দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর

নবজাগরণ কাকে বলে, নবজাগরণ বলতে কী বোঝো

মধ্যযুগের সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতিতে পরিবর্তন করার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে রূপান্তর দেখা যায়। মানসিক বিপ্লব থেকেই নবজাগরণের উন্মেষ ঘটে।

১.  ফরাসি শব্দ Renaistre থেকে রেনেসাঁস শব্দের উৎপত্তি।  রেনেসাঁস কথার আক্ষরিক অর্থ হলো অধ্যাত্মিক পুনর্জন্ম।

২. পঞ্চদশ শতকে প্রথমে ইতালির ফ্লোরেন্স ও পশ্চিম ইউরোপে প্রাচীন গ্রিক ও রোমান শিক্ষা সংস্কৃতি চর্চার ফলে  পশ্চিম ইউরোপের যে নতুন সংস্কৃতি ঘটেছিল তা ইউরোপের নবজাগরণ বা রেনেসাঁস নামে পরিচিত।

৩. ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার এর মতে, ক্যাথলিক চার্চ প্রবর্তিত মধ্যযুগীয় কুসংস্কার ও ভ্রান্তি থেকে মানুষের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে ছিল নবজাগরণ। তবে ভলতেয়ারের এই মত সমর্থনযোগ্য নয় কারণ অধিকাংশ  রেনেসাঁ মতবাদী ছিলেন ক্যাথলিক।

ইউরোপের নবজাগরণ, ইউরোপের নবজাগরণ বৈশিষ্ট্য pdf

১. জানার  ইচ্ছা ও আগ্রহ:  দ্বাদশ শতকের শেষদিকে থেকে ইউরোপের কিছু মানুষের চিন্তাজগতে অজানাকে জানার ইচ্ছা ও আগ্রহ ও যুক্তির ভিত্তিতে বিশ্লেষণ ও তা গ্রহণ করার প্রবণতা শুরু হয়েছিল এবং পঞ্চদশ শতকে গ্রিক ও রোমান সাহিত্য দর্শন চর্চার মাধ্যমে তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল।

২. যুক্তিবাদের প্রভাব: নবজাগরণ অদ্ভুত যুক্তিবাদের প্রভাবে প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাস ও কুসংস্কারের বন্ধন ছিন্ন হয় এবং মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়।

৩. মানবতাবাদ: পদ্ধতির পরিবর্তে পার্থিব জগতের উপর গুরুত্ব আরোপ এবং মানুষের হিতসাধন ছিল নবজাগরণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য  মানবতাবাদ এর মূল কথা।  ফ্রান্সেস্কো পেত্রাক  ছিলেন মানবতাবাদের  জনক।  পরবর্তীকালে উল্লেখযোগ্য মানবতাবাদি ছিলেন ম্যাকিয়াভেলি,  লিওনার্দো দা ভিঞ্চি  প্রমুখ।

৪. সাহিত্য, দর্শন, শিল্পকলা:  প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সাহিত্য দর্শন বিজ্ঞান চর্চার ফলে সমসাময়িক সাহিত্য দর্শন ও শিল্পকলা আরো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। (ক)  ফ্লোরেন্স, রোম, প্রতিষ্ঠান স্থাপত্যের প্রধান কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে। (খ)  লিওনার্দো দা ভিঞ্চি প্রমুখ চিত্রকলায় নতুন রীতির প্রবর্তন করেন। (গ)  জাতীয় ভাষা ও স্থানীয় ভাষা সাহিত্যের বিকাশ ঘটে।

৫. বিজ্ঞান চর্চা:  নবজাগরণ এর ফলে বিশ্ব জগতের মানুষ সম্পর্ক সম্বন্ধে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেছিল। ফলে পৃথিবী কেন্দ্রিক বিশ্ব জগত থেকে সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বের প্রবর্তন এবং বিজ্ঞান গবেষণার ফলে প্রাকৃতিক ঘটনার রহস্য সমাধান ও মানবকল্যাণ সম্ভব হয়েছিল।

সুইজারল্যান্ড এর ঐতিহাসিক  জ্যাকব   দেখিয়েছেন যে, নবজাগরণ সমাজ পরিবর্তন করেছিল এবং তা ছিল মধ্যযুগীয় আধুনিক যুগের সূচনা।  তবে ইভন ক্যামেরনের মতে, পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের নবজাগরণ প্রকৃত অর্থে নবজাগরণ ছিল না বরং তা পুনঃমূল্যায়ন দাবি করে।

বাংলার নবজাগরণ, বাংলার নবজাগরণ বলতে কী বোঝো

‘রেনেসাঁ’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল জাগৃতি বা নবজাগরণ। উনিশ শতকের বাংলার সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনকে ইতিহাসবিদরা ‘নবজাগরণ’ আখ্যা দিয়েছেন।

[1] অর্থ: পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত তৎকালীন বাংলার মধ্যবিত্ত সমাজ অনুসন্ধানী মন ও যুক্তিতর্কের দ্বারা সবকিছুর মূল্যায়ন শুরু করে। এই সময় চিরাচরিত শাস্ত্রের নতুন ব্যাখ্যা, নীতিশাস্ত্রের ও ধর্মশাস্ত্রের নতুন মূল্যায়ন শুরু হয়। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, সমাজ, সমস্ত ক্ষেত্রে এক অভাবনীয় জাগরণ শুরু হয়, যা এক কথায় নবজাগরণ নামে পরিচিত।

[2] ভিত্তি: নবজাগরণ বলতে শুধু প্রাচীন দেশীয় ও ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নতুন মূল্যায়ন প্রচেষ্টাকে বােঝায় না। এই সময় ইংরেজি শিক্ষার ও ইউরােপীয় সংস্কৃতির ছোঁয়ায় বাঙালি আত্মসচেতন হয়ে ওঠে। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি পাশ্চাত্যের সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। বাঙালি নিজের ধর্মীয় এবং সামাজিক ত্রুটিবিচ্যুতিগুলি এবং সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনের চরিত্র সম্বন্ধে সচেতন হয়ে ওঠে।

এই সচেতনতাই হল নবজাগরণের আসল ভিত্তি। নবজাগরণের মতাদর্শগত ভিত্তি কখনই ধর্মনিরপেক্ষ বা অসাম্প্রদায়িক ছিল একথা বলা যায় না। তাই অধ্যাপক সুমিত সরকার লিখেছেন—“মুসলিম স্বৈরাচারী শাসনের সহাবস্থান সংক্রান্ত ধারণা থেকেই বুদ্ধিজীবীরা একটি বিদেশি শাসন গ্রহণ করার সুবিধাজনক যৌক্তিকতা খুঁজে পেয়েছিলেন।”

[3] তিনটি ভাবধারা: বাংলার নবজাগরণের চরিত্র বিচারে কয়েকটি ভাবধারার পরিচয় পাওয়া যায়। এগুলি হল উদারপন্থী ভাবধারা, প্রাচ্যের পুনরুজ্জীবনবাদী বা ঐতিহ্যবাদী ভাবধারা এবং সমন্বয়বাদী ভাবধারা। পাশ্চাত্যের উদারপন্থী ভাবধারার প্রবাবে সমাজসংস্কার, ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, নারীমুক্তি আন্দোলন প্রভৃতি শুরু হয়। যুক্তির আলােকে প্রচলিত প্রথা এবং আচারবিধিগুলি যাচাই করে নেওয়ার রীতি চালু হয়।

দ্বিতীয় ধারা অর্থাৎ প্রাচ্যের পুনরুজ্জীবনবাদ বা ঐতিহ্যবাদী ভাবধারা অনুযায়ী প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ লক্ষ করা যায়। তৃতীয় অর্থাৎ সম্বন্বয়বাদী ভাবধারা অনুযায়ী প্রাচীন যুগের যা কিছু শ্রেষ্ঠ তার সঙ্গে পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞানের যা কিছু শ্রেষ্ঠ উভয়ের সমন্বয়ের উদ্যোগ শুরু হয়।

[4] এলিটিস্ট আন্দোলন: সমালােচকদের ধারণায় উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণ ছিল এলিটিস্ট (Elitist) আন্দোলন। সমাজের মুষ্টিমেয় উচ্চবিত্ত ও উচ্চশিক্ষিত লােকেদের মধ্যেই এই নবজাগরণ সীমাবদ্ধ ছিল। উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের প্রভাব সমাজের সকল শ্রেণির ওপর পড়েনি। তা ছাড়া এই নবজাগরণ মুসলিম সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়। কারণ মুসলিম সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে সেই সময় কোনাে সংস্কার প্রচেষ্টা দেখা যায়নি।

তা ছাড়া হিন্দ সমাজকেন্দ্রিক সংস্কার প্রচেষ্টা গৃহীত হলেও দেখা যায় যে, হিন্দুসমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ বা কৃষক সমাজের উন্নতির জন্য কোনাে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। জওহরলাল নেহরু স্পষ্টভাবে বলেছেন ঔপনিবেশিক শাসনের জ্ঞানদীপ্তি শুধুমাত্র উচ্চবর্ণের বাঙালি হিন্দুদের ওপরই প্রতিফলিত হয়েছিল।

[5] মৌলিকত্বের অভাব: বাংলায় নবজাগরণের মৌলিকত্বের অভাব ছিল। একদিকে বেদ উপনিষদের প্রভাব, অপরদিকে পাশ্চাত্য উদারপন্থা ও হিতবাদের অনুপ্রেরণা। মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালির মতাদর্শ এক মিশ্র চিন্তাধারার জন্ম দেয়। এর কুপ্রভাব হিসেবে তারা ইংরেজি গানের সুরের ঢঙে হিন্দুস্থানি গানের চর্চা করতেন এবং ইংরেজ কায়দায় খানাপিনা করতেন ও বিলাস বৈভবে জাবন কাটাতেন।

এদের অনেকেই দেশের ঐতিহ্যমণ্ডিত শিল্পের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখালেও ইল্যান্ড থেকে আমদানি করা বিলাসপণ্য ঘরে সাজিয়ে রেখে গর্ব অনুভব করতেন। তাই এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক অমলেশ ত্রিপাঠী বলেছেন- “প্রাচীন ইটালির দ্বিমুখবিশিষ্ট দেবতা জ্যানাসের মতাে তারা একবার সামনের দিকে আধুনিক পাশ্চাত্যের প্রতি তাকিয়েছিল। আর একবার পেছনদিকে প্রাচীন ভারতের প্রতি তাকিয়েছিল। ঘড়ির পেন্ডুলামের মতাে তারা একবার পাশ্চাত্যকরণের দিকে এক একবার ঐতিহ্যগত আদর্শের দিকে এবং এই দুই-এর মধ্যবর্তী স্তরে বিচরণ করেছিল।”

[6] শহরকেন্দ্রিক: উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণ ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক। এই নবজাগরণের প্রাণকেন্দ্র ছিল কলকাতা। কলকাতার বাইরে অন্যান্য জায়গায় এই নবজাগরণ ছড়িয়ে পড়েনি। তাই গ্রামবাংলার গরিষ্ঠ অংশ এই নবজাগরণের ছোঁয়া পায়নি। বলা যায়, গ্রামের কৃষক ও দরিদ্র শ্রেণির সঙ্গে এই নবজাগরণের কোনাে সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।

নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য, বাংলায় নবজাগরণের প্রকৃতি আলোচনা করো, নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য, বাংলার নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য গুলি উল্লেখ করো

ঊনবিংশ শতকে বাংলার জাগরণকে নবজাগরণ বা রেনেসাঁ বলা যায় কিনা তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্কের অন্ত নেই। এ সম্পর্কে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন মতামত প্রদান করেছেন। তাদের মতামতগুলিকে সামনে রেখে বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মোটামুটি ভাবে ধারণা লাভ করা যায়।

১) নবজাগরণ বাস্তব-ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় ও দ্বিধাহীন ভাবে ঊনবিংশ শতকে বাংলার জাগরণকে রেনেসাঁ বা নবজাগরণ বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, “কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর ইউরোপে যে রেনেসাঁস দেখা দেয়, ঊনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণ ছিল তদাপেক্ষা ব্যাপক, গভীর ও অধিকতর বৈপ্লবিক। এই নবজাগরণ ছিল প্রকৃতই একটি রেনেসাঁ”।

ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, “বাংলার নবজাগরণ হিন্দু জাতীয়তাবাদের ফসল। এই নবজাগরণ বাংলা তথা ভারতের জাতিসত্ত্বাকে নতুনভাবে উন্মোচিত করেছিল”। রামমোহন বিশেষজ্ঞ দিলীপ কুমার বিশ্বাস তার “রামমোহন সমীক্ষা” গ্রন্থে লিখেছেন, “ইউরোপীয় রেনেসাঁসের সঙ্গে বাংলা রেনেসাঁসের প্রকৃতিগত পার্থক্য থাকলেও একটি জায়গায় মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

উভয় ক্ষেত্রেই প্রাচীন যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্যের পুনরুজ্জীবন ও পুনঃঅনুশীলনীর প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়”। অধ্যাপক সুশোভন সরকার, অম্লান দত্ত প্রমুখও বাংলার জাগরণের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করেও একে নবজাগরণ বলে মেনে নিয়েছেন।

২)তথাকথিত নবজাগরণ-ঊনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণের বাস্তবতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। বিনয় ঘোষ, অশোক মিত্র, সুমিত সরকার, সুপ্রকাশ রায় প্রমুখ ঊনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণকে অতিকথন ও তথাকথিত নবজাগরণ বলে অভিহিত করেছেন।

সেন্সাস কমিশনার অশোক মিত্র 1951 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি রিপোর্টে ঊনবিংশ শতকে বাংলার জাগরণকে তথাকথিত জাগরণ বলে অভিযোগ করেছেন। তার মতে, “এই জাগরণ শহর কলকাতার মানুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, গ্রামীণ বাংলার জনগণকে তা স্পর্শ করতে পারেনি”।

সমাজ বিজ্ঞানী বিনয় ঘোষ তার “বাংলার নবজাগৃতি” গ্রন্থে বাংলার তথাকথিত নবজাগরণকে “সোডার বোতলে উচ্ছ্বসিত বুদবুদের মত খানিকটা সাময়িক আদর্শগত চিত্তচাঞ্চল্য” বলে মত প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, “নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য সমাজের ওপর তলার কিছু মানুষের ব্যক্তিস্বার্থের ফলশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই নয়”। তিনি বাংলার নবজাগরণকে “ঐতিহাসিক ছলনা” বলেও সমালোচনা করেছেন। অধ্যাপক অমলশ ত্রিপাঠীও ঊনবিংশ শতকে বাংলার জাগরণ কি নবজাগরণ বলে অভিহিত করতে অস্বীকার করেছেন। তার মতে, “বাংলার নবজাগরণ এদেশে কোন মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি, তার রেশ কখনোই সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছায়নি”। Future Point

নবজাগরণের   স্রষ্টা  সম্পর্কিত   বিতর্ক-ঊনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণের স্রষ্টা সে সম্পর্কেও যথেষ্ট বিতর্ক আছে। মার্কিন গবেষক ডেভিড কফ  বাংলার নবজাগরণে রাজা রামমোহন রায় অথবা ডিরোজিওকে কোন কৃতিত্ব দিতে রাজি নন। তার মতে ভারতীয় নবজাগরণের পথিকৃৎ হলেন ব্রিটিশ প্রাচ্য তত্ত্ববিদগণ। অপর এক মার্কিন ঐতিহাসিক বুমফিল্ড ঊনবিংশ শতকে বাংলার জাগরণকে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ইংরেজ সৃষ্ট তথাকথিত ভদ্রলোক শ্রেণীর আন্দোলন বলে অভিহিত করেছেন।

ড. সুমিত সরকার বলেন, “সমগ্র বাংলার নবজাগরণ ইংরেজের নকল নবিশ ছাড়া আর কিছু ছিল না”। অপরপক্ষে রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, “পাশ্চাত্য সভ্যতার সংস্পর্শে এসে দেশবাসীর অন্তরে মানবতাবাদ ও যুক্তিবাদের স্ফুরণ ঘটে এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবধারার সমন্বয় এর ফলেই বাংলায় নবজাগরণের সূচনা হয়”।

সীমাবদ্ধতা-ঊনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। 

প্রথমত, এই জাগরণ ছিল মূলত উচ্চবিত্ত উচ্চ শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সাধারণ কৃষক, শ্রমিক ও গ্রামের মানুষদের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক ছিল না। 

দ্বিতীয়ত, এই নবজাগরণ ছিল বহুলাংশে ইংরেজ নির্ভর। মূলত ব্রিটিশ সভ্যতা ও সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে বাংলায় এই জাগরণ এসেছিল। নবজাগরণের নেতৃবৃন্দ মনে করতেন ইংরেজ শাসনই ভারতীয় সভ্যতার সার্বিক মঙ্গল সাধন করতে পারে।

তৃতীয়ত, এই নবজাগরণ মূলত উচ্চবর্ণের হিন্দু সমাজের মধ্যে আবদ্ধ ছিল। মুসলিম সমাজ বা নিম্নবর্ণের হিন্দুদের সঙ্গে এই নবজাগরণের কোন সম্পর্ক ছিল না।

মূল্যায়ন-নানা প্রকার তর্ক বিতর্ক, ত্রুটি-বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ঊনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। আসলে পরাধীন ভারতে গড়ে ওঠা নবজাগরণের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে।এতে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। প্রকৃত সত্য হল বাংলার এই নবজাগরণ ভারতের মাটিতে একটি সর্বব্যাপী বৌদ্ধিক জাগরণ দেয়, যা ভারতীয় ইতিহাসের গতিপথ নির্ধারণ করে।

রাজা রামমোহন রায় নবজাগরণ

ঐতিহাসিকরা 1757 সালের পলাশীর যুদ্ধে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জয় এবং সেইসাথে 1772 সালে জন্মগ্রহণকারী “বাংলার রেনেসাঁর জনক” হিসাবে বিবেচিত সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়ের কাজগুলিকে আন্দোলনের সূচনা হিসাবে বিবেচিত করেন।

রাজা রামমোহন রায় শুধুমাত্র বাংলার নবজাগরণের জনকই ছিলেন না, তিনি ভারতীয় নবজাগরণেরও জনক ছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় 1828 সালের সতীদাহ নিষেধাজ্ঞা আইন পাশ হয়। তার অবদানগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ধর্মীয় ও সামাজিক: তিনি উপনিষদ দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত ছিলেন এবং তার দর্শনের প্রচার করেছিলেন। এর জন্য তিনি 1815 সালে আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম 1828 সালে ব্রাহ্ম সমাজ এবং পরবর্তীকালে 1831 সালে ব্রাহ্মসমাজ রাখা হয়। তিনি বাল্যবিবাহ, ভ্রুণহত্যার মতো সে সময়ে দেশে প্রচলিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক কুফলগুলির সমালোচনা করেন। এছাড়া তিনি মূর্তি পূজা, বিধবাদের অসম্মান প্রভৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন।
  • রাজনৈতিক: তিনি পশ্চিমের রাজনৈতিক ব্যবস্থা দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত ছিলেন এবং ভারতেও ঐ একই দাবি করেছিলেন। নাগরিক অধিকার, ক্ষমতা বিচ্ছিন্নতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ইত্যাদির মতো রাজনৈতিক ধারণার দাবিগুলি জনপ্রিয় করার দিক থেকে তিনিই প্রথম ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
  • শিক্ষা: তিনি ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা এবং ইংরেজি ভাষাকে জনপ্রিয় করেছিলেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে সংস্কৃত এবং ফার্সি ভাষার একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং এগুলির আধুনিকীকরণের জন্য ইংরেজি শিক্ষা অপরিহার্য। এর জন্য তিনি ডেভিড হেয়ারের সাথে কলকাতা হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে প্রেসিডেন্সি কলেজ নামে নামকরণ করা হয়।

তার প্রচেষ্টার কারণে, ঐতিহাসিকরা তাকে যথাযথভাবে “ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ” উপাধি দিয়েছিলেন।

বাংলার নবজাগরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর অবদান

উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা তথা ভারতবর্ষে যে নবজাগরণ ঘটেছিল, তাতে যেসব মনীষী অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে বিদ্যাসাগর ছিলেন অন্যতম প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটানাের কাজ তিনি ছিলেন অন্যতম পথিকৃৎ। বিদ্যাসাগরের প্রতিভা ছিল বহুমুখী। তৎকালীন সমাজজীবনে তাঁর সংস্কারমূলক ভূমিকা এক নতুন প্রেরণা জোগায়। তাঁর বহুমুখী অবদানকে নিম্নলিখিত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়一

(১) সমাজসংস্কারমূলক কাজ: সমাজসংস্কারের‌ ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের সবথেকে বড়াে ভূমিকা হল বিধবাবিবাহ প্রবর্তন। তাঁর অদম্য প্রচেষ্টার ফলে 1856 খ্রিস্টাব্দে বিধবাবিবাহ আইন পাস হয়। বিদ্যাসাগর বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ এবং কৌলিন্য প্রভৃতি সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তােলেন। তিনি বহুবিবাহ বন্ধ করার জন্য সেই সময়কার গভর্নর জেনারেলের কাছে আবেদন জানান। যদিও 1857 খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহ শুরু হওয়ার ফলে বহুবিবাহ প্রথাটি আইন করে বন্ধ করা যায়নি। কিন্তু বহুবিবাহের কুফল সম্পর্কে জনমত গড়ে তুলতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন।

(২) শিক্ষাসংস্কারমুলক কাজ: বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষাসংস্কারক। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা, স্ত্রীশিক্ষা, গণশিক্ষা, উচ্চশিক্ষা, পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রভৃতির বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার প্রসারে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। শিক্ষাসংস্কারকে কেন্দ্র করে বিদ্যাসাগর যেসব মৌলিক শিক্ষাভাবনার কথা উল্লেখ করেছিলেন, সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল一

  • মাতৃভাষা এবং সাহিত্যের উন্নতিসাধন করা;
  • সংস্কৃত এবং ইংরেজি এই দুই ভাষার ব্যুৎপত্তিলাভের ওপর গুরুত্ব দেওয়া;
  • প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য উভয় বিদ্যাচর্চার ওপর গুরুত্ব দেওয়া;
  • জনশিক্ষা বিস্তারের জন্য উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা এবং উপযুক্ত শিক্ষকমণ্ডলী তৈরি করা ইত্যাদি।

বিদ্যাসাগর শিক্ষার যেসব দিকের প্রসার ঘটানাের জন্য কাজ করেছিলেন সেগুলি সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল-

  • প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার: বিদ্যাসাগর এদেশের প্রাথমিক শিক্ষার দুর্দশা উপলব্ধি করে তৎকালীন বড়ােলাট লর্ড ডালহৌসির কাছে কতকগুলি বিষয়ে সুপারিশ করেছিলেন। সেই বিষয়গুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য। ছিল- [a] গণশিক্ষার প্রসার, [b] প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, [c] উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং [d] শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

সেই সময়ে বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় কতকগুলি মডেল স্কুল স্থাপন করা হয়। এই সমস্ত স্কুলে ইতিহাস, ভূগােল, পাটিগণিত, জ্যামিতি, প্রকৃতিবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, নীতিবিজ্ঞান, শারীরতত্ত্ব, জীবনবৃত্তান্ত প্রভৃতি বিষয় মাতৃভাষার মাধ্যমে পড়ানাে হত। তাঁর প্রচেষ্টায় নর্মাল স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যবস্থা এবং বিদ্যালয়ে পরিদর্শকের ব্যবস্থা করা হয়।

  • স্ত্রীশিক্ষার প্রসার: বিদ্যাসাগর স্ত্রীশিক্ষা প্রসারের জন্য বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন৷ 1858 সালে তাঁর চেষ্টায় প্রায় 38টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এগুলির মধ্যে তিনটি ছিল মেদিনীপুর জেলায়, এগারােটি বর্ধমান জেলায়, তেইশটি হ্নগলি জেলায় এবং একটি নদিয়া জেলায়| এই সমস্ত বিদ্যালয়ের আর্থিক সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি নারীশিক্ষা ভাণ্ডার গঠন করেছিলেন।
  • গণশিক্ষার প্রসার: গণশিক্ষা প্রসারে তিনি সর্বদাই সচেষ্ট ছিলেন। এর জন্য তিনি তত্ত্ববােধিনী, সর্বশুভকরী, সােমপ্রকাশ, Hindu Patriot প্রভৃতি পত্রিকার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন।
  • উচ্চশিক্ষার প্রসার: উচ্চশিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রেও বিদ্যাসাগরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর প্রচেষ্টার ফলেই মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশন নামক বিদ্যালয়টি উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে যেমন বিএ (অনার্স), এমএ, আইনশাস্ত্র প্রভৃতি পড়ানাের ব্যবস্থা হয়।
  • পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার: বিদ্যাসাগর প্রাচ্য শিক্ষার পাশাপাশি পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় শিক্ষার সমন্বয়ই সংস্কৃত এবং বাংলা সাহিত্যকে উন্নত করতে সাহায্য করবে।

(৩) সাহিত্যের উন্নতি: সাহিত্যের উন্নতির ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদান অনস্বীকার্য। অনেকের মতে, বিদ্যাসাগর হলেন বাংলা গদ্যের প্রকৃত জনক।বাংলা গদ্যকে তিনি উপযুক্ত যতিবিন্যাস এবং উপযুক্ত শব্দবিন্যাসের দ্বারা সহজসরল ও বােধগম্য ভাষায় পরিণত করতে পেরেছিলেন। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার জন্য রচিত ‘বর্ণপরিচয়’—প্রথম ভাগ এবং দ্বিতীয় ভাগ বহুদিন ধরে শিশুদের অক্ষরজ্ঞান দানের এবং বাংলা ভাষাশিক্ষার আদর্শ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

ভাষাশিক্ষার জন্য তার গুরুত্বপূর্ণ দুটি রচনা হল কথামালা এবং বােধােদয়। বিদ্যাসাগর বিভিন্ন সাহিত্যকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। তাঁর অনুবাদ গ্রন্থগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল’বেতাল পঞ্চবিংশতি, ‘শকুন্তলা’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’, বাঙ্গালার ইতিহাস’, ‘জীবনচরিত’ ইত্যাদি। তিনি সংস্কৃত শিক্ষাকেও সহজসরল ও বােধগম্য করার জন্য বিশেষ। সচেষ্ট হয়েছিলেন। তিনি বাংলায় লেখা ‘উপক্রমণিকা’ ও ব্যাকরণ কৌমুদীকে সংস্কৃত কলেজের পাঠক্রমে স্থান দিয়েছিলেন।

এইভাবে উনবিংশ শতকে বাংলার ইতিহাসে সমাজসংস্কার, শিক্ষাসংস্কার এবং সাহিত্যে অবদানের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলার নবজাগরণে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেন।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | নবজাগরণ

Q1. ভারতের নবজাগরণের অগ্রদূত কাকে বলা হয়

Ans – ঊনবিংশ ও বিংশ শতকে সমাজ সংস্কার আন্দোলনের জোয়ার ও বহু কৃতি মনীষীর আবির্ভাবকে। মূলত রাজা রামমোহন রায়ের (১৭৭৫-১৮৩৩) সময় এই নবজাগরণের শুরু এবং এর শেষ ধরা হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) সময়ে, যদিও এর পরেও বহু জ্ঞানীগুণী মানুষ এই সৃজনশীলতা ও শিক্ষাদীক্ষার জোয়ারের বিভিন্ন ধারার ধারক ও বাহক হিসাবে পরিচিত হয়েছেন। 

Q2. বাংলায় কোন শতকের নবজাগরণের শতক বলা হয়

Ans – বেঙ্গল রেনেসাঁ (বাংলা: বাংলার নবজাগরণ – বাংলার নবজাগরণ), যা বাঙালি রেনেসাঁ নামেও পরিচিত, এটি ছিল একটি সাংস্কৃতিক, সামাজিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং শৈল্পিক আন্দোলন যা ব্রিটিশ রাজের বাংলা অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছিল, 18 শতকের শেষভাগ থেকে 20 শতকের প্রথম দিকে ।

Q3. বাংলায় নবজাগরণ ঘটে কেন

Ans – বাংলায় নবজাগরণের প্রকৃতি উনিশ শতকে পাশ্চাত্য সভ্যতার সংস্পর্শে এসে মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজে এক যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী আলােড়নের সূচনা হয়। এর ফলে বাংলার সংস্কৃতি ও চিন্তার জগতে এক নবযুগের সূচনা হয়। এই ঘটনা বাংলার নবজাগরণ নামে পরিচিত।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।