দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা প্রশ্ন উত্তর

ঔপনিবেশিক মানে কি, ঔপনিবেশিক যুগ বলতে কী বোঝো?

উত্তর : বাংলায় ইংরেজদের শাসনকালকে ঔপনিবেশিক যুগ বলা হয়।

বাংলায় ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আগমন চলছিল অনেক দিন থেকে। এদের মধ্যে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যায়। ১৭৫৭ সালে বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলাকে পরাজিত করে তারা বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করে। এভাবে ১৭৫৭ সাল থেকে বাংলাদেশে ব্রিটিশ বা ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলার ইতিহাসে এই যুগটি ঔপনিবেশিক যুগ নামে পরিচিত।

ঔপনিবেশিক শাসন কাকে বলে?

উত্তর : এক দেশের মানুষ অন্য দেশের ওপর শাসন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করলে তাকে ঔপনিবেশিক শাসন বলে।

সাধারণত কোনো বিদেশি শক্তি কোনো দেশ দখল করে শাসন প্রতিষ্ঠা করলেই তাকে ঔপনিবেশিক শাসন বলা যায় না, ঔপনিবেশিক শাসনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দখলদার শক্তি চিরস্থায়ীভাবে শাসন প্রতিষ্ঠা করতে আসে না। তারা জানে একদিন তাদের এই শাসন গুটিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। তবে যত দিন শাসক হিসেবে থাকবে তত দিন সেই দেশের ধন-সম্পদ নিজ দেশে পাচার করবে। তারপর যখন তাদের শাসনের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে বা অন্য কোনো কারণে অন্যের দেশ শাসন করা আর সুবিধাজনক মনে হবে না, তখন ফিরে যাবে নিজ দেশে। এভাবে অন্য কোনো দেশের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকে ঔপনিবেশিক শাসন বলে।

ঔপনিবেশিক যুগ বলতে কী বোঝো?

উত্তর : বাংলায় ইংরেজদের শাসনকালকে ঔপনিবেশিক যুগ বলা হয়।

বাংলায় ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আগমন চলছিল অনেক দিন থেকে। এদের মধ্যে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যায়। ১৭৫৭ সালে বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলাকে পরাজিত করে তারা বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করে। এভাবে ১৭৫৭ সাল থেকে বাংলাদেশে ব্রিটিশ বা ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলার ইতিহাসে এই যুগটি ঔপনিবেশিক যুগ নামে পরিচিত। 

ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিক্রিয়া সহযোগিতা ও বিদ্রোহ, ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিক্রিয়া প্রশ্ন উত্তর, ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন

রাওলাট আইন কি, রাওলাট আইন কী

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে একদিকে মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন প্রবর্তন করে জনগণকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে, অন্যদিকে ভারতীয়দের ব্রিটিশবিরােধী গণ-আন্দোলন ও বৈপ্লবিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে সরকার ইংল্যান্ডের বিচারপতি স্যার সিডনি রাওলাট-এর সভাপতিত্বে পাঁচজন সদস্যকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন (১৯১৮ খ্রি.) করে।

এটি ‘রাওলাট কমিশন’ বা ‘সিডিশন কমিশন’ নামে পরিচিত। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভায় ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে এক দমনমূলক বিল উত্থাপিত হয়। ভারতীয় সদস্যদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে ১৮ মার্চ বিলটি আইনে পরিণত হয়। এটি ‘রাওলাট আইন’ (Rowlatt Act) নামে পরিচিত।

রাওলাট আইন, রাওলাট আইন কবে পাস হয়

১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মার্চ ব্রিটিশ সরকার এক সন্ত্রাসবাদ বিরোধী এবং দমনমূলক আইন প্রণয়ন করেন । এই আইনই সাধারণভাবে কুখ্যাত ‘রাউলাট আইন’ নামে পরিচিত ।

রাওলাট কমিশন কি

ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে ১৯১৮ সালে স্যার সিডনি রাওলাট – এর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয় । এটাই রাওলাট কমিশন ।

রাওলাট আইনের উদ্দেশ্য কী ছিল, রাওলাট আইনের পিছনে কি উদ্দেশ্য ছিল

রাওলাট আইন প্রবর্তনের কারণ গুলি হলো : –

  • [1] শ্বেতাঙ্গদের খুশি করার চেষ্টা: ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কারের মাধ্যমে সরকার ভারতীয়দের কিছুটা তােষণ ও তাদের কিছু কিছু স্বায়ত্বশাসনের অধিকার দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতাসম্পন্ন কিছু কিছু ইংরেজ অসন্তুষ্ট হয়। এই শ্রেণিকে খুশি করার উদ্দেশ্যে সরকার ভারতীয়দের ওপর তীব্র দমনমূলক আইন চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে।
  • [2] সরকারের সুপারিশ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কালে ভারতের ব্রিটিশ সরকার বিলাতের প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেনকে এক পত্রে জানায় যে, যুদ্ধের পর ভারতের পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। এই সম্ভাব্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উদ্দেশ্যে আগাম ব্যবস্থা নিতে ভারত সরকার প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেনকে অনুরােধ করে।
  • [3] ভারতরক্ষা আইন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতে ব্রিটিশবিরােধী সব ধরনের আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সরকার ভারতরক্ষা আইন (Defence of India Act, 1915) নামে একটি দমনমূলক আইন প্রবর্তন করেছিল। যুদ্ধ শেষে এই আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এই অবস্থায় যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ভারতরক্ষা আইনের মতাে একটি নতুন দমনমূলক আইন প্রণয়নের প্রয়ােজন অনুভব করে।
  • [4] মুসলিমদের ক্ষোভ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মুসলিম জগতের ধর্মগুরু তুরস্কের খলিফা ইংল্যান্ডের বিপক্ষ জোটের হয়ে যুদ্ধে যােগ দিয়েছিলেন। এজন্য যুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার পরাজিত তুরস্কের খলিফার ক্ষমতা যথেষ্ট পরিমাণে খর্ব করে। তারা তুরস্কের ব্যবচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়। এতে ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায় ব্রিটিশদের ওপর অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হয়ে খিলাফৎ আন্দোলন শুরু করে।
  • [5] গণ আন্দোলন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, অনাবৃষ্টির ফলে শস্যহানি, বেকারত্ব, মহামারির প্রকোপ প্রভৃতির ফলে দেশবাসীর অবস্থা শােচনীয় হয়ে ওঠে। সরকার এ বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকায় দেশবাসী ব্রিটিশ সরকারের ওপর অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হয়। এই ক্ষোভ দিকে দিকে গণ আন্দোলন রূপে ছড়িয়ে পড়ে।
  • [6] শ্বেতাঙ্গদের অমানবিকতা: দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ অন্যান্য ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিতে প্রচুর ভারতীয় কর্মরত ছিল। সেখানে ব্রিটিশ সরকার ও শ্বেতাঙ্গরা ভারতীয়দের সঙ্গে খুবই অমানবিক আচরণ করত। এই খবর ভারতে ছড়িয়ে পড়লে ভারতীয়রা এদেশের সরকার ও শ্বেতাঙ্গদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়।
  • [7] বিপ্লববাদের প্রসার: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতে সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। বিপ্লবীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শ্বেতাঙ্গদের ওপর আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড চালাতে শুরু করলে সরকার অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সরকার ভারতীয়দের ওপর প্রচণ্ড দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে সংকটজনক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে।
  • [8] সিডিশন কমিটি: ভারতে ব্রিটিশবিরােধী ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ইংল্যান্ডের বিচারপতি স্যার সিডনি রাওলাটের সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠন করে। এটি ‘সিডিশন কমিটি’ নামে পরিচিত। এই কমিটি ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে তার প্রতিবেদন পেশ করে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ কুখ্যাত রাওলাট আইন পাস হয়।

রাওলাট, রাওলাট সত্যাগ্রহ, রাওলাট সত্যাগ্রহ কি

গান্ধিজি একসময় ভারতে ব্রিটিশ শাসনকে ‘ঈশ্বরের আশীর্বাদ’ বলে মনে করলেও কুখ্যাত রাওলাট আইনের সুপারিশগুলি কংগ্রেসের উদীয়মান নেতা মহাত্মা গান্ধিকে বিস্মিত করে। এই আইনের পরিপ্রেক্ষিতে গান্ধিজি ব্রিটিশ শাসনকে ‘শয়তানবাদ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র সত্যাগ্রহ আন্দোলন গড়ে তােলেন। এই আন্দোলন ‘রাওলাট সত্যাগ্রহ’ নামে পরিচিত।

ঔপনিবেশিক অর্থনীতির চরিত্র, ঔপনিবেশিক অর্থনীতির চরিত্র প্রশ্ন উত্তর

বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কত খ্রিস্টাব্দে ঘটে ?

 উত্তর:- ১৭৬৯ – ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ঘটে।

কোন উপন্যাসে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের কাহিনির উল্লেখ আছে ?

উত্তর:- আনন্দমঠ উপন্যাসে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের কাহিনির উল্লেখ আছে।

কে, কত খ্রিস্টাব্দে সুবা বাংলা থেকে দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটান ?

উত্তর:-  ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে বাংলার গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস সুবা-বাংলা থেকে দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটান।

ইজারাদারি ব্যবস্থা কবে চালু হয় ?

উত্তর:- ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ইজারাদারি ব্যবস্থা চালু হয়।

কত খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হয় ?

 উত্তর:- ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হয়।

কে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেছিলেন ?

 উত্তর:- লর্ড কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেছিলেন।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কাদের সঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে ?

উত্তর:- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জমিদারদের সঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অপর নাম কী ?

উত্তর:- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অপর নাম জমিদারি ব্যবস্থা। 

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ভারতের কোথায় চালু হয় ?

উত্তর:-  সুবা বাংলায় (বাংলা-বিহার-ওড়িশা) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয়।

‘আওয়ার’ কী ?

উত্তর:-  ‘আবওয়াব’ হল ঔপনিবেশিক শাসনাধীন ভারতবর্ষে প্রচলিত এক ধরনের বেআইনি কর।

‘সূর্যাস্ত আইন’ কোন্ বন্দোবস্তের সঙ্গে সম্পর্কিত ?

উত্তর:- ‘সূর্যাস্ত আইন’ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সঙ্গে সম্পর্কিত।

বঙ্গদেশের কৃষক প্রবন্ধটি কার লেখা ?

 উত্তর:-  বঙ্গাদেশের কৃষক প্রবন্ধটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা।

মহলওয়ারি বন্দোবস্ত কোথায় চালু হয়?

উত্তর:- মহলওয়ারি বন্দোবস্ত উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিস্তৃত এলাকায় চালু হয়।

ভারতে রেলপথ কবে চালু হয়?

উত্তর:- ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতে রেলপথ চালু হয়।

রায়তওয়ারি ও মহলওয়ারি বন্দোবস্তের মধ্যে একটি পার্থক্য লেখো।

উত্তর:- রায়তওয়ারি বন্দোবস্তে সরাসরি কৃষকের সঙ্গে ভূমি বন্দোবস্ত করা হত এবং মহলওয়ারি ব্যবস্থায় কয়েকটি মহল গ্রামের সমষ্টির সঙ্গে ভূমিরাজস্ব বন্দোবস্ত করা হত।

ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন

  • ভারতে ব্রিটিশ সরকার ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে অরণ্য সনদ দ্বারা ভারতীয় অরন্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করে৷ এর দ্বারা জনগণ কর্তৃক অরন্যের কাঠ সংগ্রহ ও কাঠের ব্যবসার উপর সরকার বাধানিষেধ আরোপ করে ৷শাল ,সেগুন প্রভৃতি মূল্যবান কাঠ সরকারের সম্পত্তিতে পরিণত হয় ৷
  • অরণ্যবাসী মানুষ তা সংগ্রহ করার অধিকার হারায়৷ সরকার ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে বনবিভাগ গঠন করে এবং ডায়াট্রিক ব্রান্ডিস নামে জৈনেক জার্বমানকে বিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল হিসেবে নিয়োগ করে ৷
  • সরকার ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম ভারতীয় অরণ্য আইন পাস করে এদেশের অরণ্য সম্পদের উপর ভারতীয়দের অধিকার খর্ব করে এবং অরণ্যকে সরকারি সংরণের আওতায় নিয়ে আসে ৷সরকার ঘোষণা করে যে অরণ্যে ঘেরা যেকোনো ভূমি হলো সরকারের সম্পত্তি ৷
  • ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ভারতীয় অরণ্য আইনের দ্বারা সরকার অরন্যের ওপর নিজের অধিকার আরো সুপ্রতিষ্ঠিত করে ৷ সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে অন্যের ওপর নির্ভরশীল ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায় তাদের বহু বছরের অরণ্যের অধিকার হারিয়ে প্রচন্ড দুর্দশার শিকার হয়৷ ফলে তারা সরকারের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েই বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায় ৷
  • এইসব বিদ্রোহ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল চুয়াড় বিদ্রোহ ,কোল বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, মুন্ডা বিদ্রোহ, ভিল বিদ্রোহ প্রভৃতি ৷
  • বহু আদিবাসী জীবিকা নির্বাহে ব্যর্থ হয়ে চুরি-ডাকাতি শুরু করে বা বসতি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয় ৷
  • সরকার ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ১৯১১খ্রিস্টাব্দে ১৯২৪খ্রিস্টাব্দে পৃথক পৃথক ক্রিমিনাল ট্রাইবস অ্যাক্ট পাশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী আদিবাসীদের শায়েস্তা করতে থাকে ৷

ঔপনিবেশিক অরণ্য আইনের উদ্দেশ্য কি ছিল

উঃ- প্রথমে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে এবং পরে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ইংরেজ সরকার যে দুটি অরণ্য আইন প্রণয়ন করেছিল তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ঔপনিবেশিক স্বার্থ রক্ষা করা ও আধিপত্য স্থাপন করা ।

  • ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর সম্প্রসারণ এবং ভারতে রেলপথ বিস্তারের লক্ষ্যে কাঠের স্লিপার তৈরির জন্য ভারতে বনজ সম্পদের ওপর ঔপনিবেশিক সরকারের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল ।
  • ভারতের সুবিস্তৃত বনাঞ্চলের জমিকে পরিষ্কার করে কৃষিযোগ্য করে তোলার উদ্দেশ্য যেমন ছিল তেমনি আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে ঝুম চাষের পরিবর্তে স্থায়ী কৃষিকাজে অভ্যস্ত করে তোলার তাগিদ ছিল ।
  • ব্রিটিশ সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষিজমির সম্প্রসারণ ঘটিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং বনজ সম্পদকে বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করে আয় ও মুনাফা বৃদ্ধি করা ।
  • এটাও ঠিক যে ব্রিটিশ সরকার ভারতের বনভূমিকে সংরক্ষিত অরণ্য, সুরক্ষিত অরণ্য এবং গ্রামীণ (অশ্রেণিভুক্ত) অরণ্য এই তিনটি ভাগে বিভক্ত করে বন সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিল । তবে ঔপনিবেশিক স্বার্থ ও মুনাফা বজায় রাখতে গিয়ে অরণ্য আইন প্রয়োগের মাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বাধিকার, জীবন ও জীবিকার মূলে কুঠারাঘাত করেছিল এবং যার ফলে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহ ।

ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতের কৃষক বিদ্রোহ

অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে এবং উনবিংশ শতকের শুরু থেকেই ভারতের উপনিবেশিক শাসনে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী বিভিন্ন উপজাতি ও কৃষকদের ওপর নানা ভাবে অত্যাচার শুরু হতে থাকে এবং তারা নানাভাবে শোষিত হতে থাকে এজন্য তারা শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহের পথ বেছে নিয়েছিল।

উপনিবেশিক শাসনে যে সমস্ত কৃষক এবং আদিবাসী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্য মধ্যে অন্যতম হল সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ, সাঁওতা বিদ্রোহ, মুন্ডা বিদ্রোহ , কোল বিদ্রোহ, ভিল বিদ্রোহ ইত্যাদি। প্রধানত যে সমস্ত কারণগুলি এ সমস্ত বিদ্রোহের পেছনে দায়ী ছিল সেগুলি হল- 

  • ১. ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা: ভারতে কোম্পানির শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকেই কম্পানি নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তারা নিজেদের রাজস্ব ও মুনাফা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছিলেন। এজন্য প্রবর্তিত হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা। এইসব নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা একদিকে যেমন কৃষক ও উপজাতিদের  কাছে নতুন ছিল তেমনি ভূমি রাজস্ব হারও ছিল বিশাল। অত্যাধিক হারে রাজস্ব দিতে অসমর্থ কৃষক ও উপজাতিদের ওপর করের বোঝা চাপানো হয় আবার অনেক সময় তাদের বেগার খাটানো  হয়। ফলে তারা বিদ্রোহের পথ বেছে নেয় ।
  • ২. মহাজনী শোষণ: ব্রিটিশ আমলে কৃষক ও উপজাতিরা যখন কর দিতে অসমর্থিত অনেকই মহাজনদের দ্বারস্থ হত ঋণের জন্য। এই মহাজনদের কাছ থেকে একবার ঋণ নিয়ে নিলে আর ঋণের জালে থেকে কেউ বেরিয়ে আসতে পারতো না কারণ সুদের হার ছিল অত্যন্ত বেশি।
  • ৩. ব্রিটিশদের আইন ও বিচার ব্যবস্থা: ইংরেজরা ভারতীয় উপজাতিদের চিরাচরিত আইন- কানুন ও বিচার ব্যবস্থা বাতিল করে তাদের উপর নিজস্ব আইন ও বিচার ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়। যেখানে তারা কোনদিন ন্যায় বিচার পেত না এর  ফলে ভারতীয় সমাজে এইভাবে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ কিছুতেই মানতে পারেনি ফলে তারা বিক্ষুব্ধ হয় এবং বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।
  • ৪. ইংরেজ ইজারাদার ও জমিদারদের অত্যাচার:- ইংরেজদের তাবেদার ইজারাদার জমিদার ও  অন্যান্য কর্মচারীরা কর আদায়ের জন্য কৃষক ও উপজাতিদের ওপর সীমাহীন অত্যাচার শুরু করে। এর ফলে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
  • . কৃষিবাণিজ্যকরন: ইংরেজরা এ দেশে আসার পর থেকেই তারা নিজেদের স্বার্থে সবসময় মুনাফা লাভ দিকে নজর রাখত। এই জন্য একসময় ভারতীয় কৃষক ও উপজাতি দিয়ে সরকার খাদ্যশস্যের পরিবর্তে  নীল, পাঠ, তুলো বিভিন্ন অর্থকরী ফসল চাষে বাধ্য করলে কৃষকদের ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। 
  • ৬. উপনিবেশিক অরণ্য আইনঃ- ভারতের অরণ্য আইন প্রবর্তিত হলে আদিবাসীদের জীবন ও জীবিকা আঘাত হানে। উপজাতিরা নানাভাবে বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল তারা বনের পশু শিকার মধু কাঠ ইত্যাদি সংগ্রহের মাধ্যমে নিজেদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু উপনিবেশিক অরণ্য আইন তাদের এই চিরাচরিত জীবনযাত্রায় আঘাত হানে। নিজেদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য তারা বিদ্রোহের পথ অনুসরণ করেন।

পরিশেষে বলা যায় যে এইভাবে অত্যাচারিত হতে হতে ভারতের কৃষক ও উপজাতরা কোম্পানি ও জমিদারদের বিরুদ্ধে সংবদ্ধ হয়ন। ফলে ভারতের নানা স্থানে অসংখ্য কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।

ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা প্রশ্ন উত্তর

ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা কাকে বলে?

উত্তর: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল একটি বণিক সংস্থা। ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্যের স্বার্থে তারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু কতগুলি ঘাঁটি তৈরি করেছিল। এই ঘাঁটিগুলির মধ্যে ছিল মাদ্রাজ, বোম্বাই ও কলকাতা। পরে এই তিনটি বাণিজ্যঘাঁটিকে কেন্দ্র করে যে ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তাকে ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা বলা হয়।

কোম্পানি-পরিচালিত আইন ব্যবস্থাকে সংহত করার ক্ষেত্রে লর্ড কর্ণওয়ালিস কী ভূমিকা নিয়েছিলেন?

উত্তর: ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ আইনগুলিকে সংহত করে কোর্ড বা বিধিবদ্ধ আইন চালু করেন। তার ফলে দেওয়ানী সংক্রান্ত বিচার ও রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব আলাদা করা হয়। জেলা থেকে সদর পর্যন্ত আদালত ব্যবস্থা কে ঢেলে সাজানো হয়। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতার আদালতে আবেদনের অধিকার স্বীকার করা হয়।

তবে সমস্ত আদালতেই প্রধান বিচারপতি হতেন ইউরোপীয়রাই। লর্ড কর্নওয়ালিস এর বিচার ব্যবস্থার সংস্কার বাস্তবে ঔপনিবেশিক বিচার কাঠামো থেকে ভারতীয়দের পুরোপুরি বাদ দিয়েছিল।

কোম্পানির সিপাহিবাহিনী বলতে কী বোঝো?

উত্তর: প্রাথমিকভাবে উপনিবেশিক শাসনের যে কোন বিরোধিতার মোকাবিলা করতো পুলিশ বাহিনী। তবে পরিস্থিতি গর্তর হয়ে উঠলে প্রয়োজন পড়তো সেনাবাহিনীর। উত্তর ভারতে কৃষকদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হতো। এমনকি সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করে রাখা হতো। সেই প্রথা মেনেই তৈরি হয়েছিল কোম্পানির সেনাবাহিনী।

কোম্পানি-শাসনে জরিপের ক্ষেত্রে জেমস রেনেল-এর কী ভূমিকা ছিল?

উত্তর: ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলার নদী পথগুলি জরিপ করেন জেমস রেনেল। ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল বা জরিপ বিভাগের প্রধান হিসাবে তাকে নিয়োগ করে। বাংলায় নদীপথগুলি জরিপ করে রেনেল মোট ১৬টি মানচিত্র তৈরি করেছিলেন। সেই প্রথম রেনেলের তত্ত্বাবধানে বাংলার নদী গতিপথের মানচিত্র বানানো হয়। এর ফলস্বরূপ দেওয়ানি লাভের পর রাজস্ব আদায়ের জন্য জমি জরিপের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর

Q1. রাওলাট আইনের অপর নাম কি

উত্তরঃ রাওলাট আইনকে কালো আইন বা ব্ল্যাক অ্যাক্ট নামেও পরিচিত।

Q2. রাওলাট কমিশনের অপর নাম কি

উত্তরঃ রাওলাট কমিশন সিডিশন কমিশন নামেও পরিচিত।

Q3. মলে – মিন্টো সংস্কার আইনের প্রধান শর্ত কী ছিল ? 

উত্তরঃ মুসলিম সম্প্রদায়ের পৃথকভাবে সদস্য নির্বাচনের অধিকার দেওয়া । 

Q4. মুসলিম লিগ কে প্রতিষ্ঠা করেন ? 

উত্তরঃ ঢাকার নবাব সলিম উল্লাহ মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা করেন । 

Q5. ব্রিটিশ ভারতের কয়েকটি বৃহত্তম দেশীয় রাজ্যের নাম লেখো ।

উত্তরঃ হায়দ্রাবাদ , কাশ্মীর , মহীশূর । 

Q6. কবে ‘ চোদ্দো দফা দাবি ’ ঘোষিত হয় ? এর উদ্দেশ্য কী ছিল ? 

উত্তরঃ ১৯২৯ সালে মুসলিম লিগের দিল্লি অধিবেশনে লিগ নেতা মহম্মদ আলি জিন্না তার চোদ্দো দফা দাবি পেশ করেন । উদ্দেশ্য ছিল ভারতে মুসলিমদের স্বার্থরক্ষা । 

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।