অষ্টম শ্রেণির এসাইনমেন্ট বিজ্ঞান

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

অষ্টম শ্রেণির এসাইনমেন্ট বিজ্ঞান, শ্বসন, Human Respiration System

শ্বসন কাকে বলে

উত্তর : অক্সিজেন সহযোগে খাদ্যদ্রব্য জারিত হয়ে শক্তি ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করার প্রক্রিয়াকে শ্বসন বলা হয়।

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে উৎসেচকের সাহায্যে কোষের মধ্যে অবস্থিত খাদ্য জারিত হয়ে সরলতম অংশে বিশ্লিষ্ট হয় এবং খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিক শক্তি গতি বা তাপ শক্তিতে ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয়ে মুক্ত হয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে, তাকে শ্বসন (Respiration) বলে।

শ্বসনের বৈশিষ্ট্য?

শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবদেহে নিম্নলিখিত কাজগুলি সম্পন্ন করে:

  • শ্বাসবায়ুর আদান-প্রদান: শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবদেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেনের সরবরাহ হয় এবং দেহকোষ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড দূরীভূত হয়। রেচন: শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবদেহ থেকে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় উদ্বায়ী পদার্থ, যেমন: অ্যামোনিয়া, কিটোন বডি, তেল, অ্যালকোহল, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি নির্গত হয়ে যায়।
  • শোষণ: ফুসফুসের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ এবং উদ্বায়ী পদার্থ যেমন: কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, অ্যামাইনো নাইট্রাইট ইত্যাদি প্রাণী দেহে শোষিত হয়।
  • অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য: দেহ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস পরিত্যাগের মাধ্যমে দেহের অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য বজায় থাকে।
  • জলের ভারসাম্য: শ্বসন প্রক্রিয়ায় দেহ থেকে জলীয় বাষ্প নির্গত হয়ে দেহে জলের ভারসাম্য বজায় রাখে।
  • তাপের ভারসাম্য: নিঃশ্বাস বায়ুর সঙ্গে বেশ কিছু পরিমাণ তাপ দেহ থেকে নির্গত হয়ে যায়, ফলে দেহে তাপের ভারসাম্য বজায় থাকে।

শ্বসন কি ধরনের প্রক্রিয়া

শ্বসন এক ধরনের অপচিতি বিপাক প্রক্রিয়া। কারণ, শ্বসন প্রক্রিয়ায় জটিল খাদ্যবস্তু বিশ্লিষ্ট হয়ে সরল উপাদানে পরিণত হয়। এতে জীব দেহের শুষ্ক ওজন হ্রাস পায়। এই কারণে শ্বসনকে এক ধরনের অপচিতি বিপাক প্রক্রিয়া বলা হয়।

শ্বসন কত প্রকার?

শ্বসন প্রধানত দুই প্রকারের হয়। যথা:

  • সবাত শ্বসন
  • অবাত শ্বসন।

অবাত শ্বসন কাকে বলে?

উত্তর : যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় না তাকে অবাত শ্বসন বলে।

যে শ্বসন পদ্ধতিতে অবায়ুজীবী জীব কোষে মুক্ত অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে শ্বসন বস্তু গ্লুকোজ অক্সিজেন যুক্ত যৌগের অক্সিজেন কর্তৃক জারিত হয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও জলের পরিণত হয় এবং শ্বসন বস্তু মধ্যস্থ শক্তির আংশিক নির্গমন ঘটে তাকে অবাত শ্বসন বলে।

অবাত শ্বসন প্রক্রিয়া

যে শ্বসন প্রক্রিয়া অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে সংগঠিত হয় তাকে অবাত শ্বসন বলে। অর্থাৎ যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় কোনো শ্বসনিক বস্তু অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই কোষের ভিতরের এনজাইম দিয়ে আংশিকরূপে জারিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার জৈব যৌগ, যেমন: ইথাইল অ‍্যালকোহল, ল‍্যাকটিক এসিড ইত্যাদি, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং সামান্য পরিমাণ শক্তি তৈরি করে, তাকে অবাত শ্বসন বলে।

কেবলমাত্র কিছু অণুজীবে যেমন ব‍্যাকটেরিয়া, ইস্ট ইত্যাদিতে অবাত শ্বসন হয়।

C6H12O6 —এনজাইম–> 2C2H5OH + 2CO2 + শক্তি ( 56 k Cal / Mole )

অবাত শ্বসন সাইটোপ্লাজম এ ঘটে।

দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয—- গ্লাইকোলাইসিস এবং পাইরুভিক অ্যাসিডের অসম্পূর্ন জারন।

এই প্রকার শ্বসনে সর্বশেষ উপজাত বস্তু টি হল ইথানল বা ল্যাকটিক অ্যসিড।

অবাত শ্বসন ডিনাইট্রিফাইন ব্যাকটেরিয়া, মিথেন ব্যাকটেরিয়া, সালফার ব্যাকটেরিয়াতে দেখা যায়।

অবাত শ্বসনের রাসায়নিক সমীকরণটি হলো:

C6H12O6 + 12NO3 > 6CO2 + 6H2O + 12NO2 + 50 Kcal

এইরকম শ্বসনে প্রান্তীয় হাইড্রোজেন গ্রাহক অক্সাইড, যেমন: নাইট্রেট, কার্বনেট, সালফেট ইত্যাদি। এই শ্বসনে প্রান্তীয় ও শ্বসন পথ সংক্ষিপ্ত বলে এই রকমের শ্বসনে কম পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়।

অবাত শ্বসন কত সম্পন্ন হয়, অবাত শ্বসন কোথায় ঘটে, অবাত শ্বসন কত সংঘটিত হয়, অবাত শ্বসন সম্পন্ন হয়

অবাত শ্বসন ডিনাইট্রিফাইন ব্যাকটেরিয়া, মিথেন ব্যাকটেরিয়া, সালফার ব্যাকটেরিয়াতে দেখা যায়।

সবাত শ্বসন কাকে বলে

যে শ্বসন পদ্ধতিতে বায়ুজীবী জীব কোষে শোষণ বস্তু গ্লুকোজ মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে সম্পূর্ণরূপে জারিত হয়ে জল এবং কার্বন ডাই অক্সাইডে পরিণত হয় এবং শ্বসন বস্তু মধ্যস্থ শক্তি সম্পূর্ণ রূপে নির্গত হয়, তাকে সবাত শ্বসন বলে।

সবাত শ্বসনের কোন পর্যায়ে সাইট্রিক অ্যাসিড চক্র বলা হয়

এককোষী প্রাণী অ্যামিবা থেকে শুরু করে উন্নত শ্রেণীর বহু কোষী উদ্ভিদ এবং প্রাণীদেহের প্রতিটি সজীব কোষে সবাত শ্বসন সংঘটিত হয়।

সবাত শ্বসনের রাসায়নিক সমীকরণটি হল:

C6H12O6 + 6O2 > 6CO2 + 6H2O + 686 Kcal

সবাত শ্বসন প্রক্রিয়া

  • প্রথম পর্যায়: শ্বসন বলতে প্রধানত সবাত শ্বসনকেই বোঝায়। এইরকম শ্বসনে কোষস্থ্য খাদ্য, প্রধানত গ্লুকোজ, কোষের সাইটোপ্লাজমে অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে কতগুলো উৎসেচকের সহায়তায় আংশিকভাবে জারিত হয়ে পাইরুভিক এসিডে (Pyruvic Acid) পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়াটিকে গ্লাইকোলাইসিস (Glycolysis) বা EMP পথ বলে। এটি শ্বসনের প্রথম পর্যায়ে ঘটে।
  • দ্বিতীয় পর্যায়: এই পর্যায়ে পাইরুভিক অ্যাসিড সাইটোপ্লাজমে জারিত হয়ে অ্যাসিটাইল কো-এনজাইম-এ উৎপন্ন করে এবং কোষ অঙ্গাণু মাইটোকনড্রিয়ায় প্রবেশ করে। মাইটোকনড্রিয়ার মধ্যে সবার জারণ ঘটে; অর্থাৎ পাইরুভিক অ্যাসিড অক্সিজেনের উপস্থিতিতে আরো কয়েক প্রকার উৎসেচকের সহায়তায় সম্পূর্ণরূপে জড়িত হয়ে 686 Kcal শক্তি, কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং জল উৎপন্ন করে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন উৎসেচকের সহায়তায় ধাপে ধাপে চক্রাকারে ঘটতে থাকে। শ্বসনের এই প্রক্রিয়াটিকে ক্রেবস্ চক্র বলে।

আলোক শ্বসন, আলোক শ্বসন কী, আলোক শ্বসন কি

আলোর উপস্থিতিতে যে শ্বসন কার্য সম্পন্ন হয়, তাকে আলোক শ্বসন বলে।

আলোক শ্বসন এর বৈশিষ্ট্য

আলোক শ্বসন বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা শুধুমাত্র উদ্ভিদের মধ্যে ঘটে যেখানে সবুজ রঙ্গক ক্লোরোফিল খাদ্য প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হয়।
  • প্রয়োজনীয়তাগুলির মধ্যে রয়েছে সূর্যালোক, জল এবং অক্সিজেন, যেখানে দুটি প্রক্রিয়া ঘটে একটি আলো-নির্ভর এবং অন্যটি আলো-স্বাধীন।
  • গাছপালা বেশিরভাগই উদ্ভিদ রাজ্যের বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত যারা অটোট্রফ (তাদের নিজস্ব খাদ্য তৈরি করে), তাই সালোকসংশ্লেষণ খাদ্য উৎপাদনের একটি উপায় প্রদান করে।
  • ক্লোরোপ্লাস্ট গ্রানা এবং থাইলাকয়েডগুলিতে সালোকসংশ্লেষণ ঘটে
  • সালোকসংশ্লেষণের শেষ পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে অক্সিজেন এবং খাদ্য (গ্লুকোজ)।

মানব শ্বসন অঙ্গ কয়টি

মানব শ্বসন অঙ্গ ৭টি।

মানব শ্বসন অঙ্গ গুলি কি কি

মানুষের শ্বসন অঙ্গ হচ্ছে একজোড়া ফুসফুস (lungs)। যে পথ দিয়ে ফুসফুসে বায়ু প্রবেশ করে এবং ফুসফুস থেকে তা বহির্গত হয় তাকে শ্বসন পথ (respiratory passage) বলে। সম্মুখ নাসারন্ধ্র থেকে শ্বসন পথের শুরু। মানুষের শ্বসনতন্ত্রের পর্যায়ক্রমিক বিভিন্ন অংশকে নিচে বর্ণিত তিনটি অঞ্চলে ভাগ করে বর্ণনা করা যায়।

ক. বায়ু গ্রহণ ও ত্যাগ অঞ্চল (Air intake and discharge zone)

  • ১. সম্মুখ নাসারন্ধ্র (Anterior nostrils) : নাকের সামনে অবস্থিত পাশাপাশি দুটি ছিদ্রকে সম্মুখ নাসারন্ধ্র বলে। নাক একটি হলেও ন্যাসাল সেপ্টাম (nasal septum) বা নাসা ব্যবধায়ক-এর মাধ্যমে দুটি নাসারন্ধ্রের বিকাশ ঘটেছে। সম্মুখ নাসারন্ধ্র সবসময় উন্মুক্ত থাকে এবং এ পথেই বায়ু দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
  • ২. ভেস্টিবিউল (Vestibule) : নাসারন্ধ্রের পরে নাকের ভিতরের অংশের নাম ভেস্টিবিউল। এর প্রাচীরে অনেক লোম থাকে। লোমগুলো ছাঁকনির মতো গৃহীত বাতাস পরিষ্কারে সহায়তা করে।
  • ৩. নাসাগহ্বর (Nasal cavity) : ভেস্টিবিউলের পরের অংশটি নাসাগহ্বর। নাসাগহ্বরের প্রাচীরে সিলিয়াযুক্ত মিউকাস ক্ষরণকারী ও অলফ্যাক্টরী কোষ থাকে। এটি আগত প্রশ্বাস বায়ুকে কিছুটা সিক্ত করে। সিলিয়াযুক্ত ও মিউকাস কোষগুলো ধুলাবালি এবং রোগজীবাণু আটকে দেয়। অলফ্যাক্টরি কোষ ঘ্রাণ উদ্দীপনা গ্রহণে সাহায্য করে।
  • ৪. পশ্চাৎ নাসারন্ধ্র (Posteriornostrils) : নাসা গহ্বরদ্বয় যে দুটি ছিদ্রের মাধ্যমে নাসাগলবিলে উন্মুক্ত হয় তাকে কোয়ানা (choana) বা পশ্চাৎ নাসারন্ধ্র বলে। এসব ছিদ্রপথে বাতাস নাসাগলবিলে প্রবেশ করে।
  • ৫. নাসাগলবিল (Nasopharynx) : পশ্চাৎ নাসারন্ধের পরে নাসাগলবিল অবস্থিত। এর পরেই মুখ-গলবিল (oropharynx), যা স্বরযন্ত্র পর্যন্ত বিস্তৃত।
  • ৬. স্বরযন্ত্র (Larynx): এটি নাসাগলবিলের নিচের অংশের ঠিক সামনের দিকের অংশ এবং কয়েকটি তরুণাস্থি টুকরায় গঠিত। এগুলোর মধ্যে থাইরয়েড তরুণাস্থি সবচেয়ে বড় এবং এটি গলার সামনে উঁচু হয়ে ওঠে (পুরুষে) হাত দিলে এর অবস্থান বোঝা যায় এবং বাইরে থেকে দেখা যায়। একে Adam’s Apple বলে।

স্বরযন্ত্রের উপরে থাকে একটি ছোট এপিগ্লটিস (epiglottis)। স্বরযন্ত্রে অনেক পেশি যুক্ত থাকে। এর অভ্যন্তরভাগে থাকে মিউকাস আবরণী ও স্বররজ্জু (vocal cord)। পেশির সংকোচন-প্রসারণই স্বররজ্জুর টান (tension) বা শ্লথন (relaxation) নিয়ন্ত্রণ করে । টানটান অবস্থায় বাতাসের সাহায্যে স্বররজ্জু কম্পিত হয়ে শব্দ সৃষ্টি করে। এপিগ্লটিস খাদ্য গলাধঃকরণের সময় স্বরযন্ত্রের মুখটি বন্ধ করে দেয়। ফলে খাদ্য স্বরযন্ত্রে প্রবেশ করতে পারে না, অন্য সময় এটি শ্বসনের উদ্দেশ্যে উন্মুক্ত থাকে। স্বরযন্ত্রে স্বর সৃষ্টি হয়।

খ. বায়ু পরিবহন অঞ্চল (Air transport zone)

  • ৭. শ্বাসনালি বা ট্রাকিয়া (Trachea) : স্বরযন্ত্রের পর থেকে পঞ্চম বক্ষদেশীয় কশেরুকা পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ১২ সেমি. দীর্ঘ ও ২ সেমি. ব্যাসবিশিষ্ট ফাঁপা নলাকার অংশকে ট্রাকিয়া বলে। এটি ১৬-২০টি তরুণাস্তি নির্মিত অর্ধবলয়ে (C-আকৃতির) গঠিত। তন্তুময় টিস্যু দিয়ে অর্ধবলয়গুলো আটকানো থাকে ট্রাকিয়ার অন্তঃপ্রাচীরে সিলিয়াযুক্ত মিউকাস আবরণী রয়েছে। ট্রাকিয়া চুপসে যায় না বলে সহজে এর মধ্য দিয়ে বায়ু চলাচল করতে পারে। এর অন্তঃপ্রাচীরের সিলিয়া অবাঞ্ছিত বস্তুর প্রবেশ রোধ করে।
  • ৮. ব্রঙ্কাস (Bronchus) : বক্ষগহ্বরে ট্রাকিয়ার শেষ প্রান্ত দুটি (ডান ও বাম) শাখায় বিভক্ত হয়; এদের নাম ব্রঙ্কাই (bronchi –বহুবচন)। এগুলো ফুসফুসের হাইলাম (hilum) দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে। ডান ব্রঙ্কাসটি অপেক্ষাকৃত ছোট কিন্তু প্রশস্ত এবং তিনভাগে ভাগ হয়ে ডান ফুসফুসের তিনটি অ্যালভিওলাই দৃশ্যমান খণ্ডে প্রবেশ করে। বাম ব্রঙ্কাসটি দুভাগে ভাগ হয়ে বাম ফুসফুসের দুটি খন্ডে প্রবেশ করে। ফুসফুসের অভ্যন্তরে প্রতিটি ব্রঙ্কাস পুনঃপুনঃ বিভক্ত হয়ে অসংখ্য ক্ষুদ্রাকায় ব্রঙ্কিওল (bronchiole) গঠন করে। ব্রঙ্কিওল দুধরনের –প্রান্তীয় ব্রঙ্কিওল ও শ্বসন ব্রঙ্কিওল। ব্রঙ্কাসে তরুণাস্থি থাকলেও ব্রঙ্কিওলগুলো তরুণাস্থিবিহীন।

গ. শ্বসন অঞ্চল (Respiratory zone) :

  • ৯. ফুসফুস (Lungs) : ফুসফুস সংখ্যায় দুটি এবং হালকা গোলাপী রঙের স্পঞ্জের মতো নরম অঙ্গ। বাম ফুসফুসটি আকারে ছোট, ওজনে ৫৬৫ গ্রাম, দুই লোব বিশিষ্ট এবং ডান ফুসফুস আকারে বড়, ওজনে ৬২৫ গ্রাম, তিন লোব বিশিষ্ট। ফুসফুস দ্বিস্তরী পিউরাল পর্দা (pleural membrane) দিয়ে আবৃত থাকে। ভিতরের পর্দাকে ভিসেরাল প্লিউরা এবং বাইরের পর্দাকে প্যারাইটাল প্লিউরা বলে। দুই স্তরের মাঝে প্লিউরাল গহ্বরে প্লিউরালরস নামক এক ধরনের রস থাকে।
  • ব্রঙ্কাস যে অংশে ফুসফুসে প্রবেশ করে তাকে হাইলাম (hilum) বলে । হাইলামের মাধ্যমে ধমনি ফুসফুসে প্রবেশ এবং শিরা ও লসিকা নালি বেরিয়ে আসে। ব্রঙ্কাস, ধমনি, শিরা, লসিকা নালি, ঘন যোজক টিস্যুতে পরিবেষ্টিত হয়ে পালমোনারি মূল (pulmonary root) গঠন করে এবং এর সাহায্যেই ফুসফুস ঝুলে থাকে। ফুসফুসের প্রতিটি লোব কয়েকটি সেগমেন্ট (bronchopulmonary segments)-এ বিভক্ত।
  • ডান ফুসফুসে ১০টি এবং বাম ফুসফুসে ৮টি সেগমেন্ট থাকে। প্রত্যেকটি সেগমেন্ট আবার অসংখ্য লোবিওল (lobule)-এ বিভক্ত। লোবিওলগুলো ফুসফুসের কার্যকরী একক। ফুসফুসে রক্ত সংবহনতন্ত্র এবং পরিবেশের মধ্যে O2 ও CO2 এর বিনিময় ঘটে।
  • ১০. ব্রঙ্কিয়াল বা শ্বসন বৃক্ষ (Bronchial or Respiratory tree) : ট্রাকিয়ার দ্বিবিভাজনে সৃষ্ট যে ব্রঙ্কাস ডান ও বাম ফুসফুসে প্রবেশ করে তাকে প্রাইমারি ব্রঙ্কাস বলে। প্রাইমারি ব্রঙ্কাস বিভক্ত হয়ে প্রত্যেক লোবের জন্য একটি করে সেকেন্ডারি ব্রঙ্কাস বা লোবার ব্রঙ্কাস (lobar bronchus) গঠন করে (ডান ফুসফুসে ৩টি এবং বাম ফুসফুসে ২টি) সেকেন্ডারি ব্রঙ্কাস থেকে টার্সিয়ারী ব্রঙ্কাস বা সেগমেন্টাল ব্রঙ্কাস সৃষ্টি হয়ে একটি করে পালমোনারি সেগমন্টে প্রবেশ করে। সেগমেন্টাল ব্রঙ্কাস বার বার বিভক্ত হয়ে যে সূক্ষ্ম নালির সৃষ্টি হয় সেগুলোকে ব্রঙ্কিওল (bronchiole) বলে যা একএকটি লোবিওলে প্রবেশ করে। সমগ্র বায়ুনালি সিস্টেমকে দেখতে একটি উল্টানো বৃক্ষের মতো দেখায় বলে একে সাধারণভাবে শ্বসন বৃক্ষ-ও বলে।

ব্রঙ্কাস প্রাচীরে তরুণাস্থি (cartilage) থাকে, ব্রঙ্কিওলে থাকেনা। ব্রঙ্কিওল ব্রঙ্কাসের চেয়ে বেশি মসৃণ পেশি ধারণ করে, তবে ব্রঙ্কাস এবং ব্রঙ্কিওল উভয়ে সিলিয়াসম্পন্ন স্তম্বাকার এপিথেলিয়াম (columner epithelium)-এ আবৃত। প্রতিটি লোবিওলে ব্রঙ্কিওল বিভক্ত হয়ে প্রান্তীয় ব্রঙ্কিওল, শ্বসন ব্রঙ্কিওল, অ্যালভিওলার নালি, অ্যাট্রিয়াম, আলভিওলার থলি এবং সর্বশেষে অ্যালভিওলাস (alveolus, Pl.-alveloli) সৃষ্টি করে। অ্যালভিওলার নালি এবং অ্যালভিওলাই সরল আঁইশাকার এপিথেলিয়াম (squamous epithelium) দিয়ে আবৃত।

শ্বসন হার, শ্বসন হার মূল্যায়ন পদ্ধতি

আপনার শ্বাসের হার আপনার শ্বাসের হার হিসাবেও পরিচিত। এটি প্রতি মিনিটে আপনার নেওয়া শ্বাসের সংখ্যা।

আপনি বিশ্রামে থাকাকালীন এক মিনিটের মধ্যে আপনি যে শ্বাস নেন তার সংখ্যা গণনা করে আপনি আপনার শ্বাসের হার পরিমাপ করতে পারেন।

একটি সঠিক পরিমাপ পেতে:

  • বসুন এবং শিথিল করার চেষ্টা করুন।
  • চেয়ারে বা বিছানায় বসার সময় আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের হার নেওয়া ভাল।
  • এক মিনিটের মধ্যে আপনার বুক বা পেট কতবার উঠছে তা গণনা করে আপনার শ্বাসের হার পরিমাপ করুন।
  • এই নম্বরটি রেকর্ড করুন।

শ্বসন ও দহনের মধ্যে পার্থক্য

যে বিক্রিয়ায় কোনো মৌল বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে তাপ শক্তি উৎপন্ন করে, তাকে দহন বলে। শ্বসন ও দহনের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

শ্বসনদহন
জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় দ্বারা অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা অনুপুস্থিতিতে খাদ্যের দৈহিক জারণ ঘটে এবং খাদ্য স্থিতিশক্তি গতি শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ও মুক্ত হয় তাকে শ্বসন বলে।অন্যদিনে কোনো মৌলকে বা যৌগকে বায়ুর অক্সিজেনের উপস্থিতিতে পুড়িয়ে তার উপাদান মৌলের অক্সাইডে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে দহন বলে।
শ্বসন একটি জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া।অন্যদিন দহন অজৈব ও রাসায়নিক প্রক্রিয়া।
শ্বসন কেবল সজীব কোষে ঘটে।অন্যদিকে দহন মৃত বা জড় দাহ্যবস্তুতে ঘটে ।
শ্বসনের সময় খাদ্যবস্তু ধাপে ধাপে জারিত হয়ে শক্তি নির্গত হয় বলে এটি একটি নিয়ন্ত্রিত দহন প্রক্রিয়া।অন্যদিকে দহনের সময় অনিয়ন্ত্রিতভাবে অতি দ্রুত তাপ নির্গত হয় বলে এটি অনিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া।
শ্বসন প্রক্রিয়ায় উৎসেচকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।অন্যদিকে দহন প্রক্রিয়ায় উৎসেচকের কোনো ভূমিকা নেই।
শ্বসন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন ছাড়াও সম্ভব।অন্যদিকে দহন প্রক্রিয়া অক্সিজেন ছাড়া সম্ভব নয়।
শ্বসন প্রক্রিয়ায় আলো উৎপন্ন হয় না কিন্তু তাপ উৎপন্ন হয়।অন্যদিকে দহন প্রক্রিয়ায় আলো তাপ উৎপন্ন হয়।
শ্বসনের উৎপন্ন শক্তি ATP অনুতে সঞ্চিত হয়।অন্যদিকে দহন বিক্রিয়াই উৎপন্ন শক্তি পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।
শ্বসনে শক্তির মুক্তি ধীরে ধীরে ঘটে।অন্যদিকে দহনে শক্তির মুক্তির দ্রুত ঘটে।
শ্বসন ও দহনের মধ্যে পার্থক্য

ব্যাকটেরিয়ার শ্বসন অঙ্গানুর নাম কি

ব্যাকটেরিয়ার শ্বসন অঙ্গের নাম মেসোজোম

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | অষ্টম শ্রেণির এসাইনমেন্ট বিজ্ঞান

শ্বসনের উদ্দেশ্য কি

প্রতিটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবন আছে। জীবদেহে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের জৈবনিক প্রক্রিয়ার জন্য শক্তি প্রয়োজন। জীব কোষের সাইটোপ্লাজমে সঞ্চিত স্টার্চ, শর্করা, প্রোটিন ও ফ্যাটের অণুতে শক্তি সঞ্চিত থাকে। সকল জীবকোষের জৈব ক্রিয়ার জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য।
প্রকৃতপক্ষে অক্সিজেন দ্বারা খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি যা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৌরশক্তি থেকে সঞ্চিত হয়, তাকে গতিশক্তি ও তাপশক্তিতে রূপান্তরিত করাই শ্বসনের মুখ্য উদ্দেশ্য।

সবাত শ্বসন ও অবাত শ্বসনের মধ্যে পার্থক্য

জল ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে এবং শ্বসন বস্তুস্থিত শক্তি সম্পূর্ণরূপে নির্গত হয় তাকে সবাত শ্বসন বলে। সবাত শ্বসন ও অবাত শ্বসনের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। সবাত শ্বসনে মুক্ত অক্সিজেনের (O2) উপস্থিতিতে ঘটে। অন্যদিকে অবাত শ্বসনে মুক্ত অক্সিজেনের অনপস্থিতিতে ঘটে।
২। সবাত শ্বসন বস্তু সম্পূর্ণরূপে জারিত হয়। অন্যদিকে অবাত শ্বসন বস্তু আংশিক জারিত হয় ।
৩। সবাত শ্বসন বায়ুজীবি জীবে ঘটে । অন্যদিকে অবাদ শ্বসন অবায়ুজীবি জীবে ঘটে ।
৪। সবাত শ্বসন প্রান্তীয় হাইড্রোজেন গ্রাহক হল আণবিক অক্সিজেন । অন্যদিকে অবাত শ্বসন প্রান্তীয় হাইড্রোজেন গ্রাহক অক্সিজেনযুক্ত যৌগের অক্সিজেন।
৫। সবাত শ্বসনের উপজাত বস্তু CO2 ও H2O । অন্যদিকে উপজাত বস্তু CO2, H2O এবং অন্যান্য বস্তু।
৬। সবাত শ্বসন সম্পূর্ণ শক্তি অর্থাৎ 686 Kcal শক্তি উৎপন্ন হয় । অন্যদিকে অবাত শ্বসন আংশিক শক্তি অর্থাৎ 50 Kcal শক্তি উৎপন্ন হয়।
৭। সবাত শ্বসন প্রধানত তিনটি পর্যায়ে হয় -গ্লাইকোলাইসিস, ক্রেবস চক্র এবং প্রান্তীয় শ্বসন । অন্যদিকে অবাত শ্বসন দুটি পর্যায়ে সম্পর্ণ হয় – গ্লাইকোলাইসিস এবং পাইরুভিক অ্যাসিডের অসম্পূর্ণ জারণ ।
৮। সবাত শ্বসন সাইটোপ্লাসম ও মাইট্রোকন্ড্রিয়ার মধ্যে ঘটে । অন্যদিকে অবাত শ্বসন মাইট্রোকন্ড্রিয়ার বাইরে অর্থাৎ সাইটোপ্লাসমে ঘটে।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।