বল কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

বল কাকে বলে Class 8

বলের ইংরেজি শব্দ Force। নিউটনের প্রথম সূত্রে প্রথমবার বল শব্দটির প্রয়োগ দেখানো হয়েছে। যে বাহ্যিক প্রভাব কোন স্থির বস্তু ওপর ক্রিয়া করে স্থির বস্তুকে গতিশীল করে বা করতে চায় অথবা গতিশীল বস্তর ওপর ক্রিয়া করে গতিশীল বস্তুর অবস্থান পরিবর্তন করে বা করতে চায়। সেই বাহ্যিক প্রভাব কে বল বলে।

যেমন : ফুটবল খেলার মাঠে একজন ফুটবল খোলোয়ারের কাছে খেলার বল এমনি যায়না বরং সেখানে কোন একজন ফুটবল খেলোয়ার তার পা দিয়ে বল প্রয়োগ করার পরেই অন্য খেলোয়ার সেই বল পায়।

যা কোনো একটি স্থির বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তাকে গতিশীল করে বা করার চেষ্টা করে অথবা যা গতিশীল বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তার গতির পরিবর্তন করে বা করার চেষ্টা চালায় তাকে বল বলে। যেমন-

১। ধরা যাক, আপনি টেবিলকে ঠেলতে শুরু করলেন এবং টেবিলটির অবস্থানের পরিবর্তন হলো। এটি সম্পন্ন হয়েছে বলের প্রয়োগ এর মাধ্যমে।

২। আবার ধরা যায়, আপনি একটি ফুটবলকে হাত দিয়ে আটকালেন তাহলেও ওটিও বলের প্রয়োগের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়েছে।

অর্থ্যাৎ এখানে স্থির বস্তুকে গতিশীল এবং গতিশীল বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন এর মাধ্যমে বলের প্রয়োগ হয়েছে বলে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে।

বলের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Force

  • বল একটি ভেক্টর রাশি। তাই এর মাত্রা ও দিকনির্দেশ দিয়ে বলকে নির্দিষ্ট করা হয়।
  • এটি মূলত কমপক্ষে দুটি বস্তুর একটি মিথস্ক্রিয়া কারণে হয়ে থাকে।
  • এর সাহায্যে  একটি বস্তুর আকৃতি পরিবর্তন করা যেতে পারে।
  • এটি কোনো বস্তুর গতির অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে।
  • যদি কোনো বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল দুটি বলের মাত্রা সমান কিন্তু অভিমুখে বিপরীত দিকে হয়, তাহলে দেহের উপর ক্রিয়াশীল নিট বলের মান শূন্য হবে।
  • যখন কোন একটি বস্তুর উপর বিপরীত দিকে বলের প্রয়োগ করা হয় তখন তাদের ফলাফল বা নেট বলের মান হল এই বিরোধী বলগুলির মধ্যে পার্থক্য এবং এর ফলের দিকটি হিয় বৃহত্তর বলের মতই।
  • যদি বলের মাত্রা ও দিক বা উভয়ই পরিবর্তিত হয়, তবে বলের প্রভাবও পরিবর্তিত হয়ে যাবে।
  • বল কোন স্থির বস্তুকে গতিশীল করতে পারে অথবা গতিশীল বস্তুকে স্থির করতে পারে।
  •  বল সবসময় জোড়ায় জোড়ায় ক্রিয়া সম্পাদন করে। অথ্যাৎ দুটি বস্তুর মধ্যে ক্রিয়া ছাড়া কখনো বলের সৃষ্টি হয়না।
  • কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগের ফলে ঐ বস্তুর আকারের বিকৃতি ঘটতে পারে।
  • বল একটি বস্তুর গতির দিক পরিবর্তন করতে পারে। অর্থাৎ একটি গতিশীল বস্তুর উপর বল প্রয়োগ হলে সেই বস্তুর গতি বা দিক  পরিবর্তন হয়ে যায়।

বলের প্রকারভেদ

প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরণের বল রয়েছে। আপনাকে যদি কিছুক্ষন সময় দেওয়া হয় তাহলে আপনি বলের বিশাল একটা লিস্ট করতে পারবেন। এর মধ্যে কিছু মৌলিক বল আর কিছু যৌগিক বল।

মৌলিক বল, মৌলিক বল কাকে বলে

যে সকল বল অকৃত্তিম অর্থাৎ অন্য বল থেকে উৎপন্ন হয় না এবং বিশ্লেষণ করলে ঐ বল ব্যতীত আর কোন বল পাওয়া যায় না বরং  অন্যান্য বল এই সকল বল থেকে উৎপন্ন হয় তাকে মৌলিক বল বলে।  যেমন, মহাকর্ষ বল, তড়িৎ – চুম্বকীয় বল ইত্যাদি।

যে সকল বল অন্য বলের থেকে উৎপন্ন হয় না কিন্তু অন্যান্য বল এই সকল বলের থেকে সৃষ্টি হয়, তাদেরকে মৌলিক বল বলে।

প্রকৃতিতে মৌলিক বল চার প্রকার। যথা-

ক) মহাকর্ষ বল।
খ) তড়িৎ চৌম্বক বা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল।

গ) সবল নিউক্লীয় বল ।
ঘ) দুর্বল নিউক্লীয় বল।

মহাকর্ষ বল কাকে বলে

মহাকর্ষ বলকে ইংরেজিতে Gravitational force বলে। এই সৃষ্টিজগতের সকল বস্তু তাদের ভরের কারণে একে অপরকে যে বল দিয়ে আকর্ষণ করে সেটাই হচ্ছে মহাকর্ষ বল। এই বলের পরিমাণ ক্রিয়াশীল বস্তু দুটির ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং বস্তুদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক । এই মহাকর্ষ বলের প্রভাবে সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘোরে, গ্যালাক্সির ভেতরে নক্ষত্ররা ঘুরপাক খায়।

মাধ্যাকর্ষণ বল কাকে বলে-

আমাদের ওপর যখন পৃথিবীর মহাকর্ষ বল কাজ করে তখন তাকে মাধ্যাকর্ষণ বলে। এই মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে আমরা নিজেদের ওজনের অনুভূতি পাই। এই মাধ্যাকর্ষণ বল আমাদেরকে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে টেনে রেখেছে।

তড়িৎ চুম্বকীয় বল কাকে বলে, তড়িৎ চৌম্বক বল কাকে বলে

তড়িৎ চৌম্বক বলকে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বলও বলা হয়। ইংরেজিতে এ বলকে Electromagnetic force বলে। দুটি আহিত বা চার্জিত কণা তাদের আধানের কারণে একে অপরের উপর যে আকর্ষন বা বিকর্ষন অনুভব করে তাকে  তড়িৎ চৌম্বক বা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল বলে। এই বল মহাকর্ষ বল অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী। এর আপেক্ষিক সবলতা ১০৩৬

নিউক্লিয় বল কাকে বলে

সবল নিউক্লীয় বল কাকে বলে

সবল নিউক্লীয় বলকে ইংরেজিতে Weak nuclear force বলে। সবল নিউক্লীয় বল সৃষ্টিজগতের সবচেয়ে শক্তিশালী বল।  তড়িৎ চৌম্বক বল থেকেও একশ গুণ বেশি শক্তিশালী সবল নিউক্লীয় বল।

পরমাণুর নিউক্লিয়াস প্রোটন ও নিউট্রন দ্বারা গঠিত।  সমষ্টিগতভাবে  এদেরকে বলা হয় নিউক্লিয়ন ( Nucleon ) । পরমাণুর কেন্দ্রে যে নিউক্লিয়াস রয়েছে তার ভেতরকার প্রোটন এবং নিউট্রনকে যে শক্তিশালী বল তাকে সবল নিউক্লিয় বল বলে। এর আপেক্ষিক সবলতা ১০৪১ প্রচণ্ড বলে আটকে থাকার কারণে এর মাঝে অনেক শক্তি জমা থাকে। তাই বড় নিউক্লিয়াসকে ভেঙে কিংবা ছোট নিউক্লিয়াসকে জোড়া দিয়ে এই বলের কারণে অনেক শক্তি তৈরি করা সম্ভব। নিউক্লিয়ার বোমা সেজন্য এত শক্তিশালী। সূর্য থেকে আলোর তাপও এই বল দিয়ে তৈরি হয়।

দুর্বল নিউক্লিয় বল কাকে বলে

দুর্বল নিউক্লিয় বলকে ইংরেজিতে Weak nuclear force বলে। যে স্বল্প পাল্লার ও স্বল্প মানের বল নিউক্লিয়াসের মধ্যে ক্রিয়া করে অস্থিশীলতার সৃষ্টি করে তাকে দুর্বল নিউক্লিয় বল বলে।

প্রকৃতিতে অনেক মৌলিক পর্দার্থ আছে যাদের নিউক্লিয়াস স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভেঙ্গে যায়। এই সমস্ত নিউক্লিয়াসকে তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস বলা হয়। যেমন- ইউরেনিয়াম। তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে তিন ধরনের কণা নির্গত হয়। সেগুলোকে আলফা কণা,  বিটা কণা ও গামা কণা বলা হয়। তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে যখন বিটা কণা নির্গত হয় তখন একই সাথে শক্তিও নির্গত হয়।  এই নির্গত শক্তি বিটা কণার গতিশক্তির চেয়ে অনেক বেশি।

এটাকে দুর্বল বলা হয় কারণ এটা তড়িৎ চৌম্বক বল থেকে দুর্বল (প্রায় ট্রিলিয়ন গুণ) কিন্তু মোটেও মহাকর্ষ বলের মতো এত দুর্বল নয়। মহাকর্ষ এবং তড়িৎ চৌম্বক বল যেকোনো দূরত্ব থেকে কাজ করতে পারে কিন্তু এই বলটা খুবই অল্প দূরত্বে (10-18m) কাজ করে। তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে যে বেটা (B) রশ্মি বা ইলেকট্রন বের হয় সেটার কারণ এই দুর্বল নিউক্লিয় বল।

প্রকৃতিতে এমন কিছু মৌলিক পদার্থ রয়েছে যাদের নিউক্লিয়াস স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভেঙ্গে যায় ( যেমন ইউরেনিয়াম , থােরিয়াম ইত্যাদি )। এই সমস্ত নিউক্লিয়াসকে বলা হয়ে থাকে তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস। এই তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে তিন ধরনের রশ্মি বা কণা নির্গত হয় যাদেরকে বলা হয়-

১. আলফা রশ্মি, 

২. বিটা রশ্মি এবং

৩. গামা রশ্মি ।

তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে যখন বিটা কণা নির্গত হয় তখন একই সাথে শক্তিও নির্গত হয় । তবে পরিক্ষা করে দেখা যায় যে, নিউক্লিয়াস থেকে নির্গত শক্তির পরিমাণ বিটা কণার গতিশক্তির চেয়ে পরিমানে অনেক বেশি। 

1930 সালে বিজ্ঞানী ডব্লিউ. পাউলি (W. Pauli ) প্রস্তাব করেন যে- অবশিষ্ট শক্তি অন্য এক ধরনের কণা বহন করে যা বিটা-কণার সঙ্গেই নির্গত হয়ে যায় । এই কণাকে বলা হয় নিউট্রিনো (neutrino)।

এই নিউট্রিনো কণা এবং বিটা-কণার নির্গমন চতুর্থ একটি মৌলিক বলের কারণে ঘটে থাকে, যাকে বলা হয় দুর্বল নিউক্লীয় বল । এই  বল সকল নিউক্লীয় বা তড়িৎ চুম্বকীয় বলের তুলনায় অনেকটাই দুর্বল। এই দুর্বল নিউক্লীয় বলের কারণে অনেক নিউক্লিয়াসের ভাঙ্গন প্রক্রিয়া খুব দ্রুত সংঘটিত হয় । ধারণা করা হয় যে, বোসন নামক এক প্রকার কণার পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে এই দুর্বল নিউক্লীয় বল কার্যকর হয়ে থাকে।

বেশি শক্তিশালী থেকে কম শক্তিশালী বলের ক্রম

প্রকৃতিতে সবচেয়ে শক্তিশালী বল হচ্ছে  সবল নিউক্লিয় বল ।  মহাকর্ষ বল হচ্ছে সবচেয়ে দুর্বল।  মহাকর্ষ বলের চেয়ে দুর্বল নিউক্লিয় বল শক্তিশালী। আবার দুর্বল নিউক্লিয় বলের চেয়ে তড়িৎ চৌম্বক বল শক্তিশালী। তড়িৎ চৌম্বক বল শক্তিশালী বলের চেয়ে সবল নিউক্লিয় বল শক্তিশালী।

যৌগিক বল

মৌলিক বল ব্যতীত সকল বল যৌগিক বল। অর্থাৎ এসব বল মৌলিক বল হতে উৎপন্ন হয়। যেমন, ঘর্ষণ বল, স্থিতিস্থাপক বল ইত্যাদি।

সাম্য বল কাকে বলে

কোন বস্তুর উপর একাধিক বল ক্রিয়া করলে বলের যোগফল যদি শূণ্য হয় তখন বস্তু সাম্য অবস্থায় থাকবে। বলের এই লব্ধিকে সাম্য বল বলে। যদি কোন বস্তুর উপর সাম্য বল প্রযুক্ত হয় তাহলে বস্তুর মধ্যে কোন ধরনের ত্বরণ সৃষ্টি হয় না।

অসাম্য বল কাকে বলে

কোন বস্তুর উপর একাধিক বল ক্রিয়া করলে বলের যোগফল যদি শূণ্য না হয় তখন বস্তু সাম্য অবস্থায় থাকেনা। বলের এই লব্ধিকে অসাম্য বল বলে। এ বলে ত্বরণ সৃষ্টি হয়।

স্পর্শ বল কাকে বলে

কোন বস্তুকে স্পর্শ করে যে বল প্রয়োগ করতে হয় তাকে তাকে স্পর্শ বল বলে।

যখন আমরা হাত দিয়ে কোনো বস্তুকে ঠেলি বা টানি তখন আমাদের হাত বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করে, এই ঠেলা বা টানা বল হচ্ছে স্পর্শ বল। কেননা হাত ও বস্তুর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শের ফলশ্রুতি হচ্ছে এ বল। ঘর্ষণ বল, টানবল ইত্যাদি স্পর্শ বলের উদাহরণ।

অস্পর্শ বল কাকে বলে

কোন কিছুর স্পর্শ ছাড়া  কোন বস্তুতে  যে বল প্রযুক্ত হয় তাকে অস্পর্শ বল বলে।

দুটি বস্তুর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ ছাড়াই যে বল ক্রিয়া করে তাকে অস্পর্শ বল বলে। মাধ্যাকর্ষণ বল, চৌম্বক বল, তাড়িতচৌম্বক বল, দুর্বল নিউক্লীয় বল ও শক্তিশালী নিউক্লিয় বল অস্পর্শ বলের উদাহরণ।

ঘর্ষণ বল কাকে বলে

একটি বস্তু যখন আরেকটি বস্তুর উপর দিয়ে চলতে চেষ্টা করে অথবা চলতে থাকে তখন ঘর্ষণের কারণে যে বাঁধাদানকারী বলের সৃষ্টি হয় তাকে ঘর্ষণ বল বলে।

নিচের কয়েকটি উদাহারন পড়লে সহজেই বুঝতে পারবে যে ঘর্ষণ বল কাকে বলে।

কোনো বস্তুর উপর অন্য বস্তুর ধাক্কা বা টানাই হচ্ছে বল প্রয়োগ। নিউটনের প্রথম সূত্র টি হলো ‘বাইরে থেকে কোনো বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির ও গতিশীল বস্তু চিরকাল গতিশীল থাকবে’ ।কিন্তু বাস্তবে আমরা কোনো বস্তুকেই চিরকাল চলমান দেখিনা। এর কারণ ই হলো ঘর্ষণ বল। ঘর্ষণ বল বলের বিপরীতে কাজ করে যার ফলে কোনো বস্তু ই চিরকাল চলমান থাকে না। 

ঘূর্ণন বল কাকে বলে?

স্ক্রুকে খোলার জন্য একটি মোচড়বল প্রয়োগ করা হলে একধরনের ঘূর্ণন সৃষ্টি হয়। এরূপ বলকে ঘূর্ণন বল বলে।

অভিকর্ষ বল কাকে বলে?

পৃথিবী যখন কোনো একটি বস্তুর উপর মহাকর্ষ বল প্রয়োগ করে তখন তাকে অভিকর্ষ বল বলে।

মহাকর্ষ বল কাকে বলে?

মহাবিশ্বের যে কোনো দুটি বস্তুর মধ্যে পারস্পরিক যে আকর্ষণ বল তাকে মহাকর্ষ বল বলে।

সাম্য বল কাকে বলে?

বলের প্রয়োগ ফলে যদি কোনো বস্তুর ত্বরণ শূন্য হয়ে যায় তখন তাকে সাম্য বল বলে ।

ঘাত বল কাকে বলে?

অতি উচ্চমানের যে বল খুব অল্প সময়ের জন্য ক্রিয়া করে তাকে ঘাত বল বলে। যেমন-  ক্রিকেট বলের ওপর ব্যাট দ্বারা আঘাত করা।

বলের একক কি?

  • CGS এককে (সেন্টিমিটার গ্রাম সেকেন্ড পদ্ধতিতে)  বলের একক ডাইন (Dyne) বা gcm/s2।
  • এস. আই এককে (স্ট্যান্ডার্ড ইন্টারন্যাশনাল পদ্ধতিতে) বলের একক নিউটন (N) বা Kgm/s 2 এ উচ্চারিত হয়।
  • F.P.S পদ্ধতিতে বলের একক Poundal (পাউন্ডাল)।

বল এর মাত্রা কি?

বলের মাত্রা হলো= [MLT-2]

বলের রাশি কি?

বল হলো একটি ভেক্টর রাশি যার মান ও দিক উভয়ই আছে।

বল এর সূত্র কি?

বলকে সাধারণত F দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।

m ভরের কোনো একটি বস্তুর উপর F বল প্রয়োগ করা হলে ত্বরণ a সৃষ্টি হয়।

এখানে, F = ma  অর্থাৎ ত্বরণ এবং ভরের গুণফল দ্বারা বল পরিমাপ করা হয়।

লব্ধি বল কাকে বলে

দুই বা ততোধিক বল যদি একই সময়ে একটি স্থির বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল হয় এবং যদি এমন একটি বল নিণয় করা হয়,যার ক্রিয়া ফল ঐ বস্তুর উপর নির্দিষ্ট বলগুলোর মিলিত ক্রিয়া ফলের সমান হয়।তাহলে ঐ একক বলকে বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল বলগুলোর লব্ধি বল বলে।

কেন্দ্রমুখী বল কাকে বলে

যখন কোনো বস্তু বৃত্তাকার পথে ঘুরতে থাকে তখন ঐ বৃত্তের কেন্দ্র অভিমুখে যে নিট বল ক্রিয়া করে বস্তুটিকে বৃত্তাকার পথে গতিশীল রাখে তাকে কেন্দ্রমুখী বল বলে।

উদাহরণঃ একটি ঢিল সুতার এক প্রান্তে বেঁধে হাত দিয়ে সুতার অপর প্রান্ত ধরে ঢিলটিকে সমগতিতে ঘোরাতে গেলে প্রতি মুহুর্তে হাত দ্বারা সুতা বরাবর ঢিলের ওপর অবশ্যই বল প্রয়োগ করতে হবে, কেননা বল বস্তুর ওপর গতিপথের সমকোণে ক্রিয়া করলেই বস্তুর শুধু গতির দিক পরিবর্তিত হবে। এখানে সুতা যে বলের সাহায্যে ঢিলটিকে কেন্দ্র অভিমুখে টেনে রাখে তাকে কেন্দ্রমুখী বল বলে। অর্থাৎ ঢিলের ওপর সুতার যে টান বা বল তা-ই কেন্দ্রমুখী বল।

সংরক্ষণশীল বল কাকে বলে

দুটি বস্তুর স্পর্শতলের অমসৃণতার কারণে ঘর্ষণ বল উৎপন্ন হয়। আপত দৃষ্টিতে কোনো বস্তুর তলকে মসৃণ বলে মনে হলেও অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখলে এর উপর অনেক উঁচু-নিচু খাঁজ লক্ষ করা যায়। যখন একটি বস্তু অন্য একটি বস্তুর উপর দিয়ে গতিশীল হয়, তখন উভয় বস্তুর স্পর্শতলের এ খাঁজগুলো একটির ভিতর আরেকটি ঢুকে যায় অর্থাৎ খাঁজগুলো পরস্পর আটকে যায়। এর ফলে একটি তলের উপর দিয়ে অপর তলের গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এভাবে ঘর্ষণ বলের উদ্ভব ঘটে।

কার্যহীন বল কাকে বলে

বল প্রয়ােগে সরণ না হলে বা প্রযুক্ত বল ও সরণ পরস্পর লম্ব অভিমুখী হলে, প্রযুক্ত বল কোনাে কার্য করে না একে কার্যহীন বল বলে।

প্রযুক্ত বলের অভিমুখ এবং স্বর্ণের অভিমুখ পরস্পরের সঙ্গে লম্বভাবে থাকলে কৃত কার্যের পরিমাণ শুন্য হয়। একে বলা হয় কার্যহীন বল।

উদাহরণ : মাল সহ কোন ব্যক্তি অনুভূমিক পথে হাঁটলে, ব্যক্তি সরণ ও অভিকর্ষ বল পরস্পরের সাথে লম্ব ভাবে ক্রিয়া কবে সুতরাং অভিকর্ষজ বল জনিত কৃতকার্য এর মান শূন্য তাই এটি কার্যহীন বল।

কার্যকর বল কাকে বলে

বল প্রয়োগ করার পর কোন বস্তর যদি কিছুটা অবস্থান্তর হয় অর্থাৎ ঐ বস্তুর সরণ ঘটে তাহলে প্রয়োগকৃত বলটিকে কার্যকর বল বলে।

তড়িৎ চালক বল কাকে বলে

প্রত্যেক পরিবাহী পদার্থে অসংখ্য ইলেকট্রন মুক্ত অবস্থায় থাকে। এই মুক্ত ইলেকট্রনগুলি পরিবাহীর মধ্যে বিভিন্ন দিকে চলাচল করে। যদি বাহ্যিক কোন বলের সাহায্যে ঐ মুক্ত ইলেকট্রনগুলিকে পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে একটি নির্দিষ্ট অভিমুখে চলতে বাধ্য করা হয়, তবে পরিবাহীতে তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। এই বাহ্যিক বলকে তড়িৎ-চালক বল (Electromotive force) বলে।

কেন্দ্র বহির্মুখী বল কাকে বলে

ব্যাখ্যা কোনো বস্তু বা কণা যখন বৃত্তাকার পথে আবর্তন করে তখন যে বল কেন্দ্র হতে বৃত্তের ব্যাসার্ধ বরাবর বাইরের দিকে ক্রিয়াশীল হয়ে বস্তুকে বৃত্তের বাইরে ছিটকে ফেলতে চায় তাকে কেন্দ্র বিমূখী বল বলে।

স্পর্শহীন বল কাকে বলে

দুটি বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে না এলেও বস্তু দুটির মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল কাজ করে । এই বল গুলিকে সংস্পর্শহীন বল বলে। যেমন – চৌম্বক বল , স্থির তড়িৎ বল , মহাকর্ষ বল।

অলীক বল কাকে বলে

কেন্দাবিমূখী বলকে ভূতুরে বল বা অলীক বল বলে। যখন কোন বস্তু কোন কিছুকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে তখন সেখানে কেন্দ্রমূখী ও কেন্দ্রাবিমূখী দুটি বলের সৃষ্টি হয়। কেন্দ্রমূখী বলের কারনে বস্তু ঘুরতে ঘুরতে কেন্দ্রে পতিত হতে চায় ফলে বস্তু কেন্দ্রের দিকে ছিটকে পড়তে চাই। অপরদিকে বিপরীত ভাবে কেন্দ্রবিমূখী বলেরও উদ্ভব হয় যে বল দ্বারা বস্তু বলের সহজ লব্দি সরল পথে যেতে চাই কিন্তু ঘূর্ণন বেগের কারনে বিপরীত ক্রিয়া সেটি ছিটকে কক্ষপথ থেকে বাইরে যেতে চাই।

এখন এই কেন্দ্রমূখী ও কেন্দ্রবিমূখী বলের লব্দি বরাবর বস্তু ঘুরতে থাকে। কিন্তু কোন কারনে বেগের হ্রাস বৃদ্ধি বা ত্বরন ঘটলে হঠাৎ তির্যক ভাবে সরল রেখা বরাবর বলের মান বৃদ্ধি পায় ফলে সেটি যেকোন মুহুর্তে কোনদিকে, কোন পয়েন্ট থেকে বাইরে ছিটকে পড়তে পারে। এই বল কখন কিভাবে ক্রিয়া করে, কোন পয়েন্ট থেকে ছিটকে নতুন গতি কোন দিকে কিরুপ হবে তা নির্ণয় করা কঠিন বিধায় একে ভুতুড়ে বল বা অলীক বল বলে।

প্রতিমিত বল কাকে বলে

কোন বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল একাধিক বলের লব্ধি শূন্য হলে। ওই বলগুলিকে একত্রে প্রতিমিত বল বলে।

অপকেন্দ্র বল কাকে বলে

একটি বস্তু যে কৌণিক বেগ নিয়ে বৃত্তাকার পথে ঘুরছে, কোনো পর্যবেক্ষণ যদি সেই একই কৌণিক বেগ নিয়ে বস্তুটির সঙ্গে ঘুরতে থাকে তাহলে সেই পর্যবেক্ষকের কাছে মনে হবে যে ঘূর্ণায়মান বস্তুটির উপর অভিকেন্দ্র বলের মানের সমান এবং বিপরীতমুখী একটি বল ক্রিয়া করছে। এই বলকেই অপকেন্দ্র বল বলা হয়।

কেন্দ্রাতিগ বল কাকে বলে

একটি বল কেন্দ্র থেকে বস্তুকে বাইরের দিকে চালিত করে একে কেন্দ্রাতিগ বল বলে।

কার্য হীন বল কাকে বলে

বল প্রয়ােগে সরণ না হলে বা প্রযুক্ত বল ও সরণ পরস্পর লম্ব অভিমুখী হলে, প্রযুক্ত বল কোনাে কার্য করে না একে কার্যহীন বল বলে।

কাজ, W=F.s. cos θ ; এখানে, F=বল, θ=মধ্যবর্তী কোণ এবং s=সরণ। মধ্যবর্তী কোণ θ= ৯০° হলে কাজ শূন্য হয়[cos(90°)=0]; এক্ষেত্রে এটাও বোঝা যায় যে, লম্বভাবে বল প্রয়োগ করায় সরণও শূন্য। যেহেতু প্রযুক্ত বল দ্বারা গাণিতিকভাবে কোনো কাজ সম্পাদিত হয়নি, তাই একে কার্যহীন বল বলে।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | বল কাকে বলে class 9

Q1. 1 ডাইন বল কাকে বলে

Ans – এক গ্রাম ভর যুক্ত একটি বস্তকে এক সেন্টিমিটার প্রতি বর্গ সেকেন্ড হারে ত্বরিত করতে যে পরিমাণ বলের প্রয়োজন তাকে এক ডাইন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। সমতূল্য আরেকটি সংজ্ঞা হল, “যে পরিমাণ বল এক গ্রাম ভরের উপর ক্রিয়া করলে প্রতি সেকেন্ডে 1 cms–1 হারে বেগের পরিবর্তন ঘটায় সেই পরিমাণ বলই এক ডাইন।”

Q2. এক নিউটন বল কাকে বলে

Ans – যে পরিমাণ বল এক কিলোগ্রাম ভরের কোনো বস্তুর ওপর প্রযুক্ত হয়ে এক মিটার/সেকেন্ড ত্বরণ সৃষ্টি করে তাকে এক নিউটন বল বলে।

Q3. একক বল কাকে বলে

Ans – একক ভরের কোন বস্তুর উপর একক ত্বরণ সৃষ্টি করতে যে বল প্রযুক্ত হয় তাকে একক বল বলে।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।