জাতি কি
জাতি হল এমন এক জনসমাজ যা ক্রমবিকাশের পথে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। অর্থাৎ জাতি জনসমাজেরই চূড়ান্ত রূপ। জনসমাজ বলতে মোটামুটি একই ধরনের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত জনসমষ্টিকে বোঝান হয়। আর জাতীয় জনসমাজ বলতে সম-ভাবনায় ভাবিত সেই জনসমাজের কথা বলা হয় যা তার স্বতন্ত্র সত্তা সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন হয়েছে। সুতরাং জাতীয় জনসমাজ (Nationality) জনসমাজেরই (People) পরবর্তী উন্নততর পর্যায়।
জাতীয় জনসমাজের স্বাতন্ত্র্যকামিতা প্রসারিত হয়ে যখন পৃথক রাষ্ট্র ও সরকার গঠনের দাবিতে দানা বাঁধে তখন জাতির (Nation) উদ্ভব হয়। জনসমাজ জাতীয় স্তরে এসে পৌঁছায় তখনই যখন তারা তাদের চিন্তা-ভাবনা ও বৈশিষ্ট্যগুলিকে তাদের নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী পৃথকভাবে রূপদানের জন্য নিজস্ব রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে অর্থাৎ রাষ্ট্র ক্ষমতা হাতে পেলে এই জনসমষ্টি নিজেদের স্বতন্ত্র সত্তা ও বৈশিষ্ট্যের বিকাশ সাধন করতে এবং তার জাতীয়তাবোধকে বাস্তবে রূপদান করতে পারে। এই উপলব্ধি হল রাজনীতিক চেতনার উপলব্ধি।
সুতরাং পৃথক রাষ্ট্র গঠনের যে আন্দোলন বা অধিকার লাভ তাই-ই হল জাতীয় জনসমাজের জাতিতে উত্তরণের পর্যায়। নিজ রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের মাধ্যমেই জাতি তার পরিপূর্ণতা লাভ করে।
ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকেই ‘জাতি’ (Nation) শব্দটির ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। বলা হয় যে, ‘নাসসিও’ (Nascio) এই লাতিন শব্দটি থেকে ইংরেজী ‘Nation’ শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট লাতিন শব্দটির অর্থ হল জন্মান। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার যে, ‘নাসিও’ (Natio) এই শব্দটির অর্থ হল জন্মগতভাবে বা জন্মগত বিচারে ঐক্যবদ্ধ এক মানবগোষ্ঠী। সুতরাং প্রচলিত মূলগত অর্থের বিচারে ‘জাতি’ কথার মানে হল প্রজননগত বা বংশগত বিচারে একটি জনগোষ্ঠী। কিন্তু এই জনগোষ্ঠী কোন রকম রাজনীতিক তাৎপর্যহীন। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকের আগে অবধি ‘জাতি’ শব্দের কোন রকম রাজনীতিক ব্যঞ্জনা ছিল না। কিন্তু অতঃপর ‘জাতি’ শব্দটির সঙ্গে রাজনীতিক ধারণা সংযুক্ত হয়। এরপর থেকে ব্যক্তিবর্গ এবং গোষ্ঠীসমূহের শ্রেণীকরণ করা হয় জাতীয়তার বিচারে।
লর্ড ব্রাইস (Bryce) ও গিলক্রিস্ট (R. N. Gilchist): লর্ড ব্রাইস বলেছেন: “জাতি হল রাষ্ট্রনীতিকভাবে সংগঠিত বহিঃশাসন হতে মুক্ত অথবা মুক্তিকামী একটি জনসমাজ (“…a nation is a nationality which has organised itself into a political body either independent or desiring to be independent.”)। গিলক্রিস্ট-এর মতানুসারে, জাতি বলতে রাষ্ট্রাধীন এক সুগঠিত জনসমাজকে বোঝায়। তিনি বলেছেন: “Nation…is the state plus something else, the state looked at from certain point of view, viz., that of the unity of the people organised into one state.”
হায়েস ও গার্ণার: বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা জাতি ও জাতীয় জনসমাজের সূক্ষ্ম পার্থক্য স্বীকার করেন। তাঁরা রাজনীতিক সচেতনতার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। বস্তুত রাজনীতিক চেতনার গভীরতাই জাতিকে জাতীয় জনসমাজ থেকে স্বতন্ত্র করে। হায়েস (Hayes)-এর মতে একটি জাতীয় জনসমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সার্বভৌম স্বাধীনতা অর্জন করলে জাতিতে পরিণত হয়। তিনি বলেছেন: “A nationality by acquiring unity and sovereign independence becomes a nation.” গার্ণারের অভিমত অনুসারে জাতি বলতে বোঝায় রাষ্ট্রনীতিকভাবে সংগঠিত এক জনগোষ্ঠীকে। কেবলমাত্র আত্মিক বা সাংস্কৃতিক সূত্রে আবদ্ধ জনগোষ্ঠীকে জাতি বলা হয় না।
জাতি কাকে বলে
জাতি বলতে বোঝায় এমন এক রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন জনসমাজ যারা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অধিবাসী।
খন একটি জনসমষ্টি ভাষাগত, ধর্মগত, কৃষ্টিগত, ঐতিহ্যগত এবং রাজনৈতিক ঐক্য বজায় রেখেএকটি নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডে বসবাস করে তখন তাদেরকে একটি জাতি বলে অভিহিত করা হয়। জাতি হলাে এমন এক জনসমাজ যা ক্রমবিকাশের পথে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। অর্থাৎ জাতি হলাে জনসমাজেরই চূড়ান্ত রূপ। নিজ রাষ্ট্রগঠনের মাধ্যমেই জাতি তার পরিপূর্ণতা লাভ করে ।
জাতির সংজ্ঞা দাও
জাতির সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তাদের মত বিভিন্নভাবে প্রকাশ করেছেন। তা নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলাে-
- অধ্যাপক ম্যাকাইভার (Maclver) বলেন, “জাতি হলাে ঐতিহাসিক পরিস্থিতির দ্বারা সৃষ্ট, আধ্যাত্ম চেতনার দ্বারা সমর্থিত, একত্রে বসবাস করার সংকল্পবদ্ধ সম্প্রদায়গত মনােভাব সম্পন্ন জনসমাজ, যারা নিজেদের জন্য সাধারণ সংবিধান রচনা করতে চায় ।”
- জন স্টুয়ার্ট মিল (John Stuart Mill) বলেন, একটি মানবসমষ্টির মধ্যে এমন পারস্পরিক সহানুভূতির বন্ধন বিরাজমান, যা অন্যদের মাঝে নেই। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পারস্পরিক সহযােগিতা করতে যতটা ইচ্ছুক হয়, অন্যকোনাে মানুষের সাথে ততখানি হতে পারে না। তারা একই সরকারের অধীনে বসবাস করতে চায়। আর এরূপ মানবসমষ্টিকে জাতি বলা যেতে পারে।
- লর্ড ব্রাইস (Lord Bryce) বলেন, “জাতি হচ্ছে জাতীয়তাবােধে উদ্দীপ্ত এবং রাজনৈতিকভাবে সুসংগঠিত এমন এক জনসমষ্টি যারা হয় স্বাধীন নতুবা স্বাধীনতাকামী।” “A nation is a nationality which has organized itself into a political body either independent or desiring to be independent.”
উপযুক্ত সংজ্ঞার ভিত্তিতে বলা যায় যে, গভীরভাবে ঐক্যবদ্ধ জনসমাজ হলাে জাতীয় জনসমাজ এবং রাষ্ট্রনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত জাতীয় জনসমাজ হলাে জাতি। অর্থাৎ ‘Nation= Nationality+Political unity’ |
জাতির বৈশিষ্ট্য, জাতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো
জাতির নানাবিধ ধারণার পর্যালোচনা সাপেক্ষে এর কতকগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা যায় । বৈশিষ্ট্যগুলির যথাযথ পর্যালোচনার মাধ্যমে জাতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা লাভ করা সম্ভব হয় । বিশেষত ভারতীয় জাতিভেদ প্রথার জটিলতার গভীরতা উন্মোচনের জন্য এর বৈশিষ্ট্যগুলি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা প্রয়োজন ।
i ) বংশানুক্রমিক : জাতি ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে বংশানুক্রমিতা উল্লেখযোগ্য । জাতির সদস্যপদ বংশানুক্রমিকভাবে আরোপিত হয় অর্থাৎ জাতি জন্মভিত্তিক । জন্মের ভিত্তিতে আরোপিত মর্যাদা এর সদস্যরা আজীবন বহন করে চলে । ব্রাক্ষ্মণের ছেলে ব্রাক্ষ্মণ , কুমোরের ছেলে কুমোর হবে । সুতরাং বংশানুক্রমিতা জাতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ।
ii) অন্তবৈবাহিক : জাতিকে অন্তবৈবাহিক গোষ্ঠী হিসাবেও চিহ্নিত করা হয় । অন্তর্বিবাহ মেনে চলে এমন জনগোষ্ঠী হ’ল জাতি । এই সূত্রে কোন জাতির সদস্য অন্য জাতির সদস্যকে বিয়ে করতে পারে না । অর্থাৎ স্বজাতির মধ্যেই বিয়ে হতে হবে ।
iii) সপাঙক্তেয়তা : সপাঙক্তেয়তা জাতি ব্যবস্থার আর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য । সাধারণত খাদ্য গ্রহণ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ , যেমন জল – চল , জল – অচল প্রভৃতি ক্ষেত্রে যে সকল রীতিনীতি প্রচলিত আছে তারই সংক্ষিপ্ত রূপ সম্পাক্তেয়তা । প্রতিটি জাতি তার অপরিহার্য দিক হিসাবে সপাঙ্ক্তেয়তাকে মেনে চলে । এই সূত্রে উচ্চবর্ণের মানুষ নিচু জাতির ছোঁয়া বা রান্না করা জিনিস খাবে না । মানে এগুলি করার অর্থ হল জাতিচ্যুতি । তবে জাতিগত দৃষ্টিকোণ থেকে সপাঙক্তেয়তার নানাবিধ রীতিনীতি প্রচলিত আছে । অঞ্চলভেদে এগুলি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা হয় ।
iv) বৃত্তি বিভাগ : জাতিপ্রথার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসাবে বৃত্তি বিভাগও সবিশেষ উল্লেখ্য । জাতিপ্রথার মধ্যে যে সকল ভিত্তি আছে তার অন্যতম হল বৃত্তি । এক্ষেত্রে অধিকাংশ জাতিই বৃত্তিভিত্তিক , জাতি নির্দেশিকা মতে এক জাতির পেশা অন্য জাতি নিতে পারবে না । সমাজবিজ্ঞানীর মতে প্রত্যেক জাতির আলাদা আলাদা পেশা নির্ধারণের মধ্য দিয়ে শ্রমবিভাগ প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছিল । এর পাশাপাশি বিশেষীকরণ প্রক্রিয়াও উৎপাদনগত দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করেছিল । এইভাবে জাতিগত বিশেষ বৃত্তি ধারণ এবং বিশেষীকরণ প্রক্রিয়ার উন্নয়ন বংশাক্রমিক পর্যায়ে অনুসৃত হয় ।
v ) বিধিবিধান : প্রত্যেক জাতির বিধিবিধান থাকে , যা একান্ত নিজস্ব – স্বতন্ত্র । এগুলি প্রতিপালনের ক্ষেত্রে জাতিগুলি অত্যন্ত সচেতন এবং যত্নশীল থাকে । জন্ম – বিয়ে – মৃত্যু ইত্যাদি সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে এগুলি নিষ্ঠার সঙ্গে পরস্পরাগতভাবে প্রতিপালিত হয় । এগুলি আমান্য করলে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে শাস্তিবিধানের ব্যবস্থা করা হত । অধ্যাপক দুবে মনে করেন , কোন জাতি কতটা ‘ শুদ্ধ ’ বা ‘ অশুদ্ধ ’ তার ওপরেই জাতিগুলির মধ্যে সামাজিক আদান প্রদানের বিষয়টি নির্ভর করে । তাছাড়া যে জাতির অবস্থান সমাজে যত উঁচুতে , ‘ শুদ্ধতা ’ বজায় রাখার লক্ষ্যে তাদের আচার সংস্কার তত জটিল ।
vi ) সামাজিক স্তরবিন্যাসের : সামাজিক স্তরবিন্যাসের ( Social stratification ) গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসাবে জাতি ব্যবস্থাকে নির্দেশ করা যায় । জাতি ব্যবস্থায় বংশানুক্রমিক মর্যাদার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজ ক্রমশ ক্রমোচ্চ শ্রেণীবিন্যস্ত ( hicnanchy ) হয়ে যায় । এই উচ্চনীচ তারতম্যের সঙ্গে জাতিগত পেশার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ , পেশাগত ‘ শুদ্ধতা ’ ‘ অশুদ্ধতা ’ বিষয়টি বিশেষ করে । এর সমান্তরালে মর্যাদাটিও সম্পৃক্ত । এই বিচারে ব্রাক্ষ্মণের মর্যাদা সমাজে শ্রেষ্ঠ বলে দাবী
vii ) জীবনধারা ও সংস্কৃতিগত স্বাতন্ত্র্যতা : বিভিন্ন জাতির মধ্যে জীবনধারা ও সংস্কৃতিগত স্বাতন্ত্র্যতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য । অধ্যাপক গোবিন্দ সদাশিব ঘ্যুরে ( G. S. Ghurye ) বলেন , বৃহত্তর সমাজের অংশ হয়েও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগুলি তাদের নিজস্ব সামাজিক জগতের মধ্যে অনেকটাই সম্পূর্ণ । অন্তর্বৈবাহিক গোষ্ঠী হিসাবে জাতিগুলি এক একটি স্বতন্ত্র জীবনধারার মধ্যে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে ।
viii) জাতিভেদ প্রথায় সামাজিক সচলতার পথ রুদ্ধ : জাতিভেদ প্রথায় সামাজিক সচলতার পথ রুদ্ধ । জন্মসূত্রে নির্ধারিত জাতিগত অবস্থান অপরিবর্তিত থাকে । জাতি নির্দেশিকার বাইরে কোন কিছুতেই অমান্য করার মানেই হল জাতিচ্যুত হওয়া । মানুষের সঙ্গে জাতির সম্পর্ক অপরিবর্তিত থাকে । সংস্কৃতায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতিগত মর্যাদার পরিবর্তন / উন্নতি হওয়া সম্ভব । তবে জাতিগত প্রশ্নে তিনি কর্মবাদের কথা উল্লেখ করে বলেন যে , কর্মবাদের ধারণা থেকে । একজন হিন্দুকে এই শিক্ষাই দেয় যে , সে একটি বিশেষ জাতিতে জন্মগ্রহণ করেছে । কেননা ঐ জাতিতে জন্মগ্রহণের মত যোগ্যতাই তার ছিল । এই যোগ্যতা আমৃত্যু তার কৃতকর্মের ফলে অর্জিত হয়েছে ।
জাতি গঠনের উপাদান কি কি
একই ধরনের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত একটি জনসমষ্টি কি কি শক্তি বা উপাদানের ভিত্তিতে কালক্রমে জাতিতে পরিণত হয় তা একটি গুরুত্বপূর্ণ আলােচনার বিষয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন উপাদানের কথা বলেছেন। উপাদানগুলাের আপেক্ষিক গুরুত্ব নিয়ে মতভেদ থাকলেও নিম্নলিখিত উপাদানগুলাে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
(১) ভৌগােলিক সান্নিধ্যঃ একই ভৌগােলিক সীমানায় বহুদিন ধরে বেশ কিছুসংখ্যক লােক বসবাস করতে থাকলে অধিবাসীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই এক গভীর একাত্মবােধের সৃষ্টি হয়। একই অঞ্চলে বসবাসের ফলে তাদের মধ্যে যােগাযােগ ও আদান-প্রদান সহজ হয়। ফলে অধিবাসীদের মধ্যে ঐক্যবােধ জাগ্রত হয়। কিন্তু ভৌগােলিক নৈকট্য ছাড়াও জাতি গড়ে ওঠা সম্ভবপর। যেমন-ইহুদীরা প্যালেস্টাইনে আবাসভূমি স্থাপনের পূর্বে বিভিন্ন দেশে বসবাস করে ও তারা একটি জাতীয় জনসমাজ বলে পরিগণিত হতাে।
(২) কুলগত ঐক্যঃ যখন কোনাে জনসমষ্টি বিশ্বাস করে যে, তাদের শিরা-উপশিরায় একই রক্ত প্রবাহিত এবং তাদের আকৃতিগত বৈশিষ্ট্য অভিন্ন তখনই তাদের মধ্যে জাতীয়তাবােধের সৃষ্টি হয়। বংশগত ঐক্য জাতি সষ্টির সহায়ক উপাদান হলেও অত্যাবশ্যক নয়। কারণ মার্কিন জাতি বিভিন্ন জাতির সংমিশ্রণে উদ্ভূত। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘জাতি মিশ্রণ হয় নাই ইউরােপে এমন দেশ নাই।’
(৩) ধর্মগত ঐক্যঃ ধর্মগত ঐক্য অনেক সময় জাতি গঠনের সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করে। একই ধর্মের লােকজন নিজেদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা মনে করে। ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে সহজেই ঐক্যবদ্ধ করা যায়। ভারতবর্ষে মুসলমানরা ধর্মকে কেন্দ্র করে প্রথমে জাতীয় জনসমাজ ও পরে জাতিতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু দেখা যায়, ধর্মগত ঐক্য ছাড়াও অনেক জাতি গঠিত হয়। যেমন-ভারত, চীন ইত্যাদি।
(৪) অর্থনৈতিক সমস্বার্থঃ অর্থনৈতিক স্বার্থ জনগণকে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করে জাতীয়তাবােধে উদ্বুদ্ধ করে। অভিন্ন অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে জনগণ বিপ্লবের শামিল হয়েছে এমন উদাহরণ ইতিহাসে বিরল নয়। তবু জাতি গঠনের ব্যাপারে এই উপাদানটিও যথেষ্ট নয়। তা যদি হতাে, তাহলে পরস্পরবিরােধী অর্থনৈতিক স্বার্থযুক্ত শ্রমিকশ্রেণী ও পুঁজিপতিদের একই রাষ্ট্রে বসবাস করা সম্ভবপর হতাে না।
(৫) ভাষাগত ঐক্যঃ একই ভাষাভাষী জনগণের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান সহজেই হয়। মানুষের মনের ভাবসমূহ ভাষার মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। ভাষাগত সমতার জন্য জনগণের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই একাত্মবােধের সষ্টি হয়। কিন্তু দেখা যায় যে, ভাষাগত ঐক্য জাতিগঠনের অপরিহার্য উপাদান নয়। কারণ গ্রেট ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে একই ভাষা প্রচলিত থাকার পরেও তারা পৃথক পৃথক জাতীয়তাবােধে উদ্বুদ্ধ।
(৬) রাষ্ট্রনৈতিক ঐক্যঃ দীর্ঘদিন ধরে কোনাে জনসমষ্টি একই সরকারের শাসনাধীনে থাকলে তাদের মধ্যে ঐক্যবােধ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটিও জাতি সৃষ্টির অপরিহার্য উপাদান নয়। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারের অধীনে বসবাস করা সত্ত্বেও ইহুদী জনসমাজ জাতি সৃষ্টিতে বাধাপ্রাপ্ত হয়নি।
(৭) দ্বন্দ্ব-কলহের মধ্যকার ঐক্যবােধঃ জাতি গঠনের আর একটি উপাদান হলাে দ্বন্দ্ব ও কলহের মধ্য থেকে ঐক্যবােধের সৃষ্টি হওয়া। বিভিন্ন সামন্তবাদী ও বংশগত দ্বন্দ্ব-কলহ ইউরােপে জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার বিকাশে প্রভূত সাহায্য করেছিল। এসব দ্বন্দ্বের ফলে গােষ্ঠীসমূহের মধ্যে ঐক্য গড়ে ওঠে যা জাতি গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষ কাজ করে।
(৮) একই মানসিকতাবােধঃ একই মানসিকতাবােধ সম্পন্ন মানুষ জাতি গঠনের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ তাদের সকলেই একই মানসিকতা লালন করে এবং তা বাস্তবায়ন করার জন্য জাতি গঠন করে। তাই একই মানসিকতাবােধ জাতি গঠনের অন্যতম উপাদান হিসেবে স্বীকৃত।
(৯) অবস্থানগত ঐক্যঃ কোনাে স্থানে কোনাে জনগােষ্ঠী দীর্ঘদিন অবস্থান করার ফলে তাদের মধ্যে জায়গা বা ভূমির প্রতি আলাদা টান লক্ষ্য করা যায়। কারণ এতে তারা পরস্পর কাছাকাছি আসে এবং এক সময় জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এভাবে জাতি গঠনের উপাদানের নিদর্শন লক্ষ্য করা যায়।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, উপযুক্ত উপাদানগুলাে জাতি গঠনের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এগুলাের মধ্যে গুরুত্বের তারতম্য রয়েছে। উপাদানগুলাের মধ্যে ভাবগত ঐক্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ; অন্যান্য উপাদান না থাকলেও জাতি গঠন সম্ভব। কারণ জাতীয়তাবাদ মূলত এক আত্মগত, ভাবগত এবং অনুভূতিগত বিষয়।
জাতি কয় প্রকার ও কি কি
“জাতি” ধারণাটি মানুষের জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে অর্থপূর্ণ শ্রেণীবিভাগের পরিবর্তে একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গঠন। জৈবিক ও জেনেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে, শুধুমাত্র একটি মানব প্রজাতি আছে, হোমো স্যাপিয়েন্স, এবং আমাদের প্রজাতির মধ্যে জেনেটিক বৈচিত্র অবিচ্ছিন্ন এবং সহজে স্বতন্ত্র জাতিতে শ্রেণীবদ্ধ করা যায় না।
যদিও মানুষ ঐতিহাসিকভাবে ত্বকের রঙ, মুখের বৈশিষ্ট্য এবং চুলের প্রকারের মতো শারীরিক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে মানুষকে বিভিন্ন জাতিতে শ্রেণীবদ্ধ করার চেষ্টা করেছে, এই বৈশিষ্ট্যগুলি সামগ্রিক জেনেটিক মেকআপের একটি ছোট অংশ এবং স্বতন্ত্র এবং পৃথক জৈবিক গোষ্ঠীর সাথে মিল রাখে না।
আধুনিক জেনেটিক্স দেখিয়েছে যে কোনো তথাকথিত জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে জেনেটিক বৈচিত্র্য প্রায়শই বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বৈচিত্র্যের চেয়ে বেশি। ফলস্বরূপ, মানবতাকে নির্দিষ্ট সংখ্যক জাতিতে বিভক্ত করার ধারণাটি বৈজ্ঞানিকভাবে বৈধ নয়।
বৈষম্য, অসমতা এবং বিভিন্ন ধরনের দুর্ব্যবহারকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য জাতি ধারণাটি ঐতিহাসিকভাবে অপব্যবহার করা হয়েছে।
অনেক পণ্ডিত এবং বিজ্ঞানী মানব বৈচিত্র্য সম্পর্কে আলোচনায় “জাতি” শব্দটি ব্যবহারের বিরুদ্ধে যুক্তি দেন, জেনেটিক্স, পরিবেশ, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের জটিল ইন্টারপ্লেতে ফোকাস করার গুরুত্বের উপর জোর দেন যা মানব জনসংখ্যার বৈচিত্র্যে অবদান রাখে।
বিশ্বের প্রধান মানব জাতি হল:
- ককেসয়েড (ইউরোপীয়)
- নিগ্রোয়েড (আফ্রিকান)
- মঙ্গোলয়েড (এশীয়)
- অস্ট্রালয়েড (অস্ট্রেলীয়)
জাতি রাষ্ট্র কাকে বলে
জাতিরাষ্ট্র (ইংরেজি: Nation State) বলতে মূলত একক জাতিগত পরিচয় বা জাতীয় আদর্শকে ভিত্তি করে গঠিত রাষ্ট্রকে বোঝায়। সাধারণত জাতিরাষ্ট্রসমূহে জাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মননশীলতার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। নিজস্ব জাতিগত তত্ত্ব ও মূল্যবোধকে এগিয়ে নিয়ে জাতিরাষ্ট্র গুলো বিশ্ব ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। জাতিরাষ্ট্র বৃহত্তর জাতীয় পরিচয়ে গোষ্ঠীসমাজকে ঐক্যের মাঝে রাখতে তৎপর। পাশাপাশি অপর গোষ্ঠীদের প্রতি সদয় আর শ্রদ্ধাশীল।
উদাহরণ: বাংলাদেশ একটি জাতিরাষ্ট্র এবং দেশের জনগণ বাঙালি জাতীয়তাবাদ বহন করে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি জনগণকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। অপরদিক থেকে সহবাসী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের আদর্শ ও সংস্কৃতির প্রতি বিনয় প্রকাশ করে।
জাতি ও রাষ্ট্র মধ্যে পার্থক্য
স্বাধীন রাজনীতিক সংগঠনের মাধ্যমে জাতীয় জনসমাজ জাতিতে পরিণত হয়। এই কারণে সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য নেই। কিন্তু প্রকৃত বিচারে জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বর্তমান। গিলক্রিস্ট এবং হায়েস উভয়ের মধ্যে পার্থক্য প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন।
(১) রাষ্ট্র গঠিত হয় চারটি উপাদান নিয়ে। এই উপাদান চারটি হল: জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সরকার ও সার্বভৌমিকতা। কিন্তু জাতি গঠনের জন্য এই উপাদানগুলি লাগে না। জনসমাজের মধ্যে গভীর ঐক্য হল জাতি গঠনের মূল উপাদান। এই ঐক্য বিভিন্নভাবে জনসমাজের মধ্যে সঞ্চারিত হতে পারে।
(২) রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। এই ক্ষমতার অধিকার রাষ্ট্রকে বিশিষ্টতা প্রদান করেছে। রাষ্ট্রের হাতে কেন্দ্রীভূত এই ক্ষমতা সরকারের মাধ্যমে প্রযুক্ত হয়। জাতি বলতে যা বোঝায় তার সার্বভৌম ক্ষমতা বা ক্ষমতা প্রয়োগের যন্ত্র সরকার নেই। রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও ইচ্ছা সরকারের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু জাতির এ রকম কোন সরকার নেই।
(৩) একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে একটি জনসমাজ আইনগতভাবে সংগঠিত হলে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। কিন্তু জাতি বলতে এমন এক জনসমাজকে বোঝায় যাদের মধ্যে একসঙ্গে বসবাসের সাধারণ ইচ্ছা আছে এবং যারা মনস্তাত্ত্বিকভাবে সংগঠিত।
(৪) রাষ্ট্র একজাতি-ভিত্তিক বা বহুজাতি-ভিত্তিক হতে পারে। একজাতি-ভিত্তিক রাষ্ট্রের উদাহরণ হল: জার্মানী, জাপান, হাঙ্গেরী, সুইডেন প্রভৃতি। অপরদিকে বহুজাতিক-ভিত্তিক রাষ্ট্রের উদাহরণ হলঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, গণ-প্রজাতন্ত্রী চীন, সুইজারল্যাণ্ড, সুইডেন প্রভৃতি। রাষ্ট্র ও জাতির সীমানা বা আয়তন খুব কম ক্ষেত্রেই সমানুপাতিক হয়। গার্ণার বলেছেন: “In fact they rarely coincide. ” রাষ্ট্রের সীমানা যেমন জাতীয় সীমানাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে, তেমনি জাতির সীমানাও রাষ্ট্রের সীমানাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
(৫) জাতির নিজস্ব রাষ্ট্র বিলুপ্ত হতে পারে, এতদ্সত্ত্বেও জাতি টিকে থাকতে পারে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে রাষ্ট্র হিসাবে জাপান ও জার্মানীর পতন ঘটে। কিন্তু জাতি হিসাবে জার্মান ও জাপানিগণ টিকে ছিল।
(৬) রাষ্ট্র হল একটি আইনগত ধারণা। এর রাজনীতিক বাস্তবতা বিরোধ-বিতর্কের ঊর্ধ্বে। কিন্তু জাতি হল একটি ভাবগত বা মনস্তাত্ত্বিক ধারণা। এ হল এক মনস্তাত্ত্বিক অনুভূতির দ্বারা ঐক্যের চেতনা।
(৭) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত থাকে জনগণের আনুগত্যের উপর। কিন্তু জাতি প্রতিষ্ঠিত থাকে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ চেতনার উপর।
বর্ণ ও জাতির মধ্যে পার্থক্য
- এক) সমাজতাত্ত্বিকদের অনেকের অভিমত অনুযায়ী বর্ণ ব্যবস্থারই রূপান্তরিত রূপ হল জাত ব্যবস্থা। মানবসমাজের বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় অনেক পরে সৃষ্টি হয়েছে জাতের। জাত গড়ে উঠার মূল উপাদান হিসাবে শ্রমবিভাজনের কথা বলা হয়। এই উপাদানটি ছাড়াও, জাত গড়ে উঠার পিছনে অন্যান্য উপাদানের অস্তিত্ব অনস্বীকার্য।
- (দুই) বর্ণ সংখ্যায় কম, কিন্তু জাত অসংখ্য। বর্ণ মাত্র চারটি, জাত কিন্তু অগুণতি। বর্ণ ব্যবস্থায় স্বীকৃত বর্ণের সংখ্যা মাত্র চার। কিন্তু জাত ব্যবস্থায় জাতের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা একরকম অসম্ভব। প্রতিটি বর্ণের মধ্যেই অসংখ্য জাত বর্তমান। বলা হয় যে শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ বর্ণের মধ্যেই জাতের সংখ্যা কয়েকশ’। সমগ্র ভারতব্যাপী জাতের মােট সংখ্যা তিন সহস্রাধিক। এই জাতগুলি বিভিন্ন বর্ণের অন্তর্ভুক্ত।
- (তিন) অনেকের অভিমত অনুযায়ী বিভিন্ন বৃত্তিজীবী তিন সহস্রাধিক জাত সম্পর্কে আলােচনা করা চারটি বর্ণের সাহায্যে সম্ভব নয়। জাতসমূহের উৎপত্তি, ক্ষমতা ও গুরুত্ব সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত হওয়া আবশ্যক। এ বিষয়ে বর্ণব্যবস্থা অকিঞ্চিতকর।
- (চার) বর্ণব্যবস্থায় অস্পৃশ্যতার অনুপ্রবেশ ঘটেনি। বর্ণগুলি আবদ্ধ গােষ্ঠী নয়। এখানে সামাজিক সচলতা সম্ভব ও স্বীকৃত। এক বর্ণ থেকে অপর বর্ণে আরােহণ-অবরােহণের সুযােগসম্ভাবনা ছিল। পক্ষান্তরে জাত ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সদস্যদের সামাজিক ভূমিকা ও মর্যাদা আরােপিত। স্বভাবতই জাত ব্যবস্থায় সামাজিক সচলতা অপেক্ষাকৃত কম।
- (পাঁচ) বর্ণ হল একটি শ্রেণীবাচক ধারণা। অপরপক্ষে জাত হল বিভিন্ন বৃত্তি ও পেশাজীবী। | জনগােষ্ঠীর অর্থবাচক। |
- (ছয়) ধর্ম হল বর্ণের মূল গঠন-শক্তি। জাত সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়েও ধর্মের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু কালক্রমে জাতের গঠন বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমিক হয়ে পড়ে।
- (সাত) বর্ণ-ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজের শ্রেণীবিন্যাস বা শ্রেণীবিভাজন সম্পাদিত হয়। মােটামুটি অভিন্ন মর্যাদাসম্পন্ন একাধিক জাত একটি বর্ণের অন্তর্ভুক্ত থাকে। সামাজিক পদমর্যাদার উর্ধ্বাধঃ স্তরবিন্যাসে কোন একটি জাতের যথার্থ অবস্থান নির্ধারিত বা চিহ্নিত হয় বর্ণ-ব্যবস্থার মাধ্যমে। অর্থাৎ বর্ণ হল হিন্দু সমাজে জাতসমূহের অবস্থান জ্ঞাপক মাপকাঠি।
- (আট) সমাজবিজ্ঞানী স্য (Hsu)-র অভিমত অনুযায়ী সমগ্র হিন্দু সমাজ সম্পর্কে বর্ণ হল একটি ধারণাগত কাঠামাে মাত্র। অপরদিকে জাত হল হিন্দু সমাজের বাস্তব অবস্থার এক বর্ণনা।
- (নয়) বর্ণ-ব্যবস্থা সর্বভারতীয় ভিত্তিতে ক্রিয়াশীল। কিন্তু আঞ্চলিকতার সঙ্গে জাত গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই কারণে বর্ণ-ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জাতব্যবস্থা সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত ধারণা লাভ করা সম্ভব নয়।
- (দশ) আঁদ্রে বেতে (Andre Bateille)-র অভিমত অনুযায়া বর্ণ হল একটি ধারণাগত প্রকল্প বা একটি মডেল। অপরদিকে জাত বলতে বােঝায় কতকগুলি প্রকৃত সামাজিক গােষ্ঠী বা বর্গকে। অধ্যাপক যােগেন্দ্র সিং (Yogendra Singh)-এর মতানুসারে বাস্তবে জাত হল একটি প্রকৃত বর্গ বিশেষ এবং বর্ণ হল এই জাতেরই একটি সাংস্কৃতিক কাঠামাে।
- (এগার) বর্ণ-ব্যবস্থায় প্রথম বর্ণ হল ব্রাহ্মণ এবং চতুর্থ বর্ণ হল শূদ্র। জাতকে এই বর্ণের অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে অসুবিধা হয় না। বর্ণ-ব্যবস্থায় দ্বিতীয় বর্ণ হল ক্ষত্রিয়, তৃতীয় বর্ণ হল বৈশ্য। জাতকে এই দুটি মধ্যবর্তী বর্ণের অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে অসুবিধা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। কারণ কোন একটি জাত কোন একটি অঞ্চলে বৈশ্য জাত হিসাবে বিবেচিত হয়; সেই একই জাত অন্য একটি অঞ্চলে ক্ষত্রিয়ের মর্যাদা দাবি করে থাকে।
- (বার) ভারতের সামাজিক স্তরবিন্যাসের বিচার-বিশ্লেষণ বা আনুষঙ্গিক সমাজতাত্ত্বিক গবেষণামূলক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বর্ণ-ব্যবস্থার থেকে জাত ব্যবস্থা অধিকতর উপযােগী বিবেচিত হয়। বর্ণ-ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারতীয় সমাজব্যবস্থা বিচার-বিশ্লেষণের উদ্যোগ-আয়োজন অসম্পূর্ণ হতে বাধ্য। কারণ বর্ণ-ব্যবস্থায় চতুর্বর্ণের মধ্যে অস্পৃশ্য-অন্ত্যজদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
- (তের) ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় প্রাত্যহিক কাজকর্ম পরিচালনা ও সম্পাদনের ক্ষেত্রে বর্ণব্যবস্থা অপেক্ষা জাতব্যবস্থার ভূমিকার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অধিক। ভারতীয় জনজীবনে কার্যক্ষেত্রে সামাজিক গােষ্ঠী হিসাবে জাতের ভূমিকাই সক্রিয় ও সরাসরি। অপরদিকে বর্ণের ভূমিকা বিশেষভাবে দূরবর্তী ও পরােক্ষ প্রকৃতির।
- (চৌদ্দ) পরিশেষে সমাজবিজ্ঞানী হর্টন (J.H. Horton)-এর মতানুসারে বর্তমানে কোনভাবেই বর্ণকে জাত হিসাবে গণ্য করা যায় না। বর্ণকে কিছু সংখ্যক জাতের একটি গােষ্ঠী হিসাবে বিবেচনা করা যায়।
জাতি ও শ্রেণীর মধ্যে পার্থক্য
সামাজিক স্তরবিন্যাসের পরিপ্রেক্ষিতে জাত ও সামাজিক শ্রেণির মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ :-
(১) জাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে অন্তর্বিবাহ। (endogamy)-র কথা বলা হয়। জাতভেদ ব্যবস্থায় বিবাহের ব্যাপারে পাত্র-পাত্রী উভয়েই অভিন্ন জাতের অন্তর্ভুক্ত হওয়া আবশ্যক। কিন্তু সামাজিক শ্রেণীর ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। সামাজিক শ্রেণীর ক্ষেত্রে এক শ্রেণীর ব্যক্তির সঙ্গে অপর এক শ্রেণীর ব্যক্তির বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হতে পারে।
(২) ভিক্তিগত পার্থক্য :- জাতভেদ প্রথা হল জন্মভিত্তিক ও বংশানুক্রমিক। কুলগত বিচার বা জন্মসূত্রই হল জাতভেদ প্রথার ভিত্তি। স্বভাবতই জাতবিন্যাস হল একটি বংশানুক্রমিক বিষয়। এবং জাত হল একটি বদ্ধ গােষ্ঠী। পক্ষান্তরে সামাজিক শ্রেণীভেদের ভিত্তি হল সামাজিক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বৈষম্য বা জীবনের সুযােগ-সুবিধার নতুন নতুন সম্ভাবনার (life chances) ক্ষেত্রে তারতম্য। পেশাগত পার্থক্য বা আর্থনীতিক অবস্থাগত তারতম্যের কারণে শ্রেণীগত পার্থক্য দেখা দেয় এবং সামাজিক স্তরবিন্যাসের সৃষ্টি হয়।
(৩) জাত ব্যবস্থা ভারতীয় :- লীচ ও ডুমন্ট (Leach & Dumont)-এর অভিমত অনুযায়ী জাত ব্যবস্থা হল একান্তভাবে একটি ভারতীয় ব্যবস্থা। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এ রকম জাত ব্যবস্থা দেখা যায় না। বিপরীতক্রমে শ্রেণীব্যবস্থা হল একটি সর্বজনীন ব্যবস্থা। পৃথিবীর সকল দেশেই এই শ্রেণীব্যবস্থার অস্তিত্ব অনস্বীকার্য।
(৪) সামাজিক ব্যবধানের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- জাতবিন্যাসের ক্ষেত্রে উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণের মধ্যে সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্যবধান বর্তমান থাকে। এই ব্যবধান প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে সামাজিক ব্যবধান থাকে। এ কথা ঠিক। কিন্তু এই ব্যবধান তেমন প্রকট নয়। সামাজিক শ্রেণীর জাতপঞ্চায়েত থাকে না, থাকে শ্রেণি সংগঠন।
(৫) সামাজিক শ্রেণীর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ‘শ্রেণী সচেতনতা’ (class ness) এবং শ্রেণী সংহতি’ (class-solidarity)। কিন্তু জাতভেদ প্রথার ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না।
(৬) জাত অনেকাংশে আঙ্গিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত। বিপরীতক্রমে শ্রেণী ছিন্নাংশমূলক প্রকৃতির। শ্রেণীর বিভিন্ন অংশ প্রতিযােগিতামূলক মনােভাবের দ্বারা পরিচালিত হয়। এই বিষয়টি জাতের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত।
(৭) সনাতন হিন্দু সমাজের চলে আসা ধারা অনুযায়ী ব্যক্তিমাত্রেরই বৃত্তি বা পেশা পূর্ব নির্দিষ্ট। জাত ও বৃত্তি এ ক্ষেত্রে অঙ্গাঙ্গীভাবে সংযুক্ত। শিশু বড় হয়ে পারিবারিক বৃত্তিই গ্রহণ করে। অপরদিকে শ্রেণীব্যবস্থায় ব্যক্তি-মানুষের পেশা পূর্ব-নিদিষ্ট নয়। শ্রেণীব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পারিবারিক পেশার বিষয়টি গুরুত্বহীন।
(৮) সমপাঙক্তেয়তার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- জাত ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট সমপাঙক্তেয়তা (commensality)। জাতসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের বিশেষ ক্ষেত্রে কতকগুলি বিধিনিষেধ প্রচলিত থাকে। সাধারণত পান-ভােজনের ক্ষেত্রে এই সমস্ত বিধিব্যবস্থা বর্তমান থাকে। প্রতিটি জাতই মনে করে যে, তার নিজস্ব এই সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে চলা দরকার। একেই বলে জাত ব্যবস্থার সমপাঙক্তেয়তা। শ্রেণিব্যবস্থার ক্ষেত্রে সমপাঙক্তেয়তা অনুপস্থিত।
(৯) জাত ব্যবস্থায় পদবির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তির জাত-পরিচয় পাওয়া যায়। অর্থাৎ পদবি জাতসমূহের মধ্যে পার্থক্য সূচক বিষয় হিসাবে বর্তমান। কিন্তু শ্রেণীর ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পদবি শ্রেণী-পরিচায়ক ভূমিকা পালন করে না।
(১০) মর্যাদা ও সদস্যপদের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- জাতবিন্যাসের ক্ষেত্রে ব্যক্তির পদমর্যাদা জন্মসূত্রে নির্দিষ্ট হয়ে যায়। এর পরিবর্তন ঘটে না। অপরদিকে শ্রেণীবিন্যাসের ক্ষেত্রে পদমর্যাদার প্রশ্নটি পূর্বনির্ধারিত নয় বা অপরিবর্তনীয়ও নয়। সুতরাং জাতগত মর্যাদা হল। ‘আরােপিত’ (ascribed) মর্যাদা। পক্ষান্তরে সামাজিক শ্রেণীগত মর্যাদা হল অর্জিত’ (acquired) মর্যাদা। সামাজিক শ্রেণীর ক্ষেত্রে উন্নত শ্রেণীতে উন্নীত হওয়া সম্ভব।
(১১) জাতের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি থাকে :- জাতের মধ্যেই একাধিক শ্রেণির অস্তিত্ব বর্তমান থাকে এবং একটি জাতের অন্তর্গত শ্রেণিসমূহের মধ্যে সংঘাতের সম্পর্ক অপসৃত হয়। অভিন্ন জাতের অন্তর্ভুক্ত দরিদ্র শ্রেণীর মানুষও বিত্তবান শ্রেণির মানুষের সঙ্গে সম্প্রীতির সম্পর্ক সংরক্ষণে যত্নবান হয়।
(১২) সহযােগিতার প্রশ্নে পার্থক্য :- জাতসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সহযােগিতা জাত ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচিত হয়। তা ছাড়া আর্থনীতিক ক্ষেত্রে জাতসমূহের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা পরিলক্ষিত হয়। এ প্রসঙ্গে লীচ (Leach) – এর মতানুসারে জাত ব্যবস্থা হল একটি জৈবিক (organic) ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় প্রতিটি জাত নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে। তা ছাড়া জাত ব্যবস্থা হল একটি শ্রমবিভাজন ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় সদস্যদের মধ্যে প্রতিযােগিতার উপাদান অনুপস্থিত। বিপরীতক্রমে শ্রেণিব্যবস্থায় কোনো রকম অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা বা সহযােগিতা থাকে না। শ্রেণিব্যবস্থায় সহযােগিতার পরিবর্তে প্রতিযােগিতা ও বিরােধ পরিলক্ষিত হয়।
(১৩) সামাজিক মর্যাদার প্রশ্নে পার্থক্য :- ডুমন্ট (Dumont)-এর অভিমত অনুযায়ী জাত ব্যবস্থায় একটি জাতের সামাজিক অবস্থান বা মর্যাদা নির্ধারিত হয় সামাজিক আচার-বিচার বা বিধি – নীতির দ্বারা। এ ক্ষেত্রে আর্থনীতিক ও রাজনীতিক সুযােগ-সুবিধা গুরুত্বহীন। বিপরীতক্রমে শ্রেণী ব্যবস্থায় ব্যক্তির মর্যাদা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সামাজিক বিধি-রীতি গুরুত্বহীন এবং আর্থনীতিক ও রাজনীতিক ক্ষমতাই গুরুত্বপূর্ণ।
(১৪) নিচু জাতের পরিষেবা :- জাত ব্যবস্থায় উচ্চবর্ণের জাতসমূহকে নিচু জাতের পরিষেবার উপর নির্ভর করতে হয়। এই কারণে নিচু জাতসমূহের সেবা ও আনুগত্য লাভের উদ্দেশ্যে উঁচু জাতের ব্যক্তিবর্গ নিজেদের মধ্যেই পারস্পরিক প্রতিযােগিতার সামিল হয়। কিন্তু শ্রেণী ব্যবস্থায় উচ্চ শ্রেণীসমূহের আনুকূল্য লাভের আশায় নিম্নশ্রেণীসমূহ নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিযােগিতার সামিল হয়।
(১৫) সামাজিক সচলতার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল সামাজিক সচলতা। কিন্তু এই বৈশিষ্ট্য জাতবিন্যাসের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসের ক্ষেত্রে শ্রেণী তা পরিবর্তনের সুযােগ থাকে। তাতে কোন সামাজিক বাধা থাকে না। এই কারণে আধুনিক সমাজের শ্রেণীবিন্যাস মুক্ত সমাজ’ (open society)-এর প্রতীক হিসাবে প্রতীয়মান হয়।
(১৬) জাতভেদ প্রথা ধর্মীয়, শ্রেণীভেদ ধর্মনিরপেক্ষ :- জাতভেদ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ঈশ্বরীয় অনুমােদনের অস্তিত্বের কথা বলা হয়। জাতভেদ প্রথার উৎপত্তির ক্ষেত্রেও ঐশ্বরিক ধারণা বা পবিত্রতার কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু সমাজের শ্রেণীগত বিন্যাসের ক্ষেত্রে এরকম কোন ঐশ্বরিক বা পবিত্রতার ধারণা অনুপস্থিত। জাত ব্যবস্থা ধর্মের দ্বারা সামগ্রিকভাবে আচ্ছন্ন। বিপরীতক্রমে শ্রেণিব্যবস্থা ধর্মনিরপেক্ষ প্রকৃতির।
আঁদ্রে বেতে (Andre Beteille)-র অভিমত অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলে জাত একটি সক্রিয় রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে কাজ করে। শ্রেণীকে এই ভূমিকায় দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে তিনি মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গির বিরােধিতা করেছেন। দক্ষিণ ভারতে শ্রীপুরম অঞ্চলে সম্পাদিত সমাজতাত্ত্বিক সমীক্ষার ভিত্তিতে আঁদ্রে বেতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
জাতি ও জাতীয়তার মধ্যে পার্থক্য
পার্থক্য | জাতি | জাতীয়তা |
---|---|---|
সংজ্ঞা | জাতি বলতে কতগুলো মানুষের সমষ্টিকে বুঝায় যারা রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ স্বাধীন বা স্বাধীনতা লাভে আগ্রহী। | একই ভাষা, বংশ, ধর্ম, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, আশা ও আকাঙ্ক্ষা এবং ভৌগোলিক এলাকার ঐক্যসূত্রে আবদ্ধকে জাতীয়তা বলে। |
ধারণা | জাতি হচ্ছে একটি বাস্তব ও সক্রিয় ধারণা। | জাতীয়তা হলো একটি মানসিক অনুভূতি। |
আদর্শ | জাতি একটি সুসংগঠিত আদর্শ। | জাতীয়তা কিছু বোধ বা অনুভূতির সমন্বয় মাত্র। |
চেতনা | বিশেষ কতকগুলো চেতনার সমন্বিত রূপের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া যা জাতির অস্তিত্বকে স্থায়িত্ব প্রদানে সহায়তা করে। | জাতীয়তা হলো এসব চেতনার প্রাথমিক অবস্থা। |
উৎপত্তি | প্লেটো , অ্যারিস্টটল জাতি সম্পর্কে যে ধারণা প্রদান করেন তা বেশ প্রাচীন । | জাতীয়তার উৎপত্তি আধুনিক কালে। ম্যাকিয়াভেলির হাতে প্রথম জাতীয় ধারণার উৎপত্তি হয়। |
সমষ্টি | জনসমাজ+রাজনৈতিক সংগঠন+স্বাধীনতা | জনসমাজের সক্রিয় ধারণা + রাজনৈতিক চেতনা |
পর্যায় | জাতি হচ্ছে জাতীয়তার পরিণতি বা চূড়ান্ত পর্যায়। | জাতীয়তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে জাতি গঠনের প্রাথমিক অবস্থা বা পর্যায়। এ থেকেই বোঝা যায় যে, জাতি ও জাতীয়তার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। |
আরো অন্যান্য প্রশ্নোত্তরের সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | জাতি
Q1. জাতির জনক কাকে বলা হয়
Ans – মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী । মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ভারতে ‘জাতির জনক’ হিসেবে পরিচিত । স্বাধীন ভারতের সংসদ আনুষ্ঠানিকভাবে গান্ধীজিকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
Q2. মহাত্মা গান্ধীকে জাতির জনক কে বলেন
Ans – . স্বাধীনতা সংগ্রামী সুভাষ চন্দ্র বসু মহাত্মা গান্ধীকে প্রথমবার “জাতির জনক” হিসাবে সম্বোধন করেছিলেন। মহাত্মা গান্ধী ভারতে জাতির জনক হিসাবে সম্মানিত।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।