গোষ্ঠী কাকে বলে, সামাজিক গোষ্ঠী কাকে বলে, সামাজিক গোষ্ঠী কত প্রকার ও কী কী, প্রাথমিক গোষ্ঠী কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

গোষ্ঠী কাকে বলে

সাধারণ অর্থে এক বা একাধিক মানুষের সংগঠিত ও পারস্পরিক সুসম্পর্কের বিষয়কে গোষ্ঠী বলা হয়ে থাকে। আর যেহেতু সমাজের মধ্যে এই গোষ্ঠীর জন্ম তাই একে সামাজিক গোষ্ঠী হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে। তাই যখন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রিত হয় ও একে অপরের মধ্যে প্রভাব ফেলে, তখন তাকে সামাজিক গোষ্ঠী বলে।

সুতরাং আমরা বলতে পারি যে , পরস্পরের প্রতি পরস্পর প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিতে ক্রিয়াশীল দুই বা ততোধিক মানুষ সংঘবদ্ধ হলে তাকে গোষ্ঠী বা দল বলে।

সামাজিক গোষ্ঠী কাকে বলে

সামাজিক গোষ্ঠী একটি sociological Term,অর্থাৎ কোনো একটি নির্দিষ্ট সামাজিক প্রেক্ষাপটে যে নির্দিষ্ট আর্থিক,রাজনৈতিক,প্রাক্ষোভিক তথা সার্বিক ব‍্যবস্থাপনা গড়ে উঠে সেটাই সামাজিক গোষ্ঠী নামে অভিহিত.এবার গোষ্ঠী বিষয়টি একাধিক মানুষ তথা নিম্ম শ্রেণীর বুদ্ধিবৃত্তিক জীবের মধ‍্যে গড়ে উঠে নির্দিষ্ট কতকগুলি চাহিদা তথা লক্ষ‍্যভিত্তিক পর্যায়ে.বিভিন্ন রাষ্ট্রের নিজস্ব ভৌগলিক,সামাজিক,আর্থনৈতিক এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের উপর দাঁড়িয়ে সামাজিক গোষ্ঠী রচিত হয় । 

প্রাচীন যুগে অর্থাৎ বৈদিক যুগে ব্রাহ্মণ,হ্মত্রিয়,বৈশ‍্য,শুদ্র প্রভৃতি সম্প্রদায় তৎকালীন যুগোপযোগী দাবী এবং প্রবৃত্তি অনুসারে নিজস্ব গোষ্ঠী রচনা করেছিলেন এবং যুগের পরিবর্তনের সাথে এই দাবী এবং প্রবৃত্তি অবশ‍্যম্ভাবী ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী সামাজিক গোষ্ঠী রচনা হয়েছে । 

যদি European History র দিকে নজর রাখি তাহলে দেখা যায় শিল্পবিল্পব বা Industrial Revelution এর সময় মূলত দুটি সামাজিক গোষ্ঠীর উদ্ভব হয় যেমন মালিক অর্থাৎ পুজিঁপতি বা Capitalist শ্রেণী এবং শ্রমিক শ্রেণী বা সর্বহারা শ্রেণী । 

সামাজিক গোষ্ঠীর সংজ্ঞা প্রসঙ্গে অধ্যাপক বটোমর বলেছেন – 

” সামাজিক গোষ্ঠী এমন কিছু ব্যক্তির সমষ্টি – ১. যাদের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পারস্পরিক সম্পর্ক থাকে এবং ২. যারা প্রত্যেকে গোষ্ঠীজীবন ও তার প্রতীকী রূপগুলি সম্পর্কে সচেতন। 

ম্যাকাইভার ও পেজ – এর মতে , 

গোষ্ঠী বলতে আমরা বুঝি পারস্পরিক নির্দিষ্ট সামাজিক সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তির সমষ্টিকে। এখানে গোষ্ঠী হল ব্যক্তিবর্গের পারস্পরিক সম্বন্ধ। 

জিসবার্ট – এর মতে , 

সামাজিক গোষ্ঠী হল পরস্পরের সঙ্গে ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়াশীল ও একটি স্বীকৃত সংগঠন সম্বলিত মনুষ্য সমষ্টি। 

বোগারদাসের মতে ,

যখন একাধিক ব্যক্তি একই প্রকার উদ্দেশ্যযুক্ত হয় ও একে অন্যের ওপর প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে সাধারণ একটি দায়বদ্ধতা থেকে একই প্রকার কাজকর্ম করে থাকে , তাকে সামাজিক গোষ্ঠী বলে।  

অর্থাৎ , সামাজিক গোষ্ঠী হতে হলে – ১. একের অধিক জনসংখ্যা থাকতে হবে , ২. জনসংখ্যার মধ্যে একটি লক্ষ্যের ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকতে হবে। 

সুতরাং আমরা বলতে পারি যে , পরস্পরের প্রতি পরস্পর প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিতে ক্রিয়াশীল দুই বা ততোধিক মানুষ সংঘবদ্ধ হলে তাকে গোষ্ঠী বা দল বলে। 

সামাজিক গোষ্ঠী কত প্রকার ও কী কী

সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীভাগ কয়েকটি মানদন্ডের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। অধ্যাপক বটোমর তাঁর Sociology গ্রন্থে বলেছেন , সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় মানদন্ড বেশ কয়েকটি ; যেমন – গোষ্ঠীর লক্ষ্য , গোষ্ঠীর সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের আবেগপ্রবণতা ও বৌদ্ধিক চরিত্র , সম্পর্কের ব্যক্তিগত প্রকৃতি , গোষ্ঠীর আয়তন ও স্থায়িত্ব। 

মরিস জিনসবার্গ সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগের ক্ষেত্রে গোষ্ঠীর আয়তন , স্থায়িত্ব , আঞ্চলিক বন্টন , গঠন প্রক্রিয়া , সাংগঠনিক প্রকৃতি – প্রভৃতি বিষয়গুলিকে উল্লেখ করেছেন। 

সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রেণীবিভাগগুলি নিম্নরূপ :- 

১. অন্তর্গোষ্ঠী ও বহির্গোষ্ঠী ( In – group and Out – group )

অধ্যাপক সামনার ( W.G. Sumner ) তাঁর Folkways গ্রন্থে এই শ্রেণীবিভাজনটি করেছেন। গোষ্ঠীর প্রতি তার সদস্যদের মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে এই ভাগ করা হয়েছে। 

নিজের গোষ্ঠীর সাথে তার সদস্যদের নিবিড় সম্পর্ক থাকে। নিজের গোষ্ঠীর সদস্যরা একটি আন্তরিকতার গভীর বন্ধনে সংযুক্ত। তাদের মধ্যে গভীর ” আমরা বোধ ” বর্তমান। নিজেদের ক্লাব , নিজেদের পাড়া – এগুলি অন্তর্গোষ্ঠীর উদাহরণ। 

অন্যদিকে , ব্যক্তি যে গোষ্ঠীর সদস্য নয় , তার প্রতি তার মনোভাব ঔদাসীন্যের , কখনো বা শত্রুতার – ওই ব্যক্তির কাছে উক্ত গোষ্ঠীটি হল বহির্গোষ্ঠী। যেমন – অন্যের ক্লাব। 

২. (ক ) ঐচ্ছিক গোষ্ঠী ও অনৈচ্ছিক গোষ্ঠী  , (খ ) প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠী , ( গ ) স্বল্পস্থায়ী গোষ্ঠী ও স্থায়ী গোষ্ঠী। 

Charles A. Ellwood তাঁর Psychology of Human Society গ্রন্থে এই তিন ধরণের শ্রেণীবিভাগের উল্লেখ করেছেন। 

(ক ) ঐচ্ছিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এর সদস্যপদ ব্যক্তির ইচ্ছা – অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। যেমন ক্লাব , রাজনৈতিক দল – ইত্যাদি। আবার অনৈচ্ছিক গোষ্ঠী হল এমন ধরণের গোষ্ঠী যার সদস্যপদ ব্যক্তির ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল নয়। সাধারণত , জন্মসূত্রে ব্যক্তির সদস্যপদ এক্ষেত্রে নির্ধারিত হয়। যেমন – পরিবার।  

(খ ) প্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠী হল এমন ধরণের গোষ্ঠী যার বেশকিছু নিয়মনীতি , রীতিনীতি বা প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন – বিদ্যালয় , জাতিব্যবস্থা – ইত্যাদি। 

অন্যদিকে অপ্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠীগুলিতে এজাতীয় প্রাতিষ্ঠানিক বৈশিষ্ট অনুপস্থিত। যেমন – ক্ষিপ্ত জনগণ , বিদ্যালয়ের কমন রুমের গোষ্ঠী। 

(গ ) স্থায়িত্বের ওপর ভিত্তি করে তৃতীয় শ্রেণীবিভাগটি করা হয়ে থাকে। সাধারণভাবে , স্থায়ী গোষ্ঠী দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় কিন্তু অস্থায়ী গোষ্ঠী বেশিদিন স্থায়ী হয়না। 

৩. প্রাথমিক গোষ্ঠী ও গৌণ গোষ্ঠী :- ( Primary and Secondary Group )

গোষ্ঠীর সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রকৃতি ও গুনাগুনের ওপর ভিত্তি করে এই বিভাজনটি করা হয়েছে। মার্কিন সমাজতত্ববিদ অধ্যাপক কুলি তাঁর Social Organisation গ্রন্থে উক্ত শ্রেণীভাগটি করেছেন। 

প্রাথমিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে প্রত্যক্ষ , মুখোমুখি ও আন্তরিক সম্পর্ক থাকে। প্রাথমিক সবচেয়ে প্রধান উদাহরণ হল পরিবার।     আবার , অন্যদিকে , গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক পরোক্ষ ও গৌণ প্রকৃতির। যেমন – রাষ্ট্র। 

৪. বিধিবদ্ধ ও অবিধিবদ্ধ গোষ্ঠী ( Formal and Informal Group )

এটি মূলতঃ এলউড কৃত প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠীরই সমরূপ। বিধিবদ্ধ গোষ্ঠীর সদস্যদের আচার – আচরণ ও কাজকর্ম সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম বিধি দ্বারা পরিচালিত হয়। যেমন – সেনাবাহিনী , শ্রেণীকক্ষের ছাত্র – ছাত্রী – ইত্যাদি। 

অন্যদিকে , অবিধিবদ্ধ গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সদস্যদের আচার আচরণের ওপর গোষ্ঠীর নিয়মবিধির ততটা কড়াকড়ি থাকে না। অবিধিবদ্ধ গোষ্ঠীর সদস্যরা এক্ষত্রে যথেষ্ট স্বাধীনতা উপভোগ করে থাকেন। যেমন , পর্যটক দল , পিকনিকের দল – ইত্যাদি। 

সামাজিক গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য

১. ব্যক্তি সমষ্টি বা জনসমষ্টি :- সামাজিক গোষ্ঠী হল ব্যক্তিবর্গের সমষ্টি। ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে গোষ্ঠী তৈরী হতে পারে না। ব্যক্তি গোষ্ঠীর একক। গোষ্ঠী গঠনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিবর্গের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ , ব্যক্তি সমষ্টিগতভাবে পারস্পরিক ক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত হলে তাকেই গোষ্ঠী হিসাবে গণ্য করা হয়। 

২. ব্যক্তিবর্গের পারস্পরিক সম্পর্ক :- শুধুমাত্র যে কোনো ব্যক্তি সমষ্টিকে গোষ্ঠী বলা হয় না। গোষ্ঠীর সদস্যগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গোষ্ঠী সৃষ্টির অপরিহার্য বিষয়। এটি গোষ্ঠীর ভিত্তি স্বরূপ। সমাজতাত্ত্বিকগণের মতে , এই সম্পর্ক সবসময় দৈহিক হতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই , তা মানসিকও হতে পারে। 

৩. পারস্পরিক বোঝাপড়া :- গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে একটি পারস্পরিক সহযোগিতা , সহচর্য ও ভাবের আদান প্রদান লক্ষ্য করা যায়। 

৪. গোষ্ঠী চেতনা :- গোষ্ঠীর সদস্যদের মনে একপ্রকার চেতনা জাগ্রত হয় , যার দ্বারা সে তার গোষ্ঠীর সঙ্গে নিজের সম্পর্ককে খুঁজে পায়। সে উপলব্ধি করে যে , সে বিচ্ছিন্ন নয় ; সে এক বৃহৎ সমগ্রতার অংশ। এই গোষ্ঠীচেতনা ব্যক্তিকে অন্যের প্রতি সহযোগী ও সহানুভূতিশীল হতে সাহায্য করে। এই গোষ্ঠী চেতনা ব্যক্তির সদস্যদের মধ্যে দলীয় মনোভাব বা Team Spirit জাগ্রত করে এবং এই মনোভাব ব্যক্তি স্বার্থের তুলনায় গোষ্ঠী স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। 

৫. আমরা – বোধ :- গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে আমরা একই গোষ্ঠীর বা একই সাধারণ জীবনের অংশীদার –  এরকম এই বোধ কাজ করে। এই বোধ গোষ্ঠীর সদস্যদের অন্য গোষ্ঠীর সদস্যদের থেকে আলাদা করে রাখে। স্বভাবতই আমরা বোধ বা We feeling  থেকেই গোষ্ঠীর নিজস্বতা বা স্বতন্ত্রতা তৈরি হয়। আমরা সকলে মিলে একটি একক , আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য – গোষ্ঠীবদ্ধ সদস্যদের এরূপ মানসিকতা গোষ্ঠী গঠনে ও সংরক্ষণে অত্যন্ত সহায়ক। এরূপ মনোভাব থাকলে অনেক সময় দৈহিক সান্নিধ্যের বিষয়টিও গৌণ হয়ে পড়ে। 

৬. ঐক্য ও সংহতি :-  গোষ্ঠীর সদস্যরা একটি ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ।  এই ঐক্য থেকেই জন্ম হয় গোষ্ঠী সংহতি বা group solidarity – র।  এই একাত্মতা বা ঐক্যবোধ সদস্যদের পরস্পরের আবেদনে সাড়া দিতে শেখায় ও অনুপ্রাণিত করে। গোষ্ঠীর মধ্যেকার এই ঐক্য ও সংহতি সদস্যদের একই বন্ধনে বেঁধে রাখে। 

৭. সাধারণ উদ্দেশ্য :- গোষ্ঠীর সদস্যদের স্বার্থ ও আদর্শ সমজাতীয় হয়। মানুষ তখনই কোন গোষ্ঠীভুক্ত হয় , যেখানে তার স্বার্থ সেই গোষ্ঠীর অন্যান্যদের সাথে সমগোত্রীয় বা অভিন্ন হয়ে থাকে। এইভাবে গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে একটি সাধারণ সাধারণ উদ্দেশ্য দেখা যায়। 

৮.অভিন্ন আচার-আচরণ ও জীবনযাত্রা :- গোষ্ঠীর সদস্যদের স্বার্থ বা প্রয়োজন অভিন্ন ও তাদের মধ্যে সম্পর্ক থাকায় তারা সেই প্রয়োজন মেটানোর জন্য যৌথভাবে সচেষ্ট হয়। এইভাবে দেখা যায় , তাদের আচার-আচরণও অভিন্ন হয়ে থাকে। এই আচরণগত অভিন্নতা থেকেই তারা অভিন্ন জীবনযাত্রার অংশীদার হয়ে পড়ে। 

৯. নিয়মকানুন :– প্রত্যেক গোষ্ঠীরই কোনো না কোনো নিয়ম-কানুন থাকে। গোষ্ঠীর সদস্যরা সাধারণত এগুলিকে মেনে চলে বা কোনো কোনো সময় মেনে চলতে বাধ্য থাকে। গোষ্ঠীর তার সদস্যদের এগুলোকে মান্য করার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চাপ সৃষ্টি করে থাকে। ব্যক্তি তা স্বত্তেও এগুলি না মানলে তাকে গোষ্ঠী থেকে খারিজ করা হয়। 

১০. গোষ্ঠীর আকার :– ক্ষুদ্রাকৃতি ও বৃহদাকৃতির উভয়ই হতে পারে। মাত্র দুইজন ব্যক্তিকে নিয়েও গোষ্ঠী তৈরি হতে পারে , আবার লাখ লাখ লোক জন নিয়েও একটিমাত্র গোষ্ঠী তৈরি হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ,  স্বামী-স্ত্রী এই দুজন কে নিয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরি হয় যার নাম পরিবার।  আবার কোনো রাজনৈতিক দলও একটি গোষ্ঠী যাতে লাখ লাখ সদস্য থাকতে পারে। 

১১. গোষ্ঠী গতিশীল :- গোষ্ঠী স্থিতিশীল নয়। এর আকার , আকৃতি , সদস্যসংখ্যা , উদ্দেশ্য , কার্যাবলী প্রভৃতির পরিবর্তন হয়। গোষ্ঠীর সদস্যদের একদিকে যেমন মৃত্যু হয় , আবার অন্যদিকে নতুন সদস্য জন্মায়। আবার বাইরের কোনো শক্তির প্রভাবে এর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। 

১২. স্থায়িত্ব :-  গোষ্ঠী মোটামুটি একটি স্থায়ী সংগঠন। তবে কিছু কিছু গোষ্ঠী আছে যাদের উদ্দেশ্য সীমিত , সেগুলি অল্প সময়ের মধ্যে উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে গেলেই বিলুপ্ত হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে বলা হয় , সমষ্টিগত জীবনধারণের জন্য কিছুটা দীর্ঘসময়ের স্থায়িত্ব বা অবিচ্ছিন্নতার প্রয়োজন হয়। তা না হলে গোষ্ঠী গড়ে ওঠে না।

১৩.  সম্পত্তি :-  প্রত্যেক গোষ্ঠীরই কোনো না কোনো সম্পত্তি থাকে। তবে সম্পত্তি বলতে শুধুমাত্র বস্তুগত বিষয়াদিকে বোঝায় না।  এগুলি ভাবমূলক এবং আধ্যাত্মিক প্রভৃতিও হতে পারে। অট্টালিকা ,অর্থ,  পতাকা ,  বিশেষ ভাবাদর্শ প্রভৃতি গোষ্ঠীর সম্পত্তি বলে বিবেচিত হয়। 

১৪. ব্যক্তিত্বের প্রভাবক :- গোষ্ঠীর মধ্যেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের উন্মেষ ও বিকাশ ঘটে।  অর্থাৎ গোষ্ঠীই  ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে প্রভাবিত করে থাকে। 

সামাজিক গোষ্ঠীর গুরুত্ব

মানবসমাজধারার অন্যতম ভিত্তি হলো গোষ্ঠী জীবন। সমাজের অবস্থান , কাঠামো , ধারাবাহিকতা ,  পরিবর্তন এসব কিছুই গোষ্ঠীগুলির ক্রিয়াশীলতার ওপর নির্ভরশীল। ব্যক্তি জন্ম থেকে মৃত্যু অর্থাৎ তার সামগ্রিক জীবনধারা প্রবাহিত হয় গোষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে। এখানেই সে খুঁজে পায় ”সামাজিক জীব” হিসেবে পরিচিতি ও পরিব্যাপ্তি।

গোষ্ঠীজীবনে অন্তর্ভুক্তি ছাড়া ব্যক্তি দৈনন্দিন প্রয়োজনাদি মিটিয়ে নিতে পারে না ,  আবার সামাজিকতা থেকেও সরে থাকতে পারেনা। তাই তাকে পরিবার থেকে শুরু করে ক্লাব , সংগঠন,  বন্ধুগোষ্ঠী , পেশাগত সংস্থা প্রভৃতি একাধিক গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে থাকতে হয়। এগুলির হাত ধরেই ব্যক্তি খুঁজে পায় তার সামাজিক সম্পূর্ণতা। যাইহোক , সামাজিক গোষ্ঠীর গুরুত্বসমূহকে  নিন্মলিখিতভাবে পর্যালোচনা করা যেতে পারে। 

১. গোষ্ঠী ব্যতীত মানুষের বেঁচে থাকা অসম্ভব না হলেও অত্যন্ত কষ্টকর। কারণ , মানুষ তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার , নানারকম স্বার্থ চরিতার্থ করার এবং উদ্দেশ্য পূরণের সুযোগ লাভ করে গোষ্ঠীর মাধ্যমেই। 

২. সামাজিক পরিবেশ বাদ দিয়ে মানুষ একটি প্রাণী থেকে সামাজিক জীব হয়ে উঠতে পারে না। সে সামাজিক হয়ে ওঠে সামাজিকীকরণের মাধ্যমে এবং এই সামাজিকীকরণ হয়ে থাকে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সহায়তায়। অর্থাৎ গোষ্ঠীগুলিই ব্যক্তিকে ”মানুষে” পরিণত করে এবং তার সামাজিক চরিত্রের বিকাশ ঘটায়।  তাই বলা হয় Man only becomes man among men  । 

৩. গোষ্ঠীজীবন হলো সমাজ জীবনের অংশবিশেষ। এটি সমাজজীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকে , আবার এই পারস্পরিক সম্পর্কের জটাজালই হল সমাজ। তাই শুধুমাত্র ব্যক্তির অস্তিত্বের প্রয়োজনেই নয় , সমাজের অস্তিত্বও গোষ্ঠীর উপর নির্ভরশীল। 

৪. গোষ্ঠী তার সদস্যদের মধ্যে এক প্রকার গোষ্ঠী চেতনার উন্মেষ ঘটায় , যার দ্বারা ব্যক্তির মধ্যে এই উপলব্ধি কাজ করে যে , সে পৃথিবীতে একা নয় , সে সমগ্রতার অংশবিশেষ। এইভাবে গোষ্ঠী ব্যক্তির  মনে তার অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা প্রদান করে। 

৫. গোষ্ঠীর নিয়মকানুন বর্তমান। গোষ্ঠীর সদস্যরা সাধারণত এগুলো মেনে চলে। ব্যক্তি স্বতঃস্ফূর্তভাবে না মানতে চাইলে গোষ্ঠী তার সদস্যদের এগুলি মানতে বাধ্য বাধ্য করে। এভাবে গোষ্ঠী জীবনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে ব্যক্তি নিয়মানুবর্তী হতে শেখে। 

প্রাথমিক গোষ্ঠী কাকে বলে, মুখ্য গোষ্ঠী কাকে বলে

যে গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত তাকে প্রথমিক গোষ্ঠী বা মুখ্য গোষ্ঠী বলে। যেমন- পরিবার।

প্রাথমিক গোষ্ঠী হল এমন একটি গোষ্ঠী যা তার সদস্যদের মুখোমুখি সম্পর্ক , পারস্পরিক সহযোগিতা ও সাহচর্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। এই ধরনের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে মিশে থাকে ঘনিষ্ঠতা – অন্তরঙ্গতা।  এই অন্তরঙ্গতা তার সদস্যদের মধ্যে গভীর ” আমরা বোধ ”  সঞ্চারিত করে। এই আমরা বোধ – ই  হলো প্রাথমিক গোষ্ঠীর এক ও অখন্ড বৈশিষ্ট্যের পরিচয়বাহী। 

অর্থাৎ, প্রাথমিক গোষ্ঠী হল মুখোমুখি পরিচয়যুক্ত সদস্যদের সমষ্টি। সদস্যদের এই মুখোমুখি সম্পর্ক ( Face to face relation ) থাকে বলেই একে মুখোমুখি গোষ্ঠী ( Face to face group ) বলে .সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আন্তরিক , ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ। 

কুলি প্রাথমিক গোষ্ঠীর প্রাথমিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে তিনটি মুখ্য বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন।  এগুলি হল – 

১. সদস্যদের মুখোমুখি সম্পর্ক , 

২. সহযোগিতার সম্পর্ক ও 

৩. আমরা বোধ। 

এছাড়াও তিনি আনুগত্যের আবেগ , পরিচয় নির্ধারণ , বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক – প্রভৃতির কথাও  বলেছেন। 

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য , বটোমরের ” মুখ্য গোষ্টি ” কথাটি প্রাথমিক গোষ্ঠীরই সমার্থক। প্রাথমিক বা মুখোমুখি গোষ্ঠী হল সরাসরি ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর প্রতিষ্ঠিত , যার মধ্যে সদস্যরা একে অন্যের সাথে প্রত্যক্ষ আচার ব্যবহার করে থাকে। তিনি আরো বলেছেন , প্রাথমিক বা মুখোমুখি গোষ্ঠী , তা স্বল্পস্থায়ী বা স্থায়ী হোক , সামাজিকীকরণের সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনের মৌল উপাদান হলো প্রাথমিক গোষ্ঠী। পরিবার , খেলার সঙ্গী , খেলার গোষ্ঠী , অন্তরঙ্গ গোষ্ঠী – এই জাতীয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। 

প্রাথমিক গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য

১. প্রাথমিক সম্পর্ক :-  প্রাথমিক গোষ্ঠীর অপরিহার্য বিষয়ই হলো তার সদস্যদের প্রত্যক্ষ বা মুখোমুখি সম্পর্ক। প্রত্যক্ষ যোগাযোগই প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে প্রাথমিক সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে। এই সম্পর্ক সাধারণত এক ও অভিন্ন। 

২. উদ্দেশ্যের অভিন্নতা :– প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের উদ্দেশ্য ও মনোভাব কমবেশি অভিন্ন ও সমজাতীয় হয়ে থাকে। সদস্যরা তাদের এই অভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সমবেতভাবে সচেষ্ট হয়। অধ্যাপক কিংসলে ডেভিস – এর মতে , প্রাথমিক গোষ্ঠীর অন্তর্গত সদস্যদের উদ্দেশ্যগত অভিন্নতা গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যক্তিত্বের এক মনস্তাত্ত্বিক ঐক্য সৃষ্টি করে। 

৩. সম্পর্কের স্বকীয়তা :- প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনরূপ স্বার্থচিন্তা থাকেনা। এই সম্পর্ক কোনরূপ আর্থিক লাভ-ক্ষতির উপরে নির্ভর করে গড়ে ওঠেনা।   ব্যক্তিগত স্বার্থচিন্তা বা শুধুমাত্র নিজের লক্ষ্য পূরণের চিন্তা এই জাতীয় সম্পর্কের মধ্যে থাকে না। স্বামী স্ত্রীর প্রকৃত ভালোবাসার সম্পর্ক এই প্রাথমিক সম্পর্কের অন্যতম উদাহরণ। 

৪. ব্যক্তিগত সম্পর্ক :- প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যগনের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত প্রকৃতির। কোনো বিধিবদ্ধতার বেড়াজালে এই সম্পর্ক আবদ্ধ নয়। এই সম্পর্কের মধ্যে আন্ত মানবিক কোমল হৃদয়বৃত্তির উন্মোচিত হওয়ার প্রয়োজনীয় উপাদান বর্তমান থাকে। 

৫. সম্পর্কের গভীরতা :-  প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের সম্পর্ক যথেষ্ট গভীর। যেহেতু এই সম্পর্ক অত্যন্ত গভীরতা প্রাপ্ত হয় , সদস্যদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মিশে থাকে প্রেম – ভালোবাসা , শ্রদ্ধা – সহানুভূতি , সহযোগিতা – পরার্থচিন্তা প্রভৃতি মানবিক বিষয়াদি। 

৬. স্বতস্ফূর্ততা :- প্রাথমিক সম্পর্ক হল সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক। ব্যক্তি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই এই সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। অন্যের নির্দেশ বা কোনো চুক্তি অনুযায়ী ব্যক্তি এই সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয় না। অন্যের নির্দেশ বা কোনো চুক্তি অনুযায়ী ব্যক্তি অন্যের সাথে প্রাথমিক সম্পর্ক তৈরি করে না। তাছাড়া এই সম্পর্ক পরিকল্পনামাফিকও হয়না। 

৭. আয়তনে ক্ষুদ্রতা :- প্রাথমিক গোষ্ঠী মূলত ক্ষুদ্র আকৃতির হয়। গোষ্ঠীর আয়তন যত ক্ষুদ্র হয় প্রাথমিক সম্পর্কও তত গভীর হয়ে থাকে। আসলে , যেহেতু প্রাথমিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে দৈহিক নৈকট্যের বিষয়টি জরুরি , এই দৈহিক নৈকট্য তখনই সম্ভব হয় যখন সদস্যরা অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র অঞ্চলের মধ্যে আবদ্ধ থাকে। 

৮. দৈহিক নৈকট্য :- প্রাথমিক গোষ্ঠীকে Face to face group বা মুখোমুখি গোষ্ঠীও বলা হয়।  ”মুখোমুখি” বলতে বোঝায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তিদের দৈহিকভাবে কাছাকাছি অবস্থানকে। প্রাথমিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্টটি অবধারিতভাবে বর্তমান। 

৯. স্থায়িত্ব :- প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলি মোটামুটিভাবে স্থায়ী হয়। প্রাথমিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার জন্য বেশ খানিকটা সময় প্রয়োজন হয়। এই অনেকটা সময় গোষ্ঠী স্থায়িত্ব প্রমাণে যথেষ্ট। 

১০. সদস্যদের অভিন্নতা :- প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে নানা বিষয়ে মিল দেখা যায়।  এদের সামাজিক পটভূমি বা ব্যাকগ্রাউন্ড কমবেশি একই প্রকার হয়ে থাকে। তাদের সংস্কৃতি , বুদ্ধিবৃত্তি ,  চিন্তা-চেতনা , সামাজিক মান – মর্যাদা , মানসিকতা , জীবনযাত্রা প্রভৃতি একই জাতীয় হওয়ার জন্য তাদের মধ্যে সহজে ঐক্যবোধ , আন্তরিকতা , একাত্মতা , সহযোগিতা প্রভৃতি সহজেই গড়ে উঠতে পারে। 

১১. ব্যক্তিস্বার্থের সীমাবদ্ধতা :- প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলিতে সদস্যদের ব্যক্তিস্বার্থ গোষ্ঠীর স্বার্থের  তুলনায় কম গুরুত্ব পায়। এখানে ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কের খাতিরে অনেক সময় নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে থাকে। পারষ্পরিক আন্তরিকতা , আনুগত্যের জন্য গোষ্ঠীভুক্ত সদস্যগণ নিজেকে গোষ্ঠীর সাধারণ স্বার্থের অংশীদার বলে মনে করে থাকে , তাই তারা নিজ নিজ স্বার্থ চিন্তার  ঊর্ধ্বে উঠে গোষ্ঠীর সাধারণ স্বার্থ পূরণে একযোগে সমর্থন ও সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করে। 

১২.  বিশেষ উদ্দেশ্যহীনতা :- প্রাথমিক গোষ্ঠী কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয় না। বরং বলা যায় এর উদ্দেশ্য হলো সাধারণ ( Common ) । ব্যক্তি ও সমাজজীবনের প্রায় বেশিরভাগ প্রয়োজনগুলি এই জাতীয় গোষ্ঠী পূরণ করে থাকে। 

১৩. প্রত্যক্ষ সহযোগিতা :- প্রত্যক্ষ সহযোগিতা বলতে বোঝায় ব্যক্তি যে সকল সহযোগিতা অন্যকে সরাসরি প্রদান করে থাকে। প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে যে সহযোগিতার  প্রবণতা দেখা যায় তা মূলত প্রত্যক্ষ প্রকৃতির। 

১৪. সম্মিলিত স্বার্থের প্রাধান্য :-  একই গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার কারণে প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের স্বার্থ পূরণের জন্য একযোগে সচেষ্ট হয়। তারা এ ব্যাপারে পরস্পর পরস্পরের সাথে সহযোগিতামূলক আচরণ করে থাকে। এক্ষেত্রে তাদের নিজ নিজ স্বার্থ গৌণ প্রকৃতির হয়। 

১৫. যোগাযোগ :- যে কোনো সম্পর্ক মূলতঃ দুইভাবে তৈরি হয় – সংস্পর্শ ও যোগাযোগ। দৈহিক নৈকট্য – র মত এই গোষ্ঠীর সদস্যদের যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।  পরস্পরের মুখোমুখি সম্পর্ক , পরস্পরের মধ্যে একাত্মতা হৃদ্যতা গড়ে ওঠে যোগাযোগের মাধ্যমেই। 

১৬. বিশ্বজনীনতা :- প্রায় প্রত্যেকটি মানবসমাজে প্রাথমিক গোষ্ঠীর অস্তিত্ব চোখে পড়ে। এটি একটি বিশ্বজনীনরূপ। কুলি তাঁর Social Organisation গ্রন্থে বলেছেন , ক্রমবর্ধিষ্ণু যোগাযোগের ফলে মানুষ ক্রমান্বয়ে পরস্পর সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত হচ্ছে। সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে বিদ্বেষ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ফলে মানব জাতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাথমিক গোষ্ঠী বিষয়ক আবেগ ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে , কিন্তু আজকের এই বাস্তব সমাজের নিরিখে কুলির এইরূপ আশাবাদিতাকে অতিকথন বা Myth বলে মনে করা হয় .

গৌণ গোষ্ঠী কাকে বলে

যে গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে অন্তরঙ্গতা কম, সেই অনুযায়ী অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান হয়, তাকে গৌণ গোষ্ঠী বলে। তাই যে গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা অনেক বেশি, সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বা অন্তরঙ্গতা কম হয়ে থাকে ও যে গোষ্ঠী নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে গঠিত হয় তাকে গৌণ গোষ্ঠী বলে।

আধুনিক সমাজের অন্যতম উপাদান হল গৌণ গোষ্ঠীসমূহ। প্রকৃতিগত বিচারে প্রাথমিক গোষ্ঠীর বিপরীত বৈশিষ্ট্যগুলি বহন করে গৌণ গোষ্ঠি। এজাতীয় গোষ্ঠীগুলি মূলত বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তৈরি হয়ে থাকে। মূলত আধুনিক জীবনে নানাবিধ ও বিচিত্র স্বার্থ পূরণের জন্য তৈরি হয়। অনেক সময় এগুলিকে বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠী বা , Special Interest Group বলা হয়।

এই গোষ্ঠীর সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক সাধারণত আন্তরিকতা বর্জিত বা ঘনিষ্ঠতা মুক্ত হয়। সদস্যদের মধ্যে মুখোমুখি সম্পর্ক থাকে না বললেই চলে। শুধুমাত্র বিশেষ স্বার্থ পূরণের উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিবর্গের মধ্যে পরোক্ষ সম্পর্ক তৈরি হয় , কিন্তু তা প্রাথমিক গোষ্ঠীর মতো গভীর হয় না। তাছাড়া এই গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে মাত্র কয়েক জনের সাথে ব্যক্তিগত চেনা পরিচয় থাকে – যা প্রাথমিক গোষ্ঠীর মতো ব্যাপক নয়। 

জনসংখ্যাগত কাঠামোর মানদন্ডে এই সকল গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যবৃন্দ একই ধরনের মানসিক বন্ধনে আবদ্ধ নয় এবং এদের মধ্যে মূল থেকে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি ক্রিয়াশীল। এই গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে যে সহযোগিতা দেখা যায় তা পরোক্ষ প্রকৃতির।  শিল্প সংস্থার গোষ্ঠী , ব্যাংক , রাজনৈতিক দল প্রভৃতি অসংখ্য গৌণ গোষ্ঠি সমাজে বর্তমান। 

আমরা গৌণ গোষ্ঠী সম্পর্কে বলতে পারি , বিশেষ উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে তৈরি , সদস্যদের মধ্যে হৃদ্যতাবিহীন যে গোষ্ঠী , তাই হল গৌণ গোষ্ঠী।  একে আধুনিক সমাজের ফসল বলা হয়। বৈশিষ্ট্যগুলির  দিক থেকে দেখলে দেখা যায় , প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলির বিপরীত বৈশিষ্ট্যগুলি বহন করে গৌণগোষ্ঠীগুলি। 

গৌণ গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য

১. কৃত্রিমতা :-  গৌণ গোষ্ঠী একটি কৃত্রিম সংগঠন। এটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে তৈরি হয় না। মানুষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একে তৈরি করে। 

২. বৃহদাকৃতি :-  গৌণগোষ্ঠীগুলি সাধারণত বৃহদাকৃতির হয়। এর সদস্য সংখ্যা সীমিত নয়। একটি জাতি , রোটারি ক্লাব , বিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রভৃতি গৌণ গোষ্ঠীর বৃহদাকৃতির উদাহরণ। 

৩. গৌণ সম্পর্কের প্রাধান্য :- গৌণ সম্পর্ক বলতে সদস্যদের পরোক্ষ , বাহ্যিক , চুক্তিনির্ভর , ব্যাপ্তিহীন সম্পর্ক কে বোঝায়। এজাতীয় সম্পর্কে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা বা একাত্মতা থাকেনা। শুধুমাত্র প্রয়োজনকে  সামনে রেখে এজাতীয় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই জাতীয় গৌণ সম্পর্কের উদাহরণ হল – কর্মচারী – ক্রেতা , বক্তা – শ্রোতা প্রভৃতির মধ্যে যে সম্পর্ক। 

৪. বিশেষ উদ্দেশ্য :- গৌণ গোষ্ঠী সাধারণত বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য কে কেন্দ্র করে গঠিত হয়ে থাকে। এখানে মূখ্য বিষয় হলো উদ্দেশ্য ; ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়টি গৌণ। উদ্দেশ্যের বিশিষ্টতা বা প্রাধান্যের পরিপ্রেক্ষিতে গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যদের ভূমিকা হল সীমিত। স্বার্থ বা উদ্দেশ্য ছাড়া এজাতীয় গোষ্ঠী গড়ে ওঠে না বললেই চলে। তাই একে বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠী বা , Special Interest Group বলা হয়ে থাকে। 

৫. সদস্যপদ :- বেশিরভাগ প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যপদের বিষয়টি যেমন ব্যক্তির ইচ্ছাধীন নয় , গৌণ গোষ্ঠীর বেলায় এরূপ হয়না। গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যপদ গ্রহণ বা বর্জন বিষয়টি মোটামুটি ভাবে ব্যক্তির ইচ্ছা নির্ভর। সে তার প্রয়োজনমতো ও ইচ্ছামতো যেকোনো গৌণগোষ্ঠীতে যোগ দিতে পারে ; আবার প্রয়োজন মিটে গেলে বা ভালো না লাগলে তার সদস্যপদ ত্যাগ করতে পারে। অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সদস্যপদ বর্জনের বিষয়টি ব্যক্তির ইচ্ছা নির্ভর নাও হতে পারে। যাইহোক , গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যপদের বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয় , অনেকখানি ব্যক্তির নিজস্ব ইচ্ছা-অনিচ্ছা নির্ভর। ব্যতিক্রম হিসেবে বলা যায় , রাষ্ট্র। এই গৌণ গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এই কথাটি ঠিক খাটেনা। 

৬. সাংগঠনিক কাঠামো :- প্রত্যেক গৌণ গোষ্ঠীরই একটি করে বিধিবদ্ধ সাংগঠনিক কাঠামো থাকে , যার দ্বারা এর কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত হয়। এর সদস্য সংখ্যা বেশি ও আকার বৃহৎ হওয়ার কারণে এর একটি সাংগঠনিক দিক অপরিহার্য এবং তা বিধিবদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। 

৭. স্থায়িত্ব :- গৌণ গোষ্ঠীগুলি অপেক্ষাকৃত অস্থায়ী প্রকৃতির। সাধারণত এর উদ্দেশ্যগুলি পূরণ হয়ে গেলেই  এটি বিলুপ্ত হয়। উদ্দেশ্যের প্রকৃতির ওপর এর স্থায়িত্ব নির্ভর করে। যদি দেখা যায় কোনো গৌণ গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য নানাবিধ এবং তা পূরণ বেশ সময়সাপেক্ষ , সেক্ষেত্রে এগুলি একটু বেশি সময় স্থায়িত্ব লাভ করে। 

৮. দৈহিক নৈকট্যের প্রয়োজনহীনতা :- গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যদের ক্ষেত্রে দৈহিক নৈকট্যের প্রয়োজন নেই।  এটি বাদ দিয়েও গোষ্ঠীর অস্তিত্ব টিকে থাকা সম্ভব। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সামাজিক সম্পর্কের বিষয়ে সংস্পর্শে ভূমিকা অতি নগন্য। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আন্তর্জাতিক রেডক্রস সোসাইটি নামক গৌণ গোষ্ঠীর কথা। এর সদস্যরা সারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকে। 

৯. নিয়ন্ত্রণের প্রকৃতি :- গৌণগোষ্ঠী প্রধানত সদস্যদের আচার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে বিধিবদ্ধ কিছু পদ্ধতির মাধ্যমে। সাধারণত সুনির্দিষ্ট সুবিন্যাস্ত উল্লিখিত শর্ত ও চুক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় গৌণ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত পারস্পরিক সম্পর্ক। এই গৌণ গোষ্ঠীসমূহের ক্রিয়া-কলাপ যান্ত্রিক বা কৃত্রিম প্রকৃতির। এখানে আইন , পুলিশ , কোর্ট – প্রভৃতির মাধ্যমে সে তার নিয়ন্ত্রণ বহাল রাখে।  নৈতিক নিয়ন্ত্রণ অবিধিবদ্ধ  মাধ্যমগুলি এক্ষেত্রে গৌণ , কারণ এগুলি সদস্যদের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে খুব বেশি কার্যকর হয় না। 

১০. পরোক্ষ যোগাযোগ :- গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ প্রায় থাকে না বা এর খুব বেশি প্রয়োজনীয়তাও নেই। যেহেতু এই জাতীয় গোষ্ঠীর উৎপত্তি মুখোমুখি প্রত্যক্ষ পরিচয় অর্থাৎ প্রাথমিক সম্পর্কের ভিত্তিতে হয় না , তাই এই সদস্যদের পারস্পরিক যোগাযোগও আন্তরিক বা অন্তরঙ্গ হয়না। প্রয়োজন ছাড়া ব্যক্তিগত পরিচয়ের জন্য বা সান্নিধ্যলাভের জন্য সদস্যরা গৌণ গোষ্ঠিতে সমবেত হন না। তাদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে – ডাক , টেলিফোন , টিভি , সংবাদপত্র প্রভৃতির মত গণমাধ্যমগুলির। 

১১. ব্যক্তিত্বের উপর খুব বেশি ক্রিয়াশীল নয় :- প্রাথমিক গোষ্ঠীকে ব্যক্তিত্বের মুখ্য রূপকার বলা হয় , গৌণ গোষ্ঠীকে তা বলা যায়না। বলা হয়ে থাকে , ব্যক্তিত্বের ওপর গৌণ গোষ্ঠীর বিশেষ কোনো প্রভাব নেই। 

১২. পরোক্ষ সহযোগিতা :-  এই জাতীয় গোষ্ঠীতে সদস্যগণের সহযোগিতার প্রকৃতি পরোক্ষ। এই সকল গোষ্ঠীতে মানুষ স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে ভিন্ন ভিন্ন কাজ কর্ম সম্পাদনে আত্মনিয়োগ করে। পারস্পরিক পরোক্ষ নির্ভরশীলতার মাধ্যমে কাজকর্ম সম্পাদিত হয়। এই পরোক্ষ সহযোগিতা শ্রমবিভাজন রূপটি প্রকট করে তোলে। 

১৩. ব্যক্তির মর্যাদা ভূমিকা নির্ভর :- এই সকল গোষ্ঠীর সদস্যদের মর্যাদা তাদের জন্মগত বৈশিষ্ট্য বা ব্যক্তিগত গুণাবলীর ওপর নির্ভরশীল নয়। তাদের সামাজিক মর্যাদা নির্ভর করে তারা কোথায় কীরূপ  ভূমিকা পালন করে থাকেন , তার প্রকৃতির ওপর। অর্থাৎ এই গোষ্ঠীতে ব্যক্তির মর্যাদা ভূমিকা নির্ভর। 

মুখ্য গোষ্ঠী ও গৌণ গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য

মুখ্য দল ও গৌণ দলের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হলো-

প্রকারমুখ্য গোষ্ঠীগৌণ গোষ্ঠী
সংজ্ঞাপ্রাথমিক গোষ্ঠী বলতে মুখোমুখি , প্রত্যক্ষ ও গভীর সম্পর্ক এবং সাহচর্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা গোষ্ঠীকে বোঝায়। অন্যদিকে গৌণ গোষ্ঠী হল প্রয়োজনের তাগিদে গড়ে ওঠা পরোক্ষ , বাহ্যিক , চুক্তিনির্ভর ব্যাপ্তিহীন সম্পর্কযুক্ত গোষ্ঠীকে বোঝায়। 
উদাহরণপ্রাথমিক গোষ্ঠীর উদাহরণ হল – পরিবার , অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী , খেলার দল – ইত্যাদি। অন্যদিকে গৌণ গোষ্ঠীর উদাহরণ হল – রাজনৈতিক দল , রাষ্ট্র – ইত্যাদি। 
উৎপত্তিপ্রাথমিক গোষ্ঠী স্বতঃপ্রণোদিত বা স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে তৈরী হয়। অন্যদিকে , গৌণ গোষ্ঠী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৈরী হয়। 
আকারপ্রাথমিক গোষ্ঠী আকারে ছোট হয়। গোষ্ঠীর আকার যত ছোট হয় , পারস্পরিক সম্পর্ক তত দৃঢ় হয়। অন্যদিকে , গৌণ গোষ্ঠী আকারে খুব বড় হয়। এমনও গোষ্ঠী আছে যারা সারা পৃথিবীজুড়ে থাকতে পারে। 
সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কপ্রাথমিক গোষ্ঠী গড়ে ওঠে প্রাথমিক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে। এই প্রাথমিক সম্পর্ক হল মুখোমুখি , অন্তরঙ্গ , ব্যক্তিগত , একাত্মতাপূর্ণ। অন্যদিকে , গৌণ গোষ্ঠীতে গৌণ সম্পর্কের প্রাধান্য দেখা যায়। এ জাতীয় সম্পর্ক পরোক্ষ , বাহ্যিক , চুক্তিনির্ভর হয়ে থাকে। 
স্থায়িত্বপ্রাথমিক গোষ্ঠী অপেক্ষাকৃত দীর্ঘস্থায়ী। অন্যদিকে , গৌণ গোষ্ঠীগুলি সাধারণতঃ স্বল্পস্থায়ী বা অস্থায়ী। এজাতীয় গোষ্ঠীর স্থায়িত্ব মূলত উদ্দেশ্যের প্রকৃতি ও ব্যাপকতার ওপর নির্ভরশীল। 
দৈহিক নৈকট্যপ্রাথমিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে দৈহিক নৈকট্যের বিষয়টি অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়। দৈহিক নৈকট্য না থাকলে মুখোমুখি সম্পর্ক তৈরী হয়না।অন্যদিকে , দৈহিক নৈকট্যের বিষয়টি গৌণ গোষ্ঠীতে প্রয়োজনীয় হলেও অপরিহার্য নয়। তাছাড়া , বৃহদায়তন গৌণ গোষ্ঠীতে দৈহিক নৈকট্যের বিষয়টি সবসময় সম্ভবও নয়। 
ভৌগোলিক ব্যাপ্তিপ্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যগণ নির্দিষ্ট ভৌগোলিক ক্ষেত্রের বাসিন্দা হয়ে থাকেন। গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যগণ অপেক্ষাকৃত বৃহৎ ভৌগোলিক অঞ্চলের বাসিন্দা হয়ে থাকেন। 
সহযোগিতার প্রকৃতিপ্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে যে সহযোগিতা দেখা যায় , তা মূলত প্রত্যক্ষ প্রকৃতির। যেমন , সন্তানের প্রতি মায়ের সহযোগিতা। গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যেকার সহযোগিতা মূলত পরোক্ষ প্রকৃতির। যেমন – দূরে থাকা কোনো সদস্যের শুধুমাত্র বাৎসরিক চাঁদা প্রদান করে যে সহযোগিতা করা হয়।
সামাজিক নিয়ন্ত্রণের প্রকৃতি ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমপ্রাথমিক গোষ্ঠীর সামাজিক নিয়ন্ত্রণের প্রকৃতি মূলত অবিধিবদ্ধ। সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হিসাবে মূল্যবোধ , লোকাচার , লোকনীতি , নৈতিক অনুশাসন , জনমত – প্রভৃতিকে ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে , গৌণ গোষ্ঠীর সামাজিক নিয়ন্ত্রণের প্রকৃতি বিধিবদ্ধ। এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ নিয়মকানুন আইন আকারে লিখিত থাকে। নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হিসাবে তাই আইন , পুলিশ , বলপ্রয়োগ প্রভৃতি হয়ে থাকে। 
সদস্যপদপ্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যপদ মোটামুটি বাধ্যতামূলক। যেমন , প্রতিটি ব্যক্তি নিজের অজান্তেই জন্মসূত্রে তার পরিবারের সদস্যপদ লাভ করে থাকে। অন্যদিকে , গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যপদ ব্যক্তির ইচ্ছানির্ভর। সাধারণত , ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে কোনো গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যপদ গ্রহণ করতে বাধ্য করা যায়না। তবে , ব্যতিক্রম হিসেবে বলা যায় , রাষ্ট্র একটি গৌণ গোষ্ঠী হওয়া স্বত্তেও তার সদস্যপদ গ্রহণ ব্যক্তির পক্ষে বাধ্যতামূলক। 
গোষ্ঠীস্বার্থপ্রাথমিক গোষ্ঠীর গোষ্ঠীস্বার্থ সাধারণ বা Common  । মোটামুটি জীবনের বেশিরভাগ প্রয়োজনগুলি প্রাথমিক গোষ্ঠীর মাধ্যমেই মিটে যায়। অন্যদিকে , কোনো বিশেষ স্বার্থকে কেন্দ্র করে গৌণ গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। তাই একে বিশেষ স্বার্থ গোষ্ঠী বা , Special Interest Group বলা হয়। 
সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগপ্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যরা দৈহিকভাবে কাছাকাছি থাকার ফলে তাদের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টি সরাসরি বা মুখোমুখি ( Face to face ) হয়ে থাকে। অন্যদিকে , গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার জন্য এদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে ডাক , রেডিও , দূরদর্শন , সংবাদপত্র , টেলিফোন , সংবাদমাধ্যম – ইত্যাদি গণমাধ্যমগুলি। 
গোষ্ঠীর কাঠামোপ্রাথমিক গোষ্ঠীর তেমন কোনো সাংগঠনিক কাঠামো নেই। তাই এটি অসংগঠিত ও অবিধিবদ্ধ গোষ্ঠী। অন্যদিকে , গৌণ গোষ্ঠী অপেক্ষাকৃত সংগঠিত ও বিধিবদ্ধ। 
ব্যক্তিত্বের ওপর প্রভাবব্যক্তির ব্যক্তিত্ব গঠনে প্রাথমিক গোষ্ঠীর ভুমিকা অনস্বীকার্য ও অপরিহার্য। কিন্তু গৌণ গোষ্ঠীর প্রভাব ব্যক্তিত্বের ওপর ততটা ক্রিয়াশীল নয়। 
সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে ভূমিকাব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া বা সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গৌণ গোষ্ঠীগুলির ভূমিকা অত্যন্ত নগন্য। 
প্রাধান্য ও গুরুত্বপ্রাথমিক গোষ্ঠীসমূহের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি সরল , গ্রামীণ , কৃষিভিত্তিক সমাজে। অন্যদিকে , গৌণগোষ্ঠী সমূহের প্রাধান্য খুব বেশি জটিল , নগরকেন্দ্রিক , শিল্পভিত্তিক আধুনিক সমাজে। 
সংখ্যাপ্রাথমিক গোষ্ঠীগুলি সংখ্যায় বেশ কম। কিন্তু গৌণ গোষ্ঠীগুলি সংখ্যায় অগণিত ও বহুবিধ। 
মুখ্য গোষ্ঠী ও গৌণ গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য

নব্য বঙ্গ গোষ্ঠী কাদের বলা হয়

উনবিংশ শতকে কলকাতার হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরােজিওর (১৮০৯-৩১ খ্রি.) নেতৃত্বে বাংলায় এক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে ওঠে। ডিরােজিওর নেতৃত্বাধীন তরুণ গােষ্ঠী ইয়ং বেঙ্গল’ বা ‘নব্যবঙ্গ’ নামে পরিচিত। ইয়ং বেঙ্গল গােষ্ঠীর ডিরােজিওর অনুগামী সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কৃয়মােহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রামগােপাল ঘােষ, প্যারীচাঁদ মিত্র, রামতনু লাহিড়ী, দক্ষিণারঞ্জন মুখােপাধ্যায়, রসিককৃয় মল্লিক, তারাচাঁদ চক্রবর্তী, শিবচন্দ্র দেব প্রমুখ। তাদের নেতৃত্বে বাংলায় যে উগ্র সংস্কার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে তা ইয়ং বেঙ্গল মুভমেন্ট বা নব্যবঙ্গ আন্দোলন নামে পরিচিত। আর এই আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন ডিরােজিও।

আরও পড়ুন:  

চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী কি

চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সংজ্ঞা এবং নামকরণ নিয়ে বেশ সমস্যা রয়েছে। অধ্যাপক ফাইনার এ জাতীয় গ্রুপকে ‘লবি’ (l.obby) বলার পক্ষপাতি। অনেকে আবার চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলতে ‘স্বার্থগোষ্ঠ’ (Interest Groups); ‘রাজনৈতিক গোষ্ঠী’ (Political Groups); ‘সংগঠিত গোষ্ঠী’ (Organized Groups ) ; ‘মনোবৃত্তিবাহী গোষ্ঠী’ (Attitude Groups) প্রভৃতি পরিভাষা ব্যবহার করেছেন।

নামকরণের সমস্যা সম্পর্কে এলান বল (Allan Ball) একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি ‘চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী’ এ শব্দগুচ্ছকে একটি ব্যাপৃত বর্গনাম হিসেবে ব্যবহারের পক্ষপাতি এবং এক্ষেত্রে তিনি চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে ‘স্বার্থগোষ্ঠী’ এবং ‘মনোবৃত্তিবাহী গোষ্ঠী’ এ দু’ভাগে ভাগ করার কথা বলেছেন। তাঁর ভাষায়, “One solution to these problems is to use the term ‘Pressure Group’ at a broad generic title…… and divide pressure groups into two broad categories, interest groups and attitude groups.”

এবার চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সংজ্ঞায় অধ্যাপক বল (Prof. Ball) বলেন, “A pressure group can be defined as a group whose members hold shared attitude.”

১. এইচ. জিগলার (H. Zeigler)-এর ভাষায়, “চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হলো এমন একটি সংগঠিত জনসমষ্টি, যা তার সদস্যদের সরকারি পদে বসাবার চেষ্টা না করে সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।”

২. অধ্যাপক অ্যালমন্ড ও পাওয়েল (G. A. Almond & G. B. Powell )-এর ভাষায়, “সমাজে বিভিন্ন ধরনের গোষ্ঠীগুলো যখন তাদের ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ ব্যক্ত করে এসব চাহিদা বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা চালায় তখন এ সমস্ত গোষ্ঠীকে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বলা হয়। “

৩. ডেভিড ট্রুম্যান (David Truman)-এর মতে, “চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হলো এমন এক গোষ্ঠী যার সদস্যরা অংশীদারি মনোবৃত্তি বা একই ধরনের মনোভাবের ধারক ও বাহক। “

৪. . জন সি. পিয়ার্স (Pears)-এর মতে, “চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হলো এমন একটি ব্যক্তিসমষ্টি, যার লক্ষ্য হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর দাবি পেশের মাধ্যমে সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করা।”

৫. আর. এম. ম্যাকাইভার (R. M. Maclver) স্বার্থকামি তথা চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে, “A number of man united for the defense, maintenance or enhancement of any, more or less enduring position or advantages which they posses alike or in common.”

৬. অধ্যাপক নিউম্যান ( Prof. Neuman)-এর মতে, “Fundamentally pressure groups are the representation

of homogeneous interests seeking influence.”

৭. গ্রাহাম উইলসন (Graham Wilson)-এর মতে, “It (Pressure Group) is an organization which seeks or claims to represent people or organizations which share one or more common interests or ideas.” ৮. অধ্যাপক মাইরন ওয়েনারের (Pro. Myron Weiner)-এর মতে, “By interest group we mean any voluntary organized group, outside the governmental structure, which attempt to influence the nomination and appointment of governmental personnel, the adoption of public policy, its administration or its adjudication.”

সুতরাং বলা যায়, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলতে এমন এক গোষ্ঠীকে বুঝায়, যার সদস্যগণ সমজাতীয় মনোভাব এবং স্বার্থের দ্বারা আবদ্ধ, স্বার্থের ভিত্তিতেই তাঁরা পরস্পরের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চাপ সৃষ্টি করে নীতি প্রণয়নকে নিজেদের অনুকূলে আনয়নের জন্য কার্য পরিচালনা করে।

চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ২টি উদাহরণ

পুরো দেশ পরিচালিত হয় কতগুলো নিয়ম নীতির মাধ্যমে। যেগুলো সরকার প্রণয়ন করে। আর এইগুলো প্রণয়নের সময় কিছু ব্যক্তি বা দল আছে যারা নিয়ম গুলো নিজেদের সুবিধা হয় মত করে তৈরি করাইতে চাই বা চাপ সৃষ্টি করে।মূলত তাদের কেই চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলে।

বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন; নির্দিষ্ট কাজের জন্য গড়ে উঠা সংগঠন (শিক্ষক সমিতি, চিকিৎসক সমিতি, ট্রেড ইউনিয়ন, ছাত্র সংসদ, দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ ইত্যাদি।)

চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলতে কী বোঝায়

চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলতে এমন স্বার্থগোষ্ঠী বা দলকে বুঝায় যারা সরকারকে নীতি প্রণয়নে চাপ প্রয়োগ করে সরকারি নীতি নিজেদের অনুকূলে রাখার চেষ্টা করে। আবার যেহেতু এসব গোষ্ঠী স্বীয় স্বার্থের জন্য কাজ করে বলে এদেরকে সুবিধা আদায়কারী বা স্বার্থকামী গোষ্ঠীও বলা হয়। 

অর্থাৎ, চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলতে সে সমস্ত সংগঠিত গোষ্ঠীকেই বুঝায়, যারা সরকারি কাঠামোর বাইরে থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের মনোনয়ন ও নিয়োগ, সরকারি নীতি গ্রহণ, পরিচালনা ও নির্ধারণে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। উদাহরণ- ছাত্র সংসদ, শ্রমিক সংঘ ইত্যাদি।

চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উদ্ভবের ইতিহাস

রাজনৈতিক মঞ্চে গোষ্ঠী মতবাদ দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে। এই মতবাদের প্রথম প্রবক্তা হলেন আর্থার এফ. বেন্টলী, ১৯০৮ সালে প্রকাশিত বিখ্যাত গ্রন্থ “The Process of Government” – এ এই মতবাদ প্রচার করেন। পরবর্তীতে চার্লস হেগেন এবং রোল্যান্ড ইয়ং এ সম্পর্কে আলোচনা করেন।

স্বার্থ গোষ্ঠীর প্রকারভেদ

বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী Almond and Powell স্বার্থগোষ্ঠীকে মোট চার ভাগে ভাগ করেছেন। যথা-

১) স্বতঃস্ফূর্ত স্বার্থ গোষ্ঠী

২) সংগঠনভিত্তিক স্বার্থ গোষ্ঠী

৩) সংগঠনহী স্বার্থ গোষ্ঠী

৪) প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ গোষ্ঠী

স্বতঃস্ফূর্ত স্বার্থ গোষ্ঠী

কোন বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে কোন নেতার আবির্ভাবের ফলে যে গোষ্ঠী স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের অভিযোগ ও অসন্তোষকে ব্যক্ত করে এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামা, আন্দোলন এমনকি গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে রাজনৈতিক তথা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে তাকে স্বতঃস্ফূর্ত স্বার্থ গোষ্ঠী বলে।

সংগঠনভিত্তিক স্বার্থ গোষ্ঠী

যে স্বার্থ গোষ্ঠী নির্দিষ্ট সংগঠনের মাধ্যমে নিজেদের দাবি দাওয়া পেশ করে থাকে তাদেরকে সংগঠন ভিত্তিক স্বার্থ গোষ্ঠী বলে। যেমন- শ্রমিক সংঘ, শিল্পপতিদের সংগঠন ইত্যাদি।

সংগঠনহীন স্বার্থ গোষ্ঠী

সংগঠনহীন স্বার্থ গোষ্ঠী বলতে জাতিগত, বংশগত, ভাষাগত প্রভৃতি স্বার্থ গোষ্ঠীকে বুঝায়। এদের নির্দিষ্ট কোন সংগঠন থাকে না বলে এদেরকে সংগঠনহীন স্বার্থ গোষ্ঠী বলে।

প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ গোষ্ঠী

কোন পেশায় চাকুরিরত লোকদের নিয়ে যে স্বার্থ গোষ্ঠী গঠিত তাকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ গোষ্ঠী বলে। যেমন- বার সমিতি।

চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য

বর্তমান বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি দেশেই চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন কলা কৌশলের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলো সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে থাকে। যে সকল কাজের মাধ্যমে স্বার্থগোষ্ঠী বিশেষ ভূমিকা বা বৈশিষ্ট্য পালন করে থাকে তা নিম্নরূপ-

বৃহত্তর সমাজ গঠন

চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী আকারে ক্ষুদ্র। এদের দ্বারা সংকীর্ণ স্বার্থ প্রতিফলিত হয়। কিন্তু যখন কোন জাতীয় স্বার্থ নিয়ে সরকারকে কোন চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী চাপ দেয় তখন বৃহত্তর জনসমাজ তাদেরকে সমর্থন দেয়। এভাবে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বৃহত্তর সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখে।

নির্বাচন প্রচারণায় প্রভাব সৃষ্টি

নির্বাচন হওয়ার পূর্বে নির্বাচনী প্রচারণায় চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী পরোক্ষ ভূমিকা পালন করে। তারা স্বার্থের পিছনে ছুটাছুটি করে। যে রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সে দলের পক্ষে তারা পরোক্ষভাবে প্রচারণা চালায়। যাতে করে সরকার গঠনের পর তারা তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করতে পারে।

সরকারের প্রতি আকুন্ঠ সমর্থন

চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সরকারের প্রিয় হয়ে থাকার চেষ্টা করে। তারা নির্বাচনে গোপনে যে দলের পক্ষে প্রচারণা চালায় সে দল নির্বাচনে জয়ী হতে না পারলে, যে দল সরকার গঠন করে, সে সরকারের প্রতি আকুন্ঠ সমর্থন জানায় যাতে তাদের স্বার্থ আদায় হয়।

আইন ও শাসন বিভাগের উপর প্রভাব বিস্তার

চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী কোন আইন প্রণয়নের সময় আইন বিভাগকে প্রভাবিত করে থাকে। যে সকল কমিটি আইন প্রণয়নে ভূমিকার রাখে সে সকল কমিটিকে প্রভাবিত করে। আবার শাসন বিভাগকেও নীতি বাস্তবায়নের সময় চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী প্রভাবিত করে থাকে।

বিচার বিভাগের উপর চাপ সৃষ্টি

চাপ সৃষ্টিকারী দল বিচার বিভাগকেও প্রভাবিত করে থাকে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যথা- নিয়োগ, চাকরির নিশ্চয়তা ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধাদি প্রদান। এ তিনটির মধ্যে নিয়োগের বেলায় চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তার করে থাকে। বার কাউন্সিলের যে ব্যক্তি তাদের অনুগত থাকবে সে ব্যক্তিকে বিচারক পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য তারা শাসন বিভাগকে চাপ দিয়ে থাকে। আবার বিচারকদের রায়েও তারা প্রভাব বিস্তার করে।

আমলাদের উপর প্রভাব বিস্তার

দেশের প্রশাসনিক কাঠামোর কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আমলারা। তারা যাবতীয় সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে থাকে। আমলাদের সাথে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর যোগাযোগ বেশ ভাল। প্রায় সব কাজে চাপ ‍সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী আমলাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

জনমত গঠন

জনমত গঠন করে স্বার্থকামী গোষ্ঠী সরকারের উপর চাপ দিয়ে নিজেদের সুবিধা আদায় করে। বিভিন্ন প্রকার নীতি ও আদর্শের কথা প্রচার করে তারা জনসাধারণের সমর্থন আদায় করে নেয়। আর সরকারকে জনসমর্থন দেখিয়ে নিজেদের সুবিধা আদায় করে নেয়।

রাজনৈতিক দল নিয়ন্ত্রণ

রাজনৈতিক দলের উপর স্বার্থকামী গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সদস্যবৃন্দ রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাদের অনুকূলে নীতি ও আদর্শ প্রণয়ন করতে চাপ দেয়। নির্বাচনের সময় দলকে বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা ও সাহায্য প্রদান করা হয়। ফলে নির্বাচন শেষে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দল তাদের স্বার্থে কাজ করতে বাধ্য থাকে।

বিক্ষোভ প্রদর্শন

অনেক সময় নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য স্বার্থকামী দল বিক্ষোভ প্রদর্শন বা হিংসাত্মক ব্যবস্থা অবলম্বনের মাধ্যমে সরকারকে তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করা হয়। এ ধরণের গোষ্ঠীর সংগঠন সাধারণত খুব শক্তিশালী হয়। বাংলাদেশের ‘পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশন’ – কে এসব গোষ্ঠীর মধ্যে সংযুক্ত করা যেতে পারে।

প্রতিটি চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মূল লক্ষ্য কি

চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উপরিউক্ত সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণ করলে এর নিম্নোক্ত কতিপয় লক্ষ্য পরিলক্ষিত হয় :

  • চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রধান লক্ষ্য এই যে, এরা কোনোরূপ দলীয় কর্মসূচি প্রণয়ন বা ঘোষণা করে না। এমনকি নির্বাচনে প্রার্থীও মনোনয়ন করে না।
  • চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ প্রকাশ্যে না হলেও অন্তত প্রচ্ছন্নভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে থাকে।
  • চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ কোনো সরকারি পদ লাভের জন্য নয় বরং তাদের স্বার্থ আদায়ের জন্য সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করে।
  • চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের সমষ্টি বিশেষ এবং এরা অন্যান্য গোষ্ঠীর ন্যায় কতিপয় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন, স্বার্থ আদায় বা রক্ষার উদ্দেশ্যে সংগঠিত হয়।
  • চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ মূলত নির্দলীয় সংগঠন এবং তারা কেবল সংগঠিত সামাজিক গোষ্ঠী বিশেষ।

চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা রাজনৈতিক ক্ষমতা করায়ত্ত করতে চায় না। বরং সরকারি নীতি ও সরকারি কর্মকর্তাদের আচরণকে প্রভাবিত করার জন্য সচেষ্ট থাকে।

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | গোষ্ঠী

Q1. গোষ্ঠী কি

Ans – পাস্পারিক ভাবের প্রদান, আবেগ ও সংবেদনশীলতা রয়েছে এমন কতিপয় ব্যক্তি সমষ্টিকে গোষ্ঠী বলে। অর্থাৎ, দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে যখন পারস্পরিক নির্ভরশীল মানবিক সম্পর্ক স্হাপিত হয় তখন তাকে গোষ্ঠী বলা হয়।

Q2. ভারতের প্রাচীনতম ভাষা গোষ্ঠী কোনটি

Ans – দক্ষিণ ভারতের প্রাচীনতম ভাষা হল তামিল (200 খ্রিস্টপূর্ব)। এটি বিশ্বের 7টি প্রাচীন ভাষাগুলির মধ্যে একটি যা এখনও বলা হয়।

Q3. বাংলা ভাষা কোন ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য

Ans – ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী অস্তগত।
বাংলা ভাষা (বাঙলা, বাঙ্গলা, তথা বাঙ্গালা নামেও পরিচিত) একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি জাতির প্রধান কথ্য ও লেখ্য ভাষা। মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের পঞ্চম ও মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা।

Q4. ভারতের বৃহত্তম আদিবাসী গোষ্ঠী

Ans – ভীলরা ভারতের বৃহত্তম উপজাতি সম্প্রদায়। তারা ছত্তিশগড়, গুজরাট, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং রাজস্থানে বাস করে।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।