আমি সুভাষ বলছি কবিতা, আমি সুভাষ বলছি শৈলেশ দে, আমি সুভাষ বলছি কবিতা lyrics
তোমার পাথরে দিয়েছি মালা
এত মালা, এত ফুল, তুমিই ঢাকা পড়ে গেছ
তুমি পাথর না হলে রাগ করতে
ছাপ্পান্ন বছর আগের এক মধ্যরাতে
এলগিন রোডের তিন তলার ঘরে আলো জ্বলছিল
চাদর গায়ের এক ছায়ামূর্তি পায়চারি করছিল অবিরাম
বাইরের রাস্তায় ইংরেজ পুলিশের চর
সতর্ক সজাগ চোখে দেখছিল
তার সব সতর্কতাকে বুদ্ধু বানিয়ে
তুমি তখন অন্ধকার চিরে ছুটে চলেছ আলোর পথে
দেশের মানুষ, কাকপক্ষী কেউ টের পায়নি।
তুমি চলে যাবার পর
ছাপ্পান্নটা শীত, বর্ষা, গ্রীষ্ম উধাও, তুমিও
সেই থেকে প্রত্যেক জানুয়ারিতে
পৃথিবীর এপাড়া, ও পাড়া সব মাটিতে
তোমার অনশ্বর পায়ের ছাপ।
সব রাইফেলে তোমার বুকের বারুদ
সব কুচকাওয়াজে তোমার সেনার ছন্দ
পরশ পাথরের মত স্বাধীনতাকে খুঁজেছে
তোমার অন্তরে লুকিয়ে থাকা খ্যাপা।
তোমার গন্থব্য ছিল স্বাধীনতা
তোমার পথ ছিল স্বাধীনতা,
তোমার স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতা
তোমার প্রেম ছিল স্বাধীনতা।
তুমি রক্ত চেয়েছিলে স্বাধীনতার জন্য,
তুমি তাই পাথর
যারা স্বাধীনতার আড়ালে চেয়েছিল গদি,
চেয়েছিল সিংহাসন
ইংরেজের ছেড়ে জাওয়া লুটের রাজ্যপাট,
তারা রইল সুখে।
ভারতবর্ষের টাকায় তাদের সুখ,
তোমার নয়
ভারতবর্ষের অফিসে, আদালতে তাদের ছবি,
তোমার নয়
ভারতবর্ষের সংবিধানে তাদের সই-সাবুদ,
তোমার নয়।
ইংরেজ গরীব মানুষকে পায়র নীচে রাখত
আমরা বড়লোকদের মাথায় করে রেখেছি
স্মাগলার কিংবা ডাকাতকে জোড় হাতে
সভাপতির আসনে আহ্বান করেছি।
ইংরেজ এদেশের ধন সম্পত্তি লুট করত
আমরা দেশটাকে বেচে দিচ্ছি।
ইংরেজ দিয়েছে চাবুক, লাঠি, গুলি
আমরা দিয়েছি মাস্তান, মাফিয়া, নেতা আর বুলি
ইংরেজ দিয়েছে কালাপানি, সেলুলার জেল
আমরা দিয়েছি টিভিতে সুপারহিট মোকাবিলা
আর আইনসভায় আয়ারাম, গয়ারামের খেল।
ছাপ্পান্ন বছর আগের এক মধ্যরাতে
পরাধীন এই দেশ ছেড়ে তুমি চলে গিয়াছিলে
স্বাধীন এক স্বদেশে ফিরে আসার স্বপ্ন নিয়ে,
তুমি ফিরে আসনি
স্বাধীনতা এসেছে,
তার কাঁধে ঝুলি ভরে নিয়ে এসেছে
ভোট নামক রাজস্যূয় যজ্ঞ
গণতন্ত্র নামক চিরায়ত মাত্স্যন্যায়
প্রগতি নামক লোক-ঠকানো স্ট্যাটিসটিক্স
সংহতি নামক বিস্ফোরণের চুরমার
ঐতিহ্য নামক মন্দির-মসজিদের ঝগড়া
আর আসমুদ্র হিমাচল ভরিয়ে দেওয়া
ভাষণ, ভাষণ আর ভাষণ।
ছাপ্পান্ন বছর ধরে তুমি পাথর হয়ে আছ
ছাপ্পান্ন বছর ধরে ভারতবর্ষ
অধীর অপেক্ষায় কান পেতে আছে,
ইথার-তরঙ্গে কবে হঠাৎ শোনা যাবে
স্বাধীনতার নিজস্ব কণ্ঠস্বর, আমি সুভাষ বলছি।
আমি সুভাষ বলছি কবিতার বিষয়বস্তু
স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে দেখতে স্বাধীনতাকে আকন্ঠ ভালোবেসে তিনি স্বাধীনতার কাছে পৌঁছতে চেয়েছিলেন। শুধুমাত্র রক্ত চেয়েছিলেন তিনি, অথচ ১৯৪৭’র পরে দেখি ক্ষমতা ও আসনের লোভে আকীর্ণ ভারতবর্ষকে। ‘পথের দাবী’তে অপূর্বকে ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাসেও অকারণে তিনবার ঘুম ভাঙিয়ে জেরা করার পরেও তার প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছিল -সে তো ইউরোপিয়ান নয়। তখন ব্রিটিশরা আমাদের পায়ের তলায় রাখত আর এখন আমরা ধনী ও ক্ষমতাবানদের মাথায় তুলে রাখি। অবস্থা আর অবস্থানের খুব একটা তফাত হয়েছে কি?নেতাজী ফিরে আসেননি, কিন্তু বহু অপেক্ষার রক্তাঝরা রাতের অবসানে স্বাধীনতা এসেছে।আসমুদ্রহিমাচল জুড়ে রাজনৈতিক দলাদলির ভাষণে স্থিমিত শোনায় নেতাজীর ডাক- ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।’ তবুও, স্বাধীনতার উত্তরাধিকার অলক্ষ্য, নিরবয়ব।নৈরাজ্যের মধ্যেও তা লুকিয়ে অপেক্ষা করে উপযুক্ত সুযোগের, ছড়িয়ে যায় আগুনের মতো।
তাই, নেতাজীর জন্মদিনে দেশকে ভালবাসার, সাধ্যমতো কিছু করার অঙ্গীকার করো। জেনো, ২৩শে জানুয়ারী প্রতিটি স্মরণসভায় তেরঙ্গা পতাকার আড়ালে তিনি আছেন, নীরবে শুনছেন ভারতের নাগরিকদের শপথ। তোমরাও একবার চোখ বুজে কান পেতে শোনো- অলক্ষ্যে শোনা যাবে তার দৃপ্ত কন্ঠ-
আমি সুভাষ বলছি।
“কোনও একটা চিন্তনের জন্য একজন মৃত্যুবরণ করতে পারেন। কিন্তু সেই চিন্তনের মৃত্যু হয় না। সেই চিন্তন একজনের মৃত্যুর পর হাজার জনের মধ্যে ছড়িয়ে যায়।”
আমি সুভাষ বলছি কবিতার প্রশ্ন উত্তর
আমি সুভাষ বলছি কবিতার কবি শৈলেশ দে সাহিত্য জীবন
বহুরূপী ছদ্মনামে শৈলেশ দে লিখেছেন সামাজিক নাটক, গল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা। আকাশবাণী কলকাতাতে নিয়মিত ভাটিয়ালী ও পল্লিগীতির অনুষ্ঠান করেছেন তিনি। বাংলা ছাড়া ভারতের অন্যান্য ভাষায় তার রচিত কাহিনী মঞ্চে ও যাত্রায় পরিবেশিত হয়।
পাশাপাশি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে তার লেখনী ও সম্পাদনা চিরস্মরণীয়। কখনো কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন না কিন্তু বহু বিপ্লবীর সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক ছিল। বিপ্লবী ও সুলেখক ভূপেন্দ্র কিশোর রক্ষিতরায়ের সংস্পর্শে এসে বিপ্লবী ইতিহাস নিয়ে লেখালিখির শুরু। ১৯৬৫ সালে রক্ত দিয়ে গড়া বইটির মাধ্যমে।
তার সাথে কাজী নজরুল ইসলামের যোগাযোগ ছিল। নজরুলের চিকিৎসার ভার নিয়েছিলেন লেখক শৈলেশ। তার রচিত বৃহৎ গ্রন্থ আমি সুভাষ বলছি নেতাজীর প্রামাণ্য জীবনী হিসাবে আজো সমাদৃত। যা হিন্দি ও উড়িয়া ভাষাতেও অনূদিত হয়েছে। উত্তমকুমার অভিনীত তিন অধ্যায় ও মৃনাল সেন পরিচালিত কানামাছি (১৯৬১) ও মোহনবাগানের মেয়ে চলচ্চিত্র তার রচিত কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত হয়।
তার রচিত জনপ্রিয় নাটক জয় মা কালী বোর্ডিং অবলম্বনে নির্মিত সিনেমা জিও পাগলা। তাঁর স্ত্রী পারুল দে রেডিওতে নাটকের শিল্পী ছিলেন।
আমি সুভাষ বলছি কবিতার কবি শৈলেশ দে রচিত গ্রন্থ
- রক্ত দিয়ে গড়া
- রক্তের অক্ষরে
- আমি সুভাষ বলছি
- ক্ষমা নেই
- ওরা আকাশে জাগাতো ঝড়
- শপথ নিলাম
- বিনয় বাদল দীনেশ
- ফাঁসি মঞ্চ থেকে
- গান্ধীজি ও নেতাজী
- দিনান্তের আলো
- মৃত্যুর চেয়ে বড়
- যেন ভুলে না যাই
- মোহনবাগানের মেয়ে
- জ্যোতি বসু জবাব দাও
আমি সুভাষ বলছি pdf
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | আমি সুভাষ বলছি
Q1. আমি সুভাষ বলছি কবিতার কবি কে
Ans – আমি সুভাষ বলছি কবিতার কবি শৈলেশ দে।
Q2. আমি সুভাষ বলছি কবিতার কবি শৈলেশ দে প্রারম্ভিক জীবন
Ans – শৈলেশ দে অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সংগীত শিল্পী রূপে আত্মপ্রকাশ তার। ঢাকায় থাকাকালীন মিটফোর্ড স্কুলে টেনিস খেলারত বিপ্লবী বিনয় বসুকে ছোটবেলায় দেখেন তিনি। তার সাথে ছোটবেলায় আলাপ হয় বিনয় বসুর। তার বন্ধু ছিলেন অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশ বিভাগের পরে কলকাতায় আসেন তিনি। ছোটখাটো অনেক কাজ, ব্যবসা, দোকানদারীও করেছেন জীবনযাপনের জন্য।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।