WBBSE History, Itihas | Farashi Biplob | Question Answer
18 এবং 19 শতকে ত্রিভুজাকার ক্রীতদাস ব্যবসার ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:
- ইউরোপ, আফ্রিকা ও আমেরিকার মধ্যে ত্রিভুজাকার দাস বাণিজ্য চলত।
- সপ্তদশ শতাব্দীতে দাস ব্যবসা শুরু হয়। ফরাসি বণিকরা বোর্দো বা নান্টেস বন্দর থেকে আফ্রিকার উপকূলে যাত্রা করেছিল, যেখানে তারা স্থানীয় সর্দারদের কাছ থেকে ক্রীতদাস কিনেছিল।
- আটলান্টিক পেরিয়ে ক্যারিবিয়ান পর্যন্ত তিন মাসের দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার জন্য ব্র্যান্ড এবং শিকল পরা, দাসদের শক্তভাবে জাহাজে বস্তাবন্দী করা হয়েছিল। সেখানে সেগুলো বাগান মালিকদের কাছে বিক্রি করা হয়।
- দাস শ্রমের শোষণের ফলে ইউরোপের বাজারে চিনি, কফি এবং নীলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়েছিল।
- বোর্দো এবং নান্টেসের মতো বন্দর শহরগুলি তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য ক্রীতদাস ব্যবসার বিকাশ ঘটায়।
ক্রীতদাস, ক্রীতদাস বলতে কী বোঝায়, ক্রীতদাস অর্থ, ক্রীতদাস কাকে বলে
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দাস বা ক্রীতদাসের সংজ্ঞা দেওয়া হয়ে থাকে। এগুলি হল—[1] সাধারণত, যেসব শর্তের ওপর ভিত্তি করে কোনাে বস্তু বা সম্পদকে কোনো ব্যক্তির সম্পত্তি বলা চলে, সেগুলির কোনাে এক বা একাধিক শর্ত যদি কোনাে মানুষের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য হলে, ওই মানুষটিকে ‘দাস’ বলা হয়। সম্পত্তির মতাে ওই মানুষটিরও একজন মালিক বা প্রভু থাকে। [2] অ্যারিস্ট বলেছেন যে, “যে ব্যক্তি মানুষ হয়েও সম্পত্তি মাত্র, সে অন্যের অধীন। সে বিষয়েসামগ্রী পরিচালনা বা দেখাশােনার উদ্দেশ্য নিযুক্ত যন্ত্র মাত্র এবং তার সত্তা মালিকের সত্তার থেকে পৃথক৷” তিনি আরও বলেন যে, দাসপ্রথা প্রকৃতির নিয়ম এবং দাসদের পক্ষে তা কল্যাণকর। [3] ডিও ক্রাইস্টম বলেছেন যে, “গবাদি পশু বা অন্য কোনো সম্পত্তির মতােই দাসেরও প্রভু থাকে। প্রভু নিজের ইচ্ছামতাে তার অধীনস্থ দাসকে ব্যবহার করতে পারে।”
প্রাচীন গ্রিসের ক্রীতদাস ব্যবস্থা
প্রাচীন গ্রিসের দাসপ্রথার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। নীচে এগুলি উল্লেখ করা হল-
[1] দাস সৃষ্টি:
প্রাচীন গ্রিসে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে দাসপ্রথা ব্যাপক আকার ধারণ করে। এযুগে—[i] শ্যুপক্ষের বিভিন্ন যুদ্ধবন্দি ও জলদস্যুদের বন্দি করে, [ii] বাণিজ্যজাহাজ আক্রমণ করে বা সমুদ্র-তীরবর্তী জনপদ থেকে লােকজন ধরে নিয়ে, [iii] ঋণপরিশােধে ব্যর্থ ব্যক্তি বা অপহৃত শিশুকে দাস হিসেবে বিক্রি করে, [iv] কখনাে কখনাে অভাবের তাড়নায় বা অর্থলােভে কোনাে পিতা তার সন্তানকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দাসে পরিণত করা হত।
[2] দাস আমদানি:
চাহিদার তুলনায় সেখানে যুদ্ধবন্দি ক্রীতদাসের সংখ্যা বেশ কম ছিল। এজন্য বাইরে থেকে ক্রীতদাস এনে সেই চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা হত। গ্রিসের বেশিরভাগ দাসই বিদেশ থেকে আসত।
[3] দাস-বাজার:
গ্রিসে ক্রীতদাস কেনাবেচা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবসায় পরিণত হয়েছিল এবং দাস কেনাবেচার জন্য অধিকাংশ গ্রিক রাষ্ট্রেই দাস-বাজার ছিল। ‘কিওস’ নামে নগর- রাষ্ট্রটিতে সর্বপ্রথম অর্থের বিনিময়ে দাস কেনাবেচা হত বলে ঐতিহাসিকরা জানিয়েছেন। এরপর একে একে এথেন্স, করিন্থ, ডেলস, ইজিনা প্রভৃতি নগররাষ্ট্রে দাস বাজার গড়ে ওঠে।
[4] কাজের দায়িত্ব:
প্রিসে দাসদের বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত করা হত। এগুলি হল—[i] অধিকাংশ দাস গৃহভৃত্য হিসেবে কাজ করত| প্রভুর গৃহে রান্নাবান্না, শস্য ঝাড়াই, কাপড় বােনা, গৃহস্থালির যাবতীয় কাজ ছাড়াও প্রভুর সেবা, জিনিসপত্র বহন করা প্রভৃতি কাজও দাসরা করত। [ii] প্রভু তার দাসকে নিজের ব্যাবসাক্ষেত্রে বা উৎপাদনকার্যে শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করে বা অন্যত্র ভাড়া খাটিয়ে প্রভূত অর্থ উপার্জন করত।
উপসংহার:
প্রাচীন গ্রিসে ক্রীতদাসদের অবস্থান ছিল সমাজের সবচেয়ে নীচের স্তরে। গ্রিসের বিভিন্ন নগররাষ্ট্রে এদের সামাজিক অবস্থানের প্রকৃতিগত কিছু পার্থক্য থাকলেও ক্রীতদাসপ্রথার মূল কাঠামােটি কিন্তু সব জায়গায় একই রকম ছিল।
রোমের ক্রীতদাস, রোমের ক্রীতদাস প্রথা
রােমের ক্রীতদাস প্রথার কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। এগুলি হল一
প্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে জীবনধারণ:
রােমে ক্রীতদাসদের জীবনে কোনাে ধরনের স্বাধীনতা ছিল না। তারা ছিল তাদের প্রভুর একান্ত ব্যক্তিগত সম্পত্তি। ক্রীতদাসদের সন্তানসন্ততিরাও জন্মসূত্রে ক্রীতদাস হত। প্রভুর কাছে। ক্রীতদাসের জীবনের মূল্য ছিল গৃহপালিত গােরুছাগলের মতােই।
আইনি অধিকার থেকে বঞ্চনা:
রােমের ক্রীতদাসরা সমস্ত ধরনের আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। কোনাে ক্রীতদাস আইনগতভাবে কোনাে সম্পত্তির মালিক বা বিবাহ করার অধিকারী হতে পারত না। তারা রােমের নির্বাচনে প্রার্থী হতে বা সেনাবাহিনীতে উচ্চপদে অভিষিক্ত হতে পারত না।
বেগার শ্রম:
প্রভু তার অধীনস্থ ক্রীতদাসকে গৃহে, কৃষিক্ষেত্রে, ব্যাবসায়, খামারবাড়িতে যাবতীয় কাজ এবং রাষ্ট্রের পরিশ্রমসাধ্য নির্মাণকার্যগুলি সম্পন্ন করত। এর বিনিময়ে তাদের জন্য শুধু যৎসামান্য গ্রাসাচ্ছেদন ও নামমাত্র বিশ্রামের সুযােগ থাকত।
শারীরিক নির্যাতন:
ক্রীতদাসের কাছ থেকে অধিক শ্রম আদায় করতে বা ক্রীতদাস পালানাের চেষ্টা করলে তাকে চাবুকের তীব্র আঘাত, উত্তপ্ত লােহার ছ্যাকা প্রভৃতি অমানুষিক দৈহিক শাস্তি দেওয়া হত।
বিক্রি ও হত্যা:
প্রভুর কাছে তার অধীনস্থ ক্রীতদাসদের কোনােরকম মানবিক মূল্য ছিল না। প্রভু ইচ্ছা করলেই তার অধীনস্থ ক্রীতদাসকে বিক্রি করতে পারত, এমনকি তাদের হত্যাও করতে পারত।
রােমে ক্রীতদাস প্রথার ব্যাপকতা
প্রাচীন রােমান সাম্রাজ্যে এই প্রথা সবচেয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল। প্রাচীন রােমের সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতির সবক্ষেত্রেই ক্রীতদাস প্রথার গভীর প্রভাব ছিল।
ক্রীতদাসের সংখ্যা:
প্রাচীন রােমে ক্রীতদাসের সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণেই ছিল। বসু রােমান নাগরিকই কিছু না-কিছু সংখ্যক ক্রীতদাসের মালিক ছিলেন। জনৈক লেখকের মতে, কোনাে কোনাে ধনী ব্যক্তি ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার ক্রীতদাসের মালিক ছিলেন।
ক্রীতদাসদের অমানুষিক শ্রম:
সমগ্র রােমান সাম্রাজ্য জুড়ে প্রভুরা তাদের অধীনস্থ ক্রীতদাসদের শ্রম শােষণ করত। ক্রীতদাসদের শ্রমেই রােমের বেশিরভাগ গৃহকাৰ্য, কৃষি উৎপাদন, প্রভুর ব্যাবসাবাণিজ্য, প্রাসাদ-রাস্তাঘাট-সেতু নির্মাণ, জলপ্রণালী নির্মাণকার্য প্রভৃতি সম্পন্ন হত।
নাগরিকদের ক্রীতদাস-নির্ভরতা:
ইতিহাসবিদ গ্রান্ট বলেছেন যে, “স্বাধীন রােমান নাগরিকরা ক্রীতদাসদের শ্রমের ওপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন যে, তারা নিজেদের পােশাক পরা, স্নান করতে যাওয়ার সময় পােশাক বহন করা, রান্নাবান্না প্রভৃতি অতি সাধারণ কাজগুলিও ক্রীতদাসদের সহায়তায় সম্পন্ন করতেন।
রাষ্ট্রের ভূমিকা:
ক্রীতদাসের মালিকের কাছ থেকে সরকার ক্রীতদাস রাখার কর হিসেবে প্রচুর অর্থ আদায় করত। সুতরাং, প্রচুর পরিমাণে কর আদায়ের উদ্দেশ্যে সরকার ক্রীতদাস প্রথাকে সমর্থন করত। এ ছাড়াও রাষ্ট্র, সেনাবাহিনীতে প্রচুর ক্রীতদাসকে সামরিক কাজে নিযুক্ত করত।
উপসংহার: প্রাচীনযুগে বিভিন্ন সভ্যতায় বা সাম্রাজ্যে ব্লীতদাস প্রথার প্রচলন থাকলেও অন্যান্য সভ্যতার তুলনায় রােমান সভ্যতায় ক্রীতদাসরা অনেক বেশি নির্যাতনের শিকার হত। সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হয়ে ক্রীতদাসরা মাঝেমধ্যেই বিদ্রোহের পথে পা বাড়াত।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আরো বিশদে পড়ার জন্য
অল ইন ওয়ান ইতিহাস রেফারেন্স
ক্লাস – 9 এর জন্য.
ক্রীতদাস কাকে বলে
যেসব শর্তের ওপর ভিত্তি করে কোনাে বস্তু বা সম্পদকে কোনো ব্যক্তির সম্পত্তি বলা চলে, সেগুলির কোনাে এক বা একাধিক শর্ত যদি কোনাে মানুষের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য হলে, ওই মানুষটিকে ‘দাস’ বলা হয়। সম্পত্তির মতাে ওই মানুষটিরও একজন মালিক বা প্রভু থাকে।