ঠান্ডা লড়াই বলতে কী বোঝো, ঠান্ডা লড়াই শব্দটি প্রথম প্রয়োগ করেন কে, ঠান্ডা লড়াই এর কারণ ও ফলাফল

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

ঠান্ডা লড়াই কাকে বলে, স্নায়ুযুদ্ধ কি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একদিকে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি গণতান্ত্রিক দেশগুলি এবং অপরদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সাম্যবাদী দেশগুলি জোট বেঁধেছিল। বিশ্ব রাজনীতির ওপর কর্তৃত্ব করতে এই দুটি জোটই সচেষ্ট ছিল। ফলে এই দুই জোটের মধ্যে প্রবল প্রতিযোগিতা আরস্ত হয়। যুদ্ধ না হয়েও দীর্ঘমুখী প্রতিযোগিতায় যে যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, তাকেই বলা হয় ঠান্ডা লড়াই বা স্নায়ুযুদ্ধ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রসমূহ এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্রসমূহের মধ্যকার টানাপোড়েনের নাম। ১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ১৯৮০’র দশকের শেষ পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ছিল। প্রায় পাঁচ দশকব্যাপী সময়কালে এই দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যকার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও রাজনৈতিক মতানৈক্য আন্তর্জাতিক রাজনীতির চেহারা নিয়ন্ত্রণ করত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশসমূহ ছিল গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদের স্বপক্ষে; আর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্র দেশসমূহ ছিল সাম্যবাদী বা সমাজতন্ত্রপন্থী। স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান মিত্র ছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি, জাপান ও কানাডা। আর সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে ছিল পূর্ব ইউরোপের অনেক রাষ্ট্র, যেমন বুলগেরিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি ও রোমানিয়া। স্নায়ুযুদ্ধের কিছুকাল যাবৎ কিউবা এবং চীন সোভিয়েতদের সমর্থন দেয়। যেসমস্ত দেশ দুই পক্ষের কাউকেই সরকারিভাবে সমর্থন করত না, তাদেরকে নিরপেক্ষ দেশ বলা হত। তৃতীয় বিশ্বের নিরপেক্ষ দেশগুলি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অংশ ছিল। অবশেষে সোভিয়েত ইউনিয়নের নাটকীয় পরিবর্তন ও পতনের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের সমাপ্তি হয়।

ঠান্ডা লড়াই বলতে কী বোঝো, ঠান্ডা লড়াই বলতে কী বোঝায়

ঠান্ডা লড়াই প্রত্যক্ষ যুদ্ধ নয় ; তা হল যুদ্ধের উদ্বেগ ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি । প্রয়োজন হলে এক পক্ষ অপরপক্ষকে সংযত রাখার জন্য যুদ্ধের ভীতি প্রদর্শন , যেমন — সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ , প্রয়োজনীয় সব ধরনের আধুনিক অস্ত্রসম্ভার প্রেরণ , এমনকি পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগের হুমকি দিতে পারে । কিন্তু বাস্তবে কোনো পক্ষই তা করার সাহস দেখাতে পারে না । কারণ , তা করার অর্থই হবে সামগ্রিক ধ্বংস , যা কোনো পক্ষেরই কাম্য নয় । তাই কেউ কেউ ঠান্ডা লড়াইকে ‘ যুদ্ধহীন যুদ্ধ ’ বলে চিহ্নিত করার পক্ষপাতী ।

ফ্রিডম্যান ( William Friedman ) ঠান্ডা লড়াইকে ‘ গরম যুদ্ধ ‘ ( ‘ Hot War ‘ ) – এর একটি প্রয়োজনীয় স্তর বলে মনে করেন না । তিনি এটিকে ‘ যুদ্ধের একটি নতুন কৌশল ‘ ( ‘ a new strategy of war ‘ ) বলে চিহ্নিত করেছেন । আবার , বার্নেট ( Barnet ) – এর মতে , ঠান্ডা লড়াই হল ‘ গরম শান্তি ’ ( ‘ Hot Peace ‘ ) ৷ 

অনেকে আবার ঠান্ডা লড়াইকে ‘ মতাদর্শগত যুদ্ধ ’ ( ‘ ideological war ‘ ) বলে চিহ্নিত করেছেন । ওয়াল্টার রেমন্ড ( Walter Raymond ) – এর মতে , ঠান্ডা লড়াই হল সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতাদর্শগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার এমন একটি পরিস্থিতি , যেখানে প্রকৃত যুদ্ধে অবতীর্ণ না হয়েও অত্যন্ত বিরোধিতাপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ( diplomatic relations ) বজায় রাখা হয় ।

প্রায় অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন জোসেফ ফ্র্যাঙ্কেল ( Joseph Frankel ) । তাঁর মতে , ঠান্ডা লড়াই বলতে সাম্যবাদ ও গণতান্ত্রিক মতাদর্শ এবং সেগুলির প্রবন্ধ যথাক্রমে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার বিরোধের সঙ্গে জড়িত যাবতীয় ঘটনাকে বোঝায় । এরুপ অবস্থাকে এককভাবে যুদ্ধের কিংবা শান্তির অবস্থা বলে চিহ্নিত করা যায় না ।

আবার , কেবল পারস্পরিক বোঝাপড়াকিংবা কেবল বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এরপ বিরোধের নিষ্পত্তি করাও সম্ভব নয় । জোসেফ ফ্র্যাঙ্কেল ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় বিরোধের সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর মতাদর্শগত বিরোধের তুলনা করেছেন । উপরিউক্ত আলোচনার ভিত্তিতে ঠান্ডা লড়াই – এর একটি মোটামুটি গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা নির্দেশ করা যেতে পারে ।

ঠাণ্ডা লড়াই বলতে পশ্চিমি শক্তিগুলির সঙ্গে সোভিয়েত – জোটের রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক ও মতাদর্শগত গতিযোগিতার এক সুতীব্র অবস্থা ( a state of intensive competition ) – কে বোঝালেও তা তাদের প্রত্যক্ষ সশস্ত্র সংঘর্ষ , অর্থাৎ যুদ্ধ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে । 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ( ১৯৩৯-১৯৪৫ ) পরিসমাপ্তির পর থেকে প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে বিশ্বরাজনীতি তথা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ও ঘটনাবলিকে ‘ ঠান্ডা লড়াই ’ ( ‘ Cold War ‘ ) – এর প্রেক্ষিতে বিচারবিশ্লেষণ করা হতো । এমনকি , ওই ধারণাটিকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক রাজনীতি – সংক্রান্ত তত্ত্ব নির্মাণের প্রয়াসও চালানো হয়েছিল ।

যে – দুটি শক্তিজোটের মধ্যে ওই বিধ্বংসী যুদ্ধ বেধেছিল , সেগুলি ‘ মিত্রশক্তি ’ (Allied Powers) এবং ‘ অক্ষশক্তি ‘ (Axis Powers) নামে পরিচিত ।

গ্রেট ব্রিটেন , ফ্রান্স , সোভিয়েত ইউনিয়ন , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতিকে নিয়ে ‘ মিত্রশক্তি ’ বা মিত্রজোট এবং জার্মানি , ইটালি , স্পেন , জাপান প্রভৃতিকে নিয়ে ‘ অক্ষশক্তি ’ বা অক্ষজোট গঠিত হয়েছিল । মিত্রজোটের মধ্যে কেবল সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়া আর কোনো রাষ্ট্রই সমাজতান্ত্রিক ছিল না । বৃহৎ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি বিশ্বের একমাত্র সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নকে জোটভুক্ত করলেও তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক স্বাভাবিক কারণেই সন্দেহ , অবিশ্বাস ও বিদ্বেষপূর্ণ ছিল । তা সত্ত্বেও যুদ্ধের প্রয়োজনে তারা তাদের সেই মনোভাব গোপন রাখার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিল । 

আবার , সোভিয়েত ইউনিয়নও আন্তরিকভাবে তাদের বিশ্বাস করতে পারেনি । কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত গ্রেট ব্রিটেন , ফ্রান্স প্রভৃতির মতো এতদিনকার শক্তিশালী দেশগুলি কার্যত শক্তিহীন হয়ে পড়ে । আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রমবর্ধমান প্রভাব রোধের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বরাজনীতির নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার কাজে আত্মনিয়োগ করে । এইভাবে বিশ্বব্যাপী একাধিপত্য বিস্তারের মার্কিন প্রয়াস ব্যর্থ ক’রে দেওয়ার সোভিয়েত প্রচেষ্টার ফলে সমগ্র বিশ্ব কার্যত ‘ যুদ্ধের তীরপ্রান্ত ‘ ( ‘ brinkmanship of war ‘ ) – এ উপনীত হয় । ওই অবস্থাকে ঠান্ডা লড়াই বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে ।

ঠান্ডা লড়াই এর বৈশিষ্ট্য

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশ্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ঠান্ডা লড়াই। ঠান্ডা লড়াইয়ের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল一

[1] কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্ব: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বে মহাশক্তিধর (Super-Power) রাষ্ট্ররূপে আবির্ভাব ঘটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত ইউনিয়নের। তাই ঠান্ডা লড়াই বলতে বােঝায় মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সারা বিশ্বে নিজ নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে।

[2] বিভিন্ন দেশের সমর্থন লাভের দ্বন্দ্ব: উভয় রাষ্ট্রই বিশ্বের অন্যান্য‌ রাষ্ট্রের ওপর নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে ও তাদের সাহায্য ও সহযােগিতা লাভ করতে তৎপর ছিল। বিভিন্ন দেশের সমর্থন লাভের দ্বন্দ্বকে ঘিরে উদ্ভব ঘটে দ্বিমেরু রাজনীতি (Bipolar Politics)-র।

[3] রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিভেদ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে এবং সােভিয়েত ইউনিয়ন সাম্রাজ্যবাদের বিরােধিতা ও সাম্যবাদের পক্ষে পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। এর পরিণতি হিসেবে ঠান্ডা লড়াই নামে রাজনৈতিক মতবাদের লড়াই শুরু হয়।

[4] সামরিক বলবৃদ্ধি: কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াইকে কেন্দ্র করে দুই শক্তিজোট ভিতরে ভিতরে জোর সামরিক প্রস্তুতি শুরু করে। প্রবল থেকে প্রবলতর শক্তিসম্পন্ন মারণাস্ত্র তৈরি ও সেগুলির পরীক্ষার নামে যুদ্ধ মহড়া শুরু হয় দুই শিবিরে। এইভাবে উভয়পক্ষই প্রবল সামরিক বলে বলীয়ান হয়ে ওঠে। বিশ্বে আতঙ্কজনক বাতাবরণ গড়ে ওঠে, যা ঠান্ডা লড়াই নামে অভিহিত হয়।

[5] আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা: দুপক্ষেরই অনুগত কোনাে রাষ্ট্র কোনাে অঞ্চলে যুদ্ধরত হলে ওই যুদ্ধকে ওই অঞলেই সীমাবদ্ধ রাখতে উভয়েই তৎপর হয়ে ওঠে।

[6] ছায়া যুদ্ধ: আমেরিকা ও রাশিয়া উভয় পক্ষের সামরিক শক্তি যথেষ্ট বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও কোনাে পক্ষই একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে অংশ নেয়নি। কেবল যুদ্ধের আবহ বজায় রেখেছিল।

ঠান্ডা লড়াই এর সময়কাল কত

ইউএসএসআর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে প্রভাব ও আধিপত্যের জন্য লড়াই করেছিল।

  1. ইউএসএসআর কমিউনিজম ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং অন্যান্য দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল। তারা সারা বিশ্বে কমিউনিস্ট ও সমাজতান্ত্রিক বিদ্রোহের ঢেউ ছড়াতে চেয়েছিল।
  2. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এটি যাতে না ঘটে তার জন্য তার ক্ষমতার সবকিছু করেছে। সরাসরি যুদ্ধের পরিবর্তে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউএসএসআর অনেক “প্রক্সি যুদ্ধ” লড়েছে।
  3. উভয় পক্ষই একে অপরের সাথে সরাসরি যুদ্ধ করেনি, যদিও উভয় পক্ষই দ্বন্দ্বে বিপরীত পক্ষকে সমর্থন করবে। উদাহরণস্বরূপ, ভিয়েতনাম যুদ্ধে, যেখানে উত্তর ভিয়েতনাম দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণকে সমর্থন করেছিল, যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন উত্তরকে সমর্থন করেছিল।
  4. যদিও অনেকবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউএসএসআর একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল এবং প্রায় একটি যুদ্ধ শুরু করেছিল। বার্লিন অবরোধ (1947-1948) ছিল স্নায়ুযুদ্ধের প্রথম সঙ্কট, এবং পরে, 1961 সালের বার্লিন সংকট এবং 1962 সালে কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকট প্রায় WW3 শুরু হয়েছিল।
  5. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, 50 মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল, যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউএসএসআর-এর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে তার তুলনায় হতাহতের সংখ্যা খুবই সামান্য।

সোভিয়েত ইউনিয়নের 1991 সালে পতন এর সঙ্গে সঙ্গে  ঠান্ডা লড়াই এর সমাপ্ত হয় |

ঠান্ডা লড়াই এর প্রভাব

[1] দ্বিমেরুকরণ রাজনীতির উদ্ভবে: ঠান্ডা লড়াই ‘দ্বিমেরুকরণ রাজনীতি’র সৃষ্টি করেছিল। অর্থাৎ যুদ্ধ পরবর্তীকালে বিশ্বে যে দুটি মহাশক্তির (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত ইউনিয়ন) বিকাশ ঘটেছিল তাতে অন্য কোনাে তৃতীয় শক্তির ভূমিকা মােটেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। উভয় শক্তিকে কেন্দ্র করেই পরবর্তীকালে অর্থনৈতিক ও সামরিক দুনিয়া দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল।

[2] আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতি রােধে: ঠান্ডা লড়াই প্রত্যেক দেশকে নিজ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আধুনিক সমরাস্ত্র সংগ্রহ করার প্রতিযােগিতায় অবতীর্ণ করেছিল। ফলে সেইসমস্ত দেশের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় ভীষণভাবে বেড়ে গিয়েছিল। এই কারণে প্রতিটি দেশেরই আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি দারুণভাবে ব্যাহত হয়েছিল।

[3] আঞ্চলিক সামরিক জোট গঠনে: ঠান্ডা লড়াইয়ের একটি অনুষঙ্গ ছিল বৃহৎশক্তিবর্গের আঞ্চলিক সামরিক জোট গড়ে তােলা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে ন্যাটো, সিয়াটো, মেডাে (পরবর্তীকালে সেন্টো), অ্যানজাস আর রাশিয়ার তত্ত্বাবধানে ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা গড়ে তােলা হয়। ওইসমস্ত সামরিক জোটগঠন বিশ্বশান্তির পক্ষে মােটেই বাঞ্ছনীয় ছিল না। এগুলি একদিকে যেমন যুদ্ধের আশঙ্কাকে বজায় রেখেছিল, অন্যদিকে তেমনি রাষ্ট্রসংঘের গুরুত্বকে যথেষ্টই হ্রাস করে দিয়েছিল।

[4] তৃতীয় বিশ্বের ধারণা গঠনে: ঠান্ডা লড়াইয়ের আবর্ত থেকেই জন্ম নিয়েছিল তৃতীয় বিশ্বের ধারণা। তাই সেই সময়ের সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এশিয়া, আফ্রিকা, লাটিন আমেরিকার দেশগুলি (তৃতীয় বিশ্ব) স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের ঠান্ডা লড়াইয়ের আবর্তে শামিল করতে চায়নি। তবুও ওই সময়কালে তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে যে সংঘর্ষ ঘটেছিল তার পেছনে অনেক ক্ষেত্রেই কিন্তু ঠান্ডা লড়াইয়ের ভূমিকা ছিল।

[5] জোটনিরপেক্ষ রাজনীতির উদ্ভবে: ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রভাবেই বিশ্বে জন্ম নিয়েছিল জোটনিরপেক্ষতা। জোটনিরপেক্ষ নীতি হল আমেরিকা বা সােভিয়েত ইউনিয়ন—কোনাে জোট বা গােষ্ঠীর সঙ্গেই নিজেদের যুক্ত না করা। অর্থাৎ কী গণতান্ত্রিক ধনতন্ত্রবাদের জোট, কী সমাজতান্ত্রিক শিবির, উভয়ের থেকেই সমদূরত্ব বজায় রাখা। এই নিরপেক্ষ রাজনীতির উদ্ভবে সাহায্য করে ঠান্ডা লড়াই।

[6] বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকট সৃষ্টিতে: ঠান্ডা লড়াইয়ের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা দিয়েছিল কোরিয়া যুদ্ধ (১৯৫০-৫৩ খ্রি.), বার্লিন সংকট (১৯৬১ খ্রি.), কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট (১৯৬২ খ্রি.), আফগানিস্তানে সােভিয়েত যুদ্ধ (১৯৭৯-৮৯ খ্রি.), ন্যাটো সংকট (১৯৮৩ খ্রি.) প্রভৃতি।

ঠান্ডা লড়াই এর প্রকৃতি

[1] যুদ্ধপরিবেশ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত ইউনিয়ন উভয় পক্ষই নিজেদের মধ্যে সরাসরি কোনাে শক্তিপরীক্ষায় অবতীর্ণ না হলেও এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশগুলিকে পরােক্ষভাবে মদত দিয়ে যুদ্ধের বাতাবরণ বজায় রেখেছিল। এসময় উভয় পক্ষই বিপজ্জনক পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযােগিতায় নেমেছিল।

[2] সংঘর্ষহীনতা: উদ্দেশ্যমূলক প্রচার, অন্তর্ঘাত, এমনকি সীমিত কিছু নাশকতামূলক কাজকর্মকে ঠান্ডা লড়াই উৎসাহ দিলেও কোনাে ক্ষেত্রেই তা শেষপর্যন্ত ব্যাপক সংঘর্ষে পরিণত হয়নি। উভয়পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা থাকলেও যুদ্ধের মর্মান্তিক পরিণতির ব্যাপারে উভয়েই ছিল সতর্ক। ফলে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ ঘটেনি।

[3] আদর্শগত দ্বন্দ্ব: ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির মধ্যে আদর্শগত দ্বন্দ্ব দেখা যায়। একদিকে সােভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদের প্রসার অপরদিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী আগ্রাসনে তীব্র আদর্শগত দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।

ঠান্ডা লড়াই শব্দটি প্রথম প্রয়োগ করেন কে, ঠান্ডা লড়াই শব্দটি প্রথম কে ব্যবহার করেন, ঠান্ডা লড়াই কথাটি প্রথম কে ব্যবহার করেন

মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর The Cold War’ গ্রন্থে সর্বপ্রথম ঠান্ডা যুদ্ধ’ কথাটি ব্যবহার করেন।

ঠান্ডা লড়াই ‘ কথাটি কখন থেকে এবং কে চালু করেছিলেন , তা সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন । তবে সাধারণভাবে মনে করা হয় যে , মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmann ) প্রথম এই কথাটি প্রয়োগ করেছিলেন । দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট নামক একটি সুবিখ্যাত মার্কিন পত্রিকায় তিনি ঠান্ডা লড়াই – এর পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ধারাবাহিকভাবে কতকগুলি প্রবন্ধ লেখেন । ১৯৪৭ সালে দ্য কোল্ড ওয়ার : এ স্টাডি ইন্‌ ইউ.এস. ফরেন পলিসি ( The Cold War : A Study in U.S. Foreign Policy ) নামে ওই প্রবন্ধগুলির একটি সংকলন গ্রন্থ প্রকাশিত হয় । কিন্তু উইলিয়াম স্যাফায়ার ( William Safire ) ) – এর মতে , প্রখ্যাত মার্কিন কূটনীতিবিদ বার্নার্ড বারুচ ( Bernard Baruch ) এর ভাষণ – লেখক সোপ ( Swope ) একটি ভাষণের খসড়ায় মার্কিন – সোভিয়েত সম্পর্ককে বর্ণনা করতে গিয়ে ১৯৪৬ সালে ‘ ঠান্ডা লড়াই ‘ কথাটি লিখেছিলেন । কিন্তু কথাটি অত্যন্ত কঠোর বলে মনে হওয়ায় বারুচ সেই সময় তা প্রয়োগ না করলেও ১৯৪৭ সালের ১৩ ই এপ্রিল দক্ষিণ ক্যারোলিনার কলম্বিয়ায় প্রদত্ত ভাষণে তিনি বলেছিলেন , “ আমরা আর প্রতারিত হতে চাই না , এখন আমরা ঠান্ডা লড়াই – এর মধ্যে আছি । ” ( “ Let us not be deceived , today we are in the midst of the cold war ” )

আবার , মার্কিন সিনেট কর্তৃক নিযুক্ত তদন্ত কমিটির সামনে সাক্ষ্যদানের সময় ১৯৪৮ সালের ২৪ শে অক্টোবর বারুচ ‘ ঠান্ডা লড়াই ‘ কথাটি প্রয়োগ করেছিলেন । নিজের দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য সোপ ১৯৫০ সালের ১০ ই মে একটি পত্রের মাধ্যমে লিপম্যানকে জানান যে , ১৯৩৯ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই ‘ – এর ধারণাটি নিয়ে তিনিই প্রথম ভাবনাচিন্তা শুরু করেন । ওই সময় সমগ্র আমেরিকায় যুদ্ধ – বিরোধী মনোভাব তীব্র আকার ধারণ করেছিল । তাই তিনি ‘ গরম লড়াই ’ – এর বিপরীত ধারণা হিসেবে ‘ ঠাণ্ডা লড়াই ’ কথাটি প্রয়োগ করেন । এমনকি , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করার পূর্বে তাঁর লিখিত কয়েকটি চিঠিতে তিনি ওই কথাটি লিখেছিলেন বলেও দাবি করেন । যাই হোক , ১৯৪৭ সাল থেকে ‘ ঠান্ডা লড়াই ’ কথাটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে । বিস্ময়ের ব্যাপার হল —১৯৫৫ সালের ১৮ ই জুলাই জেনেভা সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে সোভিয়েত ইউনিয়নের তদানীন্তন উপপ্রধানমন্ত্রী নিকোলাই বুলগানিন ( Nikolai Bulganin ) ও মার্কিন , ব্রিটিশ ও ফরাসি প্রতিনিধিদের সামনেই ‘ ঠান্ডা লড়াই ‘ কথাটি প্রয়োগ করেছিলেন ।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে , তদানীন্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ( Winston Churchill ) ১৯৪৬ সালের ৫ ই মার্চ ওয়েস্টমিনিস্টার কলেজে প্রদত্ত ফুলটন বক্তৃতায় সরাসরি ‘ ঠান্ডা লড়াই ‘ কথাটি প্রয়োগ না করলেও সে ব্যাপারে তাঁর ইঙ্গিত ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট । তিনি বলেছিলেন যে , মিত্রশক্তির জয়লাভের ফলে যে – আশার আলো দেখা দিয়েছিল , তার ওপর একটি ছায়া নেমে এসেছে । সোভিয়েত রাশিয়া এবং তার কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক সংগঠন অদূর ভবিষ্যতে কী করতে চলেছে , তা কেউই বলতে পারে না । বাল্টিক উপসাগর থেকে শুরু ক’রে অ্যাড্রিয়াটিক উপসাগর পর্যন্ত একটি লৌহ – যবনিকা ( an iron curtain ) নেমে এসেছে । ওই যবনিকার ওপারে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের রাজধানীগুলির অবস্থান । লৌহ – যবনিকার অন্তরালে কী ঘটনা ঘটছে , মুক্ত দুনিয়ার মানুষ সে সম্পর্কে কিছুই জানতে পারছে না ।

কোন সম্মেলন কে ঠান্ডা লড়াই এর সূত্রপাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়

যে সম্মেলনটি প্রায়শই শীতল যুদ্ধের সূচনা হিসাবে চিহ্নিত করা হয় তা হল ইয়াল্টা সম্মেলন, যা 1945 সালের ফেব্রুয়ারিতে হয়েছিল। সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল সহ মিত্র শক্তির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এবং সোভিয়েত প্রিমিয়ার জোসেফ স্ট্যালিন। সম্মেলনে নেতারা ইউরোপের যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন, জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা এবং নাৎসি জার্মানির পরাজয় নিয়ে আলোচনা করেন।

ইয়াল্টা সম্মেলনকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয় কারণ এটি পশ্চিমা মিত্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং পার্থক্যকে প্রকাশ করেছে। সম্মেলনে উপনীত চুক্তিগুলি শেষ পর্যন্ত সমস্ত পক্ষকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয় এবং সম্মেলনের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস আরও গভীর হয়। এটি স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তার পূর্ব ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার একটি সময়কাল, যা 1991 সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।

ঠান্ডা লড়াই এর কারণ ও ফলাফল

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, নাৎসি-জার্মানি, জাপান এবং ইতালির সাথে একত্রে অক্ষ শক্তি হিসাবে পরিচিত ছিল। তারা ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন এবং পোল্যান্ড নিয়ে গঠিত মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল।

পরবর্তীতে, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে টেনে নিয়ে যায়, কারণ জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে এবং জাপানিরা আমেরিকান নৌ ঘাঁটি “পার্ল হারবার” বোমাবর্ষণ করে।

যুদ্ধের সময় যে জোট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নকে একত্রে ধরে রেখেছিল তা এই সত্যের উপর ভিত্তি করে যে তারা উভয়ই অক্ষ শক্তিকে পরাজিত করতে চেয়েছিল।

ঠান্ডা লড়াই এর কারণ

(১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব রাজনীতিতে দ্বি-মেরুকরণ শুরু হলে, তার ফলশ্রুতিতে আদর্শগত সংঘাতের সূত্রপাত হয় । দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদ ও জীবনাদর্শ একে অপরের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামে লিপ্ত হয়, যার অনিবার্য পরিণাম হল এক ধরনের অস্ত্রবিহীন মানসিক তথা স্নায়ুর লড়াই, পারস্পরিক চাপ সৃষ্টির কৌশল । এ থেকেই ঠান্ডা যুদ্ধের সূত্রপাত ।

(২) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে শক্তির ভারসাম্য ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি থেকে সরে গিয়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাশিয়ার অনুকূলে চলে যায় । দুটি বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রের আবির্ভাবে দুটি নতুন শক্তিজোট তৈরি হয়, যার এক দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য দিকে সোভিয়েত রাশিয়া অবস্থান করে । ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলির কিছু কিছু দেশ আমেরিকা ও কিছু কিছু দেশ রাশিয়ার পক্ষ অবলম্বন করলে পৃথিবী দুটি শিবিরে ভাগ হয়ে যায় । একটি আমেরিকা ও তার সহযোগী দেশ, অন্যটি রাশিয়া ও তার মিত্র দেশ । এর মধ্যে এশিয়া, আফ্রিকার কিছু দেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নেয় এবং জোটনিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করে । ভারতবর্ষ তার অন্যতম ।

(৩) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে বৃহৎ শক্তিধর দেশ দুটি অপর দেশগুলির ওপর তাদের প্রভাব বিস্তারে উদ্যোগী হয় । আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের ওপর তার সর্বময় কর্তৃত্ব স্থাপন করতে চায়, অন্যদিকে রাশিয়া তার সমাজতান্ত্রিক ভাবনা দেশে দেশে ছড়িয়ে দিতে চায় । এভাবেই দুই দেশ আবার এক ধরনের কূটনৈতিক সংঘর্ষে লিপ্ত হয় । শুরু হয় ঠান্ডা যুদ্ধ । সাম্রাজ্যবাদী ভাবনার সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক ভাবনার লড়াই এই যুদ্ধের মূলকথা ।

(৪) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ই মার্চ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আমেরিকার ফুলটন শহরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এইচ. ট্রুম্যানের সামনে এক ভাষণে সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিরামহীন রাজনৈতিক সংগ্রামের সংকল্প ঘোষণা করেন । চার্চিল তার ভাষণে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদীদের হাত শক্ত করার জন্য অস্ত্রসজ্জা, সমাজতান্ত্রিক আগ্রাসন ঠেকাতে রাশিয়ায় সামরিক ঘাঁটি স্থাপন, সামরিক জোট গঠন ইত্যাদি পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করেন । এরই পরিণতিতে বিশ্বব্যাপী পশ্চিমি প্রাধান্য বজায় রাখতে শক্তির আস্ফালনের জন্য আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তিজোট, যেমন ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা এপ্রিল ন্যাটো (NATO) (North Atlantic Treaty Organisation), ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে সিয়াটো (SEATO) (South-East-Asia Treaty Organisation ), ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে সেন্টো (CENTO) ইত্যাদি সামরিক শক্তিজোট গঠন করে । অন্যদিকে রাশিয়ার নেতৃত্বে এশিয়া, আফ্রিকা এমনকি ইউরোপের কিছু কিছু দেশে সমাজতান্ত্রিক ভাবনা জনপ্রিয়তা লাভ করে । পূর্ব জার্মানি, রুমানিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, চেকোশ্লোভাকিয়া, উত্তর কোরিয়া ইত্যাদি দেশে সাম্যবাদী আন্দোলন জয়যুক্ত হয় ও গণতান্ত্রিক সরকারের জায়গায় সমাজতান্ত্রিক বা কমিউনিস্ট সরকার গঠিত হয় । ভারত সহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে কমিউনিস্ট ধীরে ধীরে শক্তিসঞ্চয় করতে থাকে । একই সঙ্গে কিছু কিছু দেশে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে থাকে ।

(৫) এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিস্তার, সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের প্রসার ইত্যাদির প্রতিরোধ করার জন্য আমেরিকার নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে । বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলি সমাজতন্ত্রীদের প্রভাবমুক্ত হয়ে যাতে তাদের দিকে যোগ দেয় তার জন্য তারা কতকগুলি অর্থনৈতিক কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন । আমেরিকা দুটি অর্থনৈতিক কর্মসূচির কথা ঘোষণা করে । একটি ট্রুম্যান নীতি (Truman Doctrine, April 1947) এবং অপরটি মার্শাল পরিকল্পনা (Marshall Plan) । দুটি পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হল তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলিকে অর্থনৈতিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে রাশিয়া ও তার সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির কবল থেকে মুক্ত করে আনা । দুই রাষ্ট্রের এই লড়াই ও মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়েই বিশ শতকের বিশ্ব রাজনীতি আবর্তিত হয়েছিল । একদিকে আমেরিকার উদ্দেশ্য সমাজতান্ত্রিক ভাবনার কন্ঠরোধ করে সাম্রাজ্যবাদের প্রসার, অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনকে প্রতিরোধ করে রাশিয়ায় দিকে দিকে সমাজতন্ত্রকে শক্তিশালী করার প্রয়াস । বিশ শতকের শেষ দশক পর্যন্ত দুই শক্তিশালী গোষ্ঠীর মধ্যে এই ঠান্ডা লড়াই চলেছিল ।

এরপর ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে সমাজতন্ত্রী রাশিয়ার ভাঙ্গনের পর দুই রাষ্ট্রের মধ্যেকার শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং সেই সঙ্গে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান হয় ।

ঠান্ডা লড়াই এর ফলাফল

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে রাশিয়া ও পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠলেও তাদের মধ্যে মতানৈক্য, সন্দেহ ও বিদ্বেষের জন্য রাশিয়া ও আমেরিকার পশ্চিমী রাষ্ট্রজোটের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয় এবং একটি যুদ্ধের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়।

যদিও ঐতিহাসিক মহলে এর কারণ সম্পর্কে মতভেদ আছে। অনেকেই মনে করেন, এটি হল মার্কিন পুঁজিবাদ বনাম রাশিয়ার সাম্যবাদের লড়াই।

আবার অধ্যাপক উইলিয়মস্, গ্যাব্রিয়েল কলকো এর পিছনে অর্থনৈতিক কারণকে দায়ী করেছেন। তাঁদের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। ফলে সমগ্র বিশ্বের বাজারে আমেরিকা আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। রাশিয়া আমেরিকার এই নীতিকে মেনে নিতে পারেনি, ফলে রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার সংঘাত তীব্র হতে শুরু করে।

ঠান্ডা লড়াই কাদের মধ্যে হয়, ঠান্ডা লড়াই কাদের মধ্যে হয়েছিল

মূলত পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রসমূহ এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্রসমূহের মধ্যকার টানাপোড়েনের নাম। ১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ১৯৮০’র দশকের শেষ পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ছিল। প্রায় পাঁচ দশকব্যাপী সময়কালে এই দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যকার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও রাজনৈতিক মতানৈক্য আন্তর্জাতিক রাজনীতির চেহারা নিয়ন্ত্রণ করত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশসমূহ ছিল গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদের পক্ষে; আর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্র দেশসমূহ ছিল সাম্যবাদ বা সমাজতন্ত্রপন্থী। স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান মিত্র ছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি, জাপান ও কানাডা। আর সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে ছিল পূর্ব ইউরোপের অনেক রাষ্ট্র, যেমন বুলগেরিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি ও রোমানিয়া।

স্নায়ুযুদ্ধের কিছুকাল যাবৎ কিউবা এবং চীন সোভিয়েতদের সমর্থন দেয়। যেসমস্ত দেশ দুই পক্ষের কাউকেই সরকারিভাবে সমর্থন করত না, তাদেরকে নিরপেক্ষ দেশ বলা হত। তৃতীয় বিশ্বের নিরপেক্ষ দেশগুলি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অংশ ছিল। অবশেষে সোভিয়েত ইউনিয়নের নাটকীয় পরিবর্তন ও পতনের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের সমাপ্তি হয়।

ঠান্ডা লড়াই অবসানের কারণ

শীতল যুদ্ধ বিভিন্ন কারণের কারণে শেষ হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে:

  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি, যা সোভিয়েত ইউনিয়নকে অব্যাহত রাখার জন্য চাপ সৃষ্টি করে।
  • দুই পক্ষের মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যা সম্পদ নিষ্কাশন করে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক সমস্যায় অবদান রাখে।
  • সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা হিসাবে মিখাইল গর্বাচেভের উত্থান, যার গ্লাসনোস্ট এবং পেরেস্ট্রোইকা নীতির লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত ব্যবস্থার সংস্কার এবং পশ্চিমের সাথে সম্পর্ক উন্নত করা।
  • পূর্ব ইউরোপের উপর সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে পড়ে, কারণ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য জনপ্রিয় আন্দোলন এই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
  • অবশেষে, 1989 সালে বার্লিন প্রাচীরের পতন স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি এবং ইউরোপের বিভাজনের প্রতীক।

এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে শীতল যুদ্ধ ছিল একটি জটিল, বহুমুখী ঘটনা, এবং এই সমস্ত কারণগুলি পরস্পর সম্পর্কিত ছিল।

ঠান্ডা লড়াই বলতে কী বোঝো, ঠান্ডা লড়াই এর ঐতিহাসিক পটভূমি ব্যাখ্যা করো

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বিজয়ী মিত্রশক্তিবর্গ পরস্পরবিরোধী দুটি রাষ্ট্রজোটে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদিকে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট, অন্যদিকে ছিল সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই জোটের মধ্যে সমগ্র বিশ্বে রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য স্থাপনের জন্য যে-লড়াই শুরু হয়—তাকে Cold War বা ঠান্ডা যুদ্ধ বলে। প্রত্যক্ষ যুদ্ধ শুরু না-হলেও দুটি বিবদমান জোটের মধ্যে যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরি হয়। এজন্য একে স্নায়ুযুদ্ধ (War of nerves ) বা ব-কলমের যুদ্ধ (Proxy War) বলা হয় ।

ঠান্ডা লড়াই-এর পটভূমি: ঠান্ডা লড়াইয়ের সৃষ্টির পিছনে বেশ কিছু কারণ ছিল :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে

বলশেভিক বিপ্লব শুরু হলে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স বিপ্লব দমন করার জন্য জারকে সাহায্য করে। তা সত্ত্বেও 1917 খ্রিস্টাব্দে লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক সরকার রাশিয়াতে একটি সাম্যবাদী সরকার গঠন করে। এই সরকার প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে সরে আসে। জার্মানির সঙ্গে ব্রেস্টলিটভস্কের সন্ধি স্বাক্ষর করে। এরপর থেকেই বলশেভিক সরকার ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের চক্ষুশূল হয়ে ওঠে। জার্মানিতে হিটলারের উত্থান হলে মিত্রশক্তি তোষণনীতি গ্রহণ করে।

হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করলে আক্রমণের চাপে রাশিয়া দিশাহীন হয়ে পড়ে। জার্মান আক্রমণের চাপ কমানোর জন্য ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে পশ্চিম ইউরোপ দ্বিতীয় একটি রণাঙ্গন খোলার জন্য রাশিয়া আবেদন করে। মিত্রশক্তি এই আবেদনে সাড়া না-দিলে রাশিয়ার সন্দেহ আরও বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, রাশিয়ার গেরিলা আক্রমণে জার্মান নাৎসিবাহিনী বিপর্যস্ত হয়। মিত্রপক্ষ যুদ্ধে জয়ের আশায় দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলে, ফলে মিত্রশক্তির প্রতি রাশিয়ার সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়।

জাপানে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ

পটসডাম সম্মেলন চলাকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ওপর আণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। বাস্তবে জাপান তখন একের-পর-এক যুদ্ধে পরাজিত হচ্ছিল। বোমা নিক্ষেপ না-করলেও জাপান আত্মসমর্পণ করত। কিন্তু আমেরিকার আসল উদ্দেশ্য ছিল আণবিক বোমার ভয় দেখিয়ে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করা। এর ফলে রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে বিদ্বেষ তৈরি হয়।

প্রবিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী অবস্থা

পরাজিত জার্মানির ভবিষ্যৎ নিয়ে সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ তৈরি হয়। রাশিয়া চেয়েছিল জার্মানিতে সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল জার্মানিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তুলতে। ফলে রুশ-মার্কিন বিরোধ চরমে ওঠে।

পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার প্রাধান্য স্থাপন

জার্মান নাৎসিবাহিনীকে বিতাড়িত করে রাশিয়ার লালফৌজ এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া ও লাটাভিয়াকে নিজের দখলে নিয়ে আসে। এরপর পূর্ব ইউরোপের পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, আলবেনিয়া, যুগোশ্লাভিয়া ও চেকোশ্লোভাকিয়াতে সোভিয়েত রাশিয়া তার অনুগত সমাজতান্ত্রিক সরকার স্থাপন করে। এভাবে রাশিয়া পূর্ব ইউরোপে প্রাধান্য স্থাপন করলে পশ্চিমি দেশগুলি আতঙ্কিত হয়ে ওঠে।

মার্কিন সামরিক দফতর পেন্টাগনের সেনাপতিরা ছিল কট্টর রুশ বিরোধী। তারা মার্কিন রাষ্ট্রপতি টুম্যানকে রাশিয়ার প্রতি কঠোর নীতি গ্রহণ করতে উৎসাহিত করে “এদিকে চার্চিলের ফুলটন বক্তৃতা আমেরিকার রুশবিরোধী নীতিতে ইন্ধন জোগায় সব ট্রুম্যান নীতি: ঘোরতর রুশবিরোধী মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান সাম্যবাদী প্রভাব রোধ করার জন্য 1947 খ্রিস্টাব্দের 12 মার্চ ঘোষণা করেন যে, পৃথিবীর যে-কোনো জায়গার স্বাধীন জনগণ যদি কমিউনিস্টদের আগ্রাসন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে—তবে সেখানে তাদের আমেরিকা সব ধরনের সাহায্য দেবে। এটি ‘ট্রুম্যান নীতি’ নামে পরিচিত। এই ঘোষণার ফলে ঠান্ডা লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।

প্রমার্শাল পরিকল্পনা

মার্শাল পরিকল্পনা হল ট্রুম্যান নীতির বাস্তবায়নের পরিপূরক 1947 খ্রিস্টাব্দের 5 জুন মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন মার্শাল ঘোষণা করেন যে, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির অর্থনৈতিক সংকট সাম্যবাদ প্রসারের মূল কারণ। তিনি পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য একটি পরিকল্পনা পেশ করেন যা তাঁর নাম অনুসারে মার্শাল পরিকল্পনা নামে পরিচিত। ফলে রুশ-মার্কিন লড়াই তীব্র হয়। 

বেষ্টনী নীতি

এই পরিস্থিতিতে 1947 খ্রিস্টাব্দের 4 জুলাই রাশিয়াতে কর্মরত প্রাক্তন সহকারি রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ কেন্নান Mr. X ছদ্মনামে ‘Foreign Affairs’ পত্রিকাতে লেখেন যে—রাশিয়া রণক্লান্ত, রুশ জনগণ দুর্দশাগ্রস্ত। রাশিয়ার দিক থেকে আক্রমণের সম্ভাবনা নেই। তাই আমেরিকার উচিত যে-অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাব আছে তাকে সীমাবদ্ধ রাখা। এটি ‘বেষ্টনী নীতি’ নামে পরিচিত।

ইউরোপের সীমা অতিক্রম করে ঠান্ডা লড়াই দাবানলের মতো সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সমগ্র বিশ্বের মানুষের মন ভয়ংকর আণবিক যুদ্ধের ভয়ে অস্থির হয়ে ওঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করে NATO, SEATO, CENTO, MEDO মতো সামরিক জোট। সোভিয়েত রাশিয়া তৈরি করে ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা—COMECON । সমগ্র বিশ্ব পরস্পরবিরোধী জোটে বিভক্ত হয়। 1991 খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েতের পতন ঘটলে এর অবসান ঘটে।

ঠান্ডা লড়াই এর তাত্ত্বিক ভিত্তি আলোচনা করো

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবসানের পর আদর্শগত দিক থেকে সমগ্র পৃথিবী দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদিকে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্র জোট আবার অন্যদিকে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বা সাম্যবাদী রাষ্ট্র ও জোর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই দুই রাষ্ট্র জোট সমগ্র পৃথিবীতে নিজেদের সামগ্রিক ও রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্র বিস্তারের উদ্দেশ্য লড়াইয়ের আবর্তিত হয় তা ঠান্ডা লড়াই নামে পরিচিত।

ঠান্ডা লয়ের তাত্ত্বিক ভিত্তি

বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ঠান্ডা লড়াইয়ের তাত্ত্বিক ভিত্তি ব্যাখ্যা করেছেন। এই ব্যাখ্যা গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—

১. আদর্শগত সংঘাত

অধ্যাপক H.F হার্ট ম্যান, জন ইস্কোনিয়ার প্রমুখের মতে ঠান্ডা লড়াই প্রকৃতপক্ষে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে পশ্চিমে ধনতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক জোটের আদর্শগত সংঘাত ছিল।

২. সংশোধনবাদী ব্যাখ্যা

ওয়ালটার লিপম্যান তার ” the cold war” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রপূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত রাশিয়ার স্বার্থ বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে রাশিয়া আমেরিকার বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনা হয়। লিফম্যান এর অভিমত পরবর্তীকালে উইলিয়াম এ উইলিয়াম লোড ঐতিহাসিক সমর্থন করেন প্রথম পর্বের ঠান্ডা লড়াই পরবর্তী কালে তা দূর করা যেত কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনমনীয় মনোভাবের জন্য তা সম্ভব হয়নি।

৩. অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা

গ্রাবিয়াল কল্প, কডেল হাল, প্রমুখ ঐতিহাসিকের মতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতি সম্প্রসারণের ফলে ঠান্ডা লড়াইয়ের সূত্রপাত ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা মার্শাল পরিকল্পনা বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্য করে। বিশ্ব অর্থনীতি চালকের আসন লাভ করার চেষ্টা করা। সোভিয়েত রাশিয়া আমেরিকা এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করলে তা অনুগামী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে আমেরিকার বিরোধিতা তৈরি করে।

৪. রক্ষণশীল ব্যাখ্যা

এই মতবাদে বিশ্ববাসীদের মতে ঠান্ডা লড়াই ছিল আদর্শগত বিরোধ এবং এর জন্য দায়ী ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সাম্যবাদী আদর্শ এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। সোভিয়েত ইউনিয়নের উগ্র সম্প্রসারণ নীতির জন্য পৃথিবীতে আতঙ্ক ও নিরাপত্তা হীনতা সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করলে ফ্রান্স ইতালি ইত্যাদি কমিউনিস্ট দলকে জঙ্গিপথের দিশা দেখিয়ে পশ্চিমে দুনিয়ার আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে। এইভাবে রাশিয়া ঠান্ডা লড়াই এর প্রেক্ষাপট তৈরি করে।

৫. বাস্তববাদী ব্যাখ্যা

হেন্স যে মারগেন থাউ এবং লুই যে হ্যালের নেতৃত্বে একদল ঐতিহাসিকের মতে ঠান্ডা লড়াই এর জন্য এককভাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন দায়ী ছিল না হয় উভয়পক্ষেই দায়ী ছিল, না হয় কোন পক্ষই দায়ী ছিল না আবার মরগানের মতে রুশ সম্প্রসারণ নীতি ও সাম্যবাদী আদর্শকে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র পছন্দ করেনি। আর অপরদিকে আমেরিকা ধনতান্ত্রিক জোটের রক্ষক হিসাবে রাশিয়াও মেনে নিতে চাইছিল না।

ঠান্ডা লড়াই এর বিভিন্ন পর্যায়

ঠান্ডা লড়াইয়ের উদ্ভব ঘটে তিনটি পর্যায়ে, যথা-

  • [i] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী পর্যায়
  • [ii] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পর্যায়
  • [iii] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পর্যায়

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী পর্যায়

রুশ বিপ্লবের সময় থেকেই বলশেভিকরা আদর্শগত কারণে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগােষ্ঠীর চক্ষুশূল ছিল। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বলশেভিক বিপ্লবকে দমন করার জন্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগােষ্ঠী (আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স) জারতন্ত্রের সমর্থনে রাশিয়ায় সেনা পাঠায়। সমাজতন্ত্রকে সূচনাকালেই শেষ করে দেওয়া ছিল তাদের উদ্দেশ্য। কাজেই রাশিয়ার সমাজতন্ত্রের জন্মলগ্ন থেকেই বিশ্বে ‘দ্বিমেরুকরণ রাজনীতির জন্ম হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পর্যায়

দ্বিতীয় রণাঙ্গনের ভূমিকা

যুদ্ধ চলাকালে জার্মানির প্রবল আক্রমণে দিশাহারা সােভিয়েত রাশিয়ার পশ্চিমি জোটের কাছে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খােলার অনুরােধকে নিয়ে চার্চিলের দুমুখাে নীতি স্টালিনকে ক্রুদ্ধ করে তােলে।

মার্কিন সমর দপ্তর পেন্টাগনের প্রভাব

মার্কিন সামরিক দপ্তর পেন্টাগনের সেনাপতিরা কট্টর রুশ বিরােধী ছিলেন। তারা কখনােই চাননি আমেরিকা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নরম মনােভাব পােষণ করুক। তারা মার্কিন রাষ্ট্রপতি টুম্যানকে সােভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করতে উসকানি দেন। এ ছাড়াও ইয়াল্টা সম্মেলনে। (১৯৪৫ খ্রি.) পােল-সীমান্ত নিয়ে সােভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমি শক্তিগুলির মতপার্থক্য এবং গ্রিসের মুক্তিযুদ্ধে ইঙ্গ-মার্কিন হস্তক্ষেপ লিনকে রুষ্ট করে তােলে।

টুম্যানের দায়িত্ব

আমেরিকার নতুন রাষ্ট্রপতি টুম্যান ছিলেন প্রবলভাবে সােভিয়েত-বিরােধী। পােল্যান্ড থেকে জার্মান সৈন্য সরে গেলে সেখানে রুশ প্রভাবিত সরকার গঠিত হয়। এতে ক্রুদ্ধ টুম্যান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলােটভের কাছে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

পটল্ডাম সম্মেলন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন শেষ শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় পটল্ডামে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে। পটল্ডাম সম্মেলনে জার্মানির সমস্ত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়নি। জার্মানির ভবিষৎ নির্ধারণ নিয়ে সােভিয়েত ও মার্কিন মতবিরােধ প্রকট হয়ে ওঠে। পারস্পরিক চাপানউতােরের মধ্যে দিয়ে এই সম্মেলন শেষপর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। বলা হয় পটল্ডাম সম্মেলন থেকেই ঠান্ডা লড়াই প্রকাশ্যে আসে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পর্যায়

পাঁচ বিদেশমন্ত্রীর সম্মেলন

অক্ষশক্তিভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে শান্তি চুক্তির খসড়া রচনার লক্ষ্যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, সােভিয়েত রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও চিন এই পাঁচটি দেশের বিদেশমন্ত্রীরা এক কাউন্সিল গঠন করেন। কিন্তু এই কাউন্সিলের কার্যকলাপে সােভিয়েত রাশিয়ার সন্দেহ হয় যে পশ্চিমি শক্তি পূর্ব ইউরােপে দ্রুত হাজির হওয়ার উদ্দেশ্যে জার্মানির সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

চার্চিলের ফালটন বক্তৃতা

ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আমেরিকার মিসৌরি প্রদেশের অন্তর্গত ফালটনে ওয়েস্টমিনস্টার কলেজে এক ভাষণে (১৯৪৬ খ্রি., ৫ মার্চ) বলেন, উত্তর বালটিক সাগরের তীরবর্তী স্টেটিন থেকে দক্ষিণে অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের ট্রিয়েস্ট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল লৌহ যবনিকার (সােভিয়েত) আড়ালে ঢাকা। ফালটন বক্তৃতায় চার্চিল রুশ আগ্রাসন থেকে ইউরােপীয় সভ্যতাকে রক্ষা করার দায়িত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অর্পণ করেন।

কেন্নানের বেষ্টনী তত্ত্ব

সােভিয়েত রাশিয়ায় কর্মরত প্রাক্তন সহকারী মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ. কেন্নান, মি. এক্স ছদ্মনামে আমেরিকার ফরেন অ্যাফেয়ার্সনামক পত্রিকায় এক প্রবন্ধে সােভিয়েত রাশিয়ার আক্রমণাত্মক নীতি প্রতিহত করার জন্য এবং সােভিয়েত প্রভাবকে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য বেষ্টনী-তত্ত্ব’ (১৯৪৭ খ্রি., ৪ জুলাই) প্রকাশ করেন, যা মার্কিন প্রশাসন মেনে নেয়।

টুম্যান নীতি

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হ্যারি টুম্যান মার্কিন কংগ্রেসে এক বক্তৃতায় (১৯৪৭ খ্রি., ১২ মার্চ) তুরস্ক ও গ্রিস সহ বিশ্বের যে-কোনাে দেশকে সােভিয়েত অগ্রাসনের বিরুদ্ধে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দেন যা টুম্যান নীতি নামে পরিচিত। ঠান্ডা লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় এই নীতি ঘােষণার মাধ্যমে।

মার্শাল পরিকল্পনা

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন আমেরিকা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী জর্জ মার্শাল যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরােপে আর্থিক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে এক পরিকল্পনা পেশ করেন, যা মার্শাল পরিকল্পনা নামে পরিচিত। ইউরােপে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা নিয়ে টুম্যান নীতির পরিপূরক হিসেবে উপস্থাপিত হয় এই মার্শাল পরিকল্পনা। ফলে আরও ঘনীভূত হয়ে ওঠে ঠান্ডা লড়াই।

সােভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে আর্থিক সহায়তা পরিষদ গঠন

সােভিয়েত রাশিয়া, ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গঠন করে কমিকন নামে একটি আর্থিক সহায়তা পরিষদ। মার্শাল পরিকল্পনার প্রত্যুত্তর হিসেবে কমিকন গঠিত হয়েছিল।

আমেরিকার নেতৃত্ব শক্তিজোট গঠন

সােভিয়েত আগ্রাসন প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে গড়ে তােলে ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা। তারপর একে একে গড়ে তােলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা’, ‘মধ্যপ্রাচ্য প্রতিরক্ষা সংস্থা। পরবর্তীকালে এটির নাম হয় ‘মধ্য এশিয়া চুক্তি সংস্থা’, ‘অ্যানজাস’ ইত্যাদি শক্তিজোট।

সােভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে শক্তিজোট গঠন

আমেরিকার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা পশ্চিমি সামরিক শক্তিজোট ন্যাটোর জবাবে সােভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব ইউরােপীয় দেশগুলিকে (রাশিয়া, পােল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেকোশ্লোভাকিয়া, রুমানিয়াে, বুলগেরিয়া, আলবেনিয়া ও পূর্ব জার্মানি) নিয়ে গঠিত হয় ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা, যা ছিল একটি যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

উপসংহার

শুধুমাত্র ইউরােপেই নয়, ঠান্ডা লড়াইয়ের পরিধি সারা বিশ্বেই সম্প্রসারিত হয়। এক ভয়ংকর যুদ্ধভীতি সমগ্র বিশ্বের মানুষকে অস্থির করে তোল। মরগ্যানথাউ এবং লুই জে. হ্যালের মতাে বাস্তববাদীরা ঠান্ডা লড়াইকে মূলত ক্ষমতার রাজনীতি আর শক্তিসাম্যের সংকট থেকে উদ্ভূত এক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নােয়াম চমস্কির মতে—ঠান্ডা যুদ্ধ হল এমন একটি কার্যকরী ব্যবস্থা যাতে মহাশক্তিধর দেশগুলি নিজেদের অঞ্চলগুলি নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল।

ঠান্ডা লড়াই কে গরম শান্তি বলেছেন, ঠান্ডা লড়াই কে গরম শান্তি কে বলেছেন, ঠান্ডা লড়াই কে গরম শান্তি বলে চিহ্নিত করেছেন

ঠান্ডা লড়াইকে ‘গরম শান্তি বলেছেন বার্নেট।

মার্শাল পরিকল্পনা (১৯৪৮) কে ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনা রূপে চিহ্নিত করা হয় । কিন্তু এর বহু পূর্বেই ঠান্ডা যুদ্ধ. শুরু হয়ে গিয়েছিল ।

ঠান্ডা লড়াই pdf

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | ঠান্ডা লড়াই

Q1. ঠান্ডা লড়াই কি, ঠান্ডা লড়াই কী

Ans – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে (১৯৪৫ খ্রি.) সােভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট এবং আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের মধ্যে কোনাে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না হলেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চলতে থাকে। প্রকৃত যুদ্ধের সূচনা না হলেও উভয়ের মধ্যে চলতে থাকা এই যুদ্ধের পরিবেশকে ঠান্ডা লড়াই নামে অভিহিত করা হয়।

Q2. ঠান্ডা লড়াই পরবর্তী বিশ্ব, ঠান্ডা লড়াই পরবর্তী বিশ্বের বৈশিষ্ট্য

Ans – ঠান্ডা লড়াই পরবর্তী যুগ হল ইতিহাসের একটি সময় যা স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি অনুসরণ করে , যা 1991 সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পরে ইতিহাসের প্রতিনিধিত্ব করে । এই সময়কালে অনেক প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল , সেইসাথে সূচনা হয়েছিল। পূর্ব ইউরোপের বাজার অর্থনীতির । এই সময়কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে ।

Q3. ঠান্ডা লড়াই কবে শুরু হয়

Ans – ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কাল 1945 থেকে 1991 পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

Q4. ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির অবলুপ্তি কি নামে পরিচিত

Ans – বিভিন্ন সময়ে আয়ােজিত একাধিক সম্মেলনে গৃহীত প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির অবসান ঘটে ।

Q5. ঠান্ডা লড়াই কথাটি কে জনপ্রিয় করে তোলেন

Ans – ‘ঠান্ডা লড়াই’ শব্দটি প্রথম জনপ্রিয় করে তোলেন মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান।

Q6. স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয় কত সালে

Ans – ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান ঘটে 1991 সালে।

Q7. ঠান্ডা যুদ্ধের সময় মার্কিন নেতৃত্বে গঠিত পশ্চিমি সামরিক জোটটির নাম কী

Ans – ঠান্ডা যুদ্ধের সময় মার্কিন নেতৃত্বে গঠিত পশ্চিমি সামরিক জোটটির নাম হল ন্যাটো (NATO)।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।