- বান্দুং সম্মেলন কি
- বান্দুং সম্মেলন এর গুরুত্ব
- বান্দুং সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হয়, কোন বছর বান্দুং সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়
- বান্দুং সম্মেলনে গৃহীত দুটি নীতির উল্লেখ করো
- বান্দুং সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা
- বান্দুং সম্মেলনে চীনের প্রতিনিধি কে ছিলেন
- বান্দুং সম্মেলনের সাফল্য
- বান্দুং সম্মেলনের ব্যর্থতা
- FAQ | বান্দুং সম্মেলন
বান্দুং সম্মেলন কি
১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ থেকে ২৪শে এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে ‘বান্দুং সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয় । জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের পক্ষে এই ‘বান্দুং সম্মেলন’ এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । এই সম্মেলনে এশিয়া ও আফ্রিকার ২৯টি দেশের প্রতিনিধিরা মিলিতভাবে উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করেছিলেন । ভারত, চিন, মিশর, যুগোশ্লাভিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ বান্দুং সম্মেলনে নেতৃত্বদান করে ।
এই সম্মেলনে ভারতের উদ্যোগে বিশ্বশান্তি ও সহযোগিতা সংক্রান্ত দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গৃহীত হয় । বান্দুং সম্মেলনের প্রধান উদ্যোক্তাদের মধ্যে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ছিলেন অন্যতম । পরবর্তী কালে আমেরিকা ও রাশিয়া দুটি রাষ্ট্র গোষ্ঠীর মধ্যে ঠান্ডা লড়াই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে, শক্তিধর দেশগুলির মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বেড়েছে, দিকে দিকে সামরিক শক্তিজোট গঠনের প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে । এইসব রকম পরিস্থিতিতে ভারত এ সবের বিরুদ্ধে নির্জোট আন্দোলনকে আরও সংহত ও শক্তিশালী করার চেষ্টায় সক্রিয় হয়েছে ।
বান্দুং সম্মেলন এর গুরুত্ব
- ১) বান্দুং সম্মেলন থেকেই জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ।
- (২) এই সম্মেলনে :-
- (i) বিভিন্ন দেশে ঔপনিবেশিক শাসন ও বর্ণ-বৈষম্য নীতির অবসান,
- (ii) ঠান্ডা লড়াই জনিত উত্তেজনা প্রশমন,
- (iii) নয়া উপনিবেশবাদ ও বর্ণ বৈষম্যবাদের বিরোধিতা,
- (iv) তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা,
- (v) বিশ্বরাজনীতিতে ভারসাম্য রক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হয় ।
বান্দুং সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হয়, কোন বছর বান্দুং সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়
বান্দুং হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার একটি শহর।
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের পক্ষে এই ‘বান্দুং সম্মেলন’ এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ থেকে ২৪শে এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে ‘বান্দুং সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয় ।
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ ছিল ১৯৫৫ সালের বান্দুং সম্মেলন।
ওই সসম্মেলনে ১০ টি নীতি গৃহীত হয়।
বান্দুং সম্মেলনে গৃহীত দুটি নীতির উল্লেখ করো
১৯৫৫ সালের এপ্রিল মাসে এশিয়ার ১৪টি দেশ নিজেদের মধ্যে ঐক্য সুদৃঢ়করণে সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে শপথ গ্রহণ করে। এরপর ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ২৯টি (৫টি পৃষ্ঠপােষক দেশ, যথা- বার্মা, সিংহল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান এবং এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ২৪ টি দেশ) দেশের প্রতিনিধিরা একজোট হয়ে এক জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে মিলিত হন (১৯৫৫ খ্রি., ১৮-২৪ এপ্রিল) যা বান্দুং সম্মেলন নামে পরিচিত।
বান্দুং সম্মেলনে উদ্দেশ্য
বান্দুং সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সােভিয়েত মার্কিন ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা।
বান্দুং সম্মেলনে গৃহীত দশশীল নীতি
বান্দুং সম্মেলনে জওহরলাল নেহরুর পঞ্চশীল নীতি দশশীল নীতিতে পরিণত হয়। মনে করা হয় যে, এখানে গৃহীত ওই দশটি নীতিই বিশ্বে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিল। ওই দশটি নীতি হল:
- [i] রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক মর্যাদা জ্ঞাপন।
- [ii] কোনাে দেশের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আগ্রাসনমূলক ক্রিয়াকলাপ বা আগ্রাসনের ভীতি প্রদর্শন বা বলপ্রয়ােগ না করা।
- [iii] কোনাে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা।
- [iv] সমমর্যাদা ও পারস্পরিক সহযােগিতা প্রদান করা।
- [v] গণতন্ত্র ও সাম্যবাদ নির্বিশেষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আপস, আলাপ-আলােচনা বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমস্ত বিরােধের মীমাংসা করা।
- [vi] মানবাধিকার ও জাতিপুঞ্জের সনদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।
- [vii] সমস্ত বর্ণ ও জাতির সমান অধিকারের স্বীকৃতি।
- [viii] সমস্ত জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন।
- [ix] কোনাে বৃহৎ শক্তির সামরিক স্বার্থরক্ষা করা থেকে বিরত হওয়া।
- [x] ন্যায়নীতি ও আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন।
বান্দুং সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা
১৯৫৫ সালের এপ্রিল মাসে এশিয়ার ১৪ টি দেশ নিজেদের মধ্যে ঐক্য সুদৃঢ়করণে সাম্রাজ্যবাদ , উপনিবেশবাদ , বর্ণবৈষম্য প্রথার বিরুদ্ধে শপথ গ্রহণ করে । এরপর ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ২৯ টি দেশের প্রতিনিধিরা একজোট হয়ে এক জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে মিলিত হন ( ১৯৫৫ খ্রি. ১৮ ২৬ এপ্রিল ) যা বান্দুং সম্মেলননামে পরিচিত ।
এই সম্মেলনটির মূল উদ্যোক্তা ছিল ইন্দোনেশিয়া , বার্মা , পাকিস্তান , সিলন ( শ্রীলঙ্কা ) , ভারত । এই সম্মেলনের কার্যনির্বাহক ছিলেন রাসেল আব্দুলগানি ( ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ) । এই সম্মেলনের উদ্যোক্তা ও মধ্যমণি ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলি শস্ত্রো মিদযােযো ।
বান্দুং সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশ
- আফগানিস্তানের রাজ্য
- বার্মার ইউনিয়ন
- কম্বোডিয়ার রাজ্য
- সিলনের আধিপত্য
- গণপ্রজাতন্ত্রী চীন
- সাইপ্রাস
- মিশর প্রজাতন্ত্র
- ইথিওপিয়ান সাম্রাজ্য
- গোল্ড কোস্ট
- ভারত প্রজাতন্ত্র
- ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্র
- ইরানের ইম্পেরিয়াল স্টেট
- ইরাক রাজ্য
- জাপান
- জর্ডানের হাশেমাইট কিংডম
- লাওস রাজ্য
- লেবানিজ প্রজাতন্ত্র
- লাইবেরিয়া
- লিবিয়া রাজ্য
- নেপাল রাজ্য
- পাকিস্তানের আধিপত্য
- ফিলিপাইন প্রজাতন্ত্র
- সৌদি আরবের রাজ্য
- সিরিয়ান প্রজাতন্ত্র
- সুদান
- থাইল্যান্ডের রাজ্য
- তুরস্ক প্রজাতন্ত্র
- ভিয়েতনাম রাজ্য (দক্ষিণ)
- ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (উত্তর)
- ইয়েমেনের মুতাওয়াক্কিলিট কিংডম
বান্দুং সম্মেলনে চীনের প্রতিনিধি কে ছিলেন
বান্দুং সম্মেলনে চীনের প্রতিনিধি ছিলেন, চৌ – এন – লাই।
চৌ এন-লাই ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তিনি অক্টোবর, ১৯৪৯ থেকে জানুয়ারি, ১৯৭৬ পর্যন্ত দেশমাতৃকার সেবা করে যান। অবিসংবাদিত নেতা মাও সে তুংয়ের অধীনে তিনি কাজ করেন ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতায় আরোহণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এছাড়াও, বৈদেশিক নীতি পুণর্গঠনসহ চীনা অর্থনৈতিক উত্তরণে সবিশেষ অবদান রাখেন।
বান্দুং সম্মেলনের সাফল্য
- [i] এই সম্মেলনে যােগদানকারী ২৯টি দেশ পরস্পরের সাথে পরিচিত হবার সুযােগ পায়।
- [ii] এই সম্মেলনে আফ্রো-এশীয় দেশগুলি নিজেদের মতগুলি একে অপরকে জানানাের, বােঝানাের সুযােগ পায়।
- [iii] এই সম্মেলনে জওহরলালের গৌরবজনক ভূমিকা, মিশরের গামাল আবদেল নাসেরের ভূমিকা এবং ইন্দোনেশিয় সুকর্ণর ইতিবাচক ভূমিকার ফলে জাতীয় নেতারূপে তাঁদের মর্যাদা বাড়ে।
- [iv] এই সম্মেলনে যােগদানকারী সদস্য রাষ্ট্রগুলি জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্যনীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায়।
- [v] এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া দেশগুলি একে অপরকে সহযােগিতা করার সুযােগ পায়।
বান্দুং সম্মেলনের ব্যর্থতা
- [i] বিশ্বশান্তি নিয়ে এই সম্মেলনে আলােচনা হলেও এ ব্যাপারে কোনাে নতুন পথের সন্ধান মেলেনি।
- [ii] বিশ্বরাজনীতির সমস্যাগুলির কোনাে স্থায়ী সমাধান হয়নি।
- [iii] এই সম্মেলন থেকে কোনাে আন্তর্জাতিক স্থায়ী সংগঠন প্রতিষ্ঠার আভাস মেলেনি।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | বান্দুং সম্মেলন
Q1. বান্দুং সম্মেলন কী
Ans – বান্দুং সম্মেলন কি বান্দুং সম্মেলন ১৯৫৫ সালের এপ্রিল মাসে এশিয়ার ১৪ টি দেশ নিজেদের মধ্যে ঐক্য সুদৃঢ়করণে সাম্রাজ্যবাদ , উপনিবেশবাদ , বর্ণবৈষম্য প্রথার বিরুদ্ধে শপথ গ্রহণ করে । এরপর ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ২৯ টি দেশের প্রতিনিধিরা একজোট হয়ে এক জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে মিলিত হন ( ১৯৫৫ খ্রি. ১৮ ২৬ এপ্রিল ) যা বান্দুং সম্মেলন নামে পরিচিত ।
Q2. বান্দুং সম্মেলনে গৃহীত নীতির সংখ্যা কত?
Ans – জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ ছিল ১৯৫৫ সালের বান্দুং সম্মেলন। ওই সসম্মেলনে ১০ টি নীতি গৃহীত হয়।
Q3. বান্দুং সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রধান নেতাদের নাম কি
Ans – চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন-লাই, ভারতের জওহরলাল নেহেরু, বার্মার উ নু, মিশরের রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি সুকর্ণো এবং লাইবেরিয়া, সুদান, গোল্ড কোস্ট, জর্ডান, ইরান, সিলন, নেপালের নেতারা।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।