স্বাধীনতা কি, স্বাধীনতা বলতে কি বোঝায়, স্বাধীনতা শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কি বুঝ

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

স্বাধীনতা কি, স্বাধীনতা কাকে বলে

স্বাধীনতা হল শ্রেষ্ঠ এবং সংরক্ষিত এমন এক পরিবেশ যেখানে শর্তসাপেক্ষে আইন অনুসারে সব মানুষ আত্মবিকাশের পরিপূর্ণ সুযোগ লাভ করে এক্ষেত্রে অধিকার হলো স্বাধীনতার ভিত্তি।

স্বাধীনতা মানে যা খুশি তা করা নয়। স্বাধীনতা দীর্ঘ বিপ্লব বা সহিংসতার প্রশ্নে বিতর্ক যেভাবেই হোক, সার্বভৌমত্ব অর্জন যদিও কিছু বিপ্লবের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন; অন্যদের শুধুমাত্র ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্য, যেখানে মুক্তির উপাদান থাকে, যেমন একটি দেশের মধ্যে গণতন্ত্রায়ন, যেখানে সীমানায় কোন পরিবর্তন হয় না।

স্বাধীনতার সংজ্ঞা দাও

সাধারণত অপরের কাজে কোনােরূপ হস্তক্ষেপ না করে নিজের কাজ সম্পাদন করার অধিকারকে স্বাধীনতা বলে। অন্যভাবে বলা যায়, স্বাধীনতা হলাে অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে নিজের অধিকার পরিপূর্ণভাবে ভােগ করা। সুতরাং বলা যায়, অপরের অধিকার বা কার্যাবলির ওপর হস্তক্ষেপ না করে স্ব-ইচ্ছানুসারে কার্য করার অধিকারকে স্বাধীনতা বলে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা

বিভিন্ন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কতিপয় সংজ্ঞা প্রদান করা হলাে-

বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী হার্বার্ট স্পেন্সর (Herbert Spencer) বলেন, “স্বাধীনতা বলতে ‘খুশিমত’ কাজ করা বুঝায়, যদি উক্ত কাজ দ্বারা অন্যের অনুরূপ স্বাধীনতা উপভােগে বাধার সৃষ্টি না হয়।”

টি এইচ গ্রিন (T. H. Green) বলেন, যা উপভােগ করার এবং সম্পন্ন করার যােগ্যতা উপভােগ ও সম্পাদন করার ক্ষমতাকে স্বাধীনতা বলে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সিলি (Seely)-এর মতে, অতি শাসনের বিপরীত ব্যবস্থাই হলাে স্বাধীনতা। (“The opposite of over government”)

আর্নেস্ট বাকার (Ernest Barker)-এর মতে, “প্রত্যেকের স্বাধীনতার প্রয়ােজনীয়তা সকলের স্বাধীনতা প্রয়ােজনের দ্বারা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত এবং সীমাবদ্ধ হওয়া আবশ্যক।”

প্রফেসার গেটেল (Prof. Gettel) বলেন, “স্বাধীনতা হচ্ছে সেসব কাজ করা এবং উপভােগ করা যেগুলাে করা ও উপভােগ করার যােগ্য।”

সি, ডি, বার্নস (c.D. Burns)-এর মতে, Liberty means liberty to grow to ones natural hight, to develop ones, abilities. অর্থাৎ স্বাধীনতা হলাে ব্যক্তির স্বাভাবিক বিকাশ। ব্যক্তির সামর্থ্যের উন্নয়ন।

উপযুক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, স্বাধীনতা হল এমন একটি সামাজিক অবস্থা বা পরিবেশ যেখানে ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভবপর এবং তার প্রয়ােজনীয় অধিকার ভােগ করতে পারে।

স্বাধীনতা বলতে কি বোঝায়

স্বাধীনতা হলাে এমন সুযােগ-সুবিধা ও পরিবেশ, যেখানে কেউ কারও ক্ষতি না করে সকলেই নিজের অধিকার ভােগ করে ।

স্বাধীনতা বলতে নিয়ন্ত্রণবিহীনতাকে বোঝায় না

স্বাধীনতার ইংরাজী প্রতিশব্দ ‘Liberty’-র উৎপত্তি হয়েছে একটি ল্যাটিন শব্দ থেকে। ল্যাটিন শব্দটি হল ‘Liber’। এর অর্থ হল ‘স্বাধীনতা’। আবার ব্যুৎপত্তিগত অর্থে স্বাধীনতা বলতে স্ব-অধীনতা বা নিজের অধীনতাকে বোঝায়। অর্থাৎ নিজের ইচ্ছামত আচার-আচরণের সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু এ হল স্বেচ্ছাচারের নামান্তর। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্বাধীনতা শব্দটি এই অর্থে ব্যবহৃত হয় না। বিনা বাধায় খুশিমত কাজ করার অধিকার স্বীকৃত হলে উচ্ছৃঙ্খলতা প্রশ্রয় পায়। এতে স্বাধীনতা মুষ্টিমেয় সবল ব্যক্তির করায়ত্ত হয়। দুর্বলের কোন স্বাধীনতা থাকে না। সুতরাং স্বাধীনতা বলতে নিয়ন্ত্রণবিহীনতা বা অবাধ অধিকারকে বোঝায় না। প্রকৃত প্রস্তাবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাধীনতা শব্দটিকে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে। এই কারণে স্বাধীনতার স্বরূপ অনুধাবনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা এককভাবে যথেষ্ট বিবেচিত হয় না।

স্বাধীনতা সম্পর্কে মিলের ধারণা

জে. এস. মিল (John Stuart Mill) স্বাধীনতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর Essays on Liberty শীর্ষক রচনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মিল ছিলেন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী মতবাদে বিশ্বাসী। তিনি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে স্বাধীনতার ধারণা ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতানুসারে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতার অবসানই হল স্বাধীনতা। ব্যক্তির স্বাধীনতার উপর তিনি রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের বিরোধী ছিলেন। তাঁর মতে নিজের উপর এবং নিজের দেহ ও মনের উপর প্রত্যেকে স্বাধীন ও সার্বভৌম। মিল মূলত বিধি-নিষেধের অনুপস্থিতিকেই স্বাধীনতা হিসাবে প্রতিপন্ন করেছেন। ব্যক্তির দৈহিক বা নৈতিক কল্যাণের স্বার্থেও স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ অনভিপ্রেত।

মিলের মতে কেবলমাত্র আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে অপরের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যায়। আবার কোন ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে একমাত্র তখনই ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায় যখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অপরের অনিষ্ট সাধনে উদ্যত হয়। মিলের মতে, স্বাধীনতা হল ব্যক্তির চিন্তাধারার অব্যাহত প্রকাশ। মিল মানুষের কাজকে আত্মসম্বন্ধীয় (self-regarding) এবং অপর সম্বন্ধীয় (other-regarding) এই দুভাগে বিভক্ত করেছেন। তাঁর মতে ব্যক্তির আত্মকেন্দ্রিক কাজে (self regarding actions) রাষ্ট্র কোনরকম হস্তক্ষেপ না করলে ব্যক্তির পক্ষে স্বাধীনতা ভোগ সম্ভবপর হয়। কেবলমাত্র অপরের স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত কাজকর্মের ক্ষেত্রে বাধা-নিষেধ আরোপ করা যেতে পারে। মিলের মতানুসারে ব্যক্তিমাত্রেই আত্ম-সম্পর্কিত কার্যাবলীর ব্যাপারে পুরোপুরি স্বাধীন থাকবে।

মিলের ধারণার বার্কারকৃত সমালোচনা

স্বাধীনতা সম্পর্কে মিলের এই ধারণা গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয় না। স্বাধীনতা সম্পর্কিত মিলের ধারণা সমালোচিত হয়েছে। মিলের সমালোচনা প্রসঙ্গে বার্কার (Ernest Barker)-এর বক্তব্য প্রথমে প্রণিধানযোগ্য। বার্কার তাঁর Political Thought in England from 1848 to 1914 শীর্ষক রচনায় এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁর মতানুসারে স্বাধীনতাভোগকে সকলের ক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হলে ব্যক্তির কাজকর্মের উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। তাঁর অভিমত হল: ‘প্রত্যেক ব্যক্তিরই স্বাধীন হওয়া উচিত, …কোন ব্যক্তিই অবাধভাবে স্বাধীন হতে পারে না। এ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেছেন: “The truth that every man ought to be free has for its other side the complementary consequential truth that no man can be absolutely free.”

স্বাধীনতা সম্পর্কে মিলের ধারণা প্রসঙ্গে বার্কারের অভিমত এই যে, “মিল ছিলেন শূন্যগর্ভ স্বাধীনতার প্রবক্তা….। অধিকার সম্পর্কে তাঁর আদৌ কোন স্পষ্ট ধারণা ছিল না, যার থেকে প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতার সৃষ্টি হয়। বার্কার বলেছেন: “Mill was the prophet of an empty liberty….He had no clear philosophy of rights through which alone the conception of liberty attains a concrete meaning.” অধ্যাপক বার্কার মিলকে ‘বিমূর্ত ব্যক্তি’ (abstract individual)-র প্রবক্তা হিসাবে অভিহিত করেছেন। স্বাধীনতার ধারণা বাস্তবে কার্যকর হতে পারে এমন কোন তত্ত্বের অবতারণা মিল করতে পারেননি। আবার ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে বিরোধিতার ধারণার অবসানের সম্ভাবনাযুক্ত কোন সামগ্রিক সমাজব্যবস্থার কথাও বলতে পারেননি।

ব্যক্তির স্বাধীনতা ভোগ অবাধ হতে পারে না

মিলের তত্ত্বে প্রত্যেক ব্যক্তি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন পৃথক ব্যক্তি হিসাবে প্রতিপন্ন হয়েছে। মিলের মতানুসারে একজনের আচরণের প্রভাব অন্য কারও জীবনের উপর পড়ে না। কিন্তু মিলের এই ধারণাও যথার্থ নয়। কারণ ব্যক্তি মানুষের সকল আচরণই হল কার্যত সামাজিক আচরণ। ব্যক্তির যাবতীয় আচরণের ফলাফল সমাজের অন্য সকলের উপর পড়ে এবং চূড়ান্ত বিচারে নিজের উপর পড়ে। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তির কাজকর্মের মাধ্যমে সামাজিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ল্যাস্কি তাঁর A Grammar of Politics শীর্ষক গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন: “All conduct is social conduct in the sense that whatever I do has results upon me as a member of society.”

কোন ব্যক্তি এককভাবে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না। তাকে এ ক্ষেত্রে সামাজিক স্বার্থের কথা বিচার-বিবেচনা করতে হয়। অধ্যাপক ল্যাস্কি সামাজিক কল্যাণের স্বার্থে ব্যক্তির আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। ল্যাস্কিও হলেন একজন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। এতদসত্ত্বেও তিনি বলেছেন: “Liberty…involves in its nature restraints, because the separate freedoms I use are not freedoms to destroy the freedoms of those with whom I live.” হবহাউস (L. T. Hobhouse) -ও অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

তাঁর Liberalism শীর্ষক রচনায় তার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর মতানুসারে প্রত্যেক ব্যক্তির কার্যকলাপ এবং চিন্তা-ভাবনা সমাজের অন্যান্য ব্যক্তির কাজকর্ম ও চিন্তা ভাবনাকে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে থাকে। সামাজিক দিক থেকে তাৎপর্যহীন এমন কোন বিষয় মানবজীবনে থাকতে পারে না। বস্তুত মিলের স্বাধীনতা সম্পর্কিত ধারণা ঊনবিংশ শতাব্দীর উদারনীতিক মতবাদের দ্বারা সমর্থিত হয়নি।

স্বাধীনতা সম্পর্কে গ্রীণ প্রমুখ ভাববাদীদের ব্যাখ্যা

ভাববাদী রাষ্ট্র-দার্শনিকরা ব্যক্তির বিকাশের স্বার্থে স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তাঁরা সমাজ ও ব্যক্তি এবং ব্যক্তি-মানুষের নৈতিক ব্যক্তিত্বের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার গুরুত্বের কথা বলেছেন। এঁদের মতানুসারে স্বাধীনতা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও নিয়ন্ত্রিত; কিন্তু তা অবশ্যই ব্যক্তি মানুষের নৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। ভাববাদীদের অভিমত অনুসারে মানুষের বিভিন্ন নৈতিক গুণগত বৈশিষ্ট্যের বিকাশের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অর্থাৎ ভাববাদীরা নেতিবাচক নয়, ইতিবাচক অর্থে স্বাধীনতার ধারণা ব্যাখ্যা করেছেন।

ইংরেজ দার্শনিক গ্রীণ (T. H. Green)-ও ছিলেন একজন ভাববাদী চিন্তাবিদ। তিনিও ইতিবাচক অর্থে স্বাধীনতার কথা বলেছেন। তাঁর মতানুসারে নিছক বাধা-নিষেধের অপসারণকেই স্বাধীনতা বলে না। গ্রীণ স্বাধীনতাকে একটি ক্ষমতা হিসাবে দেখেছেন। মানুষই এই ক্ষমতার মাধ্যমে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এমন কিছু করবে যা সকলের সঙ্গে একত্রে ভোগযোগ্য। এইভাবে স্বাধীনতা প্রকৃত স্বাধীনতা হিসাবে প্রতিপন্ন হয়। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্বের কথাও বলা হয়েছে। মানুষের কার্যকলাপের মধ্যে যেগুলি সমাজকল্যাণমূলক এবং সদিচ্ছাযুক্ত তার উপর থেকে রাষ্ট্রকে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা অপসারিত করতে হবে।

স্বাধীনতার সঙ্গে বিধি-নিষেধ সম্পর্কযুক্ত

ফরাসী দার্শনিক রুশোর মতানুসারে সাধারণ ইচ্ছার (General Will) অনুবর্তী হয়ে ব্যক্তি স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে। জার্মান দার্শনিক হেগেলের মতে রাষ্ট্রীয় আইন মান্য করার মাধ্যমেই ব্যক্তির স্বাধীনতা ভোগ সম্ভব। ল্যাস্কি এই দুই মতকে অস্বীকার করেছেন। স্বাধীনতা সম্পর্কিত ল্যাস্কির বক্তব্য বাস্তবসম্মত এবং ইতিবাচক। ল্যাস্কির মতানুসারে সমগ্র সমাজ হল একটি অখণ্ড সত্তা।

এই সত্তার ভিতরে থেকে কোন ব্যক্তির সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্যের দাবি অর্থহীন। তাঁর মতে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের দিকে নজর রেখেই স্বাধীনতার অনুশীলন করতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য একই সুযোগ-সুবিধার স্বার্থে বিধি-নিষেধের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য প্রতিপন্ন হয়। অর্থাৎ বিধি-নিষেধের বিষয়টি স্বাধীনতার সঙ্গে অবধারিতভাবে সম্পর্কযুক্ত। তবে আইন ব্যক্তিত্ব বিকাশের পরিপন্থী হলে তা মান্য করার অর্থ ব্যক্তির স্বাধীনতার হানি। রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকা দরকার।

স্বাধীনতা সম্পর্কে ল্যাস্কির ধারণা

ল্যাস্কি ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় দিক থেকেই স্বাধীনতার ধারণাটি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে স্বাধীনতা হল সমাজের বিশেষ কিছু অবস্থার উপর থেকে বিধি-নিষেধের অপসারণ। ব্যক্তির সুস্থ, স্বচ্ছন্দ ও কল্যাণময় জীবনযাত্রার পক্ষে এই সমস্ত অবস্থা অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়। এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই যে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য সামাজিক অবস্থার উপর থেকে বিধি-নিষেধের অপসারণ আবশ্যক। কিন্তু কেবল বিধি-নিষেধের অপসারণই স্বাধীনতা নয়। স্বাধীনতার ধারণা নিছক নেতিবাচক বা সংকীর্ণ নয়। ল্যাস্কির মতে স্বাধীনতার ধারণা ইতিবাচক। তাঁর মন্তব্য অনুসারে, “Liberty is positive thing.”

ব্যক্তি মানুষের অন্তর্নিহিত সত্তার প্রকৃষ্টতম বিকাশের জন্য স্বাধীনতা অপরিহার্য। এবং ব্যক্তিবর্গের স্বাধীনতার সঙ্গে সমাজের সামগ্রিক কল্যাণ সম্পর্কযুক্ত। ল্যাস্কির মতানুসারে স্বাধীনতা বলতে এক বিশেষ পরিবেশকে বোঝায়, যে পরিবেশে মানুষ তার ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করতে পারে। ল্যাস্কির মতে, ‘স্বাধীনতা বলতে আমি বুঝি সেই পরিবেশের সযত্ন সংরক্ষণ যেখানে মানুষ তার সত্তাকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করার সুযোগ পায়।’ ল্যাস্কির নিজের কথায়: “By liberty I mean the eager maintenance of that atmosphere in which men have the opportunity to be their best selves.”

ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী কতকগুলি বাহ্যিক অবস্থা বা সুযোগ-সুবিধার সংরক্ষণের দ্বারা এই পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সুতরাং স্বাধীনতা বলতে বোঝায় এক বিশেষ সামাজিক পরিবেশকে। ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পূর্ণাঙ্গ বিকাশের জন্য এই সামাজিক পরিবেশ অপরিহার্য। এই পরিবেশের উপর থেকে যাবতীয় বিধি-নিষেধের অপসারণ আবশ্যক। তা হলেই সুস্থ ও সভ্য সমাজজীবনের জন্য অপরিহার্য অবস্থা বা শর্তাদি সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।

স্বাধীনতা ও অধিকার অবিচ্ছিন্ন

ল্যাস্কির মতানুসারে স্বাধীনতা ও অধিকার পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত। বস্তুত অধিকার থেকেই স্বাধীনতার সৃষ্টি। ব্যক্তি মানুষের অন্তর্নিহিত সত্তার বৈচিত্র্যপূর্ণ বিকাশের জন্য অধিকার আবশ্যক। কতকগুলি প্রকৃত সুযোগ-সুবিধাকে অধিকার বলা হয়। ব্যক্তিত্ব বিকাশের সহায়ক এই সুযোগ-সুবিধাগুলিকেই অধিকার বলে। সুতরাং অধিকারগুলির সমন্বিত উপস্থিতির ফলে যে পরিবেশের সৃষ্টি হয় তাই হল স্বাধীনতা। অর্থাৎ অধিকারের দ্বারাই স্বাধীনতার পরিবেশ রচিত হয়। ল্যাস্কি বলেছেন, ‘স্বাধীনতা হল অধিকারের ফল’ (“Liberty is the product of rights.”)। অধিকার ব্যতিরেকে স্বাধীনতার অস্তিত্ব অসম্ভব। অধিকারের স্বীকৃতির মাধ্যমে আইনের সুষ্ঠু ও সংযত প্রয়োগ সুনিশ্চিত হয়। স্বাধীনতা ও অধিকার অবিচ্ছিন্ন। অধ্যাপক ল্যাস্কির অভিমত অনুসারে স্বাধীনতা ছাড়া অধিকারের বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়ায়।

ল্যাস্কির মতানুসারে স্বাধীনতা সংরক্ষণের স্বার্থে রাষ্ট্রের কাজকর্মের ফলাফল নিরপেক্ষ হওয়া আবশ্যক। তা ছাড়া স্বাধীনতার স্বার্থে বিশেষ সুযোগ-সুবিধার অস্তিত্ব অস্বীকৃত হওয়া দরকার। আবার একজনের অধিকার যদি অন্যজনের মর্জির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তা হলে স্বাধীনতা বিপন্ন হয়ে পড়তে বাধ্য।

স্বাধীনতা ও অধিকার অবিচ্ছিন্ন বলে রাষ্ট্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্র অধিকারের অনুশীলনকে সুনিশ্চিত করে। এবং এই স্বাধীনতার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নিশ্চয়তার সৃষ্টি করে। এই কারণে রাষ্ট্র থেকে স্বাধীনতাকে স্বতন্ত্র করা যায় না। ব্যক্তির স্বাধীনতার উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটলে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল তা প্রতিরোধ করা।

স্বাধীনতা একটি আইনগত ধারণা

সুতরাং অধিকার থেকেই স্বাধীনতার সৃষ্টি হয়। আর রাষ্ট্র কর্তৃক আইনের মাধ্যমে স্বীকৃত ও সংরক্ষিত না হলে অধিকারের সৃষ্টি হয় না। সুতরাং অধিকার হল একটি আইনগত ধারণা এবং এ কেবল রাষ্ট্রের মধ্যেই ভোগ করা যায়। অতএব অধিকারের মত স্বাধীনতাও একটি আইনগত ধারণা এবং কেবল রাষ্ট্রের মধ্যেই স্বাধীনতার উপলব্ধি সম্ভবপর। রাষ্ট্রই আইনের দ্বারা স্বাধীনতার পরিবেশ রচনা করে এবং স্বাধীনতাভোগকে সম্ভবপর করে তোলে। এই কারণে স্বাধীনতা অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। বার্কারের মতে ‘রাষ্ট্রের মধ্যে স্বাধীনতা বা আইনসঙ্গত স্বাধীনতা কখনই প্রত্যেকের অবাধ স্বাধীনতা হতে পারে না; এ হল সবসময় সকলের জন্য শর্তসাপেক্ষ স্বাধীনতা’ (“Liberty in the state or legal liberty is never absolute liberty of each but always the qualified liberty of all.”)।

অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ স্বাধীনতার বিরোধী

কিন্তু অতিরিক্ত ও অবাঞ্ছিত নিয়ন্ত্রণ স্বাধীনতার পরিপন্থী। ল্যাস্কির মতে স্বাধীনতার স্বার্থে স্বৈরাচারী আইনকে প্রতিরোধ করতে হবে এবং এই ক্ষমতা না থাকলে স্বাধীনতা ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী হতে পারে না। মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধনই লক্ষ্য, স্বাধীনতা একটি পন্থা মাত্র। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্বাধীনতার দুটি দিক পরিলক্ষিত হয় – নেতিবাচক (nega tive aspect) এবং ইতিবাচক (positive aspect)। সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংরেজ দার্শনিক হস, লক্‌, অ্যাডাম স্মিথ প্রমুখ স্বাধীনতার নেতিবাচক প্রকৃতি সম্পর্কে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য যখন নিয়ন্ত্রণবিহীনতার কথা বলা হয় তখন স্বাধীনতার নেতিবাচক দিকটি প্রকাশিত হয়।

ল্যাস্কি বলেছেন: “By liberty, I mean the absence of restraint upon the existence of those social conditions, which in modern civilisation are the necessary guarantees of indi vidual happiness.” আর ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য যখন নানা রকম সুযোগ-সুবিধা ও কল্যাণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলা হয় তখন স্বাধীনতার ইতিবাচক দিকটি ব্যক্ত হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ স্বাধীনতার এই দ্বিতীয় দিকটির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন।

মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে স্বাধীনতার ধারণা

মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে স্বাধীনতার ধারণা সমাজের আর্থনীতিক কাঠামো ও সম্পত্তি সম্পর্কের সঙ্গে একান্তভাবে যুক্ত। মার্কসবাদ অনুসারে মানুষের পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বিকাশের সুযোগই হল স্বাধীনতা। সব রকম আর্থিক শোষণের অবসানের দ্বারা মানুষের সামাজিক মুক্তির পথ প্রশস্ত হলেই স্বাধীনতা সম্ভব। সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং সাম্যবাদী সমাজে তা পরিপূর্ণতা লাভ করে। ধনবৈষম্যমূলক বা শ্রেণীবৈষম্যমূলক সমাজে কখনই কোনভাবে সমাজের সকল মানুষ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না।

সাম্যবাদী সমাজে মানুষের জীবিকার সঙ্গে শ্রমের কোন ওতপ্রোত সম্পর্ক থাকে না। তখন বৈষয়িক সম্পদের প্রাচুর্য সৃষ্টি হয়। তার ফলে প্রত্যেকের স্বাভাবিক প্রয়োজন পূরণ হয়। এ রকম অবস্থায় মানুষের শ্রম হবে স্বাধীন ও প্রীতিপদ। মানবসমাজের ক্রমবিকাশের এই চূড়ান্ত স্তরে প্রত্যেক মানুষ প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে।

স্বাধীনতা কত প্রকার ও কী কী

স্বাধীনতা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যথা-

  • ব্যক্তি স্বাধীনতা।
  • সামাজিক স্বাধীনতা।
  •  রাজনৈতিক স্বাধীনতা।
  •  অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ।
  • জাতীয় স্বাধীনতা।

ব্যাক্তি স্বাধীনতা কাকে বলে

ব্যক্তিস্বাধীনতা : যে স্বাধীনতা ভোগ করলে অন্যের কোনো ক্ষতি হয়না এমন স্বাধীনতাকে ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে। যেমন- ধর্মচর্চা করা, পারিবারিক গোপনীয়তা রক্ষা করা ইত্যাদি।

সামাজিক স্বাধীনতা কাকে বলে

সামাজিক স্বাধীনতা : জীবন রক্ষা, সম্পত্তি ভোগ করা এবং বৈধ পেশা গ্রহণ করা সামাজিক স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত । সামাজিক স্বাধীনতা ভোগের মাধ্যমে নাগরিক জীবন বিকশিত হয়। সমাজে বসবাসকারী মানুষের অধিকার রক্ষার জন্যই এ স্বাধীনতার প্রয়োজন।

রাজনৈতিক স্বাধীনতা কাকে বলে

রাজনৈতিক স্বাধীনতা : রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলতে নির্বাচনে ভোটদান, নির্বাচিত হওয়া, বিদেশে অবস্থানকালীন নিরাপত্তা লাভ ইত্যাদিকে বুঝায়।  রাজনৈতিক স্বাধীনতার মাধ্যমে ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় শাসনকাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা : যোগ্যতা অ‘নুযায়ী পেশা গ্রহণ ও উ‘পযুক্ত পারি‘শ্রমিক লাভ ক‘রাকে অর্থনৈতি স্বাধীনতা বলে। মূলত আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির জন্য নাগরিকরা এ স্বাধীনতা ভোগ করে। অর্থনৈতিক স্বাধী‘নতা না থাকলে অন্যান্য স্বা‘ধীনতা ভোগ করা যায় না।

জাতীয় স্বাধীনতা কাকে বলে

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রা‘ষ্ট্র ও অন্য রাষ্ট্রের হস্ত‘ক্ষেপ থেকে মুক্ত। বাংলাদেশের অ‘বস্থা‘নকে জাতীয় স্বাধী‘নতা বা রাষ্ট্রীয় স্বাধী‘নতা বলে। এই স্বাধীন‘তার ফলে এ‘কটি রাষ্ট্র অ‘ন্য রাষ্ট্রের কর্তৃক থাকে । প্রত্যেক স্বাধী‘ন রাষ্ট্র জা‘তীয় স্বা‘ধীনতা ভোগ করে।

স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপ  

১. ব্যক্তিগত স্বাধীনতা :- 

ব্যক্তিগত স্বাধীনতা প্রত্যটির জন্ম হয় প্রাচীন গ্রিসের এথেন্সে। তাঁরা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বলতে বুঝতেন ব্যক্তির বাহ্যিক আচার – আচরণের ওপর সর্বপ্রকার নিয়ন্ত্রনহীনতা। প্রাচীন গ্রিসে এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ধারণার মাধ্যমেই স্বাধীনতার বর্তমান ধারণাটি বিকাশলাভ করে। 

২. জাতীয় স্বাধীনতা বা সম্প্রদায়গত স্বাধীনতা :- 

প্রাচীন গ্রিকবাসীদের নিকট জাতীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রদায়গত স্বাধীনতা ছিল সমার্থক। অধ্যাপক বার্নস বলেছেন – সর্বপ্রকার স্বাধীনতার উন্নতির ভিত্তি হল জাতীয় স্বাধীনতা। জাতীয় স্বাধীনতা হল বহিঃশত্রুর নিয়ন্ত্রণবিহীনতা এবং জাতীয় স্বাধীনতা না থাকলে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অস্তিত্বও অর্থহীন হয়ে পড়ে। 

৩. স্বাভাবিক স্বাধীনতা :- 

স্বাভাবিক স্বাধীনতা তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন রুশো। প্রাক – সামাজিক ও প্রাক – রাজনৈতিক যুগে মানুষ অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করত। মানুষের উপর কোনোপ্রকার বাধানিষেধ আরোপিত ছিলনা। মানুষের এই স্বাধীনতাকেই স্বাভাবিক স্বাধীনতা বলা যেতে পারে। কিন্তু স্বাভাবিক স্বাধীনতা তত্ত্বের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হল – অবাধ ও নিয়ন্ত্রণবিহীন স্বাধীনতা মানুষকে স্বেচ্ছাচারী করে তোলে। 

৪. সামাজিক স্বাধীনতা :- 

সামাজিক আচার – আচরণ , রীতিনীতি , প্রথা – ইত্যাদি অনুসারে যে স্বাধীনতা সংরক্ষিত হয় – তা হল সামাজিক স্বাধীনতা। এইধরণের স্বাধীনতা নীতিবোধ ও সামাজিক বিবেক দ্বারা পরিচালিত হয়। কিন্তু সামাজিক স্বাধীনতার বিষয়টি আপেক্ষিক। কেননা প্রথা ও রীতিনীতির উপর ভিত্তি করে যে স্বাধীনতা গড়ে ওঠে তা কোনো কোনো সময় অমানবিক হয়ে উঠেছে – এমন নিদর্শনও লক্ষ্য করা যায় ; যেমন ভারতে একদা প্রচলিত সতীদাহ প্রথা , প্রাচীন গ্রিসে প্রচলিত ক্রীতদাস প্রথা – ইত্যাদি। 

৫. নৈতিক স্বাধীনতা :- 

নৈতিক স্বাধীনতা নীতিবোধ ও নৈতিক চেতনার দ্বারা সংরক্ষিত ও পরিচালিত হয়। আদর্শবাদী রাষ্ট্রচিন্তবিদরা নৈতিক স্বাধীনতার প্রধান প্রবক্তা। নৈতিক স্বাধীনতা ব্যক্তির নীতিবোধকে স্বাধীনতা উপভোগের মানদন্ড হিসাবে বিবেচিত করে। 

৬. আইনগত স্বাধীনতা :- 

বর্তমানে সকল রাষ্ট্র ব্যবস্থাতেই আইনগত স্বাধীনতার অস্তিত্ব বর্তমান। এই ধরণের স্বাধীনতা আইন ও সংবিধান স্বীকৃত হয়। কোনো কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আইনগত স্বাধীনতাকে আইন ও সংবিধান কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ বলেও মনে করেন। কেননা , রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অবাধ স্বাধীনতা স্বৈরাচারিতার নামান্তর ; তাই মানুষের অবাধ গতিবিধির উপর আইনসঙ্গত নিয়ন্ত্রন আরোপ করা প্রয়োজন। আইনসঙ্গত স্বাধীনতার প্রকারভেদ সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ ঐক্যমত্য না হলেও আইনগত স্বাধীনতাকে প্রধানতঃ তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন – 

৬(ক). ব্যক্তি স্বাধীনতা বা পৌর স্বাধীনতা :- 

ব্যক্তি স্বাধীনতা বা পৌর স্বাধীনতা হল সেই সকল স্বাধীন অধিকার যার দ্বারা ব্যক্তি তার ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করতে পারে। এই সকল অধিকারের মধ্যে প্রধান হল – ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার , ধর্মীয় অধিকার , বাক স্বাধীনতাও মতামত প্রকাশের অধিকার , স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা ও বসবাসের অধিকার , সম্মিলিত হওয়ার অধিকার , পেশাগত অধিকার – ইত্যাদি। প্রতিটি গণতন্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এই অধিকারগুলি আইন তথা সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত হয়। 

৬.(খ) রাজনৈতিক স্বাধীনতা :- 

রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যতীত গণতন্ত্র অর্থহীন। রাজনৈতিক স্বাধীনতাগুলি মানুষকে রাষ্ট্রব্যবস্থায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়। রাজনৈতিক অধিকারগুলির মধ্যে প্রধান হল – নির্বাচিত হওয়ার অধিকার , নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার , সরকারি কার্যাবলীর সমালোচনার অধিকার , সরকারি চাকুরী গ্রহণের অধিকার ইত্যাদি। প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মানুষের রাজনৈতিক অধিকারগুলি স্বীকৃত। 

৬.(গ). অর্থনৈতিক স্বাধীনতা :-  

ল্যাস্কি – প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ মনে করেন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ব্যাতিত অন্য সকল প্রকার স্বাধীনতা অর্থহীন। মার্সবাদীরাও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এপ্রসঙ্গে বার্কার যথার্থই বলেছেন , অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরাধীন শ্রমিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কখনোই স্বাধীন হতে পারেননা। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত প্রধান অধিকারগুলি হল – যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মে অংশগ্রহণের অধিকার , অক্ষম ব্যক্তিদের রাষ্ট্র কর্তৃক প্রতিপালিত হওয়ার অধিকার , উপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভের অধিকার , বার্ধক্যে আর্থিক নিরাপত্তার অধিকার , সর্বপ্রকার শোষণের হাত থেকে মুক্তির অধিকার – ইত্যাদি। 

পরিশেষে বলা যায় , উপরে আলোচিত ভিন্ন ভিন্ন ধরণের স্বাধীনতার মধ্যে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার বিষয়টি সর্বাধিক বিতর্কিত ও আলোচিত। কেননা , যেসকল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ মুষ্টিমেয় পুঁজিপতিদের হাতে অর্পিত থাকে সেখানে সেখানে জনগণ কোনো স্বাধীনতাই সঠিকভাবে উপভোগ করতে পারেনা। একমাত্র মালিকানা ব্যবস্থার পরিবর্তন ও উৎপাদনশীলতার মালিকানা ক্ষেত্রে পরিবর্তন – অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তবে এই বিষয়টি সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ একমত নন।     

স্বাধীনতা শব্দের অর্থ কি

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনায় স্বাধীনতা শব্দটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার ইংরেজি প্রতিশব্দ Liberty ল্যাটিন শব্দ Liber থেকে গৃহীত, যা Libertinus হতে উদ্ভূত। এর অর্থ a freed man বা মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাস। আবার স্বাধীন শব্দটি ভাঙলে স্ব+অধীন পাওয়া যায়। অর্থাৎ নিজের অধীনে থাকার নামই স্বাধীনতা।

স্বাধীনতা একটি শর্ত, যেখানে একটি জাতি, দেশ, বা রাষ্ট্র বা জায়গা যেখানে জনগণ থাকবে, নিজস্ব শাসনব্যবস্থা, এবং সাধারণত কোন অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব থাকবে। স্বাধীনতার বিপরীত হচ্ছে পরাধীনতা। স্বাধীনতা দীর্ঘ বিপ্লব বা সহিংসতার বিতর্ক যেভাবেই হোক, সার্বভৌমত্ব অর্জন।

স্বাধীনতা শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো

স্বাধীনতা হল স্বাধীন এর বিশেষ্য পদ। স্ব + অধীন = স্বাধীন, অর্থাৎ স্বাধীন হবার অর্থ হল নিজের অধীনস্থ হওয়া। অন্যরা যখন কোন ব্যক্তিকে নিজের অধীনে থাকার জন্য বাধ্য করে তখন সেটাকে স্বাধীনতা হরণ বলে। সোজা ভাষায় বললে ইচ্ছাকৃতভাবে কারুর অধীনে থাকলে সেটা স্বাধীনতা, কিন্তু যখন তোমাকে অন্যের অধীনে থাকার জন্য বাধ্য করা হবে তখন সেটা পরাধীনতা।

তবে নিজের স্বাধীনতার পরিসর যেন কোনদিন উৎশৃঙ্খলতা (যেমন- ক্লাসের মাঝে স্বাধীনতার নামে যদি কেউ আড্ডা দেয়) বা অন্যদের জন্য বেদনা না সৃষ্টি করে (যেমন- প্রচুর জোরে মাইক বাজানো), তাহলে সেটা স্বাধীনতা রইবে না, সেটা তখন হয়ে যাবে স্বেচ্ছাচারিতা।

স্বাধীনতার ঘোষক কে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক কে

শেখ মুজিবুর রহমানকে অনেক বেশি ভালোবাসি। তার জীবনী থেকে অনেক শিক্ষা রয়েছে আমাদের জন্য। যারা ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সম্পর্কে জানে তারা সকলেই এক বাক্যে বলতে বাধ্য, শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দেবার অন্যতম নায়ক। যা কখনোই অস্বীকার করার নয়।

কিন্তু বর্তমান সরকার এবং পা চাটা হলুদ গণমাধ্যমগুলো অবলীলায় বলে যাচ্ছেন, স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

মূলত, স্বাধীনতার ঘোষক হলেন শহীদ মেজর জিয়াউর রহমান।

আপনি যদি, ১৯৭১ থেকে এ সরকার ক্ষমতার আসনে বসার আগ মুহূর্তের পত্র-পত্রিকাগুলো দেখেন, সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক।

বর্তমান সময়ে তা বিকৃত করে শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা হয়। সম্পূর্ণ মিথ্যা।

পাঠ্যপুস্তকেও স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে শহীদ মেজর জিয়াউর রহমানের নাম ছিল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা পরিবর্তন হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমেও আমাদেরকে বিকৃত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

২৬ মার্চ ১৯৭১, সন্ধ্যে ৭.৪০মিনিট, আওয়ামীলীগের এম, এ হান্নান

এবং ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ রাতে তৎকালীন সেনাবাহিনীর মেজর ও পরবর্তিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রাহমান প্রথমে নিজে এবং পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রাহমান পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

এছাড়া অন্য মতে এ দুটির আগেও প্রথম ঘোষণা দেওয়া হয় ২৬শে মার্চ ১৯৭১, দুপুর ২.১০ মিনিট এবং এই ঘোষণাটি দেন আওয়ামী লীগের এম এ হান্নান।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কি বুঝ

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে বোঝায় বিচার বিভাগকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালনে যে স্বাধীনতা প্রয়োজন তা অর্জন করা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মানে বিচারকদের তাদের বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে কোনও ধরনের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকা।

বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা রক্ষায় নিম্নলিখিত শর্তগুলো গুরুত্বপূর্ণ:

  • সংবিধানিক সুরক্ষা: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানে সুরক্ষিত হওয়া উচিত। সংবিধানে বিচার বিভাগকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দেওয়া উচিত এবং বিচারকদের তাদের বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে কোনও ধরনের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখার কথা বলা উচিত।
  • নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা: বিচারকদের নিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিচারকদের নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকা উচিত। বিচারকদের নিয়োগ একটি স্বতন্ত্র কমিশনের মাধ্যমে করা উচিত।
  • বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা: বিচারকদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা উচিত। যাতে তারা তাদের বিচারিক কাজের প্রতি মনোনিবেশ করতে পারে।
  • শারীরিক ও আর্থিক নিরাপত্তা: বিচারকদের শারীরিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত। যাতে তারা তাদের বিচারিক কাজের কারণে হুমকির সম্মুখীন না হয়।

বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা একটি গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য অপরিহার্য। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা না থাকলে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সরকার ও জনগণের সমানভাবে দায়িত্ব রয়েছে। সরকারকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জনগণকেও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করতে হবে।

নির্ভীক ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা ছাড়া সভ্য ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অসম্ভব। উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম অনুমান হিসাবে বিচারব্যবস্থা ও বিচারপতিদের নির্ভীকতা ও নিরপেক্ষতার কথা বলা হয়। নিরপেক্ষ ও নির্ভীক বিচারব্যবস্থা নাগরিক স্বাধীনতা, আইনের অনুশাসন; সর্বোপরি উদারনীতিক গণতন্ত্রের স্বার্থে অপরিহার্য বিবেচিত হয়। তা ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করার জন্যও নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী বিচার-বিভাগ দরকার। আবার বর্তমানে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলতে প্রতিনিধিমূলক গণতন্ত্রকে বোঝায়। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরাচার সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে।

তাই এখনকার প্রতিনিধিমূলক গণতে মন্যতম স্বীকৃত মূলনীতি হল সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা বিধান। বিখ্যাত দার্শনিক রাসেল বলেছেন: “The safe guarding of minorities so far as it is compatible with •orderly government is an essential part of the taming of power.” আবার নির্ভীক ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থার জন্য বিচার-বিভাগের স্বাধীনতা অত্যাবশ্যক। বিচার-বিভাগের স্বাধীনতা বলতে বোঝায় যে, বিচারপতিগণ সকল রকম রাজনীতিক, শাসন-বিভাগীয় এবং আইন-বিভাগীয় হস্তক্ষেপ ছাড়াই নির্ভীকভাবে ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। তাঁরা নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতা অনুসারে বিরোধের নিষ্পত্তি করবেন।

বিচার-বিভাগের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা

উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিচার-বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা সমাজব্যবস্থার প্রধানতম স্তম্ভ হিসাবে গণ্য করা হয়। ন্যায়বিচার করা বিচার-বিভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নির্ভীক ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা ছাড়া ন্যায়বিচার আশা করা যায় না। আবার স্বাধীনতা ছাড়া বিচার-বিভাগ নির্ভীক ও নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য সম্পাদন করতে পারে না। বস্তুতপক্ষে বিচার-বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা পরস্পরের পরিপূরক। বিচার বিভাগের উপর আইন বা শাসন বিভাগের কর্তৃত্ব কার্যকর হলে পক্ষপাতহীন ন্যায়বিচার ক্ষুণ্ন হতে বাধ্য। তাই ন্যায়সঙ্গত ও নিরপেক্ষ বিচারের স্বার্থে বিচার-বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য। তাছাড়া গণতন্ত্রের সাফল্য বিচার-বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও উৎকর্ষের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। লর্ড ব্রাইস-এর মতানুসারে সরকারের উৎকর্ষ বিচারের ক্ষেত্রে বিচার-বিভাগের কর্মকুশলতা অপেক্ষা অধিকতর উপযোগী মানদণ্ড আর নেই। রাষ্ট্রে জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা থাকা একান্ত প্রয়োজন। নির্ভীক, নিরপেক্ষ এবং সৎ ও অভিজ্ঞ বিচারপতিরাই সংকীর্ণ ব্যক্তি বা শ্রেণীস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। গোখেল-এর মতানুসারে বিচারকগণ দুর্নীতিপরায়ণ ও বিকৃত মনোভাবাপন্ন হলে ন্যায়বিচার ব্যাহত হতে বাধ্য। এই সমস্ত কারণে বিচার-বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা সংরক্ষণ নিতান্তই আবশ্যক। আর বিচার-বিভাগের স্বাধীনতা কতকগুলি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল।

(১) বিচারপতিদের যোগ্যতা

সুষ্ঠুভাবে বিচারকার্য সম্পাদনের জন্য উপযুক্ত বিচারপতি একান্তভাবে দরকার। দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে সৎ, সাহসী ও যথার্থ আইনজ্ঞ ব্যক্তিগণ বিচারপতিদের পদে আসীন হলে ন্যায়বিচারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে প্রার্থীদের গুণগত যোগ্যতা সতর্কভাবে বিচার-বিবেচনা করা দরকার। বিচারপতিগণ অবশ্যই বিজ্ঞ, স্বাধীনচেতা ও নিরপেক্ষ হবেন। শাসন-বিভাগের কোন ব্যক্তিকে বিচারক পদে নিযুক্ত করা উচিত নয়। কোন রকম কূটনীতিক বিচারে বা দলীয় আনুগত্যের কারণে বিচারপতিদের নিয়োগ করা বাঞ্ছনীয় নয়। অযোগ্য ব্যক্তি রাজনীতিক কারণে বিচারক হিসাবে নিযুক্ত হলে ন্যায়বিচার পদদলিত হতে বাধ্য। তেমনি বিচারপতিদেরও কোন রাজনীতিক পদে নিযুক্ত করা অনুচিত। কারণ, এরকম পদ লাভের আশায় বিচারকার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে বিচারপতিগণ শাসন-বিভাগের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করতে পারেন।

বিচারব্যবস্থায় নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ব্যাপারে বিচারপতিদেরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করতে হবে। বিচার-বিভাগের প্রক্রিয়া বিচারপতিদের মাধ্যমেই মূর্ত হয়ে উঠে। এই কারণে বিচার-বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার স্বার্থে বিচার-বিভাগীয় কাঠামোগত বিন্যাসের উপর জোর দেওয়া দরকার।

(২) বিচারপতিদের নিয়োগ

বিচার-বিভাগের স্বাধীনতা বিচারকদের নিয়োগপদ্ধতির উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। বিচারপতিদের সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে নিয়োগ করা যায়:

  • (ক) জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচন, 
  • (খ) আইনসভা কর্তৃক মনোনয়ন এবং 
  • (গ) শাসন-বিভাগ কর্তৃক নিয়োগ।

(ক) জনগণের দ্বারা নির্বাচন: জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে বিচারক নিয়োগের পদ্ধতি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে এবং সুইজারল্যাণ্ডের কয়েকটি ক্যান্টনে প্রচলিত আছে। তবে এই পদ্ধতি বিভিন্ন দোষে দুষ্ট। জনগণের দ্বারা নির্বাচনের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ ল্যাস্কির মতে একটি নিকৃষ্ট পদ্ধতি। (১) নির্বাচনের সাফল্য যোগ্যতা অপেক্ষা জনপ্রিয়তার উপর অধিক নির্ভরশীল। আবার মিথ্যা ও অপপ্রচারের দ্বারা জনগণকে বিভ্রান্ত করে জনপ্রিয়তা অর্জন করা যায়। এতে অযোগ্য ব্যক্তির বিচারক হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। (২) জনগণের দ্বারা বিচারক নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে বিচারকগণ জনসমর্থন লাভের আশায় সতত জনসাধারণের সন্তুষ্টি বিধানে আত্মনিয়োগ করবেন। তাঁরা পুনর্নির্বাচনকে সুনিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে ন্যায়-নীতিকে বিসর্জন দিতেও পিছপা হবেন না। (৩) তাছাড়া নির্বাচনে দলপ্রথার প্রভাব পড়বেই। তার ফলে নির্বাচিত বিচারক দলীয় স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী হতে পারেন। এরূপ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও সুবিচার আশা করা যায় না। (৪) সর্বোপরি, বিচারপতি পদে উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাছাই করার জন্য প্রয়োজনীয় বিচার-বুদ্ধি বা যোগ্যতা জনসাধারণের থাকে না। এই সমস্ত কারণের জন্য জনগণের দ্বারা নির্বাচনের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ ল্যাস্কির মতানুসারে একটি নিকৃষ্ট পদ্ধতি (“Of all the methods of appointment, that of election by the people at large is without exception the worst.”)।

(খ) আইনসভার দ্বারা নির্বাচন: আইনসভার দ্বারাও বিচারপতি নিয়োগ করা যায়। আইনসভার দ্বারা বিচারপতি নিয়োগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে এবং সুইজারল্যাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতের বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচলিত আছে। তা ছাড়া বলিভিয়া, আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া ও যুগোশ্লাভিয়ার বিচারপতিরা আইনসভার সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন। ল্যাস্কি এই পদ্ধতিকেও সমর্থন করেননি। তাঁর কথায় “Election by the legislature is an undesirable form of appointment.” এর ফলে দলীয় স্বার্থ ও আইনসভার কর্তৃত্ব প্রাধান্য পায় এবং বিচারের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়। এই পদ্ধতিতে আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মনোনীত ব্যক্তিরাই বিচারপতি পদে নির্বাচিত হন। অর্থাৎ আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল নিজ দলের সভ্য-সমর্থকদের ভিতর থেকে বিচারক নির্বাচিত করেন। এই সবের ফলে বিচারপতি পদে অযোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচিত হওয়ার এবং ন্যায়বিচার পদদলিত হওয়ার আশংকা থাকে।

(গ) শাসন-বিভাগের দ্বারা নির্বাচন: বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই শাসন-বিভাগ কর্তৃক বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতিটি প্রচলিত আছে। শাসন-বিভাগ কর্তৃক বিচারপতি নিয়োগের তৃতীয় পদ্ধতিটিই বর্তমানে অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতে কাম্য বিবেচিত হয়। বলা হয় যে এইভাবে বিচারপতিরা নিযুক্ত হলে রাজনীতিক দল, গোষ্ঠী বা জনমতের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে ন্যায়বিচার সম্পাদন করতে পারেন। ঊর্ধ্বতন বিচারপতিদের সাধারণত রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োগ করেন। অধস্তন বিচারপতিগণ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার দ্বারা নিযুক্ত হন। ঊর্ধ্বতন বিচারকগণ সাধারণত বিচারপতিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক নিযুক্ত হন। ভারতের রাষ্ট্রপতি সুপ্রীম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে এ ধরনের পরামর্শ করেন। ভারত, ব্রিটেন ও কানাডায় শাসন-বিভাগের বিচারকগণ নিযুক্ত হন। ল্যাস্কির মতানুসারে বিচারকদের নিয়ে গঠিত একটি স্থায়ী কমিটির সম্মতিসাপেক্ষে বিচারপতিদের নিযুক্ত করা উচিত। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমেত বিভিন্ন দেশে বিচারপতিদের নিয়োগ রাজনীতিক বিচার-বিবেচনার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে।

গেটেলও এই পদ্ধতিকে সমর্থন করেছেন। তবে তিনি সতর্কতামূলক কয়েকটি শর্তের কথা বলেছেন। শর্তগুলি হল: বিচারকদের যোগ্যতার সুনির্দিষ্ট মান, বিচারক নিয়োগের ব্যাপারে রাষ্ট্রপ্রধানকে পরামর্শদানের উদ্দেশ্যে ঊর্ধ্বতন আদালতের কয়েকজন বিচারপতিকে নিয়ে একটি স্থায়ী কমিটি গঠন এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের কোন প্রশাসনিক বা কূটনীতিক পদ লাভের সম্ভাবনা রদকরণ।

(৩) বিচারকগণের কার্যকাল

বিচারপতিদের কার্যকালের স্থায়িত্বের উপরও বিচার-বিভাগের স্বাধীনতা বিশেষভাবে নির্ভরশীল। কার্যকালের স্থায়িত্ব না থাকলে নিষ্ঠার সঙ্গে বিচারকার্য সম্পাদন করা বিচারকদের পক্ষে সম্ভব হয় না। আবার কার্যকাল স্বল্পস্থায়ী হলে বিচারপতিদের পদের অপব্যবহারের আশংকা থাকে। কার্যকাল বৃদ্ধির জন্য বিচারপতিদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে সন্তুষ্ট রাখার ব্যাপারে অধিক আগ্রহী দেখা যায়। এর ফলে বিচারকার্যে অবহেলা ঘটে ও দুর্নীতি প্রশ্রয় পায়। বিচারপতিদের কার্যকাল স্থায়ী হলে তাঁরা নির্ভীক ও নিরপেক্ষভাবে ন্যায় বিচার করতে পারেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার জন্য বিচারপতিদের নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত স্থায়িভাবে নিযুক্ত করা উচিত, যাতে তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অক্ষমতার অভিযোগ প্রমাণিত না হলে পদচ্যুত করা না যায়। এখন অধিকাংশ রাষ্ট্রেই বিচারপতিদের কার্যকালের ব্যাপারে এই নীতি অনুসরণ করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিচারপতিরা অক্ষম হয়ে না পড়লে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত পদে বহাল থাকেন। ভারতে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিরা ৬৫ বৎসর বয়স পর্যন্ত এবং হাইকোর্টের বিচারপতিরা ৬২ বৎসর বয়স পর্যন্ত পদে আসীন থাকেন।

(৪) বিচারকগণের অপসারণ

বিচারকগণের অপসারণ পদ্ধতির উপরও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নির্ভরশীল। অকারণে বা সামান্য কারণে অপসারণের ভয় বা আশংকা থাকলে বিচারকদের পক্ষে ন্যায় বিচার করা সম্ভব হয় না। তাই কোন বিচারককে যাতে সামান্য কারণে পদচ্যুত হতে না হয় তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকা দরকার। প্রমাণিত দুর্নীতি ও গুরুতর অপরাধের অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কার্যকাল শেষ হওয়ার আগেই বিচারপতিগণ পদচ্যুত হতে পারেন। তবে সহজে তাঁদের পদচ্যুত করা যায় না। বিচারপতিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অক্ষমতার অভিযোগের বিচার সাধারণত আইনসভায় সম্পাদিত করা যায় না। এ ব্যাপারে বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এর উদ্দেশ্য হল যাতে অন্য কোন চাপ এক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মহাঅভিযোগের (impeachment) বিচার পদ্ধতিতে বিচারপতিদের পদচ্যুত করা যায়। মার্কিন কংগ্রেসের জনপ্রতিনিধি সভা অভিযোগ উত্থাপন করে এবং সিনেট অভিযোগের বিচার করে। ভারতে রাষ্ট্রপতি সংসদের উভয় কক্ষের মোট সদস্যের অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে অভিযুক্ত কোন বিচারপতির বিরুদ্ধে গৃহীত প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিচারপতিকে পদচ্যুত করতে পারেন। ব্রিটেনে রাজা বা রানী পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের যৌথ আবেদনের ভিত্তিতে বিচারকদের পদচ্যুত করতে পারেন।

(৫) বিচারকগণের বেতন ও ভাতা

বিচার-বিভাগের স্বাধীনতার সঙ্গে বিচারকদের বেতন এবং ভাতারও সম্পর্ক আছে। স্বল্পবেতনভোগী বিচারপতিদের দুর্নীতিপরায়ণ হওয়ার আশংকা থাকে। শ্রেষ্ঠ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বিচারক পদে আকৃষ্ট করার জন্য বিচারপতিদের বেতন পর্যাপ্ত হওয়া দরকার। পর্যাপ্ত বেতন ও ভাতা না দিলে কোন অভিজ্ঞ ব্যবহারজীবী বা আইনজ্ঞ পণ্ডিত ব্যক্তি বিচারক হিসাবে কাজ করতে রাজী হবেন না। তা ছাড়া, তাঁদের বেতন ও ভাতা পদমর্যাদা রক্ষার উপযোগী হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা সম্পর্কিত কোন বিষয় শাসন-বিভাগের অনুমতিসাপেক্ষ হওয়া উচিত নয়। এক্ষেত্রে যাবতীয় ব্যয় সরকারী তহবিলের উপর ধার্য ব্যয় হিসাবে গণ্য হওয়া আবশ্যক। আবার জরুরী অবস্থার সময় ছাড়া সহসা বিচারপতিদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে তাঁদের বেতন, ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার পরিবর্তন করা উচিত নয়। তবে জরুরী অবস্থার সময় তা করা যেতে পারে।

(৬) বিচার-বিভাগের স্বতন্ত্রীকরণ

বিচার-বিভাগের স্বাধীনতার জন্য আইন ও শাসন-বিভাগ থেকে তার স্বতন্ত্রীকরণ অপরিহার্য। প্রাচীনকালে রাজা বা রাজকর্মচারীরাই আইন প্রণয়ন, শাসন ও বিচারকার্য সম্পাদন করতেন। আগে শাসনকার্য ও বিচারকার্যের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হত না। এই ব্যবস্থা স্বৈরাচারের সুযোগ করে দেয়। ইতিহাসে এর সমর্থন পাওয়া যায়। বর্তমানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির আংশিক প্রয়োগ বলতে এই বিচার-বিভাগের স্বতন্ত্রীকরণকে বোঝায়। ল্যাস্কির মতানুসারে শাসকের হাতে বিচারের ভার ন্যস্ত থাকলে ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না। এরকম ক্ষেত্রে শাসন-বিভাগ সহজেই স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে। ল্যাস্কি মন্তব্য করেছেন: “The independence of the judiciary is essential to freedom. In that sense, the doctrine of separation of powers enshrines a permanent truth.” বিচার-বিভাগের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য অধিকাংশ দেশে শাসন-বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করা হয়েছে বা হচ্ছে।

(৭) বিচারকের দৃষ্টিভঙ্গি

বিচারপতিদের দৃষ্টিভঙ্গি ও শ্রেণীচেতনার উপর বিচার-বিভাগের নিরপেক্ষতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। বিচারকদের সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থান, আর্থনীতিক ও শিক্ষাগত প্রেক্ষাপট, রাজনীতিক চেতনা প্রভৃতির ছাপ তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির উপর পড়ে। বিচারকদের শ্রেণীচরিত্রের দ্বারা তাঁদের সামাজিক ও রাজনীতিক অঙ্গীকার, মানসিক গঠন প্রভৃতি নিয়ন্ত্রিত হয়। বিচারপতিরাও হলেন এই সমাজেরই সদস্য। এই কারণে তাঁদের সামাজিক চেতনা তাঁদের সামাজিক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রভাবিত হয়। সমাজবদ্ধ মানুষ হিসাবে বিচারপতিরা বিদ্যমান সমাজব্যবস্থার প্রচলিত মূল্যবোধের প্রতি সাধারণত অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে পড়েন। এই সামাজিক অবস্থানজনিত কারণের জন্য বিচারপতিদের মূল্যবোধ, মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত হয়ে থাকে। বিচারপতিরাও মানুষ, ভিন্ন গ্রহের দেবতা নন। সুতরাং মানুষের দোষ ত্রুটি থেকে তাঁরা মুক্ত নন। Introductions to Political Science শীর্ষক গ্রন্থে রোডী, অ্যাণ্ডারসন ও ক্রিস্টল মন্তব্য করেছেন: “. where the greatest care is taken in democracies to secure the service of… impartial judges, the human element creeps inevitably into the judicial process.” সুতরাং বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে বিচারপতিদেরও প্রয়োজনীয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | স্বাধীনতা

Q1. বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক কে ছিলেন

Ans – বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কারণ, তিনি মুজিব নগর সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন, আর মুক্তিবাহিনী মুজিব নগর সরকারের অধীনস্থ ছিল।

Q2. আমেরিকা স্বাধীনতা লাভ করে কত সালে

Ans – আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস ৪ জুলাই। ১৭৭৬ সালের এদিনে আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। একটি সার্বভৌম যুক্তরাষ্ট্র বা ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকার জন্ম হয়েছিল এদিনে। দিনটি আমেরিকানদের জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। দিনটি আমেরিকার নাগরিকেরা মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে উদ্‌যাপন করে থাকেন।

Q3. স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন কে

Ans – ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ ঘোষণা করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। স্বাধীনতার ইশতেহারে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ণ রূপরেখা তুলে ধরা হয়। এবং সেই ইশতেহারেই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয় এ দেশের নাম হবে ‘বাংলাদেশ’।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।