- প্রাচীন ভারতে নারী শিক্ষার বর্ণনা দাও, প্রাচীন ভারতে নারী শিক্ষার বিবরণ দাও
- প্রাচীন ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রাচীন যুগের শিক্ষা ব্যবস্থা
- প্রাচীন ভারতের গণিত চর্চা ও জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে লেখ
- প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের গুরুত্ব
- প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে সাহিত্যিক উপাদানের গুরুত্ব
- প্রাচীন প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য
- প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান pdf
- প্রাচীন ভারতের ইতিহাস বই
- FAQ | প্রাচীন
প্রাচীন ভারতে নারী শিক্ষার বর্ণনা দাও, প্রাচীন ভারতে নারী শিক্ষার বিবরণ দাও
প্রাচীন ভারতে নারীর স্থান খুব একটা সম্মানজনক ছিল না। সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে রাখা হত মাটির ওপর আর শিশুপুত্রকে তুলে ধরা হত। প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায় বিভিন্ন যুগের সমাজে নারীর মর্যাদার উন্নতি বা অবনতি যাই ঘটুক না কেন, প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন যুগে ভারতীয় নারীর শিক্ষাগ্রহণের বিষয়টি মােটামুটিভাবে অব্যাহত ছিল। বৈদিক যুগ থেকে শুরু করে পরবর্তী দীর্ঘ সময়ের ভারতের নারীশিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
1] ঋগবৈদিক যুগ
ঋগ্বৈদিক যুগে নারীশিক্ষারও যথেষ্ট সুযােগ ছিল। ধর্মচর্চা, চরিত্রগঠন, ব্যক্তিত্বের বিকাশ প্রভৃতি ছিল এই যুগের শিক্ষার উদ্দেশ্য। এযুগে মমতা, ঘােষা, লােপামুদ্রা, বিশ্ববারা, বিশাখা প্রমুখ বিদুষী নারীর কথা জানা যায়। এযুগের নারীরা বেদের অনেক স্তোত্রও রচনা করেছিলেন।
[2] পরবর্তী বৈদিকযুগ
সামগ্রিকভাবে পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর মর্যাদা হ্রাস পেলেও নারীশিক্ষা ভালােভাবেই চালু ছিল। এযুগে কোনাে কোনাে নারী উচ্চশিক্ষায় অগ্রণী ছিলেন। এযুগের যে সকল নারী বিবাহের আগে পর্যন্ত বিদ্যাচর্চা করতেন, তাদের সদ্যোদ্বাহা এবং যারা আজীবন অবিবাহিত থেকে ধর্ম ও দর্শন। চর্চা করে জীবন কাটিয়ে দিতেন, তাঁদের ‘ব্রহ্মবাদিনী বলা হত। এ যুগের বিখ্যাত বিদুষী নারী ছিলেন গার্গী, মৈত্রেয়ী প্রমুখ।
[3] মহাকাব্য ও প্রতিবাদী ধর্মের যুগ
মহাকাব্যের যুগে নারীর মর্যাদা হ্রাস পেলেও এযুগের বহু নারী বিদ্যাচর্চা করতেন। মহাভারতে দ্রৌপদীকে ‘পণ্ডিতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এযুগের অনেক নারী সামরিক শিক্ষাগ্রহণ করতেন। বিনয়পিটকে বৌদ্ধ ভিক্ষুণীদের অক্ষরজ্ঞান অর্জনকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। এযুগের নারীরা সংস্কৃত কাব্য ও নাটকও রচনা করেছেন। ভিক্ষুণীদের রচিত সংগীত ‘থেরীগাথা গ্রন্থে সংকলিত আছে। চন্দনা, জয়ন্তী প্রমুখ ছিলেন এযুগের উচ্চশিক্ষিতা নারী।
[4] মৌর্যযুগ
মৌর্যযুগে শিক্ষিত নারীরা রাজকার্যেও অংশ নিতেন। সমকালীন সংস্কৃত সাহিত্যে এমন বহু নারীর উল্লেখ আছে যারা লিখতে, পড়তে ও সংগীত রচনা করতে পারতেন। কোনাে কোনাে নারী চিত্রশিল্পেও দক্ষ ছিলেন।
[5] মৌর্য-পরবর্তী যুগ
মৌর্য-পরবর্তী যুগে অনেক মহিলা উচ্চশিক্ষা লাভ করতেন। পাণিনি বলেছেন যে, এই সময় নারীরা বেদ অধ্যয়ন করতেন। কাত্যায়ণ তাঁর কার্তিক গ্রন্থে অধ্যাপিকা বােঝাতে উপাধ্যায়া বা ‘উপাধ্যায়ী” শব্দ ব্যবহার করেছেন। এই সময়ে অনেক অভিজাত মহিলা বৈদিক স্তোত্র, সংস্কৃত কাব্য ও নাটক রচনা করতেন।
[6] গুপ্তযুগ
বিভিন্ন সাহিত্য থেকে গুপ্তযুগের নারীরা, ইতিহাস ও কাব্যচর্চা করত বলে সমকালীন সাহিত্য থেকে জানা যায়। শাসম্ত্রজ্ঞান এযুগের নারীর বােধবুদ্ধিকে তীক্ষ করত বলে ব্যাৎসায়ন উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, আদর্শ পত্নীকে সুশিক্ষিতা হতে হবে এবং তাঁকে সাংসারিক আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখতে হবে। গুপ্তযুগে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কন্যা প্রভাবতী গুপ্তার মতাে কাশ্মীর, উড়িষ্যা ও অন্ত্রের নারীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও প্রশাসনিক কার্য পরিচালনা করতেন। অবশ্য এযুগে সাধারণ দরিদ্র নারীদের শিক্ষার সুযােগ বিশেষ ছিল না।
[7] হর্ষবর্ধনের আমল
হর্ষবর্ধনের আমলে চিত্রকলা, নৃত্য, সংগীত প্রভৃতি শিক্ষার প্রচলন ছিল। হর্ষবর্ধনের ভগ্নি রাজ্যশ্রী নিয়মিত সংগীত, নৃত্য ও অন্যান্য কলার চর্চা করতেন বলে বানভট্ট উল্লেখ করেছেন। নারীরা সাধারণত পিতৃগৃহেই শিক্ষালাভ করত।
উপসংহার: ঋগবৈদিক যুগে নারীরা যে মর্যাদার অধিকারী ছিলেন, তা পরবর্তী বিভিন্ন যুগে বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছিল। নারীসমাজে শিক্ষাগ্রহণের ধারা অব্যহত থাকলেও মর্যাদায় তারা পুরুষের সমকক্ষ হতে পারেনি। তা ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ নারীরা বিশেষত দরিদ্র ঘরের নারীরা শিক্ষাগ্রহণের সুযােগ থেকে বঞ্চিতই থেকে গিয়েছিল।
প্রাচীন ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রাচীন যুগের শিক্ষা ব্যবস্থা
আমাদের প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা বিশ্বের অন্যতম গৌরবময় ও সমৃদ্ধ সভ্যতা। পৃথিবীর বহু দেশে যখন বর্বরতার যুগ চলছিল, সেই সময়েও আমাদের ভারতীয় সভ্যতা তুঙ্গে।
এর প্রধান কারণ শিক্ষা। আমাদের পূর্বপুরুষেরা শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করেছেন। শিক্ষার মাধ্যমেই জীবনের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। ভারতবর্ষের এই পবিত্র ভূমিতে বেদ ও পুরাণ রচিত হয়েছে এবং এ সবই সম্ভব হয়েছে শিক্ষার কারণে। একজন মানুষের জন্য বাতাস, জল ও খাদ্য যতটা প্রয়োজনীয়, শিক্ষাও ততটাই প্রয়োজনীয়। শিক্ষা ছাড়া মানুষ পশুর মতো।
অর্থাৎ জ্ঞান হলো মানুষের একটি বিশেষ রূপ, জ্ঞান হলো গোপন সম্পদ। জ্ঞান ভোগদাতা, খ্যাতিদাতা ও কল্যাণদাতা। বিদ্যা শিক্ষকদের শিক্ষিকা। বিদ্যা হল দেবতা। রাজাদের কাছে জ্ঞানের পূজা হয়, অর্থের নয়। জ্ঞানহীন মানুষ পশু।
নিঃসন্দেহে যে কোনো সভ্য সমাজের জন্য শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা শুধু জীবিকা অর্জনের জন্য নয়, স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাগত সনদ নিয়ে সরকারি বা বেসরকারি চাকরি পাওয়া যায় ঠিক, কিন্তু শিক্ষার মূল লক্ষ্য হল একজন মানুষের সমগ্র জীবনকে বিকশিত করা। আমাদের প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায় শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মানুষের শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য শিক্ষা অপরিহার্য। একজন শিক্ষিত মানুষের পক্ষে কোন কিছুই অসম্ভব নয়।
অর্থাৎ জ্ঞান, যুক্তি, বিজ্ঞান, স্মৃতিশক্তি, তৎপরতা ও কর্মদক্ষতা এই ছয়টি গুণ যার আছে তার পক্ষে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। বিদ্যা বা শিক্ষা সেই আলোর উৎস, যা মানুষের জীবনকে আলোকিত করে। প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল শ্রেষ্ঠ শিক্ষা ব্যবস্থা।
প্রাচীন ভারতের শিক্ষায় এমন কতকগুলি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় যা বর্তমানকালের শিক্ষাব্যবস্থায় যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ এবং গ্রহণযােগ্য। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল一
(১) লক্ষ্য: প্রাচীন ভারতের শিক্ষার লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীর সৎ চরিত্র গঠন এবং ব্যক্তিত্বের যথাযথ বিকাশসাধন এই লক্ষ্যটি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
(২) শৃঙ্খলা: প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই কঠোরভাবে নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতেন, যাকে আমরা আত্মশৃঙ্খলা বলে থাকি। বর্তমান মনােবিজ্ঞানীগণ এই আত্মশৃঙ্খলার ওপর গুরুত্ব আরােপ করেন।
(৩) পটভূমি: নগরজীবনের কোলাহল থেকে মুক্ত, উদার প্রকৃতির কোলে আশ্রমকেন্দ্রিক প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান বর্তমানে বিশেষ প্রয়ােজন।
(৪) ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক: প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থায় গুরু-শিষ্যের মধ্যে মধুর সম্পর্ক বর্তমানে বিশেষভাবে প্রয়ােজন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব ছাত্রবিক্ষোভের অন্যতম কারণ বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর প্রতিরোধের। অন্যতম উপায় হল ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে শ্রদ্ধা ও ভালােবাসার সম্পর্ক গড়ে তােলা।
(৫) আবাসিক শিক্ষা: প্রাচীন ভারতের শিক্ষা ছিল প্রধানত আবাসিক। তার ফলে শিক্ষার্থীরা আত্মনির্ভর, দায়িত্ববান, কর্তব্যপরায়ণ, সময়নিষ্ঠ এবং শ্রমের প্রতি মর্যাদাশীল হয়ে উঠার সুযােগ পেত। বর্তমানে যার প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে কোনাে প্রশ্ন ওঠে না।
(৬) শিক্ষকের স্বাধীনতা: প্রাচীন ভারতে শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষকরা পাঠক্রম প্রণয়নে, শিক্ষাদানে এবং শিক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পেতেন। শিক্ষার উন্নয়নে এই ব্যবস্থা বর্তমানে বিশেষ জরুরি।
(৭) শিক্ষার সর্বজনীনতা: প্রাচীন বৌদ্ধ শিক্ষায় শিক্ষার দ্বার সমাজের সব শ্রেণির মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল। এই বৈশিষ্ট্যটি আধুনিক শিক্ষায় খুবই প্রয়ােজনীয়।
(৮) ছাত্রের যােগ্যতা নির্ধারণ: প্রাচীন ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শুধু যােগ্য শিক্ষার্থীরাই উচ্চশিক্ষার সুযােগসুবিধা ভােগ করত। মেধাই ছিল উচ্চশিক্ষার একমাত্র শর্ত। এই নীতি আজও সমানভাবে প্রযোজ্য।
(৯) আন্তর্জাতিক শিক্ষক-বিনিময়: প্রাচীন ভারতে উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলিতে শিক্ষক-বিনিময়ের ব্যবস্থা ছিল। শিক্ষার মান ও আন্তর্জাতিক বােঝাপড়ার জন্য বর্তমানে এটি বিশেষভাবে প্রয়ােজন।
(১০) রাজনৈতিক প্রভাব: প্রাচীন ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনাে প্রকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছিল না। শিক্ষার মর্যাদা রক্ষার জন্য এটি অবশ্যই অনুকরণযোগ্য।
প্রাচীন ভারতের গণিত চর্চা ও জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে লেখ
বিশ্বের গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যা কোষকে প্রাচীন ভারত নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছে।
প্রাচীন ভারতের গণিত চর্চা
গাণিতিক দিকটি সম্পর্কে প্রাচীন ভারতের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার ‘০’ (শূন্য) এবং ‘.’ (দশমিক)। ভারতেই প্রথম সংখ্যাবিজ্ঞানের নামকরণ আবিষ্কার করা হয়। ভারতের গণিতজ্ঞদের মতো বিশ্বের কোনো গণিতবিজ্ঞানী এই রূপ নামকরণ করতে পারেননি। যেমন ১ (এক), ১০ (দশ), ১০০ (শত), ১০০০ (সহস্র), অযুত (১০ ০০০), নিযুত (১০ ০০০০), প্রযুত (১ ০০০ ০০০), অর্বুদ (১০ ০০০ ০০০), নর্ব্যুদ (১০০ ০০০ ০০০), সমুদ্র (১০০০ ০০০ ০০০), মধ্যে (১০ ০০০ ০০০ ০০০), অন্ত (১০০ ০০০ ০০০ ০০০), পরার্থ (১ ০০০ ০০০ ০০০ ০০০)।
প্রাচীন ভারতের কয়েকজন বিখ্যাত গণিতজ্ঞ এবং গণিত ক্ষেত্রে তাঁদের অবদান (Mathematics in Ancient India)
১) মহর্ষি বৌধায়ন
বৃত্তের অঙ্ক আমরা সবাই করেছি। বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয় হোক বা বৃত্তের পরিধি নির্ণয়, গণনাতে π অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি π এর মান ২২/৭। কিন্তু জানেন কী আনুষ্ঠানিকভাবে π আবিষ্কারের আগে ভারতবর্ষের এক গণিতজ্ঞ (Mathematics in Ancient India) এটা সম্পর্কে ধারণা দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর বইতে। এই বিখ্যাত গনিতজ্ঞের নাম ছিল মহর্ষি বৌধায়ন। তাঁর লেখা বৌধায়ন সুল্বা সূত্র গ্রন্থে এসম্পর্কে তিনি বিস্তৃত ব্যাখ্যা করেছেন। মূলত জ্যামিতির উপরে লেখা এই বইতে তিনি অসংখ্য উপপাদ্য সংকলন করেছেন।
২) মহর্ষি আর্যভট্ট
মহর্ষি আর্যভট্ট প্রাচীন ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত গণিতবিদদের (Mathematics in Ancient India) মধ্যে একজন। ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহের নাম তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে “আর্যভট্ট” রাখা হয়।
আর্যভট্টের অন্যতম ভাষ্যকার প্রথম ভাস্করের ভাষ্য অনুযায়ী মহান এই গণিতজ্ঞের জন্ম হয়েছিল অশ্মকা নামের একটি জায়গায়। প্রাচীন বৌদ্ধ এবং হিন্দু রীতিতে এই জায়গাটিকে নর্মদা এবং গোদাবরী নদীর মধ্যবর্তী স্থানে দক্ষিণ গুজরাত এবং উত্তর মহারাষ্ট্রের আশেপাশের একটি জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
একাধারে আর্যভট্ট ছিলেন সুমহান গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিষী এবং একজন পদার্থবিজ্ঞানী। তাঁর আবিষ্কার এবং গবেষণা সমস্ত কিছু সংকলিত হয়ে রয়েছে “The Aryabhattiya” এই বইতে। এখানে লিপিবদ্ধ রয়েছে আধুনিক গণিতের বিভিন্ন তত্ত্ব, দশমিক পদ্ধতি, সংখ্যাতত্ত্ব, ত্রিকোণমিতি, জ্যামিতি এবং জ্যোতির্বিদ্যার বিভিন্ন বিষয়।
৩) মহর্ষি ব্রহ্মগুপ্ত
প্রাচীন ভারতের অন্যতম খ্যাতনামা গণিতজ্ঞ (Mathematics in Ancient India) ছিলেন মহর্ষি ব্রহ্মগুপ্ত। শূন্যের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তিনি লিপিবদ্ধ করে গেছেন। প্রাচীন ভারতের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম কেন্দ্র “astronomical observatory of Ujjain”-এর তিনিই ছিলেন প্রধান। সমগ্র জীবনে তিনি চারটি বই লিখেছিলেন, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং গণিতের বিভিন্ন তত্ত্ব নিয়ে। তার মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত বইটি হল ব্রহ্ম-ষ্পুত্র-সিদ্ধান্ত।
তিনি উল্লেখ করে গেছেন যে এক বছর মানে হল ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা ১২ মিনিট ৯ সেকেন্ড। প্রাচীন এই গণিতজ্ঞ গণনা করেছিলেন পৃথিবীর পরিধি। গণনায় মান এসেছিল ৩৬০০০ কিলোমিটার বা ২২,৫০০ মাইল। ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক সংখ্যা সম্পর্কেও তিনি ধারণা দিতে পেরেছিলেন।
৪) মহর্ষি দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য
মহর্ষি দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য একজন খ্যাতনামা প্রাচীন ভারতীয় গণিতজ্ঞ (Mathematics in Ancient India) এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন। যিনি ব্রহ্মগুপ্তের সংখ্যাতত্ত্বের উপর কাজ করেছিলেন। তাঁর কাজ সংকলিত আছে ছটি খন্ডে। এগুলি হল:-
- লীলাবতী- Mathematics
- বীজগণিত- Algebra
- গণিত অধ্যায়- Mathematical Astronomy
- গোল অধ্যায়- Sphere
- কর্ণকুটুহল- Calculation of Astronomical on dots
- ভাসানভাষ্য- সিদ্ধান্ত শিরোমণির উপর ভাস্করাচার্যের নিজের বক্তব্য লিপিবদ্ধ রয়েছে এই গ্রন্থে।
প্রাচীন ভারতের জ্যোতির্বিদ্যা
জ্যোতির্বিদ্যার প্রাচীনতম কিছু রূপ সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল (বা তারও আগে) থেকে সফলভাবে নির্ণয় করা যায়। বেদে কিছু মহাজাগতিক ধারণা উপস্থিত রয়েছে, যেমন মহাজাগতিক দেহগুলির গতিবিধি এবং বছরের ধারা। ঋগ্বেদ ভারতীয় সাহিত্যের প্রাচীনতম কিছু গ্রন্থের মধ্যে একটি। ঋগ্বেদ ১-৬৪-১১ এবং ৪৮ সময়কে ১২টি অংশ এবং ৩৬০টি স্পোক (দিন), এবং ভাগশেষ ৫ সহ একটি চাকা হিসাবে বর্ণনা করে। এটি সৌর পঞ্জিকারও উল্লেখ করে। অন্যান্য ঐতিহ্যের মতো, বিজ্ঞানের প্রথম দিকের ইতিহাসে জ্যোতির্বিদ্যা এবং ধর্মের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সঠিক সম্পাদনের জন্য স্থানিক ও অস্থায়ী প্রয়োজনীয়তার কারণে জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
প্রাচীন ভারতের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা
নাম | বর্ষ | অবদান |
---|---|---|
লগধ | খ্রিস্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দ | সবচেয়ে প্রাচীন জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত পাঠ বেদাঙ্গ জ্যোতিষে বেশ কিছু জ্যোতির্বিদ্যার বৈশিষ্ট্যের বিবরণ দেওয়া হয়েছে, যা সাধারণত সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণের জন্য প্রয়োগ করা হয়। বেদাঙ্গ জ্যোতিষ জ্যোতির্বিজ্ঞানের গণনা, পঞ্জিকা অধ্যয়ন এবং অভিজ্ঞতামূলক পর্যবেক্ষণের নিয়ম প্রতিষ্ঠা করে। যেহেতু ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত রচিত গ্রন্থগুলি মূলত ধর্মীয় রচনা ছিল, তাই বেদাঙ্গ জ্যোতিষের ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্রের সাথে সংযোগ রয়েছে এবং চন্দ্র মাস, সৌর মাস এবং চন্দ্র অধিমাসের দ্বারা তাদের সমন্বয় সহ সময় ও ঋতুগুলির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির বিবরণ রয়েছে। ঋতুকে যুগাংস (বা যুগের অংশ) হিসাবেও বর্ণনা করা হয়েছে। ত্রিপাঠি (২০০৮) মনে করেন যে ‘সেই সময়ে সাতাশটি নক্ষত্রমণ্ডল, গ্রহন, সাতটি গ্রহ এবং রাশিচক্রের বারোটি চিহ্নও পরিচিত ছিল।’ |
আর্যভট্ট | ৪৭৬-৫৫০ খ্রিস্টাব্দ | আর্যভট ছিলেন আর্যভটিয়া এবং আর্যভটসিদ্ধান্তের লেখক, যা হায়াশি (২০০৮) অনুসারে, “উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রধানত ছড়িয়েছিল এবং ইরানের সাসানীয় রাজবংশের (২২৪-৬৫১) মাধ্যমে ইসলামিক জ্যোতির্বিদ্যা বিকাশের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এর বিষয়বস্তু কিছু পরিমাণে বরাহমিহির (সমৃদ্ধশীল প্রায় ৫৫০ খ্রিস্টাব্দ), প্রথম ভাস্কর (সমৃদ্ধশীল প্রায় ৬২৯ খ্রিস্টাব্দ), ব্রহ্মগুপ্ত (৫৯৮-প্রায় ৬৬৫ খ্রিস্টাব্দ) এবং অন্যান্যদের রচনায় কিছু পরিমাণে সংরক্ষিত আছে। এটি প্রাচীনতম জ্যোতির্বিদ্যার একটি যা প্রতিটি দিনের শুরু মধ্যরাত্রি নির্ধারণ করে।” আর্যভট্ট স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে পৃথিবী তার অক্ষের চারপাশে ঘোরে, যার ফলে তারাগুলোকে আপাত পশ্চিম দিকে চলতে মনে হয়। তার বই, আর্যভট্টে, তিনি প্রস্তাব রেখেছেন যে পৃথিবী একটি গোলক, যার পরিধি ২৪,৮৩৫ মাইল (৩৯,৯৬৭ কিমি)। আর্যভট্ট আরো উল্লেখ করেছেন যে প্রতিফলিত সূর্যালোকই চাঁদের উজ্জ্বলতার কারণ। আর্যভট্টের অনুসারীরা দক্ষিণ ভারতে বিশেষভাবে শক্তিশালী ছিল, যেখানে পৃথিবীর আহ্নিক ঘূর্ণনের নীতিগুলি, অন্যান্যদের মতো, অনুসরণ করা হয়েছিল এবং তাদের উপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি গৌণ কাজ করা হয়েছিল। |
ব্রহ্মগুপ্ত | ৫৯৮-৬৬৮ খ্রিস্টাব্দ | ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত (ব্রহ্মার সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত মতবাদ, ৬২৮ খ্রিস্টাব্দ) ভারতীয় গণিত এবং জ্যোতির্বিদ্যা উভয় বিষয় সম্পর্কে বলে। হায়াশি (২০০৮) লিখেছেন: “এটি বাগদাদে প্রায় ৭৭১ সালে আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল এবং ইসলামী গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যার উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল”। খন্ডখ্যাদ্যক (একটি খাবার বস্তু, ৬৬৫ খ্রিস্টাব্দ) গ্রন্থে ব্রহ্মগুপ্ত আর্যভট্টের মধ্যরাতে নতুন দিন শুরু হওয়ার ধারণাকে শক্তিশালী করেছিলেন। ব্রহ্মগুপ্ত একটি গ্রহের তাৎক্ষণিক গতিও গণনা করেছিলেন, প্যারালাক্সের জন্য সঠিক সমীকরণ দিয়েছেন এবং গ্রহনের গণনা সম্পর্কিত কিছু তথ্য দিয়েছেন। তার কাজগুলি আরব বিশ্বে গণিত ভিত্তিক জ্যোতির্বিদ্যার ভারতীয় ধারণার পরিচয় দেয়। এসবের সাথে তিনি তত্ত্ব দিয়েছিলেন যে ভর সহ সব বস্তুই পৃথিবীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। |
বরাহমিহির | ৫০৫ খ্রিস্টাব্দ | বরাহামিহির একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ ছিলেন যিনি ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা এবং গ্রীক, মিশরীয় এবং রোমান জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক নিয়ম অধ্যয়ন করেছিলেন। তাঁর পঞ্চসিদ্ধান্তিকা গ্রন্থটি বিভিন্ন জ্ঞান ব্যবস্থার সংকলন। |
প্রথম ভাস্কর | ৬২৯ খ্রিস্টাব্দ | তিনি মহাভাস্কর (ভাস্করের মহান গ্রন্থ), লঘুভাস্করিয়া (ভাস্করের ছোট বই) এবং আর্যভট্টীয়ভাষ্য (৬২৯ খ্রিস্টাব্দ) নামক জ্যোতির্বিজ্ঞানগ্রন্থ রচনা করেন। হায়াশি (২০০৮) লিখেছেন, ‘গ্রহের দ্রাঘিমাংশ, গ্রহের হেলিয়াকাল উদয় এবং অস্ত, গ্রহ ও নক্ষত্রের মধ্যে সংযোগ, সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ এবং চাঁদের পর্যায়গুলি ভাস্করের জ্যোতির্বিজ্ঞানগ্রন্থগুলোয় আলোচিত বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে’। প্রথম ভাস্করের রচনাগুলি ভটেশ্বর (৮৮০ খ্রিস্টাব্দ) দ্বারা অনুসরণ করা হয়েছিল, যিনি তাঁর ভটেশ্বরসিদ্ধান্তের আট অধ্যায়ে সরাসরি দ্রাঘিমাংশে প্যারালাক্স, বিষুব এবং গ্রহণের গতি এবং যে কোনও সময়ে সূর্যের চতুর্ভুজ নির্ধারণের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন। |
লল্লা | খ্রিস্টাব্দ অষ্টম শতক | শীষ্যধিবৃদ্ধিদা (যে গ্রন্থ ছাত্রদের বুদ্ধি প্রসারিত করে) এর লেখক, যা আর্যভট্টের বিভিন্ন অনুমান সংশোধন করে। শীষ্যধিবৃদ্ধিদা দুটি ভাগে বিভক্ত: গ্রহাধ্যায় এবং গোলাধ্যায়। গ্রহাধ্যায় (অধ্যায় ১-১৩) গ্রহের গণনা, সত্য গ্রহের নির্ণয়, পৃথিবীর প্রতিদিনের গতি সম্পর্কিত তিনটি সমস্যা, গ্রহন, গ্রহের উদয় ও অস্ত, চাঁদের বিভিন্ন চূড়া, গ্রহ এবং নাক্ষত্রিক সংযোগ, এবং সূর্য ও চাঁদের পরিপূরক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে। দ্বিতীয় অংশ গোলাধ্যায় (অধ্যায় ১৪-২২) গ্রহের গতি, জ্যোতির্বিদ্যার যন্ত্র, গোলকগুলির গ্রাফিক্যাল উপস্থাপনা নিয়ে কাজ করে এবং ত্রুটিযুক্ত নীতিগুলির সংশোধন এবং প্রত্যাখ্যানের উপর জোর দেয়। লল্লা তাঁর কাজের মাধ্যমে আর্যভট্ট, ব্রহ্মগুপ্ত প্রথম ভাস্কর-এর প্রভাব দেখান। তাঁর কাজগুলি পরবর্তীকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী শ্রীপতি, ভটেশ্বর এবং দ্বিতীয় ভাস্কর দ্বারা অনুসরণ করা হয়েছিল। লল্লা সিদ্ধান্ততিলক গ্রন্থও রচনা করেন। |
সতানন্দ | ১০৬৮-১০৯৯ খ্রিস্টাব্দ | ভাস্বতীর (১০৯৯) লেখক – যেটা নির্ভুলতার পরীক্ষা করতো। |
দ্বিতীয় ভাস্কর | ১১১৪ খ্রিস্টাব্দ | সিদ্ধান্তশিরোমণি (নির্ভুলতার প্রধান রত্ন) এবং করণকুতুহলা (জ্যোতির্বিদ্যার বিস্ময়ের গণনা) লিখেছেন এবং গ্রহের অবস্থান, সংযোগ, গ্রহন, মহাবিশ্ববিবরণ, ভূগোল, গণিত, এবং জ্যোতির্বিদ্যার যন্ত্র, যা উজ্জয়িনীর মানমন্দিরে (যেখানে তিনি প্রধান ছিলেন) তিনি তাঁর গবেষণায় ব্যবহার করেছিলেন, সম্পর্কে রিপোর্ট করেছেন। |
শ্রীপতি | ১০৪৫ খ্রিস্টাব্দ | শ্রীপতি ছিলেন একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ যিনি ব্রহ্মগুপ্ত স্কুল অনুসরণ করেছিলেন এবং বিশটি অধ্যায়ে সিদ্ধান্তশেখর (প্রতিষ্ঠিত মতবাদের শিখর) রচনা করেছিলেন, যার ফলে চাঁদের দ্বিতীয় অসমতা সহ বেশ কয়েকটি নতুন ধারণার প্রবর্তন হয়েছিল। |
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের গুরুত্ব
সাহিত্যিক উপাদান ছাড়াও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের সাহায্যে প্রাচীন ভারতের কথা জানা যায় । প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান গুলির মধ্যে লেখ গুলির স্থান সবার প্রথমে । সাহিত্যে পরিবর্তন ঘটে কিন্তু, লেখগুলি অপরিবর্তিত থেকে যায় । লেখার জন্য বিভিন্ন দ্রব্য যেমন- সোনা, তামা, লোহা, রুপা, ব্রোঞ্জ, পাথর ইত্যাদি ব্যবহার করা হত । সেগুলিতে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা যেমন – সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত, তেলেগু, তামিল, মালায়ালাম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছিল । বেশির ভাগ লেখতে ব্রাহ্মী বা খরোষ্ঠী লিপি ব্যবহার করা হয়েছে ।
প্রাচীন ভারতের লিপি
লেখ গুলিকে এবার দুভাগে ভাগ করা হয় – দেশি ও বিদেশি । দেশি লেখ গুলির মধ্যে মৌর্য সম্রাট অশোকের লেখগুলি শ্রেষ্ঠ । শিলাখন্ডে প্রাপ্ত লেখগুলিকে শিলালেখ, স্তম্ভগাত্রে পাওয়া লেখকে স্তম্ভগাত্রে আর গিরি গুহায় পাওয়া লেখকে গুহা লেখ বলা হয় । অশোক তাঁর লেখগুলিতে ব্রাহ্মী লিপির ব্যবহার করেছেন কিন্তু, উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে খরোষ্ঠী লিপি ব্যবহার দেখা যায় । এই লিপি গুলি থেকে অশোকের রাজ্য জয়, ধর্ম বিজয় নীতি, বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে জানা যায় । ১৮৩৭ সালে জেমস প্রিন্সেপ অশোকের লেখ পাঠোদ্ধার করেন ।
অশোকের পরবর্তী কালে লেখকে সরকারি ও বেসরকারি এই দুই ভাগ করা হয় । সরকারি লেখ গুলি আবার প্রশস্তি ও ভূমি দান এই দুই বিষয়ে । প্রশস্তি গুলির মধ্যে হরিসেনের এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে ভারতের রাজনৈতিক চিত্র ও সমুদ্র গুপ্তের বিবরণ পাওয়া যায় । গৌতমীপুত্র সাত কর্নির নাসিক প্রশস্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । এটি থেকে তাঁর রাজ্য জয়, সমাজ সংস্কারের কথা জানা যায় । এছাড়াও রুদ্র দামনের জুনাগড় শিলালেখ, গোয়ালিয়র প্রশস্তি থেকে রাজা ভোজ, আইহোল প্রশস্তি থেকে দ্বিতীয় পুলকেশীর কথা জানা যায় । উমাপতি ধর রচিত দেওপাড়া প্রশস্তি থেকে সেন রাজা বিজয় সেন, হাতিগুম্ফ লেখ থেকে কলিঙ্গরাজ খারবেলের কথা জানা যায় ।
বিদেশি লেখ গুলির মধ্যে এশিয়া মাইনরে আনাতোলিয়ায় প্রাপ্ত লেখ গুরুত্বপূর্ণ । এখানে আর্য রাজাদের সন্ধির উল্লেখ আছে । পারস্য সম্রাট প্রথম দারয়-বৌষ পারসেপোলিস ও নকস-ই-রুস্তম লেখ দুটি গুরুত্বপূর্ণ । দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কম্বোডিয়া, যবদ্বীপ, বোর্ণিয়, আন্নাম, চম্পার পূর্ব উপকূলে লেখ পাওয়া গেছে । ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইন্দোচিনের ইতিহাসে এগুলির গুরুত্ব অপরিসীম ।
প্রাচীন ভারতের মুদ্রা
মুদ্রা হল এক ধরনের ঐতিহাসিক উপাদান । প্রাচীন ভারতের ইতিহাস জানার জন্য মুদ্রা গুরুত্বপূর্ণ । সাহিত্য থেকে আমরা যে তথ্য পাই মুদ্রার দ্বারা তার সত্যতা যাচাই করা যায় । তারিখ যুক্ত মুদ্রা থেকে কাল পরম্পরা নির্মাণে ও তারিখ বিহীন মুদ্রা মুদ্রা থেকে রাজার নাম পাওয়া যায় । স্বর্ণমুদ্রা সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধির পরিচয় বহন করে আর, হীন মানের মুদ্রা সাম্রাজ্যের সঙ্কটের পরিচয় দেয় । মুদ্রার দেবদেবীর মূর্তি থেকে রাজার ধর্মের কথা জানা যায় । মুদ্রার সাহায্যে প্রায় ত্রিশ জন ব্যাকট্রীয় গ্রিক শাসকের কথা জানা যায় কিন্তু, অন্য তথ্য থেকে ৫-৬ জনের বেশি জানা যায় না । শক- কুষানদের ইতিহাস জানতে মুদ্রার গুরুত্ব অনেক বেশি । গুপ্তদের মুদ্রার মধ্যে বিশেষ করে সমুদ্র গুপ্তের মুদ্রাগুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য । বাংলায় সমতট-হরিকেল অঞ্চলে গুপ্ত পরবর্তী ও ইসলাম পূর্ববর্তী মুদ্রা পাওয়া গেছে ।
প্রাচীন ভারতের প্রত্নতত্ত্ব
খননকার্যের ফলে মাটির নীচ থেকে যে সব মন্দির, মূর্তি, পোড়া মাটির কাজ পাওয়া যায় সেগুলিকে বলা হয় স্থাপত্য-ভাস্কর্য প্রত্নতত্ত্ব । এগুলি আবার তিন ভাগে বিভক্ত – স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলা । দেবদেবীর মূর্তি, পশুর মূর্তি ও মানুষের মূর্তি ইত্যাদিকে ভাস্কর্য বলা হয় । ভাস্কর্য গুলি প্রধানত প্রাসাদ, মন্দিরের দেওয়ালে খোদাই করা হত । পাথর, ধাতু ও পোড়া মাটিতে এগুলি খোদাই করা হত । অজন্তায় ও ভীমবেটকায় গুহার দেওয়ালের ছবি গুলি আজও আমরা দেখতে পাই । প্রাচীন কালের সমাজ ও জীবন বোঝার জন্য এগুলির খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । ছবি গুলিতে শাসক ও সাধারণ মানুষের জীবনের নানা দিক দেখতা পাওয়া যায় ।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে সাহিত্যিক উপাদানের গুরুত্ব
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় সাহিত্যের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । সাহিত্যিক উপাদানগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে । যেমন— (১) দেশীয় সাহিত্য এবং (২) বৈদেশিক বিবরণী ।
দেশীয় সাহিত্য
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে দেশীয় সাহিত্যের ভান্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ । দেশীয় সাহিত্যগুলির মধ্যে বৈদিক যুগের সাহিত্য, মহাকাব্য, পুরাণ, স্মৃতিশাস্ত্র, ষড়দর্শন, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগ্রন্থ, সংস্কৃত সাহিত্য, জীবনচরিত, আঞ্চলিক ইতিহাস গ্রন্থ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।
বৈদিক সাহিত্য— খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের আগের ভারতীয় ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বৈদিক সাহিত্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। চতুর্বেদ অর্থাৎ ঋক, সম, যজুঃ ও অথর্ব বেদ থেকে আর্যদের সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি নানা বিষয় সম্পর্কে জানা যায় ।
মহাকাব্য—প্রাচীনকালের বিভিন্ন রাজকাহিনী, আর্যদের সঙ্গে অনার্যদের সংঘর্ষের কাহিনী, দক্ষিণ ভারতে আর্য সভ্যতার বিস্তার, সমকালীন সামাজিক অবস্থা প্রভৃতি জানার কাজে মহাকাব্যগুলি প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসাবে খুবই সহায়তা করে থাকে ।
বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগ্রন্থ — প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগ্রন্থগুলি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে স্বীকৃত। বৌদ্ধধর্ম গ্রন্থের মধ্যে ত্রিপিটক, জাতক, দীপবংশ, মহাবংশ, আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প, ললিতবিস্তার, বুদ্ধচরিত প্রভৃতি যথেষ্ট মূল্যবান গ্রন্থ । জৈন ধর্মগ্রন্থের মধ্যে দ্বাদশ অঙ্গ, জৈন কল্পসূত্র, জৈন ভগবতী সূত্র, আচারাঙ্গ সূত্র, পরিশিষ্ট পার্বণ, প্রবন্ধচিন্তামণি, প্রবন্ধকোষ প্রভৃতি সমকালীন ভারতের সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম, অর্থনীতি প্রভৃতি সম্পর্কে জানার উল্লেখযোগ্য উপাদান ।
আঞ্চলিক ইতিহাস গ্রন্থ — প্রাচীনকালে আঞ্চলিকভাবে লিখিত কিছু ইতিহাস গ্রন্থও পাওয়া যায়, যেগুলি ইতিহাসের উপাদান হিসেবে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য । এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল — কলহনের রাজতরঙ্গিনী। এতে কাশ্মীরের ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে । ভারতীয় সাহিত্যে এটিকেই প্রথম ইতিহাসের মর্যাদা দেওয়া হয় ।
বৈদেশিক বিবরণী
প্রাচীনকালে বিভিন্ন সময় ধর্ম, বাণিজ্য, ভ্রমণ, রাজ্যজয় প্রভৃতি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পর্যটক ভারতে এসেছিলেন এবং তাঁরা অনেকেই তাঁদের ভ্রমণবৃত্তান্ত লিখে গিয়েছেন যা আজকের দিনে ইতিহাস রচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর মধ্যে গ্রিক, রোমান, চৈনিক, তিব্বতীয়, আরবি প্রমুখ পর্যটকদের বিবরণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ।
গ্রিক বিবরণ— হেরোডোটাস কখনো ভারতে না এলেও তাঁর রচিত গ্রন্থ ‘Persae’ বা ইতিহাসমালা থেকে আমরা পারসিকগণ কর্তৃক উত্তর-পশ্চিম ভারত আক্রমণ ও অধিকারের কথা জানতে পারি। গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আমলে ভারতে এসেছিলেন । তাঁর লেখা ইন্ডিকা গ্রন্থটি সমকালীন ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল । এ ছাড়া, জনৈক গ্রিক নাবিকের লেখা ‘পেরিপ্লাস অফ দি এরিথ্রিয়ান সী’ বা ভারত মহাসাগরে ভ্রমণ, এবং টলেমির ভূগোল থেকে তৎকালীন ভারতের ব্যবসাবাণিজ্য সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায় ।
রোমান বিবরণ— রোমান লেখক কুইন্টাস কার্টিয়াসের রচনায় আলেকজান্ডারের ভারত অভিযানের বিবরণ পাওয়া যায় । প্লিনির ‘প্রাকৃতিক ইতিহাস’ থেকে সমকালীন সমুদ্রপথ এবং ভারতের সঙ্গে রোম ও গ্রিসের ব্যবসাবাণজ্য সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায় l
চৈনিক ও তিব্বতীয় বিবরণ— প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের প্রথম দিকের জন্য গ্রীক গ্রন্থসমূহের মত, চীনের ইতিবৃত্ত শেষের দিকের ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ । চৈনিক পর্যটক ফা-হিয়েন রচিত ফো-কুয়ো-কি একটি মূল্যবান গ্রন্থ ।
প্রাচীন প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য
সুদূর অতীত থেকে শুরু করে ইতিহাসের লিখিত উপাদানের প্রাপ্তি কালের পূর্ব পর্যন্ত সময়কালকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়। মানুষ প্রথম থেকে বিভিন্ন ধরণের পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করে খাদ্যের সংস্থান করত। তাই এই যুগকে প্রস্তর যুগ বলা হয়। বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ববিদগণ পাথরে নির্মিত হাতিয়ারের ক্রমোন্নতি লক্ষ্য করে প্রস্তর যুগ কে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন যথা –
- (১) প্রাচীন প্রস্তর যুগ
- (২) মধ্য প্রস্তর যুগ ও
- (৩) নব্য প্রস্তর যুগ।
নব্য প্রস্তর যুগের শেষে মানুষ ধাতুর ব্যবহার শুরু করে। তারা সর্বপ্রথম তামা এবং এর কিছুকাল পর ব্রোঞ্জ ধাতুর ব্যবহার শেখে। তাই নব্য প্রস্তর যুগের পরবর্তী সময় কাল হলো তাম্র প্রস্তর যুগ।
সময়কাল
প্রাচীন প্রস্তর যুগের শুরু হয় অন্তত ৫০ হাজার বছর আগে এবং শেষ হয় ১৫০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। পিকিং মানব , জাভা মানব , আটলানথ্রোপাস মানব (আলজেরিয়া ) , ওলডুভাই মানব ( তাঞ্জানিয়া ) , নিয়ানডারথাল মানব সহ বিভিন্ন শাখার হোমো ইরেক্টাস অর্থাৎ প্রায় মানুষেরা প্রাচীন প্রস্তর যুগের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
হাতিয়ার
এ যুগের মানুষ বিভিন্ন ধরনের পাথর ও হাড়ের তৈরি হাতিয়ার ব্যবহার করত এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস করত। দক্ষিণ আফ্রিকার অস্ট্রালোপিথেকাস নামক মানব গোষ্ঠী সর্বপ্রথম পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করতে শুরু করে। এই যুগের মানুষ প্রকৃতি থেকে যে আকারের পাথর পেত , কোন আকার গত পরিবর্তন না করে সেটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে পাথর ভেঙে ধারালো ও তীক্ষ্ণ করার চেষ্টা করত বলেও মনে করা হয়। তারা একই হাতিয়ার দিয়ে মাংস কাটা , কাঠ কাটা , শিকার করা প্রভৃতি বিভিন্ন কাজ করতো। প্রথম দিকে এই সাধারণ হাতিয়ার ” হাত কুঠার ” নামে পরিচিত। ক্রমে তারা পাথরের বল্লম , ছুরি , ছুঁচ , হারপুন প্রভৃতি হাতিয়ার তৈরি করতে শুরু করে। এ যুগের হাতিয়ার হত অমসৃণ এবং বৃহদাকার। এ যুগের শেষ দিকে মানুষ তির-ধনুক আবিষ্কার করে।
জীবিকা
পশু শিকার করে পশুর মাংস সংগ্রহ করাই ছিল প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষের প্রধান জীবিকা। প্রথমদিকে ছোট আকারের প্রাণী শিকার করলেও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তারা দলবদ্ধ হয়ে ম্যামথ , বাইসন , বলগা হরিণ প্রভৃতি বড় পশুশিকারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। এছাড়া এ যুগের মানুষ বন জঙ্গলে ঘুরে গাছের ফল সংগ্রহ করত , পাখির ডিম সংগ্রহ করত , মাছ ধরত – ইত্যাদি। আগুনের ব্যবহার জানতো না বলে তারা কাঁচা মাংস খেত।
বাসস্থান
আদিম মানুষ প্রাচীন প্রস্তর যুগের প্রথম দিকে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করত। পরবর্তীকালে তারা গুহার ভেতরে বা পাহাড়ের ঝুলন্ত পাথর এর নিচে বসবাস করত। আরো পরবর্তীকালে তারা গাছের ডালপালা , লতাপাতা , পশুর চামড়া প্রভৃতি দিয়ে তাদের আস্তানা তৈরি করত। তারা গাছের ছাল, চামড়া ধীরে ধীরে পরিধান করতে শেখে।
বরফ যুগের আগে মানুষ যেহেতু শুধুমাত্র খাদ্যসংগ্রাহক ছিল তাই তাদের কোনো স্থায়ী আশ্রয়স্থল ছিল না। খাদ্যসংগ্রহ ও পশুশিকারের জন্য তারা এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ঘুরে বেড়াত। এসময়ে আদিম মানব তৃণ অঞ্চল এবং জলাভূমির পাশে সাময়িকভাবে আশ্রয়স্থল গড়ে তুলেছিল।
কিন্তু বরফ যুগে অত্যন্ত শীতল প্রাকৃতিক পরিবেশে মানুষ উষ্ণ আশ্রয়স্থলের অনুসন্ধান শুরু করে। এসময় মানুষ পাহাড়ের গুহায় , পাহাড়ের ঝুলন্ত পাথরের ছায়ায় আশ্রয় নেয়। তারপর ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক আশ্রয়স্থলের পাশাপাশি পশুর চামড়া দিয়ে তৈরী তাঁবুতে বা লতাপাতা দিয়ে আচ্ছাদন তৈরী করে বসবাস শুরু করে।
সমাজজীবন ও সামাজিক কাঠামো
প্রাচীন প্রস্তর যুগ থেকেই মানুষ দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে শুরু করে। দলবদ্ধভাবে বসবাস ও জীবিকা নির্বাহের ফলে আদিম মানুষের মধ্যে সামাজিক ধারণা গড়ে উঠেছিল। কেউ কেউ মনে করেন যে , এই যুগে আদিম মানুষের সমাজে পরিবারও গড়ে উঠেছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে আদিম মানুষের দলবদ্ধতার প্রধানত দুটি কারণ ছিল –
- ম্যামথ , বাইসন , বলগা হরিণ – প্রভৃতি বড় আকারের প্রাণী শিকার করতে গেলে দলগত শক্তির প্রয়োজন ছিল।
- বসতি অঞ্চল হিংস্র পশুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে অস্ত্রশস্ত্রসহ দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে হতো।
মাতৃতান্ত্রিক সমাজ
এই যুগের সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। পরিবার ও সমাজ জীবনে পুরুষদের তুলনায় নারীদের প্রাধান্য বেশি ছিল। নারীদের এই প্রাধান্য অন্তত নব্য প্রস্তর যুগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষের সমাজ কাঠামো পর্যালোচনা করে মোটামুটি যে ধারণা পাওয়া যায় তা হল –
(১) ক্ল্যান — আদিম মানুষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত ছিল। এই দলগুলির নাম ছিল ক্ল্যান। অনেকের ধারণায় একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত বংশধরদের দলের নাম ছিল ক্ল্যান। ক্ল্যানগুলি একই রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। প্রতিটি ক্ল্যানে একজন করে দলনেতা থাকত। ক্ল্যানের সদস্যরা এই দলনেতার নির্দেশ মেনে চলত।
(২) ট্রাইব — বিভিন্ন ক্ল্যানের সমন্বয়ে পরবর্তী সময়ে গড়ে ওঠে অপেক্ষাকৃত বড় সামাজিক সংগঠন ট্রাইব। ট্রাইবের সদস্যদের আলাদা ভাষা ও বাসভূমি ছিল। তারা আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিকদের মতো ট্রাইবের গৌরবে গর্ববোধ করত।
সামাজিক বিধি নিয়ম
আদিম সমাজে কিছু সামাজিক বিধি নিয়ম ছিল যেমন –
(১) টোটেম — ক্ল্যানের সদস্যগণ তাদের কল্পিত পূর্বপুরুষদের পুজো করতো। সাধারণত ক্ল্যানগুলির এই ধর্মবিশ্বাস পরিচিত ছিল টোটেম নামে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , যে ক্ল্যানের সদস্যরা ক্যাঙারুকে তাদের পূর্বপুরুষ বলে মনে করত তাদের টোটেম ছিল ক্যাঙারু।
(২) টাবু — ক্ল্যানের সদস্যদের কিছু কঠোর নিয়ম বিধি মেনে চলতে হতো। এ সমস্ত নিয়মবিধির মধ্যে নিষিদ্ধ বিধি বা নিয়ম ছিল টাবু। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , যে ক্ল্যানের সদস্যদের টোটেম ছিল হরিণ ; তাদের হরিণের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল।
অস্তিত্বের নিদর্শন
আফ্রিকার গ্রে রিফট উপত্যকায় , ইউরোপের কিছু অঞ্চলে , ভারতের পাঞ্জাবের সোয়ান নদী উপত্যকা ও মাদ্রাজে প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষের অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। আশ্চর্যের বিষয় যে , এই যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মানুষগুলি আলাদা হলেও তাদের তৈরি হাতিয়ার গুলিতে আশ্চর্য মিল পাওয়া যায়।
গুহাচিত্র
আদিম মানুষ পশুর হাড় ও শিঙ দিয়ে গুহার দেওয়ালে ছবি আঁকতে শিখেছিল। তাদের এই গুহা চিত্রের প্রধান বিষয় ছিল শিকার। ফ্রান্স , স্পেন , ইতালি প্রভৃতি দেশে এ ধরনের গুহাচিত্রের নিদর্শন মিলেছে। গুহাচিত্রগুলির মধ্যে শিকারের দৃশ্য ছাড়াও ম্যামথের শুঁড় , হরিণের আঁকাবাঁকা শিঙ প্রভৃতি বিষয়ে অধিক প্রাধান্য পেত। গুহার অনেকটা ভিতরের দেয়ালের গায়ে গুহাচিত্র গুলি আঁকা হত। গুহার ভিতরে ছবি আঁকার কারণ হিসাবে ঐতিহাসিকেরা তাদের অলৌকিকতায় বিশ্বাসকে দায়ী করেছেন। পন্ডিতদের মতে, অদৃশ্য শক্তিকে তুষ্ট করে শিকারে সফল হওয়ার জন্যই তারা এভাবে ছবি আঁকতো।
ভাষার উদ্ভব
ঐতিহাসিকদের অনুমান পুরাতন প্রস্তর যুগেই ভাষার উদ্ভব ঘটেছিল। ক্ল্যানগুলির নিজস্ব ভাষা ছিল। একাধিক ক্ল্যানের আলাদা আলাদা ভাষার দরুন ভাষায় বৈচিত্র্য এসেছিল। দলবদ্ধভাবে শিকার যাত্রার সময় বা মনের বিভিন্ন ভাব প্রকাশের সময় বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দের ব্যবহার থেকেই আদিম ভাষার উদ্ভব ঘটে বলা চলে।
আগুনের ব্যবহার
পুরাতন পাথরের যুগে মানুষ নিজেরা কৃত্রিমভাবে আগুন জ্বালাতে শেখেনি। কিন্তু প্রাকৃতিক ভাবে বা দুর্বিপাকের কারণে জ্বলে ওঠা আগুনকে অনেকদিন ধরে জ্বালিয়ে রাখতে শিখিয়েছিল। এই আগুনকে গুহামুখে জ্বালিয়ে রেখে তারা হিংস্র জন্তু জানোয়ারদের তাড়ানোর ব্যবস্থা করতো। এছাড়া আগুন জ্বালিয়ে তারা তুষার যুগের শীতের তীব্রতা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পেরেছিল।
আরো পড়ুন: ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান pdf
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদানগুলিকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—সাহিত্যিক উপাদান এবং প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান।
ইতিহাসের চালিকাশক্তি হল তার উপাদান বা তথ্যসূত্র। ইতিহাসের মুখ্য বিষয় হল মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশের বিবরণ। কিন্তু ইতিহাসকার নিজের মনগড়া কাহিনী দিয়ে সেই ক্রমবিকাশকে উপস্থাপন করতে পারেন না। ঐতিহাসিককে অবশ্যই নির্ভরযোগ্য এক বা একাধিক তথ্য দ্বারা তাঁর বক্তব্যকে সমর্থিত বা প্রশমিত করতে হয়। এই তথ্য এবং তথ্যসূত্রকেই বলা হয় ইতিহাসের উপাদান বা প্রাণভোমরা। উপযুক্ত আকর তথ্য (Basic Source) দ্বারা সমর্থিত না-হলে অতীত সংক্রান্ত কোন মতামত বা সিদ্ধান্ত ইতিহাসচর্চারূপে গণ্য হয় না। এই কারণে প্রাচীনকালের ইতিহাস রচনার কাজ বেশ কঠিন।
কেবল প্রাচীন ভারত নয়, কমবেশী পৃথিবীর সব দেশ সম্পর্কেই এ-কথা সত্য। অথচ একাদশ শতকের বিশিষ্ট আরবী পণ্ডিত আলবেরুণী কেবল ভারতীয়দের ‘ইতিহাসবিমুখ’ বলে নিন্দা করেছেন। তাঁর সাথে সুর মিলিয়ে ইউরোপীয় ঐতিহাসিকদের কেউ কেউ ভারতীয়দের ইতিহাসবিমুখতার দৃষ্টান্ত তুলে উপহাস করেছেন। কর্নেল টড্ (Tod)-এর মতে, ভারতীয়দের ইতিহাস সংরক্ষণের কাজে উদাসীনতা হতাশাজনক। ফ্লীট (Fleet) একধাপ এগিয়ে লিখেছেন যে, প্রাচীন ভারতীয়দের মধ্যে ইতিহাসবোধের এতটাই অভাব ছিল যে, তারা বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস রচনা করতে ব্যর্থ ছিলেন। আবার ঐতিহাসিক কীথ (A. B. Keith)-এর অভিমত হল যে, খ্রিষ্টের জন্মের আগে ভারতে বড় আকারের কোন বিদেশী আক্রমণ ঘটেনি। তাই ভারতীয়দের মধ্যে এমন কোন জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটেনি, যা তাদের ইতিহাস রচনার কাজে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম।
একথা সত্য যে, প্রয়োজনের তুলনায় প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের তথ্যসূত্র অপ্রতুল। তথ্যের অভাবে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস পুনর্গঠনের কাজও বেশ শক্ত। কিন্তু এ-কারণে প্রাচীন ভারতীয় পণ্ডিতদের ইতিহাসবিমুখ বলা সঠিক নয়। বহু বিষয় যেগুলি তাঁদের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ও রক্ষণযোগ্য মনে হয়েছে সেগুলি তাঁরা অবশ্যই সংরক্ষণ করেছেন। তবে সন, তারিখ উল্লেখ সহ বিজ্ঞানসম্মতভাবে ইতিহাস রচনার অভিজ্ঞতা তখনও হয়নি, একথা সত্য। প্রাচীন রাজাদের সভাকবিরা রাজকীয় কীর্তিকাহিনী লিপিবদ্ধ করতেন। তাম্রশাসন বা প্রস্তর ফলকে রাজ্য জয়, শাসন বিধিসমূহ, ধর্মীয় অনুশাসন ইত্যাদি উৎকীর্ণ করা হত। রাজা-রাজড়ার জীবনকাহিনী বা ধর্মপুরুষদের উপদেশাবলী লিপিবদ্ধ করে প্রচার করার রেওয়াজ ছিল। এগুলিকে আক্ষরিক অর্থে ‘ইতিহাস’ হয়ত বলা যাবে না, কিন্তু এই সকল রচনার মধ্য থেকে ইতিহাসের বহু অজানা তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব।
ভারতে প্রাচীন ও আদি-মধ্যযুগের শেষ দিকে দ্বাদশ শতকে রচিত কল্হন-এর ‘রাজতরঙ্গিনী’ গ্রন্থকে ইতিহাসের মর্যাদা দেওয়া হয়। স্বভাবতই ঐ সময়কাল পর্যন্ত ভারতের ইতিহাস পুনর্গঠনের কাজ কিছুটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। আনুসাঙ্গিক নানা সূত্র থেকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার কাজ চলছে। এই সকল ঐতিহাসিক উৎসকে আমরা দু’টি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করতে পারি, যথা—অলিখিত উৎস ও লিখিত উৎস। বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক উৎসকে যেমন— স্থাপত্য, ভাস্কর্য, মৃৎপাত্র, ধ্বংসাবশেষ, লেখ, মুদ্রা ইত্যাদি অলিখিত উৎস বলে গণ্য করা হয়। এছাড়া চিত্রকলা, সম্প্রতি ব্যবহৃত কার্বন-১৪ পদ্ধতিকেও অলিখিত উৎসের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। অন্যদিকে আছে নানা চরিত্রের লিখিত উৎস। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে বহু ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ সাহিত্য পাওয়া যায় যেগুলিকে সাবধানতার সাথে বিশ্লেষণ করে প্রাচীনকালের বহু তথ্য আহরণ করা সম্ভব। অনুরূপভাবে অতি প্রাচীন কাল থেকে নানারকম কিংবদন্তী, লোককথা, চারণনীতি, লোক মুখে যুগ যুগ ধরে প্রচারিত উপাখ্যান ইত্যাদিকে ‘মৌখিক ইতিহাস’ হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়।
প্রত্নতাত্ত্বিক উৎস
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস পুনর্গঠনের অন্যতম প্রধান সমস্যা হল নির্দিষ্ট কালানুক্রমের ভিত্তিতে লিখিত ইতিহাসমূলক গ্রন্থের অভাব। এই কারণে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য ইতিহাসকারকে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের ওপর বেশী নির্ভর করতে হয়। বহু বিচিত্র প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান ইতিহাস পুনর্গঠনের কাজে সহায়তা করে। যেমন— উৎখনন থেকে প্রাপ্ত পুরাবস্তু, লেখ, মুদ্রা, কারিগরি ও শিল্পকর্ম ইত্যাদি।
ইতিহাসচর্চার কাজে পুরাবস্তু
প্রাচীন ইতিহাসচর্চার কাজে প্রত্নক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত পুরাবস্তুর গুরুত্ব অপরিসীম। মানবসভ্যতার আদিতম পর্বে মানুষের অক্ষর জ্ঞান বা লিখন পদ্ধতি জানা ছিল না। স্বভাবতই আদিম পর্বের লিখিত ইতিহাস ছিল না। সেই প্রাগৈতিহাসিক পর্বের সমাজজীবন বা সভ্যতার ক্রমবিকাশ জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপাদান হল পুরাতাত্ত্বিক সামগ্রী। বিচক্ষণ প্রত্নতাত্ত্বিক তাঁর অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি থেকে প্রাচীন সংস্কৃতির অস্তিত্ব বিশিষ্ট প্রত্নক্ষেত্রগুলি সনাক্ত করতে সক্ষম হন। অতঃপর ওপর-নিচে (Vertical) এবং পাশাপাশি (horizontal) উৎখননের সাহায্যে প্রাচীন সভ্যতার চরিত্র অনুধাবনের চেষ্টা করা হয়।
ওপর-নীচে খনন কার্য থেকে সভ্যতাটির সময় কাল ক্রমবিকাশের নানা পর্যায় ইত্যাদি নির্দিষ্ট করা সম্ভব হয়। আবার পাশাপাশি খনন কার্য চালিয়ে অনুরূপ সভ্যতার বিস্তৃতি, বসতবাড়ির বৈশিষ্ট্য, পথঘাট, জলনিকাশী বন্দোবস্ত ইত্যাদি জানা যায়। হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায়ের উৎখনন থেকেই অনুমিত হয় যে, সভ্যতাটির ক্রম-অবক্ষয় ঘটেছিল। আবার বর্তমান পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে শুরু করে ভারতের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল থেকে রাজস্থান, গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ অংশে এই সভ্যতার অস্তিত্বের তথ্যও খননকাল থেকে জানা সম্ভব হয়েছে।
হরপ্পীয় সিলমোহর পাওয়া গেছে মেসোপটেমিয়াতে। এগুলিকে উভয় সভ্যতার বাণিজ্য সম্পর্কের নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ক্ষুদ্রাকৃতি সিলমোহরগুলি ব্যক্তির নাম এবং বৃহদাকৃতি সিলমোহরগুলি বাণিজ্য পণ্যের নাম এবং গন্তব্যস্থলের নির্দেশিকা বলেও অনেকের অভিমত। হরপ্পীয় সিলমোহরে ধর্মভাবনার সূক্ষ্ম আভাষও পাওয়া যায়। তবে বাণিজ্যিক দলিল হিসেবে এদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
খননকার্য থেকে প্রাপ্ত ইমারতের আকৃতি থেকে সামাজিক স্তরভেদের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। উঁচু এলাকায় নির্মিত এবং বৃহদাকার অট্টালিকার পাশাপাশি দুই কক্ষ বিশিষ্ট ছোট ছোট গৃহের অস্তিত্ব হরপ্পীয় সমাজে ধনী ও মধ্যবিত্ত, সাধারণ মানুষের সহাবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। উৎখননে প্রাপ্ত অসংখ্য দেবী মাতৃকার মূর্তি থেকে সমাজে নারী উচ্চস্থান সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায়।
প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষ থেকেই খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ অব্দে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে হরপ্পার নগর সভ্যতা থেকে স্বতন্ত্র সভ্যতার অস্তিত্ব অনুমান করতে পারি। এই প্রত্নবস্তুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ‘চিত্রিত ধূসর মৃৎপাত্র’ (Painted Gray Ware)। এখানে মাটির থালা, বাটি, ঘটি এবং চাল, গম জাতীয় ফসল আবিষ্কৃত হয়েছে। সম্ভবত এই গ্রামীন সংস্কৃতির প্রধান জীবিকা ছিল কৃষিকাজ। ইঁটের ব্যবহার ছিল না। ঝুপড়ি নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত খুঁটির কাঠামো পাওয়া গেছে। আবার অত্রঞ্ঝিখেড়া অঞ্চলে বল্লম ও তীর জাতীয় লৌহ হাতিয়ার পাওয়া গেছে। ড. রামশরণ শর্মার মতে, চিত্রিত ধূসর মৃৎপাত্র ব্যবহারকারী মানুষ শিকার ও যুদ্ধ দ্বারা জীবন নির্বাহ করত। এখানে সামাজিক সাম্য ছিল বলেই ড. শর্মার অভিমত।
অনুরূপভাবে পূর্ব উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের নানাস্থানে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে মৃত্তিকা নির্মিত উজ্জ্বল কৃষ্ণবর্ণ পাত্র পাওয়া গেছে। প্রত্নতত্ত্বের ভাষায় এগুলিকে ‘উত্তরের উজ্জ্বল কৃষ্ণবর্ণ মৃৎপাত্র (Northern Black Polished Ware সংক্ষেপে NBPW) বলা হয়। ড. শর্মা এটিকেই উত্তর ভারতে প্রত্নতাত্ত্বিক যুগের সূচনা বলে চিহ্নিত করেছেন। এর পাশাপাশি সাধারণমানের লাল ও কালো রঙের পাত্রও ব্যবহৃত হত। সম্ভবত উজ্জ্বল মৃৎপাত্র ধনী লোকেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এই পর্বে গাঙ্গেয় উপত্যকায় নগরায়ণের সূচনা হয় বলে অনুমান। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ থেকে ২০০ অব্দের মধ্যে কৌশাম্বী, বৈশাখি, চম্পা প্রভৃতি অঞ্চলে ইঁটের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়েছিল।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস বই
ভারত কিংবা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস জানার জন্যে যে বই গুলো পড়তে পারেন :-
১। ভারতবর্ষ: স্বাধীনতার পরে (১৯৪৭-২০০০)
২। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাস (হার্ডকভার)
৩। ভারতীয় দর্শন (হার্ডকভার)
৪। ভারত বিভাগ এবং জিন্নাহর ভূমিকা (হার্ডকভার)
৫। ভারতীয় আর্য সাহিত্যের ইতিহাস (রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্ত)
৬। ভারতবর্ষের ইতিহাস (হার্ডকভার)
৭। ভারত স্বাধীন হলো (৩০ বছর মুদ্রণ নিষিদ্ধ অংশ সহ পূর্ণাঙ্গ)
৮। ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম: ভারত যখন স্বাধীন হলো (হার্ডকভার)
৯। ভারতবর্ষের প্রাগিতিহাস
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | প্রাচীন
Q1. কুরুক্ষেত্রের প্রাচীন নাম কি
Ans – কুরুক্ষেত্র স্থানটি ভারতের পূর্ব পাঞ্জাবের রাজ্য অম্বালা ও কর্ণাল জেলায় অবস্থিত। প্রাচীন উপনিষদগুলিতে এই কুরুক্ষেত্র স্থানটিকে দেবতাদের যজ্ঞস্থান বলে উল্লেখ করা আছে। এটি ধর্মক্ষেত্র নামেও পরিচিত। কুরুক্ষেত্র জায়গাটির প্রাচীন নাম ছিল সমন্ত পঞ্চক।
Q2. সবচেয়ে প্রাচীন গণমাধ্যম কোনটি, সবচেয়ে প্রাচীন গণমাধ্যমটি হল
Ans – জনগণের সঙ্গে যােগাযােগের বিভিন্ন মাধ্যমকে গণমাধ্যম বলে । সংবাদপত্র হল সবচেয়ে প্রাচীন গণমাধ্যম।
Q3. পৃথিবীর প্রাচীন খেলার নাম কি
Ans – পৃথীবির সবচেয়ে পুরনো খেলা মনে করা হয় দৌড়কে। এর মূল উৎপত্তি সম্পর্কে স্বভাবতই কেউ জানেনা। তবে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে সর্বপ্রথম এটি গ্রিসে ৭৭৬ খ্রিষ্টপূর্বে শুরু হয়।
Q4. প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার স্তর কয়টি
Ans – ভারতীয় আর্যভাষার তিনটি স্তর রয়েছে। এগুলি হল :- (১) প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা, (২) মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা, (৩) নব্য ভারতীয় আর্যভাষা।
Q5. পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম কোনটি
Ans – হিন্দুধর্মকে বিশ্বের প্রাচীনতম জীবিত ধর্ম হিসেবে দেখা হয়।
Q6. দিল্লির প্রাচীন নাম কি
Ans – দিল্লির প্রাচীন নাম ইন্দ্রপ্রস্থ।
Q7. কিউনিফর্ম কোন প্রাচীন দেশের লিপি ছিল
Ans – সুমেরীয় সভ্যতার লিপিকে বলে কিউনিফর্ম লিপি।
Q8. প্রাচীন ভারতের শিক্ষার লক্ষ্য কি ছিল
Ans – প্রাচীন ভারতের শিক্ষার লক্ষ্য ছিল আত্মােপলব্বি, চরিত্রগঠন এবং মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনে শিক্ষার্থীকে সহায়তা করা। প্রাচীন ভারতের শিক্ষার মূল লক্ষ্য ছিল নিজেকে জানার মধ্যে দিয়ে পরম সত্যকে জানা ও মুক্তি।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।