মহুয়ার দেশ কবিতার প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

মহুয়ার দেশ কবিতার উৎস

‘মহুয়ার দেশ’ কবিতাটি কবির ‘কয়েকটি কবিতা’ (১৯৩৭) কাব্য সংকলন থেকে নেওয়া হয়েছে।

মহুয়ার দেশ কবিতার সারাংশ

উত্তর : কবি সমর সেন রচিত মহুয়ার দেশ কবিতাটি তে আমরা দুটি বিপরীত শব্দ তাকে লক্ষ্য করতে পারি। একদিকে তিনি নগরীরের যান্ত্রিক সভ্যতা আর তার বিপরীতে তিনি তুলে ধরেছেন অনেক দূরের সবুজ ঢাকা মহুয়ার দেশের সভ্যতা কে।

যান্ত্রিক সভ্যতা নগরকে কলুষিত করার পর তা ধীরে ধীরে বহুদূরের সবুজ বনানীতে পাড়ি জমিয়েছে, তাই কবিতায় তিনি মহুয়ার দেশের বিপন্ন অবস্থা কে তুলে ধরেছেন। বিকালের পড়ন্ত সূর্যের আলোয় তার কাছে জলের ফেনা গলি গলি তো সোনা বলে মনে হয়েছে। কিন্তু তারই উপরে ধীরে ধীরে বিরাজ করে অন্ধকার কালো ধোঁয়া।

এরই বিপরীতে কবির মনে পড়েছে অনেক দূরের মেঘে ঢাকা ক্লান্তিময় মহুয়ার দেশের কথা, সমস্ত খন যেখানে পথের দুধারে বড় বড় শাল আর দেবদারু এক রহস্য সৃষ্টি করেছে। কবি নিজেকে এই রহস্যের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে ক্লান্তি খুঁজে পেতে চেয়েছেন যেখানে মহুয়ার ফুল হবে তার অবসরের একমাত্র সঙ্গী।

তবুও কবির যেন শান্তি নেই কারণ, এই নিবিড় রহস্যে ঘেরা অন্ধকারেও তাকে মাঝে মাঝে যান্ত্রিক সভ্যতার শব্দ ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। কবির চোখে ধরা পড়েছে এই সভ্যতার কিছু মাটির মানুষকে যাদের শরীরে ধুলোর কলঙ্ক আর চোখে ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন।

মহুয়ার দেশ কবিতার গুরুত্বপূর্ন বহু বিকল্প ভিত্তিক (MCQ) প্রশ্ন উত্তর

মহুয়ার দেশ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া?

A) নানা কথা
B) তিন পুরুষ
C) খোলা চিঠি
D) কয়েকটি কবিতা

উত্তর: – D) কয়েকটি কবিতা

মহুয়ার দেশ কবিতাটি রচিত হয়

A) 1934 খ্রিস্টাব্দে
B) 1937 খ্রিস্টাব্দে
C) ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ
D) 1929 খ্রিস্টাব্দে

উত্তর: – B) 1937 খ্রিস্টাব্দে

মহুয়ার দেশ কবিতাটি কয়টি স্তবক

A) একটি
B) দুটি
C) তিনটি
D) চারটি

উত্তর: – B) দুটি

অলস সূর্য বলতে বোঝানো হয়েছে

A) অর্ধেক সূর্য
B) অস্তগামী সূর্য
C) অকেজো সূর্য
D) কোনোটিই নয়

উত্তর: – B) অস্তগামী সূর্য

উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ ছিল

A) গলিত সোনার মতো : উত্তর
B) সন্ধ্যার ল্যাম্পপোস্টের মধ্যে
C) মেঘলা বিকেলের মত
D) দেবদারু গাছের মত

উত্তর: – A) গলিত সোনার মতো

মহুয়ার দেশে দেবদারু গাছ ছায়া ফেলে কোথায়

A) শালের বনে
B) হিজলের মানে
C) পাহাড়ের গায়ে
D) পথের দু’ধারে

উত্তর:- D) পথের দু’ধারে

মহুয়ার গন্ধ অবসান ঘটাবে :-

A) বিষন্নতার
B) উৎকণ্ঠার
C) আনন্দের
D) ক্লান্তির : উত্তর

উত্তর:- D) ক্লান্তির

ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয়|—– কি হানা দেয়?

A) ধুলোর কলঙ্ক
B) গভীর শব্দ
C) অবসন্ন মানুষের চোখে ঘুম
D) ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন : উত্তর

উত্তর:- D) ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন

কবি কয়লাখনির শব্দ শুনতে পান

A) শীতের সন্ধ্যায়
B) নিবিড় অন্ধকারে : উত্তর
C) নির্জন দুপুরে
D) শিশির ভেজা সকালে

উত্তর:- B) নিবিড় অন্ধকারে

মহুয়ার দেশ কবিতার প্রশ্ন উত্তর 2023

“গভীর বিশাল শব্দ।”—কীসের শব্দ?

উত্তর : মহুয়া বনের ধারে কয়লাখনির গভীর বিশাল শব্দের কথাই এখানে বলা হয়েছে।

“ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয় কীসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন”– কাদের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর : আলোচ্য অংশে মহুয়ার দেশের অধিবাসী অবসন্ন মানুষদের কথা বলা হয়েছে।

“ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ঘুরে ফিরে ঘরে আসে”— বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর : ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’ বলতে স্বপ্নময় প্রকৃতি-প্রধান ‘মহুয়ার দেশ’-এর বিপরীতে কয়লাখনি থেকে উঠে আসা নাগরিক সভ্যতার বিষবাষ্পের কথাই বোঝানো হয়েছে।

“নামুক মহুয়ার গন্ধ।”—কবির এই প্রার্থনা কেন?

উত্তর : মহুয়া ফুলের গন্ধ এক ধরনের আবেশ এবং হালকা নেশার উদ্রেক করে| তাই ক্লান্তি ভুলতে কবি মহুয়ার গন্ধকে আহবান করেছেন।

“অলস সূর্য দেয় এঁকে”–‘অলস সুর্য’ কী আঁকে, সূর্যকে অলস’ বলার কারণ কী ?

উত্তর : ‘অলস সূর্য’ সন্ধ্যার জলস্রোতে গলিত সোনার মতো উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ এঁকে দেয়। অস্তগামী সূর্যের দীপ্তি স্তিমিত বলেই সন্ধ্যার সূর্যকে ‘অলস’ বলা হয়েছে।

“রাত্রের নির্জন নিঃসঙ্গতাকে আলোড়িত করে”- উৎস নির্দেশ করো।

উত্তর : আলোচ্য অংশটি কবি সমর সেনের ‘মহুয়ার দেশ’ শীর্ষক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

“আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া-ফুল।” – কবি ক্লান্ত কেন?

উত্তর : নাগরিক যান্ত্রিকতায় কবি বিধ্বস্ত | অবসর নেই তার। তাই তিনি ক্লান্ত।

মহুয়ার দেশ’ কবিতায় অবসন্ন মানুষদের শরীরে কী দেখা যায় ?

উত্তর : কবি সমর সেনের ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় অবসন্ন মানুষদের শরীরে ধুলোর কলঙ্ক দেখা যায়।

“আমার ক্লান্তির ওপর ঝরুক মহুয়া-ফুল”—এখানে ‘মহুয়ার ফুল’ কীসের প্রতীক?

উত্তর : আলোচ্য পঙক্তিতে উল্লিখিত ‘মহুয়া ফুল’ রোমান্টিক উপাদানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে যে রোমান্টিক উপাদান কবির জীবনের ক্লান্তি অপনোদন করতে পারবে।

মহুয়ার দেশের মানুষদের ঘুমহীন চোখে কী দেখা যায় ?

উত্তর : মহুয়ার দেশের মানুষদের ঘুমহীন চোখে দেখা যায় ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন।

“ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস” কীভাবে কবির কাছে আসে ?

উত্তর : দরিদ্র আশ্রয়হীন মানুষের কাছে তীব্র শীতের দুঃস্বপ্নের মতো ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’ কবির কাছে আসে।

“নিবিড় অন্ধকারে মাঝে মাঝে শুনি”– কী শোনার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর : এখানে কয়লাখনির বিশাল শব্দের কথা বলা হয়েছে।

সন্ধ্যার জলস্রোতে উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ কে এঁকে দেয় ?

উত্তর : সন্ধ্যার জলস্রোতে অস্তান্মুখ সূর্য উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ এঁকে দেয়।

শিশিরে ভেজা সবুজ সকালে কবি কী দেখেন?

উত্তর : শিশির ভেজা সবুজ সকালে কবি সমর সেন ক্লান্ত মানুষের চোখে ধুলোর কলঙ্ক দেখেন।

“এখানে অসহ্য, নিবিড় অন্ধকারে”—’অসহ্য’ কেন?

উত্তর : মহুয়ার বনের ধারে কয়লা খনির শ্রমজীবী মানুষরা শ্রমের ক্লান্তিতে অবসাদগ্রস্ত।তাই সেখানকার অন্ধকারকে অসহ্য বলে মনে হয়েছে।

কবি কাকে ‘মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ’ বলেছেন?

উত্তর : বহুদূরের কোনো এক অজানা নামহীন দেশকে কবি সমর সেন ‘মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ’ বলেছেন।

মহুয়ার দেশ কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

“আমার ক্লান্তির উপর ঝরুক মহুয়া ফুল, / নামুক মহুয়ার গন্ধ।” – এখানে আমার বলতে কার কথা বলা হয়েছে ? বক্তার এমন ইচ্ছার কারণ আলোচনা করো।

উত্তর : আলোচ্য উদ্ধৃতিতে আমার বলতে মহুয়ার দেশ কবিতার কবি সমর সেন এর কথা বলা হয়েছে।

কবি সমর সেনের জীবনে যখন কালো ধোঁয়ায় ঢাকা নাগরিক সভ্যতা বিরাজ করেছে ঠিক তখন তিনি খুঁজে পেতে চেয়েছেন এক শান্ত ক্লান্তিময় সভ্যতা কে। আর তখনই তার মনে পড়েছে মহুয়ার দেশের কথা। যে যান্ত্রিক নাগরিক সভ্যতা তার জীবনে দুঃস্বপ্ন সৃষ্টি করে সেখানে সে থাকতে রাজি নয়।

তাই তিনি খুঁজে পেতে চেয়েছেন এক বন্ধনহীন ক্লান্তময় প্রকৃতিকে যেখানে শীতের রাতের স্বপ্নগুলো দুঃস্বপ্নে পরিণত না হয়। তিনি ফিরে যেতে চেয়েছেন দীর্ঘ শাল আর দেবদারুর রহস্যেঘেরা মহুয়ার দেশে, যেখানে এই নাগরিক সভ্যতার যন্ত্র থেকে তিনি মুক্তি পেতে পারেন। কবি এই কারণে কল্পনা করেছেন তার অবসর যাপন আর ক্লান্তিময় সময়ের সাক্ষী থাকবে একমাত্র মহুয়ার ফুল।

মহুয়ার ফুলের মাদকতায় তিনি নিজেকে মিশিয়ে দিতে চান এক নিস্তব্ধতা প্রকৃতির সাথে, তাই তিনি লিখেছেন -” আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া ফুল / নামুক মহুয়ার গন্ধ” । কিন্তু কবির এই আবেদন যেন বাস্তবে রূপ পায়নি। কারণ তিনি নাগরিক সভ্যতা তে থেকেও সেই মেঘ মোদির মহুয়ার দেশ এর বিপন্নতাকে অনুভব করেছেন।

কবি সমর সেনের একান্ত ইচ্ছা অগ্রাসি নগরের কাছে তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিতে চান না। এই কারণে তিনি বহুদূরে মহুয়ার দেশে ফিরে যেতে চেয়েছেন। কারণ তার মনে হয়েছে একমাত্র মহুয়ার দেশ তার ক্লান্তিকে দূর করতে পারে, তার শীতের রাতের দুঃস্বপ্নগুলো কে সুন্দর স্বপ্নে পরিণত করতে পারে।

“ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয় / কিসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন।” – আলোচ্য লাইনটিতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? তাদের ঘুমহীন চোখে ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন হানা দেয় কেন ?

উত্তর : উল্লিখিত লাইনটিতে তাদের বলতে কবি সমর সেন মহুয়ার দেশের কয়লা খনির শ্রমিকদের কথা বলেছেন।

কবি সমর সেন যখন যান্ত্রিক সভ্যতার কালো ধোঁয়ায় নিজেকে বিপন্ন বলে মনে করেছেন, ঠিক তখন তিনি তার ক্লান্ত জীবনকে খানিকটা স্নিগ্ধতা দেওয়ার জন্য যেতে চেয়েছেন অনেক দূরের মহুয়ার দেশে। তার কাছে মহুয়ার দেশ অনেকটা স্বপ্নের আবেশ এর মত বলে মনে হয়েছে।

যে স্বপ্নের মহুয়ার দেশে তিনি দীর্ঘ শাল আর দেবদারু গাছের নিচে মহুয়া ফুলের গন্ধে শরীরকে ক্লান্তি দিতে চান, সেখানে তিনি যেতে চাইছেন কারণ নাগরিক সভ্যতা কে তিনি আর সহ্য করতে পারছেন না। নাগরিক সভ্যতায় শীতের রাতের স্বপ্ন গুলো যেন কবির কাছে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

কবি যেন গভীর রাতে শুনতে পেয়েছেন সেই বহুদূরের মহুয়ার দেশের ক্লান্ত স্বপ্নগুলোর মাঝেও যেন কয়লাখনির গভীর শব্দ, যে শব্দ কবিকে আরো বেদনাময় করে তুলেছে। কারণ তিনি অনুভব করেছেন যান্ত্রিক সভ্যতা শুধু নগরে নয় ধীরে ধীরে সেখানেও পৌঁছে গিয়ে শান্ত সভ্যতাকে গ্রাস করতে শুরু করেছে।

মহুয়ার দেশের এই বিপন্ন অবস্থা তে কবি অনুভব করেছেন শিশির ভেজা সবুজ সকালে মহুয়ার দেশের মানুষদের অবসন্ন শরীরে যেন লেগে আছে ধুলোর কলঙ্ক। তাদের বাস্তব জীবনের স্বপ্ন গুলো যেন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত। যন্ত্র সভ্যতার যে আবাহন তা যেন তাদের ঘুমহীন চোখে দুঃস্বপ্ন এঁকে দিয়েছে।

মহুয়ার দেশ কবিতায় কবি মহুয়ার দেশের যে চিত্র অঙ্কন করেছেন তা বর্ণনা করো।

উত্তর : কবি কল্পনা কাব্য রচনার অন্যতম বিষয়, কারণ কবির কল্পনা কোন কাব্যের আলংকারিক অর্থ দান করে, আর পাঠকের সেই কাব্য লোকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। আলোচ্য মহুয়ার দেশ কবিতাটিতে কবি সমর সেন ঠিক একই রকমভাবে আমাদের মহুয়ার দেশে নিয়ে গেছেন।

বস্তুতপক্ষে মহুয়ার দেশের চিত্র যে কবি কল্পনায় অন্য কোন বিচিত্র রূপ লাভ করেছে তা নয়, মহুয়ার দেশ তা যেন কবিতায় আপন মহিমায় আমাদের সামনে ফুটে উঠেছে। নগরকেন্দ্রিক যান্ত্রিক সভ্যতা থেকে কবি যেহেতু মুক্তি পেতে চেয়েছেন তাই তার মুক্তির অন্যতম স্থান হয়ে ধরা দিয়েছে তার কাব্য লোকের এই মহুয়ার দেশ টি।

সেই কারণে সাধারণভাবেই মহুয়ার দেশ কে তিনি কবিতাতে অসাধারণ ভাবে চিত্রিত করেছেন।

মহুয়ার দেশ এর শুরুতে তিনি বর্ণনা করেছেন সমস্ত রাস্তার দুধারে দীর্ঘ প্রহরীর মত দাঁড়িয়ে থাকা দেবদারু গাছের দীর্ঘ রহস্য কে। যে রহস্যের জন্ম হয়েছে অরন্যের গভীরতা থেকে, যাকে তিনি নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা তে খুঁজে পাননি।

গভীর মহুয়ার বন, কালো কয়লা খনি, সেখানকার মানুষের অবসন্ন শরীর, শরীরে লেগে থাকা ধুলোর কলঙ্ক, আর তাদের ক্লান্ত ঘুমহীন চোখ যেন মহুয়া দেশের অনন্য চিত্র দান করেছে। এই মহুয়ার দেশের কাছে কবির একমাত্র আক্ষেপ তার ক্লান্তিকে নিবারণ করবে শুধু মহুয়ার ফুল, কবি কল্পনায় মহুয়ার দেশের এই চিত্রটি যেন অনাবিল কল্পলোকের বাস্তবতা।

“অনেক, অনেক দূরে আছে মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ”—কবি ‘মহুয়ার দেশ’-এর কী বর্ণনা দিয়েছেন? এই ‘মহুয়ার দেশ’ কীভাবে কবির চেতনাকে প্রভাবিত করেছে, তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।

উত্তর : কবি প্রদত্ত মহুয়ার দেশের বর্ণনা: অন্য একটি কবিতায় সমর সেন লিখেছিলেন— “বৃষ্টির আভাসে করুণ পথে ধুলো উড়ছে, এমন দিনে সে ধুলো মনে শুধু আনে/সাঁওতাল পরগণার মেঘমদির আকাশ।” আলোচ্য কবিতাতেও দেখা যায় কবির কাছে মহুয়ার দেশ’ হল ‘মেঘমদির’। সেখানে সবসময় পথের দু-পাশে ছায়া ফেলে রহস্যময় দেবদারু গাছেরা। রাত্রির নিঃসঙ্গ নির্জনতাকে আলোড়িত করে ‘দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস’।

কবির চেতনায় ‘মহুয়ার দেশ’: অবসন্নতা থেকে মুক্তি : ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় কবি সমর সেন নগরজীবনের ক্লান্তিকর অবসন্নতা থেকে মুক্তি খোঁজেন। কবির চেতনায় আসে মেঘমদির সুদূর মহুয়ার দেশ।

প্রকৃতির অনুষঙ্গ: গ্রামজীবনের নির্মল প্রকৃতির অনুষঙ্গ হিসেবে কবির কল্পনায় মাদকতাময় মহুয়া ফুলের আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে। যে কবি লিখেছিলেন— “একদা শালবনে কেটেছে রোমান্টিক দিন”, তাঁর কবিতায় মহুয়ার দেশ’ হয়ে ওঠে বিবর্ণ শহরজীবনে ক্লান্ত মানুষের বেঁচে থাকার আশ্রয়। তার ক্লান্তির উপরে মহুয়া ফুল ঝরে পড়ুক, “নামুক মহুয়ার গন্ধ”—এটাই কবির আকাঙ্ক্ষা হয়ে ওঠে।

যন্ত্রসভ্যতার বিপন্নতাই: কিন্তু তাঁর স্বপ্নের মহুয়ার দেশেও হানা দেয়। যন্ত্রসভ্যতা। কবির কানে আসে মহুয়া বনের ধারের কয়লাখনির প্রবল শব্দ, শিশিরভেজা সবুজ সকালেও কবি দেখতে পান মানুষের শরীরে লেগে থাকা ধুলোর কলঙ্ক। নিদ্রাহীন এইসব মানুষের চোখে ভিড় করে আসা যন্ত্রসভ্যতার বিপন্নতাই কবির কাছে চূড়ান্ত সত্য হয়ে দেখা দেয়।

‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় কবি সমর সেনের প্রকৃতিপ্রেম কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা ব্যক্ত করো।

উত্তর : কবি সমর সেন জনগণের প্রাণের কথা শুনতে অভিলাষী। এই অভিলাষই তাকে প্রকৃতি ও রোমান্টিকতা থেকে দূরে সরিয়ে কঠিন-কঠোর বাস্তবতার স্তুতিগান রচনায় অনুপ্রাণিত করেছে। তবে যুবক কবির মন থেকে প্রকৃতির প্রতি অনুরাগ সম্পূর্ণ রূপে মুছে যেতে পারেনি। আলোচ্যমান ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতার মধ্যেও তাই প্রকৃতির প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে অবক্ষয়িত নগরসভ্যতাকে ভুলে যাওয়ার বাসনায়।

কবি সমর সেন সাঁওতাল পরগনার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ শতই কল্পনার দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করতে চেয়েছেন তাঁর কলুষতামুক্ত কোমল রূপটিকে। কবি সেখানে সন্ধ্যার জলস্রোতে এক ভিন্ন ধরনের সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করেছেন। কল্পনাবিলাসী কবি

““অলস সূর্য দেয় এঁকে, গলিত সোনার মতো উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ”

সাঁওতাল পরগনায় অলস সূর্যের ম্লান আলোর প্রতিফলনে স্কুলের অন্ধকারে ধূসর ফেনায় আগুন লাগে। মহুয়ার দেশে ধোঁয়ার বঙ্কিম নিশ্বাস, দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস ঘুরে ফিরে কবির। ঝাছে ফিরে এসে কবির একাকিত্বকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেয়। তবে কবির কাছে সেই ধোঁয়ার বঙ্কিম নিশ্বাস কখনোই অভিপ্রেত নয়, কারণ তা প্রকৃতির স্নিগ্ধ অবয়বে কলুষতার কালিমা লেপন করে।

প্রকৃতির প্রতি কবির অমোঘ টানের অনুষঙ্গে এই কবিতায়। একর পর এক চিত্রকল্পের আগমন ঘটেছে। সিন্ধ্যার জলস্রোত, অলস সূর্য’, ‘জলের অন্ধকারে ধূসর ফেনা’, ‘দেবদারুর রহস্য’, ‘সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস’ কিংবা ‘শিশিরভেজা সবুজ সকাল’–এইসব চিত্রকল্পগুলির প্রয়োগে প্রকৃতি যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। কবির ভাবনায় ও তার সৃজনীশক্তির দক্ষতায় প্রকৃতি হয়ে উঠেছে বিচিত্র রূপময়।

আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া ফুল /নামুক মহুয়ার গল্প। —’আমার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? এমন কামনার কারণ কী?

উত্তর : আমার’ বলতে ‘মহুয়ার দেশ” কবিতার কবি সমর সেনের কথা বলা হয়েছে।

কবি সমর সেন নাগরিক ক্লান্তি থেকে মুক্তির জন্য ‘মহুয়ার দেশ’-এর কথা ভেবেছেন। প্রকৃতির সেই বাধাহীন বিস্তারে, মেঘমদিরতায় কবি ‘শীতের দুঃস্বপ্নের মতো’ নগরজীবনের দূষণ ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’-কে ভুলে থাকতে চেয়েছেন ।

মহুয়ার দেশে পথের দুধারে ছায়া ফেলা দেবদারু গাছের রহস্যময়তা বা দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাসরূপী গর্জন কবিকে আকৃষ্ট করে। প্রকৃতির এই নির্মলতাকে আশ্রয় করেই কবি নাগরিক অবসন্নতা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছেন । তাই হৃদয়ের গভীরতম আকাঙ্ক্ষায় তিনি উচ্চারণ করেন— “আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া-ফুল,/ নামুক মহুয়ার গন্ধ।

কিন্তু কবির এই ভাবনাবিলাস বা ইচ্ছাপূরণের আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থেকে যায়। নগরজীবনে বসে রাত্রির অসহ্য নিবিড় অন্ধকারে কবি শোনেন মহুয়া বনেরধারের কয়লাখনির গভীর বিশাল শব্দ।

নাগরিক যন্ত্রসভ্যতার শব্দনিনাদ মহুয়ার দেশের মেঘমদির রহস্যময়তার অবসান ঘটিয়ে কয়লাখনির শব্দকে মনে করায় | যন্ত্রসভ্যতা এভাবেই সর্বগ্রাসী হয়ে থাকে কবির চেতনায় | এ কথা হয়তো ঠিক যে, ‘ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া ফুল’— এটাই কবির নিবিড় চাওয়া।

কিন্তু বাস্তব হল যন্ত্রসভ্যতার আগ্রাসন, বিবর্ণতার সীমাহীন বিস্তার, যা কবির স্বপ্নের মহুয়ার দেশকেও নিস্তার দেয় না।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

মহুয়ার দেশ কবিতার প্রশ্ন উত্তর pdf

সরল উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সহায়িকা – শ্রেণী – একাদশ




সরল উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সহায়িকা – শ্রেণী – একাদশ



মহুয়ার দেশ কবিতার প্রশ্ন উত্তর

“ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ঘুরে ফিরে ঘরে আসে”— বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’ বলতে স্বপ্নময় প্রকৃতি-প্রধান ‘মহুয়ার দেশ’-এর বিপরীতে কয়লাখনি থেকে উঠে আসা নাগরিক সভ্যতার বিষবাষ্পের কথাই বোঝানো হয়েছে।


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।