নিরক্ষরেখা কাকে বলে, নিরক্ষরেখা বলতে কী বোঝায়, মূল মধ্যরেখা কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

নিরক্ষরেখা কাকে বলে

সুমেরু এবং কুমেরু বিন্দুদ্বয় থেকে সমান দূরে পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টিত পূর্ণ বৃত্তাকার কল্পিত রেখাকে বিষুবরেখা বা নিরক্ষরেখা বলে। নিরক্ষরেখা থেকেই পৃথিবীর কোনো স্থানের উত্তর-দক্ষিণে কৌণিক দূরত্ব নিরূপণ করা হয়।

নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা বলতে কোন গ্রহের মেরুগুলো থেকে সমান দূরে অবস্থিত গ্রহপৃষ্ঠ প্রদক্ষিণকারী একটি কাল্পনিক বৃত্তকে বোঝায়। সহজ ভাষায় এটি একটি কাল্পনিক রেখা যা পৃথিবীর মাঝ বরাবর এবং উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরু থেকে দুরত্বে কল্পনা করা হয় এবং যা পৃথিবীকে দক্ষিণ গোলার্ধ এবং উত্তর গোলার্ধে ভাগ করে।এই রেখাটির মান ০ ডিগ্রি। একে বিষুবীয় রেখাও বলা হয়।

যেহেতু পৃথিবী সূর্যের সন্মুখে 66½ ডিগ্রী কোন করে প্রদক্ষিণ করে তাই,সূর্য সর্বদা নিরক্ষরেখা/বিষুবরেখার উপর অবস্থান করে না। মার্চ থেকে শুরু করে জুন পর্যন্ত সূর্য উত্তর গোলার্ধে অবস্থান করে। সেই সময় উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্ম ঋতু দেখা যায়,এরপর ধীরে ধীরে পৃথিবী প্রদক্ষিণের ফলে দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্যের সামনে আসে। অর্থাৎ জুন মাসের পর থেকে সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে অগ্রসর হয়, বিষুবরেখা কে অতিক্রম করে।

নিরক্ষরেখা বলতে কী বোঝায়

পৃথিবীর মাঝ বরাবর পূর্ব পশ্চিমে বিস্তৃত যে কাল্পনিক রেখাটি পৃথিবীকে দুটি সমান ভাগে ভাগ করেছে, তাকে নিরক্ষরেখা বলে। 

নিরক্ষরেখাকে ডিগ্রী, মিনিট ও সেকেন্ডে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগ বিন্দুর উপর দিয়ে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত যে রেখা কল্পনা করা হয়েছে তাকে দ্রাঘিমা রেখা বলে। দ্রাঘিমারেখাকে মধ্য রেখাও বলা হয়। দ্রাঘিমারেখাগুলো অর্ধবৃত্ত এবং সমান্তরাল নয়। প্রত্যকটি দ্রাঘিমারেখার দৈর্ঘ্য সমান। সর্বোচ্চ দ্রাঘিমা ১৮০° হয়। মধ্যরেখাগুলোর যে কোনো একটিকে নির্দিষ্ট মূল মধ্যরেখা ধরে এ রেখা থেকে অন্যান্য মধ্যরেখার কৌণিক দূরত্ব মাপা হয়। দ্রাঘিমার সাহায্যে স্থানীয় সময় নির্ণয় বা স্থির করা যায়।

নিরক্ষরেখার বৈশিষ্ট্য, নিরক্ষীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য

নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে উষ্ণতা প্রায় সারাবছরই বেশি থাকে । উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত নিরক্ষীয় জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। নিরক্ষীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য গুলি হল –

A. উষ্ণতার বৈশিষ্ট্য :

1. সারাবছর দিনেরবেলা প্রায় একই উষ্ণতার প্রাধান্য : পৃথিবীর মেরুরেখা বা অক্ষ ( axis ) কক্ষতলের সঙ্গে সর্বদাই 66.1/2 ° কোণে , হেলে অবস্থান করে বলে বছরের অধিকাংশ সময় মধ্যাহ্নে সূর্যরশ্মি নিরক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে এবং দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য প্রায় সমান হয় । এজন্য নিরক্ষরেখা – সংলগ্ন অঞ্চলসমূহে , বিশেষত 5 ° -10 ° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে সারাবছরই দিনেরবেলা উষ্ণতা বেশি থাকে এবং তা খুব বেশি ওঠা নামা করে না । তাই উন্নতার প্রসর খুব কম এবং ঋতু পরিবর্তন হয় না , অর্থাৎ এখানে সমভাবাপন্ন জলবায়ু বিরাজ করে।

2. বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর কম : নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে বার্ষিক গড় উষ্ণতা থাকে 24 ° সেঃ থেকে 27 ° সেঃ এবং বার্ষিক উয়তার প্রসর 2 ° সেঃ থেকে 3 ° সেঃ এর বেশি হয় না । সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন উয়তার মধ্যে এত অল্প পার্থক্য অন্য জলবায়ু অঞ্চলে পরিলক্ষিত হতে দেখা যায় না।

3. দৈনিক উষ্ণতার প্রসর সর্বোচ্চ : বার্ষিক উন্নতার তারতম্য খুব বেশি না হলেও এখানে সারাদিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উষ্মতার মধ্যে পার্থক্য 5 ° সেঃ থেকে 20 ° সেঃ পর্যন্ত হয় । এর কারণ মধ্যাহ্নে উষ্ণতা খুব বেড়ে গেলেও বিকাল বা সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টিপাতের পর রাতের উন্নতা কমে 15 ° সেঃ চলে আসে এবং তখন কিছুটা ঠান্ডাও অনুভূত হয়।

B. বায়ুচাপ ও বায়ুপ্রবাহের বৈশিষ্ট্য :

1. স্থায়ী নিম্নচাপ বলয় : নিরক্ষীয় অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলে সারাবছর নিম্নচাপ বিরাজ করে এর কারণ হল-

i. নিরক্ষরেখায় প্রায় সারাবছর মধ্যাহ্নে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে । এজন্য এখানে সব সময়ই বায়ু উয় ও হালকা থাকে।

ii. পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য ( নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ সবচেয়ে বেশি ) নিরক্ষীয় অঞ্চলে ওপরের স্তরের বায়ু সারাবছরই উত্তর ও দক্ষিণে ছিটকে যায়।

iii. নিরক্ষীয় অঞ্চলে স্থলভাগের তুলনায় জলভাগের পরিমাণ বেশি বলে বায়ুতে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প থাকে । জলীয় বাষ্প বায়ুর থেকে হালকা বলে সবসময়ই ওপরে উঠে যায় । এই তিনটি কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুর ঘনত্ব সবসময়ই কম থাকে , অর্থাৎ বায়ুতে নিম্নচাপ বিরাজ করে , ফলে বায়ু সর্বদাই ঊর্ধ্বমুখী থাকে।

2. নিরক্ষীয় শান্তমণ্ডল : যেহেতু নিরক্ষীয় অঞ্চলে স্থায়ী নিম্নচাপ বিরাজ করে , তাই দুই দিকের দুই উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় ( কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি ) থেকে দুটি আয়ন বায়ু ( উত্তর – পূর্ব আয়ন বায়ু এবং দক্ষিণ – পূর্ব আয়ন বায়ু ) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ছুটে যায় । এই দুই আয়নবায়ু 5 ° -10 ° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ বরাবর পরস্পর মিলিত হয়ে ওপরে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে নিরক্ষরেখা সংলগ্ন স্থানসমূহে ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে সমান্তরাল বা অনুভূমিকভাবে বায়ুর কোনো প্রবাহ থাকে না । তাই এক শান্ত অবস্থা বিরাজ করে । এজন্য নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চল নিরক্ষীয় শান্তমণ্ডল  (Equatorial Doldrum) নামে অভিহিত।

3. ইন্টার ট্রপিক্যাল কনভার্জেন্স জোন : উত্তর – পূর্ব আয়ন বায়ু এবং দক্ষিণ – পূর্ব আয়ন বায়ু নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের কাছাকাছি ( 5 ° -10 ° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে ) এসে পরস্পর মিলিত হলে উগ্ন হয়ে কালক্রমে ওপরে উঠে যায় । তাই এই অঞ্চলে ইন্টার ট্রপিক্যাল কনভার্জেন্স জোন ( Inter Tropical Convergence Zone ( ITCZ ) বা আন্তঃক্রান্তীয় অভিসারী অঞ্চল সৃষ্টি হয়েছে।

C. বায়ুতে জলীয় বাষ্পের বৈশিষ্ট্য :

নিরক্ষীয় অঞ্চলে স্থলভাগের তুলনায় জলভাগ অনেক বেশি । প্রচণ্ড সূর্যরশ্মিতে এই জলভাগ থেকে প্রচুর পরিমাণে জল বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যায় । তাই এই অঞ্চলের বায়ুতে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প থাকে এবং এখানে প্রায় প্রতিদিনই অপরাহ্নে পরিচলন বৃষ্টিপাত হয় । এখানকার বায় বেশি উয় ও আর্দ্র বলে আবহাওয়া বেশ ভ্যাপসা ও অস্বস্তিকর হয় । তবে অপরাহ্নে বৃষ্টিপাতের পর আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা হয়ে যায়।

D. মেঘ ও বৃষ্টিপাতের বৈশিষ্ট্য :

1. কিউমুলোনিম্বাস মেঘের আধিপত্য : এই অঞ্চলে সকালের আকাশ পরিষ্কার এবং রোদ ঝলমলে থাকে । কিন্তু বাতাসে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প থাকে বলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশে মেঘের সঞ্চার ঘটে এবং ক্রমশ তা ঘন কালো কিউমুলোনিম্বাস ( ‘ নিম্বাস ’ কথার অর্থ বর্ষণ ) মেঘে রূপান্তরিত হয়ে বিকাল 3 টে থেকে 4 টের মধ্যে বজ্রবিদ্যুৎ – সহ বৃষ্টিপাত ঘটায় । এজন্য একে ‘ Four O’clock Rain ‘ বলে।

2. পরিচলন বৃষ্টিপাতের প্রাধান্য : বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু উয় ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায় ( অর্থাৎ পরিচলন স্রোত সৃষ্টি করে ) এবং তারপর ওপরে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটায় । এইভাবে নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় প্রতিদিন বিকালের দিকে পরিচলন বৃষ্টিপাত হয় ।

3. বার্ষিক বৃষ্টিপাত : প্রায় প্রতিদিনই ( বছরে গড়ে 200 থেকে 300 দিন ) বৃষ্টিপাত হয় বলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই বেশি।

4. বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন : বৃষ্টিপাতের বণ্টন সর্বত্র সমান নয়। পেরুর ইকুইটসে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় 261 সেমি । কিন্তু আকাসায় এর পরিমাণ প্রায় 365 সেমি। আফ্রিকায় ক্যামেরুন পর্বতের পাদদেশে এর পরিমাণ প্রায় 1000 সেমি।

5. বজ্রঝড়ের আগমন : বৃষ্টিপাতের সময় বজ্রঝড় হয় । এই অঞ্চলের সর্বত্র বছরে প্রায় 75 থেকে 150 দিন বজ্রঝড় হয়ে থাকে।

6. বৃষ্টি বলয়ের স্থানান্তর : এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সঙ্গে সঙ্গে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় যথাক্রমে সামান্য উত্তর ও দক্ষিণে সরে যায় বলে নিরক্ষীয় বৃষ্টি বলয়ও উত্তরে ও দক্ষিণে সরে যায় । তাই বলা হয় , এখানে বৃষ্টি সূর্যের অনুগামী ( Rain follows the Sun ) ।

E. ঋতুবৈচিত্র্যহীন বৈশিষ্ট্য :

বছরের প্রতিটি দিনই ছায়াবৃত্ত নিরক্ষরেখাকে সমান দুই ভাগে ভাগ করে । তাই , নিরক্ষরেখায় সারাবছরই 12 ঘণ্টা দিন ও 12 ঘণ্টা রাত্রি হয় , অর্থাৎ দিন – রাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাস – বৃদ্ধি হয় না ( বছরের প্রায় প্রতিটি দিন সূর্য একই সময় উদিত হয় এবং অস্ত যায় ) । এজন্য বছরের বিভিন্ন সময় উত্তাপের তারতম্য হয় না , ফলে এখানে ঋতু পরিবর্তনও লক্ষ করা যায় না । সারাবছর একটি ঋতু বিরাজ করে এবং সেটি হল উয় – আর্দ্র গ্রীষ্ম ঋতু । বছরের যে – কোনো দিনের আবহাওয়া ঠিক তার আগের দিনের আবহাওয়ার মতো হয় । এর ফলে নিরক্ষীয় জলবায়ুর মধ্যে একটা বৈচিত্র্যহীন একঘেয়েমি ভাব বিরাজ করে।

নিরক্ষরেখার অপর নাম কি

নিরক্ষরেখার অপর নাম বিষুবরেখা। 

গোলাকার পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশের ঠিক মাঝ বরাবর যে রেখা পূর্ব–পশ্চিমে সমগ্র পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে, তাকে নিরক্ষরেখা বলে। একে মহাবৃত্তও বলা হয়। নিরক্ষরেখা পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। নিরক্ষরেখার অপর নাম বিষুবরেখা, এটি ০ ডিগ্রি অক্ষরেখা।

আরো পড়তে: দ্রাঘিমা রেখা কাকে বলে, কর্কটক্রান্তি রেখা কাকে বলে, সমান্তরাল রেখা কাকে বলে, অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা রেখার পার্থক্য

নিরক্ষরেখা কোন কোন দেশের উপর দিয়ে গেছে

নিরক্ষরেখা রেখাটি 13টি দেশের মধ্য দিয়ে গেছে: ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, সাও টোমে এবং প্রিন্সিপে, গ্যাবন, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, উগান্ডা, কেনিয়া, সোমালিয়া, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া এবং কিরিবাতি।

নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর আবর্তন বেগ কত

নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর আবর্তন বেগ প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১৭০০ কি.মি.।

পৃথিবী প্রতি 23 ঘন্টা, 56 মিনিট এবং 4.09053 সেকেন্ডে একবার ঘোরে, যা পার্শ্বীয় সময়কাল বলে, এবং এর পরিধি প্রায় 40,075 কিলোমিটার। সুতরাং, নিরক্ষীয় অঞ্চলে পৃথিবীর পৃষ্ঠটি প্রতি সেকেন্ডে 460 মিটার গতিবেগে গতিবেগ করে – বা প্রতি ঘন্টা প্রায় 1000 মাইল গতিবেগে, বা প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১৭০০ কি.মি।

নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর আবর্তন বেগ বেশি কেন

পৃথিবীর বিভিন্ন অক্ষরেখার পরিধি আলাদা হওয়ার কারণে বিভিন্ন অক্ষরেখায় পৃথিবীর আবর্তন বেগ এর তারতম্য ঘটে। নিরক্ষরেখা বরাবর পৃথিবীর আবর্তন বেগ বেশি হয়। কারণ- এখানে পৃথিবীর পরিধি সবচেয়ে বেশি। নিরক্ষরেখা থেকে যত মেরুবিন্দু তে গিয়ে 0° পরিণত হয় । তাই পৃথিবীর আবর্তন বেগ সব জায়গায় সমান হয় না।

অভিগত গােলকাকার পৃথিবীর পরিধি সর্বত্র সমান নয়। নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর পরিধি বৃহত্তম হলেও এই রেখার উত্তরে ও দক্ষিণে পরিধির মান ক্রমশ কমতে কমতে দুই মেরু বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। পরিধির সঙ্গে আবর্তন গতির সম্পর্ক সমানুপাতিক। অর্থাৎ, পৃথিবীর যে অংশের পরিধি যত বেশি হবে সেই অংশের আবর্তন গতিও তত বেশি হবে। তাই নিরক্ষরেখায় আবর্তন গতি সবচেয়ে বেশি।

মেরু অঞ্চলে আবর্তন গতি প্রায় নেই বললেই চলে। বিভিন্ন অক্ষরেখায় পৃথিবীর আবর্তন গতি বিভিন্ন ।

নিরক্ষরেখায় ধ্রুবতারার উন্নতি কোণ কত

নিরক্ষরেখায় ধ্রুবতারার উন্নতি কোণ ৬০ ডিগ্রি।

মূল মধ্যরেখা কাকে বলে

পৃথিবীর কোনো স্থানের পূর্ব-পশ্চিমের অবস্থান সুনির্দিষ্ট করতে ইংল্যান্ডের গ্রিণিচ শহরের উপর দিয়ে সুমেরু থেকে কুমেরু পর্যন্ত উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত কল্পিত রেখাকে মূল মধ্যরেখা বলে।

মূল মধ্যরেখা হলো ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার একটি মধ্যরেখা (দ্রাঘিমাংশের একটি রেখা), যাকে ০° দ্রাঘিমাংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূল মধ্যরেখা এবং তার বিপরীত মধ্যরেখা (৩৬০°-পদ্ধতিতে ১৮০ তম মধ্যরেখা) মিলিতভাবে একটি মহাবৃত্ত গঠন করে। এই মহাবৃত্ত পৃথিবীকে দুটি গোলার্ধে বিভক্ত করে। মধ্যরেখা গুলোর অবস্থান মূল মধ্যরেখার সাপেক্ষে বিবেচনা করা হলে তাদের অবস্থানের ভিত্তিতে পূর্ব গোলার্ধ এবং পশ্চিম গোলার্ধ এই দুভাগে ভাগ করা যায়।

গ্যারারডাস মার্কেটর ১৫৯৫ সালে তার অ্যাটলাস কসমোগ্রাফিকায় ২৫° পশ্চিম মধ্যরেখার নিকটবর্তী কোন স্থানে মূল মধ্যরেখা ব্যবহার করেছেন, এটি আটলান্টিক মহাসাগরের সান্তা মারিয়া দ্বীপের নিকট দিয়ে গমন করে। তিনি ১৮০° মধ্যরেখাটি বেরিং প্রণালীর উপর দিয়ে অঙ্কন করেছেন।

মূল মধ্যরেখা ইচ্ছাস্বাধীন ভাবে নির্বাচন করা হয়, এটি নিরক্ষরেখার মতো নয়। নিরক্ষরেখা মূলত অক্ষের আবর্তনের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয় হয়।

মূল মধ্যরেখার মান কত, মূল মধ্যরেখার মান

মূল মধ্যরেখার মান ০ ডিগ্রী।

মূল মধ্যরেখা হলো ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার একটি মধ্যরেখা, যাকে ০° দ্রাঘিমাংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূল মধ্যরেখা এবং তার বিপরীত মধ্যরেখা মিলিতভাবে একটি মহাবৃত্ত গঠন করে।

মূল মধ্যরেখার বৈশিষ্ট্য কী

(1) মূলমধ্যরেখার মান 0°। (2) মূলমধ্যরেখা হল একটি অন্যতম প্রধান দ্রাঘিমারেখা।

(3) এই রেখাটি উত্তরে সুমেরু থেকে দক্ষিনে কুমেরু পর্যন্ত বিস্তৃত।

(4) মূলমধ্যরেখাটি অর্ধবৃত্তাকার।

(5) মূলমধ্যরেখা প্রতিটি অক্ষরেখাকে সমকোণে বা লম্বভাবে ছেদ করে।

মূল মধ্যরেখার অপর নাম কি

মূল মধ্যরেখা আরেক নাম হল প্রধান দ্রাঘিমারেখা।

মূলমধ্যরেখা হল অন্যতম প্রধান দ্রাঘিমা রেখা। 0° দ্রাঘিমারেখাটি মূলমধ্যরেখা নামে পরিচিত।

এই রেখাটি বিভাজন রেখা নামেও পরিচিত। তারিখ রেখা উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এই রেখাটি পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের তারিখ বিভাজিকার কাজ করে।

মূল মধ্যরেখার গুরুত্ব

  • মূলমধ্যরেখাটি পৃথিবীকে পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধে বিভক্ত করেছে।
  • মূলমধ্যরেখার স্থানীয় সময় কে সারা পৃথিবীর প্রমাণ সময় হিসেবে ধরা হয়।

নিরক্ষরেখা ও মূল মধ্যরেখার পার্থক্য

ক্রমিকনিরক্ষরেখামূল মধ্যরেখা
1.নিরক্ষরেখা হল কাল্পনিক রেখা যা পৃথিবীর পৃষ্ঠকে উত্তর এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বিভক্ত করে।প্রাইম মেরিডিয়ান হল কাল্পনিক রেখা যা পৃথিবীর পৃষ্ঠকে পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধে বিভক্ত করে।
2.নিরক্ষরেখা 0 ডিগ্রি অক্ষাংশে অবস্থিত।প্রাইম মেরিডিয়ান 0 ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।
3.এটি অক্ষাংশীয় রেখাগুলির জন্য স্থায়ী কেন্দ্রীয় রেফারেন্স পয়েন্ট।এটি অনুদৈর্ঘ্য রেখার জন্য একটি অস্থায়ী কেন্দ্রীয় রেফারেন্স।
4.নিরক্ষীয় রেখা বিশ্বজুড়ে অনুভূমিকভাবে চলে।প্রাইম মেরিডিয়ান লাইন সারা বিশ্বে উল্লম্বভাবে চলে।
5.এটি বিভিন্ন তাপমাত্রা অঞ্চল ঠিক করতে কেন্দ্রীয় রেফারেন্স পয়েন্ট হিসাবে কাজ করে।এটি আন্তর্জাতিক ডেটলাইন ঠিক করার জন্য কেন্দ্রীয় রেফারেন্স পয়েন্ট হিসাবে কাজ করে।
নিরক্ষরেখা ও মূল মধ্যরেখার পার্থক্য

মূল মধ্যরেখা কোন শহরের উপর দিয়ে গেছে

মূল মধ্যরেখা যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের গ্রিনিচ এর উপর দিয়ে গিয়েছে।

যে কাল্পনিক অর্ধবৃত্তাকার রেখা ইংল্যান্ডের গ্রীনিচ মানমন্দিরের উপর দিয়ে সুমেরু থেকে কুমেরু পর্যন্ত উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত হয়ে পৃথিবীকে পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধে ভাগ করেছে তাকে মূল মধ্যরেখা বলে ।

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | নিরক্ষরেখা

Q1. নিরক্ষরেখা কি

Ans – সুমেরু ও কুমেরু থেকে সমান দূরত্বে পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে যে রেখা কল্পনা করা হয় তাকে নিরক্ষরেখা বা বিষুব রেখা বলে। এ রেখা পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে সমান দুই ভাগে ভাগ করে।

Q2. নিরক্ষরেখা কোন কোন মহাদেশের উপর দিয়ে গেছে

Ans – এটি 3টি মহাদেশের মধ্য দিয়ে যায়-
দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়া। পৃথিবীর উপর চলমান কাল্পনিক রেখা এটিকে দুটি সমান ভাগে ভাগ করে। এই রেখাটি বিষুবরেখাও নামে পরিচিত।

Q3. নিরক্ষরেখা কে মহাবৃত্ত বলা হয় কেন

Ans – পৃথিবীর নিরক্ষ রেখা বা বিষুব রেখা একটি মহাবৃত্ত যা পূর্ব-পশ্চিম দিক বরাবর পৃথিবীকে উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু থেকে সমান দূরত্বে দুটি সমান গোলার্ধে বিভক্ত করে। তবে নিরক্ষ রেখার সমান্তরাল অন্যান্য অক্ষরেখাগুলো মহাবৃত্ত নয়।

অসংখ্য অক্ষরেখার মধ্যে একমাত্র নিরক্ষরেখাই পৃথিবীকে দুটি সমান গোলার্ধে ভাগ করেছে। তাই নিরক্ষরেখাকে মহাবৃত্ত বলা হয়।

Q4. নিরক্ষরেখা মান কত

Ans – এই রেখাটির মান ০ ডিগ্রি।

Q5. নিরক্ষরেখা কে বিষুবরেখা বলা হয় কেন

Ans – বিষুব কথার অর্থ দিন ও রাত্রি সমান। নিরক্ষরেখা বরাবর সারাবছর পুরােপুরি 12 ঘণ্টা দিন ও 12 ঘণ্টা রাত হয়। তাই নিরক্ষরেখাকে বিষুবরেখা বলে।

Q6. নিরক্ষরেখার উপর ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা কত

Ans – নিরক্ষরেখার উপর ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা 16-18 কিমি।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।