Model Activity Task Class 6 পরিবেশ ও বিজ্ঞান | ষষ্ঠ শ্রেণির এসাইনমেন্ট বিজ্ঞান

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

WBBSE Science Class 6, Plant, উদ্ভিদ | Model Activity Task Class 6 পরিবেশ ও বিজ্ঞান

Table of Contents

Model Activity Task Class 6 পরিবেশ ও বিজ্ঞান | ষষ্ঠ শ্রেণির এসাইনমেন্ট বিজ্ঞান

কলসী উদ্ভিদ

উদ্ভিদজগতের অনেক রহস্যই মানুষের মনে নানা ভাবনার জন্ম দেয়। সেকারণে মানুষখেকো গাছ সম্পর্কেও জনমনে একধরণের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, পৃথিবীর গহন অরণ্যে বিশাল আকৃতির মানুষখেকো গাছ আছে যেগুলো মানুষ বা প্রাণী কাছে গেলেই ডালপালা লতাপাতা দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে হজম করে ফেলবে। আদতে পৃথিবীতে এধরণের কোন গাছের অস্তিত্ব নেই। তবে ছোট ছোট অনেক উদ্ভিদই আছে যারা কীটপতঙ্গ হজমের মাধ্যমে বেঁচে থাকে, এদেরকে মাংসাশী উদ্ভিদ বলে। ভিনাস ফ্লাইট্র্যাপ, ওয়াটারহুইল, কলসী উদ্ভিদ, সূর্যশিশির এই ধরনের মাংসাশী উদ্ভিদ। এ যাবৎ জানা গেছে পৃথিবীতে প্রায় ৪৫০ প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদ রয়েছে।

সাধারণত প্রাণীকুলকেই মাংসাশী মনে করা হয়, কিন্তু নিরামিষী উদ্ভিদজগতেও এমন অনেক গাছই রয়েছে যারা প্রাণী ভক্ষণ করে থাকে। এর কারণ হলো একপ্রকার খাদ্যসঙ্কট। উদ্ভিদ তার বৃদ্ধির জন্য মাটি থেকে পানি ও বিভিন্ন রকম খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করে, সূর্যের উপস্হিতিতে কার্বনডাইঅক্সাইডের সাহায্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য তৈরি করে। মাংসাশী উদ্ভিদ জন্মে ভেজা,স্যাঁতসেতে ও নিচু জলাভূমিতে যেকারণে এসব এলাকার আর্দ্র মাটিতে নাইট্রোজেনের বেশ অভাব দেখা দেয়। যেসব উদ্ভিদ মূলের সাহায্যে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে তারাও এই বৈরী পরিবেশে টিকে থাকতে পারেনা। তাই বেঁচে থাকার তাগিদেই কোনো কোনো উদ্ভিদ মাংসাশী হয়ে থাকে যারা ফাঁদের মাধ্যমে কীটপতঙ্গ শিকার করে প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে।

কলসী উদ্ভিদ বা Pitcher plant- এর বৈজ্ঞানিক নামঃ Nepenthes. Nepenthaceae গণের এই উদ্ভিদকে ভয়ঙ্কর মাংসাশী বলা যায়। এই উদ্ভিদে রয়েছে বিশেষ ধরনের পাতা,যার ভেতরটা ফাঁপা হওয়ার কারণে একটি জগ কিম্বা কলসীর মত দেখায়। এক্ষেত্রে কলসীর আকারে পরিবর্তিত পাতাগুলোই শিকার ধরার ফাঁদ হিসেবে কাজ করে। পৃথিবীতে প্রায় ৮০ প্রজাতির কলসী উদ্ভিদ আছে। এদের মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকার কলসী উদ্ভিদ ছাড়াও রয়েছে মালয়েশিয়া, মাদাগাস্কার, ভারত ও শ্রীলংকার ভিন্ন প্রজাতির কলসী উদ্ভিদ।

কলস উদ্ভিদ বা কলসী উদ্ভিদ (ইংরেজি: Pitcher plants) হচ্ছে কতিপয় আলাদা প্রকারের মাংসাশী উদ্ভিদ যেগুলোর পরিবর্তিত পাতাগুলো একধরনের বিপদের ফাঁদ হিসেবে কাজ করে । এই বিপদের ফাঁদগুলো শিকার-ধরার ফাঁদ-কৌশলী বৈশিষ্ট্য হিসেবে কলস উদ্ভিদের পাতাগুলোর গভীর গহ্বরটি তরল দ্বারা পূর্ণ থাকে। এই কলসি উদ্ভিদকে সবচেয়ে ভয়ংকর মাংসাশী উদ্ভিদ বলে চিহ্নিত করা হয়।

কলসি উদ্ভিদে ফাঁপা বিশেষ ধরনের পাতা রয়েছে যা একটি জগ কিংবা কলসির মত জল ধারণ করে রাখতে পারে। কলসির মত দেখতে এ পাতাগুলোই শিকার ধরার ফাঁদ হিসেবে কাজ করে। এদের গঠন ও আকৃতি থেকেই এদেরকে নাম দেওয়া হয়েছে কলসি উদ্ভিদ।

ছোট ছোট কলসি উদ্ভিদগুলো মাছি, গুবরে পোকা, পিঁপড়া ইত্যাদি পোকামাকড় শিকার করে। বড় আকারের কলসি উদ্ভিদগুলো ছোট আকারের ব্যাঙ কিংবা ইঁদুর শিকার করে। কিন্তু সব কলসি উদ্ভিদই এক পদ্ধতিতে শিকার করে। কলসি উদ্ভিদের ফাঁদ পরোক্ষ ধরনের। অর্থাৎ এরা কোন নাড়াচাড়া ছাড়াই শিকার ধরে থাকে।

কাঁটা আছে এমন উদ্ভিদের একটি উদাহরণ, কাঁটা আছে এমন উদ্ভিদের একটি উদাহরণ হলো, কাটা আছে এমন উদ্ভিদের একটি উদাহরণ হল

কাঁটা আছে এমন উদ্ভিদের একটি উদাহরণ হলো ফণীমনসা।

কি কি উপায়ে উদ্ভিদের স্বপরাগযোগ ঘটতে পারে

উত্তর: তিনটি উপায়ে স্বপরাগযোগ ঘটতে পারে-

  • একটি ফুলের থেকে পরাগরেণু সেই ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হয়।
  • একটি ফুলের থেকে পরাগরেণুর সেই গাছের অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হয়।
  • একই ফুলের থেকে পরাগরেণু ওই ধরনের অন্য গাছের ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হয়।

কোন অঙ্গাণু উদ্ভিদ কোষের কোষ বিভাজন কালে বেম গঠন করে

উত্তর: সেন্ট্রোজোম উদ্ভিদ কোষের কোষ বিভাজন কালে বেম গঠন করে

কোন হরমোনের প্রভাবে উদ্ভিদের আলোকবর্তিকা হয়

অক্সিন হরমোনের প্রভাবে উদ্ভিদের আলোকবর্তী চলন হয়।

নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য কাকে বলে, নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরন্য কাকে বলে, চিরহরিৎ অরণ্য কাকে বলে, চিরহরিৎ উদ্ভিদ কাকে বলে, নিরক্ষীয় চিরহরিৎ কাকে বলে

চিরসবুজ বন হল চিরসবুজ গাছের সমন্বয়ে গঠিত একটি বন। এগুলি বিস্তৃত জলবায়ু অঞ্চল জুড়ে দেখা যায়, এবং শীতল জলবায়ুতে কনিফার এবং হলি, ইউক্যালিপটাস, লাইভ ওক, অ্যাকাসিয়াস, ম্যাগনোলিয়া এবং আরও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে ব্যাঙ্কসিয়া এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে রেইনফরেস্ট গাছ অন্তর্ভুক্ত করে।

গ্রীষ্মমন্ডলীয় চিরহরিৎ বনগুলি ঘন, বহু-স্তরযুক্ত এবং অনেক ধরণের গাছপালা এবং প্রাণীদের আশ্রয় দেয়। এই বনগুলি ভারী বৃষ্টিপাত প্রাপ্ত এলাকায় পাওয়া যায় (বার্ষিক 200 সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত)। তারা খুব ঘন হয়. এমনকি সূর্যের আলোও মাটিতে পৌঁছায় না। এসব বনে অসংখ্য প্রজাতির গাছ দেখা যায়। কিছু অঞ্চলে, কিছু ধরণের গাছ বছরের বিভিন্ন সময়ে তাদের পাতা ঝরায়। অতএব, এই বনগুলি সর্বদা সবুজ দেখায় এবং চিরহরিৎ বন হিসাবে পরিচিত।

চিরহরিৎ গাছের উদাহরণ, চিরহরিৎ উদ্ভিদের উদাহরণ, ক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ নাম

শঙ্কুময় নাতিশীতোষ্ণ চিরসবুজ বনগুলি প্রায়শই পরিবারগুলিতে প্রজাতি দ্বারা আধিপত্যশীল। গাছের মধ্যে রয়েছে: Pinaceae এবং Cupressaceae। ব্রডলিফ নাতিশীতোষ্ণ চিরহরিৎ বনের মধ্যে রয়েছে ফ্যাগাসি, যেমন ওক এবং ফার্ন সাধারণ, যেগুলিতে নথোফেগাসি প্রাধান্য পায় এবং দক্ষিণ গোলার্ধের ইউক্যালিপটাস বন। এছাড়াও বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ চিরহরিৎ বন রয়েছে যা লরেল বনে লরাসি-এর মতো গাছের অন্যান্য পরিবারের দ্বারা প্রভাবিত।

নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য অঞ্চল কাষ্ঠ শিল্পে অনুন্নত কেন, নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য অঞ্চল কাঠ শিল্পে অনুন্নত কেন, নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য অঞ্চল কাষ্ঠ শিল্প উন্নত কেন

নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত অধিক উষ্ণতা ও বৃষ্টি বহুল অঞ্চলে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বৃক্ষের অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই চিরহরিৎ অরণ্য অন্যান্য অরণ্য অপেক্ষা অধিক ঘন, বৃক্ষ গুলি বিশালাকার ও শক্ত। এই গাছের কাঠ গুলির বাণিজ্যিক মূল্য অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও নানা প্রতিকূল পরিবেশের জন্য এই চিরহরিৎ অরণ্যের কাঠ গুলি সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না বলে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য কাষ্ঠ শিল্পে তেমন উন্নতি লাভ করতে পারিনি। ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য কাষ্ঠ শিল্প অনুন্নত কেন – তার কারণ গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল।

  • বিভিন্ন প্রজাতির গাছের মিশ্রণ: একই প্রজাতির প্রায় একই স্থানে পাওয়া যায় না, ফলে বাণিজ্যিকভাবে গাছ কাটতে অসুবিধা হয়। এছাড়া বহু গাছ আছে যেগুলি নিকৃষ্ট শ্রেণীর যাদের বাণিজ্য মূল্য কম।
  • প্রযুক্তিগত সমস্যা: গাছগুলি এত বড় এবং এদের বের এত বেশী যে সাধারণ করার দিয়ে গাছ কাটা যায় না, উন্নত যন্ত্রপাতি দরকার হয় যা বনের ভেতর বয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন।
  • অগম্যতা: গাছগুলি ঘন সন্নিবিষ্ট হওয়াই ভেতরে প্রবেশ করা কঠিন তাই কাষ্ঠ আহরণ প্রায় দুঃসাধ্য।
  • পরিবহন গত সমস্যা: মাটি সবসময় ভিজে থাকে বলে রাস্তাঘাট নির্মাণ করা যায় না, ফলে বনের ভেতর থেকে কাঠ পরিবহনের জন্য বড় বড় ভারী যান ব্যবহার করা যায় না।
  • জলপথে পরিবহন এর অসুবিধা: এই অরন্যের অধিকাংশ কাঠ অত্যন্ত ভারি বলে জলপথে ভাসিয়ে আনা যায় না। এই অঞ্চলের কাঠ পরিবহন করা হয় হাতির পিঠে যা অত্যন্ত ব্যয় সাধ্য ব্যাপার।
  • প্রতিকূল জলবায়ু: ভিজে স্যাতসেতে পরিবেশ ও বিষাক্ত সাপ ও কীট পতঙ্গের জন্য শ্রমিকদের পক্ষে বনভূমিতে কাঠকাটা অত্যন্ত বিপদজনক।
  • নরম মাটি: অরণ্যের তলদেশ লতা গুল্ম ও আগাছায় পূর্ণ এবং মাটি নরম। তাই মাটির উপর দিয়ে কাঠ টেনে নিয়ে যাওয়া যায় না।
  • শ্রমিক এর অভাব: অস্বাস্থ্যকর জলবায়ু ও কীটপতঙ্গ বিষাক্ত সাপ প্রভৃতি র জন্য এখানে জনবসতি অত্যন্ত কম। তাই শিল্পের প্রয়োজনীয় শ্রমিক এর অভাব পরিলক্ষিত হয়।
  • পাশাপাশি গাছের ক্ষতি: অরণ্য অত্যন্ত ঘন হওয়ায় গাছ কাটার পর তাকে কাত করে ফেলা কঠিন হয়। এছাড়া একটি বড় গাছের ডালপালা আঘাতে অন্যান্য অনেক ছোট ছোট গাছ নষ্ট হয়ে যায়।
  • মূলধন এর অভাব: নিরক্ষীয় অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে উন্নত নয় বলে এই অঞ্চলে শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া উন্নত যন্ত্রপাতি পাওয়া যায় না, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার গড়ে ওঠে না এই কারণে কাঠের ব্যবহার ও চাহিদাও কম।

পরিশেষে বলা যায় যে, বিশ্বে কাঠের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতির ফলে প্রতিকূলতাকে দূর করে বর্তমানে এই বনাঞ্চলের মূল্যবান কাঠ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। তবে এই সংগ্রহের পরিমাণ অন্যান্য বনাঞ্চল অপেক্ষা কম।

চিরহরিৎ লতা, চিরহরিৎ লতা অর্থ, চিরহরিৎ লতা বিশেষ

চিরহরিৎ শব্দের অর্থ হলো চির সবুজ। উদ্ভিদবিদ্যায় চিরহরিৎ বৃক্ষ হলো সেসব উদ্ভিদ, যাদের পাতা প্রত্যেক ঋতুতেই সবুজ থাকে। এরা উষ্ণ ও আর্দ্রভূমিতে কিছু এলাকাজুড়ে বন আকারে জন্মে। অল্প ঠাণ্ডা শীতপ্রধান জলবায়ুর অধিকাংশ উদ্ভিদ প্রজাতিই চিরহরিৎ। বাকিরা পর্ণমোচী উদ্ভিদ। পর্ণমোচী হলো সেসব উদ্ভিদ, যাদের পাতা শীতকালে অথবা শুষ্ক ঋতুতে সম্পূর্ণ ঝরে যায়।

যেসব অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২০০ সেন্টিমিটারের বেশি, সেসব অঞ্চলেও চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায়। অত্যধিক বৃষ্টিপাতের জন্য এখানকার গাছপালা সারা বছরই সবুজ পাতায় ভরা থাকে। শিশু, গর্জন, মেহগিনি, সেগুন, চাপালিশ, পাইন, লোহাকাঠ, কাঁঠাল, জাম, ডুমুর ইত্যাদি চিরহরিতের প্রধান বৃক্ষ। এসব বৃক্ষের কাঠ খুবই শক্ত ও ভারী। এ কাঠ গৃহনির্মাণ ও আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ উদাহরণ, ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদের একটি উদাহরণ

শাল , সেগুন , তুন , গামার , অর্জুন , বট , অশথ্ব , নিম , শিমুল , জারুল , শিরীষ , শিশু , চন্দন , পাশ , মহুয়া প্রভৃতি – ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্যের উল্লেখযােগ্য বৃক্ষ ।

ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্যের উদ্ভিদের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো, ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য, নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য

নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ও পর্যাপ্ত উষ্ণতার প্রভাবে যে ঘন ও নিবিড় অরণ্য সৃষ্টি হয়েছে তাকে নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য বলে। উদ্ভিদ প্রজাতির বৈচিত্র্যে এই ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য এক অনন্য সাধারণ বনভূমি। এই বনভূমির বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি হল-

  • দীর্ঘাকার বৃক্ষ: সারাবছর অত্যধিক উষ্ণতা ও প্রবল বৃষ্টিপাতের প্রভাবে এই অরন্যের অধিকাংশ উদ্ভিদ অত্যন্ত দীর্ঘাকার হয়। এখানকার উদ্ভিদদের গড় উচ্চতা হয় প্রায় 35 -70 মিটার।
  • চিরসবুজ অরণ্য: ঋতুপর্যায় না থাকার জন্য এই অরণ্যের গাছগুলির পাতা কখনোই একসঙ্গে ঝরে পড়ে না। গাছগুলি থেকে সারা বছর ধরে অল্প অল্প করে পাতা ঝরে পড়ে। এই কারণে এই অরন্যের গাছগুলি সারাবছর সবুজ থাকে।
  • দুর্গম ও দুর্ভেদ্য অরণ্য: প্রচুর বৃষ্টিপাত ও পর্যাপ্ত উষ্ণতার প্রভাবে এই অরণ্যের তলদেশে গাছের সঙ্গে প্রচুর লতা গুল্ম ও আগাছা জন্মায়। এককথায় বনভূমির তলদেশ সর্বদা ঘন ঝোপঝাড়ে পূর্ণ থাকে। এই কারণে এই অরণ্য খুবই দুর্গম ও দুর্ভেদ্য হয়।
  • চাঁদোয়ার ন্যায় আচ্ছাদন:এই অরন্যের গাছগুলির পাতা যথেষ্ট ঘন ও চওড়া হয়। এই ঘন ও চওড়া পাতাগুলি অরন্যের উপরিভাগে পরস্পরের সঙ্গে মিশে গিয়ে চাঁদোয়ার ন্যায় আচ্ছাদন সৃষ্টি করে।
  • চির গোধূলি অঞ্চল: এই অরন্যের গাছেদের ঘন ও চওড়া পাতাগুলি পরস্পরের সঙ্গে মিশে গিয়ে যে চাঁদোয়ার ন্যায় আচ্ছাদন সৃষ্টি করে, তা ভেদ করে সূর্যের আলো বনভূমির ভেতর পৌঁছাতে পারে না বলে দিনের বেলাতেও এই অরণ্যের মধ্যে এক অন্ধকারময় পরিবেশ বিরাজ করে।তাই নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্যকে চির গোধূলী অঞ্চল বলে।
  • ভিজে ও স্যাঁতসেঁতে মৃত্তিকা: প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে এবং ভূমিভাগে সূর্যালোক পৌঁছাতে পারে না বলে এই অরণ্যের তলদেশের মৃত্তিকা সর্বদা ভিজে ও স্যাঁতসেঁতে থাকে।
  • বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ: এই অরণ্যে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদদের পাশাপাশি সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায়।
  • শ্বাসমূল ও ঠেসমূল: অত্যধিক বৃষ্টিপাতের কারণে এই অরণ্যের মৃত্তিকা সর্বদা ভিজে ও স্যাঁতসেঁতে থাকে বলে এখানকার অধিকাংশ উদ্ভিদদেরই শ্বাসমূল ও ঠেসমূল দেখা যায়।
  • শক্ত কাঠের অরণ্য:এই অরন্যের অধিকাংশ উদ্ভিদদের কাঠ খুব শক্ত প্রকৃতির হয় বলে একে শক্ত কাঠের অরণ্য বলা হয়।
  • স্তরবিন্যাস: এই অরণ্যের উদ্ভিদগুলি প্রধানত তিনটি স্তরে বিন্যস্ত থাকে। যথা-
  • উচ্চ স্তর: ছাতার মতো আকৃতি বিশিষ্ট সর্বাপেক্ষা দীর্ঘকার বৃক্ষগুলি, যাদের গড় উচ্চতা 30-60 মিটার, তারা এই স্তরের বাসিন্দা।
  • মধ্যম স্তর: 15-30 মিটার উচ্চতার বৃক্ষগুলি এই স্তরে অবস্থান করে।
  • নিম্ন স্তর: এই স্তরে অবস্থান করে 5-15 মিটার উচ্চতার উদ্ভিদ গোষ্ঠী।

উপরিলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি ছাড়াও বলা যায় যে, এই অরন্যের গাছগুলি খুবই সোজা হয়, গাছের ছাল মসৃণ হয়, গাছের শাখায় অর্কিড জাতীয় পরগাছা জন্মায় এবং আর্দ্র মৃত্তিকার কারণে এই অরন্যের গাছগুলির মূল খুব বেশী দীর্ঘ হয় না।

নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য অঞ্চল কাষ্ঠশিল্পে অনুন্নত কেন

নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত অধিক উষ্ণতা ও বৃষ্টি বহুল অঞ্চলে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বৃক্ষের অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই চিরহরিৎ অরণ্য অন্যান্য অরণ্য অপেক্ষা অধিক ঘন, বৃক্ষ গুলি বিশালাকার ও শক্ত। এই গাছের কাঠ গুলির বাণিজ্যিক মূল্য অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও নানা প্রতিকূল পরিবেশের জন্য এই চিরহরিৎ অরণ্যের কাঠ গুলি সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না বলে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য কাষ্ঠ শিল্পে তেমন উন্নতি লাভ করতে পারিনি। ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য কাষ্ঠ শিল্প অনুন্নত কেন – তার কারণ গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল। 

বিভিন্ন প্রজাতির গাছের মিশ্রণ 

একই প্রজাতির প্রায় একই স্থানে পাওয়া যায় না, ফলে বাণিজ্যিকভাবে গাছ কাটতে অসুবিধা হয়। এছাড়া বহু গাছ আছে যেগুলি নিকৃষ্ট শ্রেণীর যাদের বাণিজ্য মূল্য কম। 

প্রযুক্তিগত সমস্যা

গাছগুলি এত বড় এবং এদের বের এত বেশী যে সাধারণ করার দিয়ে গাছ কাটা যায় না, উন্নত যন্ত্রপাতি দরকার হয় যা বনের ভেতর বয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন।

অগম্যতা

গাছগুলি ঘন সন্নিবিষ্ট হওয়াই ভেতরে প্রবেশ করা কঠিন তাই কাষ্ঠ আহরণ প্রায় দুঃসাধ্য।

পরিবহন গত সমস্যা

মাটি সবসময় ভিজে থাকে বলে রাস্তাঘাট নির্মাণ করা যায় না, ফলে বনের ভেতর থেকে কাঠ পরিবহনের জন্য বড় বড় ভারী যান ব্যবহার করা যায় না।

জলপথে পরিবহন এর অসুবিধা

এই অরন্যের অধিকাংশ কাঠ অত্যন্ত ভারি বলে জলপথে ভাসিয়ে আনা যায় না। এই অঞ্চলের কাঠ পরিবহন করা হয় হাতির পিঠে যা অত্যন্ত ব্যয় সাধ্য ব্যাপার। 

প্রতিকূল জলবায়ু

ভিজে স্যাতসেতে পরিবেশ ও বিষাক্ত সাপ ও কীট পতঙ্গের জন্য শ্রমিকদের পক্ষে বনভূমিতে কাঠকাটা অত্যন্ত বিপদজনক।

নরম মাটি

অরণ্যের তলদেশ লতা গুল্ম ও আগাছায় পূর্ণ এবং মাটি নরম। তাই মাটির উপর দিয়ে কাঠ টেনে নিয়ে যাওয়া যায় না। 

শ্রমিক এর অভাব

অস্বাস্থ্যকর জলবায়ু ও কীটপতঙ্গ বিষাক্ত সাপ প্রভৃতি র জন্য এখানে জনবসতি অত্যন্ত কম। তাই শিল্পের প্রয়োজনীয় শ্রমিক এর অভাব পরিলক্ষিত হয়। 

পাশাপাশি গাছের ক্ষতি

অরণ্য অত্যন্ত ঘন হওয়ায় গাছ কাটার পর তাকে কাত করে ফেলা কঠিন হয়। এছাড়া একটি বড় গাছের ডালপালা আঘাতে অন্যান্য অনেক ছোট ছোট গাছ নষ্ট হয়ে যায়।

মূলধন এর অভাব

নিরক্ষীয় অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে উন্নত নয় বলে এই অঞ্চলে শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া উন্নত যন্ত্রপাতি পাওয়া যায় না, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার গড়ে ওঠে না এই কারণে কাঠের ব্যবহার ও চাহিদাও কম। 

পরিশেষে বলা যায় যে, বিশ্বে কাঠের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতির ফলে প্রতিকূলতাকে দূর করে বর্তমানে এই বনাঞ্চলের মূল্যবান কাঠ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। তবে এই সংগ্রহের পরিমাণ অন্যান্য বনাঞ্চল অপেক্ষা কম।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

আরো বিশদে পড়তে

ক্লাস 9 জীবন বিজ্ঞান জীবন বিজ্ঞান নোট রেফারেন্স বই WBBSE




পশ্চিমবঙ্গ বোর্ড WBBSE-এর ছাত্রদের জন্য ক্লাস 9 লাইফ সায়েন্স নোট এবং রেফারেন্স বই তাদের সহজে প্রস্তুত করতে এই বইটি বাংলা মাধ্যমের ছাত্রদের জন্য




FAQ | চিরহরিৎ

Q1. শিশু গাছ কি চিরহরিৎ

Ans – শিশু ( Dalbergia sissoo) পর্নমোচী গাছ। শিশু গাছ বেশ শক্ত, টেকসই, দামী, কাঠের গাছ।

Q2. চিরহরিৎ বৃক্ষ কাকে বলে

Ans – ভারতের যে সমস্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২০০ সেন্টিমিটারের বেশি, সেখানে চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভুমি দেখা যায় । অত্যাধিক বৃষ্টিপাতের জন্য এখানকার গাছপালা সারাবছরই সবুজ পাতায় ভরা থাকে । চিরহরিৎ শব্দের অর্থ হল চির সবুজ । শিশু, গর্জন, রোজউড, মেহগিনি, চাপলাস, বোগানোমা, নাহার, লোহাকাঠ ইত্যাদি প্রধান বৃক্ষ ছাড়া মাঝে মাঝে রবার, বাঁশ ও আবলুস বৃক্ষও দেখা যায় ।

Q3. ক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ নাম

Ans – শিশু, গর্জন, রোডউড, মেহগিনি, রাবার, আবলুস, বাঁশ, আয়রন উড প্রভৃতি এই অরন্যের প্রধান উদ্ভিদ গোষ্ঠী।


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।