ক্লাস 10 ভূগোল প্রশ্ন উত্তর প্রথম অধ্যায়

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

ক্লাস 10 ভূগোল প্রশ্ন উত্তর | হিমবাহ, মহাবিষুব ও জলবিষুব

হিমবাহ কাকে বলে, হিমবাহ কি

সংক্ষেপে বলতে গেলে বরফের নদীকেই হিমবাহ বা glacier বলে । স্থলভাগের সুনির্দিষ্ট খাত বা উপত্যকা বরাবর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে জমাট বাঁধা বরফ অত্যন্ত ধীরগতিতে ঢাল বরাবর নিচের দিকে নামতে থাকে, এই প্রবহমান বরফের নদীকে হিমবাহ বা glacier বলে ।

তবে নদীর জল জমে বরফে পরিণত হলে তাকে হিমবাহ বলেনা ।

বিজ্ঞানী ফ্লিন্টের মতে, “হিমবাহ হল একটি বিশাল আকৃতির বরফের স্তূপ যা প্রধানত তুষার জমে সৃষ্টি হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে এবং যা গতিশীল অবস্থায় রয়েছে বা কোন একসময় গতিশীল ছিল” ।

হিমবাহের শ্রেণীবিভাগ

1984 সালে ভূবিজ্ঞানী আলমান (H . W. Ahlmann) অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে হিমবাহ কে প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করেন । সেগুলি হল – 

1. মহাদেশীয় হিমবাহ | Continental Glacier

উচ্চ অক্ষাংশে সুবিশাল অঞ্চল জুড়ে যে বরফের স্তর দেখা যায় তাকে মহাদেশীয় হিমবাহ continental glacier বলে ।

অবস্থান : পৃথিবীর মোট মহাদেশীয় হিমবাহের 85% আন্টার্টিকায়, 11% গ্রিনল্যান্ডে এবং বাকি 4% আইসল্যান্ড ও বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জে সঞ্চিত আছে ৷

বৈশিষ্ট্য :

  • A. মহাদেশীয় হিমবাহের আয়তন বিশাল হয় ।
  • B. এই হিমাবাহের আকৃতিউল্টানো চাটু বা কচ্ছপের পিঠের মতকারণ এর মধ্যভাগের গভীরতা বেশি এবং প্রান্তভাগে কম ।
  • C.এই হিমবাহের প্রান্তদেশে নুনাটাকস (বরফ মুক্ত শৃঙ্গ) দেখা যায় ।
  • D. এই হিমবাহ থেকে হিমশৈল সৃষ্টি হয় ৷

উদাহরণ : আন্টার্কটিকার ল্যামবার্ট পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশীয় হিমবাহ ( largest continental glacier in the world )  ৷

2. পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ | Mountain or Valley Glacier

উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হিমবাহকে পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ বা mountain glacier বলে ।

অবস্থান : হিমালয়, রকি আন্দিজ আল্পস প্রভৃতি পার্বত্য অঞ্চলে দেখা যায় ।

বৈশিষ্ট্য :

  • A. এই হিমবাহ উঁচু স্থান থেকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা নিচের দিকে প্রবাহিত হয় ।
  • B. এই হিমবাহের মধ্যভাগ অবতল প্রকৃতির হয় । 
  • C. উপত্যকা হিমবাহে বার্গস্রুন্ড ও ক্রেভাস দেখা যায় ।

উদাহরন : পৃথিবীর বৃহত্তম উপত্যকা হিমবাহ হুবার্ড (largest mountain glacier in the world) ।ভারতের দীর্ঘতম উপত্যকা হিমবাহ সিয়াচেন ।

3. পাদদেশীয় হিমবাহ, পাদদেশীয় হিমবাহ কাকে বলে | Piedmont or Expanded Foot Glacier

পর্বত থেকে নেমে হিমবাহ যখন পর্বতের পাদদেশে অবস্থান করে তাকে পাদদেশীয় হিমবাহ বা piedmont glacier বলে ।

অবস্থান : আলাস্কা, আন্টার্কটিকার শীতল মেরু সংলগ্ন অঞ্চলে দেখা যায় ।

বৈশিষ্ট্য :

  • A.এক বা একাধিক উপত্যকা হিমবাহ মিলিত হয়ে পাদদেশীয় হিমবাহ গঠিত হয় ।
  • B. এই হিমবাহের অগ্রভাগকে লোব বলে ।

উদাহরণ : আলাস্কার মালাসপিনা পৃথিবীর  বৃহত্তম পাদদেশীয় হিমবাহ । (largest piedmont glacier) ।

হিমবাহের সঞ্চয় কাজ, হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ

পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ পরিবর্তনকারী শক্তিগুলির মধ্যে অন্যতম হলো হিমবাহের সঞ্চয়কার্য। হিমবাহ অধ্যুষিত উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে ও পর্বতের পাদদেশে হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়। সেগুলি হল-

A)উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ

উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে নিম্নলিখিত ভূমিরূপ গঠিত হয়-

  • ১)গ্রাবরেখা : উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন আকৃতির বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখণ্ড, নুড়ি, কাঁকড় ইত্যাদি হিমবাহের সঙ্গে সঞ্চিত হতে হতে নিচের দিকে এগিয়ে যায়। হিমবাহ বাহিত এই স্তূপাকারে সঞ্চিত পদার্থগুলিকে একত্রে গ্রাবরেখা বলে। হিমবাহ অধ্যুষিত পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের গ্রাবরেখা দেখা যায়। প্রকৃতি ও অবস্থান অনুসারে গ্রাবরেখাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-
    • অ)পার্শ্ব গ্রাবরেখা : হিমবাহের দু’পাশে যে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয়, তাকে পার্শ্ব গ্রাবরেখা বলে।
    • আ)প্রান্ত গ্রাবরেখা : হিমবাহ যে স্থানে এসে শেষ হয় অর্থাৎ গলে যায় সেই স্থানে যে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয় তাকে প্রান্ত গ্রাবরেখা বলে।
    • ই)মধ্য গ্রাবরেখা : দুটি হিমবাহের পাশাপাশি মিলনের ফলে তাদের মধ্যবর্তী অঞ্চলে যে গ্রাবরেখা সৃষ্টি হয়, তাকে মধ্য গ্রাবরেখা বলে।
    • ঈ)ভূমি গ্রাবরেখা : হিমবাহের তলদেশে যে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয় তাকে ভূমি গ্রাবরেখা বলে।
    • উ)অবিন্যস্ত গ্রাবরেখা : হিমবাহের অগ্রভাগে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভাবে যে গ্রাবরেখা সৃষ্টি হয়, তাকে অবিন্যস্ত গ্রাবরেখা বলে।
    • ঊ)হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা : সময় বিভিন্ন আকৃতির প্রস্তরখণ্ড, নুড়ি, কাঁকর প্রভৃতি হিমবাহের ফাটলের মধ্যে প্রবেশ করে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। একে হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা বলে।
    • এ)রোজেন গ্রাবরেখা ” কয়েকটি গ্রাবরেখা পরস্পরের ওপরে বা স্তরে স্তরে সঞ্চিত হলে, তাকে রোজেন গ্রাবরেখা বলে।
    • ঐ)বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা: গ্রাবরেখা বলয়ের আকারে সঞ্চিত হলে, তাকে বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা বলে উদাহরণ: তিস্তা নদীর উচ্চ অববাহিকিয় লাচুং ও লাচেন অঞ্চলে এবং কাশ্মীরের লিডার ও কোলাহই নদীর উপত্যকায় গ্রাবরেখা দেখা যায়।

B)পর্বতের পাদদেশে হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ

উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে হিমবাহ বাহিত বিভিন্ন পদার্থ পর্বতের পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে নিম্নলিখিত ভূমিরূপগুলি গঠিত হয়-

  • )হিম অবক্ষেপ : হিমবাহের অবঘর্ষ জনিত ক্ষয়কার্যের ফলে হিমবাহের তলদেশে শিলাখণ্ড, নুড়ি, কাঁকর, কাদা, বালি ইত্যাদি সৃষ্টি হয় এবং সেগুলি হিমবাহের সঙ্গে বাহিত হতে থাকে।হিমবাহ বাহিত এই সমস্ত পদার্থ হিমবাহ গলে যাবার পর কোন একটি অঞ্চলের সঞ্চিত হয়ে থাকে। এদের একত্রে হিম অবক্ষেপ বলে।
  • ২)বোল্ডার ক্লে ও টিল : হিমবাহের সঞ্চয়জাত পদার্থ হিম অবক্ষেপের  মধ্যে বড় বড় শিলাখণ্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকৃতির নুড়ি, কাঁকর, বালি, কাদা ইত্যাদির অবক্ষেপ স্তরহীন অবস্থায় দেখা যায়। হিমবাহ সঞ্চিত এইরূপ ইতস্তত বিক্ষিপ্ত অবক্ষেপকে   বোল্ডার ক্লে ও টিল বলে। তবে বোল্ডার ক্লেতে শিলাখণ্ড এবং টিলে কাদার পরিমাণ বেশি থাকে।
  • ৩)ড্রামলিন : হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলে পর্বতের পাদদেশে হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে যে উল্টানো নৌকার মতো বা উল্টানো চামচের মতো টিলার সৃষ্টি হয়, তাকে ড্রামলিন বলে। ড্রামলিনগুলি সাধারণত 1-2 কিমি লম্বা, 4-6 কিমি চওড়া এবং 15-30 মিটার উঁচু হয়। অনেক সময় অনেকগুলি ড্রামলিন একত্রে অবস্থান করলে ডিম ভর্তি ঝুড়ির মতো দেখতে হয়। তাই ড্রামলিন অধ্যুষিত অঞ্চলকে  ডিমের ঝুড়ি বলা হয়। ড্রামলিনের মাঝে অনেক সময়় জলাভূমি সৃষ্টি হয়। উদাহরণ : উত্তর ইউরোপের হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলে ড্রামলিন দেখা যায়।
  • ৪)আগামুক বা ইরাটিক : আগামুক শব্দের অর্থ আগন্তুক বা ভিনদেশি। হিমবাহ বাহিত কোন বৃহদাকৃতির শিলাখণ্ড দূর-দূরান্ত থেকে এসে অন্যত্র অবস্থান করলে, তাকে আগামুক বা ইরাটিক বলে। হিমবাহের ধাক্কায় অথবা হিমবাহের আকর্ষনে কোন বৃহদাকৃতির শিলাখণ্ড গড়াতে গড়াতে নিচের দিকে নেমে এসে এমন জায়গায় সঞ্চিত হয় যে ওই শিলাখণ্ডটির অনুরূপ কোন শিলাখণ্ড কাছাকাছি দেখা যায় না অর্থাৎ ওই শিলাখণ্ডটির সঙ্গে আঞ্চলিক শিলা সমূহের আকৃতিগত ও প্রকৃতিগত কোন সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় না। তাই এই শিলাখণ্ডটিকে আগামুক বা আগন্তুক শিলা বা ভিনদেশী শিলা বা পরদেশী শিলা বলা হয়। উদাহরণ : কাশ্মীরের পহেলগাঁও অঞ্চলে আগামুক দেখতে পাওয়া যায়।
  • ৫)এসকার : হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলে পর্বতের পাদদেশে হিমবাহ বাহিত নুড়ি, কাঁকর, বালি, কাদা ইত্যাদি সঞ্চিত হয় যে দীর্ঘ ও সংকীর্ণ আঁকাবাঁকা শৈলশিরা সৃষ্টি হয়, তাকে এস্কার বলে। এগুলির দৈর্ঘ্য কয় কিলোমিটার থেকে কয়েকশো কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।এসকার 5-50 মিটার প্রস্থ এবং 5-15 মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট হয়। উদাহরণ : ফিনল্যান্ডের পুনকাহারয়ু এসকারটি বিখ্যাত।
  • ৬)বহিঃবিধৌত সমভূমি : হিমবাহ অধ্যুষিত পার্বত্য অঞ্চলে পর্বতের পাদদেশে হিমবাহ বাহিত নুড়ি, কাঁকর, বালি, কাদা ইত্যাদি সঞ্চিত হয়ে যে বিস্তীর্ণ সমভূমি সৃষ্টি হয়, তাকে বহিঃবিধৌত সমভূমি বলে।প্রধানত প্রান্ত গ্রাবরেখার শেষে হিমবাহ ও জলধারার সম্মলিত কাজের ফলে এই সমভূমি গঠিত হয়। উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে পর্বতের ঢাল বরাবর হিমবাহ নেমে এসে পর্বতের পাদদেশে পৌঁছালে তা গলে গিয়ে জলধারার সৃষ্টি হয় এবং ওই হিমবাহের সাথে বাহিত নুড়ি, কাঁকর, বালি, কাদা ইত্যাদি কোন অবনমিত স্থানে সঞ্চিত হয়ে এই বহিঃবিধৌত সমভূমি গঠিত হয়। এই বহিঃবিধৌত সমভূমি নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন হলে তাকে ভ্যালি ট্রেন বলা হয়। উদাহরণ : উত্তর আমেরিকা মহাদেশের কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের সমভূমি দেখা যায়।
  • ৭)কেটল ও কেটল হ্রদ : অনেক সময় বহিঃবিধৌত সমভূমিতে হিমোঅবক্ষেপের মধ্যে বরফের টুকরো চাপা পড়ে যায়। পরবর্তীকালে ওই বরফ গলে গেলে ভূপৃষ্ঠে যে গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়, তাকে কেটল বলে। অনেক সময় এই কেটলগুলিতে হিমবাহ গলা জল সঞ্চিত হয়ে কেটল হ্রদ সৃষ্টি হয়।এই কেটল হ্রদগুলি গোক্ষুর আকৃতির হয়। এই কেটল হ্রদের তলদেশে স্তরে স্তরে সঞ্চিত পলিকে ভার্ব বলে। উদাহরণ-স্কটল্যান্ডের ওর্কনে কেটলি ও কেটল হ্রদ দেখা যায়।
  • ৮)কেম ও কেম সোপান : হিমাবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলে পর্বতের পাদদেশে হিমবাহ যেখানে গলতে শুরু করে সেখানে হিমবাহ বাহিত বিভিন্ন আকৃতির নুড়ি, কাঁকর, বালি, কাদা ইত্যাদি সঞ্চিত হয়ে যে ত্রিকোণাকার বদ্বীপের  ন্যায় ভূমিরূপ গঠিত হয়, তাকে কেম বলে। আবার হিমবাহ উপত্যকার দুপাশে সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে কেম গঠিত হলে, তাকে কেম সোপান বলে। উদাহরণ- ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের গ্ল্যাবেন উপত্যকায় এবং স্কটল্যান্ডের ল্যামার মুয়ার উপত্যকায় কেম ও কেম সোপান দেখা যায়।
  • ৯)নব : হিমবাহের ঘর্ষণে সৃষ্ট কোন অবনমিত অঞ্চলে প্রান্ত গ্রাবরেখার অন্তর্গত বিভিন্ন আকৃতির শিলাখণ্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি ইত্যাদি সঞ্চিত হয়ে যে ছোট ছোট উঁচু ঢিবি বা টিলা সৃষ্টি হয়, তাকে নব বলে।নব প্রধাণত কেটলগুলির মাঝে উঁচু ঢিবি রূপে অবস্থান করে। উদাহরণ-ইউরোপের উত্তরাংশে বিভিন্ন স্থানে নব দেখা যায়।

ভারতের বৃহত্তম হিমবাহের নাম কি, ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহের নাম কি

সিয়াচেন হিমবাহ-এটি হিমালয়ের কারাকোরাম পর্বতশ্রেণীর মধ্যে অবস্থিত। এটি ভারতের বৃহত্তম হিমবাহ।

ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহের নাম সিয়াচেন হিমবাহ যা জম্মু ও কাশ্মীরে অবস্থিত। এই হিমবাহের উচ্চতা 18,000 ফুট। এটি কারাকোরাম গিরিপথের ( Karakoram Pass) নিকটে ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহের সৃষ্টি করেছে। এই হিমবাহের দৈর্ঘ্য 78 কিলোমিটার।

এই হিমবাহ পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম হিমবাহ, ঠিক সুমেরীয় অঞ্চলের পরে।

সিয়াচেন হিমবাহ একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, যেখানে তুষার-ঢাকা চূড়া এবং বরফের উপত্যকার অত্যাশ্চর্য দৃশ্য রয়েছে।

সিয়াচেন হিমবাহ এই অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র এবং জল সরবরাহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নুব্রা নদীর উৎস, যা শ্যাওক নদীতে এবং তারপর সিন্ধু নদীতে মিশে যায়। সিন্ধু নদী এশিয়ার বৃহত্তম নদীগুলির মধ্যে একটি, যা ভারত ও পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য জল সরবরাহ করে। সিয়াচেন হিমবাহ এছাড়াও উদ্ভিদ এবং প্রাণীর একটি অনন্য বাস্তুতন্ত্রের আবাসস্থল, যা উচ্চ-উচ্চতার পরিবেশের চরম ঠান্ডা এবং কঠোর অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়।

পৃথিবীর বৃহত্তম হিমবাহের নাম কি, পৃথিবীর দীর্ঘতম হিমবাহের নাম কি

ল্যাম্বাট হিমবাহ হল পৃথিবীর বৃহত্তম হিমবাহ।

পৃথিবীর দীর্ঘতম হিমবাহের নাম ল্যামবার্ট – ফিশার ( Lambert – Fisher)। এটি অ্যান্টার্কটিক মহাদেশে অবস্থিত। এর দৈর্ঘ্য 400 কিলোমিটার এবং এটি 100 কিলোমিটার প্রশস্ত। এএটিঅ্যান্টার্কটিকের 8% জুড়ে রয়েছে।

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ, হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ চিত্রসহ

সুবিশাল বরফের স্তুপ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূমির ঢাল বরাবর এগিয়ে চললে তাকে হিমবাহ বলে।এই হিমবাহ প্রধানত উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে অবঘর্ষ ও উৎপাটন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্য করে থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূমিরূপ গঠন করে।নিম্নে হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি চিত্রসহ আলোচনা করা হলো-

  • ১)সার্ক বা করি : হিমবাহের উৎস ক্ষেত্রে পর্বতের গায়ে অবঘর্ষ ও উৎপাটন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে যে হাতলওয়ালা ডেক চেয়ারের ন্যায় বা চামচের খাতের ন্যায় ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়, তাকে ফরাসিতে সার্ক এবং ইংরেজিতে করি বলা হয়। ইহা জার্মানিতে কার, নরওয়েতে বন, ক্যান্ডিনেভিয়ায় বটন ও কেদেল নামে পরিচিত। একটি হিমবাহ শূন্য সার্ক করির তিনটি অংশ থাকে। যথা-
    • ক)মাথার দিকে খাড়া দেওয়াল
    • খ)মধ্যভাগের অবনত খাত এবং
    • গ)প্রান্তভাগ বা চৌকাট।

সার্ক বা করির মধ্যভাগের অবনত অংশে অনেক সময় হিমবাহ গলা সঞ্চিত হয়ে সৃষ্টি হয়। উদাহরণ – আন্টার্টিকার ওয়ালকর্ট করি সার্ক বা করির প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

  • ২)হিমশিরা বা এরিটি : পাশাপাশি অবস্থিত দুটি সার্ক বা করির বিপরীতমুখী ক্ষয়কার্যের ফলে তাদের মধ্যবর্তী পর্বতচূড়াটি ক্রমশ সরু হতে হতে ক্ষুরধার শৈলশিরা বা করাতের দাঁতের মতো আকৃতি ধারণ করে। এইরূপ করি বিভাজনকারী করাতের দাঁতের ন্যায় আকৃতিবিশিষ্ট ক্ষুরধার শৈলশিরাকে হিমশিরা বা এরিটি বলে। উদাহরণ – আল্পস পর্বতের ম্যাটারহর্ন ও ভারতের নীলকণ্ঠ শৃঙ্গ হলো উদাহরণ।
  • ৩)পিরামিড চূড়া:  হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলে কোন পর্বত চূড়ার বিভিন্ন দিকে একাধিক করি সৃষ্টি হলে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে ওই করিগুলির মধ্যবর্তী পর্বতচূড়াটি খাড়া ও উঁচু হয়ে পিরামিডের ন্যায় আকৃতি ধারণ করে।একে পিরামিড চূড়া বলে। কোন পর্বতচূড়ার চারপাশে তিনটি বা তিনটির অধিক করি অবস্থান করলে পিরামিড চূড়া সৃষ্টি হয়। উদাহরণ – ইউরোপের আল্পস পর্বতের ম্যাটারহর্ন ও ভিসহর্ণ এবং ভারতের নীলকণ্ঠ ও শিবলিঙ্গ শৃঙ্গ হলো পিরামিড চূড়ার উদাহরণ।
  • ৪)রসে মতানে : হিমবাহের প্রবাহ পথে কোন কঠিন শিলাখন্ড ঢিবির আকারে অবস্থান করলে শিলাখণ্ডটির  হিমবাহের প্রবাহপথের দিকটি অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মসৃণ এবং  বিপরীত দিকটি উৎপাটন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অমসৃণ ও এবড়োখেবড়ো হয়। হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট এইরূপ একদিক মসৃণ এবং অপরদিক অমসৃণ, ভগ্ন, খাঁজকাটা ও এবড়োখেবড়ো শিলাখণ্ডকে রসে মতানে বলে। উদাহরণ – ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে ঝিলাম নদীর উপনদী লিভারের উপত্যকায় রসে মতানে দেখতে পাওয়া যায়।
  • ৫)ক্র্যাগ ও টেল : হিমবাহের প্রবাহপথে কোন কঠিন শিলাখন্ডের পিছনে কোমল শিলাখণ্ড অবস্থান করলে সামনের কঠিন শিলাখণ্ডটি পিছনের কোমল শিলাখণ্ডটিকে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের হাত থেকে রক্ষা করে। এর ফলে সামনের কঠিন শিলাখন্ডটি উঁচু ঢিবির আকারে এবং পিছনের কোমল শিলাখণ্ডটি সরু লেজের আকারে অবস্থান করে। এই কঠিন শিলাখণ্ডটিকে বলা হয় ক্র্যাগ এবং পিছনের সরু লেজের মতো কোমল শিলাখণ্ডটিকে বলা হয় টেল। উদাহরণ – সুইজারল্যান্ডের হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলে ক্র্যাগ ও টেল দেখতে পাওয়া যায়।

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ

  • ৬)ঝুলন্ত উপত্যকা : প্রধান নদীর সাথে যেমন অনেক ছোট ছোট উপনদী এসে মিলিত হয়, ঠিক তেমনি অনেক সময় পার্বত্য অঞ্চলে প্রধান হিমবাহের দুপাশ থেকে অনেক ছোট ছোট হিমবাহ বা উপ হিমবাহ এসে প্রধান হিমবাহের সাথে মিলিত হয়। প্রধান হিমবাহের ক্ষয়কার্যের পরিমাণ বেশি বলে তার উপত্যকা উপ হিমবাহগুলির উপত্যকা অপেক্ষা অনেক বেশি গভীর হয়। তাই হিমবাহ উপত্যকা থেকে হিমবাহ সরে গেলে মনে হয় যেন ক্ষুদ্রাকার হিমবাহের উপত্যকাগুলি বৃহদাকার হিমবাহ উপত্যকার ওপর ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। এইরূপ হিমবাহ উপত্যকাকে ঝুলন্ত উপত্যকা বলে। এই ঝুলন্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হলে অনেক সময় জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। উদাহরণ – ভারতের গাড়োয়াল হিমালয়ের বদ্রীনাথের নিকট ঋষি গঙ্গার উপত্যকা ঝুলন্ত উপত্যকার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
  • ৭)হিমদ্রোনী : তলদেশ অত্যন্ত প্রশস্থ এবং পার্শ্বদেশ মসৃণ ও খাড়া ঢাল বিশিষ্ট হিমবাহ উপত্যকাকে হিমদ্রোনী বা হিমখাত বলে। ইহার আকৃতি ইংরাজি ‘U’ অক্ষরের মতো। পার্বত্য অঞ্চলের পূর্বেকার ‘V’ আকৃতির নদী উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে ক্ষয়কার্যের ফলে হিমদ্রোনী বা হিমখাত সৃষ্টি হয়। উদাহরণ -আলাস্কা, নরওয়ে, গ্রীনল্যান্ড ইত্যাদি দেশের হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলে হিমদ্রোনী দেখা যায়।
  • ৮)হিমসিঁড়ি : হিমদ্রোনী বা হিমবাহ উপত্যকার মধ্য দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় বৈষম্যমূলক ক্ষয় কার্যের ফলে হিমবাহ উপত্যকার দুপাশে যে ধাপকাটা সিঁড়ির মতো ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়, তাকে হিমসিঁড়ি বা হিমসোপান বলে। অনেক সময় হিমসিঁড়ির অবনমিত অংশে হিমবাহ গলা জল সঞ্চিত হয়ে প্যাটার্নস্টার হ্রদ সৃষ্টি হয়। উদাহরণ – আল্পস পর্বতের পাদদেশে হিমসিঁড়ি দেখা যায়।
  • ৯)ফিয়র্ড : মহাদেশীয় হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট সমুদ্র জলে নিমজ্জিত হিমবাহ উপত্যকাকে ফিয়র্ড বলে। সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে হিমবাহ উপত্যকা সমুদ্রপৃষ্ঠ অপেক্ষা গভীর হলে হিমবাহ উপত্যকায় সমুদ্রের জল প্রবেশ করে ফিয়র্ড সৃষ্টি হয়। উদাহরণ – নরওয়ের সজনে ফিয়র্ড হলো পৃথিবীর গভীরতম ফিয়র্ড।

পৃথিবীর দ্রুততম হিমবাহের নাম কি, পৃথিবীর দ্রুততম হিমবাহ কোনটি

গ্রিনল্যান্ডের জ্যাকোবসান হিমবাহ।

জ্যাকবশভন হিমবাহ গ্রীনল্যান্ডের বরফের 6.5% নিঃসরণ করে[1] এবং সমস্ত গ্রীনল্যান্ড আইসবার্গের প্রায় 10% উৎপন্ন করে। প্রতি বছর প্রায় 35 বিলিয়ন টন আইসবার্গ থেকে বেরিয়ে যায়। হিমবাহ থেকে ভাঙা আইসবার্গগুলি প্রায়শই এত বড় হয় (উচ্চতায় 1 কিমি পর্যন্ত) যে তারা এফজর্ডের নীচে ভাসতে খুব বেশি লম্বা হয় এবং এর অগভীর অঞ্চলগুলির নীচে আটকে থাকে, কখনও কখনও বছরের পর বছর ধরে, যতক্ষণ না তারা বল দ্বারা ভেঙে যায়।

পৃথিবীর বৃহত্তম উপত্যকা হিমবাহের নাম কি

পৃথিবীর বৃহত্তম উপত্যকা হিমবাহ হল আলাস্কার হুবার্ড ।

হাবার্ড গ্লেসিয়ারের দীর্ঘতম উৎস 122 কিলোমিটার (76 মাইল) এবং এটি প্রায় 61°00′N 140°09′W এ অবস্থিত, মাউন্ট ওয়ালশের প্রায় 8 কিলোমিটার (5 মাইল) পশ্চিমে একটি উচ্চতা প্রায় 110 ফুট 3,400 মি)।

হাবার্ড হিমবাহের বরফ প্রান্ত প্রায় এক শতাব্দী ধরে অগ্রসর হতে থাকে। 1986 সালের মে মাসে, হাবার্ড গ্লেসিয়ার এগিয়ে যায়, রাসেল ফজর্ডের আউটলেটকে অবরুদ্ধ করে এবং রাসেল লেক তৈরি করে। সমস্ত গ্রীষ্ম, নতুন হ্রদ প্রবাহে ভরা; এর জলস্তর 25 মিটার (82 ফুট) বেড়েছে এবং লবণাক্ততা হ্রাস এর সমুদ্র জীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

পৃথিবীর বৃহত্তম পাদদেশীয় হিমবাহের নাম কি

পৃথিবীর বৃহত্তম পাদদেশীয় হিমবাহ হল আলাস্কার মালাসপিনা।

নদী উপত্যকা ও হিমবাহ উপত্যকার পার্থক্য

বৈশিষ্ট্যনদী উপত্যকাহিমবাহ উপত্যকা
সংজ্ঞানদীর ক্ষয়কার্যের ফলে যে উপত্যকা সৃষ্টি হয়, তাকে নদী উপত্যকা বলে।অপরদিকে, কেলাসিত বরফ বা হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে যে উপত্যকা সৃষ্টি হয় তাকে হিমবাহ কাকে বলে।
অবস্থান গত পার্থক্যমেরু প্রদেশের বরফাবৃত অঞ্চল এবং উষ্ণ ও শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চল ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলে নদী উপত্যকার উপস্থিতি লক্ষ করা যায় না ।কেবলমাত্র বরফে ঢাকা ঊঁচু পার্বত্য অঞ্চল এবং হিমশীতল মেরু অঞ্চলেই হিমবাহ উপত্যকার উপস্থিতি লক্ষ করা যায় ।
আকৃতিগত পার্থক্যপার্বত্য অঞ্চলে নদীর উচ্চগতিতে নদী উপত্যকার আকৃতি ইংরেজী ‘I’ বা সরু ‘V’ আকৃতির হয় । উচ্চগতির শেষে ও মধ্যগতির প্রথমে নদী উপত্যকায় ‘নদীমঞ্চ’ সৃষ্টি হয় । সমভূমিতে নদীর মধ্যগতিতে নদী উপত্যকার আকৃতি প্রশস্ত ও খুব চওড়া এবং নদীখাত ক্রমশ অগভীর ও বিরাট চওড়া হতে থাকে । নিম্নগতিতে নদীখাতে চড়া পড়ে নদী উপত্যকায় বিশাল চড়ার সৃষ্টি হয় এবং নদী উপত্যকা অসম্ভব আঁকাবাঁকা হয়ে যায় । নদী উপত্যকার আঁকাবাঁকা এই গতিপথকে মিয়েন্ডার বলে ।উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে খুব চওড়া তলদেশ এবং অপেক্ষাকৃত মসৃণ ও খাড়া পাড়যুক্ত হিমবাহ উপত্যকার সৃষ্টি হয় । এই সময়ে হিমবাহ উপত্যকার মধ্য দিয়ে অসম্ভব ভারী এবং কঠিন বরফের চাঁই প্রবাহিত হওয়ার জন্য হিমবাহ উপত্যকার আকৃতি হয় অনেকটা ইংরেজী ‘U’ অক্ষরের মতো । সাধারণত সোজাপথে প্রবাহিত হয় বলে হিমবাহ উপত্যকায় কখনোই বাঁক বা মিয়েন্ডার গঠিত হয় না । হিমবাহ উপত্যকায় কোনো রকমের মঞ্চ সৃষ্টি হয় না ।
প্রবাহের গতিপার্বত্য ও উচ্চ সমভূমি অঞ্চলে নদী স্রোতের গতিবেগ প্রবল হয়, নিম্নভূমিতে নদী স্রোতের গতিবেগ ধীরে ধীরে কমে আসে ।বেশিরভাগ সময়েই হিমবাহ অত্যন্ত ধীরগতিতে প্রবাহিত হয় ।
ক্ষয়ের প্রকৃতিনদী উপত্যকায় ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট পাথরখন্ডগুলির আকৃতি গোলাকার ও মসৃণ হয় ।হিমবাহ উপত্যকায় ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট পাথরখন্ডগুলির কোনো নির্দিষ্ট আকার থাকে না এবং আকৃতিতে এরা এবড়ো খেবড়ো হয় ।
ভূমিরূপের পার্থক্যনদীর সঞ্চয় কাজের ফলে নদী উপত্যকায় প্লাবনভূমি, স্বাবাভিক বাঁধ, বদ্বীপ প্রভৃতি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় ।হিমবাহের সঞ্চয় কাজের ফলে হিমবাহ উপত্যকায় গ্রাবরেখা, ড্রামলিন, টিলা, কেম প্রভৃতি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় ।
ধাপ সৃষ্টিনদী উপত্যকায় ধাপ বা সিঁড়ির সৃষ্টি হয় না।অপর দিকে হিমবাহ উপত্যকায় ধাপ বা সিঁড়ির সৃষ্টি হয়।
প্রকৃতিনদী উপত্যকার পার্শ্বদেশ খাড়াই এবং তলদেশ সংকীর্ণ হয়।অপরদিকে, হিমবাহ উপত্যকার পার্শ্বদেশ খাড়াই এবং তলদেশ প্রশস্ত হয়।
নদী উপত্যকা ও হিমবাহ উপত্যকার পার্থক্য

মহাবিষুব ও জলবিষুব, মহাবিষুব ও জলবিষুব কাকে বলে, মহাবিষুব ও জলবিষুব বলতে কী বোঝো

মহাবিষুব কাকে বলে, মহাবিষুব

লাতিন শব্দ ‘ Equinox ’ ( ইকুইনক্স ) -এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘ বিষুব ’ এবং শব্দটির অর্থ ‘ সমান রাত্রি ‘ ( Equi = equal , nox = night ) । ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে যেদিন পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান ( ৭২ ঘণ্টা দিন ও ১২ ঘণ্টা রাত্রি ) হয় , সেই বিশেষ দিনটিকে বলে বিষুব ।

সূর্যের চারদিকে পরিক্রমণ করতে করতে ২১ শে মার্চ তারিখে পৃথিবী তার কক্ষের এমন এক স্থানে অবস্থান করে যে , ওইদিন মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি ঠিক লম্বভাবে নিরক্ষরেখার ওপর পড়ে এবং উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্য থেকে সমান দূরে থাকে । এর ফলে ওইদিন পৃথিবীর সর্বত্র দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয় । এই সময় উত্তর গোলার্ধে বসন্ত ঋতু বিরাজ করে বলে ২১ শে মার্চের বিশেষ দিনটিকে মহাবিষুব ( Vernal or Spring equinox ) বলা হয় ।

জলবিষুব কাকে বলে, জলবিষুব

যেদিন পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান ( ১২ ঘণ্টা দিন ও ১২ ঘণ্টা রাত্রি ) , সেই বিশেষ দিনটিকে বলে বিষুব । সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে করতে ২৩ শে সেপ্টেম্বর পৃথিবী তার কক্ষপথের এমন এক  জায়গায় অবস্থান করে যে , মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি ঠিক লম্বভাবে নিরক্ষরেখার ওপর পড়ে । এর ফলে ওইদিন উত্তর ও দক্ষিণ — দুই মেরু থেকেই সূর্য সমান দূরত্বে অবস্থান করে । এজন্য ওইদিন পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয় । এই সময় উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল থাকে , তাই ২৩ শে সেপ্টেম্বরের দিনটিকে বলা হয় জলবিষুব ( Autumnal equinox ) ।

বৈশিষ্ট্য-

  • ১)মহাবিষুব ও জলবিষুবের সময় পৃথিবীর সর্বত্র দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়।
  • ২)মহাবিষুব ও জলবিষুবের দিন সূর্য ঠিক পূর্ব দিকে উদিত হয় এবং পশ্চিম দিকে অস্ত যায়।
  • ৩)এই দিন দুটিতে ছায়াবৃত্ত প্রতিটি অক্ষরেখাকে সমদ্বিখণ্ডিত করে।
  • ৪)এই দিন দুটিতে মধ্যাহ্ন সূর্য রশ্মি  নিরক্ষরেখার উপর 90° কোণে পতিত হয়।

মহাবিষুব ও জলবিষুব কোন কোন তারিখে হয়

মহাবিষুব কত তারিখে হয়

সূর্যের চারদিকে পরিক্রমণ করতে করতে 21 শে মার্চ তারিখে পৃথিবী তার কক্ষপথের এমন এক স্থানে অবস্থান করে যে দিন মধ্যাহ্ণ সূর্যরশ্মি ঠিক লম্ব ভাবে নিরক্ষরেখার উপর পড়ে এবং পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্য থেকে সমান দূরত্বে অবস্থান করে। এর ফলে ওই তারিখে পৃথিবীর সর্বত্র দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়।তাই এই 21 শে মার্চ তারিখকে মহাবিষুব বলা হয়। এই 21 শে মার্চ  উত্তর গোলার্ধে বসন্ত ঋতু বিরাজ করে বলে  ওই দিনটিকে বসন্তকালীন বিষুব বলা হয়।

জলবিষুব কত তারিখে হয়

সূর্যের চারদিকে পরিক্রমণ করতে করতে 23 শে সেপ্টেম্বর তারিখে পৃথিবী তার কক্ষপথের এমন এক স্থানে অবস্থান করে যে দিন মধ্যাহ্ণ সূর্যরশ্মি ঠিক লম্ব ভাবে নিরক্ষরেখার উপর পড়ে এবং পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্য থেকে সমান দূরত্বে অবস্থান করে। এর ফলে ওই তারিখে পৃথিবীর সর্বত্র দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়। তাই এই 23 শে সেপ্টেম্বর তারিখকে জলবিষুব বলা হয়। এই 23 শে সেপ্টেম্বর উত্তর গোলার্ধে শরৎ ঋতু বিরাজ করে বলে  ওই দিনটিকে শরৎকালীন বিষুব বলা হয়।

মহাবিষুব ও জলবিষুব পার্থক্য, মহাবিষুব ও জলবিষুব এর পার্থক্য

মহাবিষুবজলবিষুব
বসন্ত বিষুব হল বসন্ত ঋতুর প্রথম দিন এবং এটি ঘটে যখন সূর্য নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ থেকে উত্তর গোলার্ধে চলে যায়।শরৎ বিষুব হল শরৎ ঋতুর প্রথম দিন এবং এটি ঘটে যখন সূর্য উত্তর থেকে দক্ষিণ গোলার্ধে চলে আসা বিষুব রেখা অতিক্রম করে।
উত্তর মেরু আবার সূর্যের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে। দিন এবং রাতের দৈর্ঘ্য প্রায় একই। বসন্ত বিষুব 20 মার্চের কাছাকাছি।উত্তর মেরু সূর্য থেকে দূরে কাত হতে শুরু করে। দিন এবং রাতের দৈর্ঘ্য প্রায় একই। শারদীয় বিষুব 22 সেপ্টেম্বরের কাছাকাছি।
বসন্ত বিষুব-এর পশ নাম হল ভার্নাল ইকুইনক্স।শরৎ বিষুব এর পশ নাম হল শরৎ বিষুব।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | ক্লাস 10 ভূগোল প্রশ্ন উত্তর প্রথম অধ্যায়

Q1. সিয়াচেন হিমবাহ কোন পর্বতে অবস্থিত

Ans – সিয়াচেন হিমবাহ কারাকোরাম পর্বতে অবস্থিত।

Q2. পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশীয় হিমবাহের নাম কি

Ans – পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশীয় হিমবাহের নাম : ল্যাম্বার্ট।

Q3. হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ হল

Ans – করি হ্রদ

Q4. উত্তর গোলার্ধে কোন দিনটি মহাবিষুব নামে পরিচিত

Ans – সৌরপাদ বিন্দুটি দক্ষিণ গোলার্ধ ছেড়ে উত্তর গোলার্ধে প্রবেশ করার সময় যখন এটি নিরক্ষ রেখা অতিক্রম করে তখন মহাবিষুব বিষুব ঘটে যার অন্য নাম মার্চ বিষুব তথা উত্তরাভিমুখী বিষুব।

এটি মার্চ মাসের ১৯ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে যে কোন দিন ঘটে।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।