নবম শ্রেণীর জীবন বিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

সালোকসংশ্লেষ কাকে বলে, সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে

যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিলযুক্ত কোষে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে এবং ক্লোরোফিলের সাহায্যে, পরিবেশ থেকে শোষিত জল ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে সরল শর্করাখাদ্য (গ্লুকোজ) সংশ্লেষিত হয় এবং উৎপন্ন খাদ্যে সৌরশক্তি রাসায়নিক স্থিতিশক্তি রূপে আবদ্ধ হয় এবং উপজাত বস্তু হিসেবে পরিবেশ থেকে গৃহীত কার্বন ডাই-অক্সাইডের সমপরিমাণ অক্সিজেন ও জল উৎপন্ন হয়, তাকে ফটোসিন্থেসিস বা সালোকসংশ্লেষণ বলে।

সালোকসংশ্লেষণের সমীকরণ

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় 12 অণু জলের (H2O) সঙ্গে 6 অণু কার্বন ডাই-অক্সাইডের (CO2) রাসায়নিক বিক্রিয়ায় 1 অণু গ্লুকোজ (C6H12O6), 6 অণু জল (H2O) এবং 6 অণু অক্সিজেন (O2) উৎপন্ন হয়। এই বিক্রিয়াটি ক্লোরোফিলের সক্রিয়তায় এবং সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ঘটে।

সালোকসংশ্লেষণ বিক্রিয়াটির সম্পূর্ণ সমীকরণটি হল : 6CO2 + 12H2O — C6H12O6 + 6O2 + 6H2O

সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া কাকে বলে

যে প্রক্রিয়ায় সবুজ উদ্ভিদ সূর্যালোকের উপস্থিতিতে কার্বন ডাই – অক্সাইড (CO2) এবং পানি থেকে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাদ্য তৈরী করে তাকে বলা হয় সালোকসংশ্লেষণ (Photosynthesis)।

সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হলো : ক্লোরোফিল, আলো, পানি এবং কার্বন – ডাইঅক্সাইড । এটি একটি জৈব রাসায়নিক (Biochemical) বিক্রিয়া।

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার জন্য পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড, সূর্যালোক এবং জল গৃহীত হয়। এর মধ্যে জল ও কার্বন ডাই-অক্সাইড সালোকসংশ্লেষে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

  1.  কার্বন ডাই-অক্সাইডের উৎস : (i) স্থলজ ও পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ বায়ুমণ্ডল থেকে পত্ররন্ধ্র দিয়ে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। (ii) জলজ উদ্ভিদ জলে দ্রবীভূত কার্বন ডাই-অক্সাইড (কার্বোনেট ও বাইকার্বোনেট যৌগ) জলে নিমজ্জিত অংশ দিয়ে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় শোষণ করে।
  2.  সূর্যালোকের উৎস : সূর্যই সূর্যালোকের উৎস। উদ্ভিদ সবুজ পাতায় থাকা ক্লোরোপ্লাস্ট মধ্যস্থ ক্লোরোফিলের সাহায্যে সূর্য থেকে সূর্যালোক অর্থাৎ সৌরশক্তি শোষণ করে। জলজ উদ্ভিদের ক্ষেত্রে জলে প্রবেশকারী সূর্য রশ্মির এর উৎস।
  3.  জলের উৎস : (i) স্থলজ উদ্ভিদ মাটি থেকে এককোষী মূলরোমের সাহায্যে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় কৈশিক জল শোষণ করে। (ii) জলজ উদ্ভিদ পারিপার্শ্বিক পরিবেশ জলাশয় থেকে দেহের নিমজ্জিত অংশ দিয়ে ব্যাপন ও অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় জল শোষণ করে। (iii) পরাশ্রয়ী উদ্ভিদরা যেমন—রাসনা বায়ু মণ্ডল থেকে বায়বীয় মূল দিয়ে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় জলীয় বাষ্প শোষণ করে।

সবুজ বিপ্লব কাকে বলে

ভারতবর্ষে ১৯৬০ এর দশকে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, জলসেচ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় যার ফলস্বরূপ ফসলের উৎপাদন অত্যাধিক পরিমানে বৃদ্ধি পায়, যাকে সবুজ বিপ্লব বলে। সবুজ বিপ্লবের প্রধান ফসল হল গম ও ধান।ভারতবর্ষে সবুজ বিপ্লব প্রথম দেখা যায় পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশে।

সবুজ বিপ্লবের সুফল ও কুফল

সবুজ বিপ্লবের সুফল

১. ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি

রাসায়নিক সার, কীটনাশক, উচ্চফলনশীল বীজ প্রভৃতি ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন অদ্ভূতপূর্ব বৃদ্ধি পায়।

২. কৃষক দের আর্থিক অবস্থার উন্নতি

প্রচুর পরিমান ফসল উদবৃত্ত হওয়ায় তা বাজারে বিক্রি করে কৃষক দের আয় হয়, যা তাদের আর্থিক অবস্থা উন্নতিতে সাহায্য করে।

৩. বহু ফসলি কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন  

আগে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে ফসল ফলাতে হত বলে, বছরে একবার ফসল উৎপাদন হত। কিন্তু সবুজ বিপ্লবে জলসেচ ব্যবস্থার বিকাশ ঘটায়, সেই জমি বছরে দুই থেকে তিনবার ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। ফলে স্বভাবতই ফসলের উৎপাদন অনেকটা বৃদ্ধি পাচ্ছে।  

৪.  মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস

নদী থেকে অসংখ্য খাল কেটে জলসেচ ব্যবস্থার বিকাশ ঘটানো হয়। ফলে জমিতে সময় মতো প্রয়োজন অনুসারে জল সরবরাহ করা সম্ভব হয়। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করতে হয় না।  

৫. অনাহারের পরিমান হ্রাস

সবুজ বিপ্লবের পূর্বে ভারতের বহু মানুষকে খাদ্যের অভাবে অনাহারে থাকতে হত। কিন্তু সবুজ বিপ্লবের ফলে ফসলের উৎপাদন অনেক বেড়ে যায়, যার দ্বারা দেশের প্রায় সকল মানুষ কে খাবার পৌছে দেওয়া সম্ভব হয়।

৬. দেশের আর্থিক উপার্জন বৃদ্ধি

উদ্বৃত্ত ফসল বিদেশে রপ্তানি করে ভারত সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে, যা দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতিতে সাহায্য করে।

সবুজ বিপ্লবের সুফল ও কুফল, সবুজ বিপ্লবের ফলাফল

সবুজ বিপ্লবের সুফল

১. ভূমির অবনমন

একই জমিতে বছরে দুই বা তিন বার ফসল উৎপাদন করার ফলে জমির স্বাভাবিক উর্বরতার পরিমান কমে যাচ্ছে। ফলে ফসল উৎপাদনের জন্য প্রচুর রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে, যার ফলে মৃত্তিকা দূষণের পরিমান বাড়ছে।

২. জীব বৈচিত্র্যের হ্রাস

কৃষি জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের ফলেকিছু কিছু উপকারী পাখি ও পতঙ্গের পরিমান অনেকটাই কমে যাছে।

৩. জলদূষণের পরিমান বৃদ্ধি

জমিতে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশক গুলি বৃষ্টির জলের দ্বারা বাহিত হয়ে পাশ্ববর্তী জলাশয়ে পরে, জলাশয়ের জলকে দূষিত করছে।

৪. ভৌম জলের পরিমান হ্রাস

জলসেচের জন্য ভৌম জলের ব্যবহার করার ফলে ভৌমজল স্তরের পতন ঘটছে।

৫. অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিকাশ

সবুজ বিপ্লবের ফলে এক শ্রেণীর কৃষক ক্রমশ লাভবান হচ্ছে। অন্য দিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শ্রেণীর কৃষক তেমন কোনো লাভ হওয়ায় অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৬. বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি

অধিক যান্ত্রিকরনের ফলে শ্রমিকের চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় বেকারত্বের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৭. আঞ্চলিক বৈষম্য 

আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগ কেবলমাত্র উত্তর – পশ্চিম ভারতের রাজ্য গুলিতে সীমাবদ্ধ ছিল বলে এই অঞ্চলের কৃষকরাই কেবলমাত্র সবুজ বিপ্লবের সুযোগ সুবিধা লাভ করে, কিন্তু ভারতের অন্যত্র সবুজ বিপ্লবের তেমন কোন প্রসার লক্ষ্য করা যায় না। তাই এই ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। 

খাদ্য শৃঙ্খল কাকে বলে

যে প্রক্রিয়ায় খাদ্যশক্তি নীচের পুষ্টি স্তর থেকে সর্বোচ্চ পুষ্টিস্তর পর্যন্ত অর্থাৎ উৎপাদক থেকে খাদ্যখাদক সম্পর্কীত বিভিন্ন জীবগোষ্ঠীর মধ্যে প্রবাহিত বা স্থানান্তরিত হয়, সেই শৃঙ্খলিত পর্যাক্রমিক শক্তির প্রবাহ বা স্থানান্তরকে খাদ্যশৃঙ্খল বলে। অন্যভাবে বলা যায় খাদ্য-খাদক সম্পর্কের ভিত্তিতে উৎপাদক স্তর থেকে ধাপে ধাপে বিভিন্ন জীবগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্য শক্তির ধারাবাহিক প্রবাহকে খাদ্যশৃঙ্খল বলে। 

খাদ্য শৃঙ্খল এর উদাহরণ

জলজ উদ্ভিদ (ফাইটোপ্লাংটন) – পতঙ্গ – মাছ – মানুষ (জলজ বাস্তুতন্ত্র) ও উদ্ভিদ – হরিন – বাঘ (অরন্যের বাস্তুতন্ত্র)। 

খাদ্য শৃঙ্খল এর প্রকারভেদ

খাদ্যখাদকের প্রকৃতির ভিত্তিতে বাস্তুতন্ত্রে তিন ধরনের খাদ্যশৃঙ্খল লক্ষ্য করা যায়। যথা – 

১. শিকারী খাদ্যশৃঙ্খল – এই রূপ খাদ্যশৃঙ্খল প্রাথমিক খাদক বা শাখাহারী প্রানী থেকে শুরু হয় এবং পর্যায়ক্রমে খাদ্য খাদক সম্পর্কের ভিত্তিতে ক্ষুদ্র থেকে বৃহত্তর মাংসাশীতে স্থানান্তরিত হয়। 

উদাহরণ – ঘাস – ফড়িং – ব্যাঙ – সাপ – ময়ূর 

২. পরজীবী খাদ্যশৃঙ্খল – এই রূপ খাদ্যশৃঙ্খলে প্রত্যেক পুষ্টিস্তরে জীবের আকার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে থাকে অর্থাৎ বৃহত্তর জীবকে আশ্র্য করে পরজীবী খাদ্য শৃঙ্খল গঠিত হয়। এক্ষেত্রে বড়ো জীবকে হোস্ট ও ক্ষুদতর জীবকে পরজীবী বলে। 

উদাহরণ – মানুষ – কৃমি – আদ্যপ্রানী। 

৩. মৃতজীবী খাদ্যশৃঙ্খল -এরূপ খাদ্যশৃঙ্খলে মৃত ও গলিত জীবদেহ থেকে ক্রমান্বয়ে জীবানুর দিকে শক্তি প্রবাহিত হয় এবং শক্তি মৃত জীবি ও বিয়োজকের দেহে আবদ্ধ থাকে। 

উদাহরণ – মৃত উদ্ভিদ – ছত্রাক – ব্যাকটেরিয়া

খাদ্যশৃঙ্খলের ধরন অনুযায়ী খাদ্য শৃঙ্খলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – 

১. চারনভূমি বা গ্রেজিং খাদ্যশৃঙ্খল – যে খাদ্যশৃঙ্খল উৎপাদক থেকে শুরু হয় এবং প্রাথমিক খাদক রূপে তৃণভোজীরা চরে চরে খাদ্য গ্রহন করে, তাকে চারন ভূমি বা গ্রেজিং খাদ্যশৃঙ্খল বলে।

উদাহরণ – ঘাস – হরিন – বাঘ ( স্থলভাগ), উদ্ভিদ – পতঙ্গ – মাছ – বক ( জলভাগ) ।

২. বিয়োজক বা ডেট্রিটাস খাদ্যশৃঙ্খল – যে খাদ্যশৃঙ্খল অনুখাদক বা বিয়োজক স্তর থেকে শুরু হয়ে বড়ো প্রানীতে শেষ হয়, তাকে বিয়োজক বা ডেট্রিটাস খাদ্যশৃঙ্খল বলে। 

উদাহরণ – পচাপাতা – লার্ভা – ছোট মাছ – বড়ো মাছ। 

খাদ্য শৃঙ্খল ও খাদ্য জালের মধ্যে পার্থক্য

খাদ্য শৃঙ্খলখাদ্য জাল
সূর্যশক্তি খাদ্যের মাধ্যমে এক জীব হতে অপর জীবে স্থানান্তরের ফলে যে শৃঙ্খল গঠিত হয় তাকে খাদ্যশৃঙ্খল বলে।একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে খাদ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা একাধিক খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ভিত্তিতে যে আন্তঃসম্পর্ক গড়ে ওঠে তাকে খাদ্যজাল বলে।
খাদ্যশৃঙ্খল একটি পরিবেশে কয়েকটি খাদ্যশৃঙ্খল থাকতে পারে।একটি পরিবেশে একটি খাদ্যজাল থাকে।
খাদ্যশৃঙ্খল বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে প্রকাশ করে।খাদ্যজাল বিভিন্ন খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে।
খাদ্যশৃঙ্খলে খাদক উৎপাদক, বিয়োজক একসঙ্গে নাও থাকতে পারে।খাদ্যজালে খাদক, উৎপাদক, বিয়োজক এক সঙ্গে থাকে।
সবুজ উদ্ভিদ থেকেই প্রতিটি খাদ্যশৃঙ্খলের শুরু।খাদ্যজালের শুরুর উপাদানটি নির্দিষ্ট নয়।
খাদ্য শৃঙ্খল হলো খাদ্য ও খাদকের সম্পর্ক।খাদ্য জাল হলো অনেকগুলো খাদ্য শৃঙ্খলের পারস্পরিক সম্পর্ক।
খাদ্য শৃঙ্খলে দুই বা ততোধিক খাদ্য থাকে।খাদ্য জালে বহুসংখ্যক খাদ্য থাকে।
খাদ্য শৃঙ্খলে দুই বা ততোধিক খাদক থাকে।খাদ্য জালে বহুসংখ্যক খাদক থাকে।
খাদ্য শৃঙ্খল খাদ্য জালের অন্তর্ভুক্ত।খাদ্য জাল খাদ্য শৃঙ্খলের অন্তর্ভুক্ত নয়।
একটি পরিবেশে অনেকগুলো খাদ্য শৃঙ্খল থাকতে পারে।একটি পরিবেশে একটি মাত্র খাদ্য জার থাকে।
খাদ্য শৃঙ্খল ও খাদ্য জালের মধ্যে পার্থক্য

বাস্তুতন্ত্র কাকে বলে

কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসকারী গোষ্ঠী গুলির মধ্যে একে অপরের সঙ্গে এবং এই নির্দিষ্ট অঞ্চলের পরিবেশের পারিপার্শ্বিক উপাদান গুলি সঙ্গে আন্ত: ক্রিয়ার যে বসতি করে ওঠে তাকেই বাস্তুতন্ত্র ইকোসিস্টেম বলে ।

বাস্তুতন্ত্রের উপাদান

বাস্তুতন্ত্রে দু ধরনের উপাদান রয়েছে      যথা – অবায়টিক বা জড় উপাদান এবং বায়টিক বা জীবজ উপাদান ।

জড় উপাদান : পরিবেশের জীবন্ত উপাদান ছাড়া অন্যান্য বাদ বাকি যে জড়বস্তু রয়েছে তাদেরকে জড় উপাদান বলে। জড় উপাদান মূলত তিন প্রকার যথা-

1. ভৌত উপাদান : আলো, বায়ু, উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, সৌরশক্তি, মৃত্তিকা, বায়ুর চাপ, আদ্রতা প্রভৃতি।

2. অজৈব উপাদান : বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, হাইড্রোজেন, ফসফরাস প্রভৃতি।

3.জৈব উপাদান : কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট প্রকৃতি হল জৈব উপাদানের অন্তর্গত।

জীবজ উপাদান : পরিবেশের নির্দিষ্ট কোন একটি বাস্তুতন্ত্রের সকল জীবই পরিবেশের জীবন উপাদান এই জীবজ উপাদান দুই প্রকারের যথা-

বায়ু দূষণ কাকে বলে

বায়ুর উপাদানসমুহের পরিবর্তন যখন উদ্ভিদ ও জীবকূলের ক্ষতির কারণ হয় তখন তাকে বায়ু দূষণ বলে।

World Health Organization (WHO) বা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, “পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের মধ্যে অনিষ্টকর পদার্থের সমাবেশ যখন মানুষ ও তার পরিবেশের ক্ষতি করে সেই অবস্থাকে বায়ু দূষণ বলে”।

বায়ু দূষণের কারণ

বায়ু দূষণের কারণসমূহকে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

ক. মানব সৃষ্ট কারণ এবং

খ. প্রাকৃতিক কারণ।

ক. মানব সৃষ্ট কারণ :-

১. জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো :

ভূ-অভ্যন্তর হতে উত্তোলিত জ্বালানি যেমন-ডিজেল, পেট্রোল, কেরোসিন তেল ইত্যাদি পোড়ানোর কারণে ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের কণা বাতাসে মিশে বায়ু দূষণ ঘটায়।

যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় থাকে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ প্রভৃতি গ্যাস যা মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

২. শিল্প-কারখানার নির্গত ধোঁয়া :

শিল্প-কারখানার নির্গত ধোঁয়ার বিভিন্ন প্রকার গ্যাস ও ধাতব কণা যেমন- কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি দুর্গন্ধময় বিষাক্ত পদার্থ যা বাতাসের সাথে মিশে বাতাসকে দূষিত করে।

৩. পরিত্যক্ত বর্জ্য :

পদার্থের দহন বিশেষ করে শহরাঞ্চলে পরিত্যক্ত বর্জ্য পদার্থসমূহ আবর্জনামুক্ত করার জন্য পোড়ানো হয়। এ থেকে নির্গত ধোঁয়াতেও কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাস থাকে যা বাতাসকে দূষিত করে।

৪. বন উজার :

অপরিকল্পিতভাবে গাছপালা কর্তনের ফলে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড এর মাত্রা বেড়ে গিয়ে বাতাসকে দূষিত করে। এতে প্রাণি ও উদ্ভিদের শ্বাসকার্যে ব্যবহৃত অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড এর ভারসাম্য বিনষ্ট হয়।

৫. তেজস্ক্রিয় পদার্থ :

যুদ্ধক্ষেত্র অথবা পারমানবিক চুল্লিতে দুর্ঘটনার ফলে তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণ হলে বায়ু দূষিত হয়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণ।

৬. ইটভাটা :

ইটভাটায় কাঠ ও কয়লা পোড়ানোর ফলে প্রচুর ধোঁয়া নির্গত হয় যা বায়ুর সাথে মিশে দূষণ ঘটায় ।

৭. কৃষিক্ষেত্রে :

কৃষিক্ষেত্রে আগাছা, কীটনাশক, জৈব ফসফেট এবং ক্লোরিনযুক্ত হাইড্রোকার্বন বায়ু দূষণ ঘটায়।

বায়ু দূষণের উপরিউক্ত মানব সৃষ্ট কারণ ছাড়াও ভবন নির্মাণ, খোলা স্থানে আবর্জনা, ধূমপান, লোহা, টায়ার ইত্যাদির দহনে বায়ু দূষিত হয়।

খ. প্রাকৃতিক কারণ :-

১. আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত :

আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস প্রভৃতি বায়ুর সাথে মিশে বায়ুকে দূষিত করে।

২. জৈব ও অজৈব পদার্থ :

বিভিন্ন প্রকার জৈব ও অজৈব পদার্থের স্বাভাবিক পচনের ফলে যে গ্যাস সৃষ্টি হয় তা বায়ুকে দূষিত করে।

৩. দাবানল ও ধূলিঝড় :

বিস্তৃত বনাঞ্চলে দাবানল হলে তা ব্যাপক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে বায়ুকে দূষিত করে। এছাড়া মরু এলাকায় ধূলিঝড়ও বায়ু দূষণ ঘটায় ।

৪. গ্যাসক্ষেত্রের বিস্ফোরণ :

গ্যাসক্ষেত্র বিস্ফোরণ বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে যে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে তা বায়ুকে দূষিত করে।

হরমোন কাকে বলে, হরমোন কি

হরমোন হচ্ছে এক প্রকার জৈব-রাসায়নিক তরল যা শরীরের কোনো কোষ বা গ্রন্থি থেকে শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশে নিঃসরিত হয় এবং রক্তের মাধ্যমে দূরবর্তী নির্দিষ্ট স্থানে বাহিত হয় এবং কাজ শেষে ধ্বংস হয়ে যায়। হরমোন হল একটি আভ্যন্তরীন উদ্দীপক।হরমোনের মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পরিবর্তনের সংকেত পাঠানো হয়। উদাহরণস্বরূপ, বিপাকক্রিয়ার পরিবর্তনের জন্য অল্প একটু হরমোনই যথেষ্ট।

জলচক্র কাকে বলে

জল বায়ুমণ্ডল থেকে পৃথিবীপৃষ্ঠে, পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে পুনরায় বায়ুমণ্ডলে আবর্তিত হয়। জলের এই বিরামহীন চক্রাকার আবর্তনকে জলচক্র বলে। অন্যভাবে জলচক্রের সংজ্ঞায় বলা যেতে পারে, জলের ভৌত পরিবর্তন ও বিনিময়ের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল, শিলামণ্ডল ও বারিমণ্ডলের মধ্যে জলের যে-সমতা রক্ষিত হয় তাকে জলচক্র বলে।

জলচক্র ব্যাখ্যা

বাষ্পীভবন, ঘনীভবন ও অধঃক্ষেপণের মাধ্যমে জলচক্র সম্পাদিত হয়। এই তিনটি প্রক্রিয়ার যে-কোনাে একটি প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হলে জলচক্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়। সূর্যের কিরণে জল বাষ্পে পরিণত হয়। বায়ুমণ্ডলের ওই বাষ্প অনুকূল পরিবেশে ঘনীভূত হয়ে জলভাগ ও স্থলভাগে বৃষ্টিপাত বা তুষাররূপে পতিত হয়। অধঃক্ষেপণের এক অংশ মৃত্তিকা শােষণ করে ভৌমজলের ভাণ্ডার গড়ে তােলে, এক অংশ পুকুর, হ্রদ, নদীতে সঞ্চিত হয় এবং বাকি অংশ পৃষ্ঠপ্রবাহরূপে সমুদ্রে ফিরে যায়।

পুনরায় ওই জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। প্রকৃতিতে জল এইভাবে আবর্তিত হয়।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | নবম শ্রেণীর জীবন বিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

Q1. জল চক্রের বৈশিষ্ট্য 

Ans – জল চক্রের কতিপয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো হলো
১. জল চক্রের অধঃপতন পদ্ধতি ভৌত শক্তির কর্মধারার উপর নির্ভরশীল।
২. সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অধিক পরিমাণ বাষ্পীভবন হয়।
৩. এ চক্রটি দ্রুত আবর্তিত হয়।
৪. বারিপাতের ফলে স্থলভাগে বেশি জল ফিরে আসে।
৫. জল চক্র বিশ্বের জলের মধ্যে একটি সমতা রক্ষা করে।

Q2. বায়ু দূষণের ৫টি কারণ

Ans – শব্দ দূষণ পরিবেশ দূষণের একটি অংশ। হঠাৎ উচ্চ আওয়াজ, গোলমাল, বিভিন্ন শব্দ মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে। শব্দ দূষণ রোধে আমি নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারিঃ
১) কোনো অনুষ্ঠানে উচ্চস্বরে গান বাজাব না।
২. আতশবাজি বা পটকা ফুটাব না।
৩. উচ্চস্বরে আওয়াজ করব না।
৪. মাইক বাজানো থেকে বিরত থাকব।
৫. যানবাহনের হর্ন শব্দ দূষণের অন্যতম কারণ। উচ্চস্বরে গাড়ির হর্ন বাজিয়ে বা অন্য কোনোভাবে যারা শব্দ দূষণ করে তাদের এর ক্ষতিকর দিক বোঝানোর চেষ্টা করব।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।