- জীবনস্মৃতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিষয়সংক্ষেপ
- জীবনস্মৃতি গুরুত্বপূর্ন অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
- জীবনস্মৃতি গ্রন্থে উল্লেখিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা জীবন এর শিক্ষক ও শিক্ষার বিষয়ের তালিকা
- জীবনস্মৃতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর pdf
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী pdf download
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি গ্রন্থের গুরুত্বপূর্ন বড় প্রশ্ন উত্তর
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি গ্রন্থে আধনিক ভারতের ইতিহাস রচনায়,“জীবন স্মৃতি”-র গুরুত্ব আলােচনা করাে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি গ্রন্থে ঠাকুরবাড়ির ও তখনকার দিনের বিভিন্ন বড়ােবাড়ির ছেলেদের বিবরণ:-
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি গ্রন্থে কলকাতা শহরের বিবরণ:-
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি গ্রন্থে স্বাদেশিকতা:-
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি গ্রন্থের উপসংহার
জীবনস্মৃতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিষয়সংক্ষেপ
স্মৃতির পটে জীবনের ছবি কে আঁকিয়া যায় জানি না। কিন্তু যেই আঁকুক সে ছবিই আঁকে। অর্থাৎ যাহাকিছু ঘটিতেছে, তাহার অবিকল নকল রাখিবার জন্য সে তুলি হাতে বসিয়া নাই। সে আপনার অভিরুচি-অনুসারে কত কী বাদ দেয়, কত কী রাখে। কত বড়োকে ছোটো করে, ছোটোকে বড়ো করিয়া তোলে। সে আগের জিনিসকে পাছে ও পাছের জিনিসকে আগে সাজাইতে কিছুমাত্র দ্বিধা করে না। বস্তুত তাহার কাজই ছবি আঁকা, ইতিহাস লেখা নয়।
এইরূপে জীবনের বাইরের দিকে ঘটনার ধারা চলিয়াছে, আর ভিতরের দিকে সঙ্গে সঙ্গে ছবি আঁকা চলিতেছে। দুয়ের মধ্যে যোগ আছে অথচ দু’ই ঠিক এক নহে।
আমাদের ভিতরের এই চিত্রপটের দিকে ভালো করিয়া তাকাইবার আমাদের অবসর থাকে না। ক্ষণে ক্ষণে ইহার এক-একটা অংশের দিকে আমরা দৃষ্টিপাত করি। কিন্তু ইহার অধিকাংশই অন্ধকারে অগোচরে পড়িয়া থাকে। যে-চিত্রকর অনবরত আঁকিতেছে, সে যে কেন আঁকিতেছে, তাহার আঁকা যখন শেষ হইবে তখন এই ছবিগুলি যে কোন্ চিত্রশালায় টাঙাইয়া রাখা হইবে, তাহা কে বলিতে পারে।
কয়েক বৎসর পূর্বে একদিন কেহ আমাকে আমার জীবনের ঘটনা জিজ্ঞাসা করাতে, একবার এই ছবির ঘরে খবর লইতে গিয়াছিলাম। মনে করিয়াছিলাম, জীবনবৃত্তান্তের দুই-চারিটা মোটামুটি উপকরণ সংগ্রহ করিয়া ক্ষান্ত হইব। কিন্তু দ্বার খুলিয়া দেখিতে পাইলাম, জীবনের স্মৃতি জীবনের ইতিহাস নহে– তাহা কোন্-এক অদৃশ্য চিত্রকরের স্বহস্তের রচনা। তাহাতে নানা জায়গায় যে নানা রঙ পড়িয়াছে, তাহা বাহিরের প্রতিবিম্ব নহে– সে-রঙ তাহার নিজের ভাণ্ডারের, সে-রঙ তাহাকে নিজের রসে গুলিয়া লইতে হইয়াছে– সুতরাং, পটের উপর যে-ছাপ পড়িয়াছে তাহা আদালতে সাক্ষ্য দিবার কাজে লাগিবে না।
এই স্মৃতির ভাণ্ডারে অত্যন্ত যথাযথরূপে ইতিহাস সংগ্রহের চেষ্টা ব্যর্থ হইতে পারে কিন্তু ছবি দেখার একটা নেশা আছে, সেই নেশা আমাকে পাইয়া বসিল। যখন পথিক যে-পথটাতে চলিতেছে বা যে-পান্থশালায় বাস করিতেছে, তখন সে-পথ বা সে পান্থশালা তাহার কাছে ছবি নহে– তখন তাহা অত্যন্ত বেশি প্রয়োজনীয় এবং অত্যন্ত অধিক প্রত্যক্ষ। যখন প্রয়োজন চুকিয়াছে, যখন পথিক তাহা পার হইয়া আসিয়াছে তখনই তাহা ছবি হইয়া দেখা দেয়। জীবনের প্রভাতে যে-সকল শহর এবং মাঠ, নদী এবং পাহাড়ের ভিতর দিয়া চলিতে হইয়াছে, অপরাহ্নে বিশ্রামশালায় প্রবেশের পূর্বে যখন তাহার দিকে ফিরিয়া তাকানো যায়, তখন আসন্ন দিবাবসানের আলোকে সমস্তটা ছবি হইয়া চোখে পড়ে। পিছন ফিরিয়া সেই ছবি দেখার অবসর যখন ঘটিল, সেদিকে একবার যখন তাকাইলাম, তখন তাহাতেই মন নিবিষ্ট হইয়া গেল।
মনের মধ্যে যে-ঔৎসুক্য জন্মিল তাহা কি কেবলমাত্র নিজের অতীতজীবনের প্রতি স্বাভাবিক মমত্বজনিত। অবশ্য, মমতা কিছু না থাকিয়া যায় না, কিন্তু ছবি বলিয়াই ছবিরও একটা আকর্ষণ আছে। উত্তররামচরিতের প্রথম অঙ্কে সীতার চিত্তবিনোদনের জন্য লক্ষ্ণণ যে-ছবিগুলি তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত করিয়াছিলেন, তাহাদের সঙ্গে সীতার জীবনের যোগ ছিল বলিয়াই যে তাহারা মনোহর, তাহা সম্পূর্ণ সত্য নহে।
এই স্মৃতির মধ্যে এমন কিছুই নাই যাহা চিরস্মরণীয় করিয়া রাখিবার যোগ্য। কিন্তু বিষয়ের মর্যাদার উপরেই যে সাহিত্যের নির্ভর তাহা নহে; যাহা ভালো করিয়া অনুভব করিয়াছি, তাহাকে অনুভবগম্য করিয়া তুলিতে পারিলেই মানুষের কাছে তাহার আদর আছে। নিজের স্মৃতির মধ্যে যাহা চিত্ররূপে ফুটিয়া উঠিয়াছে তাহাকে কথার মধ্যে ফুটাইতে পারিলেই, তাহা সাহিত্যে স্থান পাইবার যোগ্য।
এই স্মৃতিচিত্রগুলিও সেইরূপ সাহিত্যের সামগ্রী। ইহাকে জীবনবৃত্তান্ত লিখিবার চেষ্টা হিসাবে গণ্য করিলে ভুল করা হইবে। সে-হিসাবে এ লেখা নিতান্ত অসম্পূর্ণ এবং অনাবশ্যক।
জীবনস্মৃতি গুরুত্বপূর্ন অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
জীবনস্মৃতি কবে রচিত হয়?
উঃ – জুলাই, ১৯১২।
জীবনস্মৃতি’ প্রথম প্রকাশিত হয়
উঃ – ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় ভাদ্র, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ থেকে শ্রাবণ, ১৩১৯ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত।
গ্রন্থের প্রথম সংস্করণের ছবি ছিল
উঃ – ২৪টি।
গ্রন্থের ছবিগুলি অঙ্কন করেছেন
উঃ – গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
তৎকালীন ‘প্রবাসী’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন
উঃ – চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁকে এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ জানাচ্ছেন –
“তোমার হাতেই জীবন সমর্পন করা গেল। রামানন্দবাবুকে লিখেছি। কিন্তু অজিতের (অজিতকুমার চক্রবর্ত্তী) প্রবন্ধ শেষ হয়ে গেলে এটা আরম্ভ হলে ভালো হয়। লেখকের তখন জীবন সম্বন্ধে ঔৎসুক্য একটু বাড়তে পারে।”
(১৩ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৮)
‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থে মোট পর্ব সংখ্যা
উঃ – ৪৫টি।
গ্রন্থের পর্ব
উঃ – প্রথম – সূচনা, শেষ পর্ব – কড়ি ও কোমল।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
জীবনস্মৃতি গ্রন্থে উল্লেখিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা জীবন এর শিক্ষক ও শিক্ষার বিষয়ের তালিকা
রবীন্দ্রনাথের শিক্ষক | পড়ানোর বিষয় |
---|---|
মধুসূদন বাচস্পতি | নর্ম্যাল স্কুলে বাংলা, বাৎসরিক পরীক্ষার পরীক্ষক |
নীলকমল ঘোষাল | চারুপাঠ, বস্তুবিচার, প্রাণীবৃত্তান্ত, মেঘনাদবধকাব্য |
সীতানাথ দত্ত | প্রাকৃতিক বিজ্ঞান |
অঘোরবাবু | ইংরাজি |
বিষ্ণু | গান |
হেরম্ব তত্ত্বরত্ন | মুগ্ধবোধ |
সাতকড়ি দত্ত | কবিতা সম্পূর্ণ করতে বলেছিলেন |
গোবিন্দবাবু | নর্ম্যাল স্কুলের সুপারিন্টেডেন্ট |
অক্ষয় দত্ত | পদার্থবিদ্যা |
জ্ঞানচন্দ্র ভট্টাচার্য্য | কুমারসম্ভব ও ম্যাকবেথের বাংলা তর্জমা |
রামসর্বস্ব পন্ডিত | সংস্কৃত |
জীবনস্মৃতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর pdf
কথা হে কাহিনী প্রকাশনী কর্তৃক বাংলাভাষা অন্বেষা, ক্লাস 9 ও 10
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী pdf download
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি গ্রন্থের গুরুত্বপূর্ন বড় প্রশ্ন উত্তর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি গ্রন্থে আধনিক ভারতের ইতিহাস রচনায়,“জীবন স্মৃতি”-র গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উ: আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবন স্মৃতি’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই গ্রন্থটি প্রবাসী পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল । পরে তা ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। নিজের কথা বলার জন্যই রবীন্দ্রনাথ তাঁর আত্মচরিত লেখেন ।
তবুও তার থেকে আমারা তখনকার দিনের অনেক কথাই জানতে পারি –
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি গ্রন্থে ঠাকুরবাড়ির ও তখনকার দিনের বিভিন্ন বড়ােবাড়ির ছেলেদের বিবরণ:-
উঃ – এই স্মৃতি কথা থেকে ঠাকুর বাড়ি সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া যায়।
ঠাকুর বাড়ির পরিবেশ কেমন ছিল তার খুঁটিনাটি বিবরণ তিনি দিয়েছেন। কীভাবে তার সাহিত্য প্রতিভা বিকশিত হয়েছিল, সেকথাও তিনি বলেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনা ও অভিজ্ঞতা এবং সাহিত্য সংক্রান্ত নানা তথ্য ছড়িয়ে রয়েছে জীবন স্মৃতির পাতায় পাতায়। জীবন স্মৃতি’ গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রথম জীবনের স্মৃতির সূত্র ধরে বাল্য জীবনের ঘরােয়া পরিবেশ ও সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন।
তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় রবীন্দ্রনাথের মতাে অভিজাত পরিবারের সন্তানরা, বাল্যকালে মা- বাবা – গুরুজনদের প্রতিপালক রূপে পাননি। তারা মূলত পরিচালকদের তত্ত্বাবধানে বড়াে হয়ে উঠতেন। অন্যান্য ঘরের কাজে নিযুক্ত লােকজন ছােটদের ওপর কর্তৃত্ব ফলাত |
ঠাকুর বাড়ির এই বিষয়টি তৎকালীন সমাজের সম্ভ্রান্ত পরিবারের বৈশিষ্ট্যকেই সূচিত করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি গ্রন্থে কলকাতা শহরের বিবরণ:-
উঃ – জীবন স্মৃতি ‘ গ্রন্থে শহর কলকাতার বাবু শৌখিনতার পাশাপাশি পল্লী স্বভাবের চিহ্নও ধরা পড়ে কলকাতার
বিভিন্ন উৎসবের কথাও রয়েছে এই গ্রন্থে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি গ্রন্থে স্বাদেশিকতা:-
উঃ – রাজনীতির কথা সেভাবে কবি লেখেননি। কিন্তু স্বল্প পরিসরে ‘স্বাদেশিকতা’ নিয়ে সরস ভাষায় যে অনবদ্য
রচনা তিনি লিখেছেন, তা ইতিহাসের যেকোনাে ছাত্রকে মুগ্ধ না করে পারে না | স্বাদেশীকতার আবেগ নিয়ে এত সুন্দর ও মজার বর্ণনা আর কোথাও পাওয়া যায় না |
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি গ্রন্থের উপসংহার
উঃ – ইতিহাসের উপাদান হিসেবে জীবন স্মৃতি যে ভবিষ্যৎ ঐতিহাসিকরা কতটা কাজে লাগাবে, তা নিয়ে
বিশ্বকবি নিজেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তার ভাষায় “ এই স্মৃতি ভাণ্ডারে অত্যন্ত যথাযথভাবে ইতিহাস সংগ্রহের চেষ্টা ব্যর্থ হইতে পারে …” কিন্তু যতটুকু পাওয়া যায়, তার মূল্যও ইতিহাসের ছাত্রদের কাছে অপরিসীম।
জীবনস্মৃতি প্রশ্ন উত্তর
জীবনস্মৃতি কবে রচিত হয়?
উঃ – জুলাই, ১৯১২।