উত্তরে প্রবাহিত হয় । জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোতের একটি শাখা জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল বরাবর উত্তর দিকে সুসিমা স্রোত নামে অগ্রসর হয় ।
  • (৭) উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত (উষ্ণ): পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোতের অপর শাখাটি উষ্ণ উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত নামে জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলের দিকে প্রবাহিত হয় ।
  • (৮) ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত (শীতল): উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলে পৌঁছানোর পর ক্যালিফোর্নিয়ার কাছে দক্ষিণমুখী হয়ে শীতল ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত নামে প্রবাহিত হয় ।
  • (৯) আলাস্কা বা অ্যালুশিয়ান স্রোত (উষ্ণ): উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতের একটি শাখা আরও উত্তরে অগ্রসর হয়ে আলাস্কা বা অ্যালুশিয়ান স্রোত নামে আলাস্কা উপকূল ও অ্যালুশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ বরাবর প্রবাহিত হয় । এই স্রোত পরে শীতল বেরিং স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।
  • (১০) বেরিং স্রোত (শীতল): অতি শীতল মেরুবায়ুর প্রভাবে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের সুমেরু অঞ্চল থেকে আগত শীতল বেরিং স্রোতটি বেরিং প্রণালীর মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে উষ্ণ কুরোশিয়ো স্রোতের উত্তর শাখার সঙ্গে মিলিত হয় । দুটি আলাদা উষ্ণতার বাঊর মিলনে এই অঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও ঝড়বৃষ্টির সৃষ্টি হয় ।
  • (১১) নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত বা প্রতিস্রোত (উষ্ণ): উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে একটি অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ও ক্ষীণ স্রোত পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় যা নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত বা প্রতি স্রোত নামে পরিচিত ।
  • (১২) প্রশান্ত মহাসাগরীয় শৈবাল সাগর :- উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত, জাপান স্রোত, উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত এবং ক্যালিফোর্নিয়া স্রোতের ডিম্বাকৃতি গতিপথের বিশাল অঞ্চল জুড়ে সৃষ্টি হওয়া সারকুলার কারেন্ট বা ঘূর্ণস্রোতের অভ্যন্তর ভাগের জলাবর্ত একেবারে স্রোতবিহীন সমুদ্রের সৃষ্টি হয়েছে । এই স্রোতহীন সমুদ্রের স্থির জলে নানারকম শৈবাল, আগাছা, তৃণ, উদ্ভিদ এবং অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ জন্মায় । স্রোতহীন শৈবালে পরিপূর্ণ অঞ্চলকে শৈবাল সাগর বলে ।

আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোত 

আটলান্টিক মহাসাগর হল পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর । এর আকৃতি অনেকটা ইংরেজি ‘S’ অক্ষরের মতো । আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্বে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ, পশ্চিমে উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ, উত্তরে সুমেরু মহাসাগর এবং দক্ষিণে কুমেরু মহাসাগর অবস্থিত । এই মহাসাগরের স্রোতগুলির নাম :- (১) কুমেরু স্রোত, (২) বেঙ্গুয়েলা স্রোত,  (৩) দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত, (৪) ব্রাজিল স্রোত,  (৫) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত,  (৬) উপসাগরীয় স্রোত,  (৭) উত্তর আটলান্টিক স্রোত,  (৮) ক্যানারী স্রোত  (৯) ল্যাব্রাডার স্রোত  ইত্যাদি । 

  • (১) কুমেরু স্রোত (শীতল) :-  কুমেরু মহাসাগর থেকে শীতল কুমেরু স্রোতটি দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে এবং উওর দিকে প্রবাহিত হয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায় । (i) অপ্রধান শাখাটি ফকল্যান্ড স্রোত নামে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূল বরাবর উত্তর দিকে প্রবাহিত হয় এবং  (ii) প্রধান শাখাটি কুমেরু স্রোত নামে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় ।
  • (২) বেঙ্গুয়েলা স্রোত [Benguela Current]: পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে কুমেরু স্রোতের প্রধান শাখাটি উত্তর-পূর্বদিকে বেঁকে আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে প্রতিহত হয়ে শীতল বেঙ্গুয়েলা স্রোত নামে আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল বরাবর উত্তর দিকে প্রবাহিত হয় এবং অবশেষে উষ্ণ দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় ।
  • (৩) দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ) : দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে শীতল বেঙ্গুয়েলা স্রোত আটলান্টিক মহাসাগরে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত নামে প্রবাহিত হয় । এই স্রোত মোটামুটি পশ্চিমমুখী ।
  • (৪) ব্রাজিল স্রোত (উষ্ণ) : বেঙ্গুয়েলা স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত শাখা পশ্চিমমুখী হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের সেন্ট রক অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয়ে যায়, একটি শাখা ব্রাজিল স্রোত নামে ব্রাজিলের পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণদিকে অগ্রসর হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হয় ।
  • (৫) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত :- বেঙ্গুয়েলা স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত অপর শাখাটি দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূল ধরে ক্যারিবিয়ান সাগরে প্রবেশ করে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় ।
  • (৬) উপসাগরীয় স্রোত [Gulf Stream Current]:- বেঙ্গুয়েলা স্রোত, দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ও উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহ মেক্সিকো উপসাগরে প্রবেশ করে উপসাগরীয় স্রোত নামে প্রবাহিত হয় । সংকীর্ণ ফ্লোরিডা প্রণালী দিয়ে এই স্রোত বেগে প্রবাহিত হয় । এই সময় এর গতিবেগ হয় ঘন্টায় ৪ কিমি ও জলের উষ্ণতা হয় 27° সে. ও রং হয় গাঢ় নীল ।
  • (৭) উত্তর আটলান্টিক স্রোত :- উপসাগরীয় স্রোত উত্তর-পূর্বদিকে গিয়ে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় । প্রধান শাখাটি উত্তর আটলান্টিক স্রোত নামে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের পাশ দিয়ে নরওয়ের উত্তরে চলে যায় । 
  • (৮) ক্যানারী স্রোত :- উপসাগরীয় স্রোতের দক্ষিণ শাখাটি পর্তুগাল উপকূলে বাধা প্রাপ্ত হয়ে ক্যানারী স্রোত (শীতল) নামে প্রথমে দক্ষিণে ও পরে পশ্চিমে বেঁকে প্রবাহিত হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।  
  • (৯) ল্যাব্রাডার স্রোত [Labrador Current]:- মেরু বায়ুর প্রভাবে সুমেরু অঞ্চলের উত্তর মহাসাগর থেকে একটি শীতল স্রোত গ্রীণল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল দিয়ে শীতল ল্যাব্রাডার স্রোত নামে প্রবাহিত হয়ে ও আর একটি স্রোত গ্রীণল্যান্ডের পূর্ব উপকূল দিয়ে গ্রীণল্যান্ড স্রোত নামে প্রবাহিত হয়ে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে । উভয় স্রোত দুটি ল্যাব্রাডার উপদ্বীপের কাছে মিলিত হয় এবং শীতল ল্যাব্রাডার স্রোত নামে উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকুল দিয়ে দক্ষিণদিকে কড অন্তরীপ পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় । এই দুই স্রোতের মিলনস্থলকে হিমপ্রাচীর বলে ।

উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু এবং শীতল ল্যাব্রাডার স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত শীতল ও শুষ্ক বায়ু পরস্পর সংমিশ্রণের ফলে এই অঞ্চলে প্রবল ঝড় ও ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয় । ফলে এই অঞ্চলে জাহাজ চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি হয় ।             

ভারত মহাসাগরের স্রোত 

ভারত মহাসাগর আয়তনে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মহাদেশ । ভারত মহাসাগরের উত্তরে এশিয়া মহাদেশ, পশ্চিমে আফ্রিকা মহাদেশ এবং পূর্বে ওশিয়ানিয়া মহাদেশ দিয়ে ঘেরা । ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশ স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা থাকায় ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এখানে সমুদ্র স্রোতের গতি অনেকটা পাল্টে যায় । গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলে মৌসুমী বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ও শীত কালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয় । এজন্য ভারত মহাসাগরের উত্তরাংশের স্রোত প্রধানত মৌসুমি বায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাংশের স্রোতগুলি অনেকটা আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতের মতো আবর্তন করে ।

ভারত মহাসাগরের স্রোতগুলি

(১) শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত, (২) দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত, (৩) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত,  (৪) মোজাম্বিক স্রোত, (৫) মাদাগাস্কার স্রোত,  (৬) আগুলহাস স্রোত, (৭) সোমালি স্রোত ও মৌসুমি স্রোত ।

  • (১) শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত :- কুমেরু মহাসাগর থেকে একটি শীতল কুমেরু স্রোত পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে বাধা পেয়ে শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত নামে উত্তরমুখী হয়ে প্রবাহিত হয় । শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত নিরক্ষরেখার কাছে পৌঁছুলে দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে বেঁকে গিয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় ।
  • (২) দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত :- উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে নিরক্ষীয় স্রোত ভারত মহাসাগরের পূর্বদিক থেকে পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয় । নিরক্ষরেখার দক্ষিণে প্রবাহিত স্রোতকে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত বলা হয় । 
  • (৩) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত :- উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে নিরক্ষীয় স্রোত ভারত মহাসাগরের পূর্বদিক থেকে পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয় । নিরক্ষরেখার উত্তরে প্রবাহিত স্রোতকে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত বলা হয় ।
  • (৪) মোজাম্বিক স্রোত :- শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহ পশ্চিমমুখী হয়ে মাদাগাস্কার দ্বীপে বাধা প্রাপ্ত হয়ে দু-ভাগে বিভক্ত হয় যায় । একটি শাখা আফ্রিকার পূর্ব উপকূল দিয়ে মোজাম্বিক স্রোত নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয় । 
  • (৫) মাদাগাস্কার স্রোত :-শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহের অপর শাখাটি দক্ষিণ দিকে ঘুরে মাদাগাস্কার স্রোত নামে দক্ষিণমুখী হয়ে প্রবাহিত হয় ।
  • (৬) আগুলহাস স্রোত :- মোজাম্বিক স্রোত ও মাদাগাস্কার স্রোত দুটি উত্তমাশা অন্তরীপের কাছে মিলিত হয়ে আগুলহাস স্রোত নামে প্রবাহিত হয় ও আরও দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় ।
  • (৭) সোমালি স্রোত :- গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের একটি শাখা সোমালি স্রোতনামে আফ্রিকার পূর্ব উপকূল দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় ও এই স্রোতটি মৌসুমি স্রোত নামে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে সুমাত্রা পর্যন্ত প্রসারিত হয় । শীত কালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এই স্রোত সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয় ।

সমুদ্রস্রোতের প্রভাব

ভৌগলিক পরিবেশ ও মানুষের কাজকর্মের ওপর সমুদ্রস্রোতের নানা রকম প্রভাব দেখা যায় :-

  • (১) শীতল স্রোত উপকূলের জলবায়ুকে অপেক্ষাকৃত শীতল রাখে । উষ্ণ স্রোত উপকূলের জলবায়ুকে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ রাখে ।  যেমন: শীতল স্রোতের প্রভাবে নিউইয়র্কের জলবায়ু অপেক্ষাকৃত শীতল হয় । আর উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও নরওয়ে এবং উষ্ণ কুরোশিয়ো স্রোতের প্রভাবে জাপানের প্রচন্ড ঠান্ডা হ্রাস পায় ।  
  • (২) উষ্ণ স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু শীতল প্রদেশে এলে সেখানে বৃষ্টিপাত ঘটায় । 
  • (৩) উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে কুয়াশা ও ঝড় হয় ।  যেমন : উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু এবং শীতল ল্যাব্রাডার স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত শীতল ও শুষ্ক বায়ু পরস্পর সংমিশ্রণের ফলে এই অঞ্চলে প্রবল ঝড় ও ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয় । এইজন্য এই অঞ্চলে জাহাজ চলাচল বিপজ্জনক ।
  • (৪) উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে শীতপ্রধান দেশের বন্দর ও পোতাশ্রয় বরফ মুক্ত থাকে ।
  • (৫)  স্রোতের মুখে জাহাজ চালানো সুবিধাজনক ।
  • (৬) উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে এবং মগ্ন চড়ার কাছে সমুদ্রে প্ল্যাঙ্কটন ও মাছের অন্যান্য খাদ্য বেশি পাওয়া যায় । ফলে সামুদ্রিক মাছের ঝাঁক উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে বাস করে । এইজন্য নিউফাউন্ডল্যান্ড, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, নরওয়ে ও জাপানের উপকূলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মত্সচারণ ক্ষেত্রগুলি গড়ে উঠেছে ।

উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের প্রধান স্রোতসমূহের পরিচয় দাও

উত্তর: পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগরের মোট আয়তন পৃথিবীর সমস্ত স্থলভাগের মিলিত আয়তনের চেয়েও বেশি । প্রশান্ত মহাসাগরকে দেখতে অনেকটা ত্রিভূজের মতো । এই মহাসাগরের নিরক্ষরেখার উত্তরের অংশ উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর এবং দক্ষিণের অংশ দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর নামে পরিচিত ।

প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর অংশের প্রধান স্রোতগুলি হল:-

  • ১) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত: উত্তর-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের উৎপত্তি হয়েছে । এই স্রোতটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল থেকে এশিয়া মহাদেশের দিকে প্রবাহিত হয় ।
  • ২) উষ্ণ কুরোশিয়ো বা জাপান স্রোত: উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ইন্দোনেশিয়ার কাছে এসে উত্তরমুখী হয়ে উষ্ণ কুরোশিয়ো স্রোত বা জাপান স্রোত নামে এশিয়া মহাদেশের জাপান ও তাইওয়ানের পূর্ব উপকূল ধরে উত্তরে প্রবাহিত হয় ।
  • ৩) সুসিমা স্রোত: জাপান স্রোতের একটি শাখা জাপানের পশ্চিম উপকূল বরাবর উত্তর দিকে অগ্রসর হয় । একে সুসিমা স্রোত বলে ।
  • ৪) উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত: পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে জাপান স্রোতের অপর শাখা উষ্ণ উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত নামে জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলের দিকে প্রবাহিত হয় ।

দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের বিভিন্ন স্রোতের বর্ণনা দাও

উত্তর:- পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর আটলান্টিক মহাসাগরের আকৃতি অনেকটা ইংরেজি ‘s’ অক্ষরের মতো । আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্বে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ, পশ্চিমে উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ, উত্তরে সুমেরু মহাসাগর এবং দক্ষিণে কুমেরু মহাসাগর অবস্থিত ।

  • ১) দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ) : উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে আটলান্টিক মহাসাগরে উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত নামে দুটি উষ্ণ স্রোতের সৃষ্টি হয় । এই স্রোত দুটি মোটামুটি পশ্চিমমুখী ।
  • ২) ব্রাজিল স্রোত (উষ্ণ) : বেঙ্গুয়েলা স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত শাখা পশ্চিমমুখী হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার সেন্টরক অন্তরীপে প্রতিহত হয়ে দক্ষিণ ও উত্তর এই দুটি শাখায় ভাগ হয়ে যায়, যেমন- ১) দক্ষিণ শাখাটি ব্রাজিল স্রোত নামে ব্রাজিলের পূর্ব উপকূল বরাবর অগ্রসর হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হয় আর ২) উত্তর শাখাটি উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় ।
  • ৩) কুমেরু স্রোত ও ৪) ফকল্যান্ড স্রোত (শীতল): কুমেরু নিকটবর্তী দক্ষিণ সাগর থেকে আসা অতি শীতল কুমেরু স্রোতটি দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে এবং উওর দিকে প্রবাহিত হয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়, যেমন: ১) অপ্রধান শাখাটি ফকল্যান্ড স্রোত নামে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূল বরাবর উত্তর দিকে প্রবাহিত হয় এবং  ২) প্রধান শাখাটি কুমেরু স্রোত নামে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় ।
  • ৫) বেঙ্গুয়েলা স্রোত: কুমেরু স্রোতের প্রধান শাখাটি আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে বাধা পেয়ে ওই উপকূল বরাবর উত্তর দিকে প্রবাহিত হয় এবং অবশেষে উষ্ণ দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় ।

কীভাবে মগ্নচড়া সৃষ্টি হয়

উত্তর:  শীতল স্রোতের মিলনস্থলে শীতল স্রোত বাহিত হিমশৈল উষ্ণ স্রোতের সমুদ্র সংস্পর্শে এসে গলে যায় এবং হিমশৈল বাহিত কাদা ও শিলা সমুদ্রের তলদেশে সঞ্চিত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে মগ্নচড়ার সৃষ্টি করে ।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সুমেরু বৃত্ত থেকে আগত হিমশীতল লাব্রাডর স্রোতের সঙ্গে আসা হিমশৈলগুলোর মধ্যে ছোটো বড়ো শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর ও কাদা মিশ্রিত থাকে । নিউফাউল্যান্ডের কাছে শীতল লাব্রাডর স্রোতের সঙ্গে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের মিলন স্থলে এই স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈলগুলো গলে যায় । এই সব হিমশৈলগুলোর মধ্যে থাকা নুড়ি, পাথর, কাঁকড়, কাদা প্রভৃতি থিতিয়ে পড়ে নিউফাউল্যান্ডের পূর্ব-উপকূলে সমুদ্রবক্ষে সঞ্চিত হয়ে ‘গ্রান্ড ব্যাঙ্ক, নামে বিখ্যাত মগ্নচড়ার সৃষ্টি করেছে ।

মগ্নচড়াগুলি মৎস্য চাষের অনুকূল

১) মগ্নচড়া অঞ্চলগুলি অগভীর হওয়ায় এবং নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে অবস্থিত হওয়ায় এখানে মাছের বসবাসের উপযোগী অনুকূল তাপমাত্রা পাওয়া যায়;

২) মগ্নচড়া অঞ্চলগুলির উষ্ণ ও শীতল স্রোতের সংযোগস্থলে প্ল্যাঙ্কটন নামে এক ধরনের আণুবীক্ষণিক জীব প্রচুর পরিমাণে জন্মায় যা মাছের প্রধান খাদ্য । অর্থাৎ মাছের বসবাসের উপযোগী অনুকূল উষ্ণতা ও খাদ্যের অফুরন্ত যোগান থাকাতে মগ্নচড়াগুলিতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় । এই জন্যই মগ্নচড়াগুলি মৎস্য চাষের পক্ষে অনুকূল হয়েছে । উদাহরণ:-নিউফাউন্ডল্যান্ডের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত আটলান্টিক মহাসাগরের গ্রান্ড ব্যাঙ্ক নামে মগ্নচড়াটি হল পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য চাষ কেন্দ্র ।

গ্রান্ড ব্যাঙ্ক

উত্তর: পৃথিবীর অন্যতম প্রধান মৎস্যশিকার ক্ষেত্র গ্রান্ড ব্যাঙ্ক আসলে একটি অগভীর মগ্নচড়া । নিঊ ফাউল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত উত্তর আমেরিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব উপকূল বা আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম উপকূলের বিশাল মহীসোপান অঞ্চলে গ্রান্ড ব্যাঙ্ক মগ্নচড়াটি অবস্থিত ।

শিতল লাব্রাডর স্রোতের সঙ্গে সুমেরুবৃত্ত থেকে আসা হিমশৈলগুলোর মধ্যে ছোটো বড়ো শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর এবং কাদা মিশ্রিত থাকে । শীতল লাব্রাডার স্রোত যখন নিউ ফাউল্যান্ডের কাছে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের সংস্পর্শে এসে গলে যায় । এই সব হিমশৈলের মধ্যে থাকা ছোটো-বড়ো পাথর, নুড়ি, কাদা প্রভৃতি থিতিয়ে পড়ে নিউ ফাউল্যান্ডের পূর্ব উপকূলের সমুদ্র বক্ষে সঞ্চিত হয়ে ‘গ্রান্ড ব্যাঙ্ক’ নামে অগভীর মগ্নচড়াটির সৃষ্টি করেছে । গ্রান্ড ব্যাঙ্কের জলের গভীরতা ২০০ মিটার এবং আয়তন প্রায় ৩৭ হাজার বর্গকিলোমিটার ।

গ্রান্ড ব্যাঙ্ক মৎস্যচাসের জন্য অনুকূল

গ্রান্ড ব্যাঙ্কে মৎস্য চাষের অনুকূল পরিবেশের কারণ:-

১) গ্রান্ড ব্যাঙ্ক নামে মগ্নচড়াটি অগভীর হওয়ায় এবং নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থান করার জন্য এখানে মাছের বসবাসের অনুকূল তাপমাত্রা পাওয়া যায় ।

২) উষ্ণ ও শীতল স্রোতের সংযোগস্থলে প্লাঙ্কটন নামে এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক জীব প্রচুর পরিমাণে জন্মায়, কারণ গ্রান্ড ব্যাঙ্ক-এ যে প্রচুর জৈব খাদ্য পাওয়া যায় তা প্লাঙ্কটনের প্রধান খাদ্য । এই প্লাঙ্কটন আবার মাছের প্রধান খাদ্য । গ্রান্ড ব্যাঙ্কে যেসব মাছ পাওয়া যায় তাদের মধ্যে কড, হেরিং, ম্যাকারেল, হ্যাডক, হ্যালিবাট প্রভৃতি মাছ উল্লেখযোগ্য । এছাড়া গ্রান্ড ব্যাঙ্ক অঞ্চলটি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ কডমাছ শিকারকেন্দ্র হিসেবেও খ্যাত ।

নিউফাউন্ডল্যান্ড ও জাপানের কাছে বছরের প্রায় সবসময় কুয়াশা জমে থাকে

উত্তর: উষ্ণ ও শীতল সমুদ্রস্রোতের উষ্ণতার তারতম্যের জন্য এবং অল্পস্থানের মধ্যে উষ্ণতার পরিবর্তনের জন্য উষ্ণ ও শীতল সমুদ্রস্রোতের মিলন স্থানে কুয়াশার সৃষ্টি হয় । নিউফাউল্যান্ডের পাশ দিয়ে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও বিপরীতমুখী শীতল লাব্রাডর স্রোত প্রবাহিত হওয়ার জন্য নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূলে সারা বছর কুয়াশা সৃষ্টি হয় । একই ভাবে জাপানের কাছে প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ কুরেশিয়ো বা জাপান স্রোত এবং শীতল ওয়াশিয়ো স্রোতের মিলনস্থলে বছরের প্রায় সবসময় কুয়াশা জমে থাকে ।    

শৈবাল সাগর কীভাবে সৃষ্টি হয়

উত্তর: আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমে ১) উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত, ২) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত এবং ৩) ক্যানারি স্রোত মিলিত হয়ে কয়েক হাজার বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকা জুড়ে একটি ঘূর্ণস্রোত বা জলাবর্তের সৃষ্টি করে । এই বিশাল জলাবর্তের মাঝখানে কোনোরকম জলপ্রবাহ থাকে না বলে স্রোতবিহীন এই অঞ্চলে নানারকম শৈবাল বা শেওলা, আগাছা ও জলজ উদ্ভিদ জন্মায় । এইজন্য এই অঞ্চলকে শৈবাল সাগর বলা হয় । আটলান্টিক মহাসাগর ছাড়াও উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরেও ১) উত্তর প্রশান্ত-মহাসাগরীয় স্রোত, ২) কুরোশিয়ো বা জাপান স্রোত, ৩) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত এবং ৪) ক্যালিফোর্নিয়া স্রোতের মাঝখানে প্রকান্ড একটি শৈবাল সাগর দেখা যায় ।

হিমশৈল 

বিশালাকৃতি বরফের স্তূপ যখন সমুদ্রের জলে ভাসতে থাকে, তখন তাকে হিমশৈল বলে । চিরতুষারময় সুমেরুবৃত্তের মধ্যে অবস্থিত হওয়ার বছরের বেশিরভাগ সময়েই বরফে ঢাকা সুমেরু মহাসাগর থেকে আগত লাব্রাডর স্রোতের সঙ্গে এই মহাসাগরের উপকূলীয় হিমবাহগুলো থেকে বিশাল আকৃতির বরফের স্তূপ বিচ্ছিন্ন হয়ে ভেসে আসে । সমুদ্রের জলে ভাসমান এই ধরনের প্রকান্ড বরফের স্তূপকে হিমশৈল বলে । এই সব বিশাল হিমশৈলের মাত্র ১/৯ ভাগ অংশ সমুদ্রের জলের ওপরে থাকে । এই রকম একটি হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লেগেই বিখ্যাত জাহাজ টাইটানিক তার প্রথম যাত্রাতেই গভীর সমুদ্রে ডুবে যায় ।

উপসাগরীয় স্রোত কী

উত্তর: আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের  মিলিত জলরাশি মেক্সিকো উপসাগরে প্রবেশ করে তার জলের পরিমাণ বাড়ায় । মেক্সিকো উপসাগর থেকে প্রচুর জলরাশি নিয়ে বেরোবার সময় এই স্রোত সংকীর্ণ ফ্লোরিডা প্রণালীতে প্রবাহিত হয়ে যে উষ্ণ স্রোতের সৃষ্টি করে সেই স্রোতই বিখ্যাত “উপসাগরীয় স্রোত” নামে পরিচিত । এই স্রোত সংকীর্ণ ফ্লোরিডা প্রণালী দিয়ে ঘন্টায় ৮ কিমি বেগে প্রবাহিত হয় । পৃথিবীর অন্যতম প্রবল সমুদ্রস্রোত, উপসাগরীয় স্রোতের রং গাঢ় নীল, প্রকৃতিতে বেশ উষ্ণ (উষ্ণতা ২৭.০২° সেলসিয়াস), বিস্তার ৬৪ কিলোমিটার ও গভীরতা ৯১৪ মিটার ।

উপসাগরীয় স্রোতের উত্তর শাখা উত্তর আটলান্টিক স্রোত নামে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় এবং দক্ষিণ শাখাটি পোর্তুগালের উপকূলে বাধা পেয়ে ক্যানারি স্রোত নামে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মেশে । উপসসাগরীয় স্রোত এবং উত্তর স্রোতের মিলিত প্রবাহের উত্তর শাখা ইরমিঙ্গার স্রোত নামে উত্তরে প্রবাহিত শীতল লাব্রাডর স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।

হিমপ্রাচীর কী

উত্তর আটল্যান্টিক মহাসাগরে সুমেরু অঞ্চল থেকে আগত লাব্রাডর স্রোতের শীতল ও গাঢ় সবুজ রঙের জল এবং উপসাগরীয় স্রোতের উষ্ণ ও গাঢ় নীল জল বেশ কিছু দূর পর্যন্ত পাশাপাশি কিন্তু বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়েছে । এই দুই বিপরীতমুখী স্রোতের মাঝে একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা স্পষ্ট দেখা যায়, এই সীমারেখাকে হিমপ্রাচীর বলে । কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত আটলান্টিক মহাসাগরে হিমপ্রাচীরের সীমারেখা বহুদূর পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায় । বিপরীতমুখী দুই সমুদ্রস্রোতের উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য এই অঞ্চলে প্রায়ই ঘন কুয়াশা ও প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয় ।

একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের উপকূল সারা বছর ধরে বরফমুক্ত থাকে, কিন্তু লাব্রাডর উপকূলে বছরে প্রায় নয় মাস বরফ জমে থাকে কেন ?

উত্তর: ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ এবং লাব্রাডর উপকূল একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে ব্রিটীশ দ্বীপপুঞ্জের নিকটস্থ সমুদ্রে বরফ জমে না । কিন্তু হিম শীতল লাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে লাব্রাডর উপকূলে বছরে প্রায় নয় মাস বরফ জমে থাকে ।  

পরিচলন স্রোত কাকে বলে

পরিচলন স্রোত হলো এমন একটি তাপ সঞ্চালনের পদ্ধতি, যেখানে তাপ কোনো তরল বা বায়ুর অণুগুলোর চলাচলের মাধ্যমে উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে স্থানান্তরিত হয়।

পরিচলন স্রোত উষ্ণ এলাকা থেকে শীতল এলাকায় প্রবাহিত হয়। এগুলি গরম এবং ঠান্ডা বাতাসের বিভিন্ন ঘনত্বের কারণে ঘটে। গরম বাতাস ঠাণ্ডা বাতাসের চেয়ে কম ঘন, তাই এটি বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে ওঠে। ঠান্ডা বাতাস গরম বাতাসের চেয়ে বেশি ঘন, তাই এটি নিচের স্তরে নেমে যায়।

পরিচলন স্রোতগুলি বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে:

  • বায়ুমণ্ডল: বায়ুমণ্ডলে পরিচলন প্রবাহ বায়ু এবং আবহাওয়ার ধরণ তৈরি হয়।
  • মহাসাগর: সমুদ্রের পরিচলন স্রোত সমুদ্রের স্রোত তৈরি করে।
  • পৃথিবীর আবরণ: পৃথিবীর আবরণে পরিচলন স্রোত টেকটোনিক প্লেটগুলিকে সরিয়ে দেয়।

পরিচলন স্রোত পৃথিবীর জলবায়ু এবং পরিবেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা গ্রহের চারপাশে তাপ বিতরণ করতে সহায়তা করে এবং তারা আবহাওয়ার ধরণ তৈরি করতেও সহায়তা করে।

প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম

প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলে পৌঁছানোর পর ক্যালিফোর্নিয়ার কাছে দক্ষিণমুখী হয়ে শীতল ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত নামে প্রবাহিত হয়।

প্রশান্ত মহাসাগরের আরো একটি শীতল স্রোতের নাম কুমেরু স্রোত। কুমেরু মহাসাগরের একটি শীতল স্রোত পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে শীতল কুমেরু স্রোত রূপে পশ্চিমদিক থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়।

প্রশান্ত মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম

প্রশান্ত মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত। পেরু স্রোত বা শীতল হ্যামবোল্ড স্রোত ক্রমশ উত্তরদিকে এগিয়ে নিরক্ষরেখার কাছাকাছি পৌঁছুলে দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত নামে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল থেকে পশ্চিমদিকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের দিকে প্রবাহিত হয়।

আরো অন্যান উষ্ণ স্রোতের নাম:-

  • নিঊ সাউথ ওয়েলস স্রোত বা পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত (ঊষ্ণ): উষ্ণ দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত পশ্চিমদিকে গিয়ে ওশিয়ানিয়ার কাছে পৌঁছোলে এই স্রোত দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে এর একটি শাখা দক্ষিণদিকে ঘুরে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল ও নিঊজিল্যান্ডের মধ্যে দিয়ে নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত বা পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিশে যায়। এর অপর শাখাটি উত্তর-পশ্চিমদিকে গিয়ে এশিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে এবং পূর্ব-ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে বাধা পায় এবং উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়।
  • উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ): উত্তর-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের উৎপত্তি হয়েছে। এই স্রোতটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল থেকে এশিয়া মহাদেশের দিকে প্রবাহিত হয়।
  • জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো (উষ্ণ): উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ইন্দোনেশিয়ার কাছে এসে উত্তরমুখী হয়ে এশিয়া মহাদেশের জাপান ও তাইওয়ানের পূর্ব উপকূল ধরে উষ্ণ জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোত নামে উত্তরে প্রবাহিত হয় । জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোতের একটি শাখা জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল বরাবর উত্তর দিকে সুসিমা স্রোত নামে অগ্রসর হয়।
  • উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত (উষ্ণ): পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোতের অপর শাখাটি উষ্ণ উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত নামে জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলের দিকে প্রবাহিত হয়।

আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্র স্রোতের নাম

পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর আটলান্টিক, যা পূর্বে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ এবং পশ্চিমে আমেরিকা মহাদেশ দ্বারা আবদ্ধ। এই বিশাল আটলান্টিক মহাসাগরে দুটি ভিন্ন ধর্মী সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হয়, যথা উষ্ণ স্রোত ও শীতল স্রোত। এখানে এই আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্র স্রোত গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল। 

আটলান্টিক মহাসাগরের উষ্ণ স্রোত সমূহ 

নিরক্ষীয় স্রোত: আটলান্টিক মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন গতি ও উত্তর পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে দুটি উষ্ণ স্রোতের সৃষ্টি হয়।

উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত – উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত টি উত্তর পূর্ব আয়ণ বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে শেষে ক্যারিবিয়ান সাগরে প্রবেশ করে। 

দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত – এই স্রোত টি দক্ষিণ পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে প্রভাবিত হয়ে ব্রাজিলের শাও রোক অন্তরীপ এ প্রতিহত হয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে।

নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত – উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যবর্তী একটি উষ্ণ স্রোত পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়। একে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বলে।

ব্রাজিল স্রোত – দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের দক্ষিণের শাখাটি উষ্ণ ব্রাজিল স্রোত নামে দক্ষিণ দিকে প্রভাবিত হয়ে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে শীতল কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। 

ক্যারিবিয়ান স্রোত – দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের উত্তরের শাখাটি ক্যারিবিয়ান সাগরে প্রবেশ করে ক্যারিবিয়ান স্রোত নামে পরিচিত হয়।

ফ্লোরিডা স্রোত – ক্যারিবিয়ান স্রোত ইউকাটান প্রণালী দিয়ে মেক্সিকো উপসাগরে প্রবেশ করে ফ্লোরিডা স্রোত নামে প্রবাহিত হয়। 

উপসাগরীয় স্রোত – ফ্লোরিডা স্রোত পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয় এবং মেক্সিকো উপসাগরে উপসাগরীয় স্রোত নামে পরিচিত।

উপসাগরীয় স্রোত উত্তর পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হয় – 

ক) ইরমিঙ্গার স্রোত – উপসাগরীয় স্রোতের উত্তর শাখা আইসল্যান্ডের দক্ষিণে ইরমিঙ্গার স্রোত নামে প্রবাহিত হয়ে গ্রীনল্যান্ডের পশ্চিম দিকে ল্যাব্রাডর স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। 

খ) উত্তর আটলান্টিক স্রোত – দ্বিতীয় শাখাটি  আটলান্টিক স্রোত নামে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পাশ দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে বয়ে যায়।

গ) ক্যানারি স্রোত (শীতল স্রোত) – তৃতীয় শাখাটি পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে আফ্রিকার উত্তর পশ্চিমে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের নিকট বাঁধা পেয়ে ক্যানারি স্রোত রূপে দক্ষিনে বেঁকে যায় এবং অবশেষে নিরক্ষীয় স্রোত এর সঙ্গে মিলিত হয়।

আটলান্টিক মহাসাগরের শীতল স্রোত

ফকল্যান্ড স্রোত – দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে কুমেরু স্রোতের একটি শাখা দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূল বরাবর সামান্য উত্তরে অগ্রসর হয় এবং  ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ এর নিকট এই স্রোত ফকল্যান্ড স্রোত নামে পরিচিত।

বেঙ্গুয়েলা স্রোত – কুমেরু স্রোতের প্রধান শাখাটি পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আফ্রিকার দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলে বাধা পেয়ে উত্তরে বেঁকে যায় এবং বেঙ্গুয়েলার নিকট বেঙ্গুয়েলা স্রোত রূপে প্রবাহিত হয়।

গ্রীনল্যান্ড স্রোত – সুমেরু মহাসাগর থেকে শীতল স্রোতের একটি শাখা গ্রীনল্যান্ডের পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। এর নাম গ্রিন ল্যান্ড স্রোত।

ল্যাব্রাডর স্রোত – সুমেরু মহাসাগরের শীতল স্রোতের অপর একটি শাখা গ্রীনল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল বরাবর প্রবাহিত হয়ে গ্রীনল্যান্ডের দক্ষিনে গ্রীনল্যান্ড স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। এই স্রোত কানাডার পূর্বে ল্যাব্রাডর উপদ্বীপের নিকট ল্যাব্রাডর স্রোত নামে পরিচিত। 

সমুদ্র তরঙ্গ ও সমুদ্র স্রোতের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়সমুদ্রস্রোতসমুদ্রতরঙ্গ
চলনসমুদ্রস্রোত হল সমুদ্রজলের একমুখী চলন।সমুদ্রতরঙ্গ হল সমুদ্রপৃষ্ঠে জলরাশির ঘূর্ণায়মান প্রবাহের পর্যায়ক্রমিক লম্বভাবে ওঠানামা।
উৎপত্তিবায়ুপ্রবাহ, পৃখিবার আবর্তন গতি, সমুদ্রজলের লবণতা, উষ্ণতা ও ঘনত্বের পার্থক্য সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তির কারণ।সমুদ্রতরঙ্গ সাময়িক এবং অনিয়মিত।
উপকূলের সঙ্গে প্রবাহের প্রকৃতিসমুদ্রস্রোত উপকূলরেখার সঙ্গে অনুভূমিকভাবে বয়ে যায়সমুদ্রতরঙ্গ উপকূলরেখার সঙ্গে সমকোণে প্রবাহিত হয়।
ধরনসমুদ্রস্রোত উপকূলের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়।সমুদ্রতরঙ্গ উপকূলে এসে আছড়ে পড়ে।
কাজের বৈশিষ্ট্যসমুদ্রস্রোত প্রধানত বহনকার্য করে।সমুদ্রতরঙ্গের মাধ্যমে সামুদ্রিক ক্ষয়, বহন ও সঞ্জয় কাজ হয়।
প্রকারভেদতাপমাত্রা অনুযায়ী সমুদ্রস্রোত দুরকমের হয়। যথা—উষ্ণস্রোত এবং শীতলস্রোত।তাপমাত্রার ভিত্তিতে সমুদ্রতরঙ্গের আলাদা কোনাে বিভাজন নেই।
নিয়ন্ত্রণসমুদ্রস্রোত যে অঞ্চলের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চলের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে।সমুদ্রতরঙ্গ উপকূলের ভূমিরূপকে নিয়ন্ত্রণ করে। 
সমুদ্র তরঙ্গ ও সমুদ্র স্রোতের মধ্যে পার্থক্য
আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | স্রোত

Q1. পৃথিবীর দ্রুততম সমুদ্র স্রোত কোনটি

Ans – পৃথিবীর দ্রুততম সমুদ্র স্রোতের নাম হল ফ্লোরিডা স্রোত, যেটা একটি উপসাগরীয় স্রোত ।

Q2. সমুদ্র স্রোতের প্রধান কারণ কি

Ans – সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ হলো বায়ুপ্রবাহ। বায়ু দ্বারা তাড়িত হয়ে সমুদ্রের উপরিভাগের পানিরাশি এক স্থান হতে অন্য স্থানে প্রবাহিত হয়। এছাড়াও,পৃথিবীর আবর্তন গতি,লবণাক্ততার তারতম্য,বাষ্পীভবনের তারতম্য,উষ্ণতার তারতম্য সমুদ্রস্রোত সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।

Q3. উষ্ণ সমুদ্র স্রোত এবং শীতল সমুদ্র স্রোত যে স্থানে মিলিত হয় তাকে কি বলে

Ans – উষ্ণ সমুদ্র স্রোত এবং শীতল সমুদ্র স্রোত যে স্থানে মিলিত হয় তাকে হিমপ্রাচীর বলে।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।