স্নায়ু কি
যোগ কলার আবরণবেষ্টিত স্নায়ুতন্তুকে সাধারণ ভাবে স্নায়ু বা নার্ভ বলে । স্নায়ুতন্তুর চারদিকে যে যোগ কলার আবরণ থাকে তাকে এন্ডোনিউরিয়াম (endoneurium) বলে । এন্ডোনিউরিয়াম-আবরণযুক্ত কয়েকটি স্নায়ুতন্তু আবার পেরিনিউরিয়াম (perineurium) নামক আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে ।
মোটা ও বড় স্নায়ুর (nerve trunk) ক্ষেত্রে কয়েকটি পেরিনিউরিয়াম আবরণযুক্ত স্নায়ুতন্তুর গুচ্ছ একসঙ্গে একটি এপিনিউরিয়াম (epineurium) নামক যোগকলার আবরণ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে । যোগ কলার এই রকম আবরণগুলিতে রক্তবাহ (blood vessels) থাকে ।
স্নায়ুর সংজ্ঞা রক্তবাহ সমন্বিত এবং পেরিনিউরিয়াম নামক যোগকলার আবরণদ্বারা আবৃত এক বা একাধিক স্নায়ুতন্তু বা স্নায়ুতন্তুগুচ্ছকে নার্ভ বা স্নায়ু বলে ।
স্নায়ুর প্রকারভেদ
কাজ অনুসারে স্নায়ু প্রধানত তিন প্রকারের হয়, যেমন: [i] অ্যাফারেন্ট বা অন্তর্বাহী স্নায়ু [ii] ইফারেন্ট বা বহির্বাহী স্নায়ু [iii] মিশ্র স্নায়ু ।
অ্যাফারেন্ট বা অন্তর্বাহী স্নায়ু
সংজ্ঞা:- যে স্নায়ু গ্রাহক বা রিসেপটর থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে স্নায়ু উদ্দীপনা বহন করে নিয়ে যায়, তাকে অ্যাফারেন্ট নার্ভ বা অন্তর্বাহী স্নায়ু বলে ।
বৈশিষ্ট্য : এই ধরনের স্নায়ুর বৈশিষ্ট্য হল, এই যে :
(i) এটি সেনসরি নিউরোন দিয়ে গঠিত ।
(ii) এটি স্নায়ু-সংবেদকে গ্রাহক বা রিসেপটর থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে বহন করে নিয়ে যায় ।
উদাহরণ:- অলফ্যাক্টরি স্নায়ু, অপটিক স্নায়ু প্রভৃতি ।
ইফারেন্ট বা বহির্বাহী স্নায়ু
সংজ্ঞা:- যে স্নায়ু কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে কারক বা ইফেক্টরে সাড়া (বা নির্দেশ ) বহন করে নিয়ে আসে, তাকে বহির্বাহী স্নায়ু বা ইফারেন্ট নার্ভ বলা হয় ।
বৈশিষ্ট্য:- এই ধরনের স্নায়ুর বৈশিষ্ট্য হল, এই যে :
(i) এটি মোটর নিউরোন দিয়ে গঠিত ।
(ii) এটি স্নায়ু-সংবেদকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে কারক বা ইফেক্টরে বহন করে নিয়ে যায় ।
উদাহরণ:- অকিউলোমোটর স্নায়ু ।
মিশ্র স্নায়ু
সংজ্ঞা:- যে স্নায়ু সেনসরি এবং মোটর এই দুই রকম নিউরোনের সমন্বয়ে গঠিত,তাকে মিশ্র স্নায়ু বলে ।
বৈশিষ্ট্য:- এই ধরনের স্নায়ুর বৈশিষ্ট্য হল, এই যে;
(i) এই রকম স্নায়ু সেনসরি এবং মোটর উভয় প্রকার নিউরোন দিয়েই গঠিত ।
(ii) এরা উভয় মুখে স্নায়ুস্পন্দন পরিবহন করতে পারে ।
উদাহরণ:- ভেগাস নার্ভ, ফেসিয়াল নার্ভ প্রভৃতি স্নায়ু ।
স্নায়ুর কাজ কি
একাধিক স্নায়ুকোশ সম্মিলিতভাবে স্নায়ু গঠন করে। বিভিন্ন জ্ঞানেন্দ্রিয় থেকে অনুভূতি গ্রহণ করা স্নায়ুর কাজ।
স্নায়ুর প্রধান কাজ হল :
[i] বিভিন্ন জ্ঞানেন্দ্রিয় থেকে অনুভুতি গ্রহন করা ।
[ii] অন্তর্বাহী স্নায়ুর মাধ্যমে অনুভুতিকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পাঠানো ।
[iii] বহির্বাহী স্নায়ুর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের নির্দেশকে কারক অঙ্গে বয়ে নিয়ে আসা ।
[iv] বিভিন্ন পেশির সংকোচন ও প্রসারণে সাহায্য করা ।
স্নায়ু কোষ চিত্র
স্নায়ু কোষের কাজ কি
১. নিউরন বিভিন্ন উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং তদনুযায়ী প্রতিবেদন সৃষ্টি করে।
২. এটি মস্তিষ্কে যাবতীয় স্মৃতি সংরক্ষণ করে।
৩. এটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
৪. এটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং তার বাস্তবায়ন করে।
স্নায়ুতন্ত্র কাকে বলে
স্নায়ুকোশ দিয়ে গঠিত যে তন্ত্রের সাহায্যে প্রানীদেহে উদ্দীপনা গ্রহণ , উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা এবং দেহের বিভিন্ন তন্ত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন হয় তাকে স্নায়ুতন্ত্র বলে।
যে তন্ত্র উদ্দীপনা গ্রহণ পরিবহন এবং উত্তেজনায় সাড়া দেওয়ার মাধ্যমে জীব দেহে চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়, এবং দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অতন্ত্রগুলির শারীরবৃত্তীয় কাজের দ্রুত সংযোগ , নিয়ন্ত্রণ এবং সমন্বয় সাধনের সাহায্যে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন পরিবেশের পরিবর্তনের মধ্যে সমতা রক্ষায় জীব দেহের ব্যবহারিক প্রকৃতির বিকাশ ঘটায় তাকে স্নায়ুতন্ত্র বা Nervous system বলে।
স্নায়ুতন্ত্র এর শ্রেণীবিন্যাস
সমগ্র স্নায়ুতন্ত্রকে শারীরস্থান অনুযায়ী প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন—
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (Central nervous system) এবং প্রান্তীয় বা প্রান্তস্থ স্নায়ুতন্ত্র (Peripheral nervous system)।
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র করোটি মধ্যস্থিত মস্তিষ্ক (Brain) এবং মেরুদণ্ডের নালিস্থিত সুষুম্নাকাণ্ড (Spinal cord) নিয়ে গঠিত। প্রান্তস্থ স্নায়ুতন্ত্র করোটি সুষুম্না স্নায়ু (Cranio-spinal nerves) এবং আন্তরযন্ত্রীয় স্নায়ু (Visceral nerves) নিয়ে গঠিত।
আন্তরযন্ত্রীয় স্নায়ুকে সিপ্যাথেটিক (Sympathetic) এবং প্যারাসিম্প্যাথেটিক (Parasympathetic) স্নায়ুতে ভাগ করা যায়। করোটি সুষুম্না স্নায়ু 12 জোড়া করোটি এবং 31 জোড়া সুষুম্না স্নায়ুর সমন্বয়ে গঠিত হয়।
স্নায়ুতন্ত্রের একক কি
স্নায়ুতন্ত্রের কাঠামোগত ও কার্যকরী একক হলো নিউরোন। নিউরোন হলো সংবাহী স্নায়ু কলা কোষ। নিউরোন হলো স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান একক, কারণ নিউরোনের যা কাজ তা হলো বস্তুত সমগ্র স্নায়বিক কাঠামোর আলাদা আলাদা কাজ। মানুষের মস্তিষ্ক গড়ে 1000 কোটিরও বেশি নিউরোন দ্বারা গঠিত।
স্নায়ুতন্ত্র ছবি
স্নায়ুতন্ত্রের গঠন
নিউরন নামক কোষ দ্বারা গঠিত।
নিউরন (Neuron)
স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও কার্যগত একককে স্নায়ুকোষ বা নিউরন বলে। মানবদেহের দীর্ঘতম কোষ হল স্নায়ুকোষ। মস্তিষ্কে প্রায় ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) নিউরন থাকে। নিউরন সমন্বিত যে তন্ত্রের সাহায্যে দেহ বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উদ্দিপনায় সাড়া দিয়ে বিভিন্ন দৈহিক ও শারীরবৃত্তিক কাজের সামঞ্জস্য রক্ষা করে দেহকে পরিচালিত করে, তাকে স্নায়ুতন্ত্র বলে।
মস্তিষ্ক (Brain)
স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান অংশ হল মস্তিষ্ক। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কের গড় ওজন ১.৩৬ কেজি। মস্তিষ্কের আবরণীর নাম মেনিনমেস। মস্তিষ্কের সেরিব্রাম (সেরিব্রাল কর্টেক্স) মানুষের চিন্তাশক্তি, শতি-গ্রীষ্ম, লজ্জা-ক্রোধ প্রভৃতি অনুভূতিবোধ নিয়ন্ত্রণ করে। হাইপোথ্যালামাস মানবদেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ২৪ বছর বয়সে মানুষের বুদ্ধির বিকাশ সম্পন্ন হয়। স্নায়ু কোষের এক-চতুর্থাংশ ধ্বংস হয়ে গেলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা ক্ষয় পেতে থাকে।
সুষুম্নাকান্ড (Spinal Cord)
সুষুম্নাকান্ডের ওজন ৩০ গ্রাম। মানুষের স্পাইনাল কর্ডের দৈর্ঘ্য ছেলেদের-৪৫ সেমি. বা ১৭.৭২ ইঞ্চি এবং মেয়েদের ৪৩ সেমি. বা ১৬.৯৩ ইঞ্চি।
স্নায়ু (Nurve)
মানুষের করোটিক স্নায়ু (Cranial Nerves) ১২ জোড়া এবং সুষুম্না (Spinal Nerves) ৩১ জোড়া।
হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রের পার্থক্য
হরমোন যে জৈব-রাসায়নিক তরল যা শরীরের কোনো কোষ বা গ্রন্থি থেকে শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশে নিঃসরিত হয়। হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। স্নায়ুতন্ত্রগুলি প্রধানত স্নায়ু মধ্যে সংকেত বহন করে। অন্যদিকে, হরমোন অন্তঃস্রাব সিস্টেমের মধ্যে একটি রাসায়নিক সংকেত হিসাবে কাজ।
২। স্নায়ু সংকেতগুলি স্নায়ুর সাথে প্রেরণ করে, এবংকেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্যদিকে, হরমোনগুলি রক্ত প্রবাহের মধ্য দিয়ে প্রেরণ করা হয় এবং এন্ডোক্রিন গ্রন্থি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
৩। স্বাভাবিকভাবে, হরমোনগুলি প্রভাবের ধীর গতির থাকে। অন্যদিকে, স্নায়ুতন্ত্রের দ্রুত সংক্রমণ হয়।
৪। স্নায়ু সংকেত সাধারণত স্বল্পকালীন হয়। অন্যদিকে, হরমোনীয় প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়।
৫। স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে, খুব কম ধরনের রাসায়নিক সমন্বয়কারীকে বলা হয় নিউরোট্রান্সমিটারস জড়িত, যা লক্ষ্যমাত্রা টিস্যুতে কেবল গোপন থাকে। অন্যদিকে, হরমোনের ট্রান্সমিটিশন বিভিন্ন ধরনের হরমোনকে জড়িত করে, যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি বিভিন্ন, নির্দিষ্ট টিস্যুকে প্রভাবিত করে।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | স্নায়ুতন্ত্র
Q1. স্নায়ুতন্ত্র কি
Ans – যে তন্ত্রের সাহায্যে প্রাণী উত্তেজনায় সাড়া দিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে, দৈহিক মানসিক ও শারীরবৃত্তীয় কাজের সমন্বয় ঘটায়, দেহের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ সাধন করে এবং তাদের কাজের মধ্যে সংবাদ আনয়ন ও নিয়ন্ত্রণ করে তাকে স্নায়ুতন্ত্র বলে।
Q2. স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান অংশ কি
Ans – অধিকাংশ প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান দুটি অংশ আছে -কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্র ও প্রান্তীয় স্নায়ু তন্ত্র। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ড নিয়ে গঠিত। প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র স্নায়ু দিয়ে গঠিত, যা দীর্ঘ, সরু, নলাকার স্নায়ুগুচ্ছ, অ্যাক্সন দ্বারা আবৃত।
Q3. দশম করোটিক স্নায়ুর নাম কি
Ans – মানুষের ১২ জোড়া করোটিক স্নায়ু আছে।
১) অলফ্যাক্টরি স্নায়ু (Olfactory Nerve)
২)অপটিক স্নায়ু (Optic Nerve)
৩) অকুলামোটর স্নায়ু (Oculomotor Nerve)
৪)ট্রকলিয়ার স্নায়ু (Trochlear Nerve)
৫)ট্রাইজেমিনাল স্নায়ু (Trigeminal Nerve)
৬)অ্যাবডুসেন্স স্নায়ু (Abdusense Nerve)
৭)ফেসিয়াল স্নায়ু (Facial Nerve)
৮)অডিটরী স্নায়ু (Auditory Nerve)
৯)গ্লোসোফ্যরিন্জিয়াল স্নায়ু (Glossopharyngeal Nerve)
১০)ভেগাস স্নায়ু (Vagus Nerve)
১১)স্পাইনাল অ্যাকসেসরি স্নায়ু (Spinal Accessory Nerve)
১২)হাইপোগ্লোসাল স্নায়ু (Hypoglossal Nerve)
Q4. স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান অংশ কি
Ans – অধিকাংশ প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান দুটি অংশ আছে -কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্র ও প্রান্তীয় স্নায়ু তন্ত্র। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ড নিয়ে গঠিত। প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র স্নায়ু দিয়ে গঠিত, যা দীর্ঘ, সরু, নলাকার স্নায়ুগুচ্ছ, অ্যাক্সন দ্বারা আবৃত।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।