নিষেক কাকে বলে, নিষেক কত প্রকার ও কি কি, উদ্ভিদের নিষেক প্রক্রিয়া, মানুষের নিষেক প্রক্রিয়া

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

নিষেক কাকে বলে

স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক মিলনের মাধ্যমে যৌন মিলন ঘটে। যৌন মিলনের সময় পুরুষের শুক্রাণু স্ত্রী প্রজনন অঙ্গে প্রবেশ করে। শুক্রাণুতে লেজ থাকে যা তাকে সাঁতরিয়ে স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের ভেতর প্রবেশ করতে সহায়তা করে। পরিণত শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটে স্ত্রীর ডিম্বনালিতে। এ মিলনকে নিষেক (Fertilization) বলা হয়।

নিষেক পদ্ধতিতে দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। যেমন-

  • (১) মিলনের ফলে ডিম্বাণু সক্রিয় হয় এবং ভ্রূণ সৃ্ষ্টিতে উদ্বুদ্ধ হয়।
  • (২) নিউক্লিয়াসের মিলনের ফলে মাতাপিতার জিনগুলি, যেগুলি বংশগতির বৈশিষ্ট্য, সেগুলি ভ্রূণের প্রতিটি কোষে সঞ্চারিত হয়। এই দ্বিতীয় ঘটনাটিকে অ্যাম্ফিমিক্সি (Amphimixis) বলে।

নিষেকের প্রকারভেদ, নিষেক কত প্রকার ও কি কি

নিষেক প্রক্রিয়া বিশেষভাবে নির্দিষ্ট। কেবল একই প্রজাতির পরিণত পুংগ্যামিট ও স্ত্রীগ্যামিটের মধ্যে সংঘটিত হয়। এটি সাধারণত অপরিবর্তনশীল। একবার নিষিক্ত হলে উক্ত ডিম্বাণুকে পুনরায় নিষিক্ত করা যায় না। নিষেক দু’প্রকার। যথা-

আরও পড়ুন :- তেজস্ক্রিয়তা কাকে বলে, তেজস্ক্রিয়তা কে আবিষ্কার করেন

(ক) বহিঃনিষেক এবং
(খ) অন্তঃনিষেক।

বহিঃনিষেক

যে নিষেক প্রক্রিয়া প্রাণীদেহের বাইরে ঘটে তাকে বলা হয় বহিঃনিষেক। এ ধরনের নিষেক সাধারণত পানিতে বাস করে এমন সব প্রাণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যেমন- বিভিন্ন ধরনের মাছ। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। যথা- হাঙ্গর এবং কয়েক প্রজাতির মাছ। এক্ষত্রে স্ত্রী প্রাণী এবং পুরুষ প্রাণী যথাক্রমে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু পানিতে ছেড়ে দেয়। শুক্রাণু পানির মাধ্যমে ডিম্বাণুর কাছে আগে এবং নিষেক ঘটায়।

অন্তঃনিষেক

স্ত্রীদেহের ভেতরে জননাঙ্গে সংঘটিত নিষেককে অন্তঃনিষেক বলা হয়। সাধারণত সঙ্গমের মাধ্যমে পুরুষ প্রাণী তার শুক্রাণু স্ত্রী জননাঙ্গে প্রবেশ করায় শুক্রাণু স্ত্রীজননাঙ্গ থেকে ডিম্বাণুর কাছে আসে এবং নিষেক ঘটায়। অন্তঃনিষেক ডাঙ্গায় বসবাসকারী অধিকাংশ প্রাণীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যথা- মানুষ, বাঘ, বানর ইত্যাদি।

নিষেকের তাৎপর্য, নিষেক এর প্রয়োজন হয় কেন

নিষেক হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক প্রক্রিয়া। নিষেক ক্রিয়ার ফলে নতুন প্রজন্মের সৃষ্টি হয়। নিষেক না ঘটলে নতুন প্রজন্ম সৃষ্টি হবে না। ফলে প্রকৃতি থেকে জীবকূল এক সময় ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই জীবের বংশধর টিকে রাখার জন্য নিষেকের প্রয়োজন হয়।

জীবজগতে নিষেক একটি গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক প্রক্রিয়া। নিষেকের মাধ্যমে স্ত্রীগ্যামিটের সাথে পুংগ্যামিটের মিলন ঘটে এবং এর সাথে সাথে তাদের শুধুমাত্র পুং নিউক্লিয়াস ডিম্বকের মধ্যে প্রবেশ করে। ফলে নিউক্লিয়াস দুটির সংযোগ ঘটে। কাজেই নিষেক ক্রিয়ার ফলে দুটি হ্যাপ্লয়েড(n) গ্যামিটের মিলনের মাধ্যমে ডিপ্লয়েড (2n) জাইগোটের সৃষ্টি হয়। নিষেকের পর পুষ্পের গর্ভাশয়ের ভেতরের ডিম্বকগুলো বীজে এবং গর্ভাশয় ফলে পরিণত হয়।

বীজ উদ্ভিদের বংশধারা বজায় রাখে। বীজ গঠিত না হলে সপুষ্পক উদ্ভিদ পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। উদ্ভিদের ফল ও বীজের উপর নির্ভর করে মানবজাতিসহ অন্যান্য প্রাণীকূল বেঁচে আছে। কাজেই নিষেক প্রক্রিয়া একদিকে যেমন উদ্ভিদকূলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তেমনি মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীকূলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

যৌন জননকারী প্রাণিদের জন্য নিষেক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নিচে নিষেকের কয়েকটি তাৎপর্য উল্লেখ করা হলো- 

১. নিষেক পিতা-মাতার বৈশিষ্ট্যকে সমন্বিত করে। 

২. নিষেকের ফলে জাইগোটে জিনের নতুন সমন্বয় ঘটে এবং এতে জীবে প্রকরণের সূচনা হয়। 

৩. নিষেকের ফলে ডিম্বাণু পরবর্তী পর্যায়ের বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত হয়। 

৪. নিষেক জীবের ডিপ্লয়েড সংখ্যাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে। 

৫. নিষেক ডিম্বাণুর বিপাক হার ও প্রোটিন সংশ্লেষণ হার বৃদ্ধি করে। 

৬. নিষেকের মাধ্যমে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারিত হয়। 

৭. নিষেক জীবের বংশ রক্ষার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে। 

নিষেকের সুবিধা ও অসুবিধা

সুবিধাঅসুবিধা
শুক্রাণু ও ডিম্বাণু গঠনের সময় মায়ােসিস প্রক্রিয়ায় কোশবিভাজিত হয়। এইরূপ বিভাজনে ক্রশিংওভারের সময় ক্রোমােটিড খণ্ডের আদানপ্রদানের ফলে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর ক্লোমােজমের চরিত্রগত গুণের পুনর্বিন্যাস ঘটে ।দুটি বিপরীত লিঙ্গযুক্ত উদ্ভিদ পাওয়া সবসময় সম্ভব হয় না।
এই জননের ভিন্ন ভিন্ন বংশগত গুণসম্পন্ন শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটে । এর ফলে অপত্য জীবে উন্নতমানের চরিত্রগত লক্ষণ সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা থাকে এবং জীবে বৈচিত্র্য দেখা যায় ।স্ত্রী ও পুংগ্যামেটের মিলনে অনেক সময় বাধার সৃষ্টি হয় , ফলে মিলনের অভাবে অনেক অসুবিধা দেখা যায় ।
নিষেকের সুবিধা ও অসুবিধা

উদ্ভিদের নিষেক প্রক্রিয়া, সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক প্রক্রিয়া

আবৃতবীজী উদ্ভিদের যৌন জনন পদ্ধতি উগ্যামাস প্রকৃতির । অপেক্ষাকৃত বড় ও নিশ্চল স্ত্রীগ্যামেট বা ডিম্বাণু-র সাথে ছোট ও সচল পুংগ্যামেট বা শুক্রাণু-র যৌন মিলনে নিষেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ সময় গর্ভাশয় ও ডিম্বক নিঃসৃত পদার্থে Ca++” আয়ন উপস্থিত থাকে। 

নিষেক প্রক্রিয়াটিকে নিম্নলিখিত ধাপের মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়।

১. পরাগরেণুর অঙ্কুরোদগম : 

পরাগরেণু উপযুক্ত গর্ভমুক্তে পতিত হলে সেখান থেকে তরল রস শোষণ করে আকারে বড় হয় এবং অঙ্কুরিত হয়ে পরাগরেণুর পাতলা অভ্যন্তর প্রাচীর প্রসারিত হয়ে রজপথে নলরূপে বেরিয়ে আসে।

২. পরাগনালিকার গর্ভাশয়মুখী যাত্রা ও শুক্রাণু সৃষ্টি : 

পরাগনালিকাটি ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে গর্তমুক্ত থেকে গর্ভদন্ডের ভেতর দিয়ে গর্ভাশয় পর্যন্ত পৌঁছায় এবং গর্ভাশয়ের স্তর ভেদ করে ডিম্বক পর্যন্ত চলে আসে। ইতোমধ্যে পরাগনালিকার ভেতরে অবস্থিত জনন নিউক্লিয়াসটি মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে দুটি পুংগ্যামেট বা শুক্রাণু সৃষ্টি করে। অধিকার।

উদ্ভিদে পরাগনালিকা ডিম্বকরন্ধ্র পথে ডিম্বকে প্রবেশ করে (porogamy) কিছু কিছু উদ্ভিদে (যেমন, Casuarina, ঝাউ, পরাগনালিকা ডিম্বকমল দিয়ে ডিম্বকে প্রবেশ করে Chalazogany) কতিপয় ক্ষেত্রে (যেমন- . কুমড়া) পরাগনালিকা (ডিম্বকত্বক বিদীর্ণ করে প্রবেশ করে লাভmesogamy)। সাধারণত শুক্রাণুসহ একটি মাত্র নালিকাই ডিম্বকে প্রবেশ করে থাকে।

৩. পরাগনালিকার ডিম্বকস্থ ভূণথলিতে প্রবেশ ও শুক্রাণু নিক্ষিপ্তকরণ

পরাগনালিকা প্রথমে গর্ভাশয়ের স্তর ভেদ করে ডিম্বকে প্রবেশ করে। ইতোমধ্যে ডিম্বকে অবস্থিত স্ত্রীরেণু হতে ডিম্বাণু সৃষ্টি হয় (ডিম্বাণু ভ্রুণথলিতেই অবস্থান করে। পরাগনালিকা শেষ পর্যন্ত ভূণথলিতে প্রবেশ করে। ভ্রূণথলিতে প্রবেশ করে এটি সহকারী কোষের উপর দিয়ে ডিম্বাণুর কাছে পৌঁছে। পরে পরাগনালিকার অগ্রভাগ প্রসারিত হয়ে ফেটে যায় এবং পুংগ্যামেট ভ্রুণথলিতে নিক্ষিপ্ত হয়।

৪. ভূণথলিতে ডিম্বাণুর সাথে শুক্রাণুর মিলন

পরাগনালিকা থেকে ভ্রুণথলিতে নিক্ষিপ্ত দুটি পুংগ্যামেটের মধ্যে একটি ডিম্বাণুর সাথে মিলিত ও একীভূত হয়ে যায় অর্থাৎ নিষেকক্রিয়া সম্পন্ন করে। এ ধরনের মিলনকে সিগ্যামি (syngamy) বলে । এপর পুংগ্যামেটটি সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে মিলিত ও একীভূত হয়। এ ধরনের মিলনকে ত্রিমিলন (triple fusion) বলে।

দ্বি নিষেক কাকে বলে, দ্বি নিষেক কি, দ্বি-নিষেকক্রিয়া (Double fertilization)

একই সময়ে ডিম্বাণুর সাথে একটি পুংগ্যামেটের মিলন ও সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে অপর পুংগ্যামেটের মিলন প্রক্রিয়াকৈ দ্বি-নিষেকক্রিয়া বা দ্বি-গর্ভাধান প্রক্রিয়া, বলে ) ১৮৯৮ সালে নাওয়াসিন (Nawaschin) আবৃতবীজী উদ্ভিদে দ্বিনিষেক আবিষ্কার করেন।

Williams Friendman ১৯৯০ সালে (aphedranevadensis নামক নগ্নবীজী উদ্ভিদেদ্বিনিষেক আবিস্কার করেন। এ প্রক্রিয়ায় একটি পুংগ্যামেট ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় এবং অপর পুংগ্যামেট সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে মিলিত হয়; ফলে ডিম্বাণু জাইগোট-এ পরিণত হয় এবং ডিপ্লয়েড (2n) অবস্থা প্রাপ্ত হয়। অপরদিকে সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াস ট্রিপ্লয়েড (3n) অবস্থা প্রাপ্ত হয়। এটি কয়েকবার বিভাজন ও বিকাশের মাধ্যমে সস্য টিস্যু গঠন করে। এ সস্য ভ্রূণের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সস্যটিস্যুতে প্রচুর পরিমাণ স্টার্চ, লিপিড ও প্রোটিন জমা থাকে।

সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে পুংগ্যামেটের মিলনকে ত্রিমিলন বলা হয়, কারণ এতে দুটি মেরু নিউক্লিয়াস ও একটি পুংনিউক্লিয়াসসহ তিনটি নিউক্লিয়াসের মিলন ঘটে। নিষেকের পর গর্ভাশয়ে বিভিন্ন পরিবর্তনের শেষ পর্যায়ে ডিম্বক বীজ (seed)-এ এবং গর্ভাশয় ফল (fruit)-এ পরিণত হয়।

ভ্রূণের উৎপত্তি (Development of embryo)

নিষেকের পর জাইগোট পুরু প্রাচীর দিয়ে আবৃত হয় এবং কিছু সময় বিশ্রাম নেয় । জাইগোটের বিশ্রাম কেটে গেলে প্রথম বিভাজন সাধারণত আড়াআড়িভাবে হয় ফলে একটি দ্বিকোষী আদিভ্রুণ গঠিত হয় । আদিভূণ সবতলে বিভাজিত হয়ে পরিণত ভ্রূণ গঠন করে।

উদ্ভিদের নিষেক কাকে বলে

সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক প্রক্রিয়া চিত্র

মানুষের নিষেক প্রক্রিয়া, মানুষের নিষেক পদ্ধতি বর্ণনা করো

মানবদেহে যে নিষেক ঘটে তা প্রকৃতপক্ষে সেকেন্ডারি উওসাইট ও পরিণত শুক্রাণুর নিউক্লিয়াসের একীভবন। এ প্রক্রিয়ার ধাপগুলো নিমরূপ:

১. ডিম্বাণুর গাত্রে শুক্রাণুর সংযোগ (Contact of sperm on the surface of ovum) : শুক্রাণু নিঃসৃত এড্রোগ্যামোন হরমোন দু’ধরনের হয়। এই হরমোনের একটি শুক্রাণুর শক্তি সংরক্ষণ করে ও অপরটি ডিম্বাণুর চারপার্শ্বের জিলেটিন আবরণী বিগলিত করে শুক্রাণু প্রবেশে সহায়তা করে। ডিম্বাণু থেকে দুই ধরনের গাইনোগ্যামন হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনদ্বয়ের একটি শুক্রাণুর ক্রিয়া বৃদ্ধি করে। এছাড়া অপর হরমোনটি শুক্রাণুর মস্তককে আঠালো করে ডিম্বাণুর গাত্রে সংযুক্ত করতে সহায়তা করে। মূলত নিষেকের জন্য শুক্রাণুকে ডিম্বাণুর সংস্পর্শে আসতে হয়।

বিজ্ঞানী Lilac এর মতানুযায়ী ডিম্বাণুর চারপাশের জেলীময় আররণীতে ফার্টিলাইজিন (fertiligin) এবং শুক্রাণুর বহিরাবরণে অ্যান্টিফার্টি লাইজিন নামক রাসায়নিক পদার্থ থাকে। লক এবং কী (Lock & Key) পদ্ধতিতে ফার্টিলাইজিন ও অ্যান্টিফার্টিলাইজিনের মধ্যে সাময়িক বন্ধন সৃষ্টি হওয়ায় শুক্রাণু, ডিম্বাণুর দেহতলে আটকে থাকে। ফার্টিলাইজিন ও এ্যান্টিফার্টিলাইজিন পদার্থ দুই প্রজাতি নির্দিষ্ট থাকে। ফলে এক প্রজাতির শুক্রাণু অপর প্রজাতির ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হতে পারে না।

২. শুক্রাণুর প্রবেশ (Penetration of sperm) : অনেক প্রাণীর ডিম্বাণুতে মাইক্রোপাইল (micropile) নামক ছিদ্র থাকে। এক্ষেত্রে মাইক্রোপাইল ছিদ্র পথে শুক্রাণু প্রবেশ করে। এছাড়া যেসব ডিম্বাণুর মাইক্রোপাইল থাকে না সেক্ষেত্রে শুক্রাণু, ডিম্বাণুর যে কোন জায়গা দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। স্তন্যপায়ীদের ডিম্বাণুর করোনা রেডিয়েটা স্তরের ফলিকল কোষগুলি সিমেন্ট জাতীয় পদার্থ হ্যায়ালুরোণিক এসিড (hyaluronic acid) দিয়ে পরস্পর আটকে থাকে। স্তন্যপায়ীদের শুক্রাণু প্রথমত হ্যায়ালুরোনিডেজ (hyalurondase) উৎসেচকের সহায়তা ডিম্বাণুর করোনা রেডিয়েটা (corona radiata) স্তর ভেদ করে জোনা পেলুসিডা (zona pelucida) স্তরের সংস্পর্শে আসে।

অনেক বিজ্ঞানীর মতে- শুক্রাণুর অ্যাক্রোসোম থেকে তৈরি করে। লাইসিন (lysin) নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়ে ডিম্বাণু আবরণী জোনা পেলুসিডা দ্রবীভূত করে শুক্রাণুর প্রবেশ পথ কোন কোন প্রাণীর ক্ষেত্রে দেখা যায় ডিম্বাণুর সংস্পর্শে শুক্রাণু এলেই সংযোগস্থলের বহিঃতলে নিষেক কোন (fertilization cone) তৈরি হয়। এই নিষেক কোণ ফ্যাগোসাইটোসিস (phagocytosis) পদ্ধতিতে শুক্রাণুর মস্তক ও মধ্যভাগ অংশগ্রহণ করে এবং লেজ অংশ পরিত্যক্ত হয়। এভাবে শুক্রাণু গ্রহণের পর নিষেক কোণ অদৃশ্য হয়ে যায়।

শুক্রাণুর প্রবেশ (Penetration of sperm)

৩. নিষেক পর্দা তৈরি (Formation offertilization membrane) : সাধারণত শুক্রাণুর মস্তক ও মধ্যখণ্ড ডিম্বাণুর ভেতরে প্রবেশ করে। তবে স্তন্যপায়ীর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ শুক্রাণু ডিম্বাণুতে অণুপ্রবেশ করে। এক্ষেত্রে শুক্রাণু প্রবেশের সাথে সাথে ভিটেলিন আবরণী ডিম্বাণুর আবরণী থেকে কিছুটা সরে যায় ফলে দুই আবরণীর মাঝে ফাঁকা পেরিভিটেলিন স্থান (perivitelin space) সৃষ্টি হয়।

নিষেক পর্দা তৈরি

এ পেরিভিটেলিন স্থানে পুনরায় শুক্রাণু প্রবেশে বাধা সৃষ্টিকারী যে আবরণী সৃষ্টি হয় তাকে নিষেক আবরণী বলে। মূলত নিষেক আবরণী সৃষ্টির পর আর কোন শুক্রাণু ডিম্বাণুতে প্রবেশ করতে পারে না।

৪. শুক্রাণুর পরিবর্তন (Changes of sperm) : শুক্রাণুর মস্তক ও মধ্যখণ্ড ডিম্বাণুর ভেতরে অগ্রসর হওয়ার সময় এর অ্যাক্রোসোম অদৃশ্য হয়। শুক্রাণুর মস্তকে ক্রোমাটিন জালিকা সৃষ্টি হয়। এছাড়া মধ্যখণ্ডের সেন্ট্রিওল ও সেন্ট্রোসোম একটি নতুন বিভাজন কেন্দ্র সৃষ্টি করে। এ সময় শুক্রাণুর নিউক্লিয়াসটিকে পুরুষ প্রোনিউক্লিয়াস বলে।

৫. নিউক্লিয়াসদ্বয়ের মিলন বা অ্যাম্ফিমিক্সিস (Fusion of two nucleus or amphimixis) : দ্বিতীয় মিয়োটিক বিভাজনের পর ডিম্বাণুর হ্যাপ্লয়েড নিউক্লিয়াসকে স্ত্রী প্রোনিউক্লিয়াস (female pronucleus) বলে। শুক্রাণু ডিম্বাণুতে প্রবেশের পর এর নিউক্লিয়াসকে পুরুষ প্রোনিউনিউক্লিয়াস (male pronucleus) বলে। দুটো প্রোনিউক্লিয়াস এর মিলনকে (fusion) নিউক্লিয়াসদ্বয়ের মিলন বা অ্যাম্ফিমিক্সিস বলে। নিষেকের পর স্ত্রী ও পুরুষ প্রোনিউক্লিয়াসদ্বয় পরস্পরের কাছাকাছি হলে এদের আবরণী অদৃশ্য হয় ফলে ভেতেরর অংশগুলি মিলিত হয়ে একটি পিণ্ড (mass) গঠন করে। অতঃপর একটি সাধারণ আবরণী দ্বারা আবৃত হয়ে জাইগোট নিউক্লিয়াস গঠন করে। জাইগোট নিউক্লিয়াস গঠনের ফলে ডিম্বাণু জাইগোটে পরিণত হয় এবং জাইগোট গঠনের মধ্য দিয়ে নিষেক প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটে।

নিষেকের ধাপসমূহ

6. পুরুষ প্রোনিউক্লিয়াসটি ডিম্বাণুর কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হয়ে স্ত্রী প্রোনিউক্লিয়াসের সাথে একীভূত হলে ডিম্বাণুটি ডিপ্লয়েড জাইগোট (n + n = 2n)-এ পরিণত হয়।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | নিষেক

Q1. নিষেক কি

Ans – যৌন জনন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাণীর ডিম্বাণুর ও শুক্রাণুর প্রোনিউক্লিয়াসের মিলন প্রক্রিয়াকে নিষেক বলে। নিষেকের ফলে জাইগোট (Zygote) উৎপন্ন হয়। মূলত নিষেক একটি জৈবিক প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় একটি প্রজাতির হ্যাপ্লয়েড শুক্রাণু (n) ও হ্যাপ্লয়েড ডিম্বাণুর (n) প্রোনিউক্লিয়াস মিলিত হয়ে ডিপ্লয়েড জাইগোট (2n) সৃষ্টি করে। নিষেকের ফলে ডিম্বাণু সক্রিয় হয় ও জাইগোট পরিস্ফুরণের সূচনা হয়।

Q2. উদ্ভিদের নিষেক কোথায় ঘটে

Ans – উদ্ভিদের নিষেক ভ্রণস্থলীতে ঘটে।

Q3. মানবদেহে নিষেক কোথায় ঘটে

Ans – মানবদেহে ফ্যালোপিয়ান নালিতে নিষেক ঘটে।

Q4. মানবদেহে শুক্রাণুর নিষেক ক্ষমতা কত ঘন্টা

Ans – মানবদেহে শুক্রাণুর নিষেক ক্ষমতা ৭২ ঘন্টা অথাৎ ৭২ ঘন্টার মধ্যে শুক্রাণু ডিম্বাণু কে নিষিক্ত করে পেলতে পারে।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।