পৃথিবীকে বাসযোগ্য গ্রহে পরিণত করতে নিচের প্রত্যেকটির ভূমিকা বর্ণনা কর।

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

WBBSE Geography, Bhugol | Prithibi Akti Groho Question Answer

উপরিউক্ত প্রশ্ন এবং তার যথাযত সমাধান, নিম্ন লিখিত সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর আকারে বর্ণনা করা হলো। এই উত্তর গুলি ছোট (SA) এবং বড় (LA), সকল প্রশ্নোর ক্ষেত্রে উত্তর সমাধান হিসাবে পাঠ করা যেতে পারে।

প্রশ্নোত্তর এবং সমাধান

পৃথিবীকে বাসযোগ্য গ্রহে পরিণত করতে নিচের প্রত্যেকটির ভূমিকা বর্ণনা কর।

(A) বায়ুমণ্ডল
(b) জল
(c) তাপমাত্রা

উত্তর:

বায়ুমণ্ডল

পৃথিবীকে একটি বাসযোগ্য গ্রহে পরিণত করতে বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বায়ুমণ্ডল নিম্নলিখিত ভূমিকা পালন করে:

বায়ুমণ্ডল সৌর বিকিরণ দ্বারা সূর্য থেকে তাপ গ্রহণ করে এবং পৃথিবীর বিকিরণ দ্বারা তাপ হারায়। এইভাবে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা হয়।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো জীবন সহায়ক গ্যাস দ্বারা গঠিত। অন্যান্য গ্যাসের মধ্যে রয়েছে হিলিয়াম এবং আইগন।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত ওজোন সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে।
বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে তাপের ক্ষতি রোধ করে এবং পৃথিবীকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে।

জল

পৃথিবীর পৃষ্ঠের 70% জল দ্বারা আবৃত। জল নিম্নলিখিত ভূমিকা পালন করে:

এটি পৃথিবীর জলবায়ু এবং পৃষ্ঠের অবস্থা পরিমিত করার জন্য দায়ী।

সমুদ্র, নদী এবং হ্রদ থেকে জল বায়ুমণ্ডলে বাষ্পীভূত হয় যেখানে এটি ঘনীভূত হয় এবং বৃষ্টিপাত হিসাবে ফিরে আসে। স্থলভাগের বেশির ভাগ জল আবার সাগরে প্রবাহিত হয়। এইভাবে, জল একটি অবিচ্ছিন্ন চক্রে চলে – জলবিদ্যা চক্র। বাষ্পীভবন, ঘনীভবন এবং বৃষ্টিপাতের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রয়েছে যা ছাড়া জীবন সম্ভব হবে না।

জল তার তাপমাত্রায় খুব বেশি পরিবর্তন না করেই প্রচুর পরিমাণে তাপ শোষণ করতে পারে। দিনের বেলায়, জলাশয়গুলি দ্রুত প্রচুর পরিমাণে তাপ শোষণ করে: এইভাবে, পৃথিবী মোটামুটি ঠান্ডা থাকে। রাতে জলাশয়গুলি প্রচুর পরিমাণে তাপ ছেড়ে দেয় যা তারা দিনের বেলায় শোষণ করে, যা অন্যান্য বায়ুমণ্ডলীয় প্রভাবের সাথে, বেশিরভাগ পৃষ্ঠকে রাতে হিমায়িত থেকে রাখে।

তাপমাত্রা

পৃথিবী সূর্য থেকে তৃতীয় গ্রহ। এটির গড় তাপমাত্রা 17°C যা প্রাণের অস্তিত্বের জন্য উপযুক্ত। যদি পৃথিবীর পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা মাত্র কয়েক ডিগ্রি পরিবর্তিত হয়, তবে প্রচণ্ড তাপ বা ঠাণ্ডার কারণে অনেক প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।

রক্তাভ গ্রহ কোনটি

মঙ্গল হলো সূর্য থেকে চতুর্থ দূরবর্তী গ্রহ এবং বুধের পরেই সৌরজগতের দ্বিতীয়-ক্ষুদ্রতম গ্রহ। ইংরেজি ভাষায় মঙ্গল গ্রহ রোমান পুরাণের যুদ্ধদেবতা মার্সের নাম বহন করে এবং প্রায়শই এই গ্রহটিকে “লাল গ্রহ” নামে অভিহিত করা হয়। এর জন্য দায়ী এই গ্রহের পৃষ্ঠতলে ফেরিক অক্সাইডের আধিক্য, যার ফলে গ্রহটিকে লালচে রঙের দেখায় এবং খালি চোখে দৃশ্যমান মহাজাগতিক বস্তুগুলির মধ্যে এই গ্রহটিকে স্বতন্ত্রভাবে দর্শনীয় করে তোলে।

মঙ্গল একটি শিলাময় গ্রহ এবং এর বায়ুমণ্ডল ঘনত্বহীন। এই গ্রহের পৃষ্ঠভাগের বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে যেমন চাঁদের মতো অভিঘাত খাদ দেখা যায়, তেমনি পৃথিবীর মতো উপত্যকা, মরুভূমি ও মেরুস্থ হিমছত্রও চোখে পড়ে।

সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের মধ্যে একমাত্র পৃথিবী

সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহের মধ্যে একমাত্র পৃথিবীই জীবকুলের আবাসস্থল’-বক্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।

বিজ্ঞানীদের নিরলস গবেষণার ফলে এখনো পর্যন্ত যা জানা গেছে, তা হল পৃথিবীই সৌর পরিবারের একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে। সৌরজগতের গ্রহগুলির মধ্যে একমাত্র পৃথিবীই জীবকুলের আবাসস্থল হিসেবে গড়ে উঠেছে। সৌর পরিবারে এত গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু ইত্যাদি থাকলেও একমাত্র পৃথিবীতেই জীবকুলের আবাসস্থল গড়ে ওঠার কারণগুলি হল-

অনুকূল অবস্থান-

সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব প্রায় 15 কোটি কিলোমিটার। এই সূর্য থেকে দূরত্বের বিচারে পৃথিবী অন্যান্য গ্রহগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। সূর্য থেকে পৃথিবীর এই অবস্থান এমনই যে তা বুধ বা শুক্রের মত সূর্যের একেবারে কাছে কিংবা ইউরেনাস বা নেপচুনের মত অনেক দূরে অবস্থিত নয়। তাই পৃথিবী পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায়় এবং পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা 15°C হয় । এই তাপমাত্রা পৃথিবীতে জীবের জন্ম, বৃদ্ধি ও বিকাশের পক্ষে আদর্শ।

বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতি

সৌরজগতের গ্রহগুলির মধ্যে পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ, যার বায়ুমন্ডলে জীবজগতের জন্ম ও বৃদ্ধির উপযোগী বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান উপস্থিত। ভূ-পৃষ্ঠের উপর বিভিন্ন গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত হালকা চাদরের ন্যায় এই বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড উদ্ভিদ ও প্রাণীদের খাদ্য উৎপাদনে ও শ্বাসকার্যে সাহায্য করে।

এছাড়া বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন প্রাণের অন্যতম উপাদান ও প্রোটিন তৈরিতে সহায়ক এবং বায়ুমন্ডলে উপস্থিত ওজোন গ্যাসের আবরণ সূর্য থেকে আসা জীবজগতের পক্ষে ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মিকে পৃথিবীতে প্রবেশে বাধা দেয়। আর বায়ুমণ্ডলীয় জলীয় বাষ্প বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে পৃথিবীতে জলের ভারসাম্য বজায় রাখে। এই সমস্ত কারণে বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতি পৃথিবীতে জীবকুলের আবাসস্থল গড়ে তুলেছে।

বারিমন্ডলের উপস্থিতি

পৃথিবীর মোট আয়তনের প্রায় 4 ভাগের 3 ভাগ জল। সৌরজগতের গ্রহগুলির মধ্যে পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ যেখানে জীবকুলের জন্ম, বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় জল উপস্থিত। আজ থেকে প্রায় 380 কোটি বছর আগে জলেই প্রাণের উৎপত্তি ঘটেছিল‌ বলে মনে করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন জীবকুলের বিপাক ক্রিয়া জল ছাড়া সম্ভব নয় বলে এই জলের উপস্থিতি পৃথিবীকে জীবকুলের আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তুলেছে।

শিলামন্ডলের অবস্থান

সৌরজগতের গ্রহগুলির মধ্যে একমাত্র পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশেই উদ্ভিদ ও প্রাণী তথা জীবকুলের জন্ম, বৃদ্ধি, বিকাশ ও বাসস্থানের উপযোগী শিলামন্ডল অবস্থান করছে। এই শিলামন্ডলের শিলা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে তার সঙ্গে জল ও জৈব পদার্থ যুক্ত হয়ে মৃত্তিকা সৃষ্টি করেছে। এই মৃত্তিকার মধ্যে উপস্থিত বিভিন্ন পুষ্টি মৌল ও খনিজ পদার্থ সমূহ পৃথিবীকে জীবকুলের আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তুলেছে।

উপরিলিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় সূর্য থেকে পৃথিবীর অনুকূল দূরত্বে অবস্থান হেতু পর্যাপ্ত সূর্যালোক প্রাপ্তি এবং শিলামন্ডল, বায়ুমণ্ডল ও বারিমন্ডলের পারস্পারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ একমাত্র পৃথিবীকেই জীবকুলের বাসযোগ্য গ্রহ বা আবাসস্থল রূপে গড়ে তুলেছে।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

আরো বিশদে পড়ার জন্য

অল ইন ওয়ান ভূগোল ও পরিবেশ (জিওগ্রাফি এন্ড এনভায়রনমেন্ট)

অল ইন ওয়ান ভূগোল ও পরিবেশ (জিওগ্রাফি এন্ড এনভায়রনমেন্ট)

ক্লাস – 9 এর জন্য.



রক্তাভ গ্রহ কোনটি

মঙ্গল হলো সূর্য থেকে চতুর্থ দূরবর্তী গ্রহ এবং বুধের পরেই সৌরজগতের দ্বিতীয়-ক্ষুদ্রতম গ্রহ। ইংরেজি ভাষায় মঙ্গল গ্রহ রোমান পুরাণের যুদ্ধদেবতা মার্সের নাম বহন করে এবং প্রায়শই এই গ্রহটিকে “লাল গ্রহ” নামে অভিহিত করা হয়। এর জন্য দায়ী এই গ্রহের পৃষ্ঠতলে ফেরিক অক্সাইডের আধিক্য, যার ফলে গ্রহটিকে লালচে রঙের দেখায় এবং খালি চোখে দৃশ্যমান মহাজাগতিক বস্তুগুলির মধ্যে এই গ্রহটিকে স্বতন্ত্রভাবে দর্শনীয় করে তোলে।


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।