কে বাঁচায় কে বাঁচে MCQ, SAQ, বড় প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

কে বাঁচায় কে বাঁচে MCQ (বহু বিকল্প ভিত্তিক) প্রশ্ন ও উত্তর

’ কে বাঁচায়,কে বাঁচে ‘ গল্পের প্রেক্ষাপট হলো –

(ক)১৯৪৩- এর মন্বন্তর

(খ) ভারত ছাড়ো আন্দোলন

(গ) ৭৬ এর মন্বন্তর

(ঘ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

উত্তর: (ক)১৯৪৩- এর মন্বন্তর

মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি নজর রাখার জন্য টুনুর মা কার কাছে। কাতর অনুরোধ করেন ?

(ক) প্রতিবেশীর কাছে

(খ) নিখিলের কাছে

(গ) অফিসের বড়োবাবুর কাছে

(ঘ) ডাক্তারের কাছে

উত্তর: (খ) নিখিলের কাছে

মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের থেকে পঞ্চাশ টাকা বেশি মাইনে পেত।কারণ—

(ক) মৃত্যুঞ্জয় এর চাকরি বেশি দিনের

(খ) মৃত্যুঞ্জয় ওপরওয়ালার প্রিয়পাত্র ছিল

(গ) মৃত্যুঞ্জয় অফিস এ বাড়তি দায়িত্ব পালন করতো

(ঘ) মৃত্যুঞ্জয় এর বয়স বেশি ছিল

উত্তর: (গ) মৃত্যুঞ্জয় অফিস এ বাড়তি দায়িত্ব পালন করতো

মৃত্যুঞ্জয় রোজ অফিসে যায়—

(ক) বাসে করে

(খ) ট্রামে চেপে

(গ) পায়ে হেঁটে

(ঘ) নিজের গাড়িতে

উত্তর:(খ) ট্রামে চেপে

”মৃত্যুঞ্জয় এর রকম দেখেই নিখিল অনুমান করতে পারলো …. ।”—নিখিল অনুমান করলো —

(ক) তার শরীর ভালো নেই

(খ) বড়ো একটা সমস্যার সঙ্গে তার সংঘর্ষ হয়েছে

(গ) তার মন ভালো নেই

(ঘ) তার উপর সে রাগ করে আছে

উত্তর: (খ) বড়ো একটা সমস্যার সঙ্গে তার সংঘর্ষ হয়েছে।

মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির বাজার ও কেনাকাটা করে—

(ক) মৃত্যুঞ্জয় নিজে

(খ) তার ভাই ও চাকর

(গ) টুনুর মা

(ঘ) মৃত্যুঞ্জয় ও তার চাকর

উত্তর:. (খ) তার ভাই ও চাকর

ফুটপাথে ব্যক্তিটির মৃত্যুর কারণ—

(ক) রোগ

(খ) দুর্ঘটনা

(গ) খাদ্যে বিষক্রিয়া

(ঘ) অনাহার

উত্তর: (ঘ) অনাহার

নিখিল দেখেছিলো যে মৃত্যুঞ্জয় শার্সিতে আটকানো মৌমাছির মতো —

(ক) উড়ে বেড়াচ্ছে

(খ) মধু খাচ্ছে

(গ) গুনগুন করছে

(ঘ) মাথা খুঁড়ছে

উত্তর: (ঘ) মাথা খুঁড়ছে

মৃত্যুঞ্জয় অফিসে ঠিকমতো না এসে কোথায় যায়?

(ক) বাজারে

(খ) আত্মীয়ের বাড়িতে

(গ) নিজের। বাড়িতে

(ঘ) শহরের ফুটপাথে ঘুরে বেড়ায়

উত্তর: (ঘ) শহরের ফুটপাথে ঘুরে বেড়ায়

মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে থাকে—

(ক) দশ জন লোক

(খ) পাঁচ জন লোক

(গ) সাত জন লোক

(ঘ) ন’জন লোক

উত্তর: (ঘ) ন’জন লোক

“গাঁ থেকে এইচি। খেতে পাই নে বাবা। আমায় খেতে দাও।” কথাগুলো বলেছে

(ক) টুনুর মা

(খ) মৃত্যুঞ্জয়

(গ) নিখিল

(ঘ) মৃত্যুঞ্জয়ের ছেলে-মেয়েরা

উত্তর: (খ) মৃত্যুঞ্জয়

”নিখিল সন্তর্পনে প্রশ্ন করলো।”— প্রশ্নটি ছিল —

(ক) তোমার কি হল ?

(খ) কি হল তোমার ?

(গ) কি হল হে তোমার ?

(ঘ) কি হয়েছে তোমার ?

উত্তর: (গ) কি হল হে তোমার ?

নিখিল রোগা, তীক্ষ্ণবুদ্ধি এবং একটু

(ক) আলসে প্রকৃতির লোক

(খ) সাহসী প্রকৃতির লোক

(গ) ভীরু প্রকৃতির লোক

(ঘ) চালাক প্রকৃতির লোক

উত্তর: (ক) আলসে প্রকৃতির লোক

সেদিন কোথায় যাবার পথে মৃত্যুঞ্জয় প্রথম মৃত্যু দেখে ?

(ক) বাজার।

(খ) নিখিলদের বাড়ি

(গ) অফিস

(ঘ) বাড়ি ফেরার পথে।

উত্তর: (গ) অফিস।

নিখিল কার কাছে মাঝে মাঝে কাবু হয়ে যায় ?

(ক) মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে

(খ) অফিসের অন্যান্যদের কাছে

(গ) তার স্ত্রীর কাছে

(ঘ) অফিসের বড়োবাবুর কাছে

উত্তর: (ক) মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে

“ফুটপাথে হাঁটা তার বেশি প্রয়োজন হয় না”- কার। প্রয়োজন হয় না ?

(ক) নিখিলের

(খ) টুনুর মা

(গ) মৃত্যুঞ্জয়ের

(ঘ) টুনুর

উত্তর: (গ) মৃত্যুঞ্জয়ের

কে বাঁচায় কে বাঁচে SAQ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মৃত্যুঞ্জয় সেদিন অফিস আসার পথে কী দেখল?

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয় সেদিন অফিস আসার পথে প্রথম মৃত্যু দেখল অনাহারে মৃত্যু।

মৃত্যুঞ্জয় এতদিন কী শুনে বা পড়ে এসেছে?

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয় এতদিন শুনে বা পড়ে এসেছে ফুটপাথের মানুষের মৃত্যুর কথা।

লােকে কোথায় মরতেও যায় না বেশি?

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িটা শহরের এমন এক নিরিবিলি অঞ্চলে, যে পাড়ায় ফুটপাথ বেশি না থাকায় দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষ মরতেও সেখানে যায় না।

মৃত্যুঞ্জয়েৱ সুস্থ শরীরটা কয়েক মিনিটে অসুস্থ হয়ে পড়ল কেন?

উত্তর: ফুটপাথে অনাহারে মানুষকে প্রথম মরতে দেখে মৃত্যুঞ্জয় মনে এমনই আঘাত পায় যে, মনে বেদনাবােধ ও শরীরে কষ্টবােধ হতে থাকায় সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে। গল্পে কোন্ ঘটনা নিখিলের কাছে সাধারণ সহজবােধ্য ঘটনা বলে মনে হয়?

উত্তর: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে। গল্পে ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যু নিখিলের কাছে সাধারণ সহজবােধ্য বলে মনে হয়।

ফুটপাথে মানুষ মৱাৱ কথা কে, কোথায় শুনেছে?

উত্তর: ফুটপাথে মানুষ মরার কথা মৃত্যুঞ্জয় কাগজে পড়ে বা লােকমুখে শুনেছে।

মৃত্যুঞ্জয় অফিসে নিজেৱ কুঠরিতে ঢুকেই চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ল কেন?

উত্তর: ধপ করে বসে পড়ার কারণ হল, সে মানসিক বেদনায় ও শারীরিক কষ্টবােধে রীতিমতাে কাবু হয়ে পড়েছে।

গ্লাসে জলপান কৱে খালি গ্লাসটা নামিয়ে রেখে সে কী কৱল?

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয় খালি গ্লাসটা নামিয়ে রেখে শূন্যদৃষ্টিতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রইল।

মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী নিখিলেৱ কেমন চেহারা ও কী প্রকৃতির মানুষ?

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী নিখিল চেহারা ও প্রকৃতির দিক থেকে রােগা, তীক্ষবুদ্ধি এবং আলসে প্রকৃতির মানুষ।

নিখিল অবসৱ জীবনটা কীভাবে কাটাতে চায়?

উত্তর: নিখিল অবসর জীবনটা বই পড়ে আর একটা চিন্তাজগৎ গড়ে তুলে কাটিয়ে দিতে চায়।

নিখিলের মৃত্যুঞ্জয়কে পছন্দ কৱা ও ভালােবাসা কেমন?

উত্তর: নিখিল মৃত্যুঞ্জয়কে অন্য সকলের মতাে বেশ পছন্দ করে এবং হয়তাে অল্প একটু অবজ্ঞার সঙ্গে ভালােও বাসে।

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

“মৃত্যুঞ্জয় প্রথম মৃত্যু দেখল–অনাহারে মৃত্যু” —–অনাহারে মৃত্যুর কারণ কী?

উত্তর: দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমসাময়িককালে কিছু মজুতদার কালোবাজারির দাপটে বাংলায় নেমে এসেছিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। এই দুর্ভিক্ষ পঞ্চাশের মন্বন্তর নামে খ্যাত। অনাহারে মৃত্যুর কারণ হল নিদারুণ খাদ্যাভাব।

‘একটা কাজ করে দিতে হবে তাই। কাজটা কী ছিল?

উত্তর: কাজটা ছিল মৃত্যুঞ্জয়ের দেওয়া বেতনের সমস্ত টাকা নিখিলকে রিলিফফাণ্ডে দিয়ে আসতে হবে।

টুনুর মা বিছানায় পড়ে থেকে বাড়ির লোকদের কীভাবে মৃত্যুঞ্জয়ের খোজ নিতে পাঠান ?

উত্তর: টুনুর মা বিছানায় পড়ে থেকে বাড়ির ছেলে, বুড়ো সকলকে তাগাদা দিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের খোঁজ নিতে পাঠান।

“মরে গেল! না খেয়ে মরে গেল’– কার উক্তি এবং কে মরে গেল?

উত্তর: উক্তিটি মৃত্যুঞ্জয়ের। একজন ফুটপাথবাসী বুভুক্ষু মানুষ অনাহারে মরে গেল।

হয়তো মৃদু একটু অবজ্ঞার সঙ্গে ভালও বাসে। – অবজ্ঞার কারণ কী?

উত্তর: পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষের দিনে অফিসকর্মী মৃত্যুঞ্জয় প্রথম পথে এক অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে মানসিক আঘাত পেয়ে কাবু হয়ে পড়েছিল।

অবসর জীবনটা নিখিল কীভাবে কাটাতে চায় ?

উত্তর: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে! গল্পে দেখা যায়, মানুষ অনাহারে ভুগছে আর মৃত্যুঞ্জয় এই দুরবস্থার সময়েও চারবেলা পেটভরে খেয়েছে। সে এটাকেই অপরাধ বলে গণ্য করেছে।

“নিখিল ধীরে ধীরে টাকাটা গুনল’—টাকাটা গুনার কারণ কী?

উত্তর: ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে!’ গল্পে অনাহারে ফুটপাতে মৃত্যুর ঘটনাটি আশ্চর্য নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পে Pdf

সরল উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সহায়িকা – শ্রেণী – একাদশ





সরল উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সহায়িকা – শ্রেণী – একাদশ



কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর

“ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা”- কে কাকে কোন প্রসঙ্গে এ উক্তি করেছেন ? উদ্ধৃত অংশে তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উত্তরের প্রথম অংশঃ- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে’ গল্পে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চাকুরীজীবী মৃত্যুঞ্জয় অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সে চাকরি ও সংসারকে অবহেলা করে অন্য মানুষের সেবা করতে চেয়েছে। সহকর্মী নিখিল তাকে নানাভাবে বোঝাতে থাকে এবং বলে “সমাজ ধর্মের দিক থেকে বিচার করলে দশ জনকে খুন করার চেয়ে নিজেকে না খাইয়ে মারা বড় পাপ।” নিখিলের এ মন্তব্য শুনে মৃত্যুঞ্জয় উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।

উত্তর এর দ্বিতীয় অংশঃ- মৃত্যুঞ্জয় নিরীহ, শান্ত, দরদী ও ভালো মানুষ। তাই সে অনাহারে মৃত্যুর জন্য নিজেকে অপরাধী মনে করে এবং প্রায়শ্চিত্তের জন্য সমস্ত মাইনে ও খাদ্য বিলিয়ে দিতে চেয়েছে । কিন্তু নিখিল কিছুতেই মৃত্যুঞ্জয়ের এরূপ কাজকে সমর্থন করেনি। সে মৃত্যুঞ্জয়কে বলেছে ভুরিভোজনটা অন্যায়। তবে না খেয়ে মারা উচিত নয়। নিখিল আরো বলেছে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু খাদ্য প্রয়োজন তা কাউকে না দিয়ে নিজেই তা খাবে।তবে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করা তার মতে অন্যায়।জনকল্যাণের জন্য যতটা সম্ভব খাওয়া কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করে নিখিল। নিখিলের এরূপ পাশবিক স্বার্থপরতার পরিচয় পেয়ে মৃত্যুঞ্জয় বলে “তুই পাগল নিখিল। বদ্ধ পাগল।” অর্থাৎ নিখিলের চুক্তি প্রসঙ্গে এরূপ মন্তব্য করে মৃত্যুঞ্জয়।

গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের জীবনের যে ট্রাজেডি কোনো কাহিনী বা ঘটনা নয়।শুধু চরিত্রের মানবিক ভাবনার কারণে এরূপ পরিণতি ঘটে। তার মানবতাবাদী ভাবনার একটি বড় দিক হলো সে যুক্তিবাদী হলেও আদর্শবাদ ও সংবেদনশীলতা তার মধ্যে প্রধান। তার যুক্তি এতটাই অর্থপূর্ণ ও জোড়ালো যে, তা তার পরিবার পরিজনদের কাছে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যুঞ্জয়ের মনে হয়েছে সামাজিক দায়িত্ব পালনের জন্য সে অনায়াসে পারিবারিক দায়িত্ব বিসর্জন দিতে পারবে। শুধু লক্ষ লক্ষ ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও তাদের বাঁচানো একমাত্র কর্তব্য।

মৃত্যুঞ্জয় ক্ষুদার্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর কথা নিখিলকে জানালে নিখিল তা সমর্থন করে। কিন্তু নিখিল জানায় নিজে না খেয়ে অন্যকে খাওয়ানোটা শুধু নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে অপরকে বাঁচানো। নিখিল আরো জানায় এভাবে দেশের মানুষকে বাঁচানো যায় না। নিজেকে না খাওয়ানো দশ জনকে খুন করার চেয়েও বড় পাপ। নিখিলের যুক্তির উপরেই মৃত্যুঞ্জয় জানায়” ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা”- অর্থাৎ সৎ সরল ও দরদী হওয়ায় মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের মত স্বার্থপর হয়ে বেঁচে থাকতে চায়নি।

“মৃত্যুঞ্জয়ের সুস্থ শরীরটা অসুস্থ হয়ে গেল”- মৃত্যুঞ্জয় কেন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল? শেষপর্যন্ত মৃত্যুঞ্জয়ের কী পরিনতি লক্ষ করা যায়?

উত্তর:- উৎসঃ- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সংগ্রামী জীবনের রূপকার ছিলেন। তাই তিনি রোমান্টিকতার বিরোধিতা করে বাস্তবকে নিয়ে গল্প লিখেছিলেন ।আলোচ্য মন্তব্যটি তার “কে বাঁচায় কে বাঁচে” গল্পগ্রন্থের অন্তর্গত। এখানে গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় অসুস্থ হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

অসুস্থতার কারণঃ- মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়ার পথে অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা দেখে অফিসে পৌঁছে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। দুর্ভিক্ষের সময় এমন দৃশ্য দেখাতে কলকাতায় স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় এমন ঘটনার কথা আগে শুনে থাকলেও স্বচক্ষে কখনোই দেখায়নি। তাই অনাহারে মানুষ যে মারা যেতে পারে তা সে মন থেকে মেনে নিতে পারছিল না। এতদিন সে চার বেলা খেয়ে যে অন্যায় করেছে সে অন্যায়ের কারণে মনে তার পাপবোধ জন্মায়। এই মৃত্যু তার মনে ভীষণ ভাবে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। ফলে মৃত্যুঞ্জয়ের সুস্থ শরীরটা অসুস্থ হয়ে যায়।

মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবর্তনঃ- এই ঘটনার পর মৃত্যুঞ্জয়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় দিনদিন মৃত্যুঞ্জয় অফিসের কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়ে মাঝে মাঝে অফিস যাওয়া বন্ধ করেছে ফুটপাথে ঘুরে বেড়ায়। ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়ে মিশে যায় লোকের কথায়- ” শহরে আদি-অন্ত হিন ফুটপাত ধরে সে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। … কেমন করে সব ওলটপালট হয়ে গেল।” সবকিছু বুঝেও মৃত্যুঞ্জয় কিছু করতে না পারার অক্ষমতার জন্য নিজেকে বদলে দেয় । শেষ পর্যন্ত মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়া ছেড়ে দেয় বাড়ি ফেরা ভুলে যায় ক্ষুধার্ত মানুষের দলে মিশে যায়। সে তার দাড়ি ভরা মুখ খালি গা ছেড়া ন্যাকড়া পড়ে মৃত্যুঞ্জয় লঙ্গরখানার লাইনে দাঁড়িয়ে কাড়াকাড়ি মারামারি করে খিচুড়ি খায়।

মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক বিকারঃ- মানবিক মূল্যবোধ মৃত্যুঞ্জয়ের মধ্যে অতিরিক্ত থাকায় শেষ পর্যন্ত সে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়। সময়ের সাথে সাথে সমাজ ও পরিবেশের পরিবর্তন ঘটলেও মৃত্যুঞ্জয়ের মনের পরিবর্তন ঘটেনি ।তার চাপ সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুঞ্জয়ের মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে যায়। এ কারণে মৃত্যুঞ্জয় হাতে বাটি নিয়ে বলে-: গা থেকে এইচি খেতে পাইনি বাবা আমায় খেতে দাও।”অর্থাৎ মৃত্যুঞ্জয়ের করুণ পরিণতি পাঠকের হৃদয় কে আদ্র করে তোলে।

“কারো বুকে নালিশ নেই, কারো মনে প্রতিবাদ নেই !”- কার মধ্যে এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল? কোন পরিস্থিতিতে বক্তা এমন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছিল?

উত্তরের প্রথম অংশঃ- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত “কে বাঁচায় কে বাঁচে” রচনা থেকে উদ্ধৃত উক্তিটি নেওয়া হয়েছে। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের মৃত্যু দেখে মৃত্যুঞ্জয় বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সে প্রথম প্রথম এই দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের সঙ্গে কথা বলতো। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় লক্ষ করেছে তাদের মুখে কোনো নালিশ বা প্রতিবাদ নেই। এই অনাহারী মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের দুর্দশা দেখে মৃত্যুঞ্জয়ের এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল।

উত্তর এর দ্বিতীয় অংশঃ- “কে বাঁচায় কে বাঁচে” গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়ার পথে প্রথম মৃত্যুর দৃশ্য দেখে। মৃত্যুঞ্জয় অনাহারে নাখেয়ে থাকা মানুষের জন্য দিনরাত ভেবেছে। সে নিজেকে তাদের এরূপ অবস্থার জন্য দায়ী মনে করে ভাবতে থাকে যে কিছুই কি করা যায় না তাদের জন্য। অবশেষে এক বেলা খাওয়া ছেড়ে দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। এমনকি অফিসের বেতন সে রিলিফ ফান্ডে দিয়েছে। তবে এরূপ সহযোগিতা দিয়েই সে থেমে থাকেনি। সে দিনের পর দিন অফিস কামাই করেছে। লেখকের কথায়- ” শহরের আদি-অন্তহীন ফুটপাত ধরে সে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়।… পাড়ায় পাড়ায় লঙ্গরখানা খুঁজে বার করে অন্য প্রার্থীদের ভিড় দেখে।”

মৃত্যুঞ্জয় ক্ষুধার্ত মানুষের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়েছে।যে মানুষগুলোর জন্য তার অফিস কামাই করে এত দূরে ছুটে আসা, সেই মানুষগুলো যেন একই ভাষায় কথা বলে। একই সুরে দুঃখের কথা শোনায়, এদের কথা বোঝাতে গিয়ে আলোচ্য উক্তিটি গৃহীত হয়েছে।

উক্তিটির তাৎপর্যঃ- ক্ষুধিত মানুষগুলো নিজেদের কণ্ঠস্বর হারিয়েছে। এদের নিজস্ব কোন ভাষা নেই। এরা সকলেই এক কথা বলে। সেই একঘেয়ে ও একরঙা । এরা কোনো প্রতিবাদ করেনা কোনো প্রতিরোধ গড়ে তোলে না। নিজেদের এরূপ পরিস্থিতির জন্য তারা নিজেদের ভাগ্যকে দায়ী করে। অর্থাৎ এরা ভাবে যে তারা পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। আর এজন্যই এই উক্তিটির আলাদা একটি মাত্রা রয়েছে।

মৃত্যুঞ্জয় ক্ষুদার্থ মানুষদের সহযোগিতা করতে গিয়ে সর্বস্ব দান করেছে। নিজের অফিস ও পরিবারের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে অবহেলা করেছে।অফিস ও বাড়ীঘর ভুলে গিয়ে সে ফুটপাতে পড়ে থাকা ক্ষুদার্থ মানুষদের সঙ্গে কথা বলে। কথা বলতে গিয়েই সে এই অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল।

” মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির অবস্থা শোচনীয়” মৃত্যুঞ্জয় কে? তার বাড়ির অবস্থা শোচনীয় কেন?

উত্তর:- মৃত্যুঞ্জয় এর পরিচয়ঃ- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “কে বাঁচায় কে বাঁচে” গল্পের মৃত্যুঞ্জয় হল কেন্দ্রীয় চরিত্র।যে আদর্শবাদী, সহানুভূতিশীল, সৎ ও সরল প্রকৃতির মানুষ।

মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির অবস্থাঃ- মন্বন্তরপিড়িত কলকাতা শহরের বুকে এক ফুটপাতবাসীর মৃত্যু প্রত্যক্ষ করে অফিসযাত্রী মৃত্যুঞ্জয়। জীবনে প্রথমবার এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়ে সে নিজেকে সামলাতে পারেনি। ঘটনার নিষ্ঠুরতা তার শরীর ও মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। মনে জাগে সীমাহীন প্রশ্ন। বিবেকের তাড়নায় দগ্ধ হতে থাকে। খুঁজে ফিরতে থাকে প্রায়শ্চিত্তের পথ।অচিরে তা পেয়েও যায়। সমস্ত জাগতিক স্বাচ্ছন্দকে অগ্রাহ্য করে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের মাঝে নিজেকে মিশিয়ে দেয়।

সমস্ত সাংসারিক দায়িত্বকে প্রায় এক প্রকার অস্বীকার করে মৃত্যুঞ্জয় নিজের মাইনের সমস্ত টাকাটা রিলিফ ফান্ডে দেবার আশায় নিখিলের দ্বারস্থ হয়। অথচ মাইনের পুরো টাকাতেও তার সংসার চলে না। বাড়িতে নয়জন লোক। স্ত্রী শয্যাশায়ী। ক্ষুধার তাড়নায় তার বাচ্চারা অহরহ কাঁদতে থাকে।

নির্বিকার মৃত্যুঞ্জয় শহরের ফুটপাতে লঙ্গরখানা ঘুরে খুঁজে ফেরে। নিরন্ন মানুষের যন্ত্রণার কারণ সবকিছুই বোঝে উঠে ও কিছু না করতে পারার অক্ষমতায তাকে সব সময় পীড়া দেয়। পরিবার-পরিজন থেকে দূরে সরে যায়। এমনকি মৃত্যুঞ্জয় অফিসে যায় না ফলে খুব সঙ্গত কারণেই দীর্ঘ অফিস কামাই করায় মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে।

ছােটোগল্প হিসেবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে। গল্পটি কতখানি সার্থক—আলােচনা করাে।

উত্তর:- প্রস্তাবনা: ছােটোগল্প আকৃতিতে ছােটো ও প্রকৃতিতে গল্প হলেও সাহিত্যের এক স্বতন্ত্র শিল্পপ্রকরণ। সাধারণত জীবনের এক টুকরাে অংশ ছােটোগল্পের উপকরণ।‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’—এই ইঙ্গিতমূলক সমাপ্তি ছােটোগল্পের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। চলমান ঘটনার মধ্যে ক্লাইমেক্স বা মহামুহূর্তটি জীবনের গভীর রহস্যকে ব্যঞ্জনাময় করে পাঠককে ‘বিন্দুর মধ্যে সিন্ধু দর্শন করিয়ে দেয়, এখানেই ছােটোগল্পের শিল্পকৃতিত্ব। ছােটোগল্পের ক্ষেত্রে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বস্তুবাদী চেতনা প্রগতিশীল মননকে আশ্রয় করে এদেশীয় নিম্ন, মধ্য কিংবা উচ্চবিত্ত মানুষের জীবনচিত্রকে সাহিত্যগুণান্বিত করে সার্থক করেছে। তাঁর দক্ষ কলমে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে। ছােটোগল্পে উচ্চবিত্ত মানুষ মৃত্যুঞ্জয়ের অভাবনীয় পরিবর্তন ও পরিণতির জীবনালেখ্য চিত্রণ এক অপূর্ব সৃষ্টি।

আকারে ছােটো: ছােটোগল্পের আয়তন ও চেহারা হয় ছােটো। পাঠক এক বৈঠকে বসে পড়ে শেষ করতে পারে এমনই তার ছােট্ট পরিসর। ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে। গল্পটি আকৃতির দিক থেকে এরকমই ছােটো। মাত্র কয়েক পৃষ্ঠার। কাহিনির প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়। মােটা টাকার অফিস চাকুরে, উচ্চবিত্ত মানুষ। দরদি ও মমত্বপরায়ণ। সৎ ও সরল স্বভাবের। দুর্ভিক্ষপীড়িত নিরন্ন মানুষ না খেয়ে মরছে হয়—খবর পড়ে, না হয় লােকমুখে শুনে ভাসাভাসা জানা থাকলেও সরাসরি দেখার অভিজ্ঞতা তার ছিল না। হঠাৎ সরাসরি দেখার মানসিক বেদনাবোেধ তার পরিবর্তন ঘটিয়ে সর্বহারা নিরন্ন মানুষে পরিণত করা গল্পের কাহিনি।

ঘটনা ছােটো: ছােটোগল্পে ঘটনার ঘনঘটা থাকে না। কে বাঁচায়, কে বাঁচে। গল্পে ঘটনা এতই ছােটো যে, গল্পের শুরুতে একটি বাক্যেই শেষ। ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যু। গল্পের পরবর্তী অংশ চরিত্রভিত্তিক। নায়কের পরিবর্তন ও পরিণতির কাহিনি।

কাহিনি একমুখী: কাহিনির একমুখীনতা ছােটোগল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট। সেদিক থেকে কে বাঁচায়, কে বাঁচে। গল্পটি মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রের পরিবর্তন ও পরিণতিকে লক্ষ রেখে এগিয়েছে লক্ষ্যভেদী তিরের মততা সম্পূর্ণ একমুখী হয়ে।

ক্লাইমেক্স বা চরম মুহূর্ত: ক্লাইমেক্স বা চরম মুহূর্ত বা মহামুহূর্ত সৃষ্টি ছছাটোগল্পের প্রাণ। কে বাঁচায়, কে বাঁচে! গল্পের একেবারে শেষে মৃত্যুঞ্জয় যখন ছােট্ট একটি মগ হাতে দুর্ভিক্ষপীড়িত নিরন্ন আরও দশজন মানুষের সঙ্গে ফুটপাথে পড়ে থাকে, কাড়াকাড়ি, মারামারি করে লঙ্গরখানার খিচুড়ি খায় আর বলে, ‘গা থেকে এইছি। খেতে পাই নে বাবা। আমায় খেতে দাও । তখন তার এই ট্র্যাজিক পরিণতি তার মহত্তম মানবিক জীবনবােধে উত্তরণের মহান সত্যটিকে পাঠকের কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরে।

শেষ হয়ে হুইল না শেষ: ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ ছােটোগল্পের এই বৈশিষ্ট্যের কথা আগেই বলেছি। কে বাঁচায়, কে বাঁচে। গল্পটি পড়ে শেষ করার পরেও কিছু অতৃপ্তি পাঠকের মনে থেকে যায়। এই আলােচনা থেকে দেখা গেল, ছােটোগল্পের বৈশিষ্ট্যের নিরিখে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে। গল্পটি একটি সার্থক ছােটোগল্প।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস সংগ্রাহ Pdf

পাঁচটি শ্রেষ্ঠ উপন্যাস – মানিক বন্দোপাধ্যায়




মানিক বন্দোপাধ্যায়ের সেরা ৫টি কাজের সংকলন- জননী, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মনাদির মাঝি, পুতুলনাচের ইতিকথা ও চতুষ্কোণ। একটি সংগ্রাহকের আইটেম!



কে বাঁচায় কে বাঁচে MCQ, SAQ, বড় প্রশ্ন উত্তর

অবসর জীবনটা নিখিল কীভাবে কাটাতে চায় ?
উত্তর: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে! গল্পে দেখা যায়, মানুষ অনাহারে ভুগছে আর মৃত্যুঞ্জয় এই দুরবস্থার সময়েও চারবেলা পেটভরে খেয়েছে। সে এটাকেই অপরাধ বলে গণ্য করেছে।


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।