ঘর্ষণ কাকে বলে, ঘর্ষণ বল কাকে বলে, ঘর্ষণ বল কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

ঘর্ষণ কাকে বলে

একটি বস্তু যখন অন্য একটি বস্তুর সংস্পর্শে থেকে একের উপর দিয়ে অপরটি চলতে চেষ্টা করে বা চলতে থাকে তখন বস্তুদ্বয়ের স্পর্শতলে গতির বিরুদ্ধে একটি বাঁধার উৎপত্তি হয়, এ বাঁধাকে ঘর্ষণ বলে।

সংস্পর্শে থাকা দুটি দলের মধ্যে যখন একটি অপরটির সাপেক্ষে গতিশীল হওয়ার চেষ্টা করে, তখনতো এটির গতির বিরুদ্ধে অপলজিজে বলপ্রয়োগ করে তাকে ঘর্ষণ বল বলে।

সংজ্ঞা

দুটি বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে থেকে যদি একের ওপর দিয়ে অপরটি চলতে চেষ্টা করে তাহলে বস্তুদ্বয়ের স্পর্শ তলে এই গতির বিরুদ্ধে একটা বাধার উৎপত্তি হয়, এই বাধাকে ঘর্ষণ(friction) বলে।

বলবিদ্যায় ঘর্ষণ (ইংরেজিঃ- Friction) হল এমন একটি বল যা পরস্পরের সংস্পর্শে থাকা দুটি বস্তুর মধ্যবর্তী আপেক্ষিক গতিকে বাধা দান করে। এটি বস্তুর ভরের ওপর নির্ভরশীল। কোনো দুটি তল যখন পরস্পরের সংস্পর্শে থেকে চলতে থাকে, তখন অর্থাৎ তাদের মধ্যে আপেক্ষিক গতির সঞ্চার হলে তাদের স্পর্শতলে এই ঘর্ষণ বল তাপ ও অন্যান্য শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে প্রাচীনকালের মানুষ কাঠ বা পাথরে ঘর্ষণের মাধ্যমে আগুনও তৈরি করত।

ঘর্ষণ বল কাকে বলে

একটি খেলনা মোটরকে মাটির ওপর গড়িয়ে দিলে যতদূর যাবে সিমেন্টের মেঝের ওপর তার থেকে বেশি দূর যাবে। আবার মসৃণ মেঝেতে পুরানো জুতা পায়ে চলতে যত সুবিধা নতুন জুতা পায়ে তত নয়। এর কারণ কী ?

কোনো বস্তু আপাতদৃষ্টিতে যতই মসৃণ মনে হোক না কেন কোনো বস্তুই কিন্তু সম্পূর্ণ মসৃণ হতে পারে না। সব থেকে মসৃণ বস্তুর তলও খানিকটা উঁচু নিচু ফলে যখন কোনো বস্তু অপর বস্তুর ওপর দিয়ে চলার চেষ্টা করে তখন বস্তু দুটির উঁচু নিচু খাঁজগুলো পরস্পরের সাথে আটকে যায়, ফলে গতি বাধাপ্রাপ্ত হয় বা ঘর্ষণের উৎপত্তি হয়। আবার বস্তুদ্বয়ের তল যে স্থানে স্পর্শ করে থাকে সে স্থানের অণুগুলো পরস্পরকে আকর্ষণ করে, এর ফলেও তলদ্বয়ের মধ্যবর্তী গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়।

যে বল দ্বারা গতি বাধাপ্রাপ্ত হয় তাকে ঘর্ষণ বল( friction) বলে।

ঘর্ষণ বলের উদাহরণ

  • আকাশে প্লেন চলে সেটা একটা ঘর্ষণ।
  • পানিতে নৌকা চলে সেটা একটা ঘর্ষণ।
  • পাখি আকাশে ওড়ে সেটা একটা ঘর্ষণ।
  • গাড়ি রাস্তায় চলে সেটা একটা ঘর্ষণ।
  • গাড়ি ব্রেক কষে থামে সেটাও একটা ঘর্ষণ।

ঘর্ষণ বলের একক কি

ঘর্ষণকে একটি বাধাবল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই এর একক নিউটন।

ঘর্ষণ বল কয় প্রকার ও কি কি

ঘর্ষণ সাধারণত চার প্রকারের হয়–

  • ১. স্থিতি ঘর্ষণ (Static friction)
  • ২. পিছলানো ঘর্ষণ (Sliding friction)
  • ৩. আবর্ত ঘর্ষণ (Rolling friction)
  • ৪. প্রবাহী ঘর্ষণ (Fluid friction)।

স্থিতি ঘর্ষণ, স্থিতি ঘর্ষণ কাকে বলে

দুটি তলের একটি অপরটির সাপেক্ষে গতিশীল না হলে এদের মধ্যে যে ঘর্ষণ সৃষ্টি হয় তাকে স্থিতি ঘর্ষণ বলে। অর্থাৎ যখন একটি বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করা হয়, কিন্তু এ বল বস্তুর গতি সৃষ্টি করতে পারে না তখন স্থিতি ঘর্ষণ কাজ করে। আবার মেঝের উপর অবস্থিত একটি ভারী বস্তুকে টানার পরও গতিশীল না হলে যে ঘর্ষণ বল উৎপন্ন হয় তা হলো স্থিতি ঘর্ষণ বল। অর্থাৎ প্রযুক্ত বলের বিপরীতে স্থিতি ঘর্ষণ বল উৎপন্ন হয় এবং গতি সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ বল কাজ করে।

এই ঘর্ষণের উদাহরণ হলে মাটিতে হাঁটা।

পিছলানো ঘর্ষণ, পিছলানো ঘর্ষণ কাকে বলে

যখন একটি বস্তু অন্য একটি বস্তুর তথা তলের উপর দিয়ে পিছলিয়ে বা ঘেঁষে চলতে চেষ্টা করে বা চলে তখন যে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয় তাকে পিছলানো ঘর্ষণ বলে।

এই ঘর্ষণের উদাহরণ হলো খাতার উপর কলম বা পেন্সিল দিয়ে লিখা।

আবর্ত ঘর্ষণ, আবর্ত ঘর্ষণ কাকে বলে

যখন একটি বস্তু অপর একটি তলের উপর দিয়ে গড়িয়ে চলে তখন গতির বিরুদ্ধে যে ঘর্ষণ ক্রিয়া করে তাকে আবর্ত ঘর্ষণ বলে। সাইকেলের চাকার গতি, মার্বেলের গতি হলো আবর্ত ঘর্ষণের উদাহরণ। ভ্রমণের সময় মালামাল পরিবহনের জন্য আমরা চাকা লাগানো লাগেজ ব্যবহার করি। যদি লাগেজে চাকা লাগানো না থাকত তখন এটিকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পিছলিয়ে টেনে নিতে বেশ কষ্ট হতো। কিন্তু চাকা লাগানোর ফলে লাগেজ টেনে নেওয়া বেশ সহজতর হয়। অর্থাৎ আবর্ত ঘর্ষণ বল পিছলানো ঘর্ষণের তুলনায় কম।

এই ঘর্ষণের উদাহরণ হলো রাস্তার উপর দিয়ে সাইকেল গাড়ি , বা মাটির উপর মার্বেল গড়িয়ে চলা।

প্রবাহী ঘর্ষণ, প্রবাহী ঘর্ষণ কাকে বলে

যখন কোনো বস্তু যে কোনো প্রবাহী পদার্থ যেমন– তরল বা বায়বীয় পদার্থের মধ্যে গতিশীল থাকে তখন যে ঘর্ষণ ক্রিয়া করে তাকে প্রবাহী ঘর্ষণ বলে। যখন পুকুরে সাঁতার কাটা হয় তখন পুকুরের পানির মধ্য দিয়ে একটি বাধাকে অতিক্রম করতে হয়। আর এ বাধাই হলো প্রবাহী ঘর্ষণ। প্যারাসুট বায়ুর বাধাকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে। এখানে বায়ুর বাধা হলো এক ধরনের ঘর্ষণ বল যা পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের বিপরীতে ক্রিয়া করে। খোলা অবস্থায় প্যারাসুটের বাহিরের তলের ক্ষেত্রফল অনেক বেশি হওয়ায় বায়ুর বাধার পরিমাণও বেশি হয়, যার ফলে আরোহীর পতনের গতি অনেক হ্রাস পায়। ফলে আরোহী ধীরে ধীরে মাটিতে নিরাপদে নেমে আসে।

এই ঘর্ষণের উদাহরণ হলো পানিতে সাঁতার কাটা, বা পানিতে নৌকা চালানো।

আরো পড়তে: পরমাণু কাকে বলে, অণু কাকে বলে, অণু ও পরমাণুর মধ্যে পার্থক্য

ঘর্ষণের সুবিধা ও অসুবিধা

ঘর্ষণের সুবিধা (Advantages of Friction)

ঘর্ষণের সুবিধাগুলো নিচে দেওয়া হলো–

১. ঘর্ষণ না থাকলে আমরা হাঁটতে পারতাম না, পিছলে যেতাম।

২. কাঠে পেরেক বা স্ক্রু আটকে থাকত না।

৩. দড়িতে কোন গিরো দেওয়া সম্ভব হত না।

৪. কোন কিছু আমরা ধরে রাখতে পারতাম না।

ঘর্ষণের অসুবিধা (Disadvantages of Friction)

ঘর্ষণের অসুবিধাগুলো নিচে দেওয়া হলো–

১. যন্ত্র চলার সময় গতিশীল অংশগুলোর মধ্যে ঘর্ষণ বল ক্রিয়া করার ফলে এ অংশগুলো ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

২. যন্ত্রের যান্ত্রিক দক্ষতা বেশ কমে যায়।

৩. ঘর্ষণের ফলে অনাবশ্যক তাপ উৎপাদনের কারণে যন্ত্রের ক্ষতি হয়।

ঘর্ষণ বল কেন উৎপন্ন হয়

দুটি বস্তুর স্পর্শতলের অমসৃণতার কারণে ঘর্ষণ বল উৎপন্ন হয়। আপত দৃষ্টিতে কোনো বস্তুর তলকে মসৃণ বলে মনে হলেও অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখলে এর উপর অনেক উঁচু-নিচু খাঁজ লক্ষ করা যায়। যখন একটি বস্তু অন্য একটি বস্তুর উপর দিয়ে গতিশীল হয়, তখন উভয় বস্তুর স্পর্শতলের এ খাঁজগুলো একটির ভিতর আরেকটি ঢুকে যায় অর্থাৎ খাঁজগুলো পরস্পর আটকে যায়। এর ফলে একটি তলের উপর দিয়ে অপর তলের গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এভাবে ঘর্ষণ বলের উদ্ভব ঘটে।

যখন একটি বস্তু অন্য একটি বস্তুর উপর দিয়ে গতিশীল হয় তখন উভয় বস্তুর স্পর্শতলে বিদ্যমান ছোট ছোট খাঁজ একটি ভিতর আরেকটি ঢুকে যায়। যার ফলে একটি তলের উপর দিয়ে অপর তলের গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এভাবে বস্তুদ্বয়ের মধ্যে ঘর্ষণ বলের উৎপত্তি হয়। 

ঘর্ষণ বলের বৈশিষ্ট্য

ঘর্ষণ বলের বৈশিষ্ট্য:

  1. ঘর্ষণ বল সবসময় গতির অভিমুখে এর বিপরীত দিকে ক্রিয়া করে।
  2. ঘর্ষণ বল সবসময় সংস্পর্শে থাকা দল দুটির সঙ্গে সমান্তরালে ক্রিয়া করে।
  3. ঘর্ষণ বল স্পর্শতলের ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে না।
  4. ঘর্ষণ বল স্পর্শ তলের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
  5. স্থিত ঘর্ষণ বলের সর্বোচ্চ মান গতীয় ঘর্ষণ বলের মান এর চেয়ে কিছু বেশি।
  6. স্থিতি ঘর্ষণ বলের সর্বোচ্চ মান বা গতীয় ঘর্ষণ বল লম্ব প্রতিক্রিয়ার সমানুপাতিক।

ঘর্ষণ বল এর সূত্র, ঘর্ষণ বলের সূত্র

ঘর্ষণ বলের কোন নিদিষ্ট সূত্র নেই । ঘর্ষণ বল একটি বাধাদানকারী বল বা বিপরীতমুখী বল।

ঘর্ষণ বল = মোট প্রয়োগকৃত বল – ত্বরন সৃষ্টকারী বল।

স্থিতি ঘর্ষণ সহগ সূত্র

গাণিতিকভাবে, μ = F/N , যেখানে F হল ঘর্ষণ বল এবং N হল স্বাভাবিক বল। যেহেতু F এবং N উভয়ই বলের এককে (যেমন নিউটন বা পাউন্ড) পরিমাপ করা হয়, তাই ঘর্ষণ সহগ মাত্রাহীন।

গতি ঘর্ষণ কাকে বলে, গতি ঘর্ষণ সহগ কাকে বলে

বলপ্রয়োগ করে টানার ফলে যখন কোন বস্তু গতিশীল হয় তখন যে ঘর্ষণ বল ক্রিয়া করে, তাকে গতীয় ঘর্ষণ বলে।

একটি বস্তুর সাপেক্ষে অন্য বস্তু যখন চলমান হয় তখন যে ঘর্ষণ বল তৈরি হয় সেটি হচ্ছে গতি ঘর্ষণ।

সাইকেলের ব্রেক চেপে ধরলে সেটি সাইকেলের চাকাকে চেপে ধরে এবং ঘুরন্ত চাকাকে গতি ঘর্ষণের কারণে থামিয়ে দেয়। গতি ঘর্ষণ ওজনের উপর নির্ভর করে, ওজন যত বেশি হবে গতি ঘর্ষণ তত বেশি হবে। যদি কোনো কিছুর ভর M হয় তাহলে তার ওজন একটি বল, যার পরিমাণ w = Mg। তাহলে গতি ঘর্ষণ f কে লিখতে পারি f = W এখানে গতি ঘর্ষণ সহগ।  

গতি ঘর্ষণ সহগ সূত্র

গতীয় ঘর্ষণের (Fk ) সর্বোচ্চ মানও অভিলম্বিক প্রতিক্রিয়া বলের সমানুপাতিক ।

Fk∝ R

=> Fk= μkR

এখানে μk হলো তলের গতীয় ঘর্ষণ গুনাঙ্ক বা Coefficient of Kinetic Friction বলা হয়।

স্থিত ঘর্ষণ ও গতীয় ঘর্ষণ এর পার্থক্য

স্থিত ঘর্ষণগতীয় ঘর্ষণ
1. কোন দল সংস্পর্শে থাকা অপর তলের সাপেক্ষে গতিশীল হওয়ার চেষ্টা করেও গতিশীল হতে না পারলে সৃষ্টি হওয়া ঘর্ষণ হলো স্থিত ঘর্ষণ।1. কোন দল সংস্পর্শে থাকা একটি তলের সাপেক্ষে গতিশীল হলে সৃষ্টি হওয়া ঘর্ষণ বল হল গতীয় ঘর্ষণ।
2. প্রযুক্ত বাহ্যিক বলের মান সীমাস্থ ঘর্ষণের সমান না হওয়া পর্যন্ত বাহ্যিক বল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্থিত ঘর্ষণ এর মান বৃদ্ধি পায়।2. গতীয় ঘর্ষণ এর মান সচল বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বাহ্যিক বলের মানের ওপর নির্ভরশীল নয়।
3. স্প্রিং তুলার সাহায্যে পরিমাপ করা হয়।3. স্প্রিং তুলার সাহায্যে পরিমাপ করা যায় না
স্থিত ঘর্ষণ ও গতীয় ঘর্ষণ এর পার্থক্য

ঘর্ষণ বল কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে

ঘর্ষণ শঙ্কু কাকে বলে

কোনো ভূমির উপরে ঘর্ষণ বল ও লবদি বলের মাঝে লব্দি বল সৃষ্টি হয় বিপরীত দিকে টিক সেই লব্দী হয় । দুটি লোব্দি বল যোগ করার ফলে শঙ্কুর মত আকৃতি ধারণ করে তাকে ঘর্ষণ শঙ্কু বলে।

ঘর্ষণ শঙ্কু হল শঙ্কুর পৃষ্ঠ যা গঠিত হয় যখন দুই সদস্যের মোট প্রতিক্রিয়া শক্তি একে অপরের বিরুদ্ধে স্লাইড করতে শুরু করে এবং সাধারণ স্বাভাবিকের অক্ষে ঘূর্ণায়মান হয়।

যখন ঘর্ষণ হয়, তখন ভারসাম্য বস্তুর সমর্থন মুখের বাঁধাই বলটি স্বাভাবিক বাঁধাই এফএন এবং স্পর্শকাতর বাঁধাই Fs (যেমন স্ট্যাটিক ঘর্ষণ বল) নিয়ে গঠিত হয়, এবং ঘর্ষণ শঙ্কুটি 2 f এর একটি শীর্ষ কোণ সহ একটি শঙ্কু।

ঘর্ষণ গুণাঙ্ক কাকে বলে

পরস্পরের সংস্পর্শে অবস্থিত দুটি বস্তুর সীমাস্থ ঘর্ষণ এবং অভিলম্ব প্রতিক্রিয়া অনুপাতকে স্থিতি ঘর্ষণ গুণাঙ্ক বলে।

ঘর্ষণ কোণ কাকে বলে

দুটি স্পর্শ তলের আপেক্ষিক গতি অত্যাশন্ন হলে লম্ব প্রতিক্রিয়ার সাথে, প্রতিক্রিয়া বল ও ঘর্ষণ বলের লব্ধি প্রতিক্রিয়ায় যে কোণ সৃষ্টি করে, তাকে ঘর্ষণ কোণ বলে।

সীমাস্থ ঘর্ষণ এর ক্ষেত্রে ঘর্ষণ বল এবং অভিলম্ব প্রতিক্রিয়া অভিলম্ব প্রতিক্রিয়া যে কোন উৎপন্ন করে তাকে ঘর্ষণ কোণ বলে।

গতির উপর ঘর্ষণের প্রভাব ব্যাখ্যা কর

ঘর্ষণ বল সব সময়ই প্রয়োগ করা বলের বিপরীত দিকে কাজ করে। সেজন্য স্বাভাবিকভাবেই ঘর্ষণ বল গতিকে কমিয়ে দেয় এবং আমাদের ধারণা হতে পারে আমরা সর্বক্ষেত্রে বুঝি ঘর্ষণ কমানোর চেষ্টা করি। কিন্তু সেটি সত্যি নয়। তোমরা নিশ্চয়ই কখনো না কখনো কাদার মাঝে কোনো গাড়ি বা ট্রাককে আটতে যেতে দেখেছ। তখন গাড়ির চাকা ঘুরলেও ঘর্ষণ কম বলে কাদা থেকে গাড়ি বা ট্রাক উঠে আসতে পারে না। ঢাকা পিছলিয়ে যায়। তখন গাড়ি বা ট্রাকটিকে তুলে আনার জন্য অন্যভাবে ঢাকা এবং কাদার মধ্যে ঘর্ষণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। 

টায়ারের পৃষ্ঠ: গাড়ির টায়ার এবং রাস্তার মাঝে ঘর্ষণ থাকে বলে রাস্তার উপর দিয়ে পাড়ি যেতে পারে, যদি এই ঘর্ষণ না থাকত তাহলে গাড়ির চাকা পিছলে যেত এবং পাড়ি সামনে যেতে পারত না । এই ঘর্ষণ বাড়ানোর জন্য গাড়ির টায়ারে অনেক ধরনের খাঁজ কাটা হয়। যারা গাড়ি চালায় তার সব সময় লক্ষ রাখে তাদের গাড়ির চাকার খাঁজ কমে মসৃণ হয়ে যাচ্ছে কি না। যদি মসৃণ হয়ে যায় তাহলে ব্রেক করার পরও গাড়ি না থেমে পিছলে এগিয়ে যাবে।

রাস্তার মসৃণতা: গাড়ির টায়ারের সাথে রাস্তার ধর্ষণ বাড়ানোর জন্য রাস্তাগুলো বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। রাস্তা যদি ঠিক না থাকে তাহলে সেখানে গাড়ির চাকা পিছলিয়ে (skid) যেতে পারে। শীতের দেশে তুষারপাতের পর রাস্তায় বরফ জমে গেলে রাস্তা অসম্ভব পিচ্ছিল হয়ে যেতে পারে এবং দুর্ঘটনার পরিমাণ দশ গুণ থেকে বেশি হয়ে যায়। আমাদের দেশে রাস্তায় পানি জমে কিংবা ছোট নুড়িপাথর বা কাঁকড়ের কারণে রাস্তার ঘর্ষণ কমে যেতে পারে। তোমরা সবাই পিচঢালা পথ দেখেছ, এই পিচঢালার কারণে টায়ারের সাথে রাস্তার ঘর্ষণ বেড়ে যায়। একই সাথে বৃষ্টির পানি চুইয়ে রাস্তার ভেতরে যেতে পারে না বলে রাস্তা বেশি দিন ব্যবহার করা যায়। 

গতি নিয়ন্ত্রণ এবং ব্রেকিং বল: যানবাহন চালানোর সময় প্রয়োজন অনুসারে গাড়ির গতি বাড়াতে এবং কমাতে হয়। গাড়ির গতি যখন কম থাকে তখন সেটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়, তাই তোমরা সব সময়ই দেখে থাকবে রাস্তায় বাঁক নেওয়ার সময় বা অন্য গাড়িকে পাশ কাটিয়ে যাবার সময় ব্রেক করে গাড়ির গতি কমানো হয়। গাড়ির ব্রেক প্যাডেলে চাপ দিলে সেই চাপটি চাকার সাথে লাগানো “সু” বা প্যাডে স্থানান্তরিত হয় এবং সেটি গাড়ির চাকার ভেতরকার চাকভিটিতে চাপ দেয়। এই চাপের কারণে প্যাড এবং চাকতিতে ঘর্ষণ হয় এবং এই ঘর্ষণ বল পাড়ির ঢাকাকে থামিয়ে দেয়। 

ঘর্ষণ একটি প্রয়োজনীয় উপদ্রব ব্যাখ্যা কর

ঘর্ষণের কারণে তাপশক্তি তৈরি হয়। শীতের দিনে আমরা হাত খসে হাত উত্তপ্ত করি। গাড়ির ইঞ্জিন যে গরম হয়ে উঠে সেটিও ঘটে ঘর্ষণের কারণে। কাজেই ঘর্ষণের কারণে অপ্রয়োজনীয় তাপ সৃষ্টি করে শক্তির অপচয় হয়। গাড়ি, প্লেন, জাহাজ, সাবমেরিনকে ঘর্ষণ বলকে পরাস্ত করে এগিয়ে যেতে হয়, সেখানেও অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ করতে হয়। এভাবে দেখা হলে মনে হতে পারে ঘর্ষণ বুঝি আমাদের জীবনের একটি উপদ্রব ছাড়া আর কিছু নয়। 

আবার আমরা এর মাঝে দেখেছি ঘর্ষণ আছে বলেই আমরা হাঁটতে পারি, রাস্তায় গাড়ি চলতে পারে, কাগজে পেনসিল কলম দিয়ে লিখতে পারি, দালান গড়ে তুলতে পারি, প্যারাস্যুট দিয়ে নিরাপদে নিচে নামতে পারি। আমরা এ ধরনের অসংখ্য উদাহরণ দিতে পারি যেখানে ঘর্ষণ না থাকলে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে পারতাম না । 

কাজেই ঘর্ষণকে উপদ্রব মনে করা হলেও আমাদের মেনে নিতে হবে এটি আমাদের জীবনের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপদ্রব। 

ঘর্ষণ বল একটি অসংরক্ষণশীল বল কেন

ঘর্ষণ বল একটি অসংরক্ষণশীল বল। ঘর্ষণ বল সর্বদা গতির বিরুদ্ধে ক্রিয়া করে। তাই একটি পূর্ণ চক্রের প্রতিটি অংশে ঘর্ষণ বল দ্বারা কৃতকাজ ঋণাত্মক। ফলে একটি পূর্ণ চক্রে ঘর্ষণ বল দ্বারা সম্পাদিত কাজের পরিমাণ কখনও শূন্য হতে পারে না। আবার ঘর্ষণ বলের ক্ষেত্রে দুটি নির্দিষ্ট বিন্দুর মধ্যে সম্পন্ন কাজের পরিমাণ কণাটির গতিপথের যেকোনো দুটি বিন্দুর সংযোগকারী ভিন্ন ভিন্ন পথে একটি বস্তুকে ঠেলে নিয়ে গেলে অতিক্রান্ত দূরত্বের পরিবর্তন হয় এবং তার ফলে ঘর্ষণ বল দ্বারা সম্পন্ন কাজের পরিমাণও পরিবর্তিত হয়। এই মান পথের ওপর নির্ভর করে। তাই ঘর্ষণ বল একটি অসংরক্ষণশীল বল ।

কোনো বস্তু একটি বিন্দু হতে যাত্রা শুরু করে নির্দিষ্ট পথে ঘুরে আবার একই বিন্দুতে ফেরত আসলে যদি বিবেচনাধীন বল দ্বারা কৃতকাজ শূন্য হয় তবে ঐ বলকে সংরক্ষণশীল বল বলা হবে। মহাকর্ষ বল ও তড়িৎ বলের ক্ষেত্রে এরূপ সম্ভব। কারণ মহাকর্ষ বল বা তড়িৎ বলের দিক বস্তুর গতির দিকের ওপর নির্ভর করে না।

তবে ঘর্ষণ বলের দিক সর্বদা বস্তুর গতির বিপরীতে হয়। তাই বস্তুর চলার পথে ঘর্ষণ বল দ্বারা সর্বদা ঋণাত্মক কাজ সম্পন্ন হয়। তখন বস্তুটি আদি বিন্দুতে ফিরে আসলেও ঘর্ষণ বল দ্বারা মোট কৃতকাজ শূন্য নয়। বরং ঋণাত্মক। এ কারণে ঘর্ষণ বল সংরক্ষণশীল বল নয়।

সান্দ্রতা ও ঘর্ষণ এর মধ্যে পার্থক্য

ঘর্ষণ বল ও সান্দ্রতা বলের মধ্যে পার্থক্য হলো:-

  • ঘর্ষণ বলের মান স্পর্শতলের ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে না, সান্দ্রতা বলের মান প্রবাহীর স্তরদ্বয়ের ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে ।
  • এ ছাড়াও, সান্দ্রতা বল প্রবাহীর স্তরদ্বয়ের বেগ ও স্থির তল থেকে এর দূরত্বের উপর নির্ভর করে । বিভিন্ন তরলের সান্দ্রতা বিভিন্ন রকম । তেল, দুধ ও আলকাতরার মধ্যে আলকাতরার সান্দ্রতা সবচেয়ে বেশি । পানির তুলনায় মধুর সান্দ্রতা বেশি । 
আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | ঘর্ষণ

Q1. কোন ঘর্ষণ সবচেয়ে কম, সবচেয়ে দুর্বল ঘর্ষণ বল কোনটি

Ans – চারটি মৌলিক বলের মধ্যে মহাকর্ষ বল সবচেয়ে দুর্বল।

Q2. গতি ঘর্ষণ সহগ এর মান কত

Ans – সাধারণত ঘর্ষণ সহগের মান 0 এবং 1 এর মধ্যে থাকে।

Q3. ঘর্ষণ বল সর্বদা কোন দিকে কাজ করে

Ans – ঘর্ষণ বল সর্বদা কোনো বস্তু যেদিকে সরে যাচ্ছে তার বিপরীত দিকে কাজ করে, অর্থাৎ বলের অভিমুখের বিপরীত দিকে ।

Q4. ঘর্ষণের ফলে কোন তড়িৎ উৎপন্ন হয়

Ans – ঘর্ষণের ফলে এক বস্তু হতে অন্য বস্তুতে ইলেকট্রন স্থানান্তরিত হয়। তখন বস্তুসমূহ তড়িতাহিত হয়। ইলেকট্রনের চার্জধর্মী আচরণের কারণে বস্তু আধানগ্রস্ত হয়। এভাবে তড়িৎ উৎপত্তি হয়।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।