লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

লালসালু উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু | লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

লালসালু হচ্ছে লাল রঙের কাপড়। এমনিতে লাল কাপড়ের তেমন কোনো মহিমা নেই। তবে এটি খুব উজ্জ্বল রং হওয়ায় একে বিশেষ উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো যায়। বাংলাদেশের একশ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী যুগ-যুগ ধরে লাল রং টিকে সফলভাবে কাজে লাগিয়ে আসছে। কবরের উপর লাল কাপড় বিছিয়ে দিলে কবরের গুরুত্ব অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায়। তখন তা আর সাধারণ কবরে সীমাবদ্ধ থাকে না_মাজারে পরিণত হয়। কবরটি তখন মানুষের ভক্তি প্রীতির আকর্ষণ হয়ে দাড়ায়। এ ধরনের কবরে মানুষ প্রতিনিয়ত ভিড় জমায়, জেয়ারত করে, দোয়া দরুদ পড়ে এবং শিরনি দেয়। টাকা পয়সা দেয়। এভাবে মাজারটি হয়ে দাড়ায় পরলোক চর্চার কেন্দ্রবিন্দু।

এই মাজার বাংলাদেশের লোকজীবনে অসামান্য প্রভাব ফেলে। এখানেই ‌লালসালু নামকরণের তৎপর্য ইঙ্গিতময় হয়ে ওঠে। এরসাথে পীর-ফকিরদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। উপন্যাস যখন লেখা হয়- তখন চলছে দেশভাগের প্রস্তুতি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশভাগোত্তর উদ্বাস্তু সমস্যা আর সঙ্গে নতুন রাষ্ট্র গঠনের উদ্দীপনা। এমনি একটা সময়ে ঔপন্যাসিক পটভূমি থেকে শুরু করে চরিত্র নির্বাচন; সবই নিলেন গ্রামীণ জীবন থেকে।

কাহিনীর বিষয়বস্তু সমাজ-চরিত্র :

একদিকে কুসংস্কারগ্রস্ত ধর্মভীরুশোষিত গ্রামবাসী, অন্যদিকে শঠ, ধর্ম-ব্যবসায়ী ও শোষক ভূস্বামী। কিন্তু লালসালু ঘটনাবহুল উপন্যাস নয়। ঘটনার চেয়ে ঘটনা বিশ্লেষণের বিস্তারটাই চোখে পড়ে আগাগোড়া।
মূল চরিত্র মজিদ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাকে ঘিরেই উপন্যাসের কাহিনী আবর্তিত। তারপর মহব্বতনগর গ্রামের অধিবাসীদের মাজার কেন্দ্রিক ভয়-ভক্তি-শ্রদ্ধা ওআকাঙ্ক্ষাসব নিয়ন্ত্রণ করে মজিদ। তার চক্রান্তেই নিরুদ্দেশ হয় তাহের ওকাদেরের বাপ। আওয়ালপুরের পীরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার শেষে সে পীরকেও করে পরাভূত। খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ানো, যুবক আব্বাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার আয়োজনকে বিদ্রূপ করা ও তাকে অধার্মিক হিসেবে চিহ্নিত করে গ্রামছাড়া করা এসবের মধ্য দিয়েই নিজের প্রভাব ও প্রতিষ্ঠা নিরঙ্কুশ বিস্তার করে, সে দ্বিতীয় বিয়ের পিড়িতে বসে। নতুন বউয়ের নাম জমিলা। চঞ্চল, সহজ-সরল মেয়ে।

কিন্তু প্রথম থেকেই মজিদকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারে না সে। মজিদ জমিলাকে শাসন করতে চায়; কিন্তু পারে না। জমিলার থুথু নিক্ষেপের ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয় সে। জমিলাকে মাজার ঘরের অন্ধকারে খুঁটিতে বেঁধে রাখে। শুরু হয় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি, কিন্তু ‘রহীমার হৃদয় ব্যাকুল হয়। মজিদের প্রতি যে রহীমার বিশ্বাস ছিল পর্বতের মতো অটল এবং ধ্রুবতারার মতো অনড়’ সে রহীমাই করে বিদ্রোহ। বোঝা যায়, মজিদের প্রতিষ্ঠার ভিতে ফাটল ধরেছে। প্রতীকের মাধ্যমে জমিলার লাশের পা মাজারকে যে আঘাত করে তা সমাজের কপালে কলঙ্কলেপনেরই সামিল। শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলে গ্রামবাসী মজিদের কাছে প্রতিকার চায়। কিন্তু মজিদের কাছ থেকে ধমক ছাড়া তখন আসে না কিছুই ‘নাফরমানি করিও না,খোদার ওপর তোয়াক্কেল রাখো।’

এভাবেই বিপর্যস্ত পারিবারিক জীবন, বিধ্বস্ত ফসলের ক্ষেত এবং দরিদ্র গ্রামবাসীর হাহাকারের মধ্যদিয়ে লালসালু উপন্যাসের কাহিনী শেষ হয়। মজিদ কুসংস্কার, প্রতারণা এবং অন্ধবিশ্বাসের প্রতীক। প্রথাকে সে টিকিয়ে রাখতে চায়, প্রভু হতে চায়, চায় অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী হতে। প্রতারণা করে সজ্ঞানে। সে ঈশ্বর- বিশ্বাসীও। কিন্তু মাজারটিকে সেনটিকিয়ে রাখতে চায় যেকোনো মূল্যে। নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য ধর্মকে পুঁজি করে সে নামে এক ব্যবসায়। তাই সেই কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বুকে ঝোলানো তামার খিলাল দিয়ে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে সে স্পষ্ট বোঝে, দুনিয়ায় সচ্ছলভাবে দুবেলা খেয়ে বাঁচার জন্য যে খেলা খেলতে যাচ্ছে সে সাংঘাতিক।

বাংলা কথাসাহিত্যে লালসালু একটি প্রথাবিরোধী উপন্যাস। ধর্মকে যারা স্বার্থের হাতিয়ার হিসেবে বা শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, লালসালু উপন্যাসে সেই ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একটি জোরালো প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে মজিদ নামক চরিত্রের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি মানুষের যে ব্যক্তিগত লড়াই এবং তার অস্তিত্বের জন্য বা টিকে থাকার জন্য তার যে নিরন্তর সংগ্রাম; সেটিকেও সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ তার উপন্যাসে অত্যন্ত জোরালোভাবে নিয়ে এসেছেন। পীরের বাড়িতে একটা মেয়ের স্বাভাবিকভাবে পর্দানশিন থাকার কথা। যেমনটা দেখা গেছে, প্রথম বউ রহিমার ক্ষেত্রে। স্বামী মজিদের প্রতিটি কথাতার কাছে অবশ্য পালনীয়। কোথাও কোনো নড়চড় নেই। মজিদের কোনো ধূর্ততা, শঠতা, ভণ্ডামি কোনোটাই তার চোখে পড়ে না। অন্যদিকে জমিলা একেবারেই উল্টো পথে চলে।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

“আপনারা জাহেল, যে এলেম, আনকাড়াহ, মোদাচ্ছের পীরের মাজারকে আপনারা এমন করে ফেলি রাখছেন?” মজিদ এ কথাটি বলেছে কেন?

উত্তর : মহব্বতনগর গ্রাম নিজের প্রবেশটাকে নাটকীয় করে তুলতে এবং গ্রামের মানুষের কাছে নিজের প্রতিপত্তি জাহির করতে মজিদ উক্তিটি করেছে। ‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ। একদিন সে মতিগঞ্জের সড়ক দিয়ে সোজা মহব্বতনগর গ্রামে এসে প্রবেশ করে। তার প্রবেশ ছিল নাটকীয় এবং চমকপ্রদ। সে গ্রামে ঢুকে খালেক ব্যাপারী ও মাতব্বর রেহান আলীসহ গ্রামবাসীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। মজিদ বলে, তারা একজন কামেল পীরের মাজারকে অবহেলায় ফেলে রেখেছে। তখন তাদের জ্ঞান নিয়ে মজিদ প্রশ্ন তোলে এবং অধার্মিক নালায়েক জ্ঞান করে আলোচ্য উক্তিটি করে।

“তবে তার শক্তি তার চওড়া দেহ, তা বাইরের খোলসমাত্র। কথাটি বলা হয়েছে কেন?”

উত্তর: মজিদের প্রথমা স্ত্রী রহিমার বিশাল দেহ এবং প্রবল শক্তি থাকা সত্তেও মজিদের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকে, তাই তার সম্পর্কে উক্তিটি করা হয়েছে। রহিমা লম্বা চওড়া মানুষ, হাড় চওড়া মাংসল দেহ। তার শক্তিও কম নয়। বড় বড় হাঁড়ি অনায়াসে এক স্থানে তুলে নিয়ে যায়, গোয়ালের ধামড়া গাইকেও স্বচ্ছন্দে গোয়ালাঘর থেকে টেনে বের করে নিয়ে আসে। কিন্তু সেই রহিমাই মজিদের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকে সারাক্ষণ। কারণ শীর্ণদেহী মানুষটির পেছনে আছে মাছের পিঠের মতো মাজারটির বৃহৎ ছায়া, যা তাকে শক্তিশালী করেছে বহুগুণে। রহিমা মনে করে মজিদ খোদার মানুষ। তাই তার বিশাল দেহ ও দৈহিক বক্ষ খোলসমাত্র। এ শক্তির কোন বহি:প্রকাশ করার সাহস তার নেই।

লালসালু উপন্যাসের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

“খেলোয়াড় চলে গেছে,খেলবে কার সাথে”- উক্তিটি করা হয়েছে কেন?

উত্তর : তাহেরের বাবা নিরুদ্দেশ হবার পর তাহেরের মা ঝগড়া না করতে পেরে বিষাদগ্রস্তভাবে শুয়ে থাকত সারাক্ষণ, তখন তার সম্পর্কে উক্তিটি করা হয়েছে। তাহেরের বাবা এবং তাহেরের মা সারাদিন ঝগড়া লেগে থাকত। প্রায়ই তাহেরের বাবা তাকে মারত। তাহেরের মাও সারাক্ষণ তাহেরের বুড়ো বাবার মৃত্যু কামনা করত। কিন্তু তাদের ঝড়গার মাঝেও ছিল প্রগাঢ় ভালোবাসা। তাইতো যখন তাহেরের বাবা নিরুদ্দেশ হয় তখন তার মন বিষাদের ছায়ায় ঢেকে থাকে। যে মানুষটি তার চক্ষুশূল ছিল আজ তার অনুপস্থিতি যেন ভারাক্রান্ত করে রাখে মনকে। তাইতো ঔপন্যাসিক এই উক্তিটি করেছেন।

“গৃহস্থদের গোলায় গোলায় যখন ধান ভরে ওঠে তখন দেশময় আবার পীরদের সফর শুরু হয়।”- কথাটি বুঝিয়ে দাও।

উত্তর : সম্পদের আকর্ষণে সুযোগসন্ধানী ধর্মব্যবসায়ীদের তৎপরতা বাড়ে এটি বোঝাতে উক্তিটি করা হয়েছে। গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনযাত্রা অতি সহজসরল। তারা ধর্মভীরু এবং পুরোহিতদের প্রতি অন্ধভক্ত। ধর্ম তাদের কাছে খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। এই স্পর্শকাতরতাকে কিছু কপট ধূর্ত ব্যক্তি নিজের মূলধন করে তোলে। এরা সুযোগসন্ধানী। তাই যখন কৃষকের গোলায় ধান ওঠে, কৃষক সচ্ছলতার মুখ দেখে তখন এদের আগমন ঘটে। গ্রামে গ্রামে এরা নিজেদের আস্তানা গাড়ে। ফলে মানুষের দুনিয়া আখেরাতের ফসল পূর্ণ করার পাশাপাশি পীর সাহেবের আখের গোছানো হয়ে যায়।

লালসালু উপন্যাসের প্রশ্ন ও উত্তর

“জাদরেল পীররা যখন আশপাশে এসে আস্তানা গাড়েন, তখন মজিদ শঙ্কিত হয়ে ওঠে।”- কেন?

উত্তর : নিজের কপটতা, ভণ্ডামি, অজ্ঞতা ধরা পড়ার ভয়ে মজিদ সবসময় শঙ্কিত থাকে। মাজারের ছায়ায় মজিদ নিজের মায়াজাল বিস্তৃত করেছে। মহব্বতনগরে প্রতিষ্ঠিত করেছে নিজের এক অদৃশ্য রাজত্ব। গ্রামের মাতব্বর খালেক ব্যাপারীও তার একান্ত অনুগত একজন ব্যক্তি। কিন্তু এই সবকিছুর আড়ালেও তার মন তার কপটতা, ভণ্ডামি, শঠতা, অজ্ঞতা ধরা পড়ার ভয়ে শঙ্কিত থাকে। তাই যখন জাদরেল পীরের আগমন ঘটে তখন মজিদের মন অজ্ঞতা ধরা পড়ার আশঙ্কাতে কেঁপে উঠে। জাদরেল পীরদেহ জ্ঞান ও প্রতিপত্তি বেশি থাকে। তাদের প্রভাবে মানুষের চোখ খুলে গেলে মজিদের মিথ্যার ভীত তছনছ হয়ে যেতে পারে। এজন্য জাদরেল পীররা যখন আশেপাশে এসে আস্তানা গাড়ে তখন মজিদে শঙ্কিত হয়ে ওঠে।

“সে বলে পীর সাহেব সূর্যকে ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে।”- উক্তিটির মাধ্যমে কী প্রকাশ পেয়েছে?

উত্তর : আলোচ্য উক্তিটির মাধ্যমে সুযোগসন্ধানী ধর্মব্যবসায়ীদের চরম ভণ্ডামি, শঠতা প্রকাশ পেয়েছে। গ্রামবাংলার মানুষ সহজসরল জীবনযাপন করে থাকে। তাদের এই সরলতার সুযোগ নেয় ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ীরা। উপন্যাসে লক্ষ করা যায় আউয়ালপুর গ্রামে একজন পীর সাহেবের আগমন ঘটে, যে দাবি করে সে সূর্যকে আটকে রাখার ক্ষমতা রাখে। সে তার কথার ছলে মানুষকে প্রতারিত করে। আলোচ্য উক্তিটির মাধ্যমে এর প্রমাণ লাভ করা যায় এবং এসব অসাধু, সুযোগসন্ধানী ধর্ম ব্যবসায়ীদের চরম ভণ্ডামি ফুটে ওঠে। আবহমানকালধরে ধর্মব্যবসায়ীরা মানুষের মনে অজ্ঞতা ও কুসংস্কার লালন করিয়ে ভয় ঢুকিয়ে দেয়। ভয় থেকে আসে আলোকিত ক্ষমতার দৌরাত্ম্য। আর এগুলোই ধর্মব্যবসায়ীর মূল হাতিয়ার। এগুলোর মাধ্যমে তারা ইহকাল ও পরকালের কাহিনী বানায় এবং নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে।

লালসালু উপন্যাসের ছোট প্রশ্ন ও উত্তর

“একজনের আছে মাজার, আরেকজনের জমিজোতের প্রতিপত্তি।”- উক্তিটি বুঝিয়ে দাও।

উত্তর : ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ী এবং শোষক শ্রেণির ভূমিদস্যুদের যোগসূত্রের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে উক্তিটির মাধ্যমে। যুগ যুগ ধরে সমাজের সাধারণ মানুষ প্রতারিত এবং শোষিত হয়ে আসছে। এখানে দেখা যায় মহব্বতনগর গ্রামে দুইজন ব্যক্তি তাদের অদৃশ্য রাজত্ব বিস্তৃত করেছে। একজনের শক্তির উৎস মাজার, আরেকজনের শক্তির উৎস জমিজমা প্রতিপত্তি। উৎস ভিন্ন হলেও দ্ইুজনই মানুষকে প্রতারিত এবং শোষণ করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এই দৃশ্যটি মর্মান্তিকভাবে ফুটে উঠেছে উপন্যাসের প্রেক্ষাপটে। সামন্তপ্রভুর সাথে পুরোহিতের অন্তরঙ্গতার দৌরাত্মে নিস্পেষিত হয় সমাজ, যা আলোচ্য উক্তির মাধ্যমে আমাদের সামনে মূর্ত হয়েছে।

“তাগো কথা হুনলে পুরুষ মানুষ আর পুরুষ থাকে না, মেয়ে মানুষেরাও অধম হয়।”- খালেক ব্যাপারী মজিদকে কথাটি বলেছিল কেন?

উত্তর : নারী জাতিকে হেয় প্রতিপন্ন করে মজিদ আপন স্বার্থসিদ্ধির পায়তারা করেছে, যেখানে নিজের অন্ত:সারশূন্যতা ঢাকতে খালেক ব্যাপারী এমন উক্তি করেছে। ‘লালসালু’ উপন্যাসে সমাজের নানারকম কুসংস্কার এবং অসাধু ধর্মব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম প্রকাশ পেয়েছে। খালেক ব্যাপারী স্ত্রীর কথায় সন্তান লাভের আশায় ধলা মিয়াকে আউয়ালপুরের পীর সাহেবের কাছে পাঠায়। কিন্তু যখন মজিদ ঘটনাটি জানতে পারে, তখন খালেক ব্যাপারী তার নিজের অন্ত:সারশূন্যতাকে ঢাকতে কথাটি বলেছিলেন। এখানে তিনি স্ত্রীকে জ্ঞানশূন্য এবং মূর্খ প্রতিপন্ন করে নিজের অজ্ঞতাকে ঢাকতে চেয়েছেন। নারী জাতির প্রতি মজিদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মৌন সমর্থক খালেক ব্যাপারী। ব্যাপারীর এ উক্তির মাধ্যমে পুরোহিত ও সামন্তপ্রভুর অভিন্ন স্বার্থ প্রকাশিত হয়েছে।

“মেয়েলোকের মনের মস্করা সহ্য করবে অতটা দুর্বল নয় সমাজ।”- কথাটি বুঝিয়ে বলো।

উত্তর : অসার সামাজিক মূল্যবোধ এবং নারীর প্রতি বক্রদৃষ্টির চরম রূপ ফুটে উঠেছে উক্তিটির মাধ্যমে। ‘লালসালু’ উপন্যাসে পুরুষশাসিত সমাজে নারীর উপর পীড়নের এক নির্মম চিত্র ফুটে উঠেছে। সন্তান নারীসত্তাকে পূর্ণতা দেয়। শুধু এই ছোটো চাওয়াটি আমেনার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। মজিদ তার কূটকৌশলের মাধ্যমে খালেক ব্যাপারীকে বাধ্য করে আমেনাকে তালাক দিতে। মাত্র তের বছর বয়সে সে সংসারে তার আগমন মজিদের রোষানলে পড়ে সে সংসার তাকে ত্যাগ করতে হয়। এভাবেই নারীরা যুগে যুগে পীড়িত হচ্ছে। সমাজ যেন নারীর প্রতি ক্রুর, অসহিষ্ণু। সব অসঙ্গতি সে মেনে নেয় কিন্তু নারীকে দিতে হয় চরম মূল্য। কেউ রাগে ক্ষোভে কিংবা ভুল করে একবার আত্মহত্যার কথা বললে, সে যদি পরে পিছিয়ে আসে সমাজ তাকে পেছাতে দেয় না। বরং আত্মহত্যা করার সব আয়োজন করে দেয়, কারণ সে নারী।

“এই নিঃসঙ্গতা কালের মতো আদি অন্তহীন, যার কাছে মানুষের জীবনের সুখ দুঃখ অর্থহীন অপালাপ মাত্র।” উক্তিটির মাধ্যমে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর : মহাকালের শাশ্বত গতিধারায় চিরন্তন সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে। ‘লালসালু’ উপন্যাসে মানুষের জীবনের কঠিন সত্যগুলো উদ্ভাসিত হয়েছে। সুখ-দু:খ, হাসি-কান্না মানুষের জীবনেরই অংশবিশেষ, মানুষের জীবনে সুখ যেমন আসে দুঃখও আসে। একটি আরেকটির অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু সুখ মানুষের প্রত্যাশিত এবং দুঃখ চরম অপ্রত্যাশিত। এই দুঃখ দূর করতে মানুষ অলৌকিক শক্তির শরণাপন্ন হয়। মানুষ মাজারে, কবরে নানা রকম আকুতি জানায়। কিন্তু নির্লিপ্ততা যার একমাত্র পুঁজি তার কাছে মানুষের জীবনের সুখ দু:খ উপস্থাপন করা লক্ষ্য ছাড়া জীবনের মতোই অর্থহীন।

“লালসালু আবৃত মাজারের আশেপাশে যারা আসে তারাও কোনদিন হাসে না। অনেক সময় কান্নার রোল ওঠে।”- কথাটি বুঝিয়ে বলো।

উত্তর: মাজারে দুঃখী মানুষেরা আসে, তাদের দুঃখ দূরের আর্জি নিয়ে। হাসি নয় কান্নাই হয় যাদের আর্জি প্রকাশের উপায়। ‘লালসালু’ উপন্যাসে সালু আবৃত মাজারটিকে কেন্দ্র করে উপন্যাসের আবর্তন। মাজারটি প্রতীকীরূপে উপন্যাসে ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রামের মানুষেরা তাদের দু:খ দূর করার আশায় মাজারে নানারকম আর্জি নিয়ে আসত। অন্যদিকে মজিদ মানুষের মনে মাজার নিয়ে ভয় এবং রহস্যের বেড়াজাল সৃষ্টি করে রেখেছিল। দুঃখ এবং ভয় বিষয়গুলোর সাথে হাসি নয় কান্না জড়িত। তাই মাজারের আশপাশে যারা আসে তাদের মুখে হাসি নয়, কান্নার রোল ওঠে।

“নেশার লোভ কাকে সে ঘরে আনল”- মজিদের এমন উপলদ্ধি হয় কেন?

উত্তর : প্রথম দৃষ্টিতে জমিলাকে অত্যন্ত শান্ত এবং বাধ্যগত মনে হলেও পরে তার চঞ্চলতা, চপলতা আর বেয়ারাপনা মজিদকে ভাবিয়ে তোলে এবং তার এই উপলদ্ধি হয়। ‘লালসালু’ উপন্যাসের শেষভাবে আবির্ভাব ঘটে উপন্যাসের অতি তাৎপর্যময় চরিত্র জমিলার। জমিলার বাহ্যিক রূপ দেখে মজিদ মুগ্ধ হয়। সে ভাবে, অতি শান্ত এই মেয়েটি তার সংসারকে আলোময় করবে কিন্তু হায় জমিলার চঞ্চলতা, বেয়ারাপনা তাকে ভাবিয়ে তোলে। যেই জমিলার তার সংসারকে আলোময় করার কথা সে বিষাদময় করে তোলে তার জীবনকে। তখন তার এই উপলদ্ধি হয়।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা pdf

বাংলা রেফারেন্স (উচ্চমাধমিক) ক্লাস

বাংলা রেফারেন্স (উচ্চমাধমিক) ক্লাস

লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

“খেলোয়াড় চলে গেছে,খেলবে কার সাথে”- উক্তিটি করা হয়েছে কেন?
উত্তর : তাহেরের বাবা নিরুদ্দেশ হবার পর তাহেরের মা ঝগড়া না করতে পেরে বিষাদগ্রস্তভাবে শুয়ে থাকত সারাক্ষণ, তখন তার সম্পর্কে উক্তিটি করা হয়েছে। তাহেরের বাবা এবং তাহেরের মা সারাদিন ঝগড়া লেগে থাকত। প্রায়ই তাহেরের বাবা তাকে মারত। তাহেরের মাও সারাক্ষণ তাহেরের বুড়ো বাবার মৃত্যু কামনা করত। কিন্তু তাদের ঝড়গার মাঝেও ছিল প্রগাঢ় ভালোবাসা। তাইতো যখন তাহেরের বাবা নিরুদ্দেশ হয় তখন তার মন বিষাদের ছায়ায় ঢেকে থাকে। যে মানুষটি তার চক্ষুশূল ছিল আজ তার অনুপস্থিতি যেন ভারাক্রান্ত করে রাখে মনকে। তাইতো ঔপন্যাসিক এই উক্তিটি করেছেন।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।