সংখ্যা পদ্ধতি কি
যে পদ্ধতিতে সংখ্যা গণনা করা হয় বা প্রকাশ করা হয়, তাকে সংখ্যা পদ্ধতি (Number systems) বলে। এসকল সংখ্যাকে বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়ােজনীয় গণনার কাজ করা হয়।
যে পদ্ধতিতে বিভিন্ন সংখ্যা লিখে প্রকাশ করা যায় এবং উক্ত সংখ্যাগুলোর উপর বিভিন্ন অপারেশন প্রয়োগ, যথা- যোগ, বিয়োগ, ভাগ, গুণ, এবং শতকরায় রুপান্তর করে হিসেব নিকেশ সম্পাদান করা যায়, তাকে সংখ্যা পদ্ধতি বলে।
সংখ্যা তৈরির ক্ষুদ্রতম একক হচ্ছে অঙ্ক, যেমন ১, ২, ৩। দৈনিন্দিন কাজে আমরা সাধারণত দশমিক সংখ্যা ব্যহার করি, কিন্তু বর্তমানে কিছু মেশিনভিত্তিক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। যথা- বাইনারি, অক্টাল, এবং হেক্সাডেসিমল।
সংখ্যা পদ্ধতি ইতিহাস
অনেক বছর আগের কথা, যখন পুরো পৃথিবীতে শিকার করে খাবার সংগ্রহ করা এবং বেঁচে থাকাটাই ছিল মূল বিষয়। তখন মানুষ শুধু শিকার করে নিয়ে আসতো, কয়টি শিকার করতো বা কত দূরে যেয়ে শিকার করতো, সেটা জানার কোনোই দরকার ছিল না। কিন্তু তারা একটা সমস্যার সম্মুখীন হলো। সমস্যা বাধলো যখন অন্য কাউকে সে শিকারের যোগ্য প্রাণির সংখ্যা বলতে গেলো। তারা তো সংখ্যা জানে না, কীভাবে বলবে! এই সমস্যার সমাধান হিসেবেই সংখ্যার সূত্রপাত। অনেকে মনে করেন হাতের আঙ্গুল দিয়েই প্রথমে তারা গণনা শুরু করেন। এভাবে তো আর দশের বেশি সংখ্যা চিন্তা করা সম্ভব না। এজন্য শুরু হলো ট্যালি করে বা দাগ দিয়ে গণনা করা। এক থেকে চারের জন্য চারটি দাগ দেওয়া হতো, আর পাঁচের জন্য কোনাকুনিভাবে একটি দাগ দিয়ে কেটে বোঝানো হতো। এভাবেই অনেক বড় সংখ্যা প্রকাশ করা সমস্যার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছিলো। এরপর তারা চিন্তা করলো অনেকগুলো পাথর দিয়ে সংখ্যা বুঝাই। যদি পাথর বেশি হয় তখন বড় কোনো সংখ্যা বুঝাবে, আর পাথর কম হলে কোনো ছোট সংখ্যাকে নির্দেশ করবে। এভাবেও বড় সংখ্যা প্রকাশ করা সমস্যার হয়ে যাচ্ছিলো। এরপর আসে হায়ারোগ্লিফিক সংখ্যা যেখানে, বড় সংখ্যাগুলোকে বিভিন্ন চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করা শুরু হয়। এভাবে বড় সংখ্যা চিহ্নের মাধ্যমে প্রকাশ করা যেতো। কিন্তু সমস্যা বাধলো এতোগুলো চিহ্ন মনে রেখে তো আর সহজে সংখ্যার দুনিয়ায় ডুব দেওয়া যাবে না।
এবার আবির্ভাব হয় রোমান সংখ্যার যেখানে বড় বড় সংখ্যার জন্য একই অক্ষর বার বার ব্যবহার করা হতো। এভাবেও অনেক বড় সংখ্যাগুলো প্রকাশ করে অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তো। যার সমাধান নিয়ে আসে ভারতীয় গণিতবিদরা। ভারতীয় গণিতবীদ আর্যভট্ট এসে শূন্য আবিষ্কার করে সমস্যা সমাধান করে দিলেন এবং ৫ম শতাব্দীতে আর পাই() দিয়ে করলেন বিশ্বজয়। সবশেষে বিখ্যাত আরব গণিতবীদ আল খোয়ারেজমি শূন্য থেকে নয় এই দশটি সংখ্যা লিখিত রূপ প্রচলন করে আলোড়ন ফেলে দেন।
সংখ্যা পদ্ধতির প্রকারভেদ
সংখ্যা পদ্ধতি চারভাগে বিভক্ত। নিম্মে ৪ টি সংখ্যা পদ্ধতি দেওয়া হল।
- দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি (Decimal number system)
- বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি (Binary number system)
- অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি (Octal number system)
- হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি (Hexadecimal number system)
১. দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি
দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে ০,১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮ এবং ৯। এই দশটি প্রতীক দিয়ে সব ধরণের সংখ্যা গঠন করা হয়। দশটি অংক ব্যবহার করা হয় বলে এ সংখ্যা পদ্ধতিকে বলা হয় দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি। এ সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি হচ্ছে ১০।
দশমিক পদ্ধতির ক্ষেত্রে একক, দশক, শতক এভাবে কোন সংখ্যার মান নির্ণয় করতে হয়। পূর্ণ দশমিক সংখ্যার স্থানীয় মান নির্ণয় করতে সংখ্যার ডনদিকে থেকে প্রথম ঘরের মান নির্ণয় করতে হয়। ৯৬৭ সংখ্যার একক স্থানীয় অংক ৯, দশক স্থানীয় অংক ৮, শতক স্থানীয় অংক ৭।
২. বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি
শূন্য (০) এবং এক (১) এর অন্তহীন সমন্বয়ে গঠিত বাইনারী সিস্টেম। বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে কেবল দুটি ডিজিট(০, ১) বা প্রতীক ব্যবহৃত হয়। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে টমাস হ্যারিয়ট প্রথম বাইনারী সংখ্যা কাজে লাগান। এটি আধুনিক কম্পিউটারে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে প্রচলিত সংখ্যা পদ্ধতি। আধুনিক যুগের প্রায় সকল কম্পিউটার ও ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র বাইনারি সংখ্যায় চালিত হয়।
৩. অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি
যে সংখ্যা পদ্ধতিতে আটটি অংক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তাকে অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংকগুলাে হলাে ০,১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭। অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতির ভিত (Base) হচ্ছে ৮। (৭১৪)৮, একটি অক্টাল সংখ্যা।
৪. হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি
যে সংখ্যা পদ্ধতিতে ষােলটি (১৬) অংক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংকগুলাে হলাে ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, A, B, C, D, E, F। হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতির ভিত (Base) হচ্ছে ১৬। উদাহরণ- (৭৬A)১৬ একটি হেক্সাডেসিমেল সংখ্য।
দশমিক, বাইনারি, অক্টাল, এবং হেক্সাডেসিমাল সংখ্যার পরিবর্তন
৩. অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি: যে সংখ্যা পদ্ধতিতে আটটি অংক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তাকে অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংকগুলাে হলাে ০,১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭। অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতির ভিত (Base) হচ্ছে ৮। (৭১৪)৮, একটি অক্টাল সংখ্যা।
৪. হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি: যে সংখ্যা পদ্ধতিতে ষােলটি (১৬) অংক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংকগুলাে হলাে ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, A, B, C, D, E, F। হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতির ভিত (Base) হচ্ছে ১৬। উদাহরণ- (৭৬A)১৬ একটি হেক্সাডেসিমেল সংখ্য।
দশমিক, বাইনারি, অক্টাল, এবং হেক্সাডেসিমাল সংখ্যার পরিবর্তন
দশমিক | বাইনারি | অক্টাল | হেক্সাডেসিমাল |
০ | ০ | ০ | ০ |
১ | ১ | ১ | ১ |
২ | ১০ | ২ | ২ |
৩ | ১১ | ৩ | ৩ |
৪ | ১০০ | ৪ | ৪ |
৫ | ১০১ | ৫ | ৫ |
৬ | ১১০ | ৬ | ৬ |
৭ | ১১১ | ৭ | ৭ |
৮ | ১০০০ | ১০ | ৮ |
৯ | ১০০১ | ১১ | ৯ |
১০ | ১০১০ | ১২ | A |
১১ | ১০১১ | ১৩ | B |
১২ | ১১০০ | ১৪ | C |
১৩ | ১১০১ | ১৫ | D |
১৪ | ১১১০ | ১৬ | E |
১৫ | ১১১১ | ১৭ | F |
১৬ | ১০০০০ | ১৮ | ১০ |
১৭ | ১০০০১ | ১৯ | ১১ |
১৮ | ১০০১০ | ২০ | ১২ |
১৯ | ১০০১১ | ২১ | ১৩ |
২০ | ১০১০০ | ২২ | ১৪ |
অখণ্ড সংখ্যা কাকে বলে
শূন্যসহ স্বাভাবিক সংখ্যা গুলিকে অখণ্ড সংখ্যা বলে। অখণ্ড সংখ্যাগুলিকে একত্রে ‘W’ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। উদাহরণ: W = {0, 1, 2, 3, 4, 5, …}
শূন্য এবং স্বাভাবিক সংখ্যাগুলোকে একত্রে অখণ্ড সংখ্যা বলে। যেমন- ০, ১, ২, ৩, …. ইত্যাদি সংখ্যাগুলি হলো অখণ্ড সংখ্যা।
ধনাত্মক সংখ্যা কাকে বলে
শূন্যের চেয়ে বড় সংখ্যাকে বলে ধণাত্মক সংখ্যা (যেমন: ১, ২, ১০০ ইত্যাদি)।
শূন্য সহ সকল ধণাত্মক সংখ্যাকে একত্রে ধনাত্মক সংখ্যা বলে।
ঋণাত্মক সংখ্যা কাকে বলে
শূন্যের চেয়ে ছোট সংখ্যাকে বলে ঋণাত্মক সংখ্যা। (যেমন: –১, –২, –১০০ ইত্যাদি)।
ঋণাত্মক সংখ্যাকে বর্গমূল করলে জটিল সংখ্যা পাওয়া যায়। যেমনঃ −1 একটি জটিল সংখ্যা।
যুগ্ম সংখ্যা কাকে বলে
যেসব সংখ্যা ২ দিয়ে ভাগ করা যায় তাদের যুগ্ম সংখ্যা বলে। যে সকল সংখ্যা ২ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য তাদের যুগ্ম বা জোড় সংখ্যা বলে। যেমন ২,৪,৬,….৮৬….
আমরা জানি,দুই ধরনের সংখ্যা রয়েছে-বাস্তব ও অবাস্তব।যেসব সংখ্যাতে উক্ত দুই ধরনের উপাদানই রয়েছে তাদের যুগ্ম সংখ্যা বলে।
অযুগ্ম সংখ্যা কাকে বলে
যেসব সংখ্যা ২ দিয়ে ভাগ করা যায় না তাদের অযুগ্ম সংখ্যা বলে। যেমন ১,৩,৫,……
যে সমস্ত অখন্ড সংখ্যা 2 দ্বারা বিভাজ্য নয়, তাদের অযুগ্ম সংখ্যা বলে। যেমন: 3,7,11,17 ইত্যাদি।
জোড়, বিজোড় সংখ্যা-সংক্রান্ত তথ্য
1. জোড় সংখ্যার সাধারণ রূপ = 2m, যেখানে m যে-কোনাে পূর্ণসংখ্যা।
2. বিজোড় সংখ্যার সাধারণ রূপ (2m + 1), যেখানে mযে-কোনাে পূর্ণসংখ্যা।
3. দুটি জোড় সংখ্যার যােগফল ও বিয়ােগফল সর্বদাই জোড় সংখ্যা।
4. দুটি বিজোড় সংখ্যার যােগফল ও বিয়ােগফল সর্বদাই জোড় সংখ্যা।
5. একটি জোড় ও একটি বিজোড় সংখ্যার যােগফল ও বিয়ােগফল সর্বদাই বিজোড় সংখ্যা।
6. দুটি জোড় সংখ্যার গুণফল সর্বদা জোড় সংখ্যা।
7. দুটি বিজোড় সংখ্যার গুণফল সর্বদা বিজোড় সংখ্যা।
৪. জোড় ও বিজোড় সংখ্যার গুণফল সর্বদা জোড় সংখ্যা।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | সংখ্যা
Q1. অঙ্ক পাতন কাকে বলে?
উত্তরঃ কোনো সংখ্যা অঙ্ক দ্বারা লেখাকে অঙ্ক পাতন বলে।
Q2. বিসুষম বহুভুজ বা অনিয়মিত বহুভুজ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বহুভুজের বাহুগুলো এবং অন্তঃস্থ কোণগুলো পরস্পর অসমান তাকে বিসুষম বহুভুজ বা অনিয়মিত বহুভুজ বলে।
Q3. সুষম বহুভুজ বা নিয়মিত বহুভুজ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বহুভুজের বাহুগুলো এবং অন্তঃস্থ কোণগুলো পরস্পর সমান তাকে সুষম বহুভুজ বা নিয়মিত বহুভুজ বলে।
Q4. তারা বহুভুজ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বহুভুজের বাহুগুলো ও অন্তঃস্থ কোণগুলো পরস্পর সমান এবং একটি বাহু অন্য বাহুর ছেদক হয় অথবা একটি বাহু অন্য বাহুকে শীর্ষ ব্যতীত ভিন্ন কোন বিন্দুতে ছেদ করে তাকে তারা বহুভুজ বলে।
Q5. বর্গক্ষেত্রের কর্ণ কাকে বলে?
উত্তরঃ বর্গক্ষেত্রের বিপরীত শীর্ষ বিন্দু দুইটির সংযোজক রেখাংশকে বর্গক্ষেত্রের কর্ণ বলে।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।