ভাত গল্পের প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

WBBSE Class 12 Bangla | Bhat Golpo | Question Answer

সূচিপত্র

ভাত গল্পের সারাংশ, ভাত গল্পের বিষয় সংক্ষেপ, ভাত গল্পের সারসংক্ষেপ, ভাত গল্পের বিষয়বস্তু

উত্তর: মহাশ্বেতা দেবীর ভাত গল্প আমরা সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের চাষী উৎসব নাইয়া এর জীবনযাত্রা সম্পর্কে পরিচয় পাই। স্বাভাবিকভাবে জীবন পাত করা উৎসব নাইয়ার পরিবারে এক ঝড়ের রাতে বিশাল পরিবর্তন ঘটে।

স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে হারিয়ে উৎসব নাইয়া পাগলের মত হয়ে শহরের এক বড় বাড়িতে কাজের সন্ধান পায়। কিন্তু সেই দুর্বিষহ রাতের পর থেকে সে অভুক্ত তার পেটে একটিও ভাতের দানা পড়ে নি। অথচ অন্যদিকে সেই বড় বাড়িতে বিভিন্ন রকমের চাল ও ভাতের আনাগোনা। 

গল্পটির মূল প্রেক্ষাপট বা বিষয় হল এটি, একদিকে খেতে না পাওয়া মানুষের আত্ম যন্ত্রণা অন্যদিকে তার বিপরীতে গড়ে ওঠা এক কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের মানসিকতা। উৎসব নাইয়া সামান্য এক মুঠো ভাতের জন্য আজ পরের বাড়িতে কাজ করতেও দ্বিধা বোধ করেনি কিন্তু সেখানে ভাতের অনেক ব্যবস্থা থাকলেও তা রীতি ও নিয়ম এর কাছে অচ্ছুত তে পরিণত হয়েছে।

অনেকদিন না খেতে পাওয়া উচ্ছব নাইয়া শেষে সহ্য করতে না পেরে বড় বাড়ির ফেলে দেওয়া ভাতের ডেকচি চুরি করতে বাধ্য হয়েছে। আর অনেকদিন পর তার পেটে ভাতের দানা পড়াতে সে সেই ব্যক্তির উপর ঘুমিয়ে পড়েছে, অন্যদিকে পুলিশ তাকে চোর মনে করে গল্পের শেষে জেলে নিয়ে গেছে।

ভাত গল্পের উৎস, ভাত গল্পের ভূমিকা

উত্তর: ভাত গল্পটি মহাশ্বেতা দেবীর “শ্রেষ্ঠ গল্প সংকলন” থেকে নেওয়া হয়েছে, 1982 সালে “ম্যানিফেস্টো” পত্রিকায় প্রথম এই গল্পটি প্রকাশিত হয়েছিল।

তারপর দে’জ পাবলিশিং থেকে মহাশ্বেতা দেবীর ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’ প্রকাশিত হলে সেখানে এই গল্পটি সংকলিত হয় এবং আলোচ্য পাঠ্যাংশটি ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’ থেকেই সংকলিত হয়েছে।

ভাত গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো

উত্তর: ভূমিকা: ‘ভাত’ গল্পটির নামকরণে বিষয়বস্তুগত ভিত্তি যেমন কার্যকরী, সেরকমই বিষয়কে ছাপিয়ে ব্যঞ্জনাকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে দেখা যায়।

প্রেক্ষাপট : মূলত দুটি প্রেক্ষাপটের ব্যবহার এই কাহিনিতে আছে। একটি প্রান্তিক বাদা অঞ্চল, অন্যটি শহরের বড়ড়া বাড়ি। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র উচ্ছব নাইয়া এই দুটি প্রেক্ষাপটের যােগসূত্র। কিন্তু এই কাহিনির প্রকৃত প্রেক্ষাপটে আছে অন্নবিলাস আর অন্নহীনতার চিরন্তন দ্বন্দ্ব ও বৈষম্য।

উচ্ছবের গ্রাম : উচ্ছবের বাস যে বাদা অঞ্চলে সেখানে শুধুই গুগলি-গৌঁড়ি- কচুশাকসুশনাে শাক জন্মায়। সেখানে অন্নের আয়ােজন হয় হিঞ্জে সেদ্ধ, গুগলি সেদ্ধ, নুন আর লংকা পােড়া দিয়ে। তা-ও এই খাওয়া নিয়মিত নয়। সতীশ মিস্ত্রির জমিতে কাজ করে উচ্ছব কয়েকমাসের অন্ন জোগার করে, কিন্তু তা বারােমাসের না। মাতলার বন্যা সুযােগ পায় অভাবী মানুষের সর্বস্ব ভাসিয়ে নিয়ে যেতে, সতীশ মিস্ত্রিরা কিন্তু অক্ষত থেকে যায়।

শহরের বড়াে বাড়ি : বাদা থেকে আনা চালের প্রাচুর্য, অন্নবিলাসিতার বিকৃত ছবি সেখানে। ব্যঞ্জন এবং চরিত্রভেদে চালের নাম পালটে যায়। এমনকি বাড়িরসর্বময়ী কত্রী বড়ােপিসিমাও লুকিয়ে চাল বিক্রি করে দেন। কিন্তু উচ্ছব ক্ষুধার্ত জেনেও তাকে তারা খেতে দেয় না, অজুহাতে বিলম্ব করে। ক্ষুধার্ত উচ্ছব ভেবে যায়—“ভাতই সব। অন্ন লক্ষ্মী..’।

কাহিনির পরিণতি : কাহিনির পরিণতিতে অন্নকাতরতাই প্রধান রূপ নেয়। ক্ষুধার্ত উচ্ছব অশৌচ বাড়ির ফেলে দেওয়া ভাত নিয়ে ছুটতে থাকে। সেই ভাতে হাত দিয়ে সে স্বর্গসুখ খুঁজে পায়। অবশেষে স্টেশনে গিয়ে পেটভরে ভাত খেয়ে সে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন পিতলের ডেকচি চুরির অপরাধে তাকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। উচ্ছবের স্বপ্ন ছিল ধান ভরতি বাদার সন্ধান করা। ইচ্ছা ছিল সন্ধান পেলে গ্রামের সবাইকে সেটির খবর জানিয়ে দেওয়া। সে সাধ তার পূর্ণ হয় না। অন্নকাতরতাই যেন স্থায়ী সুর হয়ে থাকে গল্পের। আর সে কারণেই গল্পের নামকরণ’ ভাত অত্যন্ত সার্থক।

ভাত গল্পের প্রশ্ন উত্তর MCQ, ভাত গল্পের প্রশ্ন উত্তর 2022 MCQ, ভাত গল্পের প্রশ্ন উত্তর 2023 MCQ, ভাত গল্পের MCQ, ভাত গল্পের MCQ প্রশ্ন উত্তর, ভাত গল্পের MCQ ACQ

“ দূরদর্শী লােক ছিলেন। ” – দূরদর্শী লােকটি হল –

ক) বড়াে পিসিমা

খ) বুড়ো কর্তা

গ) হরিচরণ

ঘ) মহানাম শতপথি

উত্তর: খ – বুড়ো কর্তা

“ মানুষের সঙ্গে বিয়ে দিও না। ” – বলেছিল-

ক) বড়াে পিসিমা

খ) মেজো পিসিমা

গ) ছােটো পিসিমা

ঘ) বাসিনী দাসী

উত্তর: ক – বড়াে পিসিমা

” তাঁর বাবার সেবা করেছেন। ” – কার কথা বলা হয়েছে?

ক) বড়াে বউয়ের

খ) মেজো বউয়ের

গ) বড়াে পিসিমার

ঘ) বাড়ির নার্সের

উত্তর: গ – বড়াে পিসিমার

উচ্ছবকে বড়ো বাড়িতে কে নিয়ে এসেছিল?

ক) ভজন চাকর

খ) বাসিনী

গ) তান্ত্রিক

ঘ) ছােটো বউয়ের বাবা

উত্তর: খ – বাসিনী

” ময়ুরছাড়া কার্তিক “কে?

ক) ভজন চাকর

খ) সাধন দাশ

গ) বাসিনী

ঘ) উচ্ছব নাইয়া

উত্তর: ঘ – উচ্ছব নাইয়া

“ দিতে পারবে না প্রাণে ধরে। ” – যা দিতে না – পারার কথা বলা হয়েছে –

ক) দশটা টাকা

খ) দশটা পয়সা

গ) দশটা আনা

ঘ) দশ পােয়া চাল

উত্তর: খ – দশটা পয়সা

“ কেনা চাল নয়। ” — চাল যেখান থেকে আসে-

ক) গ্রাম থেকে

খ) বাদা থেকে

গ) শহর থেকে

ঘ) আড়ত থেকে

উত্তর: খ – বাদা থেকে

বড়ো পিসির কথায় আজকাল থাকে –

ক) ভালােবাসা

খ) গােপন অভিপ্রায়

গ) ইঙ্গিত

ঘ) ঠেস

উত্তর: ঘ – ঠেস

“ বড়াে পিসিমা কি অন্য বাড়ির লােক নাকি? ” জিজ্ঞাসাটি হল-

ক) বড়াে বউয়ের

খ) বাড়ির শাশুড়ির

গ) মেজো বউয়ের

ঘ) ছােটো বউয়ের

উত্তর: ক – বড়াে বউয়ের

বুড়াে কর্তার জন্যে বাড়িতে আয়োজিত হচ্ছে-

ক) ভোজ

খ) হােম – যজ্ঞি

গ) নামকীর্তন

ঘ) পূজা – অর্চনা

উত্তর: খ – হােম – যজ্ঞি

“ বুঝি ঘুচে যায়। ” – কী ঘুচে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে?

ক) বড়াে বউয়ের মাছ খাওয়া

খ) শাশুড়ির মাছ খাওয়া

গ) ছেলের মাছ খাওয়া

ঘ) উচ্ছব নাইয়ার ভাত খাওয়া।

উত্তর: খ – শাশুড়ির মাছ খাওয়া

“ বেঁধে – বেড়ে শাশুড়িকে খাওয়ানোে তার কাজ।” – কার কাজের কথা বলা হয়েছে –

ক) ছােটো বউ – এর

খ) সেজো বউ – এর

গ) মেজো বউ – এর

ঘ) ছোটো ব‌উ -এর

উত্তর: গ – মেজো বউ – এর

“চা খেয়ে যাবে।’- কে চা খাবে?

ক) বড়াে বউ

খ) মেজো বউ

গ) নার্স

ঘ) ছোটো ব‌উয়ের বাবা

উত্তর: গ – নার্স

বিলেতে থাকে –

ক) বড়াে ছেলে

খ) মেজো ছেলে

গ) সেজো ছেলে

ঘ) ছােটো ছেলে

উত্তর: গ – সেজো ছেলে

“এগারােটার আগে ঘুম থেকে ওঠে না।” যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে –

ক) বাড়ির নাতি – নাতনিদের

খ) বাড়ির কর্তা ও তার স্ত্রীর

গ) বাড়ির ছেলেদের

ঘ) বাড়ির বউদের সম্পর্কে

উত্তর: গ – বাড়ির ছেলেদের

“এ বাড়ির ছেলেদের চাকরি করা হয়ে ওঠেনি , ” কারণ –

ক) তারা ঘরজামাই থাকে

খ) তারা এগারােটার আগে ঘুম থেকে ওঠে না

গ) তারা অসুস্থ।

ঘ) তারা বাড়ির কাজে ব্যস্ত

উত্তর: খ – তারা এগারােটার আগে ঘুম থেকে ওঠে না

‘ ভাত ’ গল্পের বুড়াে কর্তার কতগুলি দেবত্রবাড়ির উল্লেখ করা হয়েছে?

ক) পনেরােটি

খ) সতেরােটি

গ) আঠারােটি

ঘ) বত্রিশটি

উত্তর: গ – আঠারােটি

শ্বশুরের ঘরে বসে বড়াে বউ যা ভাবতে চেষ্টা করে –

ক) কর্তার অবর্তমানে সে কী করবে

খ) কর্তার মৃত্যুর পর বাড়ির কী অবস্থা হবে

গ) কর্তার মৃত্যুর পর পিসিমা সব আত্মসাৎ করবে

ঘ) সংসারটি বড়াে নড়বড়ে হয়ে যাবে

উত্তর: ক – কর্তার অবর্তমানে সে কী করবে

লােকটা সম্পর্কে বামুন ঠাকুর কী বলল?

(ক) ভাত খাবে কাজ করবে।

(খ) দিনমজুরি হিসেবে কাজ করবে।

(গ) মাসকাবারি মজুরির ভিত্তিতে কাজ করবে।

(ঘ) সময়-অবসরে এসে কাজ করবে।

উত্তর: ক – ভাত খাবে কাজ করবে।

শ্বশুরমশায়কে বড়াে বউ মনে করে –

ক) সংকীর্ণমনা

খ) মহাকৃপণ

গ) অর্থলােপ

ঘ) ঠাকুরদেবতা

উত্তর: ঘ – ঠাকুরদেবতা

বড় বউ বুড়াে কর্তার জন্য কীসের শরবত আনে?

ক) ইসবগুলের

খ) নুন – চিনির

গ) ঠান্ডা ঘােলের

ঘ) মুসাম্বি লেবুর

উত্তর: ক – ইসবগুলের

‘ভােরের টেনে চেইপে ’ উচ্ছব যাবে –

ক) কলকাতায়

খ) কাকদ্বীপ

গ) নামখানায়

ঘ) ক্যানিংয়ে

উত্তর: ঘ – ক্যানিংয়ে

ভাত গল্পের ছোট প্রশ্ন উত্তর, ভাত গল্পের প্রশ্ন উত্তর SAQ, ভাত গল্পের SAQ প্রশ্ন উত্তর, ভাত গল্পের শর্ট কোশ্চেন, ভাত গল্পের ছোট প্রশ্ন, ভাত গল্পের SAQ

“ লােকটার চাহনি বড়াে বাড়ির বড়াে বউয়ের প্রথম থেকেই ভালাে লাগেনি । ” –কার চাহনির কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ আলােচ্য অংশে মহাশ্বেতা দেবীর ‘ ভাত ’ ছােটোগল্পের প্রধান চরিত্র উৎসব নাইয়া ওরফে উচ্ছবের চাহনির কথা বলা হয়েছে ।

বড়ােবউয়ের উচ্ছবকে ভালাে লাগেনি কেন ?

উত্তরঃ উচ্ছবের বন্য চেহারা , উগ্র চাহনি এবং তার খাটো করে পরা নােংরা লুঙ্গি দেখে বড়বউয়ের উচ্ছবকে ভালাে লাগেনি ।

বামুন ঠাকুর বড়ােবউকে কী বলেছিল ?

উত্তরঃ বামুন ঠাকুর বড়ােবউকে বলেছিল যে , উচ্ছব ভাত খাওয়ার বিনিময়ে বড়াে বাড়িতে কাজ করবে ।

বড়ােপিসিমা বড়াে বাড়ির কে ছিলেন ?

উত্তরঃ বড়ােপিসিমা ছিলেন বাড়ির বুড়ােকর্তার অবিবাহিত বৃদ্ধা বােন এবং বড়ােবউমাসহ বাড়ির অন্য বউমাদের পিসিশাশুড়ি ।

বুড়াের্তা সংসার নিয়ে নাটাঝামটা হচ্ছিলেন কখন ?

উত্তরঃ অল্পবয়সে স্ত্রী মারা যাওয়ায় বুড়ােকর্তা সংসার নিয়ে ‘ নাটা – ঝামটা ’ হচ্ছিলেন ।

বড়ােপিসিমা সংসারের কোন্ কোন্ দায়িত্ব সামলাতেন ?

উত্তরঃ বড়ােপিসিমা বাড়ির রান্নাঘর , ভাড়াটে বাড়িতে মিস্তিরি লাগানাে , দাদা অর্থাৎ বুড়ােকর্তার সেবা করা — এসব দায়িত্ব সামলাতেন ।

“সে জন্যেই হােম – যক্তি হচ্ছে । ” — হােম – যজ্ঞির কারণ কী ?

উত্তরঃ বড় বাড়ির বুড়ােকর্তা লিভার ক্যানসারে মৃত্যু আসন্ন , তাই তাকে বাঁচাতেই হােম- যজ্ঞ হচ্ছিল ।

বুড়োেকর্তার কী রােগ হয়েছিল ?

উত্তরঃ বুড়ােকর্তার লিভার ক্যানসার অর্থাৎ যকৃতে কর্কট রােগ হয়েছিল ।

মেজোবউ শাশুড়ির জন্য কী কী মাছ রান্না করছিল ?

উত্তরঃ মেজোবউ শাশুড়ির জন্য ইলিশ , পাকাপােনা , চিতল , ট্যাংরা এবং বড়াে ভেটকি মাছ রান্না করছিল ।

বড়ােবউ শ্বশুরের ঘরে কিছুক্ষণের জন্য ঢুকেছিল কেন ?

উত্তরঃ শ্বশুরের দেখভালে নিযুক্ত নার্স চা খেতে বাইরে গেলে শ্বশুরকে দেখাশােনার জন্য বড়ােবউ তার ঘরে ঢুকেছিল ।

“সেই জন্যেই তাদের চাকরি করা হয়ে ওঠেনি । ” — কী জন্য কাদের চাকরি করা হয়ে ওঠেনি ?

উত্তরঃ বড়াে বাড়ির বড়ড়া , মেজো ও ছােটো ছেলে সকাল এগারােটার আগে ঘুম থেকে ওঠে না বলেই তাদের চাকরি করা হয়ে ওঠেনি ।

বড়াে বাড়ির ছেলেদের চাকরি করার দরকার ছিল না কেন ?

উত্তরঃ আঠারােটি দেবত্র বাড়ি এবং বাদা অঞ্চলের প্রচুর উর্বর জমির মালিক হওয়ার জন্য বড়াে বাড়ির ছেলেদের চাকরি করার প্রয়ােজন ছিল না ।

বড়ােবউ শ্বশুরের জন্য কী কী করত ?

উত্তরঃ ঘরে পাতা দই ও ইসবগুল দিয়ে শরবত বানিয়ে দেওয়া , শ্বশুরের জন্য রুটি বা লুচি তৈরি করা , তার বিছানা পাতা এবং তার পা টেপার কাজ করত বড়ােবউ ।

বড়াে বাড়িতে তান্ত্রিক কে এনেছিলেন ?

উত্তরঃ বড়াে বাড়িতে ছােটো বউয়ের বাবা তান্ত্রিক ডেকে এনেছিলেন ।

যজ্ঞিহােমের জন্য কত পরিমাণ করে কাঠ লেগেছিল ? অথবা , যজ্ঞের জন্য কী কী কাঠ আনা হয় ?

উত্তরঃ যজ্ঞের জন্য বেল , ক্যাওড়া , তেঁতুল , বট , অশ্বথ প্রভৃতি গাছের আধ মন করে কাঠে লেগেছিল ।

ভজন চাকর কী করছিল ?

উত্তরঃ বড়াে বাড়ির ভজন চাকর যজ্ঞের জন্য কালাে বিড়ালের নােম সংগ্রহ করতে গিয়েছিল ।

তান্ত্রিক শ্মশান থেকে কী আনার ফরমাশ করেন ?

উত্তরঃ তান্ত্রিক শ্মশান থেকে বালি আনার ফরমাশ করেন ।

“দেখাে না একতলায় গিয়ে । ” — একতলায় গেলে কী দেখা যায় ?

উত্তরঃ বড়াে বাড়ির একতলায় গেলে দেখা যায় গােলায় গােলায় , স্তরে স্তরে বহু রকম চাল সাজানাে রয়েছে ।

“মেজ বউ উনােন পাড়ে বসেছে । ” — কী করতে মেজোবউ উনুন পাড়ে বসেছিল ?

উত্তরঃ শাশুড়ির বিধবা হওয়ার আশঙ্কায় তার জন্য নানারকম মাছ রান্না করার উদ্দেশ্যে মেজোবউ উনুনপাড়ে বসেছিল ।

“তার আসার কথা ওঠে না । ” — কার , কেন আসার কথা ওঠে না ?

উত্তরঃ বৃদ্ধ বুড়োেকর্তার চরম অসুস্থতার জন্য তার সেজো ছেলের বাড়িতে আসার কথা ওঠে না , কারণ সে বিলেতে থাকে ।

“বােঝা গেল যখন , তখন আর কিছুকরবার নেই । ” — কী বােঝা গেল এবং কী করার কিছু ছিল না ?

উত্তরঃ বড়াে বাড়ির কর্তামশায়ের লিভার ক্যানসার হওয়ার কথা বােঝা গিয়েছিল এবং দেরিতে ধরা পড়ার জন্য ডাক্তারদের কিছু করার ছিল না ।

“তখনও চাঁদ সূর্য উঠবে কি না । ” — উক্তিটিতে কোন্ সময়ের কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ বড়ােবউমার কাছে তার শ্বশুর ঠাকুর – দেবতার মতাে ছিল , তাই বড়ােবউমা তার শ্বশুরের মৃত্যুর পর চাঁদ – সূর্য উঠবে কি না এ কথা ভেবেছিল ।

“ডাক্তাররা বলে দিয়েছে বলেই তাে। ” — ডাক্তাররা কী বলে দিয়েছে ?

উত্তরঃ ক্যানসারে আক্রান্ত বড়াে বাড়ির বৃদ্ধ গৃহকর্তার শেষ সময় উপস্থিত হয়েছে — এ কথাই ডাক্তাররা বলে দিয়েছিল ।

বড়ােপিসিমা সংসারের কোন্ কোন্ দায়িত্ব সামলাতেন?

উত্তরঃ বড়ােপিসিমা বাড়ির রান্নাঘর, ভাড়াটে বাড়িতে মিস্তিরি লাগানাে, অর্থাৎ বুড়ােকর্তার সেবা করা—এসব দায়িত্ব সামলাতেন।

ভাত গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর, ভাত গল্পের বড় প্রশ্ন ও উত্তর, ভাত গল্পের বড় প্রশ্ন ও উত্তর 2022, ভাত গল্পের বড় প্রশ্ন ও উত্তর 2023, ভাত গল্পের বড় প্রশ্ন কি কি Class 12 উত্তর সহ, ভাত গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর 2022

মহাশ্বেতা দেবীর ‘ ভাত ’ ছোটোগল্প হিসেবে কতখানি সার্থক আলোচনা করো ।

উত্তরঃ একটি গল্প তার কিছু আস্তর বৈশিষ্ট্যের নিরিখেই ছোটোগল্পের রূপ পায় । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছন্দবদ্ধ পঙ্ক্তিতে ছোটোগল্পের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তাতে তার আঙ্গিক ও চরিত্রবৈশিষ্ট্য আরও স্পষ্ট ছোটোগল্পের আঙ্গিক হয়ে ওঠে । রবীন্দ্রনাথের ভাষায় , সবরকম বাহুলা ও অতিকথন বর্জন করে অনাবশ্যক চরিত্র ও ঘটনার ভিড় পরিহার করে লেখক যখন তাঁর সৃষ্টিকর্মকে একটি সুক্ষ্ম ব্যঞ্জনায় উন্নীত করেন , তখনই সৃষ্টি হয় সার্থক ছোটোগল্প । অল্পকথায় কোনো অবস্থার চরম পরিণতিতে পৌঁছোনোই ছোটোগল্পের উদ্দেশ্য ।

মহাশ্বেতা দেবীর ‘ ভাত ‘ গল্পের প্রধান চরিত্র হতদরিদ্র ভূমিহীন চাষি উচ্ছব , এক ঝড়বৃষ্টির রাতে মাতলার দুরস্ত স্রোতে ঘর – সংসার সর্বস্ব হারিয়ে সম্পূর্ণ একলা হয়ে পড়ে । ছোটোগল্পের নিরিখে দিনকয়েক পাগলের মতো ছেলে – মেয়ে – বউকে ‘ ভাত ‘ খুঁজতে গিয়ে তার কপালে সরকারি খিচুড়িটুকুও জোটে না । খিদের জ্বালায় অস্থির উচ্ছব ভাতের আশায় শহরে পাড়ি দেয় । কলকাতায় গ্রাম সম্পর্কিত বোন বাসিনীর মনিব বাড়িতে উচ্ছবের কাজ জোটে । বাড়ির বুড়ো কর্তা মরণাপন্ন । ডাক্তাররা জবাব দেওয়ায় , তান্ত্রিকের নির্দেশে সেখানে হোমযজ্ঞের প্রয়োজনে সে কাঠ কাটে ।

বহু অনুরোধ – মিনতি সত্ত্বেও উচ্ছবের সারাদিন ভাতটুকুও জোটে না । অভুক্ত – পরিশ্রান্ত উচ্ছব সন্ধেবেলায় ঘুম থেকে উঠে সে টের পায় বুড়ো কর্তা মারা গেছে । উচ্ছব দেখে বাসিনী অশৌচ বাড়ির রাঁধা ভাত ফেলে দিতে যায় । বাসিনীর হাত থেকে ভাতের ডেকচি নিয়ে মরিয়া উচ্ছব স্টেশনে চলে যায় । পেট ভরে সেই ভাত খেয়ে সে স্টেশনেই ঘুমিয়ে পড়ে । পরদিন সকালে পেতলের ডেকচি চুরির অপবাদে লোকজন তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ।

সর্বহারা উচ্ছব নাইয়ার শোক – যন্ত্রণা ও খিদের তাড়নাকে কেন্দ্র করে একমুখী গতিতে কাহিনি চরম মুহূর্তে পৌঁছোয় । বড়োলোকের ‘ আসল বাদা ’ – র খোঁজ পাওয়ার পরিবর্তে দরিদ্র উচ্ছবের হাজতবাসের মর্মান্তিক পরিণতি ‘ ভাত ‘ গল্পে এক চূড়ান্ত নাটকীয় সমাপ্তি ঘটায় । প্রান্তিক মানুষের শ্রেণি চরিত্রের প্রতিনিধি হিসেবে গল্পে উচ্ছব নাইয়ার অবস্থান , সতীশ মিস্তিরি ও বড়ো বাড়ির মানুষজনের সংকীর্ণ মনের পরিচয় গল্পে এক উল্লেখযোগ্য বৈপরীত্য সৃষ্টি করে ।

গল্পের এই নাটকীয় ব্যঞ্ছিত অভিমুখ গল্পটিকে ছোটোগল্পের শিল্পসম্মত সফল সৃষ্টি করে তুলেছে ।

” তুমি কি বুঝবে সতীশবাবু” – সতীশবাবু কি বুঝবে না ? সতীশবাবু উৎসবের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিল ?

উত্তরঃ প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী‘ র ভাত ছোটগল্পে উল্লিখিত বাক্যটিতে ভাত না খেতে পারার জ্বালা কে সতীশবাবু বুঝবে না বলে উৎসব উল্লেখ করেছেন। 

সুন্দরবনের বাদাবনে সতীশবাবু অবস্থাপন্ন চাষী কিন্তু উৎসব নাইয়া দের মত নদীর ধারে তার বাড়ি নয়। গল্পে আমরা সতীশ বাবুর দালান বাড়ির কথা জানতে পারি, যাকে উৎসব বলেছে তার পাকা বাড়ি ভেঙে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। 

দুর্বিষহ ঝড়ের রাতের পরে যখন উৎসব নাইয়া তার পরিবারকে হারিয়েছিল তখন গ্রামের এই সতীশবাবুর ঘরে রোজ রান্না হতো এমনকি একদিন উৎসব তার কাছে দুমুঠো ভাত চাইলে সে দিতে অস্বীকার পর্যন্ত করেছে। উৎসবকে সতীশবাবু শেষপর্যন্ত এ কথা জানায় যে – তাকে ভগবান মারতে বসেছে অর্থাৎ সতীশবাবু তাকে বাঁচাতে পারবে না।

স্ত্রী পুত্রদের হারিয়ে উৎসব পাগলের মত হয়ে যায়, কিন্তু অগ্রাসি সমাজ সেই অবস্থাতেও অপঘাতে মৃত্যুর দায়ে তার স্ত্রী ও পুত্রের জন্য শ্রাদ্ধশান্তি করাতে বাধ্য করেছিল। সেই সমাজের এক প্রধান উৎসবকে একমুঠো ভাত পর্যন্ত দিতে অস্বীকার করে। এই আচরণ এর পরিপ্রেক্ষিতে উৎসব সতীশবাবু কে প্রশ্নে উল্লেখিত উক্তিটি করেছিল।

উৎসবের এরকম আচরণ দেখে সতীশবাবু মন্তব্য করে যে উৎসব পাগল হয়ে গেছে তাই বউ পুত্র মারা গেলে মানুষ যেখানে পাগল হয়ে যায় সেখানে এসে সতীশ বাবুর কাছে ভাত চেয়ে মরে।

ভাত গল্পে যে ঝড় জলে রাতের কথা বলা হয়েছে তা বর্ণনা করো।

উত্তরঃ মহাশ্বেতা দেবীর ভাত গল্পে আমরা উৎসব নাইয়া নামে এক সর্বশান্ত কৃষকের কথা জানতে পারি। যে ছিল সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের একজন ভূমিহীন মজুর, তার পিতা হরিচরণ নাইয়া, এবং সে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে নিয়ে মাতলা নদীর তীরে বসবাস করত। কিন্তু হঠাৎ করে এক ঝড় জলের রাত তার এই ক্ষুদ্র জীবনকে শেষ করে দিয়েছিল।

অনেকদিন পর সে পেট ভরে দুমুঠো ভাত খেয়ে ছিল কিন্তু তার স্ত্রী দেবতার গতিক ভালো নয় তা বুঝতে পারে। হঠাৎ করেই শুরু হয় প্রবল ঝড় বৃষ্টি, উৎসবের ঘরের মাঝখানের খুঁটিটি ধনুষ্টংকারের রোগীর মতো কাঁপতে থাকে। এরকম অবস্থায় উৎসব খুঁটিকে প্রাণপণে মাটির সঙ্গে চেপে রেখেছিল। কিন্তু মুহূর্তে উৎসবের বুঝতে সমস্যা হয়নি যে বসুন্ধরা সেই খুঁটিটি আর রাখতে চাইছে না।

প্রকৃতির ভাব বেগতিক দেখে সে ঠাণ্ডায় ছেলে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁপতে থাকে। এমন সময় সে দেখতে পাই মাফলার সাদা জলের ঢেউ বাতাসের গতিতে ছুটে আসছে, মুহুর্তের মধ্যে উৎসবের জীবনের সবকিছু শেষ হয়ে যায়, শেষমেষ উৎসব গাছ আঁকড়ে ধরে নিজের জীবনটাকে বাঁচিয়ে ছিল।

এরপর উৎসব তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে পাগলের মত খুঁজতে থাকে সে এত ব্যাকুল হয়ে পড়ে যে ত্রাণের দেওয়া খিচুড়ি পর্যন্ত সে গ্রহণ করেনি। ভাত গল্পের মূল চরিত্র উৎসব নাই আর যে পরিবর্তন আমরা দেখি অর্থাৎ সাধারণ চাষী থেকে পরের বাড়ির চাকর এর কাজ করা, এ সকল কিছুর পিছনে একমাত্র কারণ তার জীবনে সেই ঝড় জলের রাত।

‘ ডাক্তাররা বলে দিয়েছে বলেই তো আজ এই যজ্ঞি হোম হচ্ছে ।— ‘ যজ্ঞি হোম ‘ হচ্ছে কেন ? ‘ যজ্ঞি হোম – এর বিবরণ দাও ।

উত্তরঃ মহাশ্বেতা দেবীর ‘ ভাত ‘ গল্পের প্রধান চরিত্র উচ্ছব । কোনো এক ঝড়জলের রাতে বউ – ছেলে – মেয়ে – সহ তার ঘর – সংসার মাতলার যজ্ঞি হোম গর্ভে ভেসে যায় । শোকে – উপবাসে অস্থির উচ্ছব খিদের জ্বালায় বাধ্য হয়ে কলকাতায় বাসিনীর মনিব বাড়িতে এসে উপস্থিত হয় । সেখানে বাড়ির কর্তা লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত । তাই তাঁর আরোগ্যের আশায় তান্ত্রিকের নির্দেশে এই ‘ যজ্ঞি হোম ’ – এর আয়োজন ।

বড়ো বাড়ির ছোটো বউয়ের বাবা এই তান্ত্রিককে ডেকে এনেছেন । তান্ত্রিকের ফরমায়েশে বেল , ক্যাওড়া , অশ্বত্থ , বট ও তেঁতুল গাছের আধ মণ করে কাঠ এসেছে । সেই সমস্ত কাঠকে এক মাপে কেটেছে উচ্ছব । চাকর ভজন যজ্ঞের যজ্ঞি হোমের বিবরণ প্রয়োজনে খুঁজে নিয়ে এসেে শ্মশানের বালি ও কালো বিড়ালের লোম । প্রথমে ঠিক হয়েছিল যজ্ঞের আগেই রান্না – খাওয়া শেষ হবে কিন্তু পরে তান্ত্রিক মত বদলে বলেন , হোম শেষ না – হলে কারও খাওয়া চলবে না ।

ফলে সমস্ত আয়োজন শেষে যজ্ঞ আরম্ভ হয় । তান্ত্রিক বাজখাই গলায় ‘ ওঁং হ্রীং ঠং ঠং ভো ভো রোগ শৃণু শৃণু ’ বলে রোগকে দাঁড় করিয়ে রোগকে কালো বিড়ালের লোম দিয়ে বাঁধা মাত্রই , নার্স এসে ছেলেদের দ্রুত ডাক্তার ডাকতে বলেন । এভাবেই হোমযজ্ঞ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুড়ো কর্তার মৃত্যু ঘটে ।

‘ এ গল্প গ্রামে সবাই শুনেছে ।’- কোন্ গল্পের কথা বলা হয়েছে ? সেই গল্পের বর্ণনা দাও ।

উত্তরঃ সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের বাসিন্দা বাসিনী কলকাতার কালীঘাট অঞ্চলে বড়ো বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে । সেই বাসিনীর মনিবের বাড়িতে যে ‘ হেলা ঢেলা ভাত ‘ অর্থাৎ ভাত খুব সহজলভ্য তা বাসিনীর গ্রামের সবাই শুনেছে ।

জলাভূমিময় বাদা অঞ্চলে মাতলার প্রবল জলোচ্ছ্বাসে গ্রামের পর গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয় । এমনিতে সেটা ছিল মড়কের বছর , অনাবৃষ্টিতে ধানে গোেছ আসার আগেই ধান গাছ থেকে গল্পের বর্ণনা সবুজ রং চলে গিয়েছিল । তার ওপর বন্যার তাণ্ডবে চালের অভাব চূড়ান্ত অবস্থা ধারণ করেছিল । সেই অনাহার , অর্ধাহারের দিনে গ্রামের মানুষের মুখে বাসিনীর মনিবের বাড়ির অঢেল চালের বিষয় আলোচিত হতে লাগল । বড়ো বাড়িতে ঠাকুরদালান আছে , মন্দিরের মাথায় পিতলের ত্রিশূল আছে — এসব উচ্ছব নাইয়া এর আগেরবার বাড়ির বাইরে থেকে দেখে এসেছিল ।

উচ্ছবের গ্রামের অবস্থাপন্ন ব্যক্তি সতীশ মিস্তিরি জমিতে তিনরকম ধানের চাষ হয় — হরকুল , পাটনাই , মোটা ধান । আর বড়ো বাড়িতে পাঁচ ভাগে ভাত হয় । বিস্মিত উচ্ছব প্রশ্ন করে বাসিনী , এত নানানিধি চাল ? ’ বাসিনী উত্তর দেয় — ‘ বাদায় এদের এত জমি । চাল এনে পাহাড় করেছে । ‘ উচ্চবদের গ্রামে পেটভরে ভাত খাওয়াটাই সৌভাগ্যের বিষয় ।

হিতে সেদ্ধ আর গুগলি সেদ্ধ নুন দিয়ে লংকা পোড়াসহ মাখা ভালো খাবারের নমুনা । উদয় – অস্ত পরিশ্রম করেও তাদের জীবন বদলায় না । আর বড়ো বাড়িতে আঠারোটা দেবা বাড়ি আর বাদা অঞ্চলে ‘ অসাগর জমি ’ – র সৌজন্যে বাড়ির ছেলেদের কাজ করা তো দূরস্থান , তারা বেলা এগারোটার আগে ঘুম থেকেই ওঠে না ।

‘ ভাতে হাত ঢুকিয়ে দিতে সে স্বর্গ সুখ পায় ভাতের স্পর্শে।- কে , কীভাবে এই অভিজ্ঞতা লাভ করে । উদ্ধৃত অংশের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো ।

উত্তরঃ মাতলা নদীর পাড়ে বাদা অঞ্চলের কোনো এক গ্রামের হতদরিদ্র উচ্ছব নাইয়া । মাতলার প্রবল জলোচ্ছ্বাসে এক রাত্রির মধ্যে উচ্ছব বউ , ছেলে , মেয়ে , ঘরবাড়ি সব হারিয়ে শোকে খিদেতে পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে । সে কলকাতায় গ্রাম ভাতে হাত ঢুকিয়ে স্বর্গসুখ লাভের ঘটনা সম্পর্কের বোন বাসিনীর মনিবের বাড়িতে আসে ।

বুড়ো কর্তার আরোগ্যের জন্য আয়োজিত হোমযজ্ঞের আড়াই মণ ওজনের পাঁচ রকমের কাঠ কাটে একটু ভাতের আশায় । কিন্তু তান্ত্রিকের বিধান ও বুড়ো কর্তার মৃত্যুতে একমুঠো ভাতের আশা অধরা থেকে যায় । বড়ো পিসির আদেশে অশৌচ বাড়ির রান্না ভাত – তরকারি ফেলে দেওয়ার জন্য বাসিনী উদ্যোগ নেয় । উচ্ছব বাসিনীর কাছ থেকে মোটা চালের ভাতের ভারী ডেকচি তুলে নেয় ।

দূরে ফেলে দেওয়ার কথা থাকলেও উচ্ছব ভাতের খিদের তাড়নায় স্টেশনে বসে ডেকচি থেকে মুঠো মুঠো ভাত তুলে খেতে থাকে । অভুক্ত মানুষের খিদের তাড়নার জৈবিক প্রবৃত্তির আড়ালে লেখিকা এই কাহিনির মধ্য দিয়ে প্রান্তিক মানুষের জীবন – দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেছেন । ‘ ভাত ’ সেখানে একটি বেঁচে থাকার প্রাপ্য লড়াইয়ের প্রতীক মাত্র ।

‘ ভাত ’ – ই উচ্ছবদের সুখ , স্বাচ্ছন্দ্য , স্বপ্ন । অন্তর্নিহিত । কারণ , ওইটুকু পাওয়ার জন্য তাদের উদয় অস্ত পরিশ্রম করতে হয় । তাই অশৌচ বাড়ির ভাত খেয়ে উচ্ছব যেন প্রাণ ফিরে পায় । স্ত্রী – পুত্র – কন্যার শোকে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া এই সামান্য মানুষটি তাদের প্রত্যেকের নাম করে মুখে ভাত দিতে থাকে । আর শোকের পাথর সরিয়ে উচ্ছব স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে । আবার বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে ‘ ভাত , শুধু ভাত । বাদার ভাত । বাদার ভাত খেলে তবে তো সে আসল বাদাটার খোঁজ পেয়ে যাবে একদিন ।

ভাত গল্পের প্রশ্ন উত্তর, ভাত গল্পের প্রশ্ন উত্তর 2022, ভাত গল্পের প্রশ্ন উত্তর 2023, ভাত গল্পের প্রশ্ন উত্তর ২০২১

ভাত গল্পের চরিত্র, ভাত গল্পের বড় পিসিমা চরিত্র

উত্তরঃ মহাশ্বেতা দেবীর “ভাত” গল্পের বড় পিসিমার কথা বলা হয়েছে। তিনি হলেন বড় বাড়ির সর্বময় কর্ত্রী। তিনি অবিবাহিতা বয়স্ক মহিলা। সংসারের সমস্ত দায়িত্ব একা হাতে সামলান। সংসারের দায়িত্ব দেখাশোনার জন্য তাকে বড় বাড়ির সদস্যরা তার বিয়ে দেননি। তবে সেই বাড়ির লোকেরা বলে বিয়ে হয়েছে ঠাকুরের সঙ্গে। তিনি হলেন দেবতার সেবিকা।

বড় পিসিমার চরিত্র:-গল্পের অন্যতম চরিত্র হলো বড় পিসিমা।এই চরিত্রের কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়, যা পাঠকের হৃদয়কে আকর্ষণ করে। যেমন চরিত্রটির নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা, সেবাপরায়নতা সংস্কারাছন্ন, বহু বাস্তবধর্মীতা প্রভৃতি।

নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা:- বড় পিসিমা চরিত্রে যে সহজাত ক্ষমতা লক্ষ্য করা যায়, তা হল নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা। বড় বাড়িতে তার কথার কেউ বিরোধিতা করে না। তিনি চিরকাল সংসারের হেঁসেল দেখেছেন, বাড়িতে মিস্ত্রি লাগিয়েছেন, এমনকি বুড়ো কর্তার জীবন বাঁচানোর জন্য হোম যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। বহু বছর ধরেই সংসারের নিয়ম কানুন সামলানোর জন্যই বাড়ির সকলে পিসিমাকে শ্রদ্ধা করতেন।পিসিমা ছাড়া অন্য কেউ এমন নেতৃত্ব দিতে পারতেন না বড় বাড়িতে।

সেবাপরায়নতা ও সংস্কারবোধঃ- বড় পিসিমা সেবাপরায়ণ নারী ছিলেন।তিনি বয়স্ক দাদার সেবা করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। এমনকি সংসারের প্রতিটি কাজ নিয়মরীতি পালন করেছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে। তবে অন্যান্য বয়স্ক ব্যক্তির মতো তিনিও ছিলেন কুসঙস্কারাচ্ছন্ন । এ কারণেই ক্যান্সারে আক্রান্ত দাদার জীবন বাঁচানোর জন্য হোম যজ্ঞের উপর আস্থা রেখেছিলেন । আবার সেই যজ্ঞের নিয়ম ভঙ্গ করার কারণে দোষারোপ করেছিলেন বড় ও ছোটো বইয়ের বাবাকে। লেখক এর কথায় বড় পিসিমা চেঁচিয়ে বলতে থাকেন- “তিন ছেলে হোম ছেড়ে উঠে গেল যে এসব কাজে বেরুনী পড়লে রক্ষে আছে ” অর্থাৎ বড় পিসিমা নিয়ম ভঙ্গকে বুড়ো কর্তার মৃত্যুর কারণ বলেছিলেন ।কারণ তিনি ছিলেন কুসঙস্কারাচ্ছন্ন মহিলা।

বাস্তব চরিত্র – শহরের ধনী পরিবারের নারী হলেও তার মধ্যে ছিল মানবিকতা ।তাই বড় বউয়ের কথার উত্তরে তিনি বলেছিলেন- তোমরা তো দশটা পয়সা দিতে পারবে না প্রাণে ধরে। এই দফায় কাজ করবে পেটে দুটো খাবে বৈতো নয়। অর্থাৎ সংস্কারাচ্ছন্ন নারী হলেও বাস্তব বোধছিল পিসির মধ্যে এ কারণে চরিত্রটি গল্পে গুরুত্ব পেয়েছে।

ভাত গল্পের উচ্ছব কে, ভাত গল্পের উচ্ছব এর চরিত্র

উত্তরঃ দুর্ভাগ্যপীড়িত: মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ ছোটোগল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র উৎসব নাইয়া নিম্নবর্গীয় সমাজব্যবস্থার একজন প্রতিনিধি।

ভাগ্যের ফেরে মাতলার বন্যায় বউ ছেলেমেয়েকে হারায় সে। ভেসে যায় তার মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকুও। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ উৎসবের জীবন থেকে সব কিছু কেড়ে নিলেও কেড়ে নিতে পারেনি তার আদিম প্রবৃত্তিকে, যে প্রবৃত্তির নাম খিদে। তাই প্রিয়জন হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই তার মধ্যে জেগে ওঠে ভাতের জন্য হাহাকার।

মমতা ও ভালোবাসাপ্রিয়: হাভাতে উৎসবের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসার আগে পর্যন্ত তার মধ্যেও কোমলতার স্পর্শ ছিল। তাই সতীশ মিস্তিরির তিন ধানে মড়ক লাগলে ধানের প্রতি পরম মমতায় কেঁদে ভাসায় এই গরিব ভাগচাষি। ভেসে যাওয়া ঘরের চালের নীচ থেকে পরিচিত স্বর শোনার আশায় নাওয়াখাওয়া ভুলে বসে থাকে উৎসব। অসম্ভব জেনেও পাগলের মতো বলতে থাকে, “রা কাড় অ চন্নুনীর মা !”

মানবিকতা: পরম আকাঙ্ক্ষিত ভাতের স্পর্শে ‘প্রেত’ উচ্ছবের ভিতর থেকে জেগে ওঠে ‘মানুষ’ উৎসব। তাই বড়ো বাড়ি থেকে নিয়ে আসা ডেকচির ভাত খেতে খেতে সে মনে মনে সেই ভাত তুলে দেয় বউ ছেলেমেয়ের মুখে… “চন্নুনী রে। তুইও খা, চন্নুনীর মা খাও, ছোটো থোকা খাঁ, আমার মধ্যে বসে তোরাও খা।”

সর্বহারা বঞ্চিত: আসলে উৎসবের মতো বঞ্ছিত, প্রান্তিক মানুষদের সমাজজীবনে ব্যক্তিনামেরও কোনো মূল্য নেই। তাই আমরা দেখি তার নিরুৎসব জীবনে সে আর উৎসব থাকেনি, তার নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে উচ্ছব নাইয়া।

ভাত গল্পের নদীর নাম

উত্তরঃ মহাশ্বেতা দেবীর ভাত গল্পে আমরা উৎসব নাইয়া নামে এক সর্বশান্ত কৃষকের কথা জানতে পারি। যে ছিল সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের একজন ভূমিহীন মজুর, তার পিতা হরিচরণ নাইয়া, এবং সে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে নিয়ে মাতলা নদীর তীরে বসবাস করত।

ভাত গল্পের লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থের নাম কি

উত্তরঃ ‘ভাত’ গল্পের লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ইতিহাসনির্ভর জীবনী ঝাঁসীর রাণী। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ “ঝাঁসির রাণী” প্রকাশিত হয়।

ভাত গল্পের নাট্যরূপ, মহাশ্বেতা দেবীর ভাত গল্পের নাট্যরূপ, ভাত গল্পের নাট্যরূপ pdf, ভাত গল্পের প্রশ্ন উত্তর 2022 pdf download

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

ভাত গল্পের প্রশ্ন উত্তর pdf

বাংলা রেফারেন্স (উচ্চমাধমিক) ক্লাস – ১২


বাংলা রেফারেন্স (উচ্চমাধমিক) ক্লাস – ১২

FAQ | ভাত গল্পের প্রশ্ন উত্তর

ভাত গল্পের নদীর নাম

উত্তরঃ মহাশ্বেতা দেবীর ভাত গল্পে আমরা উৎসব নাইয়া নামে এক সর্বশান্ত কৃষকের কথা জানতে পারি। যে ছিল সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের একজন ভূমিহীন মজুর, তার পিতা হরিচরণ নাইয়া, এবং সে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে নিয়ে মাতলা নদীর তীরে বসবাস করত।


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।