মৌসুমি বায়ু কাকে বলে, মৌসুমি বিস্ফোরণ কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মৌসুমি বায়ু কাকে বলে

মৌসুমি বায়ু দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ুতে সর্বাপেক্ষা প্রভাব বিস্তারকারী বায়ুপ্রবাহ। গ্রীষ্ম ও শীত মৌসুমে সমুদ্র ও ভূ-পৃষ্ঠের উত্তাপ এবং শীতলতার তারতম্যের ফলে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের দিকও পরিবর্তিত হয়। শীত মৌসুমে শুষ্প মৌসুমি বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক (ভূভাগ) থেকে সমুদ্র অভিমুখে প্রবাহিত হয় এবং গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম (সমুদ্রভাগ) থেকে ভূমি অভিমুখে প্রবাহিত হয়। মৌসুমি বায়ুর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘মনসুন’ (Monsoon) মূলত আরবি শব্দ ‘মাওসিম’ (mawsim) থেকে এসেছে। আরবিতে ‘মাওসিম’ শব্দের অর্থ কাল বা ঋতু। ধারণা করা হয়, এই মৌসুমি বায়ুচক্রটির সূত্রপাত ঘটে ১ কোটি ২০ লক্ষ বৎসর পূর্বে (মধ্য মায়োসিন) হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টির সময় থেকে।

গ্রীষ্মকালে ভারতের পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ভূখণ্ডে প্রচণ্ড তাপের কারণে নিম্নচাপ কেন্দ্রের উৎপত্তি হয়, কিন্তু একই সময়ে তুলনামূলকভাবে শীতলতর ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হয় উচ্চচাপ কেন্দ্রের। বায়ুচাপের প্রকৃতিগত ভিন্নতাই উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ুকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত করে এবং মৌসুমি বায়ু সমুদ্র থেকে ভূমির দিকে প্রবাহিত হয়। বায়ুপ্রবাহের এই ধরনটি গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু হিসেবে পরিচিত। ভারতীয় উপমহাদেশে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাস্প বহন করে আনে। তাই এ অঞ্চলে সে সময় ভারি বৃষ্টিপাত হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিবেশী দেশসমূহে এই বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে।

ভারত মহাসাগর অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু দুটি শাখায় বিভক্ত: আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগর প্রবাহ। আরব সাগরের বায়ুপ্রবাহটি ভারতের কেন্দ্রভূমি এবং ভারতীয় উপদ্বীপের আবহাওয়ার প্রকৃতির ওপর অধিক প্রভাব বিস্তার করে। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি বায়ুপ্রবাহটি মূলত বাংলাদেশ, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল এবং হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণাংশের পাহাড়ি ঢাল ও পাদদেশীয় অঞ্চলের আবহাওয়ার প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। জুন মাসের প্রথম দিকে এই বায়ুপ্রবাহ বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করে এবং ভারতের কেন্দ্র-অঞ্চল জুড়ে অবস্থানরত নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে।

শীত মৌসুমে ভারত মহাসাগরের পানির তুলনায় এর সংলগ্ন ভারতীয় ভূখণ্ড দ্রুত শীতল হয়ে আসে। পরিণতিতে ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশ জুড়ে একটি উচ্চচাপ কেন্দ্র গড়ে ওঠে এবং অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত উষ্ণতর ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এই চাপ বিভাজনের ফলে ভারতের অভ্যন্তর ভাগ থেকে বায়ুপ্রবাহ ভারত মহাসাগর অভিমুখে প্রবাহিত হয়, যা শীতকালীন মৌসুমি বায়ু নামে পরিচিত। এই বায়ুপ্রবাহের একটি ধারা মোটামুটি গঙ্গার প্রবাহপথ ধরে গাঙ্গেয় সমভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় বাংলাদেশ অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগর অভিমুখে ধাবিত হয়। এই মৌসুমে বায়ুপ্রবাহের বৈশিষ্ট্য হলো ভূমি থেকে সমুদ্র অভিমুখী, স্বভাবতই পুরো মৌসুম জুড়ে শুষ্প আবহাওয়া বিরাজ করে। এ সময় বৃষ্টিপাতের ঘটনা খুব কম।

মৌসুমি বায়ুর বৈশিষ্ট্য

১. স্থল ও জলভাগের মধ্যে চাপের তারতম্য জনিত কারণে মৌসুমি বায়ু প্রবাহের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

২. শীত ও গ্রীষ্মকালে বায়ুর বিপরীত দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে থাকে। যেমন – গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়।

৩. মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রধানত গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে এবং শীতকাল শীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির হয়।

৪. মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত হয় তা সাধারনত শৈলোৎক্ষেপ শ্রেনীর হয়ে থাকে ।

৫. মৌসুমি বায়ু কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রবাহিত হয়, অন্য সময় এই বায়ুর স্থায়িত্ব থাকে না বলে, মৌসুমি বায়ুকে সাময়িক বায়ু বলা হয়।

৬. মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ অনেক গুলো কারনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় বলে মৌসুমি বায়ু প্রবাহের কোন সুনিশ্চয়তা নেই। তাই কোন কোন বছর মৌসুমি বায়ু সময়ের আগে আবার কোন কোন বছর সময়ের পরে প্রবাহিত হয়ে থাকে।

৭. মৌসুমি বায়ু গ্রীষ্মকালে স্থলভাগ থেকে জলভাগের দিকে এবং শীতকালে জলভাগ থেকে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয় বলে, মৌসুমি বায়ুকে স্থলবায়ু ও সমুদ্র বায়ুর বৃহৎ সংস্করন বলা হয়ে থাকে।

৮. যে অঞ্চল গুলিতে মৌসুমি বায়ু প্রবাহের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়, সেই অঞ্চল গুলিকে মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলা হয়ে থাকে। যেমন – ভারতে এই বায়ুর প্রভাব সর্বাধিক থাকায় ভারতবর্ষকে আদর্শ মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলা হয়ে থাকে।

ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব

ভারতের জলবায়ুর ওপর মৌসুমী বায়ুর প্রভাব সর্বাধিক। তাই ভারতকে মৌসুমী জলবায়ুর দেশ বলা হয়। ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব গুলি হল নিম্নরুপ:-

ঋতু পরিবর্তন

মৌসুমী বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের ওপর নির্ভর করে ভারতের জলবায়ুতে ঋতু পরিবর্তন হয়ে থাকে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীত- পর্যায়ক্রমে এই চারটি ঋতু সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়।

গ্রীষ্মকাল আর্দ্র ও শীতকাল শুষ্ক

জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র প্রকৃতির ও জলীয় বাষ্পহীন উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে শীতকাল শুষ্ক প্রকৃতির হয়।

বৃষ্টিপাত

ভারতের মোট বৃষ্টিপাতের অধিকাংশ (প্রায় 85% থেকে 90%) বৃষ্টিপাতই ঘটে থাকে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে। সমুদ্র থেকে আগত জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতে প্রবেশ করে এবং সারা ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।

বৃষ্টিপাতের অসম বন্টন

মৌসুমী বায়ুর প্রভাব ভারতের সর্বত্র সমানভাবে পড়ে না। তাই ভারতে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের বন্টনও সর্বত্র সমান নয়। ভারতের পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে।

খরা ও বন‍্যার প্রাদুর্ভাব

মৌসুমী বায়ু খামখেয়ালী চরিত্রের হওয়ায় কোনো বছর অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা এবং কোনো বছর স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে খরার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।

বায়ুপ্রবাহ

গ্রীষ্মকালে সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়।

ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি

প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে শরৎকালে বঙ্গোপসাগরে যে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে পূর্ব উপকূল বরাবর মাঝে মাঝে প্রবল ঝড় বৃষ্টি হয়।

বছরে দু’বার বৃষ্টি

তামিলনাড়ুর করমন্ডল উপকূলে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বছরে দুবার বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়, একবার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকালে ও আর একবার উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে শীতকালে।

ভারতের কৃষিতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব

ভারতীয় কৃষিতে মৌসুমি বায়ুর বিরাট প্রভাব রয়েছে । মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে প্রচুর পরিমাণে ধান, গম, পাট, আখ, তুলা বিভিন্ন ধরনের ডাল, নানান রকম তৈলবীজ, চা, কফি তামাক প্রভৃতি উৎপন্ন হয় ।

মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা — খরা ও বন্যার প্রাদুর্ভাব : ভারতে মৌসুমি বায়ুর ফলেই প্রধানত বৃষ্টিপাত ঘটে । দেশের মোট বৃষ্টি পাতের প্রায় ৯০ শতাংশ দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সংঘঠিত হয় । কিন্তু এই মৌসুমি বায়ু খুবই অনিশ্চিত । কারণ প্রতি বছর এই মৌসুমি বায়ু সমপরিমাণে জলীয় বাস্প নিয়ে আসে না । আবার এই মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন প্রতি বছর একই সময়ে ঘটে না । এর ফলে কোন বছর কম জলীয় বাস্প আমদানি ও দেরিতে আসার ফলে ভারতে অনাবৃষ্টি বা খরা দেখা দেয় । আবার কোনও বছর অতিরিক্ত পরিমাণ জলীয় বাস্প আমদানি এবং দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহের খাম খেয়ালিপণার জন্য ভারতে প্রায়ই খরা ও বন্যার প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায় ।

(ক) ভারতে খরার প্রধান কারণ :

(১) মৌসুমি বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা ভারতে খরার প্রধান কারণ ।

(২) ভারতের কোনও স্থানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বর্ষা দেরিতে আসা সেই স্থানের খরার অন্যতম কারণ 

(৩) স্বাভাবিক সময়ের আগে মৌসুমি বায়ু প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে খরা সৃষ্টি হয় । 

(৪) কোন স্থান বর্ষাকালের মধ্যেও বেশ কিছুদিন বৃষ্টিহীন অবস্থায় থাকলে খরা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ।

(৫) বনভুমির অভাবের জন্য সূর্যের প্রচন্ড তাপে গ্রীষ্মকালে প্রচুর পরিমাণে ভৌম জল বাষ্পীভূত হয়ে যায় এবং মাটি ফেটে চৌচির হয়ে খরার সৃষ্টি করে ।

(৬) পরিবেশ দূষণের জন্য বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে মৌসুমি বায়ু ঘনীভূত না হতে পারলে খরার সৃষ্টি হয় ।

(খ) ভারতে বন্যার প্রধান কারণ :-

(১) কোনও স্থানে একটানা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ঘটলে সেই স্থানে বন্যার দেখা দেয় ।

(২) মৌসুমি বৃষ্টিপাত দীর্ঘায়িত হলে অতিবৃষ্টির ফলেও বন্যার সৃষ্টি হয় ।

(৩) নদীর বহন ক্ষমতা কমে এলে বা জলনিকাশী ব্যবস্থা বুজে এলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না হলেও বন্যার সৃষ্টি হতে পারে । ২০০০ সালে এই কারণে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে বন্যার সৃষ্টি হয় ।

(৪) বর্ষাকালে বাঁধ বা জলাধার থেকে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত জল ছাড়লে বন্যার সৃষ্টি হয় । এটিও পশ্চিমবঙ্গে বন্যা হওয়ায় অন্যতম প্রধান কারণ ।

(৫) কখনও কখনও ভূমিক্ষয়ও বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে দেখা দেয় । ভূমিক্ষয়ের ফলে ক্ষয়ে যাওয়া মাটি নদী গর্ভে জমা হয় এবং নদীর গভীরতা কমিয়ে দেয় । এর ফলে নদীর জল বহন ক্ষমতা কমে গিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে ।

পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব

পশ্চিমবঙ্গের প্রায় মধ্যভাগ দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে কটক্রান্তিরেখা  বিস্তৃত থাকায় এখানকার জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি প্রকৃতির। পশ্চিমবঙ্গে প্রধানত দু প্রকার মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়—(ক) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও (খ) উত্তর-পূর্ণ মৌসুমি বায়ু। এই দুই প্রকার বায়ুপ্রবাহজনিত কারণে এই রাজ্যের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর উপর মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের প্রভাব আলোচনা করা হল—

(১) সারা বছর মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ:

পশ্চিমবঙ্গে সারা বছরই মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। শীতকাল ও শরৎকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু এবং গ্রীষ্মকাল ও বসন্তকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু।

(২) শীতল ও শুষ্ক শীতকাল:

শীতকালে স্থলভাগ থেকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু আসে বলে এতে জলীয় বাষ্প থাকে না। ফলে শীতকাল শুষ্ক। এই বায়ু উত্তরের তুষারাবৃত পার্বত্য অঞ্চল থেকে আসে বলে এবং সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে থাকে বলে এই সময় সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে শীতল আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়।

(৩) উষ্ণ ও আর্দ্র বর্ষাকাল:

এই সময় উষ্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে আসে বলে স্থলভাগে যথেষ্ট বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং সূর্যের অবস্থানজনিত কারণে বর্ষাকাল উম্ম প্রকৃতির।

(৪) শরৎকালের সূচনা:

সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তন শুরু হয় বলে শরৎকালে আকাশ নির্মল থাকে ও ভোরে শিশির পড়ে।

(৫) বৃষ্টিপাতের উপর প্রভাব:

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে বার্ষিক ১৭৫-২০০ সেমি বৃষ্টিপাত হয়। কোথাও কোথাও ৩০০ সেমি-র অধিক বৃষ্টিপাত হয়। উত্তরবঙ্গের বক্সাদুয়ার অঞ্চলে সবাধিক প্রায় ৪৫৫ সেমি বৃষ্টিপাত হয়।

(৬) মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের অনিশ্চয়তা:

পশ্চিমবঙ্গের মৌসুমি বায়ুর আগমন সব বছর সমান থাকে না। কোনো কোনো বছর আগে আবার কোনো কোনো বছর পরে ঘটে।

(৭) মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা:

পশ্চিমবঙ্গে মৌসুমি বায়ুর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সব বছর সমান নয়। কোনো কোনো বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা আবার কোনো কোনো বছর কম বৃষ্টিপাতের কারণে খরার সৃষ্টি হয়।

(৮) ঋতু পরিবর্তনে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের প্রভাব:

মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের উপর পশ্চিমবঙ্গের ঋতুবৈচিত্র্য নির্ভরশীল।

আরো পড়তে: জলবায়ু কাকে বলে

বাংলাদেশের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ব্যাখ্যা কর

বাংলাদেশ ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এখানকার জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু। সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এখানে শীত বা গ্রীষ্ম কোনোটাই খুব তীব্র নয়। এখানে গ্রীষ্মকালটা উষ্ণ ও বৃষ্টিবহুল এবং শীতকাল শুষ্ক। হিমালয় পর্বতমালা যদিও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নয়, বেশ উত্তরে, তবু তা শীতকালে বাংলাদেশকে উত্তর থেকে আসা হিমপ্রবাহ থেকে রক্ষা করে। তাই শীতকাল এখানে দীর্ঘ হয় না। শীতকালে বাংলাদেশের তাপমাত্রা ১৮-২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। তবে উত্তর ও পূর্ব-পশ্চিমে এই তাপমাত্রা কখনো কখনো ৪/৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে আসে। ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড়, শ্রীমঙ্গল এসব জায়গায় সবচেয়ে বেশি শীত।

বৈশাখ মাস থেকে বাংলাদেশে গ্রীষ্ম ঋতু আরম্ভ হয়। ইংরেজী ক্যালেন্ডারের হিসেবে সময়টা এপ্রিলের মাঝামাঝি। গ্রীষ্মকালে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে কখনও কখনও তাপমাত্রা ৪০-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে। গ্রীষ্মের মৌসুমের শুরুতে কোথাও কোথাও কালবৈশাখী ঝড় হয়। সমুদ্র উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসও হয়।

বর্ষাকালে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমদিক থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস বয়ে যায়। একে গ্রীষ্মের মৌসুমি বায়ু বলা হয়। এই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টি হয়। তবে দেশের সব এলাকায় সমান বৃষ্টিপাত হয় না।

সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এসব এলাকায় বেশি বৃষ্টি হয়। অন্যদিকে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া এসব এলাকায় কম বৃষ্টি হয়। শরতকালেও বাংলাদেশে বৃষ্টি হয়, তবে এ সময় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকে খুব কম। বর্ষাকালে নদী-ভাঙনের পরিমাণও বেড়ে যায়। এপ্রিল-মে ও অক্টোবর-নভেম্বর বছরের এ দুটি সময়ে বাংলাদেশে বেশ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস হয়।

বাংলাদেশের জলবায়ুকে বলা হয় সমভাবাপন্ন। অর্থাৎ এখানে অনুকূল ও প্রতিকূল দুই ধরনের আবহাওয়ারই প্রভাব সমান। অনুকূল আবহাওয়ার ফলে বাংলাদেশের প্রকৃতি সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা। অন্যদিকে প্রতিকূল আবহওয়ার প্রভাবে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা, কালবৈশাখী, টর্নেডো ও অতিবৃষ্টির মতো কোনো কোনো দুর্যোগ বাংলাদেশের মানুষের জন্য দুর্ভোগ বয়ে আনে।

বাংলাদেশে দু’ধরনের মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। যথা– (১) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (২) উত্তর পূর্ব মৌসুমি বায়ু।

১. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু : গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ু দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্প নিয়ে দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। এসময় কৃষকরা অত্যাধিক আর্দ্রতা পছন্দকারী ফসল যেমন– ধান, পাঠ, ইক্ষু, চা ইত্যাদি জন্মায়।
২. উত্তর পূর্ব মৌসুমি বায়ু : শীতকালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ু উত্তরের হিমালয় পর্বত থেকে শীতল হয়ে দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ বায়ুতে তেমন জলীয়বাষ্প থাকে না। শীতল বায়ু প্রবাহে দেশে শীত পড়ে। এসময় কৃষকরা শীত পছন্দকারী বিভিন্ন ফসল যেমন– ডাল, গম, তেলবীজ, আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি জন্মায়।

মৌসুমি বায়ু সৃষ্টির মূল কারণ

মৌসুমি বায়ু সৃষ্টির কারণ মৌসুমি বায়ুর উৎপত্তির কারণ সম্পর্কিত বিভিন্ন তত্ত্ব বা ধারণার মূল কথাগুলি নিম্নরূপ:-

তাপীয় তত্ত্ব | Thermal Concept

ব্রিটিশ আবহবিদ এডমুন্ড হ্যালি (Edmund Halley) প্রণীত “তাপীয় তত্ত্বের” (Thermal Concept) মূল কথা হল: ঋতুভেদে স্থলভাগ ও জলভাগে তাপের পার্থক্যের কারণে মৌসুমি বায়ুর সৃষ্টি হয়। গ্রীষ্মকালে উষ্মতার আধিক্য হেতু স্থলভাগের ওপর নিম্নচাপ ও জলভাগের ওপর উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। এই কারণে গ্রীষ্মকালে ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চল থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুরূপে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হয়।

আবার শীতকালে জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে উচ্চচাপের সৃষ্টি করে। এর ফলে মৌসুমি বায়ুরূপে বিস্তীর্ণ স্থলভাগ অতিক্রম করে। স্থলভাগের উচ্চচ্চাপযুক্ত অঞ্চল থেকে শুষ্ক শীতলবায়ু উত্তর-পূর্ব জলভাগের দিকে এগিয়ে যায়।

ফোন তত্ত্ব | Flohn Concept

আবহবিদ এফ. ফ্লোন (F. Flohn) -এর মতে সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সময়কালে পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয় ও বায়ুবলয়গুলির স্থান পরিবর্তনজনিত কারণে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর সৃষ্টি হয়।

সাম্প্রতিককালের ধারণাসমূহ | Recent thoughtos and ideas

কোনো কোনো আবহবিদ এই ধারণা পোষণ করেন যে গ্রীষ্মকালে উষ্মতার আধিক্য হেতু তিব্বতীয় মালভূমি অঞ্চলে বায়ুচাপ বেশি হয় ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। এর ফলে তিব্বতীয় মালভূমি থেকে উচ্চচাপবিশিষ্ট বায়ু ভারত মহাসাগরের দিকে ধাবিত হলে, চাপের সমতা রক্ষার জন্য ভারত মহাসাগর থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুরূপে ভারতীয় উপমহাদেশ বরাবর তিব্বতীয় মালভূমির দিকে এগিয়ে যায়।

সাম্প্রতিককালের আবহবিদগণের মতে জেট বায়ু (Jet Stream) -র প্রভাবে মৌসুমি বায়ুর সৃষ্টি হয়। মে মাসের শেষের দিকে উত্তর ভারতে প্রবহমান পশ্চিমী জেট বায়ু ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে হিমালয়ের দিকে আরও উত্তরে সরে যেতে থাকে। এই সময় ভারতের দক্ষিণভাগে প্রবহমান পূর্বালী জেট বায়ুটি ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চলকে আরও শক্তিশালী করে। তুলতে সক্রিয় হয়। এর ফলে ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চল থেকে একটি জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুরূপে ভারতীয় উপমহাদেশের দিকে অগ্রসর হয়।

মৌসুমি বিস্ফোরণ কাকে বলে

গ্রীষ্মকালে উত্তর-পূর্ব ভারতে সৃষ্ট গভীর প্রভাবে ভারত মহাসাগর থেকে জলীয়বাষ্প পূর্ণ দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমী বায়ু রূপে প্রবাহিত হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা ভারতে প্রবেশ করে পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় বাধা পেয়ে মালাবার উপকূলে বজ্র বিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত হয়। একেই মৌসুমী বিস্ফোরণ বলে।

মৌসুমি বিস্ফোরণের উৎপত্তি | Genesis of Burst of Monsoon

মৌসুমি বায়ু মূল ভূ-খণ্ডে আকস্মিকভাবে প্রবেশ করে। তখন এই বায়ুর গতিবেগও হঠাৎ করে বেড়ে যায়। কিন্তু এই বায়ুর গতিবেগ কেন আকস্মিকভাবে বেড়ে যায়, তার কোন সর্বজনগ্রাহ্য মতামত পাওয়া যায় না। মৌসুমি বায়ুর অতি সক্রিয় প্রবাহ বা উচ্ছ্বাস (surge) সাধারণ প্রবাহের গতিবেগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়। খুব সম্ভবত বায়ুর গতিবেগজনিত অভিসরণের (velocity convergence) জন্যই সামনের দিকে বায়ুর গতিবেগ বৃদ্ধি পায় ।

মৌসুমি বিস্ফোরণের কারণকে নিম্নলিখিতভাবে ব্যাখ্যা করা যায়—

দক্ষিণ এশিয়ায় ঊর্ধ্ব বায়ুর সঞ্চালন | Upper-air circulation over Southern Asia

ভারতে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ুর আগমন অত্যন্ত আকস্মিক এবং নাটকীয় (abrupt and dramatic)।মৌসুমির আগমন সর্বদাই বিশুদ্ধ আবহাওয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। মৌসুমি বিস্ফোরণের কারণ হিসাবে সর্বাধিক প্রচলিত ধারণাটি হল—দক্ষিণ এশিয়ার উপর ঊর্ধ্ব বায়ুর সঞ্চালনের হঠাৎ করে পরিবর্তনের ফলেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

এপ্রিল-মে মাসে উত্তর গোলার্ধের ভারতীয় উপমহাদেশে লম্বভাবে পতিত সূর্যরশ্মির কল্যাণে ভূ-ভাগ প্রচণ্ড পরিমাণে উত্তপ্ত (insolational heating) হয়। এর ফলে উত্তর ভারত এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে গভীর নিম্নচাপ ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। এই নিম্নচাপের আকর্ষণেই পার্শ্ববর্তী উগ্ন সমুদ্র (from warm ocean) থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন হয়।

ভারতে আবির্ভূত হওয়া এই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রাথমিক অবস্থায় উত্তর দিকে বেশি দূর অগ্রসর হতে পারে না। কারণ এই সময়ে উত্তর ভারতে উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেট সক্রিয় থাকে। এই পশ্চিমী জেট দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর উত্তরদিকে অগ্রসর হবার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মে মাসের শেষ কিংবা জুন মাসের প্রথম দিকে উত্তর ভারতে উন্নতার পরিমাণ অত্যধিক পরিমাণে বেড়ে যায়।

তাই হিমালয়ের দক্ষিণভাগ দিয়ে প্রবাহিত উপক্রান্তীয় জেট বায়ু হিমালয়ের উত্তরে স্থানান্তরিত হয়ে তিব্বতে অবস্থান করে। এই সময়েই ঊর্ধ্ব প্রোণিটি (upper trough) 85° পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে পশ্চিম দিকে সরে 75° পূর্ব ব্রাঘিমায় অবস্থান করে। জেট বায়ুর এই স্থানান্তর মোটেই ধীরগতিতে হয় না (Jet stream does not retreat slowly)। স্থানান্তর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে (very quick) হয়। জেট বায়ু যখন ভারত থেকে পুরোমাত্রায় অদৃশ্য (disappearance) হয়ে যায়, তখনই ভারতীয় ভূ-ভাগে সমুদ্রের দিক থেকে মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ প্রতিষ্ঠিত (definite monsoon circulation from the sea on to the land is established) হতে দেখা যায়।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মে মাসের শেষ থেকে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ শুরু হয়। কিন্তু ভারতে একটু দেরি হয়। জুন মাসের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ সুনিশ্চিত হয়। স্থানবিশেষে এই বায়ুর আগমন যথেষ্ট অনিশ্চিতও বটে। ভারতে এই বায়ুর আকস্মিক আগমন ঋতুভেদে আন্তঃক্রান্তীয় অভিসরণ অঞ্চলের (ITCZ) স্থানান্তরের ফলেই ঘটে থাকে (Lal, 1998) ।

তিব্বতীয় উচ্চভূমিতে সৃষ্ট উন্ন-কেন্দ্রীয় প্রতীপ ঘূর্ণবাত | Warm-core anticyclone over Tibetan Highland

গ্রীষ্মকালে তিব্বতীয় উচ্চভূমিতে একপ্রকার উপ-কেন্দ্রীয় প্রতীপ ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। মৌসুমি বিস্ফোরণ, তিব্বতীয় উচ্চভূমির প্রতীপ ঘূর্ণবাতের সক্রিয়তার উপর নির্ভরশীল। ঊর্ধ্ব বায়ুস্তরে সৃষ্ট বায়ু এক ধরনের জেট বায়ুর সৃষ্টি করে। এই জেট বায়ুর নাম পুবালি জেট (Easterly Jet)। অক্ষাংশের কাছাকাছি ভারতের আকাশে এই বায়ুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। জেট বায়ুর এই অবস্থান সাধারণ নিয়ত বায়ুপ্রবাহ বিন্যাসের মধ্যে পুনঃসমঝোতা হয়ে থাকে (readjustment in general planetary circulation patterns)। ধীরে ধীরে এই বায়ু সমগ্র ভারতসহ পূর্ব আফ্রিকার বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে। ঊর্ধ্ব বায়ুস্তরে সৃষ্ট এই ধরনের জেট বায়ু ভারতীয় উপমহাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনের অনুকূল পরিবেশ রচনা করে। এই কারণে সমগ্র ভারতেই মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ সচল থাকে। দক্ষিণ ভারতে মৌসুমি বায়ুর গভীরতা 6.5 কিমি হলেও গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে এর গভীরতা মাত্র ১ কিমি। এই মৌসুমি বায়ুর উপরে পুবালি জেট বায়ুর একটি স্তর (overlyn by a layer of ensterly with লক্ষ্য করা যায় ।

সুতরাং, বিস্ফোরণের মাধ্যমে মৌসুমি বায়ু উপকূল অঞ্চলে হঠাৎ করে ফেটে পড়ে। ঘটনাটি অত্যন্ত দ্রুত বা আকস্মিকভাবে হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু ভারতীয় ভূ-খণ্ডে প্রবেশের প্রাক্কালে দেখা যায়, কেরালার অদূরে আরবসাগরে এবং ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের নিকটস্থ বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ কোশের (low pressure cell) সৃষ্টি হয়। নিম্নচাপটি আরো গভীর ও ঘনীভূত হয়ে ডিপ্রেসন (depression)-এ পরিণত হয়। এই ধরনের নিম্নচাপ কোশ মৌসুমি বায়ুর আগমনের পথ পরিষ্কার করে। মৌসুমি বায়ুকে টেনে নিয়ে আসে বলে এই ধরনের নিম্নচাপ কোশকে আগমনকালীন ঘূর্ণিবাত্যা (onset vortex) বলা হয়। আগমনকালীন ঘূর্ণিবাত্যার মাধ্যমেই মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে।

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | মৌসুমি

Q1. মৌসুমি বিস্ফোরণ কি

Ans – কোন কোন বছর মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারত তথা অন্যান্য মৌসুমি বায়ুর প্রভাবিত অঞ্চল গুলিতে প্রচুর পরিমান বৃষ্টিপাত হয়, যা স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি। ফল স্বরূপ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একেই মৌসুমি বিস্ফোরন বলে। সাধারণত যে যে বছর প্রশান্ত মহাসাগরের এল নিনো উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না সে সে বছর দক্ষিন পশ্চিম মৌসুমি বায়ু যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়।

Q2. ভারতীয় অর্থনীতিতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব

Ans – পাট শিল্প, চা শিল্প, বস্ত্র বয়ন শিল্প, চিনি শিল্প প্রভৃতি শিল্পগুলি কৃষির ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে বলে মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন শিল্পেও প্রভাবফেলে। অতিবৃষ্টি বা খরা কৃষি উৎপাদনকে ব্যাহত করে। তাই শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন কম হয়, এতে শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

Q3. মৌসুমি বায়ু কি ধরনের বায়ু

Ans – মৌসুমি বায়ু দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ুতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারকারী বায়ুপ্রবাহ। ধারণা করা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় মৌসুমি বায়ুচক্রটির সূত্রপাত ঘটে হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টির সময় থেকে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের দিকও পরিবর্তিত হয়।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।