ভূগোল কাকে বলে, প্রাকৃতিক ভূগোল কাকে বলে, মানব ভূগোল কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

ভূগোল কাকে বলে

ভূগোল হলো এমন একটি বিষয়/শাস্ত্র যেখানে স্থানীক ও কালীক পর্যায়ে মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা হয়। সংক্ষেপে মানুষের বাসভূমি হিসাবে পৃথিবীর বর্ণনা হলো ভূগোল। কোনো কোনো ভূগোলবিদ ভূগোলকে বলেছেন পৃথিবীর বিবরণ, কেউ কেউ বলেছেন পৃথিবীর বিজ্ঞান ।

অধ্যাপক ম্যাকনি (Professor E. A. Macnee) মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর আলোচনা বা বর্ণনাকে ভূগোল বলেছেন। তাঁর মোটে ভৌত ও সামাজিক পরিবেশে মানুষের কর্মকান্ড ও জীবনধারা নিয়ে যে বিষয় আলোচনা করে তাই ভূগোল।

অধ্যাপক ডাডলি স্ট্যাম্পের (Professor L. Dudley Stamp) মতে, পৃথিবী ও পৃথিবীর অধিবাসীদের বর্ণনাই হলো ভূগোল। আবার কোনো কোনো ভূগোলবিদ ভূগোলকে বলেছেন পৃথিবীর বিবর, কেউ বলেছেন পৃথিবীর বিজ্ঞান। অধ্যাপক কার্ল রিটার (Professor Carl Ritter) ভূগোলকে বলেছেন পৃথিবীর বিজ্ঞান।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির বিজ্ঞান একাডেমি ১৯৬৫ সালে ভূগোলের একটি সংজ্ঞা দিয়েছে। তাদের মতে, পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপব্যবস্থাগুলো কীভাবে সংগঠিত হয় এবং এসব প্রাকৃতিক বিষয় বা অবয়বের সঙ্গে মানুষ নিজেকে কীভাবে বিন্যস্ত করে তাঁর ব্যাখ্যা খোঁজে ভূগোল।

আলেকজান্ডার ফন হামবোল্টের (Alexander Von Humbolt) মতে, ভূগোল হলো প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিজ্ঞান, প্রকৃতিতে যা কিছু আছে তাঁর বর্ণনা ও আলোচনা এর অন্তর্ভুক্ত।

প্রকৃতিতে যা কিছু আছে তার বর্ণনা ও আলোচনা এর অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, উদ্ভিদ, প্রাণি, নদ-নদী, সাগর, খনি সম্পদ অর্থাৎ পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ, পৃথিবীতে বাসকৃত মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। অপরদিকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপও প্রাকৃতিক পরিবেশে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন ঘটায়।

বনভূমি কেটে তৈরি হয় শহর, জলাশয় ভরাট হয়, অতিরিক্ত কলকারখানাও যানবাহনের কারণে বায়ু দূষণ হয়। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন, বন্যা, খরা, টর্নেডো, ভূমিকম্প, সুনামী ইত্যাদি সংঘটিত হয়। অর্থাৎ মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে এক ধরনের মিথস্ক্রিয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কটি মূলত কার্যকারণ সম্পর্ক।

ভূগোলের প্রধান কাজ হলো এই কার্যকারণ সম্পর্ক উদ্ঘাটন করা। মূলত সময় ও স্থানের আলোকে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানুষের কর্মকান্ডের এই সম্পর্কই ভূগোলের মুখ্য বিষয়।

ভূগোলের প্রধান শাখা কয়টি

ভূগোলের প্রধান দুইটি শাখা রয়েছে। যথা

১। মানবীয় ভূগোল

২। প্রাকৃতিক ভূগোল

এদের শাখাগুলোকে দাড় করালে মোট ১৪৮ টা শাখা অর্থ্যাৎ উপশাখা।

প্রাকৃতিক ভূগোল, প্রাকৃতিক ভূগোল কাকে বলে | Physical Geography

প্রাকৃতিক ভূগোল হলো- প্রাকৃতিক প্রপঞ্চসমূহের স্থানিক ও কালিক (Spatial and Temporal) বিশ্লেষণ।

অন্যভাবে বলা যায়, ভূগোল বিজ্ঞানের যে অংশে পৃথিবীর জন্ম, ভূ-প্রকৃতি, ভূ-ত্বক, পাহাড়, পর্বত, মরুভূমি, সমভূমি, বায়ুমণ্ডল ও বারিমন্ডল প্রভৃতি বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয় তাকে প্রাকৃতিক ভূগোল বলে।

অধ্যাপক কাল রিটারের (Professor Carl Ritter) মতে, “প্রাকৃতিক ভূগোল হচ্ছে বিজ্ঞানের সেই শাখা যা পৃথিবীর সমস্ত অবয়ব, বৈচিত্র্য ও সম্পর্কসহ একটি স্বতন্ত্র একক হিসেবে বিচার করে”।

অধ্যাপক রিচার্ড হার্টশোন (Professor Richard Hartshorne) এর মতে, “ভূ-পৃষ্ঠের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্যের সঠিক, সুবিন্যস্ত ও যুক্তিসঙ্গত বর্ণনা ও ব্যাখ্যা সরবরাহ করা প্রাকৃতিক ভূগোলের কাজ”।

ভূগোলের যে শাখা পৃথিবীর জন্ম, ভূ-প্রকৃতি অর্থাৎ পাহাড়, পর্বত, বায়ুমণ্ডল ও বারিমন্ডল প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে এবং ভৌত পরিবেশ ও এর মধ্যে কার্যরত বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে তাকে প্রাকৃতিক ভূগোল বলে। প্রাকৃতিক ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ নিম্নরূপ।

ভূমিরূপবিদ্যা | Geomorphology

ভূমিরূপবিদ্যা পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ অবস্থা, পৃথিবীর উৎপত্তি, ভূ-আলোড়ন, বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ, নদ-নদীর উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ, ভূ-ত্বকের পরিবর্তন, খনিজ ও শিলা এবং পৃথিবীর উৎপত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করে।

জলবায়ুবিদ্যা | Climatology

এ শাখায় বায়ুর গঠন, উপাদান, বায়ুর তাপ, চাপ, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুপুঞ্জ, বায়ুপ্রাচীর, মেঘ, বৃষ্টি, কুয়াশা, আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে আলোচনা করে।

সমুদ্রবিদ্যা | Oceanography

পৃথিবীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সমুদ্র। এ শাখায় সাগর মহাসাগরের তলদেশের ভূমিরূপ, সমুদ্রস্রোত, মানব জীবনের উপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব, বিভিন্ন মহাদেশের মধ্যে সমুদ্র পথে যোগাযোগ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।

মৃত্তিকা ভূগোল | Soil Geography

মৃত্তিকা ভূগোল অশ্মমণ্ডলের উপরিভাগের মৃত্তিকার গঠন, উপাদান, বণ্টন ও বিন্যাস সম্পর্কে আলোচনা করে।

জীব ভূগোল, জীব ভূগোল কাকে বলে | Biogeography

এ শাখা পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রাণিজগৎ ও উদ্ভিদের বন্টন নিয়ে আলোচনা করে।

জীব ভূগোল হল ভূগোলের একটি শাখা যা পৃথিবীর প্রাণিজগৎ এবং উদ্ভিদ প্রজাতির বন্টন নিয়ে আলোচনা করে। সুতরাং জীব ভূগোল প্রাণী এবং উদ্ভিদের ভৌগলিক বন্টন নিয়ে কাজ করে। এর ব্যাপক অর্থে জীব ভূগোল বা বায়োজিওগ্রাফি হলে পরিবেশ, প্রাণী, গাছপালা এবং মানুষের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করে।

ভূগোলের যে শাখা উদ্ভিদ ও প্রাণীর ভৌগলিক বন্টন, তাদের উৎপত্তি, স্থানান্তর এবং অন্যান্য জীবের সাথে এদের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করা হয় তাকে জীব ভূগোল বলা হয়। জীবভূগোল বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রজাতি ও বাস্তুতন্ত্রের বন্টন সম্পর্কে আলোচনা করে।

জীব ভূগোল ভূগোলের একটি শাখা হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ যা সারা বিশ্বের প্রাকৃতিক বাসস্থানের উপর আলোকপাত করে। প্রজাতিগুলি কেন তাদের বর্তমান অবস্থানে রয়েছে তা বোঝার জন্য এবং বিশ্বের প্রাকৃতিক আবাসস্থলগুলিকে রক্ষা করার জন্য বিকাশের ক্ষেত্রেও এটি অপরিহার্য।

গাণিতিক ভূগোল | Mathematical Geography

গাণিতিক ভূগোলে জ্যোতিষ্কমণ্ডলী, সৌরজগৎ, পৃথিবী ও এর আকৃতি, গতি, আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা ও সময়, আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতির ফলাফল প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

আরো পড়তে: পরিবেশ ও ভূগোল অষ্টম শ্রেণি প্রশ্নোত্তর

মানব ভূগোল, মানব ভূগোল কাকে বলে | Human Geography

স্থান এবং কালের ভিত্তিতে মানুষ কীভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে, বিভিন্ন পরিবেশের সাথে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে তার কার্যকারণ অনুসন্ধান মানবিক ভূগোলের প্রধান আলোচ্য বিষয়।

ভূগোল বিজ্ঞানের যে শাখা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য এবং ঐ অঞ্চলের মানব সম্প্রদায়ের জীবনযাপনের সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয় (জনসংখ্যা, বসতি, কৃষি, শিল্প, খনিজ, বাণিজ্য, পরিবহন, যোগাযোগ, দুর্যোগ এবং দূষণ ইত্যাদি) নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করে তাকে মানব ভূগোল বলে।

ফরাসি ভূগোলবিদ ভিদাল ডি লা ব্লাশকে (Vidal de la Blache) মানব ভূগোলের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।

অধ্যাপক ড্যাডলি স্ট্যাম্প বলেন, মানব ভূগোল হচ্ছে পৃথিবী আর তার অধিবাসীদের সমাজীয় বর্ণন”।

অধ্যাপক হান্টিংটনের মতে, মাটি, পানি ও বায়ুর প্রভাবে উদ্ভিদ, প্রাণি ও মানুষের জীবনে যে পরিবর্তন আসে তা একস্থানের জীবনযাত্রা থেকে অন্যস্থানের জীবনযাত্রার পার্থক্য নির্দেশ করে। এ সকল বিষয়ে ব্যাখ্যা ও আলোচনা মানব ভূগোলের মূল আলোচ্য বিষয়। “

অর্থনৈতিক ভূগোল | Economic Geography

কৃষিকাজ, পশুপালন, বনজ সম্পদ, খনিজ সম্পদ, ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ভূগোলের যে শাখায় অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাকে অর্থনৈতিক ভূগোল বলে।

জনসংখ্যা ভূগোল | Population Geography

জনসংখ্যার বিভিন্ন বিষয় যেমন লিঙ্গ, জন্মহার, মৃত্যুহার, বয়স কাঠামো, বৈবাহিক অবস্থা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপর জনসংখ্যার প্রভাব প্রভৃতি জনসংখ্যা বিষয়ক বিষয়াদি ভূগোলের যে শাখায় আলোচনা করা হয় তাকে জনসংখ্যা ভূগোল বলে।

আঞ্চলিক ভূগোল | Regional Geography

আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগোলিক বিষয়বস্তু অনুশীলন করা আঞ্চলিক ভূগোলের প্রধান বিষয়।

রাজনৈতিক ভূগোল | Political Geography

রাজনৈতিক বিভাগ, পরিসীমা, বিবর্তন প্রভৃতি ভৌগোলিক বিষয় রাজনৈতিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।

পরিবহন ভূগোল | Transport Geography

পরিবহন ভূগোলে মানুষ ও পণ্যের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর এবং সরকারি-বেসরকারি সকল ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা, সমস্যা ও এর সমাধান সম্পর্কে আলোচনা করে।

নগর ভূগোল | Urban Geography

ভূগোলের যে শাখায় নগরের উৎপত্তি, বিকাশ, নগর ও শহরের শ্রেণিবিভাগ, নগর পরিবেশ, নগরের কেন্দ্রীয় এলাকা, নগর বস্তি, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে তাকে নগর ভূগোল বলে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা | Disaster Management

বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ ও দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস, দুর্যোগ থেকে পরিবেশ ও সম্পদ রক্ষার কৌশল প্রভৃতি বিষয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আলোচ্য বিষয়।

ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থাপনা | Geographic Information System

ভৌগোলিক তথ্য ও উপাত্ত ব্যবহার করে যে প্রক্রিয়ায় ডাটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং মানচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় তাকে বলা হয়, ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থাপনা বা Geographic Information System (GIS)। এটি মূলত ভৌগোলিক তথ্য বিশ্লেষণের জন্য নির্মিত সফ্টওয়্যার।

ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা

ভূগোলের প্রধান আলোচ্য বিষয় স্থানিক বিন্যাস ( Areal arrangement)। এর প্রধান কার্যক্ষেত্র ভূ পৃষ্ঠের উপরিভাগ এবং লক্ষ প্রাকৃতিক সাংস্কৃতিক বিষয়সমূহের বণ্টনগত তারতম্যের বিন্যাস, এর সাথে যুক্ত নিয়ামকসমূহ চিহ্নিত করে এগুলোর প্রভাব ব্যাখ্যা করা এবং তাদের আস্ত সম্পর্ক তুলে ধরা। ভৌগোলিক জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রপঞ্চের (Phenomena) আপাত: বিশৃঙ্খল বিন্যাসের মধ্যে একটি শৃঙ্খল বিন্যাস প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করে। ভূগোল বিবিধের মধ্যে ঐক্য (Unity in Diversity) খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

ভূগোল ও পরিবেশ পাঠের গুরুত্ব, ভূগোল ও পরিবেশের মধ্যকার সম্পর্ক বিষয়ক প্রতিবেদন প্রণয়ন

ভূগোল ও পরিবেশ পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ পৃথিবীর জন্ম এবং এর ভৌত পরিবেশ যেমন পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, সাগর, মহাসাগর, বায়ুমন্ডল এবং মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের প্রায় সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানা যায় ভূগোল অধ্যয়নের মাধ্যমে।

অপরদিকে এই সকল বিষয়ের সাথে মানুষ কীভাবে খাপ খাওয়ায় এবং পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তারও বিস্তারিত জানা যায় ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়টি পাঠের মাধ্যমে। নিম্নে ভূগোল ও পরিবেশ পাঠের গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো।

  • ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়টি অধ্যয়নের মাধ্যমে পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে কীভাবে জীবজগতের উদ্ভব হয়েছে এই বিষয়ক বিজ্ঞান সম্মত ধারণা পাওয়া যায়।
  • পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ অবস্থা, ভূ-ত্বক, ভূ-আলোড়ন, বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ, নদ-নদীর উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ, খনিজ ও শিলার উৎপত্তি প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় ।
  • পৃথিবীর যে কোনো স্থানের প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে জানা যায়।
  • পাহাড়, পর্বত, সাগর, মালভূমি, সমভূমি, মরুভূমি প্রভৃতির উৎপত্তির কারণ ও বৈশিষ্ট্য জানা যায়।
  • ভূ-পৃষ্ঠের পরিবর্তনের বিভিন্ন শক্তিসমূহ যেমন- ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি, বিচূর্ণীভবন, নগ্নীভবন ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।
  • বায়ুমন্ডলের গভীরতা, বায়ুর স্তরবিন্যাস, বায়ুর উপাদান, তাপ, চাপ, আর্দ্রতা বায়ুপ্রবাহের কারণ, বৃষ্টিপাত, আবহাওয়া, জলবায়ু প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। এই সকল বিষয় ভূগোলের জলবায়ুবিদ্যা নামক শাখায় আলোচনা করা হয়।
  • পৃথিবীর মহাসাগরসমূহের অবস্থান, আকৃতি, তলদেশীয় ভূমিরূপ, জোয়ার-ভাটা, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানা যায়।
  • পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশের উদ্ভিদ ও প্রাণি এবং এদের আচার-আচরণ, খাদ্যাভাস ও জীবন ধারার বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানা যায়।
  • কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, বাণিজ্য, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের কী ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে এবং পরিবর্তনের ধারা কীরূপ তা জানা যায়।
  • প্রাকৃতিক ভূগোলের বিভিন্ন নিয়ামকের উপর নির্ভর করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টির কারণ এবং দুর্যোগ পূর্বাভাস নিরূপণ করা যায়। এছাড়া ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণপূর্বক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম প্রণয়ন করা যেতে পারে।
  • পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অনুযায়ী ভূমি ব্যবস্থাপনার কৌশল প্রণয়ন করা যায়।
  • পৃথিবীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সমুদ্র। বিভিন্ন মহাদেশের মধ্যে সমুদ্র পথে যোগাযোগ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান, অবনমন, সমুদ্রের পানির রাসায়নিক গুণাগুন ও লবণাক্ততা নির্ধারণ, সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় ।
  • ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থাপনা (GIS) সফটওয়্যারটি ব্যবহারের মাধ্যমে যে কোনো স্থানের তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে সংগৃহীত তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণপূর্বক সংশিষ্ট স্থানের বিস্তারিত বিষয়াদি মানচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়।
  • প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করা যায়।

সুতরাং বলা যায়, ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়টি পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা এখানে মানুষ এবং মানুষের সাথে সম্পর্কিত প্রাকৃতিক, মানবিক এবং সামাজিক পরিবেশের সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানব ভূগোলের পার্থক্য

প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানব ভূগোলের মধ্যে কিছুটা সাদৃশ্য হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্য দেখা যায়। নিচে প্রাকৃতিক ও মানব ভূগোলের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

প্রাকৃতিক ভূগোলমানব ভূগোল
প্রাকৃতিক ভূগোল প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সেই শাখা যেটি প্রাকৃতিক পরিবেশের মূল অংশগুলো, যেমন- বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, জীবমণ্ডল, ভূমণ্ডলের গঠন ও প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করে।মানবীয় ভুগোল হল ভূগোলের এমন একটি শাখা যা মানব সমাজের আকৃতিগত পদ্ধতি এবং পক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে।
পৃথিবীর জন্ম সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ অবস্থা প্রভৃতি প্রাকৃতিক ভূগোল অধ্যয়নের মাধ্যমে জানা যায়।মানব ভূগোলের মূল কেন্দ্রবিন্দু মানুষ। তাই মানুষের জন্ম, মৃত্যু, বেড়ে উঠা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, সংস্কৃতি অর্থাৎ মানুষের জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয় মানব ভূগোল পাঠের মাধ্যমে জানা যায়।
প্রাকৃতিক বিশ্ব সম্পর্কিত জ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্র বোঝাতে প্রাকৃতিক ভূগোল শব্দটি ব্যবহার করা হয়।মানবিক ভূগোলে পৃথিবীপৃষ্ঠে মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা, স্থানিক পার্থক্য এবং এই পার্থক্যের পেছনে প্রাকৃতিক প্রভাবকের ভূমিকা পর্যালোচনা করা হয়।
ভূমিরূপ পরিবর্তনকারী প্রক্রিয়াসমূহ যেমন- নগ্নীভবন, বিচূর্ণীভবন, নদীর কাজ, হিমবাহের কাজ, মরুভূমির প্রধান ভূমিরূপ সম্পর্কে প্রাকৃতিক ভূগোল অধ্যয়নের মাধ্যমে জানা যায়।পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের অঞ্চলভিত্তিক বর্ণনা ও ব্যাখ্যা, জনসংখ্যার অভিগমন, অভিগমনের কারণ, শ্রেণিবিভাগ প্রভৃতি মানব ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
প্রাকৃতিক ভূগোলে পৃথিবীর মহাসাগরসমূহের অবস্থান, আকৃতি, তলদেশের অবস্থা, জোয়ার ভাটা, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে।মানুষ এবং মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পূর্বশর্ত পরিবহন ও যোগাযোগ। মানব ভূগোলে পরিবহন ও যোগাযোগের (সড়কপথ, রেলপথ, নৌ ও সমুদ্রপথ, বিমানপথ) বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানব ভূগোলের পার্থক্য

ভূগোলের প্রধান কাজ কি

ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্যের সঠিক, সুবিন্যস্ত ও যুক্তিসঙ্গত বর্ণনা ও ব্যাখ্যা প্রদান করা ভূগোলের প্রধান কাজ।

  • ভূগোলবিদরা পৃথিবীর পৃষ্ঠের ভৌত বৈশিষ্ট্য এবং এটি জুড়ে ছড়িয়ে থাকা মানব সমাজ উভয়ই অন্বেষণ করতে পারেন।
  • ভূগোলবিদরা এও পরীক্ষা করে যে কিভাবে মানব সংস্কৃতি প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে এবং যেভাবে অবস্থান এবং স্থানগুলি মানুষের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • ভূগোল আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে জিনিসগুলি কোথায় পাওয়া যায় এবং কেন সেগুলি সেই জায়গাগুলিতে উপস্থিত রয়েছে

মানবিক ভূগোলের জনক কে

মানবিক ভূগোলের জনক হলেন ভিদাল দা লা ব্লাশ।

পল ভিডাল ডি লা ব্লাস (২২ জানুয়ারি ১৮৪৫ – ৫ এপ্রিল ১৯১৮) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ফ্রেঞ্চ ভূগোলবিদ। তাকে বিবেচনা করা হয় আধুনিক ফরাসি ভূগোল এবং মানবিক ভূগোলের জনক হিসেবে।

ভূগোল এর জনক কে

ভূগোলের জনক হলেন ইরাটস থেনিস ৷

সাইরিনের ইরাথোস থেনিস বা এরাটোস্থেনিস (খ্রিষ্টপূর্ব ২৭৬ – খ্রিষ্টপূর্ব ১৯৫/১৯৪) ছিলেন একজন গ্রিক গণিতজ্ঞ, ভূগোলবিদ, কবি, জ্যোতির্বিদ, এবং সঙ্গীত তত্ত্ববিদ। তিনি ছিলেন জ্ঞানপিপাসু ব্যক্তি, যিনি আলেকজেন্দিয়া লাইব্রেরী-তে কেবলমাত্র জ্ঞানার্জনের জন্য কর্মরত ছিলেন। তিনি জ্ঞানের অন্যতম শাখা ভূগোল এবং এর কতিপয় পরিভাষা উদ্ভাবন করেন৷

আধুনিক ভূগোলের জনক কে

আধুনিক ভূগোলের জনক আলেকজান্ডার ভন হামবোল্ট।

ফ্রেডরিখ উইলহেলম হেনরিখ আলেকজান্ডার ভন হামবোল্ট (14 সেপ্টেম্বর 1769 – 6 মে 1859) ছিলেন একজন জার্মান পলিম্যাথ, ভূগোলবিদ, প্রকৃতিবিদ, অনুসন্ধানকারী এবং রোমান্টিক দর্শন ও বিজ্ঞানের প্রবক্তা। তিনি ছিলেন প্রুশিয়ান মন্ত্রী, দার্শনিক, এবং ভাষাবিদ উইলহেম ফন হামবোল্টের (1767-1835) ছোট ভাই। বোটানিক্যাল ভূগোলের উপর হাম্বোল্টের পরিমাণগত কাজ জৈব ভূগোল ক্ষেত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিল, যখন তার দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতিগত ভূ-পদার্থগত পরিমাপের সমর্থন আধুনিক ভূ-চৌম্বকীয় এবং আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের পথপ্রদর্শক।

ভারতীয় ভূগোলের জনক কে

জেমস রেনেলকে ভারতীয় ভূগোলের জনক বলা হয়, এবং সমুদ্রবিদ্যায় তার অগ্রণী কাজের জন্য তাকে সমুদ্রবিদ্যার জনক বলা হয়।

আরো পড়তে: ভূগোলের জনক কে ?

ভূগোলের পরিধি ব্যাখ্যা কর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ, নতুন নতুন উদ্ভাবন ও আবিষ্কার, চিন্তা-ধারণার বিকাশ, সমাজের মূল্যবোধের পরিবর্তন ইত্যাদি ভূগোলের পরিধিকে আরও বিস্তৃত করেছে। এখন নানান বিষয় যেমন- ভূমিরূপবিদ্যা, আবহাওয়াবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, সমাজবিদ্যা, সমুদ্রবিদ্যা, মৃত্তিকাবিদ্যা, অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি ভূগোল বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

ভুগোলের শাখা

আরো পড়তে: ভূগোলের পরিধি ও শাখা

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | ভূগোল ও পরিবেশ

Q1. ভূগোল কী

Ans – স্থান ও সময়ের প্রেক্ষিতে পরিবেশ ও মানুষের মিথস্ক্রিয়া অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণ করাকেই ভূগোল বলে।

Q2. ভূগোল ও পরিবেশ কাকে বলে

Ans – ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যায় অঞ্চল ও অঞ্চলায়নের ধারণা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভূগোল মানুষ ও পরিবেশের সম্পর্ক সময় ও স্থানের সাপেক্ষে আলোচনা করে অর্থাৎ এখানে কোন স্থানের বিভিন্ন ভৌগলিক উপাদান, অনুষঙ্গ, বিভিন্ন পরিবর্তন ও রূপান্তর সময় বা কালের বিবেচনায় ভূগোলে অধ্যায়ন করা হয়।

ভূগোল: অধ্যাপক ডাডলি স্ট্যাম্পের মতে পৃথিবী ও এর অধিবাসীদের বর্ণনাই হল ভূগোল।

পরিবেশ: আমাদের চারপাশের সকল জীব ও জড় উপাদানের সর্বসমেত প্রভাব সংঘটিত ঘটনাকে পরিবেশ বলে।

Q3. ভূগোল শব্দের অর্থ কি

Ans – মহাবিশ্বের পৃথিবী নামক গ্রহে আমরা বাস করি। মানুষের আবাসস্থল হিসেবে পৃথিবীর বর্ণনা হলো ভূগোল। ইংরেজি শব্দ “Geography” থেকে ভূগোল শব্দটি এসেছে। ভূগোল বা ‘Geography’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন প্রাচীন গ্রীসের ভূগোলবিদ ইরাটসথেনিস। ‘Geo’ ও ‘Graphy’ এই দুটি শব্দ মিলে হয়েছে ‘Geography’। ‘Geo’ শব্দের অর্থ “ভূ” বা পৃথিবী এবং ‘graphy’ শব্দের অর্থ বর্ণনা। সুতরাং ‘Geography’ শব্দটির অর্থ পৃথিবীর বর্ণনা।

Q4. ভূগোল এর ইংরেজি কি

Ans – ভূগোলের ইরেজি প্রতিশব্দ হচেছ ‘Geography’ । যেখানে ‘Geo’ শব্দের অর্থ হলো “ভূ” বা পৃথিবী এবং ‘graphy’ শব্দের অর্থ হলো বর্ণনা। তাই, ‘Geography’ শব্দটির অর্থ হলো পৃথিবীর বর্ণনা।

Q5. ভূগোল শব্দটি প্রথম কে ব্যবহার করেন

Ans – ভূগোল গ্রিক জ্ঞানবেত্তা এরাতোস্থেনেস সর্ব প্রথম ভূগোল শব্দটি ব্যবহার করেন।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।