সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বোঝো, নয়া সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বোঝো

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে

সাম্রাজ্যবাদের সংজ্ঞা নিয়ে নানা মত রয়েছে। প্রথমদিকে এর অর্থ ছিল সামরিক কর্তৃত্ব। পরবর্তীকালে বলা হয় একটি দেশ নিজের স্বার্থে অন্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিনাশ বা সংকুচিত করে সেই দেশ ও জাতির ওপর যে প্রভুত্ব বা কর্তৃত্ব স্থাপনের চেষ্টা করে তা হল সাম্রাজ্যবাদ (Imperialism)।

সাম্রাজ্যবাদের সংজ্ঞা

সাম্রাজ্যবাদের সংজ্ঞা সম্পর্কে বিভিন্ন ইতিহাসবিদের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে ।

  • লেনিনের মত: ভি. আই. লেনিন তার Imperialism The Highest Stage of Capitalism গ্রন্থে লিখেছেন সাম্রাজ্যবাদ হলো পুঁজিবাদের একচেটিয়া জায়গা ।
  • হবসনের মত: জন. এ. হবনসন তার Imperialism A Study গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন প্রাথমিক স্তরে জাতীয়তাবাদ অন্যদেশে উপনিবেশ গড়ে তোলার প্রেরণা জাগায় এবং পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদের রূপ নেয় ।
  • মর্গানথার্ড এর মত: অধ্যাপক হ্যান্স মরগ্যানথাউ এর ধারণায় নিজ এলাকার বাইরে রাষ্ট্রক্ষমতার সম্প্রসারণই হলো সাম্রাজ্যবাদ ।
  • সুম্যান এর মত: সুম্যাণ এর মতে বলপ্রয়োগ ও হিংসার সাহায্যে কোনো দেশের ওপর বৈদেশিক শাসন চাপিয়ে দেওয়াকে সাম্রাজ্যবাদ বলে ।

সাম্রাজ্যবাদের উদ্দেশ্য

সাম্রাজ্যবাদের নানা উদ্দেশ্য ছিল, যেমন—

  • অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ
  • জাতীয়তাবাদের সম্প্রসারণ
  • জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা
  • জনসংখ্যার সংকুলান এবং
  • ধর্ম ও সভ্যতার আদর্শ প্রচার।

সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বোঝায়

সাধারণভাবে বলা যায় সাম্রাজ্যবাদ এমন এক নীতি বা কার্যক্রম যাতে ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে । অধিকতর শক্তিশালী দেশ কতৃক অপেক্ষাকৃত দুর্বল তর দেশের উপর বৈদেশিক রাষ্ট্র ও সরকারের উপর আধিপত্য স্থাপন সাম্রাজ্যবাদ নামে অবিহিত ।

অন্যদিকে একটি দেশের অন্য দেশে আধিপত্য স্থাপন করে বসতি গড়ে তোলা বা শাসন করার যে ঘটনা তা উপনিবেশবাদ নামে অভিহিত । এই উপনিবেশবাদ পরোক্ষভাবে সাম্রাজ্যবাদের ই নামান্তর ।

নিচে সাম্রাজ্যবাদের বিভিন্ন দিকগুলি আলােচনা করা হলো:-

সামরিক সাম্রাজ্যবাদ

সাম্রাজ্যবাদের একটি প্রধান রূপ হল এর সামরিক রাজনৈতিক দিক। আলেকজান্ডার, নেপােলিয়ান, হিটলারের মতাে সমর বিজেতাগণ সামরিক বিজয়ের মধ্যে দিয়ে অপরের রাজ্য দখল করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ নিজ স্বার্থে অন্য দেশের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে এবং সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করেছে। চেকোশ্লোভাকিয়া এবং হাঙ্গেরিতে সােভিয়েত সামরিক হস্তক্ষেপের মধ্যে অথবা নিকারাগুয়াতে বিদ্রোহীদের মার্কিন তরফে সামরিক অস্ত্র জোগানের মধ্যে সামরিক সাম্রাজ্যবাদের পরিচয় মেলে।

অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ

সামরিক সাম্রাজ্যবাদ ছাড়াও অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ। বাণিজ্যিক স্বার্থরক্ষার তাগিদেই মূলত এটির উদ্ভব। ইউরােপে শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী পর্যায়ে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ইত্যাদি দেশের শিল্পপতিগণ এই সাম্রাজ্যবাদকে ত্বরান্বিত করেন। পরবর্তী সময়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি বণিক কোম্পানিগুলির উদ্যোগে এবং রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের দরুন সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার ঘটে। দেখা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থের লক্ষ্য লাতিন আমেরিকার ওপর শােষণ চালায়। তৈলসম্পদের লােভে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতাে দেশগুলি আরব বিশ্বের ওপর প্রভুত্ব কায়েম করে।

সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ

সাম্রাজ্যবাদের আর-একটি রূপ হল সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ। অন্য দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, অধিবাসীর রুচিবােধ, মননশীলতা, পছন্দ ও অপছন্দের দিকগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টাই হল সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ। সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের মূল উদ্দেশ্য হল সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে নিজ নিজ দেশের সংস্কৃতির প্রসার ঘটানাে। অনেক সময় সংস্কৃতির ধ্যানধারণার প্রচারের নামে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রসারেরও চেষ্টা চালানাে হয়, যেমন পূর্বতন সােভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ইউরােপের দেশগুলিতে কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রণের মধ্যে দিয়ে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ঘটানাের চেষ্টা চালিয়েছিল। মূলত ১৯৫০-এর দশক থেকেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব বাড়তে থাকে।

সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণ, সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের কারণ

আধুনিক পৃথিবীতে উপনিবেশবাদ বা সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন কারণ রয়েছে ।

রাজনৈতিক কারণ

সাম্রাজ্যবাদ প্রসারে রাজনৈতিক কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হলো উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা –

  • উগ্র জাতীয়তাবাদ: ১৮৭০ দশকের পর থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে । প্রতিটি জাতি মনে করে যে, তারাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি এবং পৃথিবী শাসন করার অধিকার একমাত্র তাদের আছে । ইংল্যান্ড, জার্মান, রাশিয়া, ইতালি প্রভৃতি দেশ তাদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে উদ্যোগ হয় । পারস্পরিক সন্দেহ, বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায় এবং যুদ্ধ পরিস্থিতি শুরু হয়। এই পরিস্থিতি তে ইউরোপের দেশগুলি এশিয়া, আফ্রিকার মত অনুন্নত দেশগুলিতে নিজেদের রাজনীতির প্রসার ঘটায়।
  • ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা: ইউরোপের দেশ গুলি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি সম্পত্তি বাড়ানোর জন্য উপনিবেশ প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হয় । ইতালি, জার্মান সহ বিভিন্ন দেশ কেবলমাত্র রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য উপনিবেশ স্থাপনে অগ্রসর হয়।

অর্থনৈতিক কারণ

সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিক কারণ গুলি হল –

  • কাচামাল সংগ্রহ: শিল্প বিপ্লব জনিত কারণে ইউরোপের শিল্প উন্নত দেশগুলির কারখানায় খুব অল্প সময়ে প্রচুর পরিমাণে শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন করতে থাকে এবং এই উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন ছিল পর্যাপ্ত কাঁচামাল। এ কাঁচামালের যোগান সংশ্লিষ্ট দেশে পাওয়া সম্ভব ছিল না ফলে স্বাভাবিক ভাবে বাইরে থেকে কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলি সুকৌশলে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উপনিবেশিকতার প্রসার ঘটায়।
  • বাজার দখল: ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের ফলে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য বাজার দখলের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যেহেতু ইউরোপের প্রতিটি দেশেই আফ্রিকার অতিরিক্ত পণ্য উৎপাদিত হয়, তাই তাদের কাছে এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত অঞ্চলগুলিতে বাজার দখল অনিবার্য হয়ে পড়ে । যে কারণে তারা উপনিবেশ স্থাপনের সচেষ্ট হন।
  • পুঁজি বিনিয়োগ: হবসন এবং লেনিন মনে করতেন বিপুল পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে শিল্পোন্নত দেশগুলি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত অঞ্চল গুলিকেই বেছে নিয়েছিল।
  • সস্তায় শ্রমিক সংগ্রহ: শিল্পোৎপাদনের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ এবং ইউরোপের কল-কারখানা গুলিতে কার্যক্রম দানের জন্য সস্তায় প্রচুর সংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন ছিল, যে কারণে তারা উপনিবেশ স্থাপনের আগ্রহী হন।

সামরিক কারণ

ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের সামরিক কারণ গুলি হল –

  • নিরাপত্তা বৃদ্ধির চেষ্টা: ১৮৭০ এর দশকের পর থেকে সাম্রাজ্যবাদের যে প্রসার ঘটেছিল তার ফলস্বরূপ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ, বিদ্বেষ, হিংসা প্রভৃতি বৃদ্ধি পায়, এই কারণে এই সমস্ত দেশের প্রয়োজন ছিল একটি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা । এইজন্য দেশগুলি নিজেদের দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে থাকে।
  • সামরিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা: ইউরোপের অনেক দেশ কেবলমাত্র নিজেদের সামরিক শক্তি ও মর্যাদা তুলে ধরার জন্য উপনিবেশ স্থাপনের পথ বেছে নেয়।

সামাজিক কারণ

ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদের সামাজিক কারণ গুলি হল – 

  • জনসংখ্যা বৃদ্ধি: ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই বর্ধিত জনসংখ্যার প্রয়োজনীয় বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের জন্য এই সমস্ত দেশের কাছে উপনিবেশ দখল করা জরুরী হয়ে পড়েছিল।
  • সভ্যতার প্রসার: সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাবিদ যেমন ধুডিয়ার্ড বিপলিং কিংবা ফরাসি লেখন যুলিস ফেরি মনে করেন যে এশিয়া, আফ্রিকার অনুন্নত মানুষদের উন্নত করার জন্য সাদা চামড়ার মানুষদের কাছে দায়বদ্ধতা আছে।

ধর্মীয় কারণ

ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের ধর্মীয় কারণ গুলি হল –

  • ধর্ম প্রচার: ইউরোপের খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারক এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলিতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করে অন্ধকারাচ্ছন্ন জাতি গুলিকে আলোর জগতে আনার উদ্দেশ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেন এই সমস্ত ধর্মপ্রচারকদের অনুসরণ করে ইউরোপ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।

প্রযুক্তিগত কারণ

আধুনিককালে কেউ কেউ মনে করেন যে প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতিতে মন উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা যন্ত্রচালিত যান, ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের অভিযান স্পৃহা কে বাড়িয়ে দিয়েছিল । ফিলিপ কর্টিন, লিওনার্ড থম্পসন, ড্যানিয়েল হেনবিক প্রমুহ ।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো

আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল নয়া উপনিবেশবাদ ও নয়া সাম্রাজ্যবাদ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসনের ব্যাখ্যা

ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তার সাম্রাজ্যবাদঃ একটি সমীক্ষা নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল一

অর্থনৈতিক মুনাফা লাভ

হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনাে মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে মূলধনের পাহাড় সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়ােগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে।

পুঁজিপতিদের চাপ

হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়ােগ করার জন্য পুঁজিপতিরা নিজ দেশের সরকারকে উপনিবেশ দখলে বাধ্য করে। অর্থাৎ হবসনের মতে, বাড়তি মূলধনের চাপ ই সাম্রাজ্যবাদ বা উপনিবেশ দখলের মূল কারণ।

অর্থনৈতিক শােষণ

হবসন দেখিয়েছেন যে, অধিক মুনাফা ও সম্পদ অর্জনের জন্য ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র উপনিবেশ থেকে ধারাবাহিকভাবে কাঁচামাল সংগ্রহ এবং উপনিবেশের বাজারে নিজেদের শিল্পজাত পণ্য বিক্রয় করতে থাকে। এইভাবে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র কর্তৃক উপনিবেশগুলি শােষিত হয় এবং পরিণামে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও ফুলে ফেঁপে ওঠে।

ঔপনিবেশিকতাবাদের অবসানের উপায়

হবসনের মতে, এই ব্যবস্থার প্রতিকার করতে হলে পুঁজিপতিদের বাড়তি মূলধন দরিদ্র শ্রেণির মানুষগুলাের মধ্যে বিতরণ এবং বিভিন্ন উন্নয়নকার্যে তা ব্যবহার করতে হবে। তার মতে, যদি লােকের জীবনযাত্রার মান বাড়ে, তবে তারা কলকারখানায় তৈরি বাড়তি জিনিস কিনে উদ্বৃত্ত মালকে ব্যবহার করতে পারবে। ফলে উদ্বৃত্ত মালের বিক্রির জন্য উপনিবেশ দখলের দরকার হবে না।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে লেনিনের ব্যাখ্যা

রাশিয়ার বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের প্রসারের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন তার সাম্রাজ্যবাদঃ পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর নামক গ্রন্থে (১৯১৬ খ্রি.)। এ সম্পর্কে তার প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি হল一

পুঁজির উদ্ভব এবং তা বিনিয়ােগ

ইউরোপের দেশগুলিতে শিল্পের অগ্রগতি ঘটার ফলে পুঁজিপতিদের হাতে বিপুল পরিমাণ পুঁজি জমা হয়। এবার তারা আরও বেশি মুনাফা অর্জনের জন্য সেই পুঁজি পুনরায় বিনিয়ােগ করতে উদ্যত হয় এবং এজন্য তারা বেছে নেয় উপনিবেশগুলিকে। তারা উপনিবেশ থেকে সংগ্রহ করা কাঁচামাল নিজের দেশে না নিয়ে গিয়ে উপনিবেশেই পুঁজি বিনিয়ােগ করতে চায়। তাই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পুঁজিবাদী শ্রেণির স্বার্থে উপনিবেশ দখল করে এবং পুঁজিবাদীরা সেখানেই পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা চালায়।

বাজার দখল ও কাঁচামাল সংগ্রহ

অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের শিল্প মালিকরা নিজ দেশের প্রয়ােজনের তুলনায় অনেক বেশি পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করে। প্রয়ােজনের অতিরিক্ত এই পণ্য উৎপাদনের জন্য সস্তায় কাঁচামাল সংগ্রহ এবং সেই পণ্যকে বিক্রি করার জন্য প্রয়ােজন ছিল উপনিবেশের। লেনিনের মতে, এই উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করতে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি উপনিবেশ দখলের চেষ্টা চালায়।

প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সাম্রাজ্যবাদ

লেনিন বলেছেন, পুঁজিবাদের জঠরে সাম্রাজ্যবাদের জন্ম। উপনিবেশ দখলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়ে যায়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা জন্ম দেয় যুদ্ধের। অর্থাৎ পুঁজিবাদী অর্থনীতিই হল যুদ্ধের জন্মদাতা—যার সূত্রপাত হয় উপনিবেশ দখলকে কেন্দ্র করে।

অনুগত অভিজাত শ্রমিক শ্রেণির প্রতিষ্ঠা

পুঁজিবাদী অর্থনীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, মালিক শ্রেণির কর্তৃক শ্রমিক শ্রেণির শােষণ। কিন্তু লেনিনের মতে, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলিকে উপনিবেশে পরিণত করে সেখানকার নতুন শ্রমিক শ্রেণির ওপর শােষণ চালালেও নিজ দেশের শ্রমিকদের উৎকোচ দিয়ে বশীভূত করেছিল। কারণ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলির লক্ষ্য ছিল নিজ দেশের এই অনুগত অভিজাত শ্রমিক শ্রেণি-কে শ্রমিক বিপ্লব থেকে বিরত রাখা।

মূল্যায়ণ: উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন ও লেনিনের তত্ত্ব সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নয়। বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই তত্ত্বের ভ্রান্তি ধরা পড়ে। তবে এই তত্ত্বের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। তাই ডেভিড থমসনকে সমর্থন করে বলা যায় যে, সাগরপারে নিরাপদ বিনিয়ােগের ক্ষেত্র সন্ধানের আগ্রহই ইউরােপীয় দেশগুলিকে উপনিবেশ দখলে বিশেষ উদ্যোগী করে তুলেছিল।

সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের মধ্যে পার্থক্য

কারণসাম্রাজ্যবাদউপনিবেশবাদ
সংজ্ঞাসাম্রাজ্যবাদ যখন একটি দেশ বা একটি সাম্রাজ্য তার ক্ষমতা ব্যবহার করে অন্যান্য দেশের প্রভাবিত শুরু হয়।ঔপনিবেশিকতা যখন একটি সাম্রাজ্য বা একটি দেশ যায় এবং অন্য দেশ বা অঞ্চল জয় করে। এই নতুন অঞ্চলে বসতি স্থাপন উপনিবেশবাদ একটি অংশ।
বসতি স্থাপনসাম্রাজ্যবাদে, সাম্রাজ্য অর্জিত এলাকাতে শিকড় বসানোর চেষ্টা করে না।উপনিবেশবাদে, সাম্রাজ্যটি সেখানে বসতি স্থাপন করে অর্জিত অঞ্চলটিতে শিকড় কেটে ফেলে।
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিসাম্রাজ্যবাদ অর্থনৈতিক উপকারিতা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন নয়। এটি রাজনৈতিক ক্ষমতার সাথে আরো বেশি উদ্বিগ্ন।ঔপনিবেশিকতা বিজয়ী দেশটির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট।
সময়রোমানদের সময় থেকে সাম্রাজ্যবাদ প্রচলিত হয়েছেঔপনিবেশিকতা শুধুমাত্র 15 তম শতাব্দী থেকে প্রযোজ্য হয়েছে
সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের মধ্যে পার্থক্য

নয়া সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বোঝো

নয়া সাম্রাজ্যবাদ (Neoimperialism) হল একটি আধুনিক সাম্রাজ্যবাদী অনুশীলন, যার মাধ্যমে উন্নত দেশগুলো ছোট দেশগুলোতে আধিপত্য কায়েম করার জন্য শক্তি এবং প্রভাব ব্যবহার করে। অর্থাৎ, নব্য সাম্রাজ্যবাদ হল আইনি চুক্তি, অর্থনৈতিক ক্ষমতা এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবের মাধ্যমে গরিব এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কর্তৃত্ব কায়েম করা।

উনিশ শতকের শেষভাগে, ইউরােপের প্রতিটি দেশেই শিল্পায়নের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে প্রচুর মূলধন জমে যায়। সেই মূলধনের বিনিয়ােগ, কলকারখানার জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ এবং কারখানায় উৎপন্ন পণ্যাদি বিক্রির জন্য বাজার দখলকে কেন্দ্র করেই এই নয়া সাম্রাজ্যবাদের উৎপত্তি।

বিংশ শতাব্দীতে, বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, নয়া সাম্রাজ্যবাদ বিশ্ব রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক আধিপত্য নয়া সাম্রাজ্যবাদের অন্যতম উদাহরণ। বিশ্বে অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন এবং একচেটিয়া পুঁজিবাদের মাধ্যমে এটি কায়েম করতেছে।

বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক সংস্থা (বিশ্ব ব্যাংক, জাতীসংঘ, আইএমএফ), জোট (ন্যাটো), মার্কিন ডলার, একচেটিয়া পুঁজি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, এবং উৎপাদন মাধ্যম ইত্যাদি ব্যবহার করে সারা বিশ্বে নয়া সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করছে।

নয়া সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে

নতুন সাম্রাজ্যবাদ 19 শতকের শেষের দিকে এবং 20 শতকের প্রথম দিকে ইউরোপীয় শক্তি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণের সময়কালকে চিহ্নিত করে । এই সময়কালে বিদেশী আঞ্চলিক অধিগ্রহণের একটি অভূতপূর্ব সাধনা ছিল।

সেই সময়ে, রাজ্যগুলি নতুন প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং উন্নয়নের সাথে তাদের সাম্রাজ্য গড়ে তোলা, বিজয়ের মাধ্যমে তাদের অঞ্চল সম্প্রসারণ এবং পরাধীন দেশগুলির সম্পদ শোষণের দিকে মনোনিবেশ করেছিল। নতুন সাম্রাজ্যবাদের যুগে, পশ্চিমা শক্তি (এবং জাপান) পৃথকভাবে প্রায় সমগ্র আফ্রিকা জয় করেছিলএবং এশিয়ার কিছু অংশ।

নয়া সাম্রাজ্যবাদ কথাটি ব্যবহার করেন কে

নয়া সাম্রাজ্যবাদ কথাটি ডেভিড টমসন ব্যবহার করেন।

‘নয়া উপনিবেশবাদ’— এই কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। ফরাসি ইতিহাসবিদগণ এবং মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকগণ।

নয়া উপনিবেশবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ

  • উপনিবেশহীন সাম্রাজ্যবাদ: অনেকে নয়া উপনিবেশবাদকে উপনিবেশহীন সাম্রাজ্যবাদ আখ্যা দিয়ে থাকেন। যদিও অতীত উপনিবেশগুলির অর্থনীতি-সহ নানা ক্ষেত্রগুলির ওপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বাইরে থেকে তার নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখে কিন্তু অতীত উপনিবেশগুলি আপাতভাবে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত থাকে।
  • বাজার অর্থনীতি: নয়া উপনিবেশবাদের একটি মূল বৈশিষ্ট্য হল বাজার অর্থনীতি (Market Economy)। বাজারি অর্থনীতিকে হাতিয়ার করে পুঁজিবাদ বর্তমান বিশ্ব অর্থব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে উদ্যত। রাশিয়া ও চিন এই দুই সমাজতান্ত্রিক দেশের হাত ধরে বাজারি অর্থনীতি প্রবর্তিত হয়। পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাজারি অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে।
  • আনুষ্ঠানিকতাহীন সাম্রাজ্যবাদ: অনেকের ধারণায় নয়া উপনিবেশবাদ আনুষ্ঠানিকতাহীন সাম্রাজ্যবাদ (Informal Imperial ism) ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ এই ব্যবস্থায় সরাসরি সাম্রাজ্য স্থাপন না করে বাইরে থেকে সুকৌশলে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র ও দুর্বল দেশগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এখানে সুকৌশল বলতে বৈদেশিক ঋণ, বৈদেশিক অনুদান, আধুনিক সমরাস্ত্র সরবরাহ এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সাহায্যদানকে বােঝানাে হয়েছে।
  • অর্থনৈতিক অধীনতা: নয়া উপনিবেশবাদের আর-একটি বৈশিষ্ট্য হল অর্থনৈতিক অধীনতা (Economical Dependency)। ধনী বিশ্বের বহুজাতিক সংস্থাগুলি অতীত দিনের উপনিবেশগুলির আর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এগিয়ে আসে। বহুজাতিক সংস্থাগুলি মূলত তিনটি উপায়ে বহির্বিশ্বের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে, যথা-
    • [i] মূলধনের লগ্নি।
    • [ii] প্রযুক্তিগত কলাকৌশল সরবরাহ।
    • [iii] পরিচালনা দক্ষতার ধারণাদান।

কোনাে দেশের শিল্পক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য এই তিনটি উপাদান অপরিহার্য।

  • সামরিক নিয়ন্ত্রণ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ন্যাটো, সিয়াটো, সেন্টো বা বাগদাদ চুক্তি, অ্যানজাস চুক্তি প্রভৃতি গঠনের মাধ্যমে বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি দুর্বল দেশগুলির ওপর সামরিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, পশ্চিম জার্মানি, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশগুলি নিজেদের সমরকৌশলের অঙ্গরূপে নিরাপত্তার নামে অনুন্নত দেশগুলিতে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করে।
  • রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ: শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি নিজেদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে অনেক সময় দুর্বল দেশগুলিকে বিভিন্ন ধরনের সাহায্য দিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে সে দেশের সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেই সরকারকে শেষপর্যন্ত পুতুল সরকারে পরিণত করে।

ভৌমিক সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে

সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকের মধ্যে ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি যেমন, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, হল্যান্ড, ডেনমার্ক, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভূখণ্ড দখল করে সেখানে নিজেদের উপনিবেশিক শাসন শুরু করে। এই সাম্রাজ্যবাদ “ভৌমিক সাম্রাজ্যবাদ” নামে পরিচিত।

উদাহরণ: ব্রিটেনের দ্বারা ভারত দখল ও স্বম্রাজ্য স্থাপন।

  • সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকের সময়কালটিতে “ভৌমিক সাম্রাজ্যবাদ”- এর প্রচলন ছিল।
  • ভৌমিক সাম্রাজ্যবাদ প্রচলতি বা কার্যকর ছিল ১৮১৫ সাল পর্যন্ত।

শিল্প বিপ্লব কিভাবে নতুন সাম্রাজ্যবাদের জন্ম দেয়

আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা শিল্পবিপ্লব। বিভিন্ন কারণে ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পবিপ্লব হয়। পরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শিল্পবিপ্লবের ফলে দ্রুত অনেক বেশি পরিমাণ পণ্যসামগ্রীর উৎপাদন শুরু হয়। ফলে উদ্বৃত্ত পণ্য বিক্রির জন্য বাজারের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাই নিজের দেশের চাহিদা পূরণের পর উদ্বৃত্ত পণ্য বিক্রির বাজার ধরতে ক্রমশ অনুন্নত দেশগুলোতে উপনিবেশ স্থাপন শুরু হয়। এই ভাবেই ঔপনিবেশিকতাবাদের জন্ম।

শিল্পবিপ্লবের আর একটি প্রভাব— নতুন নতুন শহরের বিকাশ, কলকারখানার উৎপত্তি, মালিক ও শ্রমিক শ্রেণীর দ্বন্দ্ব। এর থেকেই ধীরে ধীরে সমাজতন্ত্রবাদের সূচনা, যার সুস্পষ্ট রূপ প্রকাশ পায় মার্কস ও এঙ্গেলসের সাম্যবাদী ধারণায়। অনুন্নত আফ্রিকার বিভিন্ন রাষ্ট্রে ও চীনে বৃহৎ শক্তিবর্গ ধীরে ধীরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য কায়েম করতে শুরু করে। এভাবে ঔপনিবেশিকতাবাদের থেকে জন্ম হয় সাম্রাজ্যবাদের, যার চূড়ান্ত পরিণতি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। সুতরাং দেখো, শিল্পবিপ্লব দিয়ে যে ইতিহাসের শুরু, তার চরম পরিণতি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। প্রতিটি ঘটনা একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। 

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | সাম্রাজ্যবাদ

Q1. সাম্রাজ্যবাদ কি

Ans – সাম্রাজ্যবাদ বলতে সামরিক, অথনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্র দ্বারা দুবল রাষ্ট্রের উপর কতৃত্বস্থাপন ও নিয়ন্ত্রনকে বোঝায়।

সাম্রাজ্যবাদ বলতে সাধারণভাবে বােঝায় যখন কোন একটি শক্তিশালী দেশ অপর একটি দুর্বল দেশের উপর বলপূর্বক প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে নিজ স্বার্থে শাসন ও শােষণ করে।

Q2. কোন সময় কালকে সাম্রাজ্যবাদের যুগ বলা হয়

Ans – ১৮৭০ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল বিশ্বের ইতিহাসে ‘সাম্রাজ্যবাদের যুগ’ হিসেবে পরিচিত।

Q3. নয়া সাম্রাজ্যবাদ কথাটি ব্যবহার করেন কে

Ans – ডেভিড টমসন নয়া সাম্রাজ্যবাদ কথাটি ব্যবহার করেন।

Q4. সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ কি

Ans – সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ হল সাম্রাজ্যবাদের সাংস্কৃতিক মাত্রা। সাম্রাজ্যবাদ বলতে এখানে সভ্যতাগুলোর মধ্যে অসম সম্পর্কের সৃষ্টি এবং রক্ষণাবেক্ষণকে বোঝায়, যে সম্পর্কে একটি সভ্যতা অন্য একটি সভ্যতার উপর আধিপত্য বিস্তার করে।

Q5. বাংলায় নিযুক্ত প্রথম সাম্রাজ্যবাদী বড়লাট ছিলেন কে

Ans – বড়লাট লর্ড ওয়েলেসলি বাংলায় নিযুক্ত প্রথম সাম্রাজ্যবাদী বড়লাট ছিলেন ।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।