জীববৈচিত্র্য শব্দটি যে পরিবেশ কেন্দ্রিক বিশ্ব সম্মেলনে জনপ্রিয়তা পায়
1997 সালে, পরিবেশের প্রতি নিবেদিত সাধারণ পরিষদের একটি বিশেষ অধিবেশন, যা ‘আর্থ সামিট + 5’ নামেও পরিচিত, এজেন্ডা 21-এর বাস্তবায়ন পরীক্ষা করে এবং আরও বাস্তবায়নের জন্য একটি কর্মসূচির প্রস্তাব করে।
তিন বছর পর, 2000 সালে, মিলেনিয়াম সামিট আটটি সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (MDGs) প্রতিষ্ঠা করে।
2002 সালে, জোহানেসবার্গে টেকসই উন্নয়নের বিশ্ব শীর্ষ সম্মেলন একটি নতুন কর্ম পরিকল্পনার জন্ম দেয়।
2005, 2008 এবং 2010 সালে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যগুলি নিউইয়র্কে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয়েছিল।
এটি অনুসরণ করা হয়েছিল 2012 সালে, রিওতে, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের সম্মেলন দ্বারা, যাকে রিও + 20ও বলা হয়। এই ইভেন্টের পরে, জাতিসংঘের পরিবেশ পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পরিবেশের বিষয়ে বিশ্বের উচ্চ-স্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা হয়ে ওঠে। এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেম্বলি বৈশ্বিক পরিবেশ নীতির জন্য অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশ আইনের বিকাশের জন্য মিটিং করে।
2013 সালে, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার দুই বছর আগে, নিউইয়র্কে একটি বিশেষ ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে সদস্য দেশগুলি একটি নতুন লক্ষ্য গ্রহণের জন্য সেপ্টেম্বর 2015-এ একটি উচ্চ-স্তরের শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করতে সম্মত হয়েছিল। যা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য দ্বারা স্থাপিত ভিত্তির উপর নির্মিত হবে।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পরিবেশ কাকে বলে
আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা নিয়ে পরিবেশ গঠিত হয়। ব্যক্তির জীবনযাত্রা ও আচরণের উপর পরিবেশের প্রভাব অপরিসীম। পরিবেশ হলো বস্তুগত ও অবস্তুগত, দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সব উপাদানের সমষ্টি।
পৃথিবী ও ওজোনস্তরের সব উপাদানের সমষ্টিকেই পরিবেশ বলা হয়। ব্যক্তি ও প্রাণীর জীবনযাত্রা, চাল-চলন, আচার- আচরণ ইত্যাদি পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। দিন দিন পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই সকলকে পরিবেশ সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
পরিবেশ | Environment
পরিবেশ বলতে কোন একক বা বিশেষ বস্তুকে বোঝায় না। মূলত পরিবেশ হলো বহু ও বিভিন্ন বিষয় ও বস্তুর সমাবেশে সৃষ্ট এক অবস্থা বিশেষ। পরিবেশের প্রতিশব্দ Environment শব্দটি ফ্রান্স Viron থেকে উৎপত্তি। যার অর্থ A circle, a round on a country round.
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
বিভিন্ন বিজ্ঞানী পরিবেশ বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে বিজ্ঞানীদের সংজ্ঞাসমূহ উল্লেখ করা হলো :
সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার ও পেজ-এর মতে, সার্বিক বিবেচনায় আমাদের বাসস্থানই আমাদের পরিবেশ।
- সমাজবিজ্ঞানী উইলিয়াম পি. স্কট-এর মতে, পরিবেশ হচ্ছে এমন একটি সামাজিক অবস্থা যা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচরণকে উদ্দীপ্ত ও প্রভাবিত করে।
- জগলাস ও হল্যান্ড-এর মতে, যেসব বাহ্যিক শক্তি ও অবস্থা মানবজীবনকে তথা মানুষের স্বভাব, আচরণ ও বিকাশ প্রক্রিয়ায় এবং দেহযন্ত্রের বর্ধন ও বিকাশমূলক পরিপকৃতায় প্রভাব বিস্তার করে, সেগুলোর সমষ্টিকে পরিবেশ বলে।
- ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, যেসব অবস্থা ও বস্তু জীবসত্তাকে প্রভাবিত করে তাকে পরিবেশ বলে।
- অধ্যাপক চেম্বার্স-এর মতে, পরিবেশ হলো এমন এক পারিপার্শ্বিক অবস্থা যা উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করে।
পরিবেশের উপাদানগুলো সমূহ
পরিবেশের উপাদানগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
(ক) প্রাকৃতিক উপাদান :
প্রকৃতি হতে যে উপাদান পাওয়া যায় তা পরিবেশের প্রাকৃতিক উপাদান নামে পরিচিত। যেমন- প্রাণী, গাছপালা, জলবায়ু, বৃষ্টিপাত, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, আকাশ, সমুদ্র, সূর্য, নক্ষত্র ইত্যাদি প্রাকৃতিক পরিবেশের উ পান।
মানুষের জীবনযাত্রার উপর প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান আবার দুটি ভাগে বিভক্ত যথা-
১. জৈব উপাদান :
প্রাকৃতিক পরিবেশে জীব সম্প্রদায়দের নিয়ে গঠিত উপাদানই জৈব উপাদান। যেমন- প্রাণী ও গাছপালা ও অণুজীব।
২. অজৈব উপাদান :
প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রাণহীন পদার্থদের নিয়ে গঠিত উপাদানসমূহ অজৈব উপাদান। যেমন- রাসায়নিক উপাদান ও রূপান্তরিত উপাদান।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহ ব্যবহৃত হয়ে থাকে
(খ) সামাজিক উপাদান :
মানুষের জীনধারণের জন্য যেসব পদার্থ প্রয়োজন তা সামাজিক উপাদান নামে পরিচিত। পুরো সমাজটাই একটা পরিবেশ। আমাদের মানুষজনকে নিয়ে গঠিত সমাজ আমাদের উপর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া কায়েম করে।
এই সমাজকে নিয়েই গঠিত হয় সামাজিক পরিবেশ মানুষের দৈহিক ও অর্থনৈতিক জীবনের উপর সমাজের প্রভাব সর্বজনবিদিত। সমাজিক পরিবেশ গড়ে উঠে তিন ধরনের পরিবেশকে নিয়ে। যথা-
১. অর্থনৈতিক পরিবেশ :
অর্থনৈতিক পরিবেশ সামাজিক পরিবেশের, যেমন : অংশ, তেমনি আবার প্রাকৃতিক পরিবেশের অংশ। অর্থনৈতিক পরিবেশের উপাদান হলো ঘরবাড়ি, জমিজমা, বাগান, পথঘাট, যন্ত্রপাতি, মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি ।
২. সাংস্কৃতিক পরিবেশ :
মানুষের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার যেসব উপাদানকে নিয়ে গড়ে উঠে সেসব উপাদানের সমাবেশের ফলেই সৃষ্টি হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশের। সাংস্কৃতির পরিবেশের উপাদান হলো- প্রথা, বিশ্বাস, ঐতিহ্য, জ্ঞান- বুদ্ধি, চিন্তাধারা ইত্যাদি।
৩. মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ :
মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ নামে এক ধরনের পরিবেশ রয়েছে পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মানুষের কিছু বিশেষ মানসিকতা বা মনোভাব এবং স্বাভাবিক প্রবণতার সৃষ্টি হয়।
পরিবেশের শ্রেণিবিভাগ, পরিবেশের প্রকারভেদ :
পরিবেশের শ্রেণিবিভাগ :
পরিবেশ বলতে মানুষের আশপাশের প্রাকৃতিক ও সামাজিক অবস্থাকে বুঝানো হয় । মানুষের চারপাশে যা কিছু আছে তাই তার পরিবেশ। মানুষের জীনযাত্রার সাথে পরিবেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। অধ্যাপক ম্যাকাইভার ও পেজ এর মতে পরিবেশ দুই প্রকার। যথা- (ক) বাহ্যিক পরিবেশ ও (খ) সামাজিক পরিবেশ।
(ক) বাহ্যিক পরিবেশ :
বাহ্যিক পরিবেশ কথাটির অর্থের দ্যোতনা বিশেষ ব্যাপক। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর মানুষ তার নিজস্ব বুদ্ধি ও শ্রমশক্তির প্রয়োগ ঘটিয়েছে। মানব সভ্যতার নানাবিধ উপাদান ও উপকরণের সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে, এই প্রয়োগেরই ফলে।
এভাবে অভিনব রূপ পরিগ্রহ করেছে প্রকৃতি এবং অভিনব আঙ্গিকে গড়ে উঠেছে ঘর- বাড়ি, ইমারত। তাছাড়া গড়ে উঠেছে নতুন নতুন শহর, প্রসার ঘটে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার। জীবনযাত্রার রীতি নীতি পরিবর্তন হচ্ছে। এর সবকিছু মিলেই বাহ্যিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
(খ) সামাজিক পরিবেশ :
মানুষের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ হলো সামাজিক পরিবেশ। একটি সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার পিছনে অনেক ব্যাপারে সমন্বিত উপস্থিতির প্রয়োজন জয়। এগুলো হলো সমাজের প্রচলিত রীতি-নীতি, প্রথা প্রতিষ্ঠান, সমস্ত সংগঠন, নিয়ম-নিষেধ, সবরকম প্রবণতা ইত্যাদি।
যে বিশেষ সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে মানুষ বসবাস করে তাকেই বলে তার সামাজিক পরিবেশ। সামাজিক পরিবেশের অস্তিত্ব সেই সমাজব্যবস্থার সাথে জড়িত।
অধ্যাপক জিসবার্ট পরিবেশকে চার ভাগে ভাগ করেছেন। যথা-
(ক) প্রাকৃতিক পরিবেশ :
জলবায়ু, বৃষ্টিপাত, জমির উৎপাদন ক্ষমতা, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত আকাশ, সমুদ্র, সূর্য নক্ষত্র ইত্যাদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে।
এসব বস্তু প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান প্রকৃতিগতভাবে সৃষ্টি হয়। তবে আধুনিককালে মানুষ প্রাকৃতিক উপাদানের উপর প্রভাব বিস্তার করছে।
(খ) কৃত্রিম পরিবেশ :
মানুষের তৈরি করা পরিবেশকে কৃত্রিম পরিবেশ বলে। মানুষ তার নিজের চেষ্টায় এই পরিবেশ গড়ে তোলে। মানুষ আপন মনে ঘরবাড়ি তৈরি করে, অন্যান্য প্রয়োজনীয় বস্তু মানুষ তৈরি করে।
এগুলো হলো কৃত্রিম পরিবেশের উপাদান। চাষাবাদ পরিচালনার জন্য মানুষ কৃষিযন্ত্র আবিষ্কার করেন। কলকারখানা, যন্ত্রপাতি ও শিল্প মানুষ তার নিজের বুদ্ধি ও দক্ষতায় গড়ে তুলছে।
(গ) সামাজিক পরিবেশ :
সমাজের পুরো পরিবেশকে সামাজিক পরিবেশ বলে। মানুষে মানুষে সম্পর্কের ফলে সামাজিক পরিবেশ গড়ে উঠে সমাজে মানুষ পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে এক সাথে বসবাস করে।
বিপদ-আপদে একজন অন্যজনকে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে। সামাজিক পরিবেশের প্রভাব পড়ে মানুষের বাস্তব জীবনের উপর। সমাজে বসবাস করতে যেসব উপাদান মানুষের জীনযাত্রার উপর প্রভাব বিস্তার করে তাই সামাজিক পরিবেশের উপাদান।
(ঘ) মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ :
মানুষের অভিজ্ঞতা, অভ্যাস, প্রবণতা ইত্যাদি যে পরিবেশ সৃষ্টি করে তাই মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ। মানুষ নিজে চিন্তা করতে পারে ও নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। মানুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
ব্যক্তি যখন কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন তার শিক্ষা-দীক্ষা ও পূর্বে সঞ্চিত অভিজ্ঞতাকে সে ব্যবহার করে, নির্ভরও করে এগুলোর উপর। প্রকৃতপক্ষে মানুষ যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেই সিদ্ধান্ত হলো তার স্বাধীন ইচ্ছা ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ফলস্বরূপ। সামাজিক পরিবেশ ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।
উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায় যে, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, মানুষের জীবনযাত্রার উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তারকারী প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানই পরিবেশ।
মানুষের জীবনযাত্রা ও জীবজগতের অস্তিত্ব পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, যা মানব সমাজ ও প্রাণীদের জন্য হুমকিস্বরূপ। প্রাণীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য সমাজকর্মী ও সব মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।