বায়ুমণ্ডল কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

বায়ুমণ্ডল কাকে বলে

পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভু- পৃষ্ট থেকে ১০০০ কিমি উপর পর্যন্ত বিস্তৃত যে অদৃশ্য গ্যাসীয় আবরন পৃথিবীকে ঢেকে রেখেছে তাকে বায়ুমণ্ডল বলে।

ভূ-পৃষ্ঠের চারপাশ যে বায়বীয় আবরণ দ্বারা বেষ্টিত রয়েছে তাকেই সহজ ভাষায় বলা হয় বায়ুমণ্ডল। আমরা জানি যে, সৌরজগতের একমাত্র বাসযোগ্য গ্রহ পৃথিবী এবং মানুষ, প্রাণি অর্থাৎ জীবজগতের স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য এই বায়ুমণ্ডল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উর্ধ্ব দিকে যে বায়বীয় আস্তরণ তাই বায়ুমণ্ডল নামে পরিচিত এবং এই মণ্ডলটি নানা প্রকার গ্যাসীয় উপাদান দ্বারা গঠিত। পৃথিবীর আকর্ষণে আকৃষ্ট হয়ে এ বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর সঙ্গে আবর্তিত হচ্ছে। তবে বায়ুমণ্ডল কঠিন ভূমির সাথে সমানভাবে চলতে পারে না বরং কিছুটা পশ্চাতে পড়ে থাকে।

বায়ুমণ্ডল ভূপৃষ্ঠ থেকে ঠিক কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত তা সঠিকভাবে বলা কঠিন। তবে মহাকাশ গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, সমুদ্রতল থেকে উপরের দিকে প্রায় 1600 কিলোমিটার পর্যন্ত বায়ুমণ্ডল বিস্তৃত। ভূপৃষ্ঠ থেকে 50 কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে প্রায় 97 শতাংশ বায়ু থাকে এবং 400 কিলোমিটারের ওপরে বায়ুমণ্ডল এত পাতলা হয় যে তার কোন অস্তিত্ব থাকে না বললেই চলে।

বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবী প্রতিমুহূর্তে বায়ুমণ্ডলকে আকর্ষণ করছে। এই আকর্ষণের কারণেই বায়ুমন্ডল মহাশূন্যে ছড়িয়ে যেতে পারে না, বরং পৃথিবীকে ঘিরে পৃথিবীর সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতে থাকে।

বায়ুমণ্ডলের উপাদান গুলি কি কি

বায়ুমন্ডল গঠনকারী উপাদানগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা করা যায়। যথা :-

  • গ্যাসীয়
  • জলীয়বাষ্প
  • ধূলিকণা

বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন প্রকারের গ্যাসীয় উপাদান দ্বারা গঠিত। বিশুদ্ধ ও শুষ্ক বায়ুর প্রধান দুইটি উপাদানের নাম নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন। এই দুটি গ্যাস একত্রে মিলে বায়ুমণ্ডলের ৯৮.৭৩ শতাংশ জায়গা জুড়ে আছে এবং বাকি ১.২৭ শতাংশ জায়গা জুড়ে আছে অন্যান্য গ্যাসীয় উপাদান। এই ১.২৭ শতাংশ জায়গা জুড়ে থাকা গ্যাসীয় উপাদানগুলো হলো নিষ্ক্রিয় গ্যাস যেমন- ওজোন, জেনন, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্রিপটন, হিলিয়াম, নিয়ন ইত্যাদি।

সাধারণভাবে বলতে গেলে বায়ুতে থাকে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, জলীয় বাষ্প, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, আর্গণ, সামান্য পরিমাণে হিলিয়াম, জেনন, ক্রিপ্টন, ওজন ইত্যাদি। এছাড়া বায়ুমণ্ডলের নিচের স্তরে বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট কঠিন পদার্থ কণা, ধূলি কণা, কার্বনের গুঁড়ো, পরাগরেণু ইত্যাদি থাকে।

আয়তন হিসেবে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানসমূহের একটি তালিকা দেয়া হলো—

বিভিন্ন গ্যাস বা বায়ুমণ্ডলের উপাদানের নামপরিমাণ শতকরা হার
নাইট্রোজেন (N2)৭৮০,৮৪০ পিপিএমভি (৭৮.০৮৪%)
অক্সিজেন (O2)২০৯,৪৬০ পিপিএমভি (২০.৯৪৬%)
আর্গন (Ar)৯,৩৪০ পিপিএমভি (০.৯৩৪০%)
কার্বনডাইঅক্সাইড (CO2)৩৯৭ পিপিএমভি (০.০৩৯৭%)
নিয়ন (Ne)১৮.১৮ পিপিএমভি (০.০০১৮১৮%)
হিলিয়াম (He)৫.২৪ পিপিএমভি (০.০০০৫২৪%)
মিথেন (CH4)১.৭৯ পিপিএমভি (০.০০০১৭৯%)
ক্রিপ্টন (Kr)১.১৪ পিপিএমভি (০.০০০১১৪%)
হাইড্রোজেন (H2)০.৫৫ পিপিএমভি (০.০০০০৫৫%)
নাইট্রাস অক্সাইড (N2O)০.৩২৫ পিপিএমভি (০.০০০০৩২৫%)
কার্বন মনোক্সাইড (CO)০.১ পিপিএমভি (০.০০০০১%)
জেনন (Xe)০.০৯ পিপিএমভি (৯×১০−৬%) (০.০০০০০৯%)
ওজন (O3)০.০ থেকে ০.০৭ পিপিএমভি (০ থেকে ৭×১০−৬%)
নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO2)০.০২ পিপিএমভি (২×১০−৬%) (০.০০০০০২%)
আয়োডিন (I2)০.০১ পিপিএমভি (১×১০−৬%) (০.০০০০০১%)
অ্যামোনিয়া (NH3)ট্রেস গ্যাস

বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস, বায়ুমণ্ডলের স্তর কয়টি

বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন স্তরে স্তরে সজ্জিত। বায়ুমন্ডলের স্তরসমূহের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তর থেকে উপরের দিকে ক্রমশ লঘু হয়। উলম্বভাবে (Vertically) বায়ুর তাপমাত্রার বিন্যাসের ভিত্তিতে বায়ুমন্ডলকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়।

পৃথিবীর গায়ে লেগে থাকা বায়ুমণ্ডলকে ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে 6টি স্তরে ভাগ করা হয়। যথা-

  1. ট্রপোস্ফিয়ার
  2. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
  3. মেসােস্ফিয়ার
  4. থার্মোস্ফিয়ার
  5. এক্সোস্ফিয়ার
  6. ম্যাগনেটাস্ফিয়ার

বায়ুমণ্ডলের উপরিউক্ত ওরগুলোর মধ্যে প্রথম তিনটি ট্রেপোমণ্ডল, স্ট্রাটোমন্ডল ও মেসোমণ্ডল) সমমন্ডলের অন্তর্ভুক্ত এবং শেষের দুইটি (তাপমণ্ডল ও এক্সোমণ্ডল) বিষমমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত।

ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere) কাকে বলে

বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের স্তরটিকে ট্রপােস্ফিয়ার বলে।

বিস্তারঃ নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে ১৬-১৮ কিমি এবং মেরু অঞলে প্রায় ৪ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।

ট্রপোমন্ডলের বৈশিষ্ট্য 

১। ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর ঘনত্ব কমতে থাকে, সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে উষ্ণতা। সাধারণভাবে প্রতি ১,০০০ মিটার উচ্চতায় ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা হ্রাস পায়।

২। উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায়।

৩। নিচের দিকের বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে।

৪। ধূলিকণার অবস্থানের ফলে সমগ্র বায়ুমন্ডলের ওজনের প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ এই স্তর বহন করে।

৫। যে উচ্চতায় তাপমাত্রা বন্ধ হয়ে যায় তাকে ট্রপোবিরতি বলে। এখানে তাপমাত্রা -৫৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে হতে পারে।

ট্রপোস্ফিয়ার এর প্রধান উপাদান কি: বায়ুমন্ডলের প্রায় 75% গ্যাসীয় পদার্থ এই স্তরে থাকে। এখানে ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, কুয়াশা, মেঘ ইত্যাদি থাকে।

প্রায় ৭৫% বায়বীয় উপাদান (জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা, বিভিন্ন গ্যাস) এই স্তরে থাকে। 

ট্রপােস্ফিয়ার স্তরে ঝড়বৃষ্টি, বিদ্যুৎ-বজ্রপাত প্রভৃতি বায়বীয় গােলযোেগ এই স্তরে ঘটে বলে, একে ক্ষুব্বমণ্ডল বলা হয়।

ট্রপোস্ফিয়ারের উষ্ণতা: এই স্তরের বায়ুতে উষ্ণতার তারতম্য ঘটে। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতি এক কিলোমিটার উচ্চতার জন্য এখানকার বায়ুর উষ্ণতা প্রায় 6.5°C থেকে 10°C কমে যায়। এখানকার সর্বনিম্ন উষ্ণতা 56°C।

ট্রপােস্ফিয়ারের  উর্ধ্বসীমাকে বলা হয় ট্রপোপজ (Tropopause)।

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (Stratosphere) কাকে বলে

ট্রপােস্ফিয়ারের ওপরে বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তরটিকে বলা হয় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (Stratosphere)।

ট্রপোপজের পর থেকে স্ট্রাটোস্ফিয়ারের শুরু। ট্রপোপজের ওপর থেকে প্রায় 46 কিলোমিটার পর্যন্ত এই স্তরটি বিস্তৃত। এখানকার বায়ু খুবই হালকা। এখানে অক্সিজেনের পরিমাণ খুবই কম। এই স্তরে গেলে শ্বাসকার্য চালানো বেশ কষ্টকর হয়। এখানে মেঘ, জলীয় বাষ্প থাকে না তাই ঝড়, বৃষ্টি হয় না।

এখানকার বায়ু হালকা ও স্থির থাকে। সেজন্য স্তরটির আর এক নাম শান্তমন্ডল। এই স্তরে সাধারণত 8 কিলোমিটারের মধ্যে জেট বিমান চলে। এখানকার বায়ুর উষ্ণতা প্রায় 560°C থেকে 60°C এর মধ্যে থাকে। এই স্তরের শেষ ভাগকে স্ট্রাটোপজ বলে। এই স্ট্রাটোপজ অংশের উষ্ণতা 0°C এর কাছাকাছি থাকে।

বিস্তারঃ ট্রপােপজ থেকে ওপরে ৫০ কিমি পর্যন্ত এই স্তরটি বিস্তৃত।

স্ট্রাটোমন্ডলের বৈশিষ্ট্য 

১। এই স্তরেই ওজোন (O3) গ্যাসের স্তর বেশি পরিমাণে অবস্থান করে। ওজোন স্তর সূর্যের আলোর বেশিরভাগ অতিবেগুনি রশ্মি (Ultraviolate rays) শুষে নেয়। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

২। এই স্তরের বায়ুতে অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা ছাড়া কোনোরকম জলীয়বাস্প থাকে না। ফলে আবহাওয়া থাকে শান্ত ও শুস্ক। ঝড়, বৃষ্টি থাকে না বলে এই স্তরের মধ্য দিয়ে সাধারণত জেট বিমানগুলো চলাচল করে।

৩। প্রায় ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় তাপমাত্রা পুনরায় হ্রাস পেতে শুরু করে। এটি স্ট্রাটোমন্ডলের শেষ প্রান্ত নির্ধারণ করে।

এই স্তরে ২০-২৫ কিমি উচ্চতায় থাকা ওজোন স্তর ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি শােষণ করে। 

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরেমেঘ, বায়ুপ্রবাহ, ঝড়, বৃষ্টি দেখা যায় না। তাই একে শান্তমণ্ডল বলা হয়। এই কারণে বিমানগুলি এই স্তর দিয়ে চলাচল করে।

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমাকে স্ট্রাটোপজ (Stratopause) বলে।

মেসােস্ফিয়ার (Mesosphere) কাকে বলে

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওপরে বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় স্তরটিকে বলা হয় মেসােস্ফিয়ার (Mesosphere)

উষ্ণতা প্রায় –90°C হয়। এই অংশের নাম মেসোপজ। এই স্তরটি শব্দতরঙ্গ প্রতিফলিত করতে পারে।

বিস্তারঃ ৫০-৪০ কিমি উচ্চতার মধ্যে এই স্তরটি বিস্তৃত।

মেসোমন্ডলের বৈশিষ্ট্য 

১। এই স্তরে ট্রপোমন্ডলের মতোই উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা কমতে থাকে। যা -৮৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত নিচে নেমে যায়। মেসোমন্ডল বায়ুমন্ডলের সবচেয়ে শীতলতম তাপমাত্রা ধারণ করে।

২। মহাকাশ থেকে যে সব উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুঁটে আসে সেগুলোর অধিকাংশই এই স্তরের মধ্যে এসে পুড়ে যায়।

মহাকাশ থেকে ছুটে আসা উল্কাগুলি মূলত মেসােস্ফিয়ার স্তরে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। 

মেসােস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমাকে মেসােপজ (Mesopause) বলে।

থার্মোস্ফিয়ার (Thermosphere) কাকে বলে

মেসােস্ফিয়ারের ওপরে বায়ুমণ্ডলের চতুর্থ তাপময় স্তরটিকে বলা হয় থার্মোস্ফিয়ার (Thermosphere) ।

বিস্তারঃ ৮০-৩০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।

বৈশিষ্ট্যঃ এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত তাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। 

এখানে বায়বীয় কণা প্রায় নেই। তাই আকাশ কালাে দেখায়। 

এখানে গ্যাসের অণুগুলাে আয়নিত অবস্থায় থাকে। তাই একে আয়নােস্ফিয়ার বলে।

থার্মোস্ফিয়ার স্তর থেকে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে।

অতিবেগুনি রশ্মির কারণে এই স্তরের তাপমাত্রা ২০০° সে.-এ পৌছে যায়।

এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere) কাকে বলে

থার্মোস্ফিয়ারের ওপরের স্তরটিকে বলা হয় এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere)।

বিস্তারঃ ৩০০-১৫০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।

এক্সোমন্ডলের বৈশিষ্ট্য

১। এক্সোমন্ডল, তাপমন্ডল অতিক্রম করে ৯৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত হয়। এটি ক্রমান্বয়ে ইন্টারপ্লানেটরি স্পেসে প্রবেশ করে।

২। এ স্তরের তাপমাত্রা প্রায় ৩০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ১৬৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়।

৩। এ স্তরে খুব সামান্য পরিমাণ গ্যাস যেমন- অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, অর্গন এবং হিলিয়াম ধারণ করে, কেননা মাধ্যাকর্ষণের ঘাটতির কারণে গ্যাস অণু বা কণাগুলো সহজে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে।

কৃত্রিম উপগ্রহ, মহাকাশ স্টেশন এক্সোস্ফিয়ার স্তরে থাকে।

ম্যাগনেটোস্ফিয়ার (Magnetosphere) কাকে বলে

এক্সোস্ফিয়ারের ওপরে বায়ুমণ্ডলের শেষসীমা পর্যন্ত বায়ুস্তরকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার (Magnetosphere) বলে।

বিস্তারঃ ১৫০০-১০০০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।

বৈশিষ্ট্যঃ এই স্তরে বায়ুমণ্ডলকে বেষ্টন করে একটি স্থায়ী তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়েছে।

বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব

পৃথিবী সৌরজগতের সব থেকে আদর্শ ও বাসযোগ্য গ্রহ এবং বায়ুমন্ডল এই গ্রহে জীবজগতের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।

বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন স্তরে নানা রকম গ্যাসীয় উপাদান, জলীয়বাষ্প ও ধূলিকণার উপস্থিতির জন্য স্তরভেদে নানা পার্থক্য দেখা যায়। বায়ুমণ্ডলের গুরুত্বসমূহ এখানে আলোচনা করা হলো

  • বায়ুমণ্ডল প্রধানত উদ্ভিদ ও প্রাণিকূলের জীবন রক্ষায় পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি শুষে নেয় এবং এর বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান যেমন- অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উদ্ভিদ ও প্রাণিকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
  • বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্প আছে বলেই মেঘ সৃষ্টি হতে পারে। ফলে বৃষ্টি হয় এবং জীবজগৎ রক্ষা পায়।
  • মানুষ তার নানা প্রয়োজনে প্রকৃতিকে ব্যবহার করতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছে। যেমন- প্রচুর পরিমানে গাছ পালা ও বন-জঙ্গল নিধন, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি পোড়ানো এবং তা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস বায়ুমণ্ডলের জন্য ক্ষতিকর। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশ অর্থাৎ জীবজগতের বেঁচে থাকার জন্য বায়ুমণ্ডলের বিশুদ্ধতা বজায় রাখা জরুরি।
  • বায়ুমণ্ডলকে বিশুন্ধ না রাখলে উদ্ভিদ ও প্রাণির শুধু জীবন বিপর্যয় হবে না, সেই সাথে ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হবে।
  • বায়ুর নানা গ্যাসীয় উপাদান যেমন- কার্বন ডাই-অক্সাইড এর সাহায্যে উদ্ভিদ খাদ্য প্রস্তুত করে, জলীয়বাষ্প নিয়ন্ত্রণ করে । এছাড়াও চুনা জাতীয় খনিজ পদার্থ গঠন ও পৃথিবীতে তাপের বন্টন ও প্রতিফলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
  • বায়ুমণ্ডল না থাকলে কোনো শব্দতরঙ্গ স্থানান্তরিত হয় না। কারণ পৃথিবী হতে পাঠানো বেতার তরঙ্গ আয়নমণ্ডলে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসে।
  • বায়ুমণ্ডলের নানা স্তরে বায়ুর চাপের পার্থক্য দেখা যায়। তাই বায়ুমণ্ডলে বায়ুর ওজন ও চাপ এর ভারসাম্য সঠিক না হলে আমরা চলাফেরা করা বা দাঁড়াতে পারতাম না।
  • বায়ুমন্ডলের মধ্যে ওজোন স্তর আছে বলে সূর্য হতে আগত অতিবেগুনী রশ্মির হাত হতে পৃথিবীর জীবজগৎ রক্ষা পায়। এমনকি বায়ুমন্ডলের স্তরে উল্কাপিন্ড বিধ্বস্ত না হলে তা সরাসরি পৃথিবীতে আঘাত হানতো।
  • বায়ুমণ্ডল মূলত একটি তাপনিরোধক আবরণ যা জীবজগৎকে সৌরতাপ শক্তি হতে রক্ষা করে।
  • বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন এর মাত্রা বেশি থাকায় এর দ্বারা উদ্ভিদজগৎ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে এবং জীবজগৎ ঐ উদ্ভিদ থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন গ্রহণ করতে পারে।
  • ট্রপোমণ্ডল না থাকলে আবহাওয়া সৃষ্টি হতো না এবং মেঘ-বৃষ্টি, তুষার, কুয়াশা ইত্যাদি না থাকলে শস্য ও বনভূমির জন্য বৃষ্টিপাত পাওয়া যেত না।

বায়ুমণ্ডলের প্রয়োজনীয়তা

  • বায়ুমণ্ডল আছে বলেই পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন আছে। বায়ুমণ্ডল না থাকলে পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে থাকতে পারতো না।
  • বায়ুমণ্ডলেই পৃথিবীকে দিনের গরম ও রাতের ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে।
  • বায়ুমন্ডলে বায়ুপ্রবাহের ফলে পৃথিবীতে ঝড় বৃষ্টির সৃষ্টি হয়। ফলে পৃথিবী সবুজ গাছপালায় ভরে ওঠে।
  • মহাকাশের জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ড ভূপৃষ্ঠে পৌঁছানোর আগেই বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে জ্বলে পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
  • বায়ুমণ্ডল পৃথিবীকে ঘিরে থাকায় ক্ষতিকারক মহাজাগতিক রশ্মী পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারে না। ফলে জীবজগৎ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়।

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতম স্তর কোনটি

থার্মোস্ফিয়ার হল উষ্ণতম বায়ুমণ্ডলীয় স্তর।

মেসোমণ্ডলের উপরে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে 500km বিস্তৃত স্তরকে তাপমণ্ডল বা আয়নমণ্ডল বা থার্মোস্ফিয়ার বলে। এই স্তরের তাপমাত্রার পরিমাপ হলো 92°C থেকে 1200°C পর্যন্ত। এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় সূর্য থেকে আসা বিকিরণ শক্তির প্রভাবে এই অঞ্চলের সকল গ্যাসীয় উপাদান আয়ন আকারে থাকে।

বায়ুমণ্ডলের শীতলতম স্তর কোনটি

মেসোস্ফিয়ার হল শীতলতম বায়ুমণ্ডলীয় স্তর । মেসোস্ফিয়ারটি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে 50 থেকে 80 কিলোমিটার (প্রায়) এর মধ্যে অবস্থিত। মেসোস্ফিয়ারের গড় তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস 85 ডিগ্রি সেলসিয়াস ।

মেসোস্ফিয়ার পৃথিবী থেকে প্রায় 50 কিলোমিটার থেকে 85 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি 35 কিলোমিটার পুরু। পৃথিবীর দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মধ্য স্তরের তাপমাত্রা শীতল হয়ে যায়। কিছু উষ্ণ স্থানে, এর তাপমাত্রা -5 ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছতে পারে, কিন্তু অন্যান্য উচ্চতায় তাপমাত্রা -140 ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যাবে.

মেসোস্ফিয়ারে গ্যাসের ঘনত্ব কম, এগুলো অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেনের সমন্বয়ে গঠিত এবং এদের অনুপাত প্রায় ট্রপোস্ফিয়ারিক গ্যাসের সমান। দুটি স্তরের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল মাঝের স্তরে বাতাসের ঘনত্ব কম, জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম এবং ওজোনের পরিমাণ বেশি।

মেসোস্ফিয়ার হল পৃথিবীর প্রতিরক্ষামূলক স্তর কারণ এটি বেশিরভাগ উল্কা এবং গ্রহাণুকে পৃথিবীর পৃষ্ঠে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করে। এটি সবার বায়ুমণ্ডলের শীতলতম স্তর।

বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ স্তর কোনটি

বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ স্তর তড়িৎযুক্ত কণা বা আয়নের উপস্থিতির জন্য এই স্তরকে আয়নোস্ফিয়ারও বলা হয় ।

অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের এই স্তরের দুটি নাম রয়েছে, যেমন – থার্মোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ার । তবে এই স্তরটি আয়োনোস্ফিয়ার নামেই বেশি পরিচিত ।

এখানে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, ওজোন প্রভৃতি গ্যাস আয়নিত অবস্থায় থাকে ।

প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের মান কত

বায়ুমন্ডলের স্তরে একক ক্ষেত্রফলে উলম্ব বরাবর মহাকর্ষীয় আকর্ষণের ওজনই হচ্ছে বায়ুমন্ডলীয় চাপ। বায়ুমন্ডলীয় চাপের একক হচ্ছে atm (atmosphere)। বায়ুর তাপ, চাপ, ও ঘনত্ব ভেদে বায়ুচাপ ও  বায়ুমন্ডলীয় চাপের মধ্যে পার্থক্য খুজে পাওয়া যায়। বায়ুচাপ ও  বায়ুমন্ডলীয় চাপ যে পরিমাপক যন্ত্র দ্বারা পরিমাপ করা হয়, তাকে ব্যারোমিটার বলা হয়। বায়ুমন্ডলীয় স্তর সমূহের নিম্ন অঞ্চলের চাপ মূলত বায়ু চাপ।

বায়ুমন্ডলীয় চাপ (ব্যারোমিটারের নামানুসারে ব্যারোমেট্রিক চাপ ও বলা হয়), বলতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরীণ চাপকে বোঝায়। আদর্শ অবস্থায় বায়ুমণ্ডলের চাপ ১০১৩.২৫ মিলিবার (১০১,৩২৫ প্যাসকেল) বা ৭৬০ পারদ মিমি (টর), ২৯.৯২ পারদ ইঞ্চি, বা ১৪.৬৯৬ পাউন্ড/ইঞ্চি২। [১] এটিএম (atm) এককটি পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় বায়ুমণ্ডলীয় চাপের সমতুল্য অর্থাৎ, পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ প্রায় ১ এটিএম।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে, কোন বিন্দুতে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ সেই বিন্দুর উপরে অবস্থিত বায়ুর ওজনের ফলে সৃষ্ট স্থিতিশীল চাপের প্রায় সমান হয়। উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে, উপরিতলের বায়ুমণ্ডলের ভর কমতে থাকে, ফলে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ, উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে হ্রাস পায়। চাপ বলতে, প্রতি একক ক্ষেত্রফলে সৃষ্ট বল বোঝায়, যার এসআই একক হল প্যাস্কেল (১ প্যাস্কেল = ১ নিউটন প্রতি বর্গমিটার)।

গড়ে পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডলের শীর্ষ পর্যন্ত, ১ বর্গ সেন্টিমিটার প্রস্থছেদের একটি বায়ুর কলামের ভর ১.০৩ কিলোগ্রাম, এবং এটি ১০.১ নিউটন বল বা ওজন প্রয়োগ করে। যার ফলে ১০.১নিউটন/সেমি২ বা ১০১ কিলোনিউটন/মিটার২ (১০১ কিলোপ্যাস্কেল, কেপিএ) চাপের সৃষ্টি হয়। ১ ইঞ্চি২ প্রস্থচ্ছেদের এর একটি বায়ু একটি কলামের ওজন হবে প্রায় ১৪.৭ পাউন্ড, ফলে চাপের পরিমাণ হবে ১৪.৭ পাউন্ড/ইঞ্চি২।

বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ কত

বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ ২০.৭১ %

পরিমাণের দিক থেকে শুষ্ক বাতাসে ৭৮.০৯%নাইট্রোজেন

,২০.৯৫% অক্সিজেন, ০.৯৩% আর্গন, ০.০৩% কার্বন ডাইঅক্সাইড

এবং সামান্য পরিমাণে অন্যান্য গ্যাস থাকে। বাতাসে এছাড়াও পরিবর্তনশীল পরিমাণ জলীয় বাষ্প রয়েছে যার গড় প্রায় ১%।

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার তারতম্যের কারণ, বায়ুমণ্ডলের তাপের তারতম্যের কারণ

ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র বায়ুর উষ্ণতা সমান নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে উষ্ণতার এই পার্থক্যের জন্য যেসব কারণগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে দায়ী সেগুলি হল নিম্নরূপ:

অক্ষাংশ

অক্ষাংশ অনুসারে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে সূর্যরশ্মির পতন কোণে তারতম্য ঘটে। ফলে উষ্ণতার পার্থক্যও হয়। লম্বভাবে পতিত সূর্যরশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ বেশি এবং তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ কম হয়। নিরক্ষরেখা থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে সূর্যরশ্মি ক্রমশ তির্যকভাবে পড়ে, ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে তাপমাত্রা কম হয়।

দিন রাত্রির দৈর্ঘ‍্য

দিন রাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্থানের মধ্যে উষ্ণতার তারতম‍্য পরিলক্ষিত হয়। দিন বড় এবং রাত্রি ছোট হলে দিনের সময় শোষিত তাপের সবটাই রাত্রে বিকিরিত হতে পারে না, ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। আবার দিন ছোট ও রাত্রি বড় হলে দিনের সময় বায়ুমণ্ডল যে পরিমাণ তাপ শোষণ করে রাত্রে তার চেয়ে বেশি তাপ বিকিরিত হয়, ফলে বায়ুমণ্ডল শীতল হয়ে পড়ে।

সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল

সূর্য থেকে যে শক্তি পৃথিবীতে এসে পৌঁছায় তাকে সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল বলে। এই শক্তির শতকরা ৩৪ ভাগ বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত না করে মহাশূন্যে প্রতিফলিত বা বিচ্ছুরিত হয়ে যায়। একে পৃথিবীর অ্যালবেডো বলে। সূর্য থেকে আগত অবশিষ্ট ৬৬% ভাগ শক্তি ক্ষুদ্রতরঙ্গ রূপে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠকে প্রথমে উত্তপ্ত করে, পরে উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠের দীর্ঘতরঙ্গ রূপে তাপ বিকিরনের ফলে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি তা শোষন করে ধীরে ধীরে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে তোলে। সূর্যরশ্মির তাপীয় ফলের তারতম্যে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার তারতম্য ঘটে। 

ভূমির উচ্চতা

সমুদ্রতল থেকে যতই ওপরে ঠা যায় বায়ুর উষ্ণতা ততই হ্রাস পেতে থাকে। অর্থাৎ, ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পায়। এই কারণে যে স্থানটি সমুদ্র সমতল থেকে যত উঁচুতে অবস্থিত তার উষ্ণতা তত কম হয় এবং সমুদ্র সমতল থেকে কম উচ্চতায় অবস্থিত স্থানের উষ্ণতা বেশি হয়।

ভূমির ঢাল

উত্তর গোলার্ধে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত পর্বতগুলির উত্তর ঢাল অপেক্ষা দক্ষিণ ঢালে সূর্যরশ্মি বেশি লম্ব ভাবে পড়ে। ফলে দক্ষিণ ঢালের উষ্ণতা বেশি হয়। দক্ষিণ গোলার্ধে এর বিপরীত অবস্থা দেখা যায়। 

সমুদ্র থেকে দূরত্ব

জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত উষ্ণ বা দ্রুত শীতল হয়। গ্রীষ্মকালে স্থলভাগ যতটা উষ্ণ হয়, জলভাগ ততটা উষ্ণ হয় না। আবার শীতকালে স্থলভাগ যতটা শীতল হয়, জলভাগ ততটা শীতল হয় না। এই কারণে সমুদ্র থেকে দূরবর্তী স্থানে গ্রীষ্মকাল অধিক উষ্ণ এবং শীতকাল অধিক শীতল হয়।

বায়ুপ্রবাহ

যে অঞ্চলের মধ‍্য দিয়ে উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চল উষ্ণ এবং যে অঞ্চলের মধ্য দিয়ে শীতল বায়ু প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চল শীতল প্রকৃতির হয়। বায়ুপ্রবাহের উপর কোনো অঞ্চলের বায়ুর উষ্ণতা অনেকাংশে নির্ভর করে।

সমুদ্রস্রোত

সমুদ্রস্রোত বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। সমুদ্রের যে উপকূল অঞ্চল বরাবর উষ্ণ সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় সে অঞ্চলের বায়ুমণ্ডল উষ্ণ এবং যে অঞ্চলে শীতল সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বায়ুমণ্ডল শীতল প্রকৃতির হয়।

পর্বতের অবস্থান

উষ্ণ বায়ু এবং শীতল বায়ুর গতিপথে আড়াআড়িভাবে কোনো পর্বতশ্রেণী অবস্থান করলে বায়ুপ্রবাহ ওই পর্বতশ্রেণীতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে পর্বতের উভয়দিকে উষ্ণতার তারতম‍্য পরিলক্ষিত হয়।

মেঘাচ্ছন্নতা

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ বা ঘন মেঘের আবরণ দিনের বেলা সূর্যরশ্মিকে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাতে বাধা দেয়, আবার রাত্রের সময় ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপকে মহাশূন্যে ফিরে যেতে বাধা দেয়। ফলে বিকিরিত তাপ মেঘ দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই কারণে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে দিনের বেলা উত্তাপ কমে আর রাত্রিবেলা উত্তাপ বৃদ্ধি পায়। এইভাবে মেঘাচ্ছন্নতা বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যে প্রভাব বিস্তার করে।

বনভূমির অবস্থান

ভূপৃষ্ঠে ঘন বনভূমি অবস্থান করলে তা মাটির অভ্যন্তরে জলীয় বাষ্প ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে মাটি আর্দ্র থাকে। ঘন বনভূমির জন্য সূর্যরশ্মি ভূপৃষ্ঠকে বেশি উত্তপ্ত করতে পারে না এবং ভূপৃষ্ঠও খুব তাড়াতাড়ি তাপ বিকিরন করে শীতল হতে পারে না। আবার বনভূমি বৃষ্টিপাত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে বলে বায়ুর উষ্ণতা স্বাভাবিকভাবে কিছুটা হ্রাস পায়।

এছাড়াও, মৃত্তিকা এবং মানুষের কার্যাবলী বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের অন্যতম প্রভাব বিস্তারকারী নিয়ন্ত্রক।

বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস এর চিত্র, বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস এর ছবি

বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতি

বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতি (The Processes involving in Air Temperature) : সূর্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার প্রধান উৎস । সূর্যরশ্মির তাপীয় ফলের মাধ্যমে বা ইনসোলেশনের মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কয়েকটি পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । এই পদ্ধতিগুলি হল—

  • (i) বিকিরণ পদ্ধতি (Radiation)
  • (ii) পরিবহন পদ্ধতি (Conduction)
  • (iii) পরিচলন পদ্ধতি
  • (iv) অ্যাডভেকশন (Advection) এবং
  • (v) তাপ শোষণ (Heat Absorbtion)

বিকিরণ পদ্ধতি (Radiation)

যে পদ্ধতিতে কোনো মাধ্যম ছাড়াই বা মাধ্যম থাকলেও তাকে উত্তপ্ত না করে তাপ এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে চলে যায়, সেই পদ্ধতিকে বিকিরণ পদ্ধতি বলে । বায়ুমণ্ডল সূর্যকিরণের দ্বারা সরাসরিভাবে উত্তপ্ত হয় না । সুর্য থেকে আলোর তরঙ্গ বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে । সূর্য থেকে আগত বিকিরিত তাপশক্তি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়লেও বায়ুমণ্ডলকে প্রথমে উত্তপ্ত না করে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে । ভূপৃষ্ঠ সেই তাপ শোষণ করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আলোক চৌম্বকীয় তরঙ্গরূপে সেই তাপের বিকিরণ শুরু হয় ও ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ।

পরিবহন পদ্ধতি (Conduction)

যে পদ্ধতিতে কোনো পদার্থের উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে তাপ সঞ্চালিত হয় কিন্তু পদার্থের অণুগুলি স্থান পরিবর্তন করে না, সেই পদ্ধতিকে পরিবহন পদ্ধতি বলে । সূর্য থেকে বিকিরণ পদ্ধতিতে আগত তাপশক্তি বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে এলেও বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত না করে প্রথমে কঠিন ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে । ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে লেগে থাকার ফলে পরিবহন পদ্ধতিতে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয় । ক্রমে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন উত্তপ্ত বায়ুস্তর থেকে উত্তাপ ওপরের অপেক্ষাকৃত শীতল বায়ুস্তরে পরিবাহিত হয় । এইভাবে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয় ।

পরিচলন পদ্ধতি (Convection)

ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুস্তর অধিক উত্তপ্ত হওয়ার ফলে বায়ু প্রসারিত ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায় । তখন সেই শূন্যস্থান পূরণের জন্য ওপরের অপেক্ষাকৃত শীতল বায়ু নীচে নেমে আসে । তারপর ওই বায়ুও আবার ক্রমে উষ্ণ ও হালকা হয়ে পুনরায় ওপরে উঠে যায় । এইভাবে নীচ থেকে উপরে ও উপর থেকে নীচে বায়ু চলাচলের ফলে উলম্বভাবে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ও বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয় । বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার এই পদ্ধতিকে পরিচালন প্রক্রিয়া বলে ।

অ্যাডভেকশন (Advection)

এক জায়গার উত্তাপ বায়ুর মাধ্যমে যখন ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে অনুভূমিকভাবে বা সমান্তরালে অন্য জায়গায় চলে যায়, তাকে অ্যাডভেকশন বলে । অ্যাডভেকশন পদ্ধতিতে অনেক সময় শীতল বায়ু ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে উষ্ণ বায়ুর দিকে প্রবাহিত হয়ে তাপ সঞ্চালনের মাধ্যমে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । যেমন — নিম্ন অক্ষাংশের বেশি উষ্ণতা বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে উচ্চ অক্ষাংশের বায়ুমণ্ডলে স্থানান্তরিত হয় ।

তাপ শোষণ (Heat Absorbtion)

সূর্যরশ্মি যখন যখন বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে আসে তখন তার কিছু অংশ বায়ুমণ্ডলে অবস্থানকারী কার্বন ডাইঅক্সাইড সহ অন্যান্য গ্যাস, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা প্রভৃতি আগত সূর্যরশ্মি থেকে তাপ শোষণ করে বায়ুমণ্ডলকে সামান্য উত্তপ্ত করে তোলে ।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | বায়ুমণ্ডল প্রশ্ন উত্তর

Q1. বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়

Ans – বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার স্তরে আয়নের আধিক্যের ফলে বেতার তরঙ্গগুলাে এ স্তরে প্রতিফলিত হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে।

Q2. বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে মেরুজ্যোতি দেখা যায়

Ans – বায়ুমন্ডলের এক্সোস্ফিয়ার অন্তর্গত আয়োনেস্ফিয়ার স্তরে মেরুজ্যোতি দেখা যায়।

Q3. বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে ওজন গ্যাস থাকে

Ans – ওজোন স্তর (Ozone layer) হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের একটি স্তর যেখানে তুলনামূলকভাবে বেশি মাত্রায় ওজোন গ্যাস থাকে। এই স্তর থাকে প্রধানতঃ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিচের অংশে, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে কমবেশি ২০-৩০ কিমি উপরে অবস্থিত।

Q4. বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কত

Ans – বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ০.০৩ শতাংশ।

Q5. বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ কত

Ans – বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ ২০.৯৯ শতাংশ।

Q6. ওজোন স্তর বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে অবস্থিত

Ans – ওজোন এমন একটি গ্যাস যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত থাকে। এই স্তর থাকে প্রধানতঃ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিচের অংশে, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে কমবেশি ২০-৩০ কিমি উপরে অবস্থিত।

Q7. বায়ুমণ্ডলীয় চাপ কাকে বলে

Ans – যে চাপ দ্বারা বায়ুমন্ডলের গ্যাসের বা বায়ুমন্ডলের স্তরের উপর মহাকর্ষীয় আকর্ষণ পরিমাপ করা হয় তাকে বায়ুমন্ডলীয় চাপ বলে। বায়ুমন্ডলীয় চাপ (Atmospheric pressure) একক ক্ষেত্রফলে নির্ণয় করা হয়।

Q8. বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কত

Ans – বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ শতকরা ১ ভাগ।

Q9. বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণ

Ans – বায়ু মণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের আধিক্য হলে তা ওজন স্তর পর্যন্ত পৌঁছে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ও ওজন গ্যাসের বিক্রিয়া ঘটে, এরফলে ওজনের অণু ভেঙে কার্বন ডাই অক্সাইডের সাথে যুক্ত হয়ে বিষাক্ত কার্বন মনোঅক্সাইড উৎপন্ন হয়। এভাবে ওজন স্তর ধ্বংস হয়।

Q10. কোন গ্রহে বায়ুমণ্ডল নেই

Ans – বুধ, কোন গ্রহে বায়ুমণ্ডল নেই।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।