মৃত্তিকা কাকে বলে, মাটি কাকে বলে, মৃত্তিকা সংরক্ষণ কাকে বলে, মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ গুলি লেখ

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

মৃত্তিকা কাকে বলে, মাটি কাকে বলে

ইংরেজি ‘Soil শব্দটি ল্যাটিন ‘Solum’ থেকে এসেছে। যার অর্থ হল ভূমিতল’ বা ‘মেঝে’। সাধারণভাবে দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদি শিলা পরিবর্তনের ফলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে বিভিন্ন খনিজ ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হয়ে যে পাতলা ভঙ্গুর আবরণ বা স্তর সৃষ্টি হয়, যা উদ্ভিদ বৃদ্ধির সহায়ক তাকে মৃত্তিকা বলে। বিভিন্ন মৃত্তিকা বিজ্ঞানী তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত্তিকার বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।

(১) ডকুচেড-কৃত সংজ্ঞা (1893 খ্রি) : ভূপৃষ্ঠে মূল শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে এমন একটি প্রাকৃতিক স্তর গঠিত হয় যা জল, বায়ু এবং জীবিত বা মৃত জীবদেহের প্রভাবে কম-বেশি পরিবর্তিত হয়, তাকেই বলে মৃত্তিকা।

(২) ছিলগার্ড-কৃত সংজ্ঞা (1906 খ্রি.) : মৃত্তিকা হল ভূপৃষ্ঠের ওপর গঠিত একপ্রকার শিথিল পদার্থ যেখানে গাছপালা কেবলমাত্র তাদের শিকড় ছড়িয়েই দেয় না সেখান থেকে খাদ্য গ্রহণ করে এবং একই সঙ্গে বৃদ্ধি পায়।

(৩) জেনি-কৃত সংজ্ঞা (1941 খ্রি.) : মৃত্তিকা হল এমন এক প্রাকৃতিক বস্তু যা মূল শিলা, জীবমণ্ডল, জলবায়ু, ভূমিরূপ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রকগুলির দীর্ঘকালীন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফল।

মৃত্তিকার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ

(১) ভূত্বকের সর্বোচ্চ স্তর : মৃত্তিকা হল ভূত্বকের ওপরে অবস্থিত সর্বোচ্চ স্তর। এটি শিলাস্তরের ওপর আচ্ছাদন হিসেবে অবস্থান করে।

(২) বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট : মৃত্তিকা দীর্ঘকালীন নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে বিবর্তিত হয়ে সৃষ্টি হয়।

(৩) দীর্ঘ সময়ের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট : মৃত্তিকা সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। একটি পরিণত মৃত্তিকা সৃষ্টি হতে কয়েক শত বছর থেকে কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

(৪) জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ : জৈব পদার্থ মৃত্তিকার একটি অপরিহার্য উপাদান। বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের মৃত্যুর পর তাদের দেহাবশেষ মৃত্তিকার সাথে যুক্ত হয়।

(৫) স্তরবিন্যাস : মৃত্তিকার মধ্যে একাধিক স্তর লক্ষ করা যায়। উল্লেখযােগ্য স্তরগুলি হল O, A, B, C, D মৃত্তিকার স্তরগুলির উল্লম্ব প্রস্থচ্ছেদ মৃত্তিকার পরিলেখ নামে পরিচিত।

(৬) উক্তিদের পুষ্টিমৌলস্খল : মৃত্তিকার মধ্যে থেকেই উদ্ভিদ তার প্রয়ােজনীয় বিভিন্ন পুষ্টিমৌলগুলি গ্রহণ করে।

(৭) জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রভাব সর্বাধিক : মৃত্তিকার উৎপত্তিতে জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রভাব সর্বাধিক লক্ষ করা যায়।

(৮) অঞ্চলগত পার্থক্য : সৃষ্টির বিভিন্ন নিয়ন্ত্রকের পার্থক্যের দরুণ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের মৃত্তিকা গড়ে উঠতে দেখা যায়। যেমন-নিরক্ষীয় বৃষ্টিঅরণ্য অঞ্চলে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা আবার নাতিশীতােয় সরলবর্গীয় অরণ্য অঞ্চলে পডসল মৃত্তিকা গড়ে উঠতে দেখা যায়।

মৃত্তিকার শ্রেণীবিভাগ, ভারতের মৃত্তিকার শ্রেণীবিভাগ

মাটির উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য, জলধারণ ক্ষমতা, জৈব ও খনিজ পদার্থের উপস্থিতি ও পরিমাণ, রং, প্রথন, গঠন ও জলবায়ুর পার্থক্যের ভিত্তিতে ভারতীয় কৃষি গবেষণা পরিষদ (The Indian Council of Agricultural Research বা ICAR) ভারতের মাটিকে প্রধান আটটি ভাগে ভাগ করেছে। কিন্তু পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছয়টি মাটি সম্পর্কে আলোচনা করা হল ।

পলিমাটি

আঞ্চলিক বণ্টন : ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসম, ত্রিপুরা, ওডিশা রাজ্যের বেশিরভাগ অংশ, সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি অঞ্চল এবং পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে বিশেষত মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী ইত্যাদি নদীর মোহানায় পলিমাটি দেখা যায়। ভারতের সবচেয়ে বেশি স্থান জুড়ে (15 লক্ষ বর্গকিমির বেশি) এই মাটি অবস্থান করছে। 

উৎপত্তি: উত্তর ভারতের সিন্ধু গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদীসমূহ হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের পাললিক শিলা ক্ষয় করে নদীগুলির অববাহিকায় পলিমাটি সঞ্চয় করেছে। আবার, উপকূলবর্তী অঞ্চলে মালভূমির কঠিন শিলা থেকে পলি সৃষ্টি হয়েছে ও তা সঞ্চিত হয়েছে। 

শ্রেণিবিভাগ: ভূতাত্ত্বিক বিচারে, পলিমাটি দুপ্রকার, যথা- [i] খাদার (নবীন), [ii] ভাঙ্গর (প্রাচীন)। নদী তীরবর্তী নবীন পলিমাটিকে খাদার বলে। এই মাটি খুব উর্বর। নদী থেকে দূরবর্তী প্রাচীন পলিমাটিকে ভাঙ্গর বলে। গুজরাতে এই মাটির স্থানীয় নাম গোরটি (gorat)। এই মাটি অপেক্ষাকৃত প্রবীণ। তাই এর উর্বরতা শক্তি বেশ কম। আবার, হিমালয় পর্বতের পাদদেশীয় অঞ্চলের পলি, বালি, কাঁকর, নুড়িযুক্ত মাটির স্থানীয় নাম ভাবর। উচ্চ গঙ্গা সমভূমিতে জলাভূমির মাটিকে ধাঙ্কর বলে। 

খাদার বা নবীন পলিমাটি আবার তিনটি ভাগে বিভক্ত। যথা—1. দোআঁশ মাটিঃ এঁটেল বালি, পলি, কাদা প্রায় সমপরিমাণে থাকে। ফসলের পক্ষে আদর্শ এই মাটিতে ধান, গম, সরিষা ইত্যাদির চাষ হয়। পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে এই মাটি দেখা যায়। 2. এঁটেল মাটি: কাদার ভাগ বেশি হওয়ায় এর জলধারণ ক্ষমতা বেশি। গাঙ্গেয় ও ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ অঞ্চলে, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাংশে এই মাটি দেখা যায়। ধান ও পাট চাষের জন্য এই মাটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। 3. বেলেমাটি: বালির ভাগ বেশি হওয়ায় জলধারণের ক্ষমতা অনেক কম। এই মাটিতে আলু, শশা, তরমুজ ইত্যাদির চাষ হয়। গাঙ্গেয় সমভূমির পশ্চিমদিকে এই মাটি দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য : [i] পলিমাটি অতি সুক্ষ্ম প্রথনের এটি অতি মিহিদানার পলি, বালি ও কাদা কণার মিশ্রণে গঠিত। [ii) পলিমাটির রং মূলত ধূসর এবং গভীরতা সর্বত্র সমান নয়। [iii] ফসফরাস, পটাশিয়াম, কর্দম খনিজের পরিমাণ বেশি। কিন্তু জৈব পদার্থ ও নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম। [iv]. এই মাটি pH হলে 6.5 থেকে 8.4। [v] মাটির জলধারণ ক্ষমতা বেশি এবং অত্যাধিক উর্বর। [vi} এই মাটি হালকা আম্লিক থেকে হালকা ক্ষারকীয় প্রকৃতির হয়। উৎপাদিত শস্য: এই মাটি অতি উর্বর বলে কৃষির বিশেষ সহায়ক। ধান, গম, আখ, পাট, তৈলবীজ, আলু ও শাকসবজি এই মাটিতে উৎপন্ন হয়।

কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা কালোমাটি

আঞ্চলিক বণ্টন : ভারতের প্রায় 5.46 লক্ষ বর্গকিমি স্থান জুড়ে এই মাটি দেখা যায়। দাক্ষিণাত্য মালভূমির প্রায় অর্ধেক অংশই কৃয় মৃত্তিকা দ্বারা আচ্ছাদিত। সমগ্র মহারাষ্ট্র, কর্ণাটকের উত্তরাংশ, তামিলনাড়ুর উত্তরাংশ, গুজরাতের পূর্বাংশ, রাজস্থানের দক্ষিণাংশ, মধ্যপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা রাজ্য এই মাটিতে পূর্ণ। স্থানীয়ভাবে কৃয় মৃত্তিকা রেগুর নামে পরিচিত। 

উৎপত্তি: প্রধানত  আর ব্যাসল্ট, ডলেরাইট ও অন্য ক্ষারকীয় আগ্নেয় শিলা থেকে সৃষ্টি হয় এই মাটি। এ ছাড়া চুন ও ফেলসপার সমৃদ্ধ গ্র্যানাইট ও নিস্ শিলা থেকে এই মাটি সৃষ্টি হয়।

কৃষ্ণ মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য

[1] এই মাটি মোটামুটি সূক্ষ্ম প্রথনের। বালির পরিমাণ খুবই কম । এই মাটিতে পলি ও কাদার ভাগ (20-60%) বেশি থাকায় জলধারণ ক্ষমতা বেশি। 

[ii] বিভিন্ন খনিজ ও হিউমাস বেশি থাকায় এই মাটির রং কালো।

 [iii] এই মাটি প্রধানত মন্টমোরিলো- নাইট, নাইট্রোজেন, ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম খনিজসমৃদ্ধ। তাই এই মাটি খুব উর্বর। pH মান 6.5 থেকে 8.4।  

[iv] মন্টমোরিলোনাইট খনিজের উপস্থিতির জন্য এই মাটি জলে ভিজে গেলে আঠালো হয় এবং শুকনো হলে সহজেই ভেঙে যায়। 

উৎপাদিত শস্য: কার্পাস এই মাটিতে সবচেয়ে বেশি জন্মায়, তাই এই মাটির নাম কৃয় কার্পাস মৃত্তিকা। তা ছাড়া ভুট্টা, মিলেট, তামাক, আখ, তৈলবীজ, ডাল, পেঁয়াজ, আঙুর ইত্যাদি শস্যেরও চাষ হয়।

লোহিত মৃত্তিকা বা লালমাটি

আঞ্চলিক বণ্টন: ভারতে লালমাটি প্রায় 7 লক্ষ বর্গকিমি অঞ্চল জুড়ে আছে। কর্ণাটকের দক্ষিণ-পূর্বদিক, অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্বদিক, ওডিশা, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলা, ছত্তিশগড়, উত্তর-পূর্ব ভারতের অসমের দক্ষিণাংশ, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ইত্যাদি স্থানে এই মাটি দেখা যায়। 

উৎপত্তি : অত্যধিক উয়তা ও আর্দ্রতার জন্য প্রাচীন গ্রানাইট ও নিস্ শিলা রাসায়নিক আবহবিকারের কবলে পড়ে এই মাটির সৃষ্টি করে। 

বৈশিষ্ট্য: [i] এই মাটিতে লোহার পরিমাণ বেশি থাকায় রং লাল। [ii] বালি ও পলির ভাগ থাকায় এই মাটি বেলে-দোআঁশ প্রকৃতির হয়। (iii) মাঝারি থেকে সূক্ষ্ম দানাযুক্ত প্রথনের হয়। [iv] এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা কম। মাটি আম্লিক pH মান 5.5 থেকে 7.5 প্রকৃতির খার। 

উৎপাদিত শস্য:  ধান, গম, তুলা, আখ, বাদাম, ভুট্টা, সোয়াবিন, ভিসি, তামাক, ডাল, মিলেট প্রভৃতির চাষ হয়।

ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা, ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা কাকে বলে

আঞ্চলিক বণ্টন : পুর্বষাটের পার্বত্য অঞ্চল, বিহারের রাজমহল পাহাড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, পশ্চিমঘাট পর্বত ও মেঘালয় মালভূমির কিছু অংশ ও পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাংশে এই ধরনের মাটি দেখা যায়। ভারতের প্রায় 1.40 লক্ষ বর্গকিমি (2.62%) স্থান জুড়ে এই মাটি বিস্তৃত আছে। 

উৎপত্তি: ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় উন্ন-আর্দ্র অঞ্চলে এই ধরনের মাটি সৃষ্টি হয়। এই অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে আবহবিকারগ্রস্ত প্রাচীন শিলাস্তর থেকে সিলিকা ও সেস্কুইঅক্সাইড অপসারিত হয়ে লোহা, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড ও হাইড্রক্সাইড অবশিষ্টরূপে পড়ে থাকে। এভাবে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়। 

ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য

[i] এই মাটির রং লাল, বাদামি, হলদে বাদামি ইত্যাদি হয়। [II] জল থাকলে কদম কণার পরিমাণ বেশি থাকায় এই মাটি নরম, কিন্তু শুকিয়ে গেলে ইটের মতো শক্ত হয়ে যায়। [ii] এই মাটিতে লোহা, বক্সাইট, ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড, কোয়ার্টজ ইত্যাদি খনিজ থাকে। [iv] এই মাটি আম্লিক প্রকৃতির pH মান 5.5 এর কম এবং এতে চুন, পটাশ, ফসফরাস ও নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম থাকে। তাই এই মাটি অনুর্বর। 

উৎপাদিত শস্য: জলসেচ ও সার প্রয়োগ করে এই মাটিতে চা, কফি, রবার ও বাদাম চাষ করা হয়।

ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা কোথায় দেখা যায়

ল্যাটেরাইট মাটি প্রধানত পশ্চিম ও পূর্ব ঘাটে পাওয়া যায়। এটি তামিলনাড়ু, ওড়িশা, উত্তরে ছোটনাগপুরের একটি ছোট অংশ এবং উত্তর-পূর্বে মেঘালয়ের ছোট অংশ জুড়ে পূর্বে মালভূমির প্রান্ত বরাবর পাওয়া যায়। এটি লাল থেকে হলুদ বর্ণের। আয়রন অক্সাইড এবং পটাশ সমৃদ্ধ এই মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফেট এবং ক্যালসিয়ামের অভাব রয়েছে ।

পশ্চিমবঙ্গে বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা দেখা যায়।

পার্বত্য মৃত্তিকা

আঞ্চলিক বন্টন: উত্তরের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের সমগ্র অংশে, দক্ষিণে নীলগিরি ও পশ্চিমঘাট পর্বতের অরণ্য অঞ্চলের কিছু অংশে এই ধরনের মাটি দেখা যায়। ভারতের প্রায় 1.60 লক্ষ বাকিমি স্থান জুড়ে পার্বত্য অঞ্চলের রাজ্যগুলিতে এই মাটি রয়েছে। 

উৎপত্তি: পার্বত্য অঞ্চলে উদ্ভিদের ডালপালা পচে গিয়ে জৈবাংশ বা হিউমাস মাটিতে মিশে এই মাটির সৃষ্টি তুলো হয়। 

বৈশিষ্ট্য : [I] মাটির রং ধূসর, ছাই, কালো প্রভৃতি হয়। [১] মাটির প্রথন দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ প্রকৃতির এবং মুল থেকে কর্কশ দানাযুক্ত হয়। [iii] মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি কিন্তু ফসফরাস ও পটাশের পরিমাণ কম। [iv] এই মাটি প্রধানত অম্লধর্মী এর মান (pH 5-6.5) ও অনুর্বর প্রকৃতির। উৎপাদিত শস্য: চা, কফি, ফল, মশলা, ধান, ভুট্টা ইত্যাদির চাষ এই মাটিতে ভালো হয়।

মরু মৃত্তিকা

আঞ্চলিক বন্টন: আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমে রাজস্থানের মরুভূমি এবং সংলগ্ন হরিয়ানা, গুজরাত ও পাঞ্জাবের কিছু অংশে প্রায় 1.46 লক্ষ বর্গকিমি স্থান জুড়ে মরু ও শুষ্ক অঞ্চলে বালিমাটি দেখা যায়। 

উৎপত্তিঃ বৃষ্টিপাত (25 সেমি) কম হওয়ায় যান্ত্রিক আবহবিকারের দ্বারা সুদীর্ঘকাল ধরে বেলেপাথরের পাহাড়গুলি ক্ষয় হয়ে এই মাটির সৃষ্টি হয়েছে। 

বৈশিষ্ট্য: [i] মাটির রং ধূসর বাদামি, বাদামি-হলুদ ও হালকা হলুদ। [II] মাটির এখন বেলে ও বেলে- দোআঁশ। এবং কর্কশ থেকে মাজারি মিহি নিযুক্ত হয়। [iii] মাটিতে লবণের ভাগ (ক্যালশিয়াম কার্বনেট) খুব বেশি। কিছু কিছু মাটিতে অত্যধিক পরিমাণে দ্রবীভূত লবণ থাকে। [iv] এই মাটি অত্যন্ত ক্ষারকীয় (pH-এর মান 7.6 থেকে 9.2) ও অনুর্বর প্রকৃতির। [v] এই মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ খুবই কম এবং জলধারণ ক্ষমতা কম। উৎপাদিত শস্য: ফসফেট ও নাইট্রেট থাকায় জলসেচের ফলে মাটি উর্বর হয়। এজন্য এই মাটিতে গম, যব, মিলেট, তুলো, ডাল, তৈলবীজ, ভুট্টা ইত্যাদি চাষ করা হয়।

ভারতের মৃত্তিকা মানচিত্র

মৃত্তিকা সংরক্ষণ কাকে বলে

মৃত্তিকার ক্ষয় রােধ করে উর্বরতা শক্তি পুনরুদ্ধার করতে, জমির কার্যকারিতা শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং সর্বোপরি মাটি সম্পদকে মানুষের কল্যাণে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করার জন্য যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাকে মৃত্তিকা সংরক্ষণ বলে।

মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ গুলি লেখ

মাটির স্তর ক্রমাগত অস্বাভাবিক হারে ক্ষয়ে যাওয়ার অনেক কারণ আছে। এর কিছুটা প্রাকৃতিক কারণ আর কিছুটা মানুষের কর্মফল।

মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রাকৃতিক কারণ

  • খাড়া ঢাল : খাড়া পাহাড়ি ঢালের ওপর প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে বৃষ্টির জলে মাটি ধুয়ে যায়।
  • স্বল্প পরিমাণ বনভূমি : মাটির ওপর গাছপালার ঘন আবরণ না থাকলে বৃষ্টির জল, নদীর জল, বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে ভূমিক্ষয় হয়।
  • আলগা মাটি : মাটিতে চটচটে আঠালাে ভাব না থাকলে ভূমিক্ষয় সহজ হয়। সে কারণে সমুদ্রের ধারে, মরুভূমির কাছে, মালভূমির ঢালে মাটি তাড়াতাড়ি ক্ষয়ে যায়। কেন না, এইসব এলাকার মাটিতে বালির ভাগ বেশি। তাই মাটির বাঁধন আলগা।

মনুষ্যসৃষ্ট কারণে মৃত্তিকা

  • বনভূমির বিলােপ : অতিরিক্ত গাছ কেটে ফেলার জন্য মাটির দানাগুলি আলগা হয়ে যায়। ফলে গাছের শিকড় আর তখন মাটিকে আঁকড়ে রাখতে পারে না।
  • ধাপচাষ : পাহাড়ি ঢলের উপর চাষ-আবাদ করার জন্য ধাপ কাটা হয়। এই ধাপগুলি জমির সমােন্নতি রেখা (Contour) বরাবর তৈরি করা না হলে বৃষ্টির জলের আঘাতে বা জলপ্রবাহের মাধ্যমে মাটি ক্ষয়ে যায়।
  • অনিয়ন্ত্রিত পশুপালন : পাহাড়ি অঞ্চলে অতিরিক্ত পশুচারণ করা হলেও ভূমিক্ষয় হয়। কারণ গবাদি পশু মাটির ওপরের ঘাসের আবরণকে খেয়ে প্রায় নির্মূল করে ফেলে।
  • ক্রুটিপুণ জলসেচ : জলসেচ ব্যবস্থা অবৈজ্ঞানিক হলে মাটির গুণমান নষ্ট হয়। ফলে ভূমিক্ষয়ের হার বৃদ্ধি পায়।
  • জমির অনুপযুক্ত ব্যবহার : জমিকে উপযুক্তভাবে ব্যবহার না করা হলে অর্থাৎ যে জমিকে যে কাজে লাগালে ভাল হয় তাকে সেই কাজে না লাগিয়ে অন্য কোনােভাবে ব্যবহার করা হলে মাটির ক্ষয় হয়।

ওয়ার্লড ওয়াচ ইনস্টিটিউট-এর সমীক্ষায় দেখানাে হয়েছে যে, প্রতি বছর পৃথিবীর প্রধান কৃষি অঞ্চলগুলি থেকে প্রায় 2,500 কোটি টন উর্বর মাটি ক্ষয়ে নষ্ট হয়ে যায়। আর সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন কারণে ভূমিক্ষয়ের মােট পরিমাণ হল প্রতি বছর প্রায় 7,700 কোটি টন।

আরো পড়তে: রেগোলিথ কি, রেগোলিথ কাকে বলে, রেগোলিথ ও মৃত্তিকার তফাৎ কী

পরিবেশের ওপর মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রভাব

পরিবেশ হল উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য দরকারি পারিপার্শ্বিক অবস্থা। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানগুলির মধ্যে মাটির ক্ষয়ের প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে। যেমন—

(১) প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর প্রভাব : মাটি ছাড়া উদ্ভিদ জন্মায় না। কারণ মাটি উদ্ভিদকে পুষ্টি যােগায়। ফলে ভূমিক্ষয় হলে মাটির উর্বরতা কমে ও গাছপালার পরিমাণ কমে যায়।

  • বালি, পলি ও কাদাকণা দিয়ে মাটি তৈরি হয়। ফলে মাটির মধ্যে অসংখ্য ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রপথে জল চুঁইয়ে মাটির নিচে জলস্তর তৈরি করে। তাই ভূমিক্ষয় হলে মাটির মধ্যে জলের জোগান কমে যায়। ভৌম জলস্তর নেমে যায়।
  • মাটি বৃষ্টির জল ধারণ করে এবং সূর্যের তাপে কিছুটা জল মাটি থেকে বাষ্পীভূত হয়। ওই বাষ্প পরে ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাতে সাহায্য করে। ফলে ভূমিক্ষয় হলে জলচক্র ব্যাহত হয়।
  • মাটির মধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিয়ােজকরা বসবাস করে। যেমন- ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি। এদের কাজ হল উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ ও জৈব আবর্জনাকে দ্রুত পচিয়ে নষ্ট করে ফেলা এবং ওই পদার্থগুলি থেকে পুষ্টিকর রাসায়নিক পদার্থ নিষ্কাশন করে মাটিতে জমিয়ে রাখা। সুতরাং ভূমিক্ষয় হলে বিয়ােজকদের বাসভূমি নষ্ট হয় এবং খাদ্যশৃঙ্খল ব্যাহত হয়।
  • ভূমিক্ষয় হলে নদীর নাব্যতা হ্রাস পায় ও বন্যা দেখা দেয়।
  • ভূমিক্ষয়ের জন্য জলাধারের জল ধারণক্ষমতা হ্রাস পায়।

(২) মানবিক পরিবেশের ওপর প্রভাব : ভূমিক্ষয়ের জন্য মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাজকর্মে সমস্যা দেখা দেয়। যেমন—

  • উর্বর মাটি ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে ফলন কমে যায়। ফলে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পায়।
  • ভূমিক্ষয় বেশি হলে মাটি ধুয়ে শেষ পর্যন্ত নদীর মধ্যে এসে জমা হয়। ফলে নদীর গভীরতা কমে যায়। নদী নৌ-পরিবহণের অযােগ্য হয়ে ওঠে।
  • ভূমিক্ষয়ের ফলে জলসেচ ব্যবস্থার ক্ষতি হয়।
  • মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে নদী মজে গেলে নদীর মােহানায় গড়ে ভােলা বন্দরের ক্ষতি হয়। কলকাতা বন্দরের ক্ষেত্রে এই সমস্যা সাম্প্রতিককালে বিশেষ প্রকট হয়ে উঠেছে।
  • মৃত্তিকা ক্ষয়ের জন্য জলাজমিগুলির (Wetland) মধ্যে মাটি জমতে জমতে ভরাট হয়ে ওঠে। ফলে ওই জলাজমির বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হয়।

মৃত্তিকা সংরক্ষণের দুটি পদ্ধতি, মৃত্তিকা সংরক্ষণের পদ্ধতিসমূহ

মৃত্তিকা সংরক্ষণের জন্য যেসমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, সেগুলিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। নীচে ছকের মাধ্যমে মৃত্তিকা সংরক্ষণের পদ্ধতিসমূহ দেখানাে হল一

(১) কৃষিজ পদ্ধতি :

  • ফসল পুনরাবর্তন : শস্যাবর্তন, আন্তঃকৃষি এবং নানা ধরনের শস্য একই জমিতে চাষের মাধ্যমে মৃত্তিকা ক্ষয় রােধ করা যায়। কারণ এতে কোনও সময়ই জমি উন্মুক্ত থাকে না এবং মৃত্তিকার দৃঢ়তাও বৃদ্ধি পায়। এই জন্য ভারতে বর্ষাকালে একই জমিতে ভুট্টা, মােটর, ছােলা ইত্যাদি শস্যের চাষ হয়।
  • জৈব পদার্থের সংরক্ষণ : মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের পরিমাণের হ্রাস রােধ করার জন্য শস্যাবর্তন করা হয়। এই ব্যবস্থা একদিকে মৃত্তিকার উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং অন্যদিকে জৈব পদার্থের পরিমাণের বৃদ্ধি ঘটায়। এ ছাড়া, শস্য পেকে যাওয়ার পর গাছের অবশিষ্টাংশ কৃষিক্ষেত্রে রেখে দেওয়া হয়। পাতা, মূল ইত্যাদিও জমিতে ফেলে রাখা হয়। এগুলি মৃত্তিকাকে ঢেকে রেখে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে।
  • শস্য নির্বাচন : মৃত্তিকা ক্ষয় রােধের জন্য এমন ধরনের শস্য নির্বাচন করা উচিত যেগুলি সর্বাধিক পরিমাণ ভূপৃষ্ঠ আচ্ছাদিত করে রাখতে পারে এবং মৃত্তিকা কণাগুলিকে দৃঢ়ভাবে সংঘবদ্ধ করতে পারে।
  • সমােন্নতি রেখা বরাবর কৃষিকাজ বা ফালি চাষ : পাহাড়ের সুদীর্ঘ লম্বা ঢালে চাদর ক্ষয় ও নালিক্ষয় বেশি হয়। ঢালের আড়াআড়ি বহু সরু সরু ফালি তৈরি করে কার্যকরী ঢালের দৈর্ঘ্য কমিয়ে দিলে ওই দুই প্রকার ক্ষয়ের তীব্রতা হ্রাস পায়। এ ছাড়া প্রত্যেকটা ফালিতে খাদ্যশস্য ও মধ্যবর্তী ঢালু জমিতে খড় বা ঘাস জাতীয় শস্য পর্যায়ক্রমে চাষ করলে জলপ্রবাহ বেশি গতি লাভ করতে পারে না। কারণ দুটি কর্ষিত ফালির মধ্যবর্তী ঘাস জলের প্রবাহকে থামিয়ে দেয়। এভাবে ফালি চাষের দ্বারা মাটির ক্ষয় রােধ করা যায়। যখন সমােন্নতিরেখার সমান্তরালে না করে আড়াআড়ি ফালি তৈরি করা হয় তখন সেই ব্যবস্থাকে সমােন্নতিরেখা ফালি-চাষ বলে।
  • ধাপ গঠন : ঢালু জমিতে বিভিন্ন প্রকার ধাপ গঠন করলে ঢালের গ্রেডিয়েন্ট বা কৌণিক মান ও কার্যকরী দৈর্ঘ্য হ্রাস পায়। বেঞ ধাপ (Bench Terrace) তৈরি করা হয় যেখানে জলের প্রবাহকে প্রায় পুরােপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। জমিতে বড়াে বড়াে যন্ত্রের ব্যবহার ও পুরাে জমি চাষের জন্য কাজে লাগাতে কৃষকেরা সাধারণত প্রশস্ত ভিতের ধাপ (Broad-based Terrace) গঠন করে। এ ধরনের ধাপযুক্ত জমিকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে মাটি প্রায় ক্ষয়ই হয় না।
  • প্রচলিত কৃষি পদ্ধতিতে চাষ আবাদের পরিবর্তে সংরক্ষিত কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ : প্রচলিত চাষবাসের ক্ষেত্রে প্রথমে লাঙ্গল, ট্রাক্টর চালিয়ে মাটি তৈরি করে বীজ বােনা, চারাগাছ প্রভৃতি লাগানাে হয়। এতে মাটির কোনাে আচ্ছাদিত অংশ থাকে না। কিন্তু সংরক্ষিত কৃষি পদ্ধতিতে কতকগুলি বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাটিকে যথাসম্ভব অকর্ষিত রেখে অর্থাৎ অনেকটা অংশ খড়কুটো ইত্যাদি জৈব পদার্থ দিয়ে ঢাকা রেখে চারাগাছ লাগানাে বা বীজ বােনা হয়। এর ফলে মাটির কণা আলগা হয় না এবং অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা পায়।

(২) কারিগরি পদ্ধতি :

  • কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণ : মৃত্তিকা ক্ষয় রােধের উদ্দেশ্যে ঢালের সমান্তরালে বিভিন্ন উচ্চতায় বাঁধ নির্মাণ করা হয় এবং দুটি বাঁধের মধ্যবর্তী অংশে কৃষিকাজ করা হয়।
  • খাতের তদারকি বা ব্যবস্থাপনা : খাত বরাবর জলপ্রবাহ কমানাের জন্য খাতগুলির মধ্যে পর পর কতকগুলি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। একে বলা হয় চেক বাঁধ (Check Dam) খাতগুলি ছােটো হলে ঢালের প্রকৃতি অনুযায়ী 4-9 মিটার অন্তর প্রায় 0.5 মিটার উচ্চতাযুক্ত চেক বাঁধ তৈরি করা হয়। এই বাঁধগুলির পশ্চাতে পলি সঞ্চিত হলে খাতের ঢাল কমে যায়। খাত বরাবর জলপ্রবাহের গতিবেগ হ্রাস পেতে থাকে।
  • বৃক্ষরােপণ : খাত অন্তর্বর্তী জমিগুলিতে ঝােপ, বৃক্ষ ইত্যাদি রােপণ করলে মৃত্তিকায় হ্রাস পাবে। আবার মাটির বাঁধগুলির ওপর ঝােপঝাড় ও বৃক্ষরােপণ করা হয়ে থাকে।
  • শেল্টার বেল্ট : বিভিন্ন প্রকার গাছ সমান্তরালভাবে রােপণ করলে অতি শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহের গতিকে প্রতিরােধ করা সম্ভব। যা ভূমির উপরিভাগের মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ রােধ করে। মরুভূমি ও মরূদ্যান অঞ্চলে এভাবে মাটির ক্ষয় রােধ করা হয়।
  • অগভীর নালা কাটা : বাতাসের কার্যকরী শক্তি যেখানে বেশি সেইসব অঞ্চলে ভূমিক্ষয় বা মৃত্তিকা ক্ষয় কমাতে হলে বাতাসের গতির আড়াআড়িভাবে জমিতে নালা কেটে রাখলে ভূমিক্ষয় যেমন রােধ করা সম্ভব তেমনই বাতাস দ্বারা বাহিত মৃত্তিকা নালায় পরে নালা ভরাট করে দেয়।
  • জৈবপ্রযুক্তি কৌশল গ্রহণ : অতি খরস্রোত খাতগুলির জলের গতিবেগ রােধ ও ঢালের স্থায়িত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে জৈবপ্রযুক্তি (Bioengineering) কৌশল গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাকৃতিকভাবে পচনযােগ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়। গাছের টাটকা ডালকে আংশিক মাটি মাখিয়ে শক্ত আটি বা বাণ্ডিল করে খাতের মধ্যে লম্বা খুঁটি পুঁতে শুইয়ে রাখা হয়। এতে মাটি সঙ্গে সঙ্গে সংরক্ষিত হয় এবং পরবর্তীকালে ডালপালা থেকে গভীর শিকড় বিশিষ্ট স্থায়ী উদ্ভিদ জন্মে মাটির ক্ষয় রােধ করবে।

মৃত্তিকার স্তর কাকে বলে

মাটি গঠনকারী নিয়ন্ত্রক ও প্রক্রিয়া সমূহের প্রভাবে সৃষ্ট এবং ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে অনুভূমিকভাবে বিস্তৃত ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যযুক্ত এক একটি পাতলা অথচ সুস্পষ্ট অঞ্চলকে মৃত্তিকা স্তর বা হোরাইজন বলে।

শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মৃত্তিকা কী

যে মাটিতে প্রচুর জল থাকা সত্ত্বেও খনিজ লবণের পরিমাণ অধিক হওয়ায় সাধারণ উদ্ভিদ জলশোষণে অক্ষম, এই ধরনের মৃত্তিকাকে শারীরবৃত্তীয় শুদ্ধ মৃত্তিকা বলে। সুন্দরবন অঞ্চলে এই জাতীয় মৃত্তিকা পাওয়া যায় এবং এই মাটিতে সুন্দরী, গরান, হেঁতাল ইত্যাদি উদ্ভিদ জন্মায়।

মৃত্তিকা ক্যাটেনা কাকে বলে, মৃত্তিকা ক্যাটেনা কি

একইরকম জলবায়ু ও মূল শিলাযুক্ত অঞ্চলের পার্বত্য ভূমিঢালে শুধুমাত্র জলনিকাশি ব্যবস্থা ও ভূমিরূপের পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন মৃত্তিকা সৃষ্টি হয় , তাকে মৃত্তিকা ক্যাটেনা বলে ।

মৃত্তিকা দূষণ কাকে বলে

যখন মাটিতে অস্বাভাবিকভাবে বেশি পরিমাণে ক্ষতিকারক যৌগ উপস্থিত থাকে, তখন তাকে মাটি দূষণ বলে। এটিতে থাকা অসংখ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির পরিপ্রেক্ষিতে, এটি একটি গুরুতর পরিবেশগত উদ্বেগ এবং তাই একটি প্রাসঙ্গিক বৈশ্বিক সমস্যা। এটা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্ত মাটিতে এমন পদার্থ রয়েছে যা মানুষ এবং অন্যান্য জীবন্ত জিনিসের জন্য বিপজ্জনক বা ক্ষতিকর। তবে, দূষণ মুক্ত মাটিতে তাদের কম পরিমাণের কারণে এই যৌগগুলি স্থানীয় পরিবেশকে বিপন্ন করে না। মাটিকে দূষিত বলে মনে করা হয় যখন এই ক্ষতিকারক যৌগের এক বা একাধিক ঘনত্ব জীবন্ত জিনিসের ক্ষতি করার জন্য যথেষ্ট বেশি হয়।

মৃত্তিকা দূষণের প্রভাব, মৃত্তিকা দূষণের ফলাফল

মাটি দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবগুলি নিম্নলিখিতঃ

  • দূষিত মাটিতে উৎপন্ন ফসল খাদ্য হিসেবে খেলে মানুষ ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়
  • মানব স্বাস্থ্যের উপর মাটি দূষণের প্রভাব হতে পারে যেমন শ্বাসকষ্ট, ক্ষয়রোগ, ক্যান্সার, মধুমেহ, ক্ষতিকর জন্ডিস, মানসিক সমস্যা ইত্যাদি
  • মাটি দূষণের ফলে পরিবেশের বিভিন্ন জীবজন্তু ধ্বংস হতে পারে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ হতে পারে ধ্বংস হতে পারে
  • মাটি দূষণ পরিবেশ দূষণের একটি শ্রেণী এবং এর ফলে পরিবেশের সমস্ত জীবজন্তু এবং মানুষ প্রভাবিত হয়
  • মাটি দূষণের কারণগুলি বিভিন্ন হতে পারে যেমন রাসায়নিক বর্জ্য, বিশপ বা পানির দূষণ, প্লাস্টিক ও বিভিন্ন ধরনের অসমঞ্জসতা ইত্যাদি

মাটি দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবগুলি হতে বাঁচার জন্য কিছু উপায় নিম্নলিখিতঃ

  • রাসায়নিক বর্জ্য ও বিশপ ব্যবহার কম করা
  • প্লাস্টিক ব্যবহার কম করা
  • বায়ু দূষণ কমানো এবং বায়ু শুদ্ধিকরণ করা
  • পরিবেশ দূষণ কমানো এবং পরিবেশ সংরক্ষণ করা

মৃত্তিকার ph কাকে বলে

মৃত্তিকা পিএইচ হল মাটির প্যাচের ময়লা বা ময়লা পরিমাপের পরিমাপ। pH এর মান ০-১৪ পর্যন্ত হয়। pH এর মান যদি ৭ হয় তাহলে সেটা নিউট্রাল বা নিরপেক্ষ, মাটি এসিডিক ও না, এলকালাইন ও না। ৭ এর নিচে হলে মাটি এসিডিক আর উপরে হলে এলকালাইন বা ক্ষারীয়।

ভারতের মৃত্তিকা গবেষণাগার কোথায় অবস্থিত, ভারতের মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত

ভারতের মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্রটি উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে অবস্থিত।

আরো অন্যান্য প্রশ্নোত্তরের সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | মৃত্তিকা

Q1. কৃষ্ণ মৃত্তিকার অপর নাম কি, রেগুর মৃত্তিকা অপর নাম কি

Ans – কৃষ্ণ মৃত্তিকা, রেগুর মৃত্তিকা নামেও পরিচিত।

Q2. মৃত্তিকা বিজ্ঞানের জনক কে

Ans – Dokuchaev কে মৃত্তিকা বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।