শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের নামকরণ

উত্তরঃ বসন্তরঞ্জন রায় শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শিরোনামে গ্রন্থটি প্রকাশ করলেও এই নামকরণ নিয়ে যথেষ্ট মতবিরোধ আছে। প্রাচীন পুঁথিগুলোতে সচরাচর প্রথম বা শেষ পাতায় পুঁথির নাম লেখা থাকে। কিন্তু এই পুঁথির প্রথম ও শেষ পাতা পাওয়া যায়নি। ফলে পুঁথির নাম অজানাই থেকে যায়। এমনকি পরবর্তীকালের কোনো পুঁথিতেও বড়ু চণ্ডীদাস বা তাঁর গ্রন্থের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। পুঁথির আবিষ্কারক তাই নামকরণের সময় পুঁথির কাহিনি বিচার করে লোকঐতিহ্য অনুসারে এটি শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নামে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন। পুঁথির ভেতরে পাওয়া চিরকুটে অবশ্য ‘শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ’ লেখা ছিল।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের রচনাকাল

উত্তরঃ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন–এর রচনাকাল নিয়েও মতবিরোধ রয়েছে। পুঁথিতে প্রাপ্ত চিরকুটটি ১০৮৯ বঙ্গাব্দের। এ হিসাবে ১৬৮২ খ্রিষ্টাব্দে পুঁথিটি বনবিষ্ণুপুরের রাজগ্রন্থাগারে সংগৃহীত ছিল। পুঁথিটি অবশ্যই এই চিরকুট অপেক্ষা প্রাচীনতর। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, এই পুঁথি ১৩৫৮ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে সম্ভবত চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে লিখিত। রাধাগোবিন্দ বসাকের ধারণা, এর লিপিকাল ১৪৫০ থেকে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এই মত সমর্থন করেন। যোগেশচন্দ্রের মতে, পুঁথির লিপিকাল ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে নয়। সুকুমার সেনের মতে, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন–এর লিপিকাল আঠারো শতকের শেষার্ধ।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের গুরুত্ব আলোচনা করো

উত্তরঃ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন মধ্যযুগের আদি কাব্য। এটি কোনো একক কবির প্রথম রচনা। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ একটি সংকলনগ্রন্থ। সেখানে ২৪ জন কবির ৫১টি পদ বা কবিতা রয়েছে। অন্যদিকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন একজন কবিরই রচনা— যাঁর নাম বড়ু চণ্ডীদাস। এই বিবেচনায় বড়ু চণ্ডীদাস মধ্যযুগের আদি কবি। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন একইসঙ্গে একটি কাহিনিকাব্যও বটে। এখানে রাধা-কৃষ্ণের প্রণয়কাহিনি রয়েছে।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য প্রশ্ন উত্তর MCQ

কার মতে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন–এর লিপিকাল অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ?

(ক) মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ (খ) সুকুমার সেন (গ) বসন্তরঞ্জন রায় (ঘ) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী

উত্তরঃ (খ) সুকুমার সেন

খাঁটি বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ কোনটি?

(ক) চর্যাপদ (খ) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন (গ) ইউসুফ-জুলেখা (ঘ) পদ্মাবতী

উত্তরঃ খ) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন–এর ভাষা কোন সময়কার বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য বহন করছে?

(ক) প্রাচীন যুগের বাংলা (খ) আদি মধ্যযুগের বাংলা (গ) অন্তা মধ্যযুগের বাংলা (ঘ) আধুনিক যুগের বাংলা

উত্তরঃ (খ) আদি মধ্যযুগের বাংলা

আধুনিককালের সবেচেয়ে বড় লিপিবিশারদ—

(ক) মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ (খ) সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (গ) রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (ঘ) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী

উত্তরঃ (গ) রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়

মধ্যযুগের আদি কবি—

(ক) কাহ্নপা (খ) বিদ্যাপতি (গ) বড়ু চণ্ডীদাস (ঘ) মালাধর বসু

উত্তরঃ (গ) বড়ু চণ্ডীদাস

বড়ু চণ্ডীদাসের জন্মস্থান কোনটি?

(ক) বীরভূম জেলার নান্নুরু গ্রাম (খ) বীরভূম জেলার কাঁকিল্যা গ্রাম (গ) বাঁকুড়া জেলার নান্নুরু গ্রাম (ঘ) বাঁকুড়া জেলার কাঁকিল্যা গ্রাম

উত্তরঃ (ক) বীরভূম জেলার নান্নুরু গ্রাম

কত বঙ্গাব্দে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন আবিষ্কৃত হয়?

(ক) ১৩০৭ বঙ্গাব্দে (খ) ১৩০৯ বঙ্গাব্দে (গ) ১৩১৬ বঙ্গাব্দে (ঘ) ১৩২৩ বঙ্গাব্দে

উত্তরঃ (গ) ১৩১৬ বঙ্গাব্দে

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ নামটি দিয়েছেন—

(ক) মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ (খ) সুকুমার সেন (গ) বসন্তরঞ্জন রায় (ঘ) বড়ু চণ্ডীদাস

উত্তরঃ (গ) বসন্তরঞ্জন রায়

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র মতে, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের রচনাকাল—

(ক) ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দ (খ) ১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ (গ) ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ (ঘ) ১৪৫০ খ্রিষ্টাব্দ

উত্তরঃ (গ) ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন–এর ভেতরে পাওয়া চিরকুটে কোন নামটি লেখা ছিল?

(ক) শ্রীকৃষ্ণলীলা (খ) শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ (গ) শ্রীকৃষ্ণভগবত (ঘ) শ্রীগোকুল

উত্তরঃ (খ) শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের ১৩টি খণ্ডের মধ্যে একমাত্র কোন খণ্ডের শেষে ‘খণ্ড’ শব্দ যোগ করা হয়নি?

(ক) প্রথম (খ) সপ্তম (গ) একাদশ (ঘ) ত্রয়োদশ

উত্তরঃ (ঘ) ত্রয়োদশ

‘কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি কালিনী নই কূলে।’ —কোন খণ্ডের উদ্ধৃত অংশ?

(ক) তাম্বুলখণ্ড (খ) দানখণ্ড (গ) বংশীখণ্ড (ঘ) রাধাবিরহ

উত্তরঃ (গ) বংশীখণ্ড

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন–এর দ্বিতীয় খণ্ড কোনটি?

(ক) জন্মখণ্ড (খ) তাম্বুলখণ্ড (গ) বংশীখণ্ড (ঘ) রাধাবিরহ

উত্তরঃ (খ) তাম্বুলখণ্ড

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের প্রশ্ন উত্তর

“রাধাবিরহ” অংশটিকে প্রক্ষিপ্ত বলেছেন কে ?

উঃ বিমানবিহারী মজুমদার

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ বাংলা সাহিত্যের কততম গ্ৰন্থ ?

উঃ ২

এই কাব্যের মোট পদ কত ?

উঃ ৪১৮

কাব্যটি কিসের উপর লেখা ?

উঃ তুলোট কাগজ

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে কোন গানের লক্ষণ আছে ?

উঃ ঝুমুর

রাধার বাবা কে ?

উঃ সাগর

ছত্র ধর কাহ্নাঞিঁ দিবোঁ সুরতি” কত সংখ্যক পদ?

উঃ ২০৯

‘ললাট লিখিত খন্ডন না জাএ’ – কোন খণ্ডের অংশ ?

উঃ দান খণ্ড

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের খন্ড সংখ্যা কত ?

উঃ ১৩

বড়ু চন্ডীদাস কোথাকার বাসিন্দা ?

উঃ বাঁকুড়ার ছাতনা

এই কাব্যে কতগুলি রাগরাগিণী আছে ?

উঃ ৩২

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটির নাম রাধাকৃষ্ণের ধামালী রাখার প্রস্তাব কে করেন ?

উঃ বিমানবিহারী মজুমদার

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের প্রকাশকাল কত ?

উঃ ১৯১৬

“দেখিল কোকিল বেল গাছের উপরে। আর তিল কাক তাক ভখিতেঁ না পারে।। – কোন খণ্ডের অংশ ?

উঃ দান খণ্ড

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন এর সংস্কৃত শ্লোক সংখ্যা কত ?

উঃ ১৬১

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে কত রকমের ভনিতা আছে

উত্তরঃ কাব্যে কবির তিন রকমের ভনিতা পাওয়া যায়, যথা-

  • ১. বড়ু চণ্ডীদাস
  • ২. চণ্ডীদাস
  • ৩. অনন্ত বড়ু চণ্ডীদাস।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের শেষ খন্ডের নাম কি, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের শেষ খন্ডের নাম, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের শেষ খন্ড অংশটির নাম কি

উত্তর:- ” শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ” কাব্যের শেষ খন্ডটির নাম ” রাধাবিরহ ” ।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য প্রশ্ন উত্তর

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের খন্ড সংখ্যা, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের খন্ড কয়টি, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের খন্ড সংখ্যা কত, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য কয়টি খন্ডে বিভক্ত, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের খন্ড বিভাগ আলোচনা করো, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের খন্ড সংখ্যা কয়টি

উত্তর: কাব্যের মোট ১৩ টি খণ্ড। ক্রমানুসারে সেগুলি হল -১. “জন্ম খণ্ড”, ২. “তাম্বুল খণ্ড”, ৩. “দান খণ্ড”, ৪. “নৌকা খণ্ড”, ৫. “ভার খণ্ড”, ৬. “ছত্র খণ্ড”, ৭. “বৃন্দাবন খণ্ড”, ৮. “কালীয়াদমন খণ্ড”, ৯. “বস্ত্রহরণ খণ্ড”, ১০. “হার খণ্ড”, ১১. “বান খণ্ড”, ১২. “বংশী খণ্ড” এবং ১৩. “রাধাবিরহ”।
** “রাধাবিরহ” খণ্ডটিকে অনেক পণ্ডিতেরা “প্রক্ষিপ্ত” বলে মনে করেন।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের জন্ম খন্ড, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের প্রথম খন্ডের নাম কি

উত্তর:-জন্ম খণ্ড – ৯।তার মধ্যে প্রথমের পদটির আদি খন্ডিত। জন্ম খন্ডের ৩/১ পৃষ্ঠা থেকে রাধাবিরহের ২২৬/২ পৃষ্ঠার মধ্যবর্তী নিম্নলিখিত পাতা/ পৃষ্টা পাওয়া যায় না _ ৯, ,১৭/১,১৯/১,৪১,৮৮/২,৯৩/২,৯৮/১, ১০৪-১১১,১৪৫-১৫১। 

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের রচয়িতা কে, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য কে রচনা করেন

উত্তর:- বড়ু চণ্ডীদাস

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের সম্পাদক কে

উত্তর:- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যের প্রথম সংস্করণের ‘ মুখবন্ধ’ লেখেন রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী। তিনি লেখককে বড়ু চণ্ডীদাস বলে অভিহিত করলেও সম্পাদক তাঁর দীর্ঘ ৩৭ পৃষ্টাব্যাপী আলোচনায় কোথাও লেখককে বড়ু চণ্ডীদাস বলেননি, শুধু চণ্ডীদাস বলেছেন। সম্পাদক বসন্তরঞ্জন রায়ের জীবিতকালের শেষ সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৩৫৬ বঙ্গাব্দে।

১৯১৬ ক্রিস্টাব্দে(১৩২৩ বঙ্গাব্দে) কলকাতার “বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ” থেকে “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” নামে সম্পাদনা করেন।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের চরিত্র

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের আলোকে কৃষ্ণ চরিত্র বিশ্লেষণ করো

উত্তর:- কংস বধের জন্যই কৃষ্ণের জন্ম।নারায়ণের একটি কালো চুল থেকেই কৃষ্ণের জন্ম।যা মানব সমাজে বসুদেবের ঘরে দেবকীর গর্ভে।আর অবতারী শিশু বলেই তার শরীরে বত্রিশ রাজলক্ষণ প্রকাশিত।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের বড়াই চরিত্র

উত্তর:- রাধার মায়ের পিসি,রাধা তার নাতনি,কৃষ্ণ তার নাতি।সে যেন বর ঘরের পিসি আর কনপর ঘরের মাসি।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের ছন্দ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের ছন্দ কি

উত্তর:- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যই প্রথম অক্ষরবৃত্ত রীতির বিচিত্র ছন্দবন্ধের বলিষ্ঠ প্রকাশ।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের নাটকীয়তা

উত্তর:- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নাট্যলক্ষনাক্রান্ত অখ্যানকাব্য।এই কাব্যে নাট্যগুন ও কাব্যগুনের সমন্বয় ঘটেছে। নাট্যোগীতপাঞ্চালিরুপে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের সার্থকতা স্বীকৃত।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে রাধার স্বামীর নাম কি

উত্তর : অভিমন্যু।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য বড়ো প্রশ্ন উত্তর, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য বড় প্রশ্ন উত্তর

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের ভাষা

উত্তর:-

  • ১. শব্দের শুরুতে ‘অ’ ধ্বনির উচ্চারণ অনেক ক্ষেত্রে ‘আ’ হয়ে গেছে। যেমন আনেক, আতি।
  • ২. শব্দের শেষে উদ্বৃত্তস্বর কখনো কখনো রক্ষিত হয়েছে। যেমন গাআ, জাইও।
  • ৩. প্রাকৃতের প্রভাবে ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব রূপ সর্বনামে দেখা যায়। যেমন আহ্মার, তোহ্মা।
  • ৪. আনুনাসিক উচ্চারণ ও বানানে চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার খুব বেশি হয়েছে। যেমন কাহ্নাঞিঁ, দেবেঁ, দুধেঁ, করিআঁ।
  • ৫. বিপ্রকর্ষ, স্বরসংগতি, যুক্তবর্ণের লোপ ইত্যাদি ধ্বনি-পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন পরাণ (প্রাণ), সেনেহ (স্নেহ), বুধি (বুদ্ধি) ইত্যাদি।
  • ৬. ভাষায় ঈ-কারান্ত স্ত্রীলিঙ্গের রূপ দেখা যায়। যেমন কমলবদনী, কোঁঅলী পাতলী বালী।
  • ৭. বহুবচনে রা, রে, সবে, সব, জন, সঅল ইত্যাদি অনুসর্গের ব্যবহার হয়েছে।
  • ৮. নামধাতুর কিছু ব্যবহার রয়েছে। যেমন চুম্বিলা, মুকুলিল, চিন্তিল ইত্যাদি।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে কয়টি চরিত্র আছে, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের কটি চরিত্র

উত্তর:- কাব্যের প্রধান চরিত্র তিনটি, যথা- ১. রাধা, ২. কৃষ্ণ, ও ৩. বড়াই।
** এই কাব্যের কয়েকটি পৌরানিক চরিত্র হল- অর্জুন, অহল্যা, নারদ, আইহন, কুন্তী, তারাদেবী, গরুড়, নন্দ, বসুদেব, শান্তনু, ইন্দ্র, সীতা, বেদব্যাস ইত্যাদি।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য কে আবিষ্কার করেন, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য কে কোন সময় আবিষ্কার করেন, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের আবিষ্কার, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের আবিষ্কারক কে, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য কত সালে আবিষ্কৃত হয়, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য কে কবে কোথা থেকে আবিষ্কার করেন

উত্তর:- ১৯০৯ সালে বসন্তরঞ্জন রায় পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার কাঁকিল্যা গ্রাম থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের পুঁথি আবিষ্কার করেন। এটি পাওয়া যায় দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের গোয়ালঘরের মাচার ওপর থেকে। পুঁথিটির সঙ্গে প্রাপ্ত চিরকুট থেকে জানা যায়, আড়াই শ বছর আগে বিষ্ণুপুরের রাজগ্রন্থশালায় এটি রাখা ছিল। এর প্রথম দুটি পাতা, মাঝের কয়েকটি ও শেষ পাতাগুলো পাওয়া যায়নি।

পুঁথিটি পাতলা তুলোট কাগজে হালকা কালিতে লেখা। এতে তিন প্রকার লিপি দেখা যায়—প্রাচীন লিপি, প্রাচীন লিপির হুবহু অনুকরণ লিপি ও পরবর্তীকালের লিপি। বসন্তরঞ্জন রায় নিজে পুঁথিটি সম্পাদনা করেন। এরপর ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে (১৩২৩ বঙ্গাব্দে) কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নাম দিয়ে প্রকাশ করেন। চর্যাপদের পর এটিই প্রাচীনতম বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন। কারও কারও মতে, মূল গ্রন্থটির নাম ছিল শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ। পুঁথিটি খণ্ডিত বলে কাব্যরচনার সন-তারিখও জানা যায় না।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের সাহিত্যমূল্য বিচার করো, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের সাহিত্যমূল্য

উত্তর:- কাব্যের প্রধান চরিত্র তিনটি—কৃষ্ণ, রাধা এবং বড়ায়ি। ভগবান বিষ্ণুর দশম ও শেষ অবতার রূপে কৃষ্ণের জন্ম হয় পৃথিবীতে। অন্যদিকে দেবী লক্ষ্মী জন্ম নিয়েছেন রাধা রূপে। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কোনো দেবদেবীর কাহিনি নয়। এই কাহিনির কৃষ্ণ গ্রামের রাখাল বালক। আর রাধা হলো গোয়ালা-বধূ। সুতরাং শ্রীকৃষ্ণকীর্তন একটি গ্রামীণ প্রণয়কাব্য। রাধা ও কৃষ্ণের প্রণয়ে সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছে এক বুড়ি—যার নাম বড়ায়ি। কাহিনিতে দেখা যায়, রাধাকে পাওয়ার জন্য কৃষ্ণ নানাভাবে চেষ্টা করে এবং শেষপর্যন্ত সফলও হয়। এককথায় বলা যায়, বিষ্ণুর অবতাররূপে কৃষ্ণের জন্ম, বড়ায়ির সহযোগিতায় রাধার সঙ্গে তার প্রণয় এবং শেষে রাধাকে ত্যাগ করে কৃষ্ণের চিরতরে মথুরায় গমন—এই হলো শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মূল উপজীব্য।

আখ্যায়িকাটি মোট ১৩ খণ্ডে বিভক্ত: ১. জন্মখণ্ড, ২. তাম্বুলখণ্ড, ৩. দানখণ্ড, ৪. নৌকাখণ্ড, ৫. ভারখণ্ড, ৬. ছত্রখণ্ড, ৭. বৃন্দাবনখণ্ড, ৮. কালীয়দমন খণ্ড, ৯. যমুনাখণ্ড, ১০. হারখণ্ড, ১১. বাণখণ্ড, ১২. বংশীখণ্ড এবং ১৩. রাধাবিরহ। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন সংস্কৃত কাব্য গীতগোবিন্দর মতো আখ্যানধর্মী এবং সংলাপের আকারে রচিত। এতে প্রাচীন বাংলা নাটকের আভাস পাওয়া যায়। মনে করা হয়, পূর্বকালে স্থূল রঙ্গরসের যে ধামাইল গান প্রচলিত ছিল, তা থেকে কবি এর আখ্যানভাগ গ্রহণ করেছেন।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের বিষয়বস্তু, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করুন

উত্তর:- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন মধ্যযুগের আদি কাব্য। এটি কোনো একক কবির প্রথম রচনা। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ একটি সংকলনগ্রন্থ। সেখানে ২৪ জন কবির ৫১টি পদ বা কবিতা রয়েছে। অন্যদিকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন একজন কবিরই রচনা— যাঁর নাম বড়ু চণ্ডীদাস। এই বিবেচনায় বড়ু চণ্ডীদাস মধ্যযুগের আদি কবি। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন একইসঙ্গে একটি কাহিনিকাব্যও বটে। এখানে রাধা-কৃষ্ণের প্রণয়কাহিনি রয়েছে।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের গুরুত্ব আলোচনা করো, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আলোচনা করো

উত্তর:- চর্যাপদের পর ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ আদি-মধ্য বাংলা ভাষার প্রাচীনতম আবিষ্কৃত নিদর্শন। বাংলা ভাষাতত্ত্বের ইতিহাসে এর গুরুত্ব তাই অপরিসীম। অপরদিকে এটিই প্রথম বাংলায় রচিত কৃষ্ণকথা বিষয়ক কাব্য। মনে করা হয়, এই গ্রন্থের পথ ধরেই পরবর্তী বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব পদাবলির পথ সুগম হয়; তবে এই কাব্যের ভাব বৈষ্ণব-মহান্তদের নির্দেশিত কৃষ্ণলীলার ভাবব্যঞ্জনার সঙ্গে মেলে না। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকার ডক্টর অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় যথার্থই লিখেছেন,

“ জয়দেব ও ভারতচন্দ্রকে বাদ দিলে এ ধরণের কাব্য সমগ্র পূর্বভারতেই আর পাওয়া যাবে না।… বোধ হয় সেকালের শ্রোতারা এই পাঁচালি গানে বাস্তবতার সঙ্গে কিছু অধ্যাত্ম ব্যঞ্জনাও লাভ করত। কিন্তু আধুনিক কালের পাঠক এ কাব্যের প্রত্যক্ষ আবরণ অধিকতর আনন্দের সঙ্গে আস্বাদন করবেন। রাধাকৃষ্ণলীলায় কিছু উত্তাপ ছিল, জয়দেবের গীতগোবিন্দে সেই উত্তাপ সঞ্চারিত হয়েছে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে, সে উত্তাপ ‘অভিনব জয়দেব’ বিদ্যাপতির পদেও কিছু স্ফুলিঙ্গ বর্ষণ করেছে। ভারতচন্দ্র সেই উত্তাপকে কামনার পঞ্চপ্রদীপ জ্বালিয়ে নর-নারীর প্রণয়চর্চাকে আলোকিত করেছেন। দেহের এই রহস্য চৈতন্য ও উত্তর-চৈতন্যযুগের বৈষ্ণব পদাবলীতে উত্তাপ হারিয়ে স্থির দীপশিখায় পরিণত হয়েছে।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণী

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের তাম্বুল খন্ডের কাহিনী বিবৃত করো

উত্তর:- এই খন্ডটি শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের দ্বিতীয় খন্ড।

  • ১) খন্ডিত খন্ড।
  • ২) মোট পদ—২৬ টি।
  • ৩) সংস্কৃত শ্লোক–৭ টি।
  • ৪) রাগরাগিণী —১০ টি।
  • ৫) এখানে পাহাড়ীআ রাগের পদ বেশী।
  • ৬) এই খন্ডে রাধা বড়ায়ির কাছ থেকে হারিয়ে যায়।
  • ৭) এই খন্ডে রাধার নাম চন্দ্রাবলী পাওয়া যায়।
  • ৮) এই খন্ডে প্রথম যমুনা নদীর নাম পাওয়া যায়।
  • ৯) এই খন্ডে বড়ায়ির হাতে কৃষ্ণ কর্পূরবাসিত তাম্বুল ও চাঁপা নাগেশ্বর ফুল পাঠায়।
  • ১০) এই খন্ডে রাধা বড়ায়িকে চড় মেরেছে।
  • ১১) এই খন্ডে কৃষ্ণ ও বড়ায়ির মধ্যে কথা হয়েছিল যে কৃষ্ণ মহাদানী হয়ে কদমের তলে যমুনার তীরে বসে থাকবে।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের সমাজচিত্র

উত্তর:- ভূমিকা: “সাহিত্য সমাজের দর্পণ”। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের উৎস পুরান ভাগবত হলেও সমকালীন লৌকিক জীবনধারা এর কাহিনীকে পুষ্ট করেছে। ফলে সমসাময়িক লোকজীবনের নানা চিত্র ও রীতি-নীতি প্রতিফলিত হয়েছে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের কথাবস্তুতে।

দেবদেবীর পূজা: দৈব নির্ভর সেই যুগে সমাজে নানা ধরনের দেব-দেবীর পূজা প্রচলিত ছিল। কোনো শুভ কাজ আরম্ভের আগে শ্রীরামচন্দ্রের বন্দনা করা হতো। মেয়েরা মনস্কামনা সিদ্ধির আশায় চণ্ডীর পূজা করত। এমনকি শুভ কাজ শুরুর পূর্বে তিথি, বার, ক্ষণ, বিচার করার রীতি ছিল।

বাল্য বিবাহ: সমাজে বাল্যবিবাহ প্রথা প্রচলিত ছিল।আইহনের সঙ্গে রাধার অল্প বয়সেই বিবাহ হয়েছিল।

আত্মহত্যার রীতি: নানা অপবাদ, অবসাদ, অপরাধ ও মনঃকষ্টে গলায় কলসি বেঁধে জলে ডুবে, আগুনে ঝাঁপ দিয়ে, বিষ খেয়ে কিংবা গলায় পাথর বেঁধে ডুবে আত্মহত্যার ঘটনা প্রচলিত ছিল।

আস্থা ও বিশ্বাস: সংসারে আসক্তিহীন নারী মাথা মুড়িয়ে যোগিনী সাজে তির্থে ঘুরে বেড়াত। তাছাড়া জন্মান্তর, কর্মফল, অদৃষ্ট এবং নানা মন্ত্রতন্ত্রে মানুষের গভীর আস্থা ও বিশ্বাস ছিল।

অশুভের লক্ষ্মণ: হাঁচি ও টিকটিকির শব্দ, শূণ্য কলসি কাঁখে জল আনতে যাওয়া, দক্ষিণ দিকে শৃগালের গমন, শুষ্কডালে কাকের ডাক- ইত্যাদিকে অশুভের লক্ষণ বলে মনে করা হত।

নারী হত্যা গর্হিত অপরাধ: নারীহত্যাকে তৎকালীন সমাজে অত্যন্ত নিন্দনীয় ও গর্হিত অপরাধ বলে বিবেচিত হতো। “শতেক ব্রহ্মবধ নহে যার তুল”। নারী হত্যাকারীকে কেউ ঘৃণায় স্পর্শ করতো না।

প্রসাধন ও পোশাক: অবস্থাপন্ন গৃহস্থ বধূদের প্রসাধন ও পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল জৌলুসপূর্ণ। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে সোনা, হিরে, মণিমাণিক্য, মুক্তা, গজমতি-ইত্যাদির উল্লেখ সমকালীন আর্থিক স্বচ্ছলতার সংকেতবাহী।

হাট ও বিক্রয় পদ্ধতি: হাটে পণ্য বিক্রেতাকে শুল্ক দিতে হতো এবং সাধারণ কেনাবেচা ও লেনদেন বাড়ির মাধ্যমেই সম্পন্ন হত- এর প্রমাণ শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে মেলে।

নৌপথে যোগাযোগ: নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও তৎকালে প্রচলিত ছিল। তবে মাঝিকে পারাপারের জন্য শুল্ক দিতে হত। রাজার কাছে গিয়ে ঘাট ইজারা দেবার ও ব্যবস্থা ছিল।

দস্যুভয়: তখনকার পথে-ঘাটে দস্যুর ভয় ছিল। মানুষজন পথে নিরাপত্তার অভাব বোধ করত।

বর্ণ ও জাতিভেদ: সমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, শূদ্র ছাড়াও বৈদ্য, বণিক, সাপুড়ে, নাপিত, কুম্ভকার, তেলি, মাঝি প্রভৃতি বর্ণ ও জাতিভেদ লক্ষ্য করা যেত।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য pdf download, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য pdf

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য প্রশ্ন উত্তর, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য প্রশ্ন উত্তর Pdf

ছায়া বাংলা শিক্ষাক (বাঙালি) – প্রকল্প সহ একাদশ শ্রেণি

ছায়া বাংলা শিক্ষাক (বাঙালি) – প্রকল্প সহ একাদশ শ্রেণি

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য প্রশ্ন উত্তর

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে কয়টি চরিত্র আছে, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের কটি চরিত্র
উত্তর:- কাব্যের প্রধান চরিত্র তিনটি, যথা- ১. রাধা, ২. কৃষ্ণ, ও ৩. বড়াই


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।