- অধিকার কি
- অধিকার কাকে বলে, অধিকার কাকে বলে ও কয় প্রকার
- অধিকারের প্রকারভেদ
- মৌলিক অধিকার কি
- মৌলিক অধিকার বলতে কী বোঝায়
- মৌলিক অধিকারের বৈশিষ্ট্য
- ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার কয়টি
- মানুষের মৌলিক অধিকার ৬টি কি কি, মৌলিক অধিকার কয়টি, ভারতের মৌলিক অধিকার কয়টি
- মৌলিক অধিকার: সাম্যের অধিকার (14 থেকে 18 নম্বর অনুচ্ছেদ)
- মৌলিক অধিকার: স্বাধীনতার অধিকার (19 থেকে 22 নম্বর অনুচ্ছেদ)
- মৌলিক অধিকার: শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার (23 ও 24 নম্বর অনুচ্ছেদ)
- মৌলিক অধিকার: ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার (25 থেকে 28 নম্বর অনুচ্ছেদ)
- মৌলিক অধিকার: সংস্কৃতি ও শিক্ষা-বিষয়ক অধিকার (29 ও 30 নম্বর অনুচ্ছেদ)
- মৌলিক অধিকার: সংবিধানের প্রতিবিধানের অধিকার (32 ও 35 নম্বর অনুচ্ছেদ)
- মৌলিক অধিকার কয়টি বাংলাদেশ
- মৌলিক অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে পার্থক্য
- অধিকার ও দায়িত্বের মধ্যে পার্থক্য
- শিশু অধিকার কাকে বলে
- শিশু অধিকার গুলো কি কি, শিশু অধিকার কয়টি ও কি কি
- শিক্ষার অধিকার আইন কবে কার্যকর হয়
- FAQ | অধিকার
অধিকার কি
সাধারণ অর্থে অধিকার বলতে নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী কিছু করার ক্ষমতাকে বুঝায়। এই অর্থে অন্যকে হত্যা করাও অধিকার বলে বিবেচিত হতে পারে কিন্তু পৌরনীতিতে অবাধ ও স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতাকে অধিকার বলে না।
অধিকার বলতে সমাজ স্বীকৃত বা আইন ও সংবিধান নিয়ন্ত্রিত ক্ষমতাকে বুঝায়। পৌরনীতিতে অধিকার বলতে কতকগুলো সুযোগ-সুবিধাকে বুঝায় যা ছাড়া ব্যক্তির ব্যক্তিত্ত্বের বিকাশ সম্ভব নয়। এটি প্রায়শই আইন ও প্রবিধান দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। সমাজের মধ্যে ব্যক্তির মঙ্গল, স্বায়ত্তশাসন এবং সমতার জন্য অধিকার অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়।
বিভিন্ন ধরনের অধিকারের মধ্যে রয়েছে যেমন, নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, সাংস্কৃতিক অধিকার এবং পরিবেশগত অধিকার। নাগরিক অধিকার ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং সুরক্ষার সাথে সম্পর্কিত। রাজনৈতিক অধিকার রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করে, যেমন ভোট দেওয়ার অধিকার এবং সরকারী পদে থাকার অধিকার।
অর্থনৈতিক অধিকারগুলির মধ্যে রয়েছে শ্রম অধিকার, সম্পত্তির মালিকানা এবং অবাধ বাণিজ্য করার অধিকার জড়িত। সামাজিক অধিকারগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত।
অধিকার কাকে বলে, অধিকার কাকে বলে ও কয় প্রকার
অধিকার বলতে বোঝায় সমাজের সকলের জন্য কল্যাণকর কতগুলো সুযোগ-সুবিধা। অধিকার সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত। অধিকার ব্যতীত ব্যক্তির জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। সুতরাং সামাজিক জীব হিসেবে ব্যক্তি যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে তাই অধিকার। সমাজে বসবাসকারী সকল মানুষের পারস্পরিক স্বীকৃত দাবিই অধিকার। সমাজেই অধিকারের জন্ম এবং সমাজই এর রক্ষক। এজন্যই অধ্যাপক লাস্কি বলেছেন যে, “অধিকার সমাজ বহির্ভূত বা সমাজ নিরপেক্ষ নয়। অধিকার সমাজভিত্তিক।”
অধ্যাপক হ্যারল্ড ল্যাঙ্কির মতে, অধিকার হল সমাজজীবনের সেইসব সুযােগসুবিধা যেগুলি ছাড়া কোনাে ব্যক্তি সাধারণভাবে তার ব্যক্তিত্বের প্রকৃষ্টতম বিকাশ ঘটাতে পারে না। বার্কারের মতে, সবচেয়ে অধিক সংখ্যক লােকের সর্বাধিক বিকাশসাধনের জন্য যেসব সুযােগসুবিধা বা শর্ত আইন কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়, তাকে অধিকার বলা হয়। বার্কারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী দুটি শর্ত পূরণ করলে কোনাে সুযােগসুবিধাকে অধিকার বলে অভিহিত করা যেতে পারেㅡ
- [1] সুযােগসুবিধাগুলি প্রত্যেকের ব্যক্তিত্ববিকাশের সহায়ক হবে ও
- [2] সুযােগসুবিধাগুলি রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হবে।
এল.টি. হবহাউস (L.T. Hobhouse)-এর মতে, “প্রকৃত অধিকার বলতে সামাজিক কল্যাণের জন্য কতগুলো শর্তকে বোঝায়”।
অধ্যাপক হল্যান্ড (Prof. Holland)-এর মতে, “এক ব্যক্তি কর্তৃক অপর ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের কাজকর্মকে সমাজের মতামত ও শক্তি দ্বারা প্রভাবিত করার ক্ষমতাই হলো অধিকার।”
অধ্যাপক আর্নেস্ট বার্কার (Prof. Earnest Barker)-এর মতে, “অধিকার হচ্ছে ব্যক্তির সর্বোত্তম ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী সেই সকল প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা যা’ রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত”।
অধ্যাপক লাস্কি (Prof, Laski) বলেন, “অধিকার হচ্ছে সমাজজীবনের সে সকল শর্তাবলি যা ব্যতীত ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ সাধন করতে পারে না”।
টি. এইচ. গ্রিন (T.H. Green) বলেন, “অধিকার হচ্ছে সেসব বাহ্যিক অবস্থা যা মানসিক পরিপুষ্টি সাধন করে থাকে “।
বোসানকোয়েত (Bosanquet)-এর মতে, “অধিকার হলো এমন দাবি যা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত এবং রাষ্ট্র কর্তৃক প্রযুক্ত।”
সুতরাং অধিকার হচ্ছে এমন কতগুলো মৌলিক সুযোগ-সুবিধা যা নকলের জন্য আবশ্যক। অধিকার সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত। অধিকার ছাড়া মানুষ তার ব্যক্তিত্বকে উপলব্ধি করতে পারে না। অধ্যাপক লাঙ্কি এ জনাই বলেছেন যে, “প্রত্যেক রাষ্ট্রই পরিচিত হয় তার প্রদত্ত অধিকার যারা” (Every state is known by the rights it maintains).
অধিকারের প্রকারভেদ
প্রকৃতিগতভাবে অধিকারকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে একটি হল নৈতিক অধিকার এবং অন্যটি হল আইনগত অধিকার।
[1] নৈতিক অধিকার: যেসব অধিকার সামাজিক ন্যায়নীতিবােধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, তাদের নৈতিক অধিকার বলা হয়। প্রসঙ্গত বলা যায়, নৈতিক অধিকার রাষ্ট্রীয় আইনের দ্বারা স্বীকৃত এবং সংরক্ষিত নয়।
[2] আইনগত অধিকার: যেসব অধিকার রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে স্বীকৃত এবং সংরক্ষিত, সেগুলিকে আইনগত অধিকার বলে| আইনগত অধিকারকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি হলㅡ
- (i) পৌর অধিকার,
- (ii) রাজনৈতিক অধিকার,
- (iii) অর্থনৈতিক অধিকার এবং
- (iv) সামাজিক ও কৃষ্টিগত অধিকার।
পৌর অধিকার
যেসব সুযােগসুবিধা ব্যতীত মানুষের পক্ষে সুস্থ সামাজিক জীবনযাপন সম্ভব নয় তাদের পৌর অধিকার বলে। গুরুত্বপূর্ণ পৌর অধিকারগুলি হলㅡ
[1] বাঁচার অধিকার: বাঁচার অধিকারকে অনেকে মানুষের সহজাত অধিকার বলে অভিহিত করেছেন। বাঁচার অধিকার বলতে আত্মরক্ষার অধিকার এবং আত্মরক্ষার প্রয়োজনে বলপ্রয়ােগের অধিকারকেও বােঝায়। পৃথিবীর প্রত্যেক সভ্য রাষ্ট্রে বাঁচার অধিকার নাগরিকদের প্রধান মৌল অধিকাররূপে স্বীকৃত ও সংরক্ষিত।
[2] স্বাধীনতার অধিকার: ব্যক্তিসত্তার সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য স্বাধীনতার অধিকার অত্যন্ত জরুরি। ব্যক্তিস্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত যেসব অধিকারকে স্বাধীনতার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত করা হয় তার মধ্যে রয়েছে। চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, স্বাধীনভাবে সংঘ বা সমিতি গঠন করার অধিকার, স্বাধীন পেশা বা বৃত্তি অবলম্বনের অধিকার, স্বাধীনভাবে বসবাসের অধিকার, সভাসমাবেশে স্বাধীনভাবে যােগদান করার অধিকার এবং বিনাবিচারে গ্রেফতার বা আটক না হওয়ার অধিকার ইত্যাদি।
[3] সম্পত্তির অধিকার: সম্পত্তির অধিকার বলতে ব্যক্তির সম্পত্তি অর্জন, ভােগ, দখল এবং সম্পত্তি ক্লয়বিক্রয়ের অধিকারকে বােঝায়। সম্পত্তিদান এবং সম্পত্তি হস্তান্তরও এর মধ্যে পড়ে।
[4] পরিবার গঠনের অধিকার: অ্যারিস্টটলের মতে, পরিবার হল সমাজজীবনের মূল ভিত্তি। এই কারণে বিবাহের মাধ্যমে নাগরিকদের সুখী ও সমৃদ্ধ পরিবার গঠনের অধিকার প্রতিটি রাষ্ট্রেই স্বীকৃত হয়েছে।
[5] ধর্মের অধিকার: ধর্মের অধিকার আধুনিক রাষ্ট্রে একটি স্বীকৃত পৌর অধিকার। মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মীয় আচার-আচরণ ও ধর্মপ্রচারের স্বাধীনতায় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র কোনােরকম হস্তক্ষেপ করে না। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সব ধর্মের সমান অধিকার, রাষ্ট্র কোনাে বিশেষ ধর্মের পৃষ্ঠপােষকতা করে না।
[6] শিক্ষার অধিকার: শিক্ষা মানুষকে সুস্থ চেতনায় উদ্ভাসিত করে যােগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তােলে। শিক্ষার সুযােগ না পেলে ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ কখনােই সম্ভব হয় না। প্রতিটি রাষ্ট্রে কার্যকরীভাবে শিক্ষার অধিকারের সংস্থান থাকা একান্ত অপরিহার্য।
[7] চুক্তির অধিকার: চুক্তির অধিকারকে অনেকে পৌর অধিকারের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ব্যাবসাবাণিজ্য এবং অন্য যেকোনাে বিষয়ে যে কোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমাজের প্রতিটি নাগরিকের স্বাধীনভাবে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার অধিকার থাকা বাঞ্ছনীয়।
রাজনৈতিক অধিকার
রাষ্ট্রের কাজকর্মে নাগরিকদের প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে অংশগ্রহণের সুযােগসুবিধাকে রাজনৈতিক অধিকার বলা হয়। রাজনৈতিক অধিকারগুলি হলㅡ
[1] ভােটদানের অধিকার: ভােট দেওয়ার অধিকার রাজনৈতিক অধিকারগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্ত্রী পুরুষ-জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভােটাধিকার স্বীকৃত। সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভােট দেওয়ার অধিকার গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি রচনা করে।
[2] নির্বাচিত হওয়ার অধিকার: আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যােগ্যতাসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি নাগরিকের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বা নির্বাচিত হওয়ার অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। প্রসঙ্গত বলা যায়, বিভিন্ন রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় পদগুলিতে নির্বাচিত হওয়ার জন্য যােগ্যতার শর্ত বিভিন্ন ধরনের।
[3] সরকারি চাকরির অধিকার: স্ত্রী-পুরুষ-জাতি-ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে উপযুক্ত যােগ্যতাসম্পন্ন প্রতিটি নাগরিকের সরকারি চাকরি পাওয়ার অধিকার একটি রাজনৈতিক অধিকাররূপে স্বীকৃত। কোনাে যােগ্যতাসম্পন্ন নাগরিককে জাতি, ধর্ম বা বর্ণের অজুহাতে সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত করা যায় না।
[4] আবেদনের অধিকার: আবেদন করার অধিকার নাগরিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার। নাগরিকরা তাদের অভাব, অভিযােগ এবং বিভিন্ন সমস্যা প্রতিকারের জন্য সরকারকে স্বাধীনভাবে আবেদন জানাতে পারে যা সভ্য রাষ্ট্রে একটি স্বীকৃত মৌল অধিকার।
[5] সমালােচনার অধিকার: সরকার জনবিরােধী কাজ করলে তার সমালােচনা করার অধিকার নাগরিকদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। গণতন্ত্রে জনমতের গুরুত্বকে মর্যাদা দেওয়া হয়। অবশ্য সরকারের বিরুদ্ধে সমালােচনার অর্থ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালােচনা করা নয়।
[6] প্রবাসকালীন নিরাপত্তার অধিকার: স্বদেশের মতাে বিদেশে থাকাকালীন নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির অধিকারের সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব।
[7] প্রতিরােধ বা বিদ্রোহের অধিকার: জনস্বার্থ রক্ষার কাজে নিয়ােজিত না হয়ে সরকার যদি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে, তবে সেই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলা অথবা বিদ্রোহ করা নাগরিকদের একটি মৌলিক অধিকার বার্ট্রান্ড রাসেলের মতে, অপদার্থ সরকার যদি নিজের কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করতে না পারে তাহলে অরাজকতার আশঙ্কা সত্ত্বেও জনগণের বিদ্রোহ করার অধিকার থাকা উচিত।
অর্থনৈতিক অধিকার
অর্থনৈতিক অধিকার হল সেইসব অধিকার, যেগুলি অভাব-অনটন ও অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দিয়ে মানুষের জীবনকে সুখস্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও নিরাপদ করে তোলে। অধ্যাপক ল্যাস্কির ভাষায়, দৈনন্দিন অন্নসংস্থানের ব্যাপারে যুক্তিসংগত অর্থ উপার্জনের সুযোগ ও নিরাপত্তাকেই অর্থনৈতিক অধিকার বলে। যে সমাজে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নেই, সেখানে শ্রমিকরা ধনশালী মালিকদের আজ্ঞাবহ দাসমাত্র। তাই বার্কার মন্তব্য করেছেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরাধীন শ্রমিক কখনোই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্বাধীন হতে পারে না। সুতরাং সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারের যথার্থ রূপদানের প্রয়োজনে অর্থনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতি একান্ত অপরিহার্য। অর্থনৈতিক অধিকারসমূহের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল
১. কর্মের অধিকার
কর্মের অধিকার অর্থনৈতিক অধিকারগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। কর্মের অধিকার বলতে বোঝায় প্রতিটি ব্যক্তি তার যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুসারে কর্মে নিযুক্ত হতে পারবে। রাষ্ট্রের কর্তব্য হল প্রত্যেকের সামর্থ্য ও যোগ্যতা অনুযায়ী তাকে কর্মে নিযুক্ত করা। কর্মের অধিকার না থাকলে ব্যক্তি কখনোই সম্যকভাবে তার ব্যক্তিসত্তার বিকাশ ঘটাতে পারে না। তাই বিশ্বের প্রতিটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কর্মের অধিকার স্বীকৃতিলাভ করেছে।
২. উপযুক্ত পারিশ্রমিকের অধিকার
কেবল কর্মের অধিকার থাকলেই ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথ সুগম।হয় না। উপযুক্ত কার্যের জন্য উপযুক্ত বেতন দেওয়া না হলে কর্মের অধিকার মূল্যহীন হয়ে পড়ে। তাই বেতন প্রদানের সময় কার্যের গুণ ও পরিমাণের দিকে লক্ষ রাখা বিশেষ প্রয়োজন। তবে প্রতিটি নাগরিকের জীবনযাত্রার ন্যূনতম মান বজায় রাখার জন্য যেটুকু বেতন প্রয়োজন, সেটুকু তাকে প্রদান করতে হবে।
৩. অবকাশের অধিকার
গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টট্ল বলেছেন, সুন্দর জীবনের জন্য অবকাশ অপরিহার্য। সুখস্বাচ্ছন্দ্য ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অবকাশের অধিকার একান্ত প্রয়োজন। মানুষের উদ্ভাবনী শক্তির পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজন অবকাশের। তা ছাড়া, অবকাশ না থাকলে মানুষ যন্ত্রতুল্য হয়ে পড়ে। দিবারাত্র কর্মরত থাকলে মানুষ চিত্ত-বিনোদনের সময় পায় না। তাই বৈচিত্রাহীন জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তার অন্তরাত্মা অনেক সময় বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। ফলে সমাজের স্বাভাবিক অগ্রগতি ব্যাহত হয়।
৪. প্রতিপালিত হওয়ার অধিকার
কর্মক্ষম অবস্থায় প্রতিটি ব্যক্তি তার সামর্থ্য অনুযায়ী রাষ্ট্র তথা সমাজের জন্য কাজ করে। কিন্তু বৃদ্ধ হয়ে পড়লে তার ভরণপোষণের ব্যবস্থা যদি রাষ্ট্র না করে, তবে অন্যায় করা হবে। তাই সমাজতান্ত্রিক ও জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রসমূহে বার্ধক্য ভাতা, বিমা পরিকল্পনা, প্রভিডেন্ট ফান্ড পরিকল্পনা প্রভৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। অনুরূপভাবে, বিকলাঙ্গ, মারাত্মক ব্যাধিগ্রস্ত প্রভৃতি ব্যক্তির প্রতিপালনের দায়িত্ব রাষ্ট্রের গ্রহণ করা উচিত।
সামাজিক অধিকার
নাগরিকদের সামাজিক জীবন সুন্দর ও সার্থক ক’রে গড়ে তোলার জন্য কতকগুলি সামাজিক সুযোগসুবিধা একান্ত অপরিহার্য। রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হলে সেগুলিকে সামাজিক অধিকার বলা হয়। বিভিন্ন রাষ্ট্রে যেসব সামাজিক অধিকার স্বীকৃতিলাভ করেছে, সেগুলির মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য-
১. শিক্ষার অধিকার
সভ্যসমাজ গঠনের কাজে শিক্ষার ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা ছাড়া মানুষ কখনোই আত্মসচেতন হয়ে উঠতে পারে না। সর্বোপরি, শিক্ষা মানুষের বৃত্তি, সামাজিক মর্যাদা, চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রভৃতি বিকাশে সহায়তা করে। তাই শিক্ষার অধিকার স্বীকার করে নেওয়া প্রতিটি রাষ্ট্রের কর্তব্য।
২. ধর্মের অধিকার
স্বাধীনভাবে ধর্মাচরণ ও ধর্মপ্রচার করার অধিকারকে ধর্মের অধিকার বলে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিটি ব্যক্তি যাতে অপরের এই অধিকারে হস্তক্ষেপ না ক’রে স্বাধীনভাবে ধর্মাচরণ ও ধর্মপ্রচার করতে পারে, সেদিকে রাষ্ট্র সতর্ক দৃষ্টি রাখে।
৩. সুস্থ পরিবেশে বসবাসের অধিকার
সুস্থ সামাজিক পরিবেশে বসবাস করা প্রত্যেকের জন্মগত অধিকার। কিন্তু অনেক সময় কিছুসংখ্যক ব্যক্তি অসামাজিক কাজকর্মে লিপ্ত থাকার ফলে অধিকাংশ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই সমাজজীবনের সুস্থ পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
৪.স্বাস্থ্যের অধিকার
প্রতিটি পুরুষ ও নারী যাতে সুস্থ ও সবল দেহের অধিকারী হতে পারে, সেজন্য যথোচিত ব্যবস্থা অবলম্বন করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। রুগ্ণ ও ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিরা সাধারণত সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি নিজ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করতে পারে না। তাই এই অধিকার স্বীকার করে নেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য।
৫. সাম্যের অধিকার
সামাজিক দিক থেকে বিচার ক’রে বলা যায় যে, স্ত্রীপুরুষ-নির্বিশেষে সমাজের সকলে সমান কার্যের জন্য সমান বেতন পাওয়ার অধিকারী। জাতি, ধর্ম, বর্ণ প্রভৃতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র মানুষের মধ্যে কোনোরকম ভেদ-বিচার করবে না।
মৌলিক অধিকার কি
মৌলিক অধিকার সাধারণত নাগরিকের মর্যাদা এবং সমতা রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয় এবং যা প্রতিটি নাগরিককে তার ব্যক্তিত্বকে পূর্ণ মাত্রায় বিকাশ করতে সহায়তা করে। অধিকাংশ দেশে, মৌলিক অধিকারসমূহকে সাংবিধানিকভাবে বলবৎ অযোগ্য করে তৈরি করা হয়। তবে, কিছু শর্তসাপেক্ষ এটি পরিবর্তন করা যায়।
মৌলিক অধিকার বলতে বোধ করা হয় মানবিক অধিকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। এটি মানবিক অধিকারের প্রথমতঃ এবং প্রধানতঃ অংশ বিবেচিত হয়। মৌলিক অধিকার মানুষের মানবিক অস্তিত্ব, মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং মর্যাদার সাথে সম্পর্কিত। এটি সকল মানুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য এবং অলঙ্কার করে থাকা উচিত।
মৌলিক অধিকারের মধ্যে সংক্ষেপে নিম্নলিখিত উল্লেখযোগ্য অংশগুলি রয়েছে:
- 1. জীবনের অধিকার: প্রত্যেক মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা সংরক্ষণের জন্য অধিকার রয়েছে। এটি আমাদের প্রাথমিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়।
- 2. স্বাধীনতা ও মুক্তির অধিকার: প্রতিটি ব্যক্তির স্বাধীনতা এবং মুক্তির অধিকার রয়েছে। এটি তাদের মতামতের স্বাধীনতা, ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা, ও অস্বাধীনতা এবং যৌন ও জাতিগত পরিচয়ের মুক্তির অধিকার নিশ্চিত করে।
- 3. সমানতা ও অপমাননা নিরসনের অধিকার: প্রতিটি ব্যক্তির সমান অধিকার ও সুযোগ রয়েছে এবং তাদের অপমাননা নিস্তারণের অধিকার রয়েছে। এটি সমানতার অন্যতম স্তম্ভ।
- 4. ন্যায় ও বিচারের অধিকার: প্রতিটি ব্যক্তির ন্যায় ও বিচারের অধিকার রয়েছে। তারা ন্যায়পালন ও বিচারপতির সামর্থ্য ও নিরাপত্তা থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারেন।
মৌলিক অধিকার মানবিক অস্তিত্বের মর্যাদার সাথে সম্পর্কিত এবং এগুলির সংরক্ষণ সম্পর্কে মানবিক সমাজে বিভিন্ন সাধারণ নীতি এবং আইন রয়েছে।
মৌলিক অধিকার বলতে কী বোঝায়
মৌলিক অধিকার হলো সেসব অধিকার যা কোন দেশের সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত এবং যা বাস্তবায়নের ব্যাপারে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
মৌলিক অধিকার হলো সংবিধানে বিধিবদ্ধ মৌলিক মানবাধিকার যা সকল নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এগুলো জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ ইত্যাদির ভিত্তিতে বৈষম্য ছাড়াই প্রয়োগ করা হয়।
যখন নাগকের নির্দিষ্ট অধিকার সংবিধানে লিখিত থাকে এবং সাংবিধানিক গ্যারান্টি দ্বারা সুরক্ষিত থাকে, তখন সেগুলোকে মৌলিক অধিকার বলা হয়। এগুলোকে মৌলিক অধিকার বলা হয় এই অর্থে যে, এটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বা মৌলিক আইনে স্থাপন করা হয় যা অন্যান্য সকল আইনের উপর প্রাধান্য পায়।
১৭৮৯ সালের ‘‘ফরাসি ডিক্লারেশন অফ রাইটস অফ ম্যান অ্যান্ড সিটিজেন’’, এবং ১৭৯১ সালে মার্কিন সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত‘‘বিল অফ রাইটস’’, লিখিত সংবিধান সহ বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক দেশে সংবিধানে মৌলিক অধিকারের জন্য একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ব্রিটেনে মৌলিক অধিকারের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা বিধিবদ্ধ আইন নেই। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, ব্রিটেনে জনগণের অধিকার কম নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে অধিকার এবং স্বাধীনতার সুরক্ষা সাংবিধানিক গ্যারান্টির উপর নির্ভর নয় বরং আইনের শাসন, জনমত এবং শক্তিশালী সাধারণ আইন ঐতিহ্যের উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠেছে।
কয়েকটি মৌলিক অধিকার যেমন- সাম্যের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার, ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার, স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার এবং সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার ইত্যাদি।
মৌলিক অধিকারের বৈশিষ্ট্য
অধিকার বলতে সমাজজীবনের এমন সব শর্তাবলিকে বােঝায় যেগুলির অভাবে কোনাে মানুষের পক্ষেই তার অন্তর্নিহিত গুণাবলি বিকশিত করা সম্ভব নয়। কিন্তু সব অধিকারই মৌলিক নয়। মৌলিক অধিকার হল সেইসব অধিকার যেগুলি মানুষের মৌল প্রয়ােজন পূরণ করে। একারণেই ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলিকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত মৌলিক অধিকারগুলির বৈশিষ্ট্যসমূহ হল―
[1] অধিকারগুলি মূলত সামাজিক ও রাজনৈতিক: ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারগুলির প্রথম বৈশিষ্ট্য হল, অধিকারগুলি চরিত্রগত দিক থেকে মূলত সামাজিক ও রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অধিকারের ওপর কোনাে গুরুত্বারােপ করা হয়নি। সংবিধান প্রণেতাগণ অর্থনৈতিক অধিকার হিসেবে সম্পত্তির অধিকারকে গুরুত্ব দিলেও ৪৪তম সংবিধান সংশােধনের মাধ্যমে সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
[2] সার্বিক ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি: ভারতীয় সংবিধানে সংযােজিত মৌলিক অধিকারের মাধ্যমে সার্বিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। মৌলিক অধিকারের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিফলন ঘটলেও অর্থনৈতিক ন্যায়ের কোনােরূপ প্রকাশ ঘটেনি।
[3] অধিকারগুলি অবাধ নয়: ভারতে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত নয়। সামাজিক শৃঙ্খলা, জাতীয় ঐক্য ও সংহতি, বিদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্করক্ষা, জনস্বার্থ ইত্যাদি কারণে মৌলিক অধিকারের ওপর বাধানিষেধ আরােপ করা যায়। এ ছাড়া প্রয়ােজনবােধে রাষ্ট্র নাগরিকদের অধিকারের ওপর ‘যুক্তিসংগত বাধানিষেধ’ আরােপ করতে পারে।
[4] অধিকারগুলি আদালত কর্তৃক বলবৎযােগ্য: ভারতে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি আদালত কর্তৃক বলবৎযােগ্য। অর্থাৎ, কোনাে নাগরিক তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে আদালতে আবেদন করতে পারে এবং আদালত তা পুনর্বহালের ব্যবস্থা করে। এ ছাড়াও সংবিধানের ১৩নং ধারা অনুযায়ী মৌলিক অধিকার ক্ষুগ্প করে কোনাে আইন প্রণীত হলে তা বাতিল হয়ে যায়।
[5] জরুরি অবস্থায় কার্যকর হয় না: দেশে জরুরি অবস্থা জারি হলে নাগরিকগণ মৌলিক অধিকার ভােগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। সংবিধান অনুযায়ী দেশে জরুরি অবস্থা জারি থাকলে সংবিধানের ১৯নং ধারায় বর্ণিত মৌলিক অধিকার ভােগ থেকে নাগরিকগণ বঞ্চিত হন। এ ছাড়াও জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকাকালীন রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৩৫৯নং ধারা অনুযায়ী আদেশ জারির মাধ্যমে আদালত কর্তৃক মৌলিক অধিকার কার্যকরী করার ব্যবস্থা বাতিল করতে পারেন।
[6] সকল মৌলিক অধিকার সকলের জন্য নয়: ভারতীয় সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত মৌলিক অধিকারের কতকগুলি কেবল ভারতীয় নাগরিকরাই ভােগ করতে পারে, যেমন—মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, চাকরির ক্ষেত্রে সমানাধিকার ইত্যাদি। আবার কতকগুলি মৌলিক অধিকার আছে যেগুলি নাগরিক ও বিদেশি নির্বিশেষে সকলেই ভােগ করতে পারে, যেমন—আইনের চোখে সমানাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার প্রভৃতি।
[7] অধিকারগুলি সংশােধনযােগ্য: ভারতে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি সংশােধনযােগ্য, অলঙ্ঘনীয় নয়। ১৯৭১ সালে ২৪তম সংশােধন দ্বারা সংসদের হাতে মৌলিক অধিকার সংশােধনের ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়। এই ক্ষমতাবলে সংসদ 88তম সংবিধান সংশােধন করে সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার থেকে বাদ দেয়।
[8] ধর্মনিরপেক্ষতা: ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলি অসাম্প্রদায়িক। স্বীকৃত অধিকারসমূহের মাধ্যমে কোনাে বিশেষ ধর্ম ও সম্প্রদায়ের অনুকূলে বৈষম্যমূলক আচরণের ব্যবস্থা করা হয়নি।
[9] সংখ্যালঘু ও অনুন্নত সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা: ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকারের অধ্যায়ে সংখ্যালঘু ও অনুন্নত শ্রেণির জন্য বিশেষ সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। তপশিলি জাতি, উপজাতি, অন্যান্য অনুন্নত সম্প্রদায় ও ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায়ের জন্য এই সুযােগ প্রসারিত করা হয়েছে।
[10] ইতিবাচক ও নেতিবাচক: ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারগুলিকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক এই দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। ইতিবাচক অধিকার বলতে সেই অধিকারগুলিকে বােঝায় যেগুলির মাধ্যমে জনগণকে কিছু সুযােগসুবিধা দেওয়া হয়েছে, যেমন, ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার, সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার প্রভৃতি। আর নেতিবাচক অধিকার হল সেই অধিকার যেগুলি রাষ্ট্রকে কোনাে কিছু করা থেকে বিরত করে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, আইনের দৃষ্টিতে সমানাধিকার ও আইন কর্তৃক সমভাবে সংরক্ষিত হওয়ার অধিকার ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা যায়।
উপরােক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলা যায় যে, ভারতের সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারসমূহের প্রকৃতি মূলত সামাজিক ও রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অধিকারের কোনাে স্বীকৃতি নেই। অর্থনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতি ছাড়া অধিকারের ধারণা সম্পূর্ণ হতে পারে না। মৌলিক অধিকারগুলি আদালত কর্তৃক বলবৎযােগ্য। হলে সংবিধান সংশােধনের মাধ্যমে অধিকারগুলিকে পরিবর্তন বা বাতিল করা যায়। সুতরাং, সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলিকে বিশেষ মর্যাদা প্রদানের চেষ্টা করা হলেও বর্তমানে মৌলিক অধিকার এই মর্যাদা হারাতে চলেছে বলে মনে হয়।
ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার কয়টি
ভারতীয় সংবিধানের আর্টিকেল 12-35 এ মৌলিক অধিকার রয়েছে। এই মানবাধিকারগুলি ভারতের নাগরিকদের দেওয়া হয়েছে কারণ সংবিধানে উল্লেখ আছে যে এই অধিকারগুলি অলঙ্ঘনীয়। এই মৌলিক অধিকার গুলি হল -সাম্যের অধিকার,স্বাধীনতার অধিকার,শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার,ধর্মের অধিকার ,সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত অধিকারও সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার।
ব্যক্তির দ্বারা তার পূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক মর্যাদা অর্জনের জন্য এই মৌলিক অধিকারগুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সংবিধানে তাদের অন্তর্ভুক্তির উদ্দেশ্য মানুষের নয়, সরকারের আইন প্রতিষ্ঠা করা। মৌলিক অধিকার রাষ্ট্রের যে কোনো আক্রমণের বিরুদ্ধে নাগরিকদের স্বাধীনতা রক্ষা করে এবং দেশে স্বৈরাচারী ও স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা প্রদান করে। ব্যক্তি ও দেশের সর্বাত্মক উন্নয়নের জন্য এগুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়।
মানুষের মৌলিক অধিকার ৬টি কি কি, মৌলিক অধিকার কয়টি, ভারতের মৌলিক অধিকার কয়টি
ভারতের সংবিধানে তৃতীয় অধ্যায়ের 12 নং থেকে 35 নং ধারার মধ্যে মৌলিক অধিকার রয়েছে। ভারতের মৌলিক অধিকার মোট 6টি (1978 সালে 44 তম সংবিধান সংশোধন এর মাধ্যমে সম্পত্তির অধিকার সংবিধানের মৌলিক অধিকারের অংশ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ) মৌলিক অধিকার রয়েছে।
সংবিধানের মৌলিক অধিকার গুলি হলো :
- সাম্যের অধিকার (14 থেকে 18 নম্বর অনুচ্ছেদ)
- স্বাধীনতার অধিকার (19 থেকে 22নম্বর অনুচ্ছেদ)
- শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার (23 ও 24 নম্বর অনুচ্ছেদ)
- ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার (25 থেকে 28 নম্বর অনুচ্ছেদ)
- সংস্কৃতি ও শিক্ষা-বিষয়ক অধিকার (29 ও 30 নম্বর অনুচ্ছেদ)
- সংবিধানের প্রতিবিধানের অধিকার (32 ও 35 নম্বর অনুচ্ছেদ)
মৌলিক অধিকার: সাম্যের অধিকার (14 থেকে 18 নম্বর অনুচ্ছেদ)
- 14 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান ও আইন সবাইকে সম ভাবে রক্ষা করবে।
- 15 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে রাষ্ট্র কোন নাগরিকের সাথে ধর্ম ,জাতি,বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্ম স্থানের ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারবে না।
- 16 নং আর্টিকেল অনুসারে সরকারি চাকুরি তে সব নাগরিক দের সমান সুযােগসুবিধা থাকবে |
- 17 নং আর্টিকেল অনুসারে অস্পৃশ্যতা নিষিদ্ধ বলে ঘােষনা করা হয়েছে
- 18 নং আর্টিকেল অনুসারে সামরিক ও শিক্ষা ক্ষেত্র ছাড়া সমস্তু ক্ষেত্রে উপাধি গ্রহন ও ব্যাবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবিধান দ্বারা অনুমোদিত সাম্যের অধিকারের ব্যতিক্রমটি হ’ল: রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল কোনও আদালতের কাছে জবাবদিহি করে না।
মৌলিক অধিকার: স্বাধীনতার অধিকার (19 থেকে 22 নম্বর অনুচ্ছেদ)
ভারতীয় সংবিধানের 19 নং আর্টিকেলে নাগরিকদের 6 প্রকার স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে ।
- (1)বাক স্বাধীনতা ও মতামত প্রকাশ
- (2) শান্তিপূর্ণ ও নিরন্ত্রভাবে সমাবেত হওয়া
- (3) সংঘ ও সমিতি গঠন
- (4) ভারতের সর্বত্র চলাফেরা করা।
- (5) ভারতের যে কোন অঞ্চলে স্বাধীনভাবে বসবাস
- (6) যে কোন বৃত্তি বা পেশা অবলম্বন
- 20 নং আর্টিকেল, আইনভঙ্গের অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তিকে আইন অনুসারেই শাস্তি প্রদান
- 21 নং আর্টিকেলেয় বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তিকে আর জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
- 21A আর্টিকেল অনুসারে রাষ্ট্র 6-14 বছর বয়সী সকল শিশুদের জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামুলক শিক্ষার ব্যাবস্থা করবে।
বিশেষ ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার এবং আটকের বিরুদ্ধে সুরক্ষা: 22 নং আর্টিকেল অনুসারে কোন ব্যক্তিকে যুক্তি সংগত কোন কারণ ছাড়া গ্রেফতার করা যাবে না।
মৌলিক অধিকার: শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার (23 ও 24 নম্বর অনুচ্ছেদ)
- 23 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে মানুষ নিয়ে ব্যবসা অর্থাৎ মানুষ ক্রয় বিক্রয়, বেগার খাটানাে বা অনুরুপ ভাবে বলপূর্বক শ্রমদান নিষিদ্ধ।
- 24 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে 14 বছরের কম বয়সী শিশুদের খনি কারখানা বা অন্য কোন বিপজ্জনকক কার্যে নিয়ােগ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মৌলিক অধিকার: ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার (25 থেকে 28 নম্বর অনুচ্ছেদ)
- সংবিধানের 25 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের বিবেক এবং বিশ্বাস অনুযায়ী যে কোন ধর্ম গ্রহন ধর্মীয়আচার অনুষ্ঠান পালন ও নিজ ধর্ম প্রচার করতে পারবে ।
- সংবিধানের 26 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায় নিজেদের ধর্ম প্রচারের জন্য ধর্ম প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করতে পারবে ।
- সংবিধানের 27 নং আর্টিকেলে বলা হযেছে কোন বিশেষ ধর্ম বা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উন্নতি এবং রক্ষনাবেক্ষনের জন্য কোন ব্যক্তি কে কর বা চাঁদা দিতে বাধ্য করা যাবে না।
- সংবিধানের 28 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে সরকারি অর্থে পরিচালিত সেগুলিতে ধর্ম শিক্ষা দেওয়া যাবে না।
মৌলিক অধিকার: সংস্কৃতি ও শিক্ষা-বিষয়ক অধিকার (29 ও 30 নম্বর অনুচ্ছেদ)
- সংবিধানের 29 নং আর্টিকেলে বলা হযেছে ভারতীয় ভূখন্ডের যে কোন অংশে বসবাসকারী নাগরিক নিজ নিজ ভাষা,লিপি ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের অধিকার ভোগ করতে পারবে।
- সংবিধানের 30 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে ধর্মীয় ও ভাষা গত সংখ্যালঘু সহ সকল সংখ্যালঘুদের নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনার অধিকার কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ।
মৌলিক অধিকার: সংবিধানের প্রতিবিধানের অধিকার (32 ও 35 নম্বর অনুচ্ছেদ)
নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে সংবিধান প্রতিকারের নিশ্চয়তা দেয়। সরকার কারো অধিকার লঙ্ঘন বা বাধা দিতে পারে না। যখন এই অধিকারগুলি লঙ্ঘিত হয়, সংক্ষুব্ধ পক্ষ আদালতের কাছে যেতে পারে। নাগরিকরা এমনকি সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন যা মৌলিক অধিকার প্রয়োগের জন্য রিট জারি করতে পারে।
সংবিধানের 32 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে ভারতীয় নাগরিকরা যদি মনে করেন যে তাদের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে বা খর্ব করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেক্ষেত্রে তারা হাইকোর্ট বা সুপ্রীম কোর্টের দারস্থ হতে পারেন|
মৌলিক অধিকার কয়টি বাংলাদেশ
বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার সমূহ লিপিবদ্ধ রয়েছে। ২৬ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো আইন করা যাবে না।
আর যদি করা হয়, তবে তা স্বতঃসিদ্ধভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এই অনুচ্ছেদ অনুসারে, মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী পূর্বেকার সকল আইন সাংবিধানিকভাবে অবৈধ হয়ে যায়।
সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ শুধুমাত্র হাইকোর্ট বিভাগকে মৌলিক অধিকার বলবৎ করার এখতিয়ার দিয়েছে। নিম্মে বাংলাদেশ সংবিধান কর্তৃক নির্ধারিত মৌলিক অধিকারসমূহ যেমন,
- আইনের দৃষ্টিতে সমতা
- বৈষম্য করা যাবে না
- সরকারী নিয়োগ-লাভে সুযোগের সমতা
- আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার
- জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার
- গ্রেপ্তার ও আটকে রক্ষাকবচ বা সীমা
- জবরদস্তিমূলক শ্রম নিষিদ্ধ
- বিচার ও দন্ড সম্পর্কে রক্ষণ
- চলাফেরার স্বাধীনতা
- সমাবেশের স্বাধীনতা
- সমিতি বা সংগঠনের স্বাধীনতা
- চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতা
- পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতা
- ধর্মীয় স্বাধীনতা
- সম্পত্তির অধিকার
- গৃহ ও যোগাযোগের অধিকার
- মৌলিক অধিকারবঞ্চিত হলে উচ্চ আদালতে রিট করার অধিকার
মৌলিক অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে পার্থক্য
ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকার ও মৌলিক কর্তব্য সম্পর্কে বলে হয়েছে ।
মৌলিক অধিকার | মৌলিক কর্তব্য |
---|---|
মৌলিক অধিকার হল সকল নাগরিকের মানবাধিকারের মূলভিত্তি। সংবিধানের তৃতীয় খণ্ডে বর্ণিত এই অধিকারগুলি জাতি, জন্মস্থান, ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সমভাবে প্রযোজ্য। | মৌলিক কর্তব্য হল সকল নাগরিকের নৈতিক দায়দায়িত্ব। মৌলিক কর্তব্য উদ্দেশ্য, দেশের জনগণের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগরিত করা এবং দেশের ঐক্য রক্ষা করা। |
অধিকার বিষয়টি হলো যুক্তিগতভাবে লাভ করা। এটা আমরা লাভ করা আইনগতভাবে বৈধ, এটা লাভ করা আমার উচিত এমনটিই হলো অধিকার। | আর কর্তব্য হলো এমন কতগুলো বিষয় যা কাজ যা আমি করতে বাধ্য সে কাজগুলো আমাকে করতে হবে যদি কিনা আমি সমাজে বাস করি। |
আইনসম্মত বা নৈতিক ভিত্তির উপর নির্ভর করে কোনো কিছু পাওয়ার বা কোনো নির্দিষ্ট পন্থায় কাজ করা যুক্তিসম্মত দাবিকে অধিকার বলে। | অন্যদিকে জনকল্যাণের স্বার্থে কোনো সম্প্রদায় বা সম্প্রদায়ের বিশেষ ব্যক্তি বা ব্যক্তিকে কোনো ব্যক্তির কাছে যা দাবি করে সেই দাবি মিটাবার বাধ্যতা বোধই হলো কর্তব্য। |
অধিকার ও দায়িত্বের মধ্যে পার্থক্য
অধিকার | দায়িত্ব |
---|---|
১. সকলের একটি নাম পাওয়া অধিকার। ২. স্নেহ ও ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার। ৩. খেলাধুলা, বিনোদন ও শিক্ষা লাভের অধিকার। ৪. জন্ম নিবন্ধনের অধিকার। | ১. পরিবারের নিয়ম কানুন মেনে চলা আমাদের দায়িত্ব। ২. মা-বাবা এবং বড়দের শ্রদ্ধা করা। ৩. পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে সেবাযত্ন করা। ৪. মা-বাবা ও পরিবারের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করা। |
শিশু অধিকার কাকে বলে
যে কোনও অবস্থাতেই বড়দের থেকে শিশুরাই সবথেকে বেশি অসুরক্ষিত। তাই, শিশুরাই সরকার ও সমাজের কোনও সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তার শিকার তারাই বেশি হয় | আমাদের দেশের আইন এবং যে সব আন্তর্জাতিক আইনকে আমরা মান্যতা দিয়েছি, সে সব আইনে শিশুদের যে সব অধিকার দেওয়া হয়েছে, ১৮ বছরের নীচে সব ব্যক্তিই সেগুলো পাওয়ার অধিকারী।
শিশু অধিকার গুলো কি কি, শিশু অধিকার কয়টি ও কি কি
ভারতীয় সংবিধান শিশুদের জন্য কিছু বিশেষ অধিকার অঙ্গীকার করেছে। সেগুলি হল :
- ৬ – ১৪ বছরের মধ্যে প্রত্যেক শিশুর অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার (অনুচ্ছেদ ২১ ক)|
- ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত যে কোনও রকম জটিল ও ঝামেলার কাজ না করার অধিকার (অনুচ্ছেদ ২৪)|
- বয়স বা শক্তির পক্ষে উপযুক্ত নয়, এমন কোনও কাজে অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তার কারণে যোগ দেওয়া এবং নিগৃহীত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার (অনুচ্ছেদ ৩৯ ঙ)|
- স্বাধীন ভাবে ও মর্যাদার সঙ্গে এবং সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য সব রকম সুযোগ ও সুবিধা পাওয়ার অধিকার এবং নৈতিক ও বস্তুগত পরিত্যাগ ও নিগ্রহের বিরুদ্ধে শৈশব ও যৌবনকে রক্ষা করার অধিকার। (অনুচ্ছেদ ৩৯ চ) |এ সব ছাড়াও যে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয় নারী বা পুরুষ যে সব অধিকার ভোগ করে থাকেন ভারতের নাগরিক হিসেবে সে সব অধিকারই তার রয়েছে।
- সাম্যের অধিকার (অনুচ্ছেদ ১৪) ।
- বৈষম্যের বিরুদ্ধে অধিকার (অনুচ্ছেদ ১৫) |
- ব্যক্তি স্বাধীনতা ও আইনের যথাযোগ্য প্রক্রিয়ার অধিকার (অনুচ্ছেদ ২১) ।
- বেগার শ্রমিক হিসেবে কাজ করা এবং পাচার হওয়া থেকে বাঁচার অধিকার (অনুচ্ছেদ ২৩) ।
- দুর্বল শ্রেণির মানুষদের সামাজিক অন্যায় ও সব রকম শোষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার (অনুচ্ছেদ ৪৬) ।
- দুর্বল শ্রেণির মানুষদের সামাজিক অন্যায় ও সব রকম শোষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার (অনুচ্ছেদ ৪৬) ।
শিক্ষার অধিকার আইন কবে কার্যকর হয়
এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে ২০০২ সালে সংবিধান সংশোধন করে শিক্ষাকে দেওয়া হয় মৌলিক অধিকারের মর্যাদা, যার ভিত্তিতে সংসদে পাশ হয় সর্বজনীন,অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা আইন ২০০৯ যা কার্যকর করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং৷
শিক্ষার অধিকার আইন (আরটিই), ২০০৯-এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ভারতের ৬-১৪ বছর বয়সি সকল শিশুর জন্য বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা। বুনিয়াদি শিক্ষা সম্পূর্ণ করার আগে কোনও শিশুকে ফেল করানো, বহিষ্কার করা বা কোনও বোর্ডের পরীক্ষায় পাস করতে বাধ্য করা যাবে না।
যদি ৬ বছরের বেশি বয়সি কোনও শিশু স্কুলে ভর্তি না হয়ে থাকে বা তার বুনিয়াদি শিক্ষা সম্পূর্ণ না হয়ে থাকে, তা হলে তাকে তার বয়সের উপযোগী শ্রেণিতে ভর্তি করাতে হবে। যদি কোনও শিশুকে তার বয়স অনুযায়ী কোনও শ্রেণিতে ভর্তি করে দেওয়া হয়, তা হলে সে যাতে অন্যদের সঙ্গে একই মানে পৌঁছতে পারে, সে জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বুনিয়াদি শিক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে ভর্তি হওয়া প্রতিটি শিশু বুনিয়াদি শিক্ষা সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা পাবে, এমনকী তার বয়স যদি ১৪ বছর পেরিয়ে যায় তা হলেও।
- ভর্তির জন্য বয়সের প্রমাণপত্র: বুনিয়াদি শিক্ষায় ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে শিশুর বয়স তার জন্মের শংসাপত্র অনুযায়ী নির্ণিত হবে। এই শংসাপত্র জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ নিবন্ধীকরণ আইন, ১৮৫৬ বা নির্দেশিত অন্য কোনও নথি দ্বারা প্রমাণিত হলেই হবে। শুধুমাত্র বয়সের শংসাপত্রের অভাবে কোনও শিশুর স্কুলে ভর্তি আটকানো যাবে না।
- যে শিশু বুনিয়াদি শিক্ষা শেষ করবে তাকে শংসাপত্র দিতে হবে।
- ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত নির্দিষ্ট করার বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে।
- প্রতিটি বেসরকারি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষের জন্য ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে।
- শিক্ষার গুণমানের উন্নতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- পাঁচ বছরের মধ্যে যথাযথ পেশাদার ডিগ্রি অর্জন করতে না পারলে শিক্ষকদের চাকরি যাবে।
- প্রতি তিন বছরের মধ্যে স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটাতে হবে (যেখানে সমস্যা আছে)। তা না হলে স্কুলের অনুমোদন বাতিল করা হবে।
- অর্থনৈতিক দায়িত্ব কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ভাগাভাগি করে বহন করবে।
আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | অধিকার
Q1. মৌলিক অধিকার কত নম্বর ধারায় আছে
Ans – ভারতের সংবিধানে তৃতীয় অধ্যায়ের 12 নং থেকে 35 নং ধারার মধ্যে মৌলিক অধিকার রয়েছে।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।