সভ্যতা কি, সভ্যতা কাকে বলে, সভ্যতার উপাদান কয়টি

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সভ্যতা কি

যে কোনো একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে যখন কোনো একটি জনগোষ্ঠী স্থায়ী বাসস্থান নির্মাণ করে উন্নততর জীবনযাত্রায় অভ‍্যস্ত হয় এবং সেই উন্নতির পরিচায়ক হিসাবে উদ্ভাবন করে লিপির প্রয়োগ, অনুশাসন, রাষ্ট্রব‍্যবস্থা এবং সুস্পষ্ট ধর্মীয় ও আধিবিদ‍্যক দর্শন প্রভৃতি, তখন তাকে বলা হয় সভ‍্যতা ।
বিশ্বের কয়েকটি প্রাচীন তম সভ‍্যতা — মেহেরগড় সভ‍্যতা, হরপ্পা সভ‍্যতা, মিশরীয় সভ‍্যতা, সুমের সভ‍্যতা, আর্য সভ‍্যতা ।

একটি সভ্যতা (ইংরেজি: Civilization) হল কোন জটিল সমাজব্যবস্থা যা নগরায়ন, সামাজিক স্তরবিন্যাস, প্রতীকী যোগাযোগ প্রণালী (উদাহরণস্বরূপ, লিখন পদ্ধতি), উপলব্ধ স্বতন্ত্র পরিচয় এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর নিয়ন্ত্রণের মত গুণাবলী দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।

সভ্যতাকে প্রায়শই আরও কিছু সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয় যেগুলোর উপর সভ্যতা নির্ভরশীল, আর সেগুলো হল কেন্দ্রীকরণ, মানুষ এবং অন্যান্য জীবের আবাসন, শ্রমের বিশেষায়িতকরণ, সাংস্কৃতিকভাবে সৃষ্ট উন্নয়ন আদর্শ, আধিপত্য স্থাপন, ভাস্কর্যের অনুরূপ স্থাপত্য, কর বা খাজনা আরোপ, কৃষির উপর সামাজিক নির্ভরশীলতা, এবং সম্প্রসারণের প্রবণতা।

সাংগঠনিক বসবাসের ক্রমোন্নত স্তর হল সভ্যতা। এর অর্থ হল এর নিজস্ব আইন, সংস্কৃতি এবং জীবনব্যবস্থা ও আত্মরক্ষার নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে। অধিকাংশ সভ্যতারই নিজস্ব কৃষিব্যবস্থা এবং রাজতন্ত্র বা নির্বাচন ব্যবস্থার ন্যায় সরকারপদ্ধতি রয়েছে। তারা একটি সাধারণ ভাষায় কথা বলে, এবং তাদের নিজস্ব ধর্ম ও শিক্ষাব্যবস্থাও থাকতে পারে। সুমেরীয় ও মিশরীয় থেকে শুরু করে সকল সভ্যতারই নিজস্ব লিখন পদ্ধতি ছিল। এই লিখন পদ্ধতির মাধ্যমে তারা তাদের জ্ঞান সংকলন ও সংরক্ষণ করত।

রোমান সাম্রাজ্য হল বৃহৎ সভ্যতার একটি উদাহরণ। এটি রোম নগরী থেকে সরকারিভাবে পরিচালিত হতো। এই সাম্রাজ্য এককালে স্কটল্যান্ডের সীমান্ত থেকে উত্তর আফ্রিকা ও উত্তর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তাদের নিজস্ব ভাষা ছিল ল্যাটিন। রোমান সভ্যতা মোট ১০০০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, কিন্তু প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা টিকে ছিল তার থেকে বেশি দিন। রোমান এবং মিশরীয়গণ অ্যাক্টিয়ামের যুদ্ধে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাঁতে রোমানরা জয়ী হওয়ায় মিশর রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।

আজ থেকে 2000 বছর আগে অনেক সভ্যতার উত্থান পৃথিবীতে ঘটেছিল। তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল:-

  • সুমেরীয় সভ্যতা
  • ব্যাবিলনীয় সভ্যতা
  • অ্যাশেরীয় সভ্যতা
  • ক্যালডীয় সভ্যতা
  • মিশরীয় সভ্যতা
  • গ্রিক সভ্যতা
  • সিন্ধু সভ্যতা
  • হিব্রু সভ্যতা
  • পারস্য সভ্যতা
  • সিন্ধু সভ্যতা
  • হিট্টাইট সভ্যতা
  • চৈনিক সভ্যতা
  • ইজিয়ান সভ্যতা
  • হেলেনিস্টিক সভ্যতা
  • রোমান সভ্যতা অন্যতম।

সভ্যতা কাকে বলে

কোনো অঞ্চল বা অঞ্চলসমূহে যখন একটি জনগোষ্ঠী নগরপত্তন করে উন্নততর জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলে তখন তার ওই অগ্রগতির সহায়ক হিসেবে উদ্ভাবিত হয়- লিখন পদ্ধতি, আইন, সরকার, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সুস্পষ্ট ধর্মীয় দর্শন! মানব জাতির এসব আচরণের সম্মিলিত সমন্বয়কে বলা হয় সভ্যতা।

দার্শনিক ভলতেয়ার সর্ব প্রথম সিভিলাইজেশন শব্দটি ব্যবহার করেন। এছাড়া কোন অঞ্চল বা অঞ্চল সমূহের একটি জনগোষ্ঠী নগরপত্তন করে উন্নত জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলে, তখন তার অগ্রগতির সহায়ক নিয়ামক হিসেবে উদ্ভাবিত হয় লিখন পদ্ধতি, আইন, সরকারব্যবস্থা, বাণিজ্য, নব প্রযুক্তি, শিক্ষা ও সুস্পষ্ট ধর্ম-দর্শন তখন তাকে বলা হয় সভ্যতা। এ সভ্যতা সাধারণত মৌলিক ও জটিল সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল এর মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে।

বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী সভ্যতা সম্পর্কে বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তার কয়েকটি সংজ্ঞা দেয়া হলোঃ

  • ১) মন্টেস্কু এবং হান্টিংটন এর সভ্যতার সংজ্ঞা: সভ্যতা হচ্ছে ভৌগলিক তথা প্রাকৃতিক পরিবেশের আশীর্বাদপুষ্ট এক ফসল।
  • ২) মর্গান তার এনসিয়েন্ট সোসাইটি গ্রন্থে বলেছেন: সভ্যতা হচ্ছে বিবর্তন নামক সিঁরিটির শীর্ষ ধাপ। যে সমাজে লেখ্য ভাষা ও বর্ণমালা রয়েছে; ধাতুর ব্যবহার রয়েছে ও লিখিত দলিল এর প্রচলন রয়েছে সেই সমাজকেই বলা হবে সভ্য।
  • ৩) টেলর এর সভ্যতার সংজ্ঞা: অভাব, প্রয়োজন ও তাগিদ থেকে সভ্যতা সৃষ্টি হয়। আর্নল্ড টয়েনবি তার এই মতের অন্যতম বড় সমর্থক।
  • ৪) ম্যাকাইভার ও পেজের মতে সভ্যতার সংজ্ঞা: সভ্যতা অর্থে আমরা বুঝি মানুষ তার জীবন ধারণের ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকল্পে যে যান্ত্রিক ব্যবস্থা বা সংগঠন সৃষ্টি করেছে তারই সামগ্রিক রূপ! কেবল যে আমাদের সামাজিক সংগঠনের নানারূপ নীতি সভ্যতার অন্তর্গত তা কিন্তু নয়। বরং নানাবিধ কারিগরি কলাকৌশল ও বাস্তব যন্ত্রপাতি এই সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত।
  • ৫) পাসকুলার জিসবার্ট এর মতে সভ্যতার সংজ্ঞা: সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র হলো বহু জনমানব অধ্যুষিত নগরগুলো এবং এই সভ্যতা মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনের একটি পরিণত স্তর।

সভ্যতা বলতে কি বুঝায়

যে কোনো একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে যখন কোনো একটি জনগোষ্ঠী স্থায়ী বাসস্থান নির্মাণ করে উন্নততর জীবনযাত্রায় অভ‍্যস্ত হয় এবং সেই উন্নতির পরিচায়ক হিসাবে উদ্ভাবন করে লিপির প্রয়োগ, অনুশাসন, রাষ্ট্রব‍্যবস্থা এবং সুস্পষ্ট ধর্মীয় ও আধিবিদ‍্যক দর্শন প্রভৃতি, তখন তাকে বলা হয় সভ‍্যতা ।

বিশ্বের কয়েকটি প্রাচীন তম সভ‍্যতা — মেহেরগড় সভ‍্যতা, হরপ্পা সভ‍্যতা, মিশরীয় সভ‍্যতা, সুমের সভ‍্যতা, আর্য সভ‍্যতা ।

বাংলা ভাষায় সভ্যতার আভিধানিক অর্থ হলো শিষ্টতা, সামাজিকতা, জীবনযাত্রা, জীবনযাত্রা প্রণালির উৎকর্ষতা। সভ্যতা শব্দের উৎপত্তি সভা হতে এবং সভার অর্থ হল যা সকলকে নিয়ে শোভা পায়, এ অর্থে সভ্যতার অন্যতম আর্থ-সামাজিক সুসঙ্গত। যে অবস্থায় মানুষের সামাজিক জীবন প্রতভাত হয়, তার বিকাশ বা উন্নতি হয় তাই সভ্যতা। এটি মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালির শোভনতার পরিচয়। আবার ‘ সভ্যতা’ শব্দের ইংরেজী প্রতিশব্দ Civilization যা ল্যাটিন শব্দ ‘Civilis’ থেকে এসেছে। ‘Civilis’ এর অর্থ হল নাগরিক। ইংরেজী প্রতিশব্দের দিক দিয়ে আক্ষরিক দিক দিয়ে আক্ষরিক অর্থে সভ্যতা বলতে সুসংসহ নগর বা রাষ্ট্রের নাগরিক জীবনের অর্জিত গুণাবলির সমগ্রহকে বুঝায়।

সভ্যতা বলতে অনেক বস্তুগত সংস্কতিকে বুঝিয়েছেন। এ অর্থে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সব বস্তুগত আবিষ্কারের ফলকে একত্রে সভ্যতা বলা হয়। ম্যাকাইভার ও পেজ (Maclver & Page) বলেন, “সভ্যতা অর্থে আমরা বুঝি মানুষ তার জীবনধারণের ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকল্পে যে যান্ত্রিক ব্যবস্থা সংগঠন সৃষ্টি করেছে তারই সামগ্রিক রুপ”। কেবল যে আমাদের সামাজিক সংগঠনের নানারূপ নীতি সভ্যতার অন্তর্গত হয়েছে তা নয়, বিভিন্ন প্রকার কারিগরি কলা-কৌলশ ও বাস্তব যন্ত্রপাতিও এর অন্তর্ভূক্ত।

জিসর্বাটের মতে, “সভ্যতা হচ্ছে সাংস্কৃতিক জীবনের একটি পরিনত স্তর”। এল, এইচ মর্গান তার “ Ancient Society” গ্রন্থে বলেন, “সভ্যতা হচ্ছে কুসংস্কারবর্জিত সমাজের চূড়ান্ত রূপ”। সহজ কথায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সব বস্তুগত আবিষ্কারের ফলকে একত্রে সভ্যতা বলা হয়। মানুষ তার সৃজনশীল প্রয়াস দ্বারা এবং বিজ্ঞানের আশীর্বাদপুষ্ঠ হয়ে যে সামগ্রিক সমাজ জীবন গড়ে তুলে তার বাহ্যিক বস্তুগত প্রতিফলন হল সভ্যতা। রাস্তা-ঘাট, যানবহন, কলকারখানা, অট্টালিকা, বাসস্থান, আসবাবপত্র, অফিস-আদালত, নগর-বন্দর, সব মিলে যে জটিল বস্তুগত সংস্কৃতির সমাবেশ তার অনন্য স্বরূপটি হচ্ছে সভ্যতা।

Restart K- বলেন- “Civilization is supposed to be a stage of culture reached by a more evolved and complex society in which those large aggregations of people, called cities, come in to existence.” অর্থাৎ, সংস্কৃতির যে স্তরকেই সভ্যতা বলা যায় যে স্তরে একটি অপেক্ষাকৃত উন্নত ও মিশ্র সমাজ বহু সংখ্যক জনমানবের সমাবেশ সৃষ্টি করে যাদেরকে আমরা নগর আখ্যা দিয়ে থাকি।

“সভ্যতা বলতে আমরা বুঝি মানুষ তার জীবনধারণের ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকল্পে যে যান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সংগঠন সৃষ্টি করেছে তরাই সামগ্রিক রূপ। কেবল যে আমাদের সামাজিক সংগঠনের নানারূপ রীতি এর অন্তর্গত হয়েছে তা নয়, নানাবিদ কারিগরি, কলা-কৌশল ও বাস্তব যন্ত্রপাতি ও এর অন্তর্ভূক্ত”।

সভ্যতার উপাদান কয়টি

সভ্যতা বিভিন্ন উপাদান দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

  • এর মধ্যে রয়েছে শারীরিক এবং বৈষয়িক চাহিদা যেমন আশ্রয়, খাদ্য, বস্ত্র এবং সরঞ্জাম ।
  • আধ্যাত্মিক এবং মানসিক চাহিদা, যেমন একটি বিশ্বদর্শন, এছাড়াও সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
  • বৌদ্ধিক চাহিদা, সাহচর্য এবং আন্তঃসম্পর্কের জন্য সমবেত চাহিদা, সামরিক চাহিদা, প্রযুক্তিগত চাহিদা এবং সাংস্কৃতিক চাহিদা সবই সভ্যতার অংশ।
  • সভ্যতা হল ইকো-সিস্টেমের সামাজিক-প্রাকৃতিক কারণ এবং সাংস্কৃতিক-ও-মানসিক সম্পর্কের সমষ্টি।
  • বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক সভ্যতা যেমন আটলান্টিক, পূর্ব-ইউরেশিয়ান এবং ইসলামিক সভ্যতার নিজস্ব আঞ্চলিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে ।
  • সভ্যতার বিকাশের বর্তমান পর্যায়টি নিয়মিত চক্রাকার প্রভাবের অধীনে সমস্ত ধরণের রূপান্তর এবং সামাজিক-প্রাকৃতিক সম্পর্কের পরিবর্তন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। সভ্যতার উপকরণ এবং প্রতিষ্ঠান, যেমন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো, আইন, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং যুদ্ধ, সহযোগিতা এবং যুক্তির প্রতি মানবজাতির জেনেটিক প্রবণতার প্রকাশ।

মানব সভ্যতার শুরু হয় কিভাবে

আগুনের ব্যবহার থেকে মানব সভ্যতার শুরু হয়।

১০ হাজার বছর পূর্বে গম চাষের মধ্যে দিয়ে কৃষি বিপ্লব শুরু হয় কিন্তু আলাস্কা, সাউথ আফ্রিকা কিংবা অস্ট্রেলিয়া তে আবাদযোগ্য ফসলের পর্যাপ্ততা কম থাকায় ঐ সকল এলাকায় কৃষি বিপ্লব এর বাতাস তেমন ভাবে বয়ে যেতে পারেনি।

কোন কোন গবেষকরা মনে করেন শিকার ছেড়ে কৃষি তে জড়িয়ে পড়া ছিল মানবতার দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া, অন্যেরা বলেন আগের তুলনায় প্রচুর খাদ্য উৎপাদন করে গেল কিন্তু তারা আগের মত ডায়েট আর অবসর পেল না; উৎপাদন ভোগের পর প্রচুর উদ্বৃত্ত রয়ে গেল আর কৃষি বিপ্লব নিয়ে আসলো জনসংখ্যার বিস্ফোরণ আর সমাজের এলিট শ্রেণী তাই কৃষি বিপ্লবকে বলা হয়ে থাকে সভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রতারক হিসেবে ।

প্রাচীনতম সভ্যতাগুলো কি কি

সিন্ধু সভ্যতা, মিসরীয় সভ্যতা, সুমেরীয় সভ্যতা, পারস্য সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা,রোমান সভ্যতা, ইজিয়ান সভ্যতা।

বিশ্ব সভ্যতার কবে যাত্রা শুরু হয়? উঃ খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ থেকে।

পৃথিবীর প্রথম সভ্যতা বলা হয় কোন সভ্যতা কে? উঃ মিশরীয় সভ্যতাকে।

হোমো স্যাপিয়েন্স বা আধুনিক মানুষের উদ্ভব হয় কোন যুগে? উঃ সেনোজোয়িক যুগে।

আকৃতি ও প্রকৃতিগত দিক দিয়ে মানব জাতিকে কয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে? উঃ চার ভাগে, (অষ্ট্রেলয়েড, মঙ্গলয়েড, নিগ্রোয়েড ও ককেশীয়)

পাথর যুগ কয় ভাগে বিভক্ত ও কি কি? উঃ দুই ভাগে, যথা- পুরোপলীয় যুগ, নবোপলীয় যুগ।

সভ্যতা কয় প্রকার ও কি কি

সভ্যতা মানে মানব সমাজের সাংস্কৃতিক, সামাজিক, আর একটি প্রবৃদ্ধির পথের কথা। এটি একটি বৃহত্তর এবং সংস্কৃতিমুখী শব্দ যা প্রসার এবং বিকাশ নিয়ে কাজ করে। সভ্যতা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন আকারে এবং ধর্মে উপস্থিত থাকতে পারে। সভ্যতা মূলত ব্যক্তিগত, সামাজিক, ও রাষ্ট্রীয় উন্নতির একটি পর্যায়ক্রম নির্দেশ করে।

সভ্যতা প্রকারে বিভক্ত হতে পারে মানব ইতিহাস এবং বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে মডেলগুলির মাধ্যমে। তবে, এর মধ্যে কিছু মৌলিক বিভাগ হতে পারে:

১. প্রাচীন সভ্যতা (Ancient Civilization)

মেসোপটামিয়া, ইন্দুস সভ্যতা, মিশর, গ্রীক, রোমান এবং চীন সভ্যতা হিসেবে পরিচিত প্রাচীন সভ্যতা গুলি মানব ইতিহাসের আদি দিকে প্রসারিত হন। এই সভ্যতা গুলি কৃষি, শিক্ষা, সাহিত্য, ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অগ্রগতি করেছে।

২. মধ্যযুগ (Medieval Civilization)

ইসলামিক সভ্যতা, রেনেসাঁস, ও বিপ্লবের সময়ে উৎপন্ন হয়েছিল মধ্যযুগের সভ্যতা। ধর্ম, ভাষা, এবং সাংস্কৃতিতে বৃদ্ধি ও পরিবর্তন এই কালের সভ্যতা গুলির কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

৩. ইউরোপীয় আধুনিক সভ্যতা (European Modern Civilization)

ইউরোপের আধুনিক সভ্যতা রোমান্টিক কল্পনা, বৈজ্ঞানিক উন্নতি, ঔপনিবেশিক উন্নতি, এবং বৈশ্বিক সাম্যের সাথে সংযোগিত হয়েছে। ইউরোপীয় ভূমিকা বৃদ্ধি করেছে প্রযুক্তি, শিক্ষা, ব্যবসায়, ও রাজনৈতিক দিকে।

৪. এশিয়ান আধুনিক সভ্যতা (Asian Modern Civilization)

এশিয়া অঞ্চলে, বিশেষভাবে জাপান, চীন, ও ভারত, এশিয়ান আধুনিক সভ্যতা তাদের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যিক উপাধির সাথে প্রকাশ পাচ্ছে। এই সভ্যতা গুলি বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, ও আর্থিক উন্নতির দিকে উন্নতি করছে।

৫. বিশ্ববিদ্যালয় সভ্যতা (Global Civilization)

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ও গ্লোবাল সামাজিক যোগাযোগের সাথে একত্রিত হওয়ায়, আধুনিক যুগে সভ্যতা একটি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সভ্যতা তার সদস্যদেরকে আপেক্ষিকতা, সামাজিক ন্যায়, ও পরিবেশে দায়িত্ববোধ করার দিকে উন্নতি করছে।

সভ্যতা গুলি এক অপরের সাথে সম্পর্কিত, এবং এগুলির মধ্যে সম্প্রদায়, সংস্কৃতি, ও বিশেষভাবে ভাষা এমন কিছু মৌলিক দৃষ্টিকোণ রয়েছে যা পৃথিবী সমৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে পার্থক্য

সংস্কৃতি এবং সভ্যতা পারস্পরিক সম্পর্কসূত্রে আবদ্ধ। তথাপি এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে পার্থক্য গুলো তুলে ধরা হল-

সংস্কৃতিসভ্যতা
পরিমাপসংস্কৃতিকে সহজে পরিমাপ করা যায় না। এটি পরিমাপ করতে প্রয়োজন হয় বিমূর্ত কৌশলের। যেমন- আগ্রার তাজমহল সংস্কৃতির দিক দিয়ে নিউইয়র্কের জাতিসংঘ ভবনের থেকে বেশি মূল্যবান। অন্যদিকে, সভ্যতাকে সহজে পরিমাপ করা যায়। গরুর গাড়ির তুলনায় মোটরগাড়ি বেশি দ্রুত এবং যন্ত্রচালিত তাঁত হস্তচালিত তাঁতের তুলনায় বেশি শক্তিশালী এবং বেশি উৎপাদন করতে সক্ষম।
গতিসংস্কৃতির চলমান গতি সভ্যতার চেয়ে কম এবং এটি ক্রমপুঞ্জীভূত নয়। অন্যদিকে, সভ্যতার গতি হচ্ছে দ্রুত এবং ক্রমপুঞ্জীভূত। যান্ত্রিক আবিষ্কারের ফলে এটি দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে। MacIver and Page এর কণ্ঠে তাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে, “Civilization is always advancing, but not culture.”
অংশীদারিত্বদেশ-কাল-পাত্র নির্বিশেষে সকলেই সমানভাবে সংস্কৃতির অংশীদার হতে পারে না।অপরদিকে, সভ্যতার কীর্তিসমূহ সহজেই কোন একটি দেশ- কাল ও জাতি থেকে অন্য একটি দেশ-কাল ও জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
অবদানসংস্কৃতির অবদান সাধারণ মানুষ খুব সহজে বুঝতে পারে নাকিন্তু সভ্যতার অবদানগুলো সহজে বুঝা যায় এবং উপলব্ধি করা যায়।
প্রকাশভঙ্গিসংস্কৃতির প্রকাশ ঘটে প্রতীকের মাধ্যমে। অর্থাৎ সংস্কৃতি আত্মপ্রকাশ করে সাহিত্য, ললিতকলা, ধর্ম ও নৈতিকতার মাধ্যমে।অন্যদিকে অট্টালিকা, বাসস্থান, যন্ত্রশিল্প ইত্যাদির মাধ্যমে সভ্যতার প্রকাশ ঘটে।
নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও প্রতিযোগিতাসংস্কৃতির ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। এখানে প্রতিযোগিতা অনুপস্থিত। যদিও স্যাটেলাইটের বদৌলতে বর্তমানে সংস্কৃতিগত প্রতিযোগিতা কিছুটা পরিলক্ষিত হয়।অপরদিকে, সভ্যতার মৌল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়া। আর সে কারণেই এখানে তীব্র প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়।
অর্জনের ধরনের ক্ষেত্রেসংস্কৃতি হলো Achieved, অর্থাৎ সংস্কৃতি অর্জন করতে হয়।অপরদিকে, সভ্যতা হলো Ascribed, অর্থাৎ সভ্যতা হলো আরোপিত এবং এটি বংশপরম্পরায় অর্জন করা যেতে পারে।
কল্যাণকর এবং অকল্যাণকর সংস্কৃতিমানুষের মানসিক দিককে পরিতৃপ্ত করে। এটি কল্যাণকর এবং এর কোন ক্ষতিকর দিক নেই। কিন্তু সভ্যতার সূত্রে মানুষ বিভিন্ন ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও শক্তি লাভ করে। ফলে এটি কল্যাণকর এবং অকল্যাণকর উভয় কাজে ব্যবহৃত হয়।
পরিণতিসংস্কৃতির ক্ষেত্রে পরিণতি বা ফলাফল বড় কথা নয় বরং তার কর্মটি হলো মুখ্য। অন্যদিকে, সভ্যতার ক্ষেত্রে পরিণতি বা ফলাফলই মুখ্য বিবেচ্য বিষয়।
অন্তঃস্থ ও বাহ্যিকসংস্কৃতি হলো অন্তঃস্থ। অর্থাৎ, এটি হলো মানুষের আচরণের ভিতরের দিক। আমাদের চিন্তাভাবনা ও জীবনধারা, আচরণ, অনুভূতি, ধর্ম, শিল্পকলা ইত্যাদির মাধ্যমে এর প্রকাশ ঘটে।অপরদিকে, সভ্যতা হলো চরিত্রগত দিক থেকে বাহ্যিক, যান্ত্রিক এবং উপযোগী।
স্থায়িত্ব/ধ্বংসসংস্কৃতি ক্রমপ্রসারমান এবং এর একটি ধারাবাহিকতা রয়েছে। সংস্কৃতিকে সহজে পরাজিত করা যায় না এবং এটি সহজে ধ্বংস হয় না। অপরদিকে, কোন অশুভ শক্তির আক্রমণে সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে পারে। যেমন- মার্কিন বাহিনী কর্তৃক ইরাক আক্রমণের ফলে সে দেশের সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে কিন্তু সংস্কৃতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় নি।
মানদণ্ডমননশীলতার মানদণ্ডে সংস্কৃতিকে বিচার করা হয়ে থাকে।অন্যদিকে, দক্ষতার মানদণ্ড অনুযায়ী সভ্যতার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
নিজস্বতাসংস্কৃতির নিজস্ব সত্তা কিংবা জাতীয় রূপ থাকতে পারে।কিন্তু সভ্যতার ক্ষেত্রে তা পরিলক্ষিত হয় না।
বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতিসংস্কৃতি হচ্ছে প্রধানত মানুষের অবস্তুগত সৃষ্টি। যদিও সংস্কৃতির বস্তুগত উপাদানও ক্রিয়াশীল। অন্যদিকে, সভ্যতা হচ্ছে মানুষের বস্তুগত সৃষ্টি।
মানবজীবন পরিচালনাসংস্কৃতি মানুষকে আনন্দ দেয় এবং পরিতৃপ্ত করে।অন্যদিকে, সভ্যতা মানুষের জীবনযাত্রাকে স্বাচ্ছন্দ্য করে।
সমাজ পরিচালনাসংস্কৃতিকে সমাজ পরিচালনার Steering wheel বা দিকনির্দেশক যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে।অন্যদিকে, সভ্যতাকে Driving force of society বা সমাজ পরিচালনার শক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে পার্থক্য
আরো অন্যান্য প্রশ্নোত্তরের সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | সভ্যতা

Q1. পৃথিবীর প্রথম সভ্যতার নাম কি

Ans – মেসোপটেমিয় সভ্যতা পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ হতে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের মধ্যে মেসোপটেমিয়ায় অতি উন্নত এক সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল।

Q2. সুমেরীয় সভ্যতা কোথায় গড়ে উঠেছিল

Ans – বর্তমানে ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (তৎকালীন দজলা ও ফোরাত) নদীর মধ্যবর্তী উর্বর স্থানে সুমেরীয় সভ্যতার গোড়াপত্তন ঘটে। পশ্চিম এশিয়ার নবোপলয়ী পর্যায় থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে প্রথম যে সভ্যতা গড়ে উঠে তাই সুমেরীয় সভ্যতা।

Q3. ক্রিট দ্বীপ কোন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল

Ans – গ্রিসের ইতিহাস মিনোয়ান সভ্যতা হলো ব্রোঞ্জ যুগে এজিয়ান দ্বীপপুঞ্জের একটি সভ্যতা যেটি ক্রিট দ্বীপ এবং অন্যান্য এজিয়ান দ্বীপপুঞ্জে গড়ে ওঠে। এটি আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২৭০০ অব্দ হতে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৪৫০ অব্দের শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত থেকে অবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ অব্দে এসে পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়।

Q4. কোন সভ্যতাকে ইজিয়ান সভ্যতা বলা হয়

Ans – গ্রিক সভ্যতার পূর্বে ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যবর্তী ইজিয়ান সাগরের তীরে গড়ে উঠেছিল একটি ইউরো-এশিয়া সভ্যতা।

Q5. প্যালেস্টাইনে কোন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল

Ans – প্যালেস্টাইনে হিব্রু সভ্যতা সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।

Q6. ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতার নাম কি

Ans – ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা হল মেহেরগড় সভ্যতা।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।