বেলগ্রেড সম্মেলন
- আয়ােজন: ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ সেপ্টেম্বর যুগােশ্লাভিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে নবম নির্জোট সম্মেলন বসে। এই সম্মেলন চলে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
- অংশগ্রহণকারী দেশ ও নেতৃবৃন্দ: নবম নির্জোট সম্মেলনে ১০২টি সদস্য রাষ্ট্র অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়াও অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে এই সম্মেলনে যােগ দেয় পােল্যান্ড, হাঙ্গেরি, কানাডা, জার্মানি, বুলগেরিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ে প্রভৃতি দেশ। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি এই সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। তিনি নির্জোটভুক্ত দেশগুলির সামনে জাতিপুঞ্জের নেতৃত্বে এক পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক তহবিল ‘প্ল্যানেট প্রােটেকশন ফান্ড’ (PPF) গঠনের প্রস্তাব রাখেন।
- আলােচিত বিষয়: এই সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক সমস্যা এবং সেগুলির সমাধানের উপায় সম্পর্কে আলােচনা করা হয়। মানবাধিকার রক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ, নিরস্ত্রীকরণ প্রভৃতি বিষয়ের ওপর আলােচনা করা হয়।
বেলগ্রেড সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হয়, বেলগ্রেড সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়
১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ৬ই সেপ্টেম্বর যুগোস্লাভিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে জোট নিরপেক্ষ দেশগুলির ‘বেলগ্রেড সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয় । আফগানিস্তান, আলজিরিয়া, কিউবা, সাইপ্রাস, ইথিওপিয়া, ঘানা, ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন, ব্রহ্মদেশ, কাম্বোডিয়া, সিংহল, কঙ্গো প্রভৃতি ২৫টি দেশ এই সম্মেলনে যোগদান করে । এছাড়া পরিদর্শক রূপে ব্রাজিল, বলিভিয়া, ইকুয়েডার এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিল ।
ভারতের জওহরলাল নেহরু, মিশরের নাসের, যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটো ও শ্রীলঙ্কার সিরিমাভো বন্দরনায়েক প্রমুখ উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্র নেতাগণ ও নেত্রীগণ এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন । এই সম্মেলনে আণবিক যুদ্ধ, উপনিবেশবাদ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং শান্তির সপক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় ।
১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে মে জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি তাসখন্দ ঘোষণায় বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় পঞ্চশীল নীতির প্রতি গভীর আস্থার কথা ব্যক্ত করেন । লালবাহাদুর শাস্ত্রীর পর শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধিও ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে সগৌরবে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের এক বিশেষ অধিবেশনে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র ও শোষণমুক্ত এক নতুন বিশ্ব গঠনের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের সকল সদস্যের প্রতি আবেদন জানান ।
ইন্দিরা গান্ধীর পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই ভারতের নির্জোট আন্দোলনের ধারাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান । তাঁর চেষ্টায় ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে অক্টোবর মাসে ক্রেমলিন প্রাসাদে এক যুক্ত ঘোষণায় সোভিয়েত রাশিয়ার তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট লিওনিড ব্রেজনেভ পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় পরিচালিত নির্জোট আন্দোলন -এর প্রতি সমর্থন জানান ।
১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ৩রা জানুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই এক যোগে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির যুগ্ম প্রচেষ্টায় সম্মত হন । এই ঘোষণায় তিনি পরমাণু অস্ত্রের প্রসার রোধ, নিরস্ত্রীকরণ প্রভৃতির প্রতি তাঁর দৃঢ় সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন ।
তাঁর ভ্রমণকালে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় পার্লামেন্টে প্রদত্ত এক বক্তৃতায় বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ভারতের উদ্যোগ ও নির্জোট আন্দোলনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ভারতের নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াসের ভূয়সী প্রসংসা করেন । ভারতের স্বাধীনতার প্রাপ্তির পর ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ও গণতন্ত্রের কথাও তাঁর বক্তৃতায় স্থান পায় । তিনি দুটি দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নে এক আন্তর্জাতিক বোঝাপড়া গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন ।
১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত ভ্রমণে আসা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জেমস কালাঘান -এর এক ঘোষণাতেও একই প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত হয় । বারে বারে ভারতের সরকার বদল হলেও ভারতের বিদেশনীতির বদল হয় নি । ভারতের সব প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারই নির্জোট আন্দোলনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রয়াস চালিয়েছেন । সেই সঙ্গে বিশ্বের উন্নত দেশগুলিকেও এই প্রচেষ্টায় সামিল করেছেন ।
ইয়াল্টা সম্মেলন
পটভূমি: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৪ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কৃয়সাগরের পাশে ক্রিমিয়ার ইয়াল্টা প্রদেশে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইয়াল্টা নামে পরিচিত ওই সম্মেলনে যােগ দিয়েছিলেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আর সােভিয়েত রাষ্ট্রনায়ক স্টালিন।
আলােচ্য বিষয়
- জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ইউরােপের রাজনৈতিক মানচিত্রের পুনর্গঠন করা।
- বিশ্বে আন্তর্জাতিক শান্তিপ্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এক আন্তর্জাতিক সংগঠন তৈরি করা।
- রাশিয়ার দাবিমতাে নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো প্রয়ােগের ক্ষমতা নিয়ে আলােচনা করা।
- দূরপ্রাচ্যের যুদ্ধে রাশিয়ার যােগদানের গুরুত্ব পর্যালােচনা করা।
- পােল্যান্ডের সীমানা ও ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের প্রশ্নের সমাধান করা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মিত্রপক্ষের দেশগুলি নিজেদের মধ্যেকার ব্যবধান দূর করার জন্য এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা গড়ে তোলার জন্য একাধিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইয়াল্টা সম্মেলন সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
সম্মেলনের কর্ণধারগণ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয় যখন সুনিশ্চিত তখন ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে মিত্রপক্ষীয় তিন রাষ্ট্রপ্রধান রুজভেল্ট, চার্চিল ও স্ট্যালিন ক্রিমিয়ার ইয়াল্টা প্রদেশে এক বৈঠকে মিলিত হন। সেখানে তাঁদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা হয়।
আলোচ্য বিষয়বস্তু
এই সম্মেলনে তিনটি বিষয় সব থেকে বেশি প্রাধান্য পায় :
- (ক) বিশ্বশান্তির জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গঠন
- (খ) জার্মানির ভাগ্য নির্ধারণ।
- (গ) পোল্যান্ডের ভবিষ্যত সমস্যার সমাধানকল্পে আলোচনা।
বিশ্বশান্তির প্রয়াস
বিশ্বকে শান্তি ও নিরাপত্তা দানের উদ্দেশ্যে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গঠনের প্রস্তাব পেশ করা হয়। মিত্রপক্ষের দেশগুলির এই পদক্ষেপ অতি গুরুত্বপূর্ণ।
জার্মানি সম্পর্কে আলোচনা
জার্মানিকে নাতসি প্রভাব থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড, রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে ভাগ করা হয়। জার্মানির ওপর আর্থিক নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব গৃহীত হয় প্রস্তাব করা হয়। সেখানে উদারনৈতিক সংস্থা প্রবর্তিত হয় এবং জার্মানির ওপর ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব গৃহীত হয়।
পোল্যান্ড সম্পর্কে আলোচনা
এই সম্মলনে বলা হয় যে, স্বাধীন পোল্যান্ড রাজ্য গঠন করা হবে। স্থির হয় যে লন্ডনের পোল সরকার ও পোল্যান্ডের কার্যকারী পোল সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অস্থায়ী পোল সরকার গঠন করা হবে। পরে সর্বসাধারণের গোপন ভোটে স্থায়ী পোল সরকার গঠিত হবে।
ইয়াল্টা সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হয়
ইয়াল্টা কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৫ সালে।
ইয়াল্টা সম্মেলন, ক্রিমিয়া সম্মেলন নামে পরিচিত। ১৯৪৫ সালের ৪ – ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকার প্রধানদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বৈঠক হয়েছিল জার্মানি এবং ইউরোপের উত্তরোত্তর পুনর্গঠন।
তিনটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি ছিলেন যথাক্রমে রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট, প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল এবং প্রিমিয়ার জোসেফ স্টালিন। লিভাডিয়া, ইউসুপভ এবং ভোরন্টসভ প্যালেসের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রিমিয়ার ইয়ালটার কাছে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | বেলগ্রেড সম্মেলন
Q1. ইয়াল্টা সম্মেলন কি
Ans – ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে কৃষ্ণসাগরের পাশে ক্রিমিয়ার ইয়াল্টা প্রদেশে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । ইয়াল্টা নামে পরিচিত ওই সম্মেলনে যােগ দিয়েছিলেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট , ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আর সোভিয়েত রাষ্ট্রনায়কস্ট্যালিন ।
Q2. ইয়াল্টা সম্মেলন কেন ডাকা হয়
Ans – এই সম্মেলনের উদ্দেশ্যগুলি ছিল– (ক) যুদ্ধ – পরবর্তী সময়ে জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ণয় করা (খ) পোল্যান্ডকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত সমস্যা মীমাংসা করা (গ) বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গঠন ।
Q3. ইয়াল্টা সম্মেলন কেন গুরুত্বপূর্ণ
Ans – আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে ইয়াল্ল্টা সম্মেলন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্মেলনে বিশ্বশান্তি স্থাপনে যে শুভযাত্রা শুরু হয়েছিল তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে এটাও স্বীকার করতে হবে যে, এই সম্মেলনে বৃহৎ শক্তির স্বার্থ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং জার্মানির ওপর অবিচার হয়েছিল।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।