স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের ধারণাগুলি ছিল ফরাসি বিপ্লবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার। ফরাসি বিপ্লবের আলোকে উক্তিটি ব্যাখ্যা কর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

WBBSE History, Itihas | Farashi Biplob | Question Answer

নিম্নলিথিত প্রশ্ন এবং তার যথাযত সমাধান গুলি অতিসংক্ষিপ্ত (VSA), এবং ছোট (SA), সকল প্রশ্নের ক্ষেত্রে উত্তর সমাধান হিসাবে পাঠ করা যেতে পারে।

প্রশ্নোত্তর এবং সমাধান

স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের ধারণাগুলি ছিল ফরাসি বিপ্লবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার। ফরাসি বিপ্লবের আলোকে উক্তিটি ব্যাখ্যা কর

উত্তর:

  • তৃতীয় এস্টেটের লোকেরা সকলের জন্য স্বাধীনতা এবং সুযোগের ভিত্তিতে একটি সমাজ দাবি করেছিল।
  • 1791 সালে রাজার ক্ষমতা সীমিত করার লক্ষ্যে জাতীয় পরিষদ গঠিত হয়েছিল।
  • 1791 সালে প্রণীত সংবিধানটি মানব ও নাগরিকদের অধিকারের ঘোষণা দিয়ে শুরু হয়েছিল।
  • 1789 সালে সেন্সরশিপ বিলুপ্ত করা হয়

ফরাসি বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল

ফরাসি বিপ্লবের কারণ

১) সামাজিক কারণ:-

ফরাসি সমাজের ওই সময় প্রধান তিনটি শ্রেণী বর্তমান ছিল। যথা- প্রথম শ্রেণি (যাজক গন), দ্বিতীয় শ্রেণি (অভিজাত বর্গ), তৃতীয় শ্রেণি (ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক)

(ক) প্রথম শ্রেণি:- ধর্মযাজক সম্প্রদায় ফ্রান্সের সমাজ এর প্রথম শ্রেণীভূক্ত ছিলেন। এরা ছিলেন সংখ্যায় ফরাসি জনগণের 1 % এরও কম‌। অথচ এদের দখলে ছিল ফ্রান্সের মোট জমির 10%। এই জমির জন্য এরা রাজাকে কোনো করও দিতেন না। এরমধ্যে আবার উচ্চশ্রেণীর যাজক ছিলেন 139 জন। এই উচ্চশ্রেণীর যাজকরা ভোগ ও বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। ফলে নিম্ন যাজকেরাও পুরাতনতন্ত্রের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিলেন। কারণ নিম্ন যাজকরা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল।

(খ) দ্বিতীয় শ্রেণি:- ফরাসি সমাজের অভিজাতরা ছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত। এরা ছিল ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার 1.5%। অথচ ফ্রান্সে এদের জমির পরিমাণ ছিল 20%। এরা জমির জন্য সরকারকে কোনো প্রত্যক্ষ কর দিতেন না। আবার সরকারের সামরিক ও অসামরিক বিভাগের উচ্চপদে এদের একচেটিয়া অধিকার ছিল।

(গ) তৃতীয় শেণী:- ফরাসি সমাজের ব্যবসায়ী, কৃষক-শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী সর্বহারা সকলেই ছিলেন তৃতীয় শ্রেণী ভুক্ত। এদের মোট জনসংখ্যা ছিল ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার 97% এর বেশি। ফ্রান্সের করের বোঝার বেশিরভাগটাই এদের বহন করতে হতো। এই কারণে তৃতীয় শ্রেণী ভুক্ত মানুষেরা তাদের প্রতি সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মানুষের শোষণ, বৈষম্য, নিপীড়নের প্রতিবাদে বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিল।

২) অর্থনৈতিক কারণ:-

অর্থনৈতিক দুরবস্থাও ফরাসি বিপ্লবের পথকে প্রশস্ত করেছিল।

(ক) দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি:- ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে মুদ্রাস্ফীতির জন্য নিত্যপ্রযজনীয় জিনিসপত্রের দাম প্রায় 65 % বৃদ্ধি পেয়েছিল, কিন্তু জনগণের আয় সেই পরিমাণে বাড়েনি। ফলে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল।

(খ) রাজার কর আরোপের চেষ্টা:- রাজপরিবারের বিলাসিতা, প্রচুর অর্থ ব্যয়, রাজকোষের অর্থ শূন্যতা প্রভৃতি কারণে ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই অর্থ সংগ্রহ করার জন্য সচেষ্ট হয়েছিলেন। এই অর্থ সংগ্রহের জন্য তিনি দরিদ্র তৃতীয় শ্রেণীর ওপর নতুন নতুন করারোপ করতে থাকেন, যার ব্যয় ভার বহন করা সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব ছিল। ফলে মানুষ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।

৩) রাজনৈতিক কারণ:-

ফরাসি বিপ্লব ছিল প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে বুরবোঁ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

(ক) বুরর্বো রাজাদের স্বৈরাচারী নীতি:-ফ্রান্সের বুরর্বো বংশের রাজারা ছিলেন চরম স্বৈরাচারী। রাজা-নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে প্রচার করতেন। রাজা চতুর্দশ লুই বলেছিলেন, ‘ আমিই রাষ্ট্র ‘। রাজা ষোড়শ লুই বলেছিলেন, ‘ আমার ইচ্ছাই আইন’ । রাজারা প্রজাদের মতামত আগ্রাহ্য করে স্বৈরাচারী শাসন চালাতেন। ফলে প্রজারা রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল।

(খ) রাজাদের ভ্রান্ত বিদেশনীতি:- ফ্রান্সের রাজা পঞ্চদশ লুই অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার সংক্রান্ত যুদ্ধ ও সপ্তবর্ষের যুদ্ধের পরাজিত হন। এর ফলে ভারত ও আমেরিকায় ফরাসি উপনিবেশ হাতছাড়া হয়। রাজা ষোড়শ লুই আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দিলে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক শোচনীয় হয়ে পড়ে। অপরদিকে বিদেশনীতির ব্যর্থতায় ফরাসি রাজতন্ত্র মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। ফলে জনগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল।

উপরিক্ত কারণগুলি ফরাসি জনগণকে বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তবে নেপোলিয়নের ভাষায় – ” অহমিকাই বিপ্লবের মূল কারণ, স্বাধীনতা ছিল অজুহাত মাত্র।”

ফরাসি বিপ্লবের ফলাফল

1789 খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লব পৃথিবীর ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব অপরিসীম।

১) জাতীয়তাবাদের আদর্শ:- ফরাসি বিপ্লবের যে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছিল তা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে প্রভাবিত করেছিল। এই আদর্শের অনুপ্রেরণায় জার্মানি, ইতালি, গ্রীস প্রভৃতি দেশে জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

২) সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শ:-ফরাসি বিপ্লবের মূল আদর্শ ছিল- সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা। ফ্রান্সের গণ্ডি ছাড়িয়ে কালক্রমে এই আদর্শ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছিল।

৩) প্রগতিশীল চিন্তার বিস্তার:-ফরাসি বিপ্লবের ফলে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছিল। রুশো, ভলতেয়ার, মন্তেস্কু প্রমুখ ফরাসি দার্শনিকের প্রগতিশীল চিন্তা সমগ্র বিশ্বে সমাদৃত হয়।

৪) গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রসার:-ফরাসি বিপ্লবের ফলে গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রসার ঘটেছিল। এই বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে স্বৈরাচারী রাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটে এবং গণতান্ত্রিক শাসন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মৌলিক অধিকার, বাক্ স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রভৃতি গণতান্ত্রিক আদর্শ গুলির দ্বারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জনগণ অনুপ্রাণিত হয়েছিল।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

আরো বিশদে পড়ার জন্য

অল ইন ওয়ান ইতিহাস রেফারেন্স – ক্লাস – IX

অল ইন ওয়ান ইতিহাস রেফারেন্স

ক্লাস – 9 এর জন্য.





FAQ’s | স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের ধারণা

ফরাসি বিপ্লবের কারণ

১) সামাজিক কারণ
২) অর্থনৈতিক কারণ
৩) রাজনৈতিক কারণ


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।