হৃদপিন্ড কী, হৃদপিন্ড কাকে বলে
রক্ত সংবহনতন্ত্রের যে অঙ্গটি পাম্পের মতো সংকোচন প্রসারনের মাধ্যমে সারাদেহে রক্ত সরবরাহ করে তাকে হৃদপিন্ড বলা হয়৷
রক্ত সংবহনতন্ত্রের যে অঙ্গটি পাম্পের মতো সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে সারাদেহে রক্ত সংবহন করে সেটি হলো হৃদপিন্ড । জীবন্ত এ পাম্প যন্ত্রটি দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে শিরা মাধ্যমে আনীত রক্ত ধমনীর সাহায্যে শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রেরণ করে থাকে । একজন সুস্থ মানুষের জীবদ্দশায় হৃদপিন্ড গড়ে ২৬০০ মিলিয়ন বার স্পন্দিত হয় । একটি হৃদপিন্ডের ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম । স্ত্রীলোকে তা পুরুষের চেয়ে এক – তৃতীয়াংশ কম ।
এই পাম্পটির জীবন রয়েছে অর্থ্যাৎ এটি জীবন্ত একটি পাম্প যা দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে শিরার মাধ্যমে আনীত রক্ত ধমনীর সাহায্য সারা দেহে পাঠায়। একজন সুস্থ মানুষের জীবদ্দশায় হৃদপিন্ড গড়ে ২৬০০ মিলিয়ন বার স্পন্দিত হতে পারে।
হৃদপিন্ডের গঠন ও কাজ
মানৃষের হৃদপিন্ড বক্ষগহ্বরের মধ্যচ্ছদার উপরে ও দুই ফুসফুসের মাঝ বরাবর বাম দিকে একটু বেশী বাঁকা হয়ে অবস্থিত । এটি বুকের বাঁমপাশে প্রায় ৬০ % অবস্থান দখল করে থাকে । লালচে – খয়েরি রঙের হৃদপিন্ডটি ত্রিকোণা মোচার মত । একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির হৃদপিন্ডের দৈর্ঘ্য ১২ সে .মি প্রস্থ ৯ সে .মি । এটি একটি দ্বিস্তরী পেরিকার্ডিয়াম নামক পাতলা ঝিল্লিতে আবৃত । হৃদপিন্ডের প্রাচীর অনৈচ্চিক পেশী দিয়ে গঠিত । এসব পেশি হৃদপেশি বা কার্ডিয়াক পেশি নামে পরিচিত ।
হৃদপিন্ডের গঠন
হৃদপিন্ড বক্ষ গহ্বরের বাম দিকে দু’ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থিত একটি ত্রিকোণাকার ফাঁপা অঙ্গ। এটি হৃদপেশি নামক এক বিশেষ ধরনের অনৈচ্ছিক পেশি দ্বারা গঠিত। এটি পেরিকার্ডিয়াম নামক পাতলা পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে।
হৃদপিন্ডের প্রাচীরে তিনটি স্তর থাকে। যথা-
(ক) বহিঃস্তর (Epicardium),
(খ) মধ্যস্তর (Myocardium) এবং
(গ) অন্তঃস্তর (Endocardium)।
(ক) বহিঃস্তর- বহিঃস্তর মূলত যোজক কলা দ্বারা গঠিত। এতে বিক্ষিপ্তভাবে চর্বি থাকে। এটি আবরণী কলা দিয়ে আবৃত থাকে।
(খ) মধ্যস্তর- এটি বহিঃস্তর এবং অন্তঃস্তরের মাঝখানে অবস্থান করে । এটি শক্ত অনৈচ্ছিক পেশি দিয়ে গঠিত।
(গ) অন্তঃস্তর- এটি সব থেকে ভেতরের স্তর। হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠগুলো অন্তঃস্তর দিয়ে আবৃত থাকে। অন্তঃস্তরটি হৃদপিন্ডের কপাটিকাগুলোকেও আবৃত করে রাখে।
হৃদপিন্ডের ভেতরের স্তর ফাঁপা এবং চারটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। উপরের প্রকোষ্ঠ দুটি নিচের প্রকোষ্ঠ দুটির চেয়ে আকারে
ছোট। উপরের প্রকোষ্ঠ দুটিকে ডান ও বাম অলিন্দ (Right and left auricle) এবং নিচের প্রকোষ্ঠ দুটিকে ডান ও বাম নিলয় (Right and left ventricle) বলে।
অলিন্দদ্বয়ের প্রাচীর তুলনামূলকভাবে পাতলা, আর নিলয়ের প্রাচীর পুরু । অলিন্দ ও নিলয় যথাক্রমে আন্তঃঅলিন্দ পর্দা ও আন্তঃনিলীয় পর্দা দ্বারা পরস্পর থেকে পৃথক থাকে।
হৃদপিন্ডের উভয় অলিন্দ ও নিলয়ের মধ্যে ছিদ্র পথ থাকে যা খোলা বা বন্ধ করার জন্য কপাটিকা (Valve) থাকে। ঠিক একইভাবে ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় মধ্যবর্তী ছিদ্রপথ তিন পাল্লাবিশিষ্ট ট্রাইকাসপিড কপাটিকা দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। অনুরূপভাবে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় দু’পাল্লাবিশিষ্ট বাইকাসপিড কপাটিকা দ্বারা সুরক্ষিত থাকে।
মহাধমনি ও ফুসফুসীয় ধমনির মুখে অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকা থাকে। এদের অবস্থানের ফলে পাম্প করা রক্ত একই দিকে চলে এবং উল্টো দিকে রক্ত কোন ক্রমেই ফিরে আসতে পারে না।
হৃদপিন্ডের গঠন চিত্র
হৃদপিন্ডের কাজ কি, মানবদেহের হৃদপিন্ডের কাজ কি
- হৃদপিন্ড রক্ত সংবহন তন্ত্রের প্রধান অঙ্গ। এর সাহায্যেই সংবহন তন্ত্রে রক্ত প্রবাহ সচল থাকে ।
- মানব হৃদপিন্ড চার প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। সংবহন তন্ত্রে প্রকোষ্ঠগুলো সম্পূর্ণ বিভক্ত থাকায় এখানে অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তের সংমিশ্রণ ঘটে না।
- সারাদেহের প্রায় সকল কোষে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ করে থাকে।
- পাম্পিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হরমোন ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সারাদেহে সরবরাহ করে থাকে।
- দেহের দূষিত রক্ত এবং কোষের বিপাকীয় কাজের মাধ্যমে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ ফুসফুসে প্রেরন করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা রাখে ।
হৃদপিন্ডের রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি
হৃদপিন্ড থেকে রক্ত ধমনি নালি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে বাহিত হয় এবং দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে শিরা নালি দিয়ে পুনরায় হৃদপিন্ডে ফিরে আসে।
রক্ত সংবহন তন্ত্রের প্রধান অঙ্গ হৃদপিণ্ড। হৃদপিন্ড একটি পাম্পের ন্যায় কাজ করে। হৃদপিন্ডের সংকোচন ও প্রসারণ দ্বারা এ কাজ সম্পন্ন হয়। হৃদপিন্ডের অবিরাম সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে সারা দেহে রক্ত সংবহন পদ্ধতি অব্যাহত থাকে।
হৃদপিন্ডের সংকোচনকে বলা হয় সিস্টোল ও প্রসারণকে বলা হয় ডায়াস্টোল।
হৃদপিন্ডের এক বার সিস্টোল- ডায়াস্টোলকে একরের ‘হৃদ স্পন্দন’ (Heart Beat) বলা হয়।
যেহেতু হৃদপিন্ড একটি পাম্পের ন্যায় ক্রিয়া করে। হৃদপিন্ডের অবিরত সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে এ ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। হৃদপিন্ডের অলিন্দদ্বয় প্রসারিত হলে দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত হৃদপিন্ডে প্রবেশ করে।
যেমন- মহাশিরার মাধ্যমে কার্বন ডাইঅক্সাইডযুক্ত রক্ত ডান অলিন্দে প্রবেশ করে। ঠিক একই সময় ফুসফুশীয় শিরার বা পালমোনারি শিরার মাধ্যমে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে।
অলিন্দদ্বয়ের সংকোচনের ফলে নিলয়দ্বয়ের পেশি প্রসারিত হয়। ফলে ডান অলিন্দ-নিলয়ের ছিদ্রপথের ট্রাইকাসপিড কপাটিকা খুলে যায় এবং ডান অলিন্দ থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইডযুক্ত রক্ত ডান নিলয়ে প্রবেশ করে।
ঠিক একই সময়ে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয়ের মধ্যকার বাইকাসপিড কপাটিকা খুলে যায় এবং বাম অলিন্দ থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। এর পরপরই ছিদ্রগুলো কপাটিকা দ্বারা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নিলয় থেকে রক্ত পুনরায় অলিন্দে প্রবেশ করতে পারে না।
যখন নিলয়ায় প্রসারিত হয় তখন ডান নিলয় থেকে CO, যুক্ত রক্ত ফুসফুসীয় ধমনির মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে। এখানে রক্ত পরিশোধিত হয় এবং বাম নিলয় থেকে O2 যুক্ত রক্ত মহাধমনির মাধ্যমে সারা দেহে পরিবাহিত হয় এবং উভয় ধর্মনির অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে রক্ত পুনরায় নিলয়ে ফিরে আসতে পারে না। এভাবে হৃদপিন্ডে পর্যায়ক্রমে সংকোচন ও প্রসারণের ফলে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে।
মানব দেহের হৃদপিন্ড একটি ছন্দে সংকোচিত ও প্রসারিত হওয়ার মাধ্যমে সংবহন তন্ত্রের রক্ত কে সচল রাখে। হৃৎপিণ্ডের একবার সংকোচনকে সিস্টোল এবং এর একবার প্রসারন কে ডায়াস্টোল বলে। হৃৎপিণ্ডের একটি সিস্টোল ও একটি ডায়াস্টোল কে এক সঙ্গে একটি হৃৎস্পন্দন বলা হয়।
হৃৎপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিত কার্যে বিভক্ত
- ১৷ অলিন্দদ্বয় প্রসারিত হলে সারা শরীরের দুষিত রক্ত ঊর্ধ্ব মহাশিরা দিয়ে ডান অলিন্দে আসে। একই সময় ফুসফুস থেকে বিশুদ্ধ রক্ত ফুসফুসীয় শিরার মাধ্যমে বাম অলিন্দ আসে।
- ২৷ অলিন্দ দ্বয় রক্ত দ্বরা পূর্ণ হলে সংকুচিত হয় এবং নিলয় দ্বয় প্রসারিত হয়। তখন ডান অলিন্দের রক্ত ত্রিপত্র কপাটিকার ভিতর দিয়ে ডান নিলয়ে পৌঁছায় এবং বাম অলিন্দের রক্ত দ্বিপত্র কপাটিকার ভিতর দিয়ে বাম নিলয়ের ভিতর প্রবেশ করে।
- ৩৷ নিলয় দ্বয় সম্পূর্ণ রক্ত দ্বরা পূর্ণ হলে সংকোচিত হয় এবং ডান নিলয় থেকে ফুসফুসীয় ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে। বাম নিলয় থেকে মহা ধমনীর মাধ্যমে রক্ত সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় অর্ধচন্দ্রাকৃতি কপাটিকা খুলে যায় এবং তখন দ্বিপত্র ও ত্রিপত্র কপাটিকা বন্ধ হয়ে থাকে।
- ৪৷ এর পর আবার অলিন্দ দ্বয় প্রসারিত হওয়ার মাধ্যমে রক্ত অলিন্দে প্রবেশ করে। এইভাবে সংকোচন ও প্রসারনের মাধ্যমেই রক্ত সঞ্চালনের পদ্ধতিটি বজায় থাকে।
মানুষের হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠ কয়টি ও কি কি
মানুষের হৃদপিন্ড চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ঠ । উপরের দুটিকে ডান বা বাম অ্যাক্টিয়াম নিচের দুটিকে ডান বা বাম ভেক্টিকল বলে । হৃদপিন্ডের স্বতঃস্ফুত প্রসারণকে ডায়াস্টোল এবং স্বতঃস্ফুত সংকোচনকে সিস্টোল বলে ।
হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠ ৪ টি । যথা-
- ডান অলিন্দ
- ডান নিলয়
- বাম অলিন্দ
- বাম নিলয়
ডান অলিন্দ
আমাদের সারা দেহের সমগ্র দূষিত রক্ত ডান অলিন্দে প্রবেশ করে । ডান অলিন্দটি আবার সুপিরিওর ও ইনফিরিয়র ভেনাকাভার সঙ্গে যুক্ত থাকে ।
বাম অলিন্দ
এই বাম অলিন্দটি ফুসফুস হতে বিশুদ্ধ রক্ত গ্রহণ করে এবং একজোড়া ফুসফুসীয় শিরার মাধ্যমে তা বাম নিলয়ে পৌঁছায় ।
ডান নিলয়
এটি ডান অলিন্দ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে এবং পরে তা ফুসফুসীয় ধমনির মাধ্যমে ফুসফুসে পৌছায়। নিলয়ের প্রাচীর সাধারণত পুরু হয় ।
বাম নিলয়
এই বাম নিলয় বাম অলিন্দ হতে রক্তগ্রহণ করে । সেই রক্ত মহাধমনিতে প্রেরণ করে। সাধারণত এই বাম নিলয়ের প্রাচীর পুরু হয় ।
প্রকোষ্ঠের মধ্যকার পর্দা
৪ টি প্রকোষ্ঠের মাঝে রয়েছে এদের বিভক্তকারী ২ টি পর্দা। যথা-
আন্তঃ অলিন্দ পর্দা
এই পর্দা ডান ও বাম অলিন্দের প্রকোষ্ঠকে পরষ্পর থেকে পৃথক করে রাখে ।
আন্তঃনিলয় পর্দা
এই পর্দা ডান ও বাম নিলয়ের প্রকোষ্ঠকে পৃথক করে রাখে ।
হার্টের ব্যথা কোথায় হয়
বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হার্ট অ্যাটাক। বলা হয় বিশ্বে এক তৃতীয়াংশ মৃত্যুর জন্যে দায়ী হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ।
হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালীগুলোকে করোনারি আর্টারি বলা হয়। এসব ধমনির ভেতরের দেয়ালে কোলেস্টেরল জমা হলে রক্তনালি সরু হয়ে যায়। ফলে রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। জমাট বাঁধা এসব কোলেস্টেরলকে প্ল্যাক বলা হয়।
হার্ট অ্যাটাকের আগে এমন একটি কোলেস্টেরল প্ল্যাক ফেটে যায়। ফলে সেখানে রক্ত জমাট বাঁধে। জমাট বাঁধার কারনে ধমনীতে ব্লকের সৃষ্টি হয়। এই ব্লকের পরের অংশে রক্ত যেতে পারে না। ফলে হৃদপিন্ডের সেই অংশ নষ্ট হয়ে যায়। দেখা দেয় হার্ট অ্যাটক।
হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ
- বুকে ব্যথা – চাপ চাপ ব্যথা, বুকের এক পাশে বা পুরো বুক জুড়ে ভারী ব্যথা
- শরীরের অন্য অংশে ব্যথা—মনে হতে পারে ব্যথা শরীরে এক অংশ থেকে অন্য অংশে চলে যাচ্ছে, যেমন হতে পারে বুক থেকে হাতে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত বাম হাতে ব্যথা হয়, কিন্তু দুই হাতেই ব্যথা হতে পারে।
- মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম করা
- ঘাম হওয়া
- নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা
- বমি ভাব হওয়া
- বুক ধড়ফড় করা বা বিনা কারণে অস্থির লাগা
- সর্দি বা কাশি হওয়া
- বেশিরভাগ সময় বুকে ব্যথা খুবই তীব্র হয়, ফলে শরীরের অন্য অংশে ব্যথা অনেকে টের পান না।
হার্টের সমস্যার লক্ষণ ও প্রতিকার
কিছু কিছু ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হলে হৃৎপিণ্ড তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এটাকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বলে। তেমন হলে রোগীর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শ্বাস নেয়া বন্ধ হওয়া, ধাক্কা দিলেও সাড়া না দেয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
হার্টের সমস্যার লক্ষণ
হার্ট অ্যাটাকের অনেক ধরনের লক্ষণ আছে। কারও হার্ট অ্যাটাক হলে সবগুলো লক্ষণ একসঙ্গে প্রকাশ না-ও পেতে পারে।
বুকে ব্যথা হতে পারে
হার্ট অ্যাটাক হলে বুক চেপে ধরার মতো ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া রোগীর বুকের মধ্যে কিছু চেপে বসে আছে অথবা কিছু আটকে আসছে এমন অনুভূত হতে পারে।
শরীরের অন্য জায়গায় ব্যথা
বুক থেকে এই ব্যথা হাতে নেমে যেতে পারে। সাধারণত বাম হাতে এমন ব্যথা হয়। তবে এই ব্যথা উভয় হাতেই যেতে পারে। হাতের পাশাপাশি চোয়াল, ঘাড়, পিঠ ও পেটে ব্যথা হতে পারে।
মাথা ঘোরানো অথবা মাথা ঝিমঝিম করা
হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীর মাথা ঘোরাতে পারে। করতে পারে মাথা ঝিমঝিম। মাথা ঘুরে রোগী পড়েও যেতে পারে।
বিনা কারণে ঘামতে থাকা
হার্ট অ্যাটাক হলে আক্রান্ত ব্যক্তি বসে বসে ঘামতে পারে। এই ঘামের পরিমাণ অল্প কিংবা বেশি হতে পারে।
শ্বাসকষ্ট হতে পারে
হার্ট অ্যাটাক হলে মৃদু থেকে তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এ সময় রোগীর বমি হওয়া কিংবা বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
আতঙ্কিত হতে পারে
হার্ট অ্যাটাক হলে রোগী তীব্র ভয়ে আচ্ছন্ন হতে পারে। অস্থিরতার পাশাপাশি এমন মনে হতে পারে যে তিনি মারা যাচ্ছেন।
হার্টের সমস্যার প্রতিকার
হার্ট অ্যাটাকের রোগ এক মারাত্মক হৃদরোগ। এ রোগ থেকে বাঁচতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলা দরকার। যথা-
১. ধূমপান না করা।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করা বা হাঁটা।
৩. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা।
৪. কাঁচা ফল ও শাকসব্জি বেশি বেশি খাওয়া।
৫. চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
৬. ভাজা খাবার, মসলাযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড খাওয়া বাদ দেওয়া।
হার্ট ভালো রাখার উপায়
বুকের ভেতর যে মসৃণ পেশি পৌনঃপুনিক ছান্দিক সংকোচনের মাধ্যমে আপনার সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে চলেছে, সেটাই হৃৎপিণ্ড।
শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ অঙ্গের যত্ন না নিলেই সর্বনাশ। তাই একটু সচেতন থাকলেই কিন্তু হৃৎপিণ্ড সুস্থ-সবল রাখা যায়। এ জন্য আছে বেশ সহজ কিছু উপায়।
- ধুমপান বর্জন করুন।
- শাক-সবজি ও ফলমূল বেশী করে খাবেন।
- অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
- কোলোস্টরেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন।
- লবন ও চিনি কম খাবেন।
- প্রতিদিন ১ঘন্টা ব্যায়ামের অভ্যাস করুন।
- শরিরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।
- উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ পরিহার করুন ও হাসি-খুশি থাকুন।
দৈনন্দিন জীবনে এ কয়টি অভ্যাস আপনার হৃৎপিণ্ডকে রাখবে সুস্থ-সবল।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | হৃদপিন্ড
Q1. মানুষের হৃদপিন্ডে কয়টি প্রকোষ্ঠ থাকে
Ans – মানুষের হৃৎপিন্ড ৪টি মূল প্রকোষ্ঠে বিভক্ত, ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় এবং বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় ।
Q2. হৃদপিন্ডের স্তর কয়টি
Ans – হৃদপিন্ডের প্রাচীরের ৩টি স্তর থাকে।
Q3. মানুষের হৃদপিন্ডে কয়টি কপাটিকা থাকে
Ans – মানুষের হৃদপিন্ডে চারটি কপাটিকা থাকে ।
হৃৎপিণ্ডের কপাটিকা (ইংরেজি: Heart valve) হল একমুখী ভালভ যা সাধারণত রক্তকে হৃৎপিণ্ডের মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র এক দিকে প্রবাহিত হতে দেয়। স্তন্যপায়ী প্রাণীর হৃৎপিণ্ডে উপস্থিত চারটি কপাটিকা হৃৎপিণ্ডের মধ্য দিয়ে রক্তের প্রবাহ নির্ধারণ করে। একটি হৃৎপিণ্ডের কপাটিকা প্রতিটি পক্ষের ডিফারেনশিয়াল রক্তচাপের প্রবর্তন করে বা বন্ধ করে দেয়।
Q4. মানুষের হৃদপিন্ড কোথায় থাকে
Ans – মানুষের দেহে, হৃৎপিণ্ডের আকার প্রায় একটি বদ্ধ মুষ্টির সমান এবং এটি বুকের মধ্য প্রকোষ্ঠতে ফুসফুস দুটির মাঝখানে অবস্থিত।
Q5. হৃদপিন্ডের সংকোচন কে কি বলে
Ans – হৃদপিন্ডের সংকোচনকে বলা হয় সিস্টোল এবং প্রসারণকে বলা হয় ডায়াস্টোল।
Q6. হৃদপিন্ডের আবরণ কে কি বলে
Ans – হৃদপিন্ডের আবরণীর নাম হল পেরিকাডিম।
Q7. হৃদপিন্ডের কোন অলিন্দে দূষিত রক্ত থাকে
Ans – ডান দিকে দক্ষিণ অলিন্দ এবং নিলয় দূষিত রক্তকে ফুসফুসীয় সঞ্চালনে পাঠায়
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।